আইসিডির সেবা মাসুল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বিকডার

প্রায় ৪ বছর পর ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোগুলো (আইসিডি) তাদের সেবা মাসুলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে। ইতিমধ্যে নতুন মাসুলের হারও প্রকাশ করা হয়েছে, যা আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডা।

চার্জ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতি, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, সুদের হার বৃদ্ধি, শ্রমিক মজুরি ও যন্ত্রপাতির ব্যয়বৃদ্ধি এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচের কারণেই সেবা মাসুলের মূল্য তালিকা পুনর্র্নিধারণ করা হয়েছে। অফডকগুলো চালু রাখতে হলে এর কোন বিকল্প নেই।

আইসিডির অন্যতম অংশীজন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)’র নেতারা মাসুল বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক শুল্ক বৃদ্ধি, বৈশ্বিক অস্থিরতা ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতার বাজারে ক্রমাগত বাংলাদেশের রপ্তানি কমতে থাকার এই ক্রান্তিকালে অফডকগুলোর চার্জ বৃদ্ধি ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিবে।

রপ্তানি পণ্যের কোন সেবায় কত চার্জ বাড়ছে:
রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে যেসব চার্জ বাড়ানো হলো তার মধ্যে ২০ ফুট কনটেইনারের প্যাকেজ চার্জ ৩ হাজার ৭১৩ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯ হাজার ৯শ টাকা। ৪০ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে এই চার্জ ৪ হাজার ৯৫০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৩ হাজার ২শ টাকা। আগে ৪০ ফুট হাই-কিউব ও ৪৫ ফুট কনটেইনারে ভিন্ন কোন চার্জ ছিল না। এক্ষেত্রে আদায় করা হতো ৪০ ফুট কনটেইনারের সমপরিমাণ প্যাকেজ চার্জ। তবে এবার সেটি ৬ হাজার ৬৫০ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৯শ টাকা। গ্রাউন্ড রেন্ট চার্জ প্রতি ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য ৩৫ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা, ৪০ ফুট ও ৪০ হাই কিউব এবং ৪৫ ফুটের কনটেইনারের জন্য ৭০ টাকা বাড়িয়ে ৩শ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়াও পণ্য সিএফএস সেডে স্টোর করে রাখার ক্ষেত্রে সাতদিন ফ্রি টাইমের পর প্রতি ঘনমিটার পণ্যের জন্য ১৬ টাকা বাড়িয়ে ৪৫ টাকা এবং শাটআউট কার্গোর ক্ষেত্রে ফ্রি টাইম ছাড়াই প্রতি ঘনমিটার পণ্যের জন্য ১৬ টাকা বাড়িয়ে ৪৫ টাকা চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড় স্টোরিং চার্জ ৩ টাকা বাড়িয়ে ৬ টাকা এবং রেফার কনটেইনারের প্লাগইন চার্জ ৫শ টাকা বাড়িয়ে ২২শ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়েও বাড়ছে চার্জ:
সকল খালি কনটেইনারের লিফট অন/অফ চার্জ ২৩৮ টাকা বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা এবং ডকুমেন্টেশন চার্জ ১৭৪ টাকা বাড়িয়ে ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ২০ ফুট কনটেইনারের গ্রাউন্ড রেন্ট ৩৫ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা এবং ৪০ ফুট ও ৪০ ফুট হাই কিউব/৪৫ ফুট কনটেইনারের গ্রাউন্ড রেন্ট ৭০ টাকা বাড়িয়ে ৩শ টাকা করা হয়েছে। অন্যদিকে, হলেজ বা পরিবহন খরচ ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য ৭৯৫ টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ৫শ এবং ৪০ ফুট ও ৪০ ফুট হাই কিউব/৪৫ ফুট কনটেইনারের জন্য ১ হাজার ৫৯০ টাকা বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।

নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে যেসব চার্জ:
রপ্তানি হওয়া কিছু গামেন্টস পণ্য যেমন ব্লেজার, কোর্ট, জ্যাকেট ইত্যাদি অন্যান্য গার্মেন্টস পণ্যের মতো কার্টনে ঢুকিয়ে প্যাকিং করে রপ্তানি করা যায় না। এগুলোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে হয়। যেমন কনটেইনারে ফ্রেম আকারে হ্যাঙ্গার ঝুলিয়ে ওই সব পণ্য রপ্তানির জন্য বিশেষভাবে কনটেইনারজাত করতে হয়। যার কারণে এসব পণ্যকে বলা হয়- গার্মেন্টস অন হ্যাঙ্গার কার্গো (GOH Cargo)। বর্তমানে এসব পণ্যের প্যাকেজ চার্জ অন্যান্য পণ্যের মতো ২০ ফুট ও ৪০ ফুট কনটেইনারের হারে আদায় করা হলেও এবার সেটির জন্য আলাদা চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এসব পণ্যের ক্ষেত্রে ২০ ফুট কনটেইনারের প্যাকেজ চার্জ ৫ হাজার ৭১৩ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১১ হাজার ৯শ টাকা। ৪০ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে এই চার্জ ৬ হাজার ৯৫০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ হাজার ২শ টাকা। আগে ৪০ ফুট হাই-কিউব ও ৪৫ ফুট কনটেইনারে ভিন্ন কোন চার্জ ছিল না। এক্ষেত্রে আদায় করা হতো ৪০ ফুট কনটেইনারের সমপরিমাণ প্যাকেজ চার্জ। তবে এবার সেটি ৮ হাজার ৬৫০ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯শ টাকা। এসব পণ্য অফডকের সিএফএস থেকে কনটেইনারে লোড করার কোন চার্জ না থাকলেও বর্তমানে প্রতি পিসের জন্য ২ টাকা হারে লেবার চার্জ যুক্ত করা হয়েছে।

চার্জ অপরিবর্তিত থাকছে সেসব সেবায়:
অধিকাংশ সেবার চার্জ বাড়লেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোন চার্জ বৃদ্ধি করা হয়নি। যেমন, ল্যান্ডিং চার্জ ২৭০ টাকা, ভিজিএম চার্জ ১ হাজার ৭২০ টাকা, প্রতি কার্টন লেবার চার্জ ৩ টাকা ও সব ধরনের আমদানি পণ্য হ্যান্ডলিং চার্জ আগের রেটই রাখা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here