পশ্চিমারা সরে যাওয়ায় লাভবান হতে পারে চীন

রাশিয়ার জ্বালানি খাত

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিচালনার জেরে রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সংযোগ বন্ধের পথে হাঁটছে পশ্চিমা বিশ্ব। এরই মধ্যে বেশ কিছু ক্ষেত্রে রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো। সেখানকার জ্বালানি কোম্পানিগুলোও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে। পশ্চিমাদের এই তৎপরতা মস্কোর ওপর যে প্রভাবই ফেলুক না কেনো, চীনের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করেছে।

রাশিয়ার জ্বালানি পণ্যের শীর্ষ ক্রেতা ইউরোপ। যুদ্ধকালীন টানাপড়েনে সেই সম্পর্কে ছেদ পড়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলোয় রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে যুগপৎ দুটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রথমত, ইউরোপকে এখন বেশি দামে বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি সংগ্রহের চেষ্টা করতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাশিয়াও খানিকটা বিপাকে পড়েছে। এখন কম দামে হলেও অন্য কারও কাছে জ্বালানি বিক্রি করতে হবে তাদের। আর এই সুযোগটাই নিতে পারে চীন।

পশ্চিমা দেশগুলো বাণিজ্য বন্ধ করলেও চীন এরই মধ্যে রাশিয়ার রপ্তানিমুখী গমের জন্য নিজেদের বাজার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ঠিক একইভাবে দেশটি রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি আমদানিও বাড়াবে বলে ধারণা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের যুক্তি, চীন এটি করবে, কারণ এতে বৈশ্বিক স্পট মার্কেটের দরের চেয়ে অনেক কম মূল্যে তেল পাওয়া যাবে। চীনা রিফাইনাররা এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবেন কেন?

বিওসিওএম ইন্টারন্যাশনালের হেড অব রিসার্চ হাও হোং বলেছেন, ‘চীনের কমোডিটি দরকার। অন্যদিকে রাশিয়াও হয়তো কম দামে এগুলো বিক্রি করতে বাধ্য হবে। বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটা চীনা প্রাচীন প্রবাদের মতো- দুই ঝিনুকের লড়াইয়ে ফায়দা লুটে জেলে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার জ্বালানির পাইকারি বাজার থেকে পশ্চিমা দেশগুলো মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানিগুলো সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিএনপিসি ও সিনোপেকের মতো চীনের শীর্ষ রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানিগুলো এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। রাশিয়ার জ্বালানি খাতে এখন বিনিয়োগ করা লাভজনক হবে কিনা, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে তারা।

এক্সন, ইকুইনর, শেলের মতো ইউরোপীয় ও মার্কিন অনেক জ্বালানি কোম্পানিই দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ায় কার্যক্রম চালিয়ে এসেছে। কিন্তু ইউক্রেন ইস্যুকে কেন্দ্র করে তারা এখন রাশিয়া ত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে। চীনা কোম্পানিগুলো এই শূন্যস্থান পূরণের জোর চেষ্টা চালাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুধু চীনা তেল কোম্পানিগুলোই নয়, বরং দেশটির ট্যাংকার অপারেটররাও বর্তমান পরিস্থিতিতে লাভবান হতে পারে। কারণ পশ্চিমা ট্যাংকার মালিকরা রুশ বন্দরগুলো থেকে তেল পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যখন কেবল চীনা ও রুশ মালিকানাধীন ট্যাংকারগুলোই রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল পরিবহন করবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here