প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমুদ্র শিল্পের আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি। সেই প্রয়োজন মেটাতে এই শিল্পের বিভিন্ন খাতে গবেষণা উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠিত প্রযুক্তি কোম্পানির পাশাপাশি নতুন স্টার্ট-আপগুলো। তাদের কিছু উদ্ভাবন বিদ্যমান প্রযুক্তিকে আরও এগিয়ে নিচ্ছে, কিছু আবার আমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে বেশ কিছু ‘প্রথম’-এর সঙ্গে। নিত্যনতুনকে জানা পুরনোকে যুগোপযোগী করার এই প্রয়াস সমুদ্র শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে-এটাই প্রত্যাশা।

চিন্তা যখন প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে

প্লাস্টিক বর্জ্যরে পরিমাণ কমানো এখন পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমুদ্র পরিবহন খাতও এর ব্যতিক্রম নয়। সাগরে প্লাস্টিক বর্জ্যরে পরিমাণ কমাতে উদ্যোগী হয়ে উঠছে সবাই। নতুন নতুন প্রযুক্তি ও সলিউশন নিয়ে হাজির হচ্ছে টেক কোম্পানি ও অলাভজনক সংস্থাগুলো। এমনই এক প্রযুক্তি সম্প্রতি উপস্থাপন করেছে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ওয়াটার সলিউশন কোম্পানি হ্যাটেনবোয়ার-ওয়াটার বিভি। তারা তাদের এই উদ্ভাবনী কনসেপ্টের নাম দিয়েছে ‘প্লাস্টিক ফ্রি অ্যাট সি’। এই প্রযুক্তি সাগরে চলাচলরত জাহাজে ওয়ানটাইম প্লাস্টিক বোতলের ব্যবহার কমিয়ে একেবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সহায়তা করবে।

প্লাস্টিক ফ্রি অ্যাট সি হলো পরিশোধিত পানির বোতল ফিলিং স্টেশন। প্রতিটি ওয়াটার ফাউন্টেনে রয়েছে হ্যান্ডস-ফ্রি সেন্সর অ্যাক্টিভেশন, যা কোনো প্রকার হাতের ছোঁয়া ছাড়াই বোতলে পানি ভরতে সহায়ক হবে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সুরক্ষা ব্যবস্থা ট্যাংকের পানিকে রাখবে জীবাণুমুক্ত।

এদিকে সাগর থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যে নিজেদের প্রথম প্লাস্টিক হারভেস্টার প্রোটোটাইপের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে অলাভজনক সংস্থা আওয়ার ক্লিনার প্ল্যানেট। এখন তারা আরও বড় পরিসরে পরীক্ষা চালাতে প্রস্তুত। আর সংস্থাটি সাগরে এই প্লাস্টিক হারভেস্টার পুরোদমে ব্যবহার শুরুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ২০২৫ সাল।

সাগর থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণের এই প্রক্রিয়ায় ৫ মাইক্রোন পর্যন্ত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা অপসারণ করা সম্ভব। সাগরের উপরিতল থেকে ৬০ ফুট গভীরতা পর্যন্ত অঞ্চল থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করতে পারবে আওয়ার ক্লিনার প্ল্যানেট উদ্ভাবিত এই হারভেস্টার। সংস্থাটি এ ধরনের কয়েকটি জাহাজের একটি বহর গড়ে তুলতে চাইছে, যেখানে প্রতিটি জাহাজ বছরে ১ হাজার টন পর্যন্ত প্লাস্টিক অপসারণ করতে পারবে।

পরিবর্তন আসছে প্রপালশনে

সমুদ্র পরিবহন খাতকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলতে জ¦ালানি ব্যবস্থাসহ অনেক ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আনা হচ্ছে। জাহাজের প্রপালশন ব্যবস্থাতেও আসছে পরিবর্তন। নরওয়ের প্রযুক্তি কোম্পানি কংসবার্গ জানিয়েছে, তারা একটি ফুল-স্কেল, ফুল-সাইজ, নিঃসরণবিহীন ড্রাইভট্রেনের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এই ড্রাইভট্রেন হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল দিয়ে চলবে। জাহাজ ও ফেরির জন্য এটির নকশা করা হয়েছে। কংসবার্গের দাবি, বিশে^ এই ধরনের হাইড্রোজেন-চালিত ড্রাইভট্রেন এটাই প্রথম।

জাহাজের জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহারের বিভিন্ন গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ২০১৩ সাল থেকে ‘হাইসিজ’ নামের একটি প্রকল্প পরিচালনা করা হচ্ছে, যেখানে অর্থায়ন সহযোগিতা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। কংসবার্গের এই ড্রাইভট্রেনের সফল পরীক্ষা সেই প্রকল্পেরই তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপ। কংসবার্গ বলছে, তাদের এই সফল পরীক্ষা এটাই প্রমাণ করে যে, মেরিটাইম খাত এখন জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।

এদিকে প্রপালশন ব্যবস্থায় পারমাণবিক শক্তিকেই ভবিষ্যৎ হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয় নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর নিয়ে গবেষণায় ৮৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করছে। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে মেরিন প্রপালশনে রিঅ্যাক্টর প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়েও গবেষণা করা হবে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মেরিটাইম খাতে এই নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো থেকে উত্তরণের উপায় খোঁজার জন্য আমেরিকান ব্যুরো অব শিপিংকে (এবিএস) ৮ লাখ ডলার দেবে জ¦ালানি মন্ত্রণালয়।

নিঃসরণমুক্ত শিপিং খাত গড়ে তোলার জন্য যেসব বিকল্প জ্বালানির কথা ভাবা হচ্ছে, নিউক্লিয়ার পাওয়ার তার একটি। এই পারমাণবিক শক্তিচালিত কনভেনশনাল প্রেশারাইজড-ওয়াটার রিঅ্যাক্টর সামরিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে কয়েক দশক ধরে। রাশিয়ায় বেসামরিক সরকারি কাজেও এই ধরনের রিঅ্যাক্টর ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মেরিটাইম শিল্পে এর ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে।

মেরিন প্রযুক্তিতে কিছু প্রথম

বিশ্বের প্রথম ক্লাসড অফশোর উইন্ড ফার্ম হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছে উইন্ডফ্লোট আটলান্টিক। প্রকল্পটির তিনটি ৮ দশমিক ৪ মেগাওয়াট ফ্লোটিং টার্বাইনকে সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে এবিএস ক্লাস কমিউনিটি।

উইন্ডফ্লোট আটলান্টিকের এই তিনটি এবিএস-ক্লাসড সেমি সাবমার্জিবল টার্বাইন মিলে মোট ২৫ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। পর্তুগালের উপকূল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরবর্তী গভীর সাগরে অবস্থিত উইন্ডফ্লোট আটলান্টিক হলো কন্টিনেন্টাল ইউরোপের প্রথম বৃহদাকার ভাসমান বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প। প্রকল্পটির উন্নয়নের দায়িত্বে রয়েছে উইন্ডপ্লাস কনসোর্টিয়াম।

কনটেইনার সেগমেন্টে বিশে^র প্রথম লো-স্পিড, ডুয়েল ফুয়েল ইঞ্জিন সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছে ম্যান এনার্জি সলিউশনস। এই ইঞ্জিন চলবে মিথানল দিয়ে। কনটেইনার শিপিং কোম্পানি মায়েরস্কের জন্য একটি ২ হাজার ১০০ টিইইউএস কনটেইনার ধারণক্ষমতার জাহাজ বানাচ্ছে হুন্দাই। এই জাহাজেই ম্যানের তৈরি ইঞ্জিনটি ব্যবহার করা হবে। আর ইঞ্জিনটি তৈরি করা হবে হুন্দাইয়ের ইঞ্জিন মেশিনারি ডিভিশনের ইয়ার্ডে।

নির্মীয়মাণ জাহাজটি প্রথম কোনো মিথানল-চালিত জাহাজ হতে যাচ্ছে, যেটি কার্গো হিসেবে মিথানল পরিবহন করবে না। জাহাজটি ২০২৩ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করবে বলে মায়েরস্ক আশা করছে। এটি গ্রিন মিথানল দিয়ে পরিচালিত হবে, যেখানে পাইলট অয়েল হিসেবে থাকবে বায়ো-ফুয়েল।

প্রথমবারের মতো সাগরযাত্রা করেছে বিশে^র প্রথম ইলেকট্রিক ও সেলফ-প্রপেলড কনটেইনার জাহাজ ইয়ারা বার্কল্যান্ড। গত নভেম্বরে জাহাজটি নরওয়ের অসলো ফিওর্ড থেকে যাত্রা করে। তবে এটি কোনো বাণিজ্যিক যাত্রা নয়। বরং আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে প্রতীকী যাত্রা বলা চলে একে। জাহাজটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করবে আগামী বছর।

ইয়ারা বার্কল্যান্ড নির্মাণ করেছে ইতালীয় জাহাজ নির্মাতা ফিনক্যান্তিয়েরির সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ভার্ড। এতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে কংসবার্গ গ্রুপ। আর অর্থসহায়তা দিয়েছে নরওয়ের জলবায়ু ও জ্বালানি প্রযুক্তিবিষয়ক তহবিল ইনোভা। বিশ্বের প্রথম এই ইলেকট্রিক ও স্বচালিত জাহাজটি নির্মাণে প্রায় দেড় কোটি ডলার দিয়েছে তারা।

প্রায় দুই বছর ধরে জাহাজটির সেলফ-প্রপালশন প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে। ইয়ারা বার্কল্যান্ডে যত নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তার সবই সরবরাহ করেছে কংসবার্গ। নরওয়ের হর্টেন শহরে অবস্থিত মাস্টারলি মনিটরিং অ্যান্ড অপারেশনস সেন্টার থেকে দূরনিয়ন্ত্রিত উপায়ে জাহাজটি পরিচালনা করা হবে, যার কারণে বিশ্বের প্রথম স্বচালিত কনটেইনার জাহাজের তকমা পেয়েছে ইয়ারা বার্কল্যান্ড।

বিশ্বের প্রথম সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক, ব্যাটারি-পাওয়ারড ট্যাংকার সম্প্রতি পানিতে ভাসানো হয়েছে। জাপানের কোয়া সাংইয়ো কোম্পানি লিমিটেডের শিপইয়ার্ড থেকে আসাহি নামের ট্যাংকারটিকে পানিতে ভাসানো হয়। জাপানের আসাহি ট্যাংকার কোম্পানির জন্য জাহাজটি নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী মার্চের শেষের দিকে জাহাজটি হস্তান্তরের কথা রয়েছে। এরপর ট্যাংকারটি বাংকার ফুয়েল সাপ্লাই শিপ হিসেবে টোকিও উপসাগরে সেবা দেবে।

৬২ মিটার দীর্ঘ ব্যাটারি-পাওয়ারড ট্যাংকারটির নকশা করেছে জাপানের শীর্ষ শিপিং ও মেরিটাইম সার্ভিস কোম্পানিগুলোর কনসোর্টিয়াম ইফাইভ ল্যাব ইনকরপোরেশন।   

আসছে সবচেয়ে শক্তিশালী টাইডাল টার্বাইন

আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর পথে আরও একধাপ এগুলো বিশে^র সবচেয়ে শক্তিশালী টাইডাল টার্বাইন অরবিটাল ওটু। সম্প্রতি এর দীর্ঘ ২০ মাসের নির্মাণযজ্ঞ শেষ হয়েছে। স্কটিশ কোস্টের যে জায়গায় এর কমিশনিং করা হবে, টার্বাইনটিকে এখন সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কমিশনিংয়ের পর এর সঙ্গে স্থানীয় অনশোর ইলেকট্রিসিটি নেটওয়ার্কের সংযোগ স্থাপন করা হবে।

টার্বাইনটির কাঠামোর দৈর্ঘ্য ২৪০ ফুটের বেশি। এর ওজন ৬৮০ টন। ২০১৯ সালের দ্বিতীয়ার্ধে টার্বাইনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। স্কটল্যান্ডের ডান্ডির ফোর্থস পোর্টসে এর নির্মাণকাজ চলে।

নতুন অ্যান্টি-জ্যাম ডিভাইস উন্মোচন

নতুন একটি জিপিএস অ্যান্টি-জ্যাম (জিএজেটি) ডিভাইস উন্মোচন করেছে টেক ফার্ম হেক্সাগনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান নোভাটেল। বিশ্বজুড়ে মেরিটাইম এনভায়রনমেন্টে ইন্টারফারেন্স ও জ্যামিংয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে এমন একটি ডিভাইস বাজারে আনার ঘোষণা দিল তারা।

লো সাইজ, ওয়েট অ্যান্ড পাওয়ার (এসডব্লিুউএপি) জিএজেটি-৪১০এমএস ডিভাইসটির নকশা করা হয়েছে সিভিল ও মিলিটারি কার্যক্রমকে ইন্টারফারেন্স ও জ্যামিং থেকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে। ডিভাইসটি  জিপিএস এল১ ও এল২ উভয় ব্যান্ডেই সুরক্ষা দিতে সক্ষম। এছাড়া গ্যালিলিও ই১, কিউজেডএসএস এল১ ও এল২ এবং এসবিএএস এল১ ব্যান্ডেও ইন্টারফারেন্স প্রতিরোধ করতে পারে ডিভাইসটি। যদি কোনো জাহাজ জ্যামিংয়ের শিকার হয়, তবে ডিভাইসটির ডিরেকশন ফাইন্ডিং সক্ষমতা সেই জ্যামিং সিগন্যালের উৎস শনাক্ত ও অবস্থান জানিয়ে দেবে।

ব্যালাস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্টে নতুন যুগের সূচনার আশা

ব্যালাস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্টের ডিজিটালাইজেশনে গত বছর অপ্টিলিংক নামে নতুন একটি ইনোভেটিভ সিস্টেম উন্মোচন করেছে অপটিমেরিন। শিপ-টু-শোর ডেটা শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ব্যালাস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই ইনোভেটিভ সলিউশন।

অপ্টিলিংকে রয়েছে ব্যালাস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট সিস্টেমের (বিডব্লিউটিএস) সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা। আরও থাকছে অটোমেটেড ডেটা জেনারেশন ও রিমোট কানেক্টিভিটি সুবিধা। জাহাজ অপারেটরদের মাথা থেকে রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্সের চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে ও উন্নত কাস্টোমার সাপোর্ট নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখেই অপ্টিলিংকের ডিজাইন করা হয়েছে।

এই উন্নত ডিজিটাল টুলটি ব্যবহার করলে অপারেটররা আর্থিকভাবেও কিছুটা লাভবান হবে। কারণ এটি জ¦ালানি খরচ কমানো, অপ্টিমাইজড ভয়েজ প্ল্যানিং ও পোর্ট টার্নঅ্যারাউন্ড সময় কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

সাগর গবেষণায় রোবট সাবমেরিন

যুক্তরাজ্যের এন্ড-অব-লাইফ তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রগুলোয় গবেষণা পরিচালনা করবে ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি সেন্টার (এনওসি)। আর এ কাজে ব্যবহার করা হবে রোবট সাবমেরিন বোটি ম্যাকবোটফেস। এ কাজে ব্যয় পরিচালনার জন্য যুক্তরাজ্যের ন্যাচারাল এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ কাউন্সিলের (এনইআরসি) কাছ থেকে তহবিল বরাদ্দ পেয়েছে এনওসি।

এসব তেল ও গ্যাসক্ষেত্র পরিবেশের ওপর কোনো প্রভাব ফেলছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতেই অটোনমাস টেকনিকস ফর ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইকোলজিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট (এটি-এসইএ) প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আর এ কাজে এনওসিকে ৬ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ড দিচ্ছে এনইআরসি। ২০২২ সালের গ্রীষ্মেই প্রথমবারের মতো এই রোবোটিক মিশন পরিচালনা করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেখা হবে যে, বর্তমানে রিসার্চ শিপগুলো যে তথ্য সংগ্রহ করছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির রোবট সাবমেরিন তার সমপরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে কিনা।

স্বয়ংক্রিয় কনটেইনার র‌্যাকের ট্রায়ালে সাফল্য

বিশ্বজুড়ে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে কনটেইনারের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এর ফলে বন্দরগুলোর জন্য অন্যতম মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কনটেইনার রাখার স্থান সংকুলান করা। এমন পরিস্থিতিতে কনটেইনার ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করতে সম্পূর্ণ নতুন রোবোটিক র‌্যাক সিস্টেম চালু করেছিল ডিপি ওয়ার্ল্ড। এ নিয়ে ছয় মাসের ট্রায়ালও সম্পন্ন করেছে তারা। আর এই পরীক্ষায় প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফল পেয়েছে কোম্পানিটি। ইউএইর জেবেল আলি টার্মিনালে ৮০০ কনটেইনার রাখার উপযোগী ‘বক্সবে’ নামের এই স্বয়ংক্রিয় র‌্যাক বসিয়েছে ডিপি ওয়ার্ল্ড।

সাগরের ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তি

সাগরের ঢেউ থেকে আরও বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে নতুন একটি প্রযুক্তির প্রোটোটাইপ তৈরি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের আরএমআইটি ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। তাদের বিশ্বাস, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

এরই মধ্যে ল্যাব টেস্টে দেখা গেছে, বিদ্যমান প্রযুক্তি সাগরের ঢেউ থেকে যে পরিমাণ শক্তি টানতে পারছে, আরএমআইটির প্রোটোটাইপ পারছে তার চেয়ে অনেক বেশি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই প্রযুক্তি স্থাপনে খরচও আগের চেয়ে কমে যাবে এবং এটি স্থাপনের প্রক্রিয়াটিও তুলনামূলক সহজ। গবেষকরা মনে করছেন, পূর্ণাঙ্গ মডেল টেস্ট সফল হলে তাদের এই প্রযুক্তি সাগরের ঢেউ থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here