দুটি বন্দরের সঙ্গে গ্রিন করিডোর গড়ে তুলবে গোথেনবার্গ

ইউরোপের উত্তরাঞ্চলীয় বন্দরগুলোকে একাধিক গ্রিন করিডোরের সঙ্গে যুক্ত করা এবং এসব গ্রিন করিরডোরকে ঘিরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগে আরেক ধাপ অগ্রগতি দেখা গেছে। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের রটারডাম বন্দর ও বেলজিয়ামের নর্থ সি পোর্টের সঙ্গে দুটি গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠার বিষয়ে পৃথক চুক্তি করার ঘোষণা দিয়েছে সুইডেনের গোথেনবার্গ বন্দর কর্তৃপক্ষ।

আগে থেকেই পরিবেশবান্ধব বন্দর ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে আসছে গোথেনবার্গ। রটারডাম ও নর্থ সি পোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের চুক্তি দুটি তারই ধারাবাহিক পদক্ষেপ। নতুন চুক্তির অধীনে বন্দর তিনটি পরিবেশবান্ধব বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে একটি কমন ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করবে।

গোথেনবার্গ বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ২০১৫ সাল থেকে রোপ্যাক্স ফেরিগুলোকে স্বল্প পরিসরে মিথানল বাংকারিং সেবা দিয়ে আসছে। পাশাপাশি বৃহৎ পরিসরে শিপ-টু-শিপ বাংকারিংয়ের ক্ষেত্রে তারা এরই মধ্যে মিথানল অপারেটিংয়ের সাধারণ বিধিমালা প্রকাশ করেছে। এছাড়া বন্দরটি একাধিক টার্মিনালে শোর পাওয়ার সাপ্লাই শুরু করে দিয়েছে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রতিরোধে সমুদ্র পরিবহন খাতে নিঃসরণ কমানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে অনেক বেশি। এরই অংশ হিসেবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠার। এই ধারণা প্রথম উত্থাপিত হয় গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলন কপ২৬-তে। সম্মেলনে ক্লাইডব্যাংক ডিক্লারেশনে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ ২২টি দেশ। এই ঘোষণার মূল লক্ষ্য হলো সমুদ্র পরিবহন খাতে কয়েকটি গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠা। ২০২৫ সাল নাগাদ অন্তত ছয়টি গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে ক্লাইডব্যাংক ডিক্লারেশনে। ২০৩০ সাল নাগাদ আরও কয়েকটি নিঃসরণমুক্ত রুট কার্যকর হবে বলে কপ২৬ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করা হয়। 

গ্রিন করিডোর কোনো আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা নয়। এটি পুরোপুরি ঐচ্ছিক সিদ্ধান্ত। তবে একটি-দুটি করে যখন বিশ্বের সব ট্রেডিং রুটই যখন গ্রিন করিডোর হয়ে যাবে, তখন সেটি নিঃসরণ কমানোর বৈশ্বিক উদ্যোগেরই অংশ হয়ে যাবে। এই করিডোর হলো এমন শিপিং রুট, যেখানে কোনো নিঃসরণ থাকবে না। এসব রুটে চলাচলকারী জাহাজগুলো ব্যবহার করবে সবুজ জ্বালানি। গ্রিন করিডোর আন্তর্জাতিকভাবে বাধ্যতামূলক কোনো পদক্ষেপ হবে না। দুই বা ততোধিক বন্দরের মধ্যে পারস্পারিক সমঝোতার ভিত্তিতে এসব করিডোর গড়ে উঠবে।

কিছুদিন আগে গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মেরিটাইম অ্যান্ড পোর্ট অথরিটি অব সিঙ্গাপুর ও রটারডাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই চুক্তিতে বিকল্প জ্বালানিনির্ভর শিপিং রুট প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, কার্যক্ষমতা ও পণ্য পরিবহনে স্বচ্ছতা বাড়ানোর কাজে পারস্পারিক সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। দূরপ্রাচ্যের সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের রটারডামের মধ্যে গ্রিন করিডোরটি হবে বিশ্বের দীর্ঘতম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here