Home Blog Page 12

রটারডামে সবুজ জ্বালানি বাংকারিংয়ে মিলবে বিশেষ সুবিধা

এখন থেকে যেসব জাহাজ নেদারল্যান্ডসের রটারডাম বন্দরে ফুয়েল বাংকারিংয়ের ক্ষেত্রে সবুজ জ্বালানি ভর্তি করবে, সেসব জাহাজ পোর্ট ফিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ছাড় পাবে। সম্প্রতি ঘোষিত জিরো এমিশন মেরিটাইম বায়ারস অ্যালায়েন্স (জিইএমবিএ) কর্মসূচি প্রতিপালন এবং সমুদ্র শিল্পে কার্বন নিঃসরণ কমাতে ভূমিকা রাখা অংশীজনদের স্বীকৃতি প্রদানের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রটারডাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জাহাজে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার এখনও প্রথাগত জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকেই এই রূপান্তরে আগ্রহী হচ্ছে না। শিপিং অপারেটরদের বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে জিইএমবিএ কনসোর্টিয়াম। সম্প্রতি তারা একটি প্রস্তাবনার ঘোষণা দিয়েছে, যেখানে বৈশ্বিকভাবে অন্তত ছয় লাখ টিইইউ কনটেইনারকে স্বল্প নিঃসরণকারী জ্বালানিচালিত জাহাজে করে পরিবহনের কথা বলা হয়েছে। এই কর্মসূচিতে সবুজ জ্বালানি ব্যবহারকারী জাহাজগুলোকে বাড়তি আর্থিক সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

রটারডাম বন্দরের এই সুবিধা ভোগ করতে হলে জাহাজগুলোকে বন্দরে এমন জ্বালানি বাংকারিং করতে হবে, যেগুলো অন্তত ৯০ শতাংশ পর্যন্ত গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাবে। এই ধরনের জ্বালানির মধ্যে রয়েছে গ্রিন মিথানল ও অ্যামোনিয়া।

কনটেইনারে করে গাড়ি পরিবহন শুরু করছে ডিপি ওয়ার্ল্ড

তুরস্কে নিজেদের পরিচালনাধীন ইয়ারিমকা কনটেইনার টার্মিনালে নতুন এক সেবা চালু করেছে ডিপি ওয়ার্ল্ড। দুবাইভিত্তিক বহুজাতিক টার্মিনাল অপারেটর ও লজিস্টিকস কোম্পানিটি নতুন ‘কারস ইন কনটেইনারস’ শিপিং সলিউশনের মাধ্যমে হাজার হাজার গাড়ি কনটেইনারে ভর্তি করে তুরস্কে পরিবহন করছে। মূলত দেশটিতে মোটরগাড়ির সাপ্লাই চেইনে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা দূর করার লক্ষ্যে এই সেবা চালু করেছে তারা।

তুরস্কে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যক্তিগত গাড়ির চাহিদা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। গত জুনে দেশটিতে মোটরগাড়ি বিক্রি হয়েছে রেকর্ড ১ লাখ ১০ হাজার ইউনিট, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। চাহিদার এই ঊর্ধ্বগতির চাপ সামাল দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমসিম খেতে হচ্ছে তুর্কী বন্দরগুলোকে। ফলে গ্রাহকদের কাছে নতুন গাড়ি পৌঁছে দিতে বেশ বিলম্ব হচ্ছে।

সাধারণত মোটরগাড়ি আমদানি করা হয় রো-রো জাহাজে করে, যেখানে গাড়িগুলোকে চালিয়ে জাহাজে প্রবেশ ও বের করে নেওয়া হয়। কিন্তু তুরস্কের রো-রো বন্দরগুলোয় এখন রীতিমতো জট লেগে গেছে। ফলে গাড়িনির্মাতারা সময়মতো দেশটির বাজারে গাড়ি সরবরাহ করতে পারছে না। এতে নতুন গাড়ির ক্রেতাদের তাদের পছন্দের গাড়ি বুঝে পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। ব্যবহৃত গাড়ির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ফলে তুরস্কের বাজারে এখন এই দুই ধরনের গাড়িরই বাজারমূল্য বাড়তির দিকে।

এই অবস্থায় রো-রো ব্যবস্থার ওপর থেকে চাপ কমানো এবং আরও দ্রুততর সময়ে দেশটিতে মোটরগাড়ি সরবরাহের লক্ষ্যে বিকল্প সেবাটি চালু করেছে ডিপি ওয়ার্ল্ড। প্রাথমিকভাবে তারা চীনা গাড়িনির্মাতা চেরি অটোমেটিভের তৈরি ১০ হাজার এসইউভি কনটেইনারের ভেতরে করে পরিবহন করছে। এই কনটেইনারগুলো যেকোনো লিফট-অন-লিফট-অফ পোর্টে প্রথাগত ক্রেন দিয়েই হ্যান্ডলিং করা যাবে। ফলে গাড়িগুলো খালাসের জন্য বিশেষায়িত রো-রো পোর্টের প্রয়োজন হবে না। এতে করে নির্দিষ্ট কোনো বন্দরের ওপর থেকে চাপ অনেকটাই কমে যাবে। কোনো বন্দরে জট তৈরি হলে সেটি এড়িয়ে অন্য কোনো বন্দর দিয়েও গাড়ি আমদানির সুযোগ তৈরি হলো ডিপি ওয়ার্ল্ডের এই সেবার মাধ্যমে।

সেবাটি চালুর জন্য ডিপি ওয়ার্ল্ড ও চেরি অটোমেটিভ বিশেষভাবে নকশাকৃত র‍্যাকিং অ্যারেঞ্জমেন্ট বাস্তবায়ন করেছে, যার ফলে প্রতিটি কনটেইনারে দুটির পরিবর্তে তিনটি করে এসইউভি পরিবহন করা যাচ্ছে। এতে করে গাড়ি পরিবহন বেশ খানিকটা ব্যয়সাশ্রয়ী হচ্ছে, যার সুবিধা ক্রেতারাও পাবেন। পরিবহন খরচ কমে যাওয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে গাড়ির দামও কিছুটা কমে যাবে।

খরায় পানামায় জাহাজ চলাচলে সংকট কাটছেই না

দীর্ঘদিন ধরে চলমান খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে পানামা খালে দৈনিক জাহাজ চলাচলের সংখ্যা দফায় দফায় কমানো হচ্ছে। সম্প্রতি জাহাজ চলাচল সীমিতকরণ নীতি আরও কঠোর করেছে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ নিয়ম অনুযায়ী, ১ নভেম্বর থেকে দৈনিক ৩১টি জাহাজ পানামা খাল অতিক্রম করবে।

পানামা খালে পানি সরবরাহকারী গাতুন লেক দেশটির প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানির যোগান দেয়। অতিরিক্ত খরার কারণে ২০২৩ সালের জুনে গুরুত্বপূর্ণ এই লেকের পানির স্তর ৭৯ ফুটে নেমে আসে, যেখানে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পানির স্তর ৮৮ ফুটের বেশি ছিল। জুনে পানির স্তর কমার পর থেকে এখন পর্যন্ত গাতুনের পানির স্তর ৭৯ থেকে ৮০ ফুটের ভেতরই ওঠা-নামা করছে। পানি স্বল্পতা কাটিয়ে উঠতে জলাধারটির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ। সংস্কার প্রক্রিয়া চলমান বিধায় নতুন নিয়মটি ২০২৪ সালের পুরো শুষ্ক মৌসুম জুড়ে জারি থাকতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

স্বাভাবিক অবস্থায় দৈনিক ৩৬ থেকে ৩৮টি জাহাজ এই নৌপথ পাড়ি দিলেও চলতি বছরের আগস্টে এই সংখ্যা ৩২টিতে সীমিত করে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ঘোষণায় এই সংখ্যা ৩১টিতে নামিয়ে আনা হলো। নতুন শিডিউল অনুযায়ী খালের নিওপানাম্যাক্স লকগুলো দিয়ে দিনে নয়টি ও পানাম্যাক্স লকগুলো দিয়ে ২২টি জাহাজ চলাচল করতে পারবে।

স্বাভাবিক সময়ে পানামা খাল দিয়ে ৫০ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করতে পারলেও খরার কারণে সেটা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে বর্তমানে ৪৪ ফুটে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে বৃহদাকার জাহাজগুলোকে প্রায়ই পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা কমিয়ে পানামা খাল পাড়ি দিতে হচ্ছে।

জাহাজ চলাচল সীমিতকরণের ফলে পানামা খালে প্রবেশের জন্য অপেক্ষমান থাকতে হচ্ছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জাহাজকে। এই জট কিছুটা কমাতে খালে চলাচলের রিজার্ভেশন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এখন থেকে দিনে সর্বোচ্চ ৩০টি জাহাজ রিজার্ভেশনের জন্য বুকিং দিতে পারবে। আর দিনে একটি জাহাজ রিজার্ভেশন ছাড়াই নিওপ্যানাম্যাক্স লক দিয়ে চলাচল করতে পারবে।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ফেব্রæয়ারি থেকে ১২৫ ফুটের বড় জাহাজগুলোকে পানামা খাল অতিক্রম করতে হলে ফ্রেশ ওয়াটার সারচার্জ দিতে হয়। এর আওতায় একটি জাহাজকে যাত্রাপ্রতি ১০ হাজার ডলারের নির্দিষ্ট ফি এবং যাত্রাকালীন সময়ে গাতুন লেকের পানির স্তরের ওপর ভিত্তি করে জাহাজের টোলের ন্যূনতম এক থেকে সর্বোচ্চ দশ শতাংশ পর্যন্ত পরিবর্তনশীল ফি দিতে হয়। জাহাজের ড্রাফট লেভেল কমানোর কারণে ফ্রেশ ওয়াটার সারচার্জের উভয় ধরনের ফি কমানো হয়েছে, যা ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর করা হয়েছে। ফ্রেশ ওয়াটার সারচার্জ কমানোর বিষয়টি জাহাজ মালিকদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক।

অন্যদিকে জাহাজ চলাচল কমে যাওয়ায় চলতি মাসে (অক্টোবর) শুরু হওয়া অর্থবছরে পানামা খালের রাজস্ব ২০ কোটি ডলার হ্রাস পেতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করছে কর্তৃপক্ষ। ভবিষ্যতে যেকোনো পরিস্থিতিতে কার্যক্রম সচল রাখতে এবং আর্থিক লোকসান এড়াতে চলমান সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের চেষ্টা করছে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ।

সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি মাসওয়ারি ১০% কমেছে

নিরাপদ করিডোরের চুক্তি ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ উঠে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানিতে। সেপ্টেম্বরে দেশটি মোট ২১ লাখ টন শস্য রপ্তানি করতে পেরেছে, যা আগের মাসের চেয়ে ১০ শতাংশ কম। ইউক্রেনিয়ান এগ্রিবিজনেস ক্লাব (ইউক্যাব) সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছে।

এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানিয়েছে, গত মাসে ইউক্রেন থেকে উদ্ভিজ্জ তেল রপ্তানি হয়েছে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯০০ টন, যা আগস্টের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম। ইউক্যাবের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে ২৩ লাখ টন খাদ্যশস্য ও ৫ লাখ ৪৯ হাজার টন উদ্ভিজ্জ তেল রপ্তানি করেছিল দেশটি।

অবশ্য রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে স্বাক্ষরিত ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ মেয়াদ শেষের কারণে অকার্যকর হয়ে পড়লেও নিজেদের মতো করে একটি আপদকালীন মানবিক করিডোর চালু করেছে ইউক্রেন। এই করিডোর দিয়ে জাহাজ চলাচলও শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। ইউক্যাব বলছে, এর প্রভাবে অক্টোবরে ইউক্রেনের কৃষিজ পণ্যের রপ্তানিতে খানিকটা উন্নতি দেখা যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাশিয়ার অংশগ্রহণ ছাড়াই ইউক্রেনের পক্ষ থেকে অস্থায়ী মানবিক করিডোরের ঘোষণা আসে গত আগস্টে। তার আগের মাসে ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ থেকে সরে আসে ক্রেমলিন। এতে করে কৃষ্ণসাগরীয় বন্দরগুলো দিয়ে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি পুনরায় হুমকির মুখে পড়ে যায়, যে সংকট প্রথম তৈরি হয়েছিল গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধির জেরে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণসাগর দিয়ে জাহাজগুলোকে নিরাপদে খাদ্যশস্য পরিবহনের সুযোগ করে দিতে একটি মানবিক করিডোর চালুর বিষয়ে একমত হয় ক্রেমলিন ও কিয়েভ। ২০২২ সালের ২২ জুলাই ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ শীর্ষক চুক্তিটি স্বাক্ষর হয়। কিন্তু চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ন্যায্য রপ্তানি সুবিধা না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে এক বছরের মাথায় এটি থেকে সরে আসে রাশিয়া।

কনটেইনারবাহী জাহাজে অগ্নিদুর্ঘটনা বাড়ছে

গত এক দশকে কনটেইনারবাহী জাহাজে অগ্নিকান্ডের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। ওয়ার্ল্ড শিপিং কাউন্সিলের (ডব্লিউএসসি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

বীমাকারী প্রতিষ্ঠান টিটি ক্লাবের হিসাব অনুযায়ী, শিপিং খাতে প্রতি ৬০ দিনে একটি করে বড় ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে। অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে সমুদ্র পরিবহন খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ এবং সরকারি পর্যায়ে নানা ধরনের ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তা সত্তে¡ও কার্গোতে বিপজ্জনক পণ্য পরিবহনের সময় পণ্যের মালিক শিপিং কোম্পানির কাছে তথ্য গোপন করায়, ভুল তথ্য প্রদান, ভুল লেবেল লাগানো এবং সঠিক নিয়মে পণ্য কনটেইনারজাত না করায় অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। 

জার্মান বহুজাগতিক আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা আলিয়াঞ্জ কমার্শিয়ালের ‘২০২৩ আলিয়াঞ্জ সেফটি অ্যান্ড শিপিং রিভিউ’ অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ৬৪টি কনটেইনারবাহী জাহাজে আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে। বছরওয়ারি হিসেবে ২০২২ সালে সমুদ্রে অগ্নি দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৭ শতাংশের বেশি। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আঞ্চলিক জলসীমায় পানামার পতাকাবাহী একটি এমএসসি কনটেইনার জাহাজে আগুন লেগে একজন আহত হন।

ডবিøউএসসির মতে, সামুদ্রিক পরিবেশের সুরক্ষা, কার্গো, জাহাজ ও জাহাজে থাকা ক্রুদের জীবনের নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে জরুরি ভিত্তিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।

ডবিøউএসসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রেসিডেন্ট জন বাটলার বলেন, কার্গোর নিরাপত্তা জোরদার করতে গোটা শিপিং খাত সম্মিলিতভাবে কাজ করলে জাহাজের ক্রুদের পাশাপাশি বন্দর, টার্মিনাল এবং স্থলপথে পণ্য পরিবহনের সাথে যুক্ত সকল কর্মীর জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে। একই সাথে সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ মানুষও ঝুঁকির আওতামুক্ত থাকবে। বিপজ্জনক চালান ঠেকাতে পারলে পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষতা ও নির্ভরতার সাথে পণ্য আনা-নেওয়া করবে এবং এর ফলে পণ্যের সাপ্লাই চেইন অব্যাহত থাকবে।

পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্ক্রিনিং প্রসেস এবং নিয়মনীতি অনুসরণ করে। ক্যারিয়ার কোম্পানিগুলোর মতো করে একটি কার্গো স্ক্রিনিং ও অনুসন্ধান প্রক্রিয়া তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে ডবিøউএসসি, যা শিপিং খাত সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ ব্যবহার করতে পারবে।

ডবিøউএসসির স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগ ‘কার্গো সেফটি প্রোগ্রাম’ ডিজিটাল সলিউশনের ওপর নির্ভর করে কাজ করবে। প্রোগ্রামটি একটি সার্বজনীন স্ক্রিনিং টুল, ভেরিফায়েড শিপার ডাটাবেস এবং কনটেইনার পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদিত ডাটাবেসের ভিত্তিতে শিপিং খাত সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে সহায়তা প্রদান করবে।

বিপজ্জনক কার্গোসহ কনটেইনারগুলো সাপ্লাই চেইনে অন্তর্ভুক্ত হবার আগেই এর ভয়াবহতা শনাক্তকরণ এবং সমস্যার সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে ডবিøউএসসি। ডবিøউএসসির প্রোগ্রামটি মূলত বুকিং তথ্য যাচাই বাঁছাই করে কার্গোর ঝুঁকি নিরুপণ করবে এবং উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ বুকিংগুলোকে চিহ্নিত করে সে সম্পর্কে আরও বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান চালানোর পরামর্শ প্রদান করবে।

উল্লেখ্য, তৃতীয় একটি স্বতন্ত্র পক্ষ ডবিøউএসটির হয়ে ডিজিটাল টুল তৈরি এবং কার্গো সেফটি প্রোগাম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে। 

ট্রানজিটের পণ্য পরিবহনে কলকাতার বন্দরের সাথে সাইফ পাওয়ারটেকের সমঝোতা

ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের মাধ্যমে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে নিয়মিতভাবে পণ্য পরিবহনের পথ খুলেছে প্রায় পাঁচ মাস আগে। এর মধ্যে কোনো চালান আনা–নেওয়া হয়নি। এখন এই পথে ট্রানজিটের পণ্য পরিবহনের সব সেবা দেওয়ার কথা জানিয়েছে টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড।

ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের সেবা দেওয়ার জন্য ভারতের কলকাতার শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দরের সাথে বাংলাদেশের সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সোমবার শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দরের মিলনায়তনে এই সমঝোতা স্মারক সই হয়। প্রথম আলো সাইফ পাওয়ারটেকের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে।

সাইফ পাওয়ারটেক জানায়, সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী কলকাতার শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সাইফ পাওয়ারটেক ট্রানজিট পণ্য পরিবহনে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচনে কাজ করবে। শ্যামা প্রসাদ বন্দর শুধু ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের জন্য নতুন জেটি–সুবিধা চালু করবে।

সমঝোতা স্মারকে সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন এবং শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দরের পরিবহন বিভাগের ব্যবস্থাপক রাজহানস সই করেন। এ সময় কলকাতা শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দরের চেয়ারম্যান রথেন্দ্র রমন উপস্থিত ছিলেন।

সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে জানতে চাইলে তরফদার রুহুল আমিন বলেন, কলকাতার শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর হয়ে সড়কপথে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পরীক্ষামূলক চালান আনা–নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের জন্য নিয়মকানুন জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। ভারতের ব্যবসায়ীদের কম খরচে ও কম সময়ে এই সুবিধার সুফল তুলে দিতে ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের পরিপূর্ণ সেবা দিতে চাই আমরা। আগামী বছরের শুরুতে কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম–মোংলায় নৌপথে জাহাজ নামাবে সাইফ পাওয়ারটেক। আবার এই দুই বন্দর থেকে ট্রানজিটের পণ্য সড়কপথের মাধ্যমে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পরিবহনের সব সেবাও দেব।

ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে (আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল ও মেঘালয়) পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ বেশি লাগে। যেমন কলকাতা থেকে আগরতলার দূরত্ব শিলিগুড়ি হয়ে প্রায় ১ হাজার ৬১৯ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে এই দূরত্ব প্রায় ৫৭৫ কিলোমিটার। সাধারণত ট্রাকে শিলিগুড়ি হয়ে দূরত্ব অতিক্রম করতে ছয় থেকে সাত দিন সময় লাগে। অন্যদিকে শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দর থেকে চট্টগ্রামে বন্দর হয়ে মাত্র চার দিন সময় লাগে।

এ অবস্থায় কম খরচে ও কম সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের সড়ক দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহনে দীর্ঘদিন চেষ্টা চালিয়ে আসছিল ভারত। শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের অক্টোবরে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার বিষয়ে দুই দেশের সচিব পর্যায়ে এ–সংক্রান্ত চুক্তি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকে এ-সংক্রান্ত পরিচালন পদ্ধতির মান বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই হয়।

এরপর ২০২০ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রথম পরীক্ষামূলক চালান আনা-নেওয়া হয়। গত বছর চট্টগ্রাম বন্দর ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে আরও কয়েকটি চালান পরীক্ষামূলকভাবে আনা-নেওয়া হয়। গত এপ্রিলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এক স্থায়ী আদেশের মাধ্যমে নিয়মিত ট্রানজিট পণ্য আনা–নেওয়ার আদেশ জারি করে।

ক্রমবর্ধমান মুল্যস্ফীতিতে চাপের মুখে পড়বে নৌ বীমা শিল্প: আইইউএমআই

নৌ বীমা শিল্পের চলমান ইতিবাচক ধারায় আমূল পরিবর্তনের আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মেরিন ইন্স্যুরেন্স (আইইউএমআই)। সংস্থাটির মতে, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে অদূর ভবিষ্যতে লোকসানের মুখে পড়বে বৈশ্বিক নৌ বীমা শিল্প।

করোনা মহামারির পর বিশ্বজুড়ে সমুদ্র পরিবহন শিল্পে চাঙ্গাভাব ফিরে আসে। পণ্য পরিবহনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জাহাজের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও কমে যায় বাজার সক্ষমতা। এমন অবস্থায় ২০২২ সালে জাহাজের কাঠামোর বৈশ্বিক বীমার প্রিমিয়াম ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে গত বছর নৌপথে দুর্ঘটনার পরিমাণ কমে যাওয়ায় ক্ষতিপূরণ প্রদানের পরিমাণও কম ছিল, যা নৌ বীমাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বিগত বছরটি লাভজনকভাবে শেষ করলেও চলতি বছর মূল্যস্ফীতির প্রকোপে পড়েছে নৌ বীমা শিল্প। মূল্যস্ফীতির দরুণ জাহাজের সরঞ্জাম, শিপইয়ার্ড ও শ্রমিক খরচ বাড়লেও বীমা প্রিমিয়ামের পরিমাণ আগের মতোই আছে। এর ফলে আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে ক্ষতিপূরণ প্রদান কঠিন হয়ে পড়বে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। আইইউএমআই জানায়, ব্যয় বাড়লেও তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়বে না মুনাফা।

আইইউএমআইয়ের ওশান হাল কমিটির চেয়ার ইলিয়াস সাকিরিসি বলেন, কোভিড-পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক শিপিং পুনরায় সচল হয়ে ওঠায় ইস্পাতসহ আরও অনেক প্রয়োজনীয় উপকরণের ঘাটতি দেখা দেয়। মূল্যস্ফীতির কারণে সমুদ্র পরিবহনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।

এদিকে মূল্যস্ফীতি কেবল জাহাজ মেরামত ব্যয় ও ক্ষতিপূরণের পরিমাণকেই প্রভাবিত করছে না, এর কারণে বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও বীমা প্রিমিয়ামের হার বৃদ্ধি না করায় সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বীমাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক মুনাফা হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন সাকিরিস। তার মতে, সামনের দিনগুলোয় মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, বৈদ্যুতিক যানবাহন ও ডার্ক ফ্লিট নৌ বীমা শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

পরিবেশবান্ধব জ্বালানি

২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্র পরিবহন খাতকে কার্বনমুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগুচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)। বৈশ্বিক শিপিং খাত তাই পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও প্রযুক্তি দিকে ঝুঁকছে। জাহাজ চালনার প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর পরিবর্তে নিঃসরণমুক্ত নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে গেলে জাহাজের নির্মাণ খরচ বেড়ে যায়। অত্যাধুনিক জাহাজ বহরের ক্ষতিপূরণ আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হবে বলে জানান সাকিরিস। এছাড়া অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন এবং বর্তমানে প্রচলিত ইঞ্জিনে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করেন তিনি।

বৈদ্যুতিক গাড়ি ও লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি অগ্নিদুর্ঘটনাপ্রবণ হওয়ায় এসব গাড়িবাহী জাহাজও মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকে। বিষয়টি বীমার প্রিমিয়াম বৃদ্ধিতে প্রভাবক হতে পারে

বৈদ্যুতিক গাড়ি লিথিয়ামআয়ন ব্যাটারি

লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক গাড়ি অত্যন্ত দাহ্যতার ঝুঁকিপূর্ণ। এই ধরনের যানবাহন বহনকারী কনটেইনার জাহাজও অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঝুঁকিতে থাকে। লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক গাড়ি বহনের উচ্চঝুঁকির কথা উল্লেখ করে আইইউএমআই জানায়, কার্গো প্রোটোকল অনুসরণের পাশাপাশি এসব জাহাজে অবশ্যই আর্লি ফায়ার ডিটেকশন সিস্টেম, ড্রেঞ্চার ও কার্বন ডাইঅক্সাইডযুক্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। এসব পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া দুর্ঘটনা মোকাবিলা করা বেশ কষ্টসাধ্য হবে।

ডার্ক ফ্লিট

ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। আইএমওর তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে ৩০০ থেকে ৬০০টি ট্যাংকার আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রুশ তেল পরিবহন করছে। এসব জাহাজের বহর ‘ডার্ক ফ্লিট’ বা ‘শ্যাডো ফ্লিট’ নামে পরিচিত। পুরনো, ত্রুটিপূর্ণ ও মেয়াদবিহীন এসব জাহাজ অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এআইএস), মালিকানার বৈধ কাগজপত্র ও বীমা কাভারেজ ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করে। সাকিরিস জানান, গোপনে কার্যক্রম পরিচালনা করায় এসব জাহাজ নিজে যেমন দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকে, তেমনি ব্যস্ত প্রণালী বা বন্দরে অন্যান্য জাহাজের চলাচলকেও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। বর্তমান পরিস্থিতি চলমান থাকলে সামনের দিনগুলোয় ডার্ক ফ্লিট বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে।

বিদেশি ক্রেতাদের পোশাকের মূল্য বাড়ানোর আহ্বান বিজিএমইএ’র

বিদেশি ক্রেতাদের ডিসেম্বর থেকে পোশাকের মূল্য বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিনিধি ও ব্র্যান্ডগুলোর উদ্দেশে বুধবার এ আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়।

চিঠিতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, এ বছরই নতুন করে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো হবে। আপনারা ১ ডিসেম্বর থেকে পোশাকের মূল্য বাড়ান।

তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারির ক্ষত এখনো পুনরুদ্ধার করা যায়নি। এর পরও শিল্পকে স্বচ্ছ এবং টেকসই করতে বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। এখন মূল্যস্ফীতি এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন এবং অন্যান্য খরচসহ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি শিল্পের শ্বাস-প্রশ্বাসের জায়গাকে চাপ দিচ্ছে। পোশাকে দামের স্তরও কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু খরচের ঊর্ধ্বগতি মোকাবেলা করার জন্য সবেমাত্র যথেষ্ট। এ শিল্পের লাইফলাইন শ্রমিকরা মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় সরকার মজুরি বাড়াতে মজুরি বোর্ড গঠন করেছে। ন্যূনতম মজুরি বোর্ড একটি স্বাধীন সংস্থা, যেখানে শ্রমিক, মালিক ও স্বাধীন গোষ্ঠীর সমান প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। মজুরি বোর্ড বর্তমান ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনা করার জন্য কাজ করছে। বোর্ড এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি সভা এবং বর্তমানে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে পরামর্শ করছে। তারা কারখানা পরিদর্শন করে শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করছে। মজুরি বোর্ড স্বাধীনভাবে কাজ করে, তাই মজুরি বৃদ্ধি সম্পর্কে অনুমান করা কঠিন। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরের শেষের আগে একটি নতুন ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হবে। পূর্ববর্তী পর্যালোচনা ও সেই সঙ্গে বিগত পাঁচ বছরের সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতির দিকে তাকাই, তবে বেশ উল্লেখযোগ্য মজুরি বৃদ্ধি হবে।

চিঠিতে বৈশ্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ফারুক হাসান বলেন, পণ্য উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে ক্রেতা, সবাই এখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। মূল্যস্ফীতির হার অভূতপূর্ব উচ্চতায় উঠে যাওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। এতে সমাজে অর্থের প্রবাহ কমে যাচ্ছে, কমছে পণ্যের চাহিদা। একদিকে খুচরা বিক্রয়ের পর্যায়ে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে উৎপাদকরা একেবারে ‘দুঃস্বপ্নের’ মতো পরিস্থিতিতে পড়ে গেছেন। এতে তাদের পক্ষে নিজেদের সক্ষমতা, সরবরাহ, পরিকল্পনা ও পূর্বাভাস সবকিছু ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়েছে।

চীনের বিনিয়োগে অগ্রাধিকার পাবে আসিয়ান

অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দেবে চীন। খবর নিক্কেই এশিয়া।

বিদ্যুতচালিত গাড়ির নির্মাণে ব্যবহৃত নিকেলের মতো খনিজের বড় উৎস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। চীনের বিকাশমান ইভি শিল্পের জন্য উপাদানগুলো গুরুত্বপূর্ণ। দেশটি ২০১৫-১৯ সালের মধ্যে আসিয়ান দেশগুলোয় বিআরআইয়ের অধীনে বিনিয়োগ করেছিল প্রায় ২ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার। ২০২১ সালে সেটা ১ হাজার ৮০ কোটি ডলারে নেমে আসে। মে ব্যাংক সিঙ্গাপুরের জুলাইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিনিয়োগ ৭২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৮৬০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর চায়না অ্যানালাইসিসের সিনিয়র ফেলো গুওনান মা জানান, আগামী পাঁচ বছরে বিআরআই বিনিয়োগ কমে যাবে। কার্বন নিঃসরণ মুক্ত করার পথে রূপান্তর ও ভূরাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চীনের কাছে অগ্রাধিকার পাবে। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের সহযোগী অধ্যাপক উ আলফ্রেড মুলুয়ান জানান, পশ্চিমের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক টানাপড়েনের কারণে চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের বিনিয়োগ বাড়াবে।

মালাক্কা প্রণালি ও দক্ষিণ চীন সাগরের সমুদ্র পথের অবস্থানের কারণে চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। এ পথ দিয়ে চীনের পণ্যের উল্লেখযোগ্য অংশ পরিবহন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান টানাপড়েনের মধ্যে এ অঞ্চলের গুরুত্ব বেড়েছে। যে কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চীনের কাছে কৌশলগত স্বার্থের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে।

মালয়েশিয়ার সানওয়ে ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক কিম লেং জানান, একই সময়ে কাঁচামাল সুরক্ষিত করার পাশাপাশি সরবরাহ চেইন এবং বৈদেশিক অংশীদারত্ব জোরদার করার জন্য চীনের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ দেশের বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রকল্প অব্যাহত থাকবে। উ আলফ্রেড মুলুয়ান সতর্ক করে দিয়ে জানান, মূলধন নিয়ন্ত্রণের কারণে বেসরকারি চীনা কোম্পানিগুলো দেশের বাইরে তহবিল পেতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা এ অঞ্চলে চীনা অর্থনীতির ধীরগতির প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

কুয়ালালামপুরভিত্তিক সোসিও-ইকোনমিক রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লি হেং গুই জানান, চীনের মন্দাভাব বিশ্ব অর্থনীতি, পণ্য ও জ্বালানি তেলের বাজারের পাশাপাশি সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য একটি ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর আগে চীন আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল। তারা বিদেশে প্রায় ২৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ব্যয় করছিল, যা আন্তর্জাতিক পর্যটন খাতে মোট ব্যয়ের ২০ শতাংশ।

অবকাঠামো প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে চীন। দেশটির অর্থনীতির গতি ধীর হওয়ায় আসিয়ান অঞ্চলে প্রকল্পগুলোয় ঋণ পরিশোধের শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা আগামীতে আরো চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতি চীনের প্রতিশ্রুতি শক্তিশালী রয়েছে। ভূরাজনৈতিক স্বার্থ ও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সম্পদ ও বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে এ অঞ্চল।

মাতারবাড়ি চ্যানেল চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে হস্তান্তর

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের উপস্থিতিতে মাতারবাড়ি চ্যানেলের পরিচালনা, সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব গ্রহণ করছেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর চ্যানেল হস্তান্তর করেছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)। বুধবার বন্দর অডিটোরিয়ামে সিপিজিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চ্যানেল হস্তান্তর করেন।

হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল ও বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান, বিপিএএ । এ ছাড়া চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, বন্দরের পর্ষদ সদস্যগণ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক-১, মহাপরিচালক (প্রশাসন), সিএমপি কমিশনার, কাস্টমস কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ও বন্দরের বিভাগীয় প্রধানগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এখন থেকে মাতারবাড়ি চ্যানেলের ব্যবহার, সংরক্ষণ ও পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ চ্যানেলে যাতায়াতকারী সমুদ্রগামী জাহাজের পোর্ট ডিউজ, বার্থ হায়ার চার্জ, পাইলটিং, টাগ চার্জ, বার্থিং-আনবার্থিং ও অন্যান্য চার্জ চট্টগ্রাম বন্দর আদায় করবে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আদায় হবে, যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে।

সরকারের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে সিপিজিসিবিএল মাতারবাড়ি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৫০ মিটার প্রস্থ, ১৮ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার একটি চ্যানেল খনন করেছে। মাতারবাড়ি বন্দর নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী চ্যানেলের প্রশস্ততা ১০০ মিটার বর্ধিত করে ৩৫০ মিটারে উন্নীত করা হয়। নির্মিত চ্যানেল ও হারবার নিরাপদ ও সুরক্ষিত করার জন্য সিপিজিসিবিএল উত্তরে ১ হাজার ৭৫৩ মিটার ব্রেকওয়াটার, দক্ষিণে ৭১৩ মিটার ব্রেকওয়াটার এবং উত্তরে ১ হাজার ৮০৩ মিটার রিভেটমেন্ট (পাথরের দেয়াল) নির্মাণ করেছে। ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের চ্যানেল হস্তান্তর বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্তের আলোকে মাতারবাড়ি চ্যানেল চট্টগ্রাম বন্দরকে হস্তান্তর করা হয়েছে।