Home Blog

শুদ্ধাচার পুরস্কার পেলেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ার‌ম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর কাছ থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর মধ্যে শুদ্ধাচার চর্চায় উৎসাহ প্রদানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় শুদ্ধাচার পুরস্কার দিয়ে আসছে প্রতিবছর। চলতি অর্থবছরের শুদ্ধাচার পুরস্কারের সংস্থা প্রধান ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল । আজ মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বন্দর চেয়ারম্যানের হাতে পুরস্কার তুলে দেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী এম খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এমপি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন সচিব মো. মোস্তফা কামাল, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং অধীনস্থ সকল দপ্তর ও সংস্থা প্রধানগণ।  

রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল তাঁর গৌরবময় কর্মজীবনের বিভিন্ন স্তরে কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নির্বাহী শাখায় ১ জানুয়ারি ১৯৮৮ সালে কমিশন লাভ করেন। কমিশন পাওয়ার পর তিনি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। একজন অ্যান্টি সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার স্পেশালিস্ট অফিসার হিসেবে তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে অপরিসীম অবদান রেখেছেন। তিনি কানাডা থেকে ওয়ার গেম সিমুলেশন কোর্স, ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ ঢাকা থেকে নেভাল স্টাফ কোর্সে এবং ভারতের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ থেকে নেভাল স্টাফ কোর্সে অংশগ্রহণ করেছেন।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন পেশাদার কর্মকর্তা হিসেবে তিনি বিভিন্ন স্তরে স্টাফ এবং নির্দেশনামূলক দায়িত্ব পালন করেছেন। নৌসদর দপ্তর এবং এরিয়া সদর দপ্তরের স্টাফ অফিসার, পরিচালক, জুনিয়র স্টাফ কোর্স, ওয়ারফেয়ার ইন্সট্রাক্টর ইন স্কুল অফ মেরিটাইম ওয়ারফেয়ার অ্যান্ড ট্যাকটিকস, ডাইরেক্টিং স্টাফ এবং সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর (নৌ), ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সুদানে জাতিসংঘ মিশনেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সেবায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি নৌবাহিনী থেকে ওএসপি ও এনইউপি পদক লাভ করেন।

রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল এলিট ফোর্স র‍্যাবে সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর অসামান্য কর্মক্ষমতার জন্য তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদকে (পিপিএম) ভূষিত হন। রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল ডিজিএফআইয়ের কাউন্টার টেরোরিজম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (সিটিআইবি) ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ক ব্যুরো (আইএবি) এবং নৌসদর দপ্তরের পরিচালক সাবমেরিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে যোগ দিয়ে বন্দরের চ্যানেল ড্রেজিংসহ উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। সর্বশেষ রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল গত ২ মে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দিয়ে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

বৃষ্টি হতে পারে আরো তিন-চার দিন, সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত

সারা দেশে বৃষ্টি থাকতে পারে আগামী তিন-চার দিন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট মৌসুমি লঘুচাপটি গভীর হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে আগামী তিন-চার দিন ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

লঘুচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ভারী বর্ষণের কারণে দেশের পার্বত্য জেলাগুলোয় ভূমিধস এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরির আশঙ্কার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে জানানো হয়, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ভারী বৃষ্টিসহ দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এজন্য দেশে চার সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রাকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান, দেশে মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করেছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল; বিশেষ করে খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে প্রায় সারা দেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। এ বৃষ্টি আরো তিন-চারদিন থাকতে পারে। তবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে দু-তিন দিন।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারী বর্ষণের কারণে পার্বত্য জেলা- চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।

স্বাভাবিক হচ্ছে কনটেইনার জট

চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার জট ক্রমান্বয়ে স্বাভাভিক হচ্ছে। ঈদুল আজহার ছুটি শেষে বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পুরোদমে চালু হওয়ায় দু্ইদিনের মধ্যে কনটেইনার জট পরিস্থিতি আর থাকবে না বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে ঈদুল আজহার টানা সরকারি ছুটিতে আমদানিকারকরা পণ্য খালাস ঠিকমতো না নেওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ৪৫ হাজার কনটেইনারের জট তৈরি হয়েছে। তবে ছুটি শেষে জাহাজ ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং এবং খালাস আগের নিয়মে ফিরে যাচ্ছে। বন্দরকেন্দ্রিক শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোতে পুরোপুরি কার্যক্রম শুরুর পর বন্দর থেকে আমদানি কনটেইনার খালাস এবং রপ্তানি কনটেইনার প্রবেশের হার বেড়েছে।

২৪ ঘণ্টায় তিন হাজারেরও বেশি আমদানি কনটেইনার বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়েছে। এ গতি অব্যাহত থাকলে সর্বোচ্চ ক্রমান্বয়ে কনটেইনার জট পরিস্থিতি আর থাকবে না। বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউ কনটেইনার রাখার জায়গা আছে। তবে ৪০ হাজার টিইইউর বেশি কনটেইনার ডেলিভারির জন্য বন্দরের ভেতরে অপেক্ষমান থাকলে স্বাভাবিক কার্যক্রমে প্রভাব পড়ে এবং দ্রুত জট পরিস্থিতি তৈরি হয়।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত ৫ জুন থেকে সরকারি ছুটি শুরু হয়, যা ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিন ছিল। এত দীর্ঘ ছুটির কারণে বন্দরে অপারেশনাল কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরি এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে মারাত্মক প্রভাবের আশংকা করে আসছিলেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। এ আশংকাকে আমলে নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে সম্ভাব্য অচলাবস্থা মোকাবিলায় ১০টি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ সিদ্ধান্তের আলোকে চট্টগ্রাম বন্দরে শুধুমাত্র ঈদের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিন্তু এরপর থেকে আগের মতোই ২৪ ঘণ্টা সচল আছে বন্দর।

১৫ দিন বাকী থাকতেই গত অর্থবছরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং রেকর্ড ছাড়িয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর  

নানা প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান, দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, দুই ঈদের ছুটি, কাস্টমসের কলম বিরতি ও পরিবহন ধর্মঘটসহ প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের হ্যান্ডলিং কার্যক্রম প্রায় দুই মাস বাধাগ্রস্থ হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব বাধা বিপত্তি উপক্ষো করে ১৫ দিন বাকী থাকতেই বিগত অর্থবছরের তুলনায় বেশি সংখ্যক কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হয়েছে । চলতি অর্থবছরের ১৫ জুন পর্যন্ত বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ৩১ লাখ ৭১ লাখ ৭৭৯ টিইইউ কনটেইনার যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.৬৩% বেশি । এ সাফল্যের মূলে রয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার প্রত্যক্ষ নির্দেশনা, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতা এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্যবৃন্দের নিরলস তদারকি ও বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিক প্রচেষ্টা।

বন্দরের অটোমেশান সার্ভিস সুবিধা, ই-গেট পাস চালু, কনটেইনার অপারেটিং সিস্টেম আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নও এ সাফল্যের উল্লেখযোগ্য অংশ। একই সাথে বন্দর ব্যবহারকারীদের দ্রুত কনটেইনার ডেলিভারি নেওয়া, বন্দরের সাথে সার্বাক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করাসহ তাদের সার্বিক সহযোগিতা ও আন্তরিকতা এ সফলতার অন্যতম উপাদান।  ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউস  কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছিল তবে চলতি অর্থবছর শেষের ১৫ দিন বাকি থাকতেই বিগত অর্থবছরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মোট পরিমাণকে অতিক্রম করেছে । আশা করা যাচ্ছে কনটেইনার হ্যন্ডলিংয়ের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ৩০ জুন ২০২৫ পর্য্ন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করবে ।

চট্টগ্রাম বন্দরে যুক্ত হচ্ছে ১৫ ‘স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার’

চীন থেকে আসা ১৫ স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার যুক্ত হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে। ছবিটি ক্যারিয়ারগুলো জাহাজে বোঝাইয়ের পর চীন থেকে যাত্রা শুরুর সময় তোলা।

চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে অপারেশনাল কার্যক্রমে এবার যুক্ত হয়েছে নতুন ১৫ স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার। বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার মুভমেন্ট করার কাজে এসব যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।

গত ১০ মে চীনের সাংহাই বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে হংকংয়ের পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ জে ইয়াং ওই ১৫ স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। জাহাজটি রোববার চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছায়। বুধবার জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি টার্মিনালে বার্থিং করে। এখন ক্যারিয়ারগুলো নামানোর কাজ চলছে। এরপর পরীক্ষামূলক ট্রায়াল শেষে বন্দরের বহরে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড এবং টার্মিনালের জন্য প্রয়োজনীয় এসব ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করতে ব্যয় হয় ১২৬ কোটি ১০ লাখ ৬৬ হাজার ২২৭ টাকা। ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য এসব ইকুইপমেন্ট ক্রয় প্রস্তাবগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন ‘চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড এবং টার্মিনালের জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত জি-৫ প্যাকেজের লট-২’র আওতায় ৪টি ৪-হাই স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার সংক্রান্ত ক্রয়প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৩৩ কোটি সাত লাখ ৪২ হাজার ২৯৫ টাকা। একই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত জি-৫ প্যাকেজের লট-৩’র আওতায় ৫টি ৪-স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার সংক্রান্ত ক্রয়প্রস্তাব ছিল। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬২৯ টাকা। এছাড়া একই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত জি-৫ প্যাকেজের লট-৪’র আওতায় ৬টি ৪-স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার সংক্রান্ত ক্রয়প্রস্তাব ছিল। যেখানে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫১ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩০৩ টাকা। এসব লটের আওতায় এবার চীন থেকে ১৫টি স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার আনা হয়েছে।

ঈদের ছুটিতেও চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলবে

দেশের আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম গতিশীল রাখার লক্ষ্যে ঈদুল আজহার ছুটিতেও চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস হাউস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঈদ উপলক্ষে সরকারি ছুটিকালীন সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অপারেশনাল কাযর্ক্রম সার্বক্ষণিক (ঈদের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা ছাড়া) চালু থাকবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস স্বাভাবিক সময়ের মতো খোলা থাকবে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি কাস্টমস বিভাগও সার্বিক ব্যবস্থা নিচ্ছে।

ঈদুল আজহার আগেই কাস্টমস বিভাগ কর্তৃক রাউন্ড দ্য ক্লক কানেকটিভিটিসহ একটি হট লাইন নম্বরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার (শিপ অ্যান্ড ইয়ার্ড) কামরুল ইসলাম মজুমদারের মোবাইল ফোন নম্বর (০১৭১৫-১৬৩৯৯৯) চালু থাকবে। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে এরই মধ্যে বন্দর কর্তৃপৃক্ষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে।

ওই টাস্কফোর্সের সঙ্গে জরুরি ক্ষেত্রে যোগাযোগের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের টার্মিনাল ম্যানেজার সাইফুল আলমের মোবাইল ফোন নম্বর (০১৮১৯-৩২১৫৬০) চালু থাকবে। টাস্কফোর্সের কাযর্ক্রম সার্বক্ষণিক সমন্বয়ের জন্য কাস্টমস বিভাগের একজন কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন।

বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের অনুরোধে বিগত কয়েক বছর ধরে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার সময়ে বিপুল সংখ্যক কর্মচারীকে অধিকাল ভাতায় নিয়োজিত করে চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বক্ষণিক কার্যক্রম সচল রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু সে তুলনায় আমদানিকারকদের বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নেওয়ার পরিমাণ থাকে খুবই কম।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, এ প্রেক্ষাপটে আশা করা যায় সব আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী সংগঠন ঈদের ছুটি চলাকালীন স্বাভাবিক সময়ের মতো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনারজাত পণ্য ডেলিভারি নিতে পারবেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আনা এফসিএল কনটেইনারগুলোর মধ্যে বিজিএমইএ-এর কনটেইনারগুলো ছাড়া অন্য সব পণ্যবাহী এফসিএল কনটেইনার পরীক্ষামূলকভাবে ঈদ-পরবর্তী সময় থেকে দুই মাসের জন্য অফডকসমূহে স্থানান্তর করে খালাস করা হবে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যকে নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও প্রস্তুতি নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানি মে মাসে

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক, ভারতের বিধিনিষেধসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও দেশের পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় আছে। সদ্য সমাপ্ত মে মাসে তেমনটাই দেখা গেছে। এ মাসে ৪৭৪ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল মঙ্গলবার পণ্য রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মে ১১ মাসে মোট ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের মধ্যে ৭ মাসেই ৪ বিলিয়ন তথা ৪০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়। আগস্টে ৪০৩ কোটি, অক্টোবরে ৪১৩ কোটি, নভেম্বরে ৪১২ কোটি, ডিসেম্বরে ৪৬৩ কোটি, জানুয়ারিতে ৪৪৪ কোটি, মার্চে ৪২৫ কোটি ও মে মাসে ৪৭৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত মাসে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়াবিহীন জুতা, হিমায়িত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। অন্যদিকে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, আসবাব ও বাইসাইকেল রপ্তানি কমেছে।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, মোট পণ্য রপ্তানির ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশই তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে। গত মে মাসে ৩৯২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের মে মাসের তুলনায় ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি।

চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জুলাই-মে ১১ মাসে ৩ হাজার ৬৫৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ৩ হাজার ৩১৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ১০৬ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। শুধু মে মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। গত মাসে রপ্তানি হয়েছে ১২ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের। গত বছরের মে মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৯ কোটি ২৭ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য।

এদিকে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যে রপ্তানি মে মাসে ৮ শতাংশ কমেছে। এ মাসে ৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়। অবশ্য চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে। এই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৯৩ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য।

হোম টেক্সটাইল রপ্তানিতে গত মাসে ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ৮২ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ৭৭ কোটি ডলারের পাট ও পাটপণ্য, ৪৯ কোটি ডলারের চামড়াবিহীন জুতা, ৫০ কোটি ডলারের প্রকৌশল পণ্য, ৪১ কোটি ডলারের হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর ট্যারিফ পুনঃনির্ধারণে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক

দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রধান গেটওয়ে চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: বন্দর বার্তা

প্রায় চার যুগ ধরে পুরোনো একই ট্যারিফে চলছে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম। সর্বশেষ ১৯৮৬ সালের নির্ধারণ করা ট্যারিফ দিয়েই প্রায় ৫০ ধরনের সেবা মাসুল আদায় করে চলছে। যদিও ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৫টি সেবার মাসুলে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ের চাহিদা ও ব্যয়ের সঙ্গে এই পুরোনো ট্যারিফ কাঠামো সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই নতুন ট্যারিফ নির্ধারণে সোমবার মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক বসছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চট্টগ্রাম বন্দরসহ সরকারি বেসরকারি প্রায় ২৮টি সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের এই প্রধানতম স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হবে। এর আগে ২০১৩ সাল থেকেই বন্দর ট্যারিফ পুননির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সেই সময় সরকারের অনাগ্রহে তা স্থগিত হয়ে যায়। পরে ২০১৯ সালে আবার এই কার্যক্রম শুরু হয়। যার প্রেক্ষিতে ২০২২ সালে স্পেনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আইডম কনসাল্টিং, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড আর্কিটেকচার এবং বাংলাদেশের লগিকফোরাম লিমিটেডকে ট্যারিফ কাঠামো পর্যালোচনা ও নতুন প্রস্তাবনা তৈরির জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ট্যারিফ কাঠামো হালনাগাদ করা, ব্যবহারকারীদের জন্য ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক শুল্ক নির্ধারণ করা, বন্দরের রাজস্ব আয় ও সেবার মান উন্নয়ন নিশ্চিত করার বিষয় বিবেচনায় রেখে একটি পূর্ণাঙ্গ ট্যারিফ প্রস্তাব করেছে। চূড়ান্ত প্রস্তাব জমা দেওয়ার আগে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করে, যার আলোকে এখন মন্ত্রণালয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সভায় বসবে।

মাতারবাড়ি প্রকল্পে জাপান বড় ধরনের বিনিয়োগ করবে : প্রেস সচিব

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সদ্যসমাপ্ত জাপান সফর বাংলাদেশের জন্য একাধিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি এনে দিয়েছে বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেছেন, এই সফরের মাধ্যমে শুধু বিনিয়োগই নয়, বাংলাদেশি কর্মীদের জাপানে পাঠানোর জন্যও একটি বড় পথ উন্মুক্ত হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে জাপানে এক লাখ বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর বিষয়েও ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। আগামীতে জাপান বাংলাদেশের জন্য বড় শ্রমবাজারে পরিণত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

রোববার (১ জুন) ঢাকার বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব এ কথা বলেন।

শফিকুল আলম জানান, জাপান সফরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প মাতারবাড়ি নিয়ে। তিনি বলেন, মাতারবাড়ি প্রকল্পে জাপান বড় ধরনের বিনিয়োগ করবে। এ প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৃহৎ অংশ জাপান দেবে। তারা সমুদ্রবন্দর, পাওয়ার প্ল্যান্ট, এলএনজি টার্মিনাল, এবং লজিস্টিক হাব তৈরিতে সহায়তা করবে।

জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পে সক্রিয় রয়েছে। তবে এবার জাপানের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীরাও এই বৃহৎ প্রকল্পে অংশ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। শফিকুল আলম বলেন, জাপানি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ানোর বিষয়টিও সফরের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, এবং এটি অনেকাংশে সফল হয়েছে।

জাপানের মূল বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেটরো)-র সঙ্গে বাংলাদেশ পক্ষের আলোচনাকে প্রেস সচিব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, জেটরোর সঙ্গে আমাদের বৈঠকে তারা বাংলাদেশে নতুন করে বিনিয়োগের ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। বর্তমানে জাপানি বিনিয়োগকারীদের বড় অংশ চীন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডমুখী হলেও বাংলাদেশকে তারা দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনাময় গন্তব্য হিসেবে দেখছেন।

প্রেস সচিব বলেন, জাপানে জনশক্তি পাঠানো নিয়ে ইতোমধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হয়েছে এবং দেশটির সরকার জানিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে তারা ১ লাখ বাংলাদেশি কর্মী নিতে চায়। এই বিষয়টি নিয়ে একটি স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনা করা হবে যাতে দক্ষ শ্রমিক তৈরি, ভাষা প্রশিক্ষণ এবং প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল স্কিল উন্নয়নের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা যায়।

শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর ছিল কেবল অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নয়, এটি ছিল কৌশলগত কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের একটি প্ল্যাটফর্মও। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার ৫০ বছরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও গভীর করতে এই সফর নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

প্রেস সচিব জানান, এই সফরের ফলোআপ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার জাপান ভিত্তিক বিনিয়োগ বাড়াতে একটি ‘জাপান ডেস্ক’ খোলার পরিকল্পনা করছে। এছাড়া জাপানে বাংলাদেশি দূতাবাস এবং দূতাবাসের কমার্শিয়াল উইংকে আরও সক্রিয় করা হবে যাতে আগ্রহী কোম্পানিগুলো প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়।

প্রণোদনা দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে চায় সরকার

প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) বৃদ্ধির বিষয়ে মতামত দিতে পাঁচ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ২৯ মে এ ব্যাপারে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

কমিটির আহ্বায়ক অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, সদস্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান ও অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং সদস্যসচিব বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। প্রজ্ঞাপনে কমিটির কার্যপরিধি হিসেবে বলা হয়েছে, প্রণোদনার মাধ্যমে এফডিআই বৃদ্ধির বিষয়ে পর্যালোচনা করে কমিটি এক মাসের মধ্যে মতামত দেবে।

বিডার চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় দরকার, যাতে বিনিয়োগকারীরা পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে, তা সমাধানের জন্য আমরা এখন নানাবিধ সংস্কার করছি।

বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করে, নতুন প্রকল্পে টাকা আনে কিংবা শেয়ার কেনে—এসবই এফডিআই হিসেবে গণ্য হয়। অর্থাৎ এ অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবেশ করে। তবে বিদেশি কোম্পানিগুলো একই সঙ্গে দেশ থেকে তাদের মুনাফা ফেরত নিয়ে যায়, কখনো কখনো আবার শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নেয় (মূলধন ফেরত)। এগুলো হচ্ছে এফডিআই আউটফ্লো বা বহির্গমন। মোট এফডিআই থেকে আউটফ্লো বাদ দিলে নিট এফডিআই পাওয়া যায়। অর্থাৎ এ অর্থই শেষ পর্যন্ত দেশের অর্থনীতিতে থেকে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০২৩-২৪ সালে দেশে ১২৭ কোটি ৩ লাখ মার্কিন ডলারের নিট বা প্রকৃত এফডিআই এসেছে দেশে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ এফডিআই এসেছে ব্যাংক খাতে, যার পরিমাণ ৪১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২৩-২৪ সালে দেশে মোট এফডিআই আসে ৪২৭ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৩০০ কোটি ডলারই ফেরত নিয়ে গেছেন বিদেশিরা। সে হিসাবে ওই অর্থবছরে দেশে নিট এফডিআই-প্রবাহ ছিল ১২৭ কোটি ডলার, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ১৪৬ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এক বছরে নিট এফডিআই প্রায় ১৯ কোটি ডলার বা ১৩ শতাংশের কিছু বেশি কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের প্রথম ৯ (জুলাই-মার্চ) মাসে ৮৬ কোটি ডলারের নিট এফডিআই এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১১৬ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে এফডিআই কমেছে ২৬ শতাংশ।

দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার আবহাওয়ার এক বিশেষ সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ‘উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আজ সকাল ছয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০৫ কি.মি. পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯৫ কি.মি. পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ২৩০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৪৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আরও ঘনীভূত হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।’

এতে আরো বলা হয়েছে যে নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।