চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা হ্রাসে নেয়া পদক্ষেপে এরমধ্যেই ৭৫ শতাংশ সমস্যা সমাধান হয়েছে। এ অগ্রগতির প্রতিবেদন ৫ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার ড. মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে জলাবদ্ধতা হ্রাসে চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরেন। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, চারটি প্রধান প্রকল্পের মধ্যে ৮৮ শতাংশ কার্যক্রম এরমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, বীর প্রতীক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাইফুল ইসলাম এবং নাগরিক প্রতিনিধিরা।
আজাদ মজুমদার বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা গত ১৪ মে চট্টগ্রাম সফরের সময় নির্দেশ দিয়েছিলেন, এ বছরের মধ্যে শহরের জলাবদ্ধতা অন্তত ৫০ শতাংশ কমাতে হবে। এ নির্দেশনা অনুযায়ী, স্থানীয় সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডও প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করেছে।’
৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামসুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টার ৫০ শতাংশ লক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তা অতিক্রম করে ৭৫ শতাংশ জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম নগরের ১১৩টি এলাকায় আট থেকে নয় ঘণ্টা জলাবদ্ধতা স্থায়ী হতো। চলতি বছর তা কমে ২১টি এলাকায় দুই থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে সীমিত হয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ১০টিতে নামিয়ে আনা এবং ২০২৭ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্য রয়েছে।
সভায় জানানো হয়, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। প্রতিদিন প্রায় ৮০০ টন বর্জ্য শহরের খাল ও ড্রেনে জমে পানি প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিদিন দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টন বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হলেও শহরে দৈনিক উৎপাদিত বর্জ্যের পরিমাণ প্রায় তিন হাজার ২০০ টন।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পানি অপসারণের জন্য ১২টি পাম্প বসানো হচ্ছে, যার মধ্যে ১০টি এরমধ্যেই চালু করা হয়েছে। সব পাম্প চালু হলে প্রতিদিন প্রায় ২৪ কোটি লিটার পানি অপসারণ করা সম্ভব হবে। এছাড়া নগরজুড়ে আরও ৫৬টি পাম্প বসানোর কাজ চলছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনের অগ্রগতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা হ্রাসের প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। এখন আমরা দ্বিতীয় ধাপে কাজ শুরু করবো।’
তিনি সব সংস্থাকে লিখিত পরিকল্পনা জমা দেয়ার নির্দেশ দেন এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনারকে সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেন।
চট্টগ্রামের স্থায়ী নাগরিক হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা চাক্তাই খালের পুনর্নির্মাণ অগ্রগতিও জানতে চান। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার নুরুল করিম জানান, চাক্তাই খাল থেকে পানি সরানোর জন্য ১২টি পাম্প বসানো হয়েছে, যার মধ্যে ১০টি এরমধ্যেই কার্যকর রয়েছে। সব পাম্প চালু হলে প্রতিদিন ২৪ কোটি লিটার পানি অপসারণ করা সম্ভব হবে। শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য মোট ৫৬টি পাম্প বসানো হচ্ছে।



