আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি-২ মার্চ কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে হতে যাচ্ছে ইউএন এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেম্বলি। পরিবেশবিষয়ক এই অধিবেশন প্লাস্টিক দূষণ কমানো-সংক্রান্ত একটি বৈশ্বিক চুক্তি স্বাক্ষরের পথ তৈরি করে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্লাস্টিক দূষণ বর্তমান বিশ্বে অন্যতম মাথাব্যাথার নাম। জাতিসংঘের এই অধিবেশনকে সামনে রেখে জার্মানির ওয়েজেনার ইনস্টিটিউট একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ১ কোটি ৪০ লাখ টন প্লাস্টিক সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। ভূপৃষ্ঠের পানি থেকে শুরু করে গভীর সমুদ্র পর্যন্ত তৈরি হওয়া সামুদ্রিক বর্জ্যের ৮০ ভাগই সৃষ্টি হয় প্লাস্টিক থেকে। এমনকি এখনই যদি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তবুও প্লাস্টিক দূষণ কমানো কঠিন হবে।
তবে জাতিসংঘ যেকোনো মূল্যে এই প্লাস্টিক দূষণ কমাতে চায়। এ লক্ষ্যে প্রথম বৈশ্বিক চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই চুক্তি কীভাবে চূড়ান্ত করা যায়, সেই উপায় খুঁজে বের করতে আসন্ন অধিবেশনে আলোচনা হবে। এ-সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা এরই মধ্যে উত্থাপিত হয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো, যে ধরনের চুক্তি প্রয়োজন, সে মোতাবেক সিদ্ধান্তে পৌঁছনো একেবারে সহজ নয়। আবার তা যে পুরোপুরি অসম্ভব, এমনটাও নয়। বলা যায়, লক্ষ্যমাত্রা ও সম্ভাবনার মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে বর্তমানে।
প্লাস্টিক দূষণ, বিশেষ করে সাগরে প্লাস্টিক বর্জ্যের অবাধ পতন প্রতিরোধে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, ব্যবস্থাপনা ও রিসাইক্লিংয়ের অভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা ও পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হবে। সব দেশেই যেন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি ছাড়া সেটি সম্ভব নয়। জাতিসংঘের আসন্ন অধিবেশন সেই সুযোগটাই তৈরি করে দেবে। অধিবেশনে একটি ইন্টারগভর্নমেন্টাল নেগোশিয়েটিং কমিটিকে চুক্তির বিষয়ে আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এই কমিটিই চুক্তির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কাজ করে যাবে।
প্লাস্টিক সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। শুধু তাই নয়, সামুদ্রিক প্লাস্টিক দূষণ মানবস্বাস্থ্যের জন্যও পরোক্ষভাবে হানিকারক। কারণ দূষিত পরিবেশ থেকে আহরিত সিফুডের মাধ্যমে মানবদেহেও এই প্লাস্টিক বর্জ্য প্রবেশ করে।
ওয়েজেনার ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্লাস্টিক খুব ক্ষুদ্র কণায় ভাগ হয়ে যায়। ফলে সেটি সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে। প্লাস্টিকের এসব ছোট কণা সমুদ্র থেকে তুলে আনা অসম্ভব। কিছু গবেষণা বলছে, এখনই যদি মাইক্রোপ্লাস্টিক অপসারণ শুরু করা যায়, তবুও এর পরিমাণ আগামী এক দশকে বাড়তেই থাকবে।