চট্টগ্রাম বন্দর দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর। এই বন্দরের মাধ্যমে দেশের ৯৮ শতাংশ কনটেইনার পরিবহন হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সুবিধা, ইয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা, যন্ত্রপাতি, কনটেইনার জাহাজগুলোর ভয়েজ ফ্রিকোয়েন্সি, বার্থি সুবিধা এবং আগামী ৪-৫ বছরের কনটেইনার পরিবহন সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৯৫-১০৫টি জাহাজ ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে চলাচল করলে, আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সুযোগ-সুবিধা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যবহার করা যায়।
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আগ পর্যন্ত, এই হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দেশের আমদানি-রপ্তানিকারকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করে আসছিল। এতে একদিকে যেমন আমদানিকারকরা তাদের পণ্য যথাসময়ে হাতে পেতেন, তেমনি আমাদের রপ্তানিকারকরাও যথাসময়ে তাদের পণ্য পাঠাতে পারতেন। বেশিরভাগ জাহাজই সরাসরি জেটিতে বার্থিং পেত।
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধাবস্থা শুরু হলে সি-ট্রাঙ্ক রুটে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে বাংলাদেশমুখী কিছু আমদানি কনটেইনার জমে যায়। ফলে বিভিন্ন ফিডার জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বহরে অ্যাডহক ভিত্তিতে (বিশেষ পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানে কিছু সময়ের জন্য) জাহাজের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি করতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন চায়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বাস্তবতার নিরিখে ও দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের স্বার্থে সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় আনে এবং অ্যাডহক ভিত্তিতে বিভিন্ন ফিডার জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিরিক্ত প্রায় ২০-২২টি জাহাজ ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরের জট কমে আসা পর্যন্ত চলাচলের অনুমোদন দেয়। কিন্তু ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে বাংলাদেশমুখী কনটেইনার জট একেবারে সমাধান হওয়ার পরও কয়েকটি ফিডার অপারেটর অ্যাডহক ভিত্তিতে পরিচালিত জাহাজ প্রত্যাহার করে নেননি। ফলে বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে চলাচলকারী জাহাজের সংখ্যা (নিয়মিত এবং অ্যাডহকসহ) প্রায় ১৩০ টিতে দাঁড়িয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বর্হিনোঙ্গরে জাহাজের অপেক্ষমান সময়, অপেক্ষমান জাহাজের সংখ্যা এবং জেটিতে জাহাজে কার্যকালীন সময় আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বিভিন্ন আমদানি-রপ্তানিকারক তাদের পণ্য হাতে পেতে এবং রপ্তানি করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। গত দুই মাসে জাহাজগুলোর ব্যবহার হিসাব করে দেখা গেছে, প্রত্যেকটি জাহাজ তাদের পুরো সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছেনা, অর্থ্যাৎ ধারণক্ষমতা অনুযায়ী পর্যাপ্ত কনটেইনার পাচ্ছে না।
এই প্রেক্ষাপটে গত ২০ জুলাই বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাথে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি ত্রিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সার্বিক বিষয়াবলি বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশন সমন্বয় করে বর্তমানে চলাচলরত জাহাজগুলোর সংখ্যা কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সভায় নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ থেকে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকারী সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় ২০ জুলাইয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে, যার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে এরই মধ্যে বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়াতে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য প্রদান করছে, যা অনভিপ্রেত এবং কমিটির কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে কাম্য নয়।
চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে একটি ব্যবসাবান্ধব বন্দর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। সকল মহলকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের জন্য বন্দর থেকে উদাত্ত আহবান জানানো হচ্ছে এবং নেতিবাচক ও বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন থেকে বিরত থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।