বড় কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হলো এমইপিসির ৭৮তম অধিবেশন

অনেক প্রত্যাশার পাহাড় জমেছিল ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) মেরিন এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন কমিটির (এমইপিসি) ৭৮তম বৈঠক ঘিরে। এই বৈঠকের অন্যতম এজেন্ডা ছিল সবুজ জ্বালানিতে রূপান্তরে জাহাজগুলোকে উৎসাহিত করতে কার্বন শুল্ক আরোপের বিষয়টি। এছাড়া নিঃসরণ কমানো-সংশ্লিষ্ট কিছু আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার কথা ছিল বৈঠকে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত বড় কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে এমইপিসির ৭৮তম অধিবেশন। আর যারা আশা করেছিলেন, এবারের বৈঠকটি আইএমওর নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগের পালে হাওয়া দেবে, তাদের শেষ পর্যন্ত হতাশই হতে হলো। কারণ প্যারিস জলবায়ু চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আইএমও কর্তৃক গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের বিষয়টিতে সদস্য দেশগুলো ঐকমত্যে পৌঁছলেও এই লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে অর্জিত হবে, সেই বিষয়ে তেমন কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি বৈঠক থেকে।

এমইপিসির এই অধিবেশনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরতে গিয়ে ইউনিভার্সিটি মেরিটাইম অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস (ইউএমএএস) বলেছে, ‘নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য পূরণের অংশ হিসেবে এই বৈঠকে কোনো ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। ফলে কোনো উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত যে আসেনি, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। ইতিবাচক বিষয় হলো, আগামী বছর এমইপিসির ৮০তম অধিবেশনে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিয়ে আইএমওর কর্মকৌশল পুনর্বিবেচনার আগে আলোচনার যে পথ খোলা থাকা দরকার, তা রয়েছে।’

জাহাজের জ্বালানি ব্যবস্থাকে পরিবেশবান্ধব করার জন্য কিছু প্রণোদনার প্রয়োজন। পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন এবং ব্যয় প্রতিযোগিতার অসামঞ্জস্যতা দূর করার লক্ষ্যে কার্বন শুল্ক আরোপের পক্ষে দাবি উঠেছে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার পক্ষ থেকে। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব শিপিংও (আইসিএস) শুল্ক আরোপের বিপক্ষে নয়। তবে তাদের দাবি এই শুল্কের আকার যেন ছোট হয়। সংগঠনটির পৃষ্ঠপোষকতায় টনপ্রতি ২ ডলার শুল্ক আরোপের একটি প্রস্তাবনা উত্থাপিত হয়েছিল বৈঠকে। নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা ধারণা করেছিল, বৈঠকে সেই প্রস্তাব অনুমোদন পাবে না। হয়েছেও তাই। শেষ পর্যন্ত এই প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধির সমর্থন আদায় করতে পারেনি।

একটি বিষয় পরিষ্কার যে, আইসিএসের প্রস্তাবনাকে সামনে আরও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। কারণ বাজারভিত্তিক আগ্রাসী শুল্ক আরোপের পক্ষে অবস্থান গ্রহণকারীদের পাল্লা দিনদিন ভারী হচ্ছে। সম্প্রতি জাপান বড় অংকের শুল্ক আরোপের প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে এমইপিসির কাছে। তারা ২০২৫ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে শিপিং খাতে প্রতি টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের বিপরীতে ৫৬ ডলার, ২০৩০ সাল থেকে টনপ্রতি ১৩৫ ডলার, ২০৩৫ সাল থেকে ৩২৪ ডলার ও ২০৪০ সাল থেকে ৬৭৩ ডলার হারে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছে।

৬-১০ জুন অনুষ্ঠিত বৈঠকে যে একেবারে কোনো সিদ্ধান্তই আসেনি, তা কিন্তু নয়। আইএমওর এনার্জি এফিশিয়েন্সি এক্সিস্টিং শিপ ইনডেক্স (ইইএক্সআই), কার্বন ইনটেনসিটি ইনডেক্স (সিআইআই) ও শিপ এনার্জি এফিশিয়েন্সি ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান (এসইইএমপি) গাইডলাইনগুলো চূড়ান্ত হয়েছে বৈঠকে। এছাড়া একটি নতুন সালফার নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ এলাকা (এসইসিএ) প্রাথমিক অনুমোদন হয়েছে, যেটি ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অবশ্য তার আগে চলতি বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় এমইপিসির ৭৯তম অধিবেশনে প্রস্তাবটিকে চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে হবে।

বৈঠকে মারপোল অ্যানেক্স ওয়ান ও টুর সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়া ব্যালাস্ট ওয়াটার এক্সপেরিয়েন্স বিল্ডিং ফেজের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছে এমইপিসি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here