দূরপ্রাচ্যের সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের রটারডাম বন্দরের মধ্যে গড়ে তোলা হচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম গ্রিন করিডোর। এ বিষয়ে খাতসংশ্লিষ্ট অন্য অংশীদারদের উদ্যোগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বন্দর দুটির কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে তারা আশা করছে, তাদের দেখে অন্যরাও পরিবেশবান্ধব সমুদ্র পরিবহন খাত গড়ে তোলার এই প্রচেষ্টায় শামিল হবে।
গ্রিন শিপিং করিডোরের ধারণা প্রথম উত্থাপিত হয় গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলন কপ২৬-তে। ওই সম্মেলনে ক্লাইডব্যাংক ডিক্লারেশনে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ ২২টি দেশ। এই ঘোষণার মূল লক্ষ্য হলো সমুদ্র পরিবহন খাতে কয়েকটি গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠা। ২০২৫ সাল নাগাদ অন্তত ছয়টি গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে ক্লাইডব্যাংক ডিক্লারেশনে। ২০৩০ সাল নাগাদ আরও কয়েকটি নিঃসরণমুক্ত রুট কার্যকর হবে বলে কপ২৬ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করা হয়।
গ্রিন করিডোর কোনো বৈশ্বিক সমাধান নয়। তবে একটি-দুটি করে যখন বিশ্বের সব ট্রেডিং রুটই যখন গ্রিন করিডোর হয়ে যাবে, তখন সেটি নিঃসরণ কমানোর বৈশ্বিক উদ্যোগেরই অংশ হয়ে যাবে। এই করিডোর হলো এমন শিপিং রুট, যেখানে কোনো নিঃসরণ থাকবে না। এসব রুটে চলাচলকারী জাহাজগুলো ব্যবহার করবে সবুজ জ্বালানি। গ্রিন করিডোর আন্তর্জাতিকভাবে বাধ্যতামূলক কোনো পদক্ষেপ হবে না। দুই বা ততোধিক বন্দরের মধ্যে পারস্পারিক সমঝোতার ভিত্তিতে এসব করিডোর গড়ে উঠবে।
সম্প্রতি মেরিটাইম অ্যান্ড পোর্ট অথরিটি অব সিঙ্গাপুরের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এতে বিকল্প জ্বালানিনির্ভর শিপিং রুট প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, কার্যক্ষমতা ও পণ্য পরিবহনে স্বচ্ছতা বাড়ানোর কাজে পারস্পারিক সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।
নতুন এই চুক্তির মাধ্যমে একটি কোয়ালিশন তৈরি হবে, যেটি গ্রিন অ্যান্ড ডিজিটাল শিপিং করিডোর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে সাপ্লাই চেইনের সব অংশীজনকে একত্র করবে। ২০২৭ সাল নাগাদ এই করিডোর চালুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ দুটি বাংকারিং পোর্ট হলো সিঙ্গাপুর ও রটারডাম। এ কারণে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে বন্দর দুটির সম্পৃক্ততা অনেক বেশি। সুতরাং সিঙ্গাপুর ও রটারডাম বন্দর পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের ওপর জোর দিলে সেটি নিঃসরণমুক্ত শিপিং খাত প্রতিষ্ঠায় বেশ সহায়ক ভূমিকা রাখবে।