Home Blog Page 15

কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম দেশে বিনিয়োগ বাড়াবে

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কমনওয়েলথে যোগদানের পর থেকে বাংলাদেশ সংগঠনটির একটি সক্রিয় অংশ ছিল। ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম বাংলাদেশকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির এক অসাধারণ সুযোগ করে দেবে।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভবনের (বিডা) কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি, উদ্ভাবন প্রচার এবং বাংলাদেশের জন্য একটি টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ অন্বেষণ করতে আগামী ১৩-১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ‘কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম’ এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

সালমান এফ রহমান বলেন, ফোরাম চলাকালীন বাংলাদেশ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সামনে তার বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগগুলো প্রদর্শন করতে সক্ষম হবে। এটি সবার জন্য ইতিবাচক হবে।

বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জনের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ গত সাড়ে ১৪ বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেডআই ফাউন্ডেশনের অংশীদারিত্বে কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিল (সিডব্লিউইআইসি) কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরামটির আয়োজন করতে যাচ্ছে।

কমনওয়েলথ হলো ৫৬টি দেশের সমন্বয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, যা একটি সাধারণ মূল্যবোধের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ এবং এ দেশগুলোতে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ লোক বসবাস করে। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে কমনওয়েলথের ৩৪তম সদস্য হিসেবে যোগদান করে।

বেইজিং কনভেনশনে ১৫ দেশের স্বাক্ষর

ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইফেক্টস অব জুডিশিয়াল সেলস অব শিপসে (যেটি বেইজিং কনভেনশন অন দ্য জুডিশিয়াল সেল অব শিপস হিসেবেও পরিচিত) স্বাক্ষর করেছে ১৫টি দেশ। মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) চীনের বেইজিংয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কনভেনশনটিতে স্বাক্ষর করে চীন, বুরকিনো ফাসো, কমোরোস, এল সালভাদর, গ্রেনাডা, হন্ডুরাস, কিরিবাতি, লাইবেরিয়া, সাও তোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপি, সৌদি আরব, সেনেগাল, সিয়েরা লিওন, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড ও সিরিয়া।

সাধারণত কোনো জাহাজ বা জাহাজমালিকের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দাবি থাকলে যে দেশে ঘটনা ঘটবে, সেই দেশের আদালত সেটি নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা রাখেন। এক্ষেত্রে যদি জাহাজটি বিক্রি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া লাগে, তাহলে সেই আদেশ দেওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে কেবল আদালতের। একে বলা হয় জাহাজের জুডিশিয়াল সেল।

একটি জাহাজের জুডিশিয়াল সেলের ঠিক আগের পর্যায় হলো সেটিকে আটক করা। এই আটকের ক্ষেত্রে দেশভেদে বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের মধ্যে সমন্বয় স্থাপনে অনেকটা অগ্রগতি অর্জন করলেও জুডিশিয়াল সেলের ক্ষেত্রে আইনগত সম্প্রীতি অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। ফলে অঞ্চল ও দেশভেদে এ-সংক্রান্ত আইনগত ভিন্নতা নিয়েই চলছিল অ্যাডমিরালটি ল’। বেইজিং কনভেনশন সেই ভিন্নতা দূর করে জাহাজের জুডিশিয়াল সেলের ক্ষেত্রে আইনগত নিশ্চয়তার সুযোগ তৈরি করবে।

গত বছরের ৭ ডিসেম্বর বেইজিং কনভেনশন গ্রহণ করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। এর খসড়া তৈরি করেছে অ্যান্টওয়ার্পভিত্তিক অলাভজনক আন্তর্জাতিক সংস্থা কমিটি মেরিটাইম ইন্টারন্যাশনাল (সিএমআই)। গত বছরের জুনে এই খসড়া তৈরির কাজটি শেষ হয়। ১৫টি দেশ স্বাক্ষর করলেও এটি এখনই কার্যকর হচ্ছে না। কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী অন্তত তিনটি দেশ অনুমোদন দিলে তবেই কার্যকর হবে বেইজিং কনভেনশন।

বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ৮ সেপ্টেম্বর

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৮ সেপ্টেম্বর বৈঠক করবেন। নয়াদিল্লিতে ওই দিন সন্ধ্যায় দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। ওই বৈঠকে তিস্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনা করবে ঢাকা। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এসব কথা জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সময়টা নিয়ে আমরা প্রথম থেকেই কাজ করছিলাম। ফাইনালি ৮ তারিখ সন্ধ্যার সময় মিটিংটা রাখা হয়েছে।

বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় অনেক ইস্যু আছে। তার সব নিয়েই আলাপ হবে। আমাদের কানেক্টিভিটি ইস্যু আছে। তিস্তার পানির কথা আমরা নিশ্চয়ই বলব। তারপর আমাদের এনার্জি সিকিউরিটি, ফুড সিকিউরিটি নিয়ে আলাপ হবে।

তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে প্রচুর প্রজেক্টও রয়েছে, সেই প্রজেক্টগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে আলাপ হবে। সম্পর্কের সবগুলো অংশ নিয়ে হয়তো আলাপ করার সময় বা পরিসর নেই কিন্তু তার পরও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে আলাপ হবে।

জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ৮ সেপ্টেম্বরই নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে বিশ্বের শিল্পোন্নত ও বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি২০-এর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশগ্রহণের জন্য জোট সদস্যদের বাইরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নয়টি দেশের সরকারপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছে শুধু বাংলাদেশ।

এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর আসন্ন জি২০ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে তিস্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র সচিব।

মাসুদ বিন মোমেন ওইদিন বলেন, আমাদের তিস্তা ওয়াটার শেয়ারিংয়ের যে বিষয়টি আছে, সেটি নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী রেইজ করবেন। আমাদের প্রায় ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদী আছে। গ্যানজেস ওয়াটার ট্রিটিসহ সব বিষয়ে আমাদের জয়েন্ট রিভার কমিশনে আলোচনা চলছে। হাইয়েস্ট পলিটিক্যাল লেভেলে আমরা সবসময় তিস্তার হিস্যা নিয়ে আলোচনা করে এসেছি, আলোচনায় রেখেছি। এবারো আশা করি প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করবেন।

রাক্ষুসে প্রজাতির জন্য প্রতি বছর বৈশ্বিক আর্থিক ক্ষতি ৪২ হাজার কোটি ডলার: আইপিবিইএস

বিশ্বজুড়ে রাক্ষুসে প্রজাতির প্রাণীর (স্থলজ ও জলজ) কারণে প্রতিবছর মানবজাতির প্রায় ৪২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়। এই প্রজাতির মধ্যে ডোরাকাটা জেব্রা ঝিনুক ও লায়ন ফিশের মতো সামুদ্রিক প্রাণীও রয়েছে। ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্লাটফর্ম অন বায়োডাইভার্সিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস (আইপিবিইএস) প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি জরিপ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

‘ইনভেসিভ এলিয়েন স্পিশিজ রিপোর্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে আর্থিক ক্ষতির যে পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে, তার প্রায় ১০ শতাংশের জন্য দায়ী সামুদ্রিক রাক্ষুসে প্রজাতি। মিঠাপানির প্রজাতি দায়ী আরও ১৪ শতাংশ লোকসানের জন্য। তবে সাগরের রাক্ষুসে প্রজাতি নিয়ে উদ্বেগ বেশি হওয়ার বিশেষ কারণ রয়েছে। আর সেটি হলো-উপকূলীয় এলাকায় এই প্রজাতির প্রাণী একবার বসতি গড়লে সেটি নির্মূল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

আইপিবিইএসের তথ্য অনুযায়ী, আধুনিক যুগে বিশ্বজুড়ে অন্যান্য প্রজাতির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পেছনে রাক্ষুসে প্রজাতির (স্থলজ ও জলজ) দায় ৬০ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবজাতির ওপর রাক্ষুসে প্রজাতির সার্বিক প্রভাবের বড় অংশই (৮৫ শতাংশ নেতিবাচক)। অথচ এই মানুষই প্রজাতিগুলোর স্থানান্তর ও ভিন্ন পরিবেশে বসতি গড়ে তোলার সবচেয়ে বড় প্রাথমিক কারণ। আইপিবিইএস জানিয়েছে, রাক্ষুসে প্রজাতির কারণে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি প্রতি দশক অন্তর চারগুণ হচ্ছে।

সামুদ্রিক প্রাণবৈচিত্র্যের ভয়াবহ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ জেব্রা ঝিনুক

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির প্রধান ইঙ্গার অ্যান্ডারসন বলেন, ‘যখন রাক্ষুসে প্রজাতি এক জায়গা থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়, তখন সেখানকার আদি বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জীববৈচিত্র্যের সর্বনাশের পেছনে পাঁচটি বড় কারণের একটি হলো এসব রাক্ষুসে প্রজাতি, যে সংকট বিশ্বের ওপর শক্তভাবে চেপে বসেছে। বাকি চারটি কারণ হলো ভূমি ও সাগরকেন্দ্রিক কর্মযজ্ঞের ধরনগত পরিবর্তন, মাত্রাতিরিক্ত আহরণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণ। আমরা এই চারটি কারণ সম্পর্কে তুলনামূলক ভালো ধারণা রাখি। কিন্তু রাক্ষুসে প্রজাতি সম্পর্কে বৈশ্বিক পর্যায়ে জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি দূর করার ক্ষেত্রে আইপিবিইএসের প্রতিবেদনটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে ।’

প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক সমুদ্র পরিবহন খাতের জন্য কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে, যার বেশিরভাগই পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধভিত্তিক। ২০১৭ সালে কার্যকর হওয়া ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য কন্ট্রোল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অব শিপস ব্যালাস্ট ওয়াটার অ্যান্ড সেডিমেন্টসেও (সংক্ষেপে ব্যালাস্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট কনভেনশন) একই কথা বলা হয়েছে। আইপিবিইএসও মনে করছে, রাক্ষুসে প্রজাতির স্থানান্তর প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে ‘পাথওয়ে ম্যানেজমেন্ট’।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাক্ষুসে প্রজাতি একবার উপকূলীয় এলাকায় বসতি গড়ে তুললে তা নিশ্চিহ্ন করার উদাহরণ খুব বেশি পাওয়া যায় না। অস্ট্রেলিয়া অবশ্য ১৯৯৯ সালে তাদের একটি হারবারে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে এবং ছয় হাজার টন কপার সালফেট প্রয়োগ করে সেখান থেকে জেব্রা ঝিনুকের বসতি নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছিল। তবে অস্ট্রেলিয়ার সেই হারবার ছিল প্রাকৃতিকভাবে আবদ্ধ। উন্মুক্ত উপকূলে এই ধরনের বসতি নির্মূলের ঘটনা প্রায় বিরল।

আইপিবিইএস বলছে, রাক্ষুসে প্রজাতির বিস্তার ঠেকাতে হলে জাহাজের ব্যালাস্ট ওয়াটার ব্যবস্থাপনাকে কঠোরভাবে তদারকির মধ্যে রাখতে হবে। যদিও ব্যালাস্ট ওয়াটার ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক বিধিবিধান চালুর বৈশ্বিক সুফল পর্যালোচনার সময় এখনো আসেনি, তবে উত্তর আমেরিকার গ্রেট লেকসে এর ইতিবাচক প্রভাব এরই মধ্যে পরিলক্ষিত হয়েছে। সেখানে অভিবাসী রাক্ষুসে প্রজাতির বসতি গড়ে তোলার প্রবণতা অনেকটাই কমেছে।

রাক্ষুসে প্রজাতির স্থানান্তর প্রতিরোধে কঠোর বায়োফাউলিং ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি

বিশেষজ্ঞরা জানান, ১৯৫৯ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে প্রতি সাত মাসে একটি অভিবাসী রাক্ষুসে প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যেত। তবে দেশদুটিতে ব্যালাস্ট ওয়াটার ব্যবস্থাপনায় যথাক্রমে ২০০৬ ও ২০০৮ সালে বিধিবিধান চালুর পর নতুন বসতি স্থাপনের ঘটনা ৮৫ শতাংশ কমেছে।

আইপিবিইএস বলছে, ব্যালাস্ট ওয়াটার ব্যবস্থাপনা ছাড়াও আন্তর্জাতিক সমুদ্র পরিবহন খাতকে আরও কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। সাগরে রাক্ষুসে প্রজাতির বিস্তারের প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হলো বায়োফাউলিং (জাহাজের কাঠামোতে এসব প্রাণী আটেকে থাকে এবং জাহাজের সঙ্গে এক অঞ্চল থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়)। বায়োফাউলিং নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক কোনো আইনি কাঠামো চালু করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য কিছু কিছু দেশ তাদের জাতীয় আইনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় নিউজিল্যান্ডের কথা। দেশটির কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে, তাদের উপকূলীয় জলসীমায় রাক্ষুসে প্রজাতির বসতি স্থাপনের পেছনে বায়োফাউলিংয়ে দায় প্রায় ৯৭ শতাংশ। এ কারণে দেশটি জাহাজের বায়োফাউলিং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে জাতীয়ভাবে আইন কার্যকর করেছে।

বৈশ্বিক মেরিটাইম খাতের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হলো ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)। এই খাতের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক বিধিবিধান চালুর দায়িত্বটিও তাদেরই। জাতিসংঘের সমুদ্রবিষয়ক সংস্থাটির রেগুলেটরি এজেন্ডাতে অবশ্য বায়োফাউলিংয়ের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একযুগ আগে তারা এ বিষয়ে একটি দিকনির্দেশনা প্রকাশ করেছিল, তবে তা ছিল ঐচ্ছিক। শিপিং কোম্পানিগুলো তা মানতে বাধ্য নয়। অবশ্য প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিপিং কোম্পানি ফাউলিং প্রতিরোধে স্বেচ্ছায় পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে সাম্প্রতিক এক জরিপ প্রতিবেদনে জানিয়েছে লয়েড’স রেজিস্টার ও নরওয়েজিয়ান কেমিক্যাল কোম্পানি জতুন।

আগস্টে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ

দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রধান গেটওয়ে চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: বন্দর বার্তা

সদ্য শেষ হওয়া আগস্টে পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। আগস্টে ৪৭৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের আগস্টের তুলনায় ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি।

গত মাসে পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিও ইতিবাচক ধারায় আছে। এই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৯৩৭ কোটি ৫১ লাখ ডলারের পণ্য। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সোমবার পণ্য রপ্তানির এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, তৈরি পোশাক ছাড়াও জুতা, প্লাস্টিক পণ্য ও হস্তশিল্পের রপ্তানি চলতি অর্থবছরে বেড়েছে। অন্যদিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, বাইসাইকেলসহ প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি কমেছে।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ৭৯৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। তৈরি পোশাক খাতের মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ আর ওভেন পোশাকের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাকের পর সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য—১৯ কোটি ডলার। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ কম। তারপর কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের রপ্তানির পরিমাণ ১৭ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। এই খাতের রপ্তানি কমেছে দশমিক ৮০ শতাংশ।

চলতি অর্থবছর সরকার পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার। গত অর্থবছর পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলার। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছিল ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলার।

আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি রপ্তানি কমেছে

আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানি কমেছে। দেশটির কিছু প্রক্রিয়াকরণ প্লান্টে উৎপাদন কমে যাওয়া এবং তীব্র দাবদাহের কারণে বিদ্যুৎ ও তা উৎপাদনে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়া এলএনজি রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৩ লাখ ২০ হাজার টন। জুলাইয়ে রপ্তানি ছিল ৭৫ লাখ ১০ হাজার টন। আলোচ্য সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিমুখী এলএনজির প্রধান গন্তব্য ছিল ইউরোপ। মোট এলএনজি কার্গোর ৫২ শতাংশই গেছে সেখানে। এরপর এশিয়ায় ৩০ শতাংশ এবং দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ৭ শতাংশ এলএনজি কার্গো পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সাতটি এলএনজি এক্সপোর্ট প্লান্টে গ্যাস সরবরাহের দৈনিক গড় ১ হাজার ২৩০ কোটি ঘনফুটে নেমে আসে, যেখানে জুলাই মাসে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৭০ কোটি ঘনফুট। আর গত এপ্রিলে তো দৈনিক গড় সরবরাহ ১ হাজার ৪০০ কোটি ঘনফুটের রেকর্ড করেছিল।

খরার কারণে পানামা খালে জাহাজ চলাচলের দৈনিক সংখ্যা ও জাহাজের ড্রাফট কমিয়ে দেওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি কার্গো সুয়েজ খাল অথবা আরও দূরের পথ দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে ঘুরিয়ে এশিয়ায় পরিবহন করা হয়েছে।

রপ্তানি কমলেও আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন কিন্তু আগের মাসের চেয়ে বেশি ছিল। গত মাসে উৎপাদনের পরিমাণ ছিল দৈনিক ১০ হাজার ২২০ কোটি ঘনফুট। জুলাইয়ে তা ছিল দৈনিক ১০ হাজার ২১০ কোটি ঘনফুট। আর্থিক প্রতিষ্ঠান এলএসইজি বলছে, তীব্র গরমের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষ করে টেক্সাসে গ্যাস-নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় গ্যাসের চাহিদা অনেক বেশি ছিল। এ কারণে এলএনজি প্রক্রিয়াকরণ প্লান্টগুলো তুলনামূলক কম গ্যাস পেয়েছে।

সাত দেশে আশঙ্কাজনক মাত্রায় অবৈধ মৎস্য আহরণ: এনওএএ

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) ফিশারিজ সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দ্বিবার্ষিক এই প্রতিবেদনে অবৈধ, অগোচরীভূত ও অনিয়ন্ত্রিত (আইইউইউ) মৎস্য আহরণ ও বাইক্যাচের (অনিচ্ছাকৃত আহরণ) জন্য কয়েকটি দেশকে দায়ী করা হয়েছে। এবারই প্রথম প্রতিবেদনে আইইউইউ মৎস্য আহরণের সংজ্ঞায় জোরপূর্বক শ্রম ও হাঙ্গর শিকারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হাই সিজ ড্রিফটনেট ফিশিং মোরাটোরিয়াম প্রটেকশন অ্যাক্টের অধীনে মার্কিন কংগ্রেসের একটি আদেশের পরিপ্রেক্ষিত্রে দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে এনওএএ। যেসব দেশে অবৈধ মৎস্য আহরণ হয়, সেসব দেশকে এই ধরনের কার্যক্রম প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে এই প্রতিবেদন।

এবারের প্রতিবেদনে সাতটি দেশে আইইউইউ মৎস্য আহরণ হয় বলে শনাক্ত করা হয়েছে। দেশগুলো হলো অ্যাঙ্গোলা, গ্রেনাডা, মেক্সিকো, চীন, তাইওয়ান, গাম্বিয়া ও ভানুয়াতু। এছাড়া চীন ও ভানুয়াতু এই দুটি দেশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে হাঙ্গর শিকার করা হয় বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, চীন ও তাইওয়ানে সিফুড পণ্য উৎপাদনে জোরপূর্বক শ্রম আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনওএএ বলেছে, অবৈধ আহরণ বন্ধ ও মৎস্য সম্পদের সুরক্ষায় এসব দেশের তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রম চালু নেই।

২০২১ সালের প্রতিবেদনে কোস্টারিকা, গায়ানা, সেনেগাল, তাইওয়ান, মেক্সিকো, চীন ও রাশিয়ায় আইইউইউ মৎস্য আহরণ কার্যক্রম হয় বলে শনাক্ত করা হয়েছিল। এবারের প্রতিবেদনে কোস্টারিকা, গায়ানা, সেনেগাল ও তাইওয়ান এনওএএর পজিটিভ সার্টিফিকেশন পেয়েছে। তবে নেগেটিভ সার্টিফিকেশন পেয়েছে মেক্সিকো, চীন ও রাশিয়া।

নতুন শ্রমচুক্তিতে অনুমোদন আইএলডব্লিউইউর সাধারণ সদস্যদের

যুক্তরাষ্ট্রে ইন্টারন্যাশনাল লংশোর অ্যান্ড ওয়্যারহাউস ইউনিয়নের (আইএলডব্লিউইউ) সাধারণ সদস্যরা গত জুনে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ ও প্যাসিফিক মেরিটাইম অ্যাসোসিয়েশনের (পিএমএ) মধ্যে স্বাক্ষরিত শ্রমচুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছেন। এর মাধ্যমে দেশটির পশ্চিম উপকূলীয় বন্দরগুলোয় চলে আসা গত এক বছরের বেশি সময়ের অনিশ্চয়তা ও স্থবিরতার অবসান হতে চলেছে।

আইএলডব্লিউইউ এখন পর্যন্ত নতুন শ্রমচুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে তারা জানিয়েছে, নতুন চুক্তিতে শ্রমিকদের মজুরি ও পেনশন ব্যবস্থায় যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী ছয় বছরে আইএলডব্লিউইউ সদস্যদের মজুরি ৩২ শতাংশ বাড়বে। এদিকে পিএমএ জানিয়েছে, বর্তমানে আইএলডব্লিউইউর পূর্ণকালীন ডক শ্রমিকদের গড় আয় বছরে প্রায় ২ লাখ ডলার। নতুন চুক্তির ফলে ২০২৯ সাল নাগাদ তাদের বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়াবে গড়ে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার ডলার।

পিএমএর সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছনোর পর আইএলডব্লিউইউ নেতারা সংগঠনটির ২০ হাজার সাধারণ সদস্যের কাছে এটি পাঠিয়েছিল অনুমোদনের জন্য। ইউনিয়নের মোট ২৯টি লোকাল ইউনিটের সদস্যরা চুক্তির শর্তগুলো পর্যালোচনা করে ভোট দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) আইএলডব্লিউইউর ব্যালটিং কমিটি জানায়, সংগঠনটির ৭৫ শতাংশ সদস্য নতুন চুক্তির পক্ষে মত দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের ২৯টি বন্দরে কর্মরত ২ হাজার ২০০ ডক শ্রমিকের নিয়োগ চুক্তির মেয়াদ ২০২২ সালের ১ জুলাই শেষ হয়। গত বছর ১০ মে অর্থাৎ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দুই মাস আগে থেকে পরবর্তী চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসে আইএলডব্লিউইউ ও পিএমএ। প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাস্থসেবা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসংক্রান্ত আলোচনা বেশ ইতিবাচকভাবে এগুলোও ২০২২ সালের শেষ দিকে আলোচনার গতি অনেকটাই শ্লথ হয়ে যায়।

কোভিড-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্টের পশ্চিম উপকূলবর্তী বন্দরগুলোর কার্যক্রম অনেক বৃদ্ধি পায়। কাজের গতি বেড়ে যাওয়ায় সে সময় বেশ বড় অংকের লাভের মুখ দেখে বন্দরগুলো। বিশাল সেই আয় থেকে শ্রমিকদের জন্য লভ্যাংশ দাবি করে আইএলডব্লিউইউ। এছাড়া প্রায় এক বছর চুক্তিবহির্ভূতভাবে কাজ করায় শ্রমিকদের ভেতর অসন্তোষ দেখা দেয়। চলতি বছর মার্চ মাস থেকে লস অ্যাঞ্জেলস ও লং বিচ বন্দরে কাজের গতি কমিয়ে দেয় ডক শ্রমিকেরা।

চুক্তির আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় ৬ ও ৭ এপ্রিল শ্রমিকদের কাজ করা থেকে বিরত রাখে ‘আইএলডব্লিউইউ লোকাল ১৩’ ইউনিট। এর ফলে লস অ্যাঞ্জেলস ও লং বিচ বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এরপর লস অ্যাঞ্জেলস, লং বিচ, ওকল্যান্ড, টাকোমা ও সিয়াটল বন্দরে শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে থাকায় ২ জুন পশ্চিম উপকূলের বেশ কয়েকটি বন্দরের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।

দক্ষিণ চীন সাগরের নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদারের উদ্যোগ চীনের

চীনের হালনাগাদ স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপ। এতে নাইন-ড্যাশ লাইনের পাশাপাশি তাইওয়ানের পূর্বদিক দিয়ে আরেকটি ড্যাশ লাইন আঁকা হয়েছে

চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি হালনাগাদ ‘চায়না স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপ’ প্রকাশ করেছে। এই মানচিত্রের মাধ্যমে দেশটি দক্ষিণ চীন সাগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মালিকানা দাবি করেছে। তাদের এই দাবি দক্ষিণ চীন সাগরের উপকূলীয় কয়েকটি দেশ প্রত্যাখ্যান করেছে।

চীন তাদের সমুদ্র সীমানা নির্ধারণে নাইন-ড্যাশ লাইন চার্ট প্রবর্তন করে ১৯৪৭ সালে। নতুন স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপ সেই চার্টেরই হালনাগাদ সংস্করণ। পার্থক্য কেবল এক জায়গায়- এবার আরও একটি ড্যাশ লাইন যুক্ত করেছে তারা, যার মাধ্যমে তাইওয়ানকে তাদের সীমানাভুক্ত করা হয়েছে।

চীনের নাইন-ড্যাশ লাইন নিয়ে শুরু থেকেই আঞ্চলিক বিতর্ক রয়েছে। এই চার্টের মাধ্যমে বেইজিং আক্ষরিক অর্থে দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরোটাই নিজেদের দাবি করে। তাদের এই সীমানারেখার মধ্যে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই ও ইন্দোনেশিয়ার একচ্ছত্র আঞ্চলিক অঞ্চলের (ইইজেড) বড় অংশ পড়েছে। চীনের এই দাবি একেবারেই তাদের নিজস্ব। অন্য কোনো দেশ বা আন্তর্জাতিক সংস্থা নাইন-ড্যাশ লাইনকে স্বীকৃতি দেয়নি। ২০১৬ সালে হেগের স্থায়ী সালিশী আদালত এই বলে রায় দেন যে, চীনের দাবি আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বেইজিং অবশ্য আদালতের এই রায় প্রত্যাখ্যান করেছে।

নাইন-ড্যাশ লাইনের আরেকটি সমস্যা রয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে যে নয়টি ড্যাশ লাইন দিয়ে আবদ্ধ করা হয়েছে, সেই ড্যাশগুলোর মাঝে বড় বড় ফাঁক রয়েছে। এই অঞ্চলের মালিকানা নির্ধারিত নয়।

১৯৪৭ সালের নাইন-ড্যাশ লাইন

ফিলিপাইনের কয়েকজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বলছেন, নাইন-ড্যাশ লাইনের হালনাগাদ সংস্করণ কেবল চীনের আরেকটি ভূরাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা ও অন্যদের বিরক্তির কারণ মাত্র। তবে এবারের ম্যাপে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। চীন এখন এই ড্যাশ লাইনগুলোকে আন্তর্জাতিক সীমানারেখা বলে চালিয়ে দিতে চাইছে। তারা আরও বলছেন, দক্ষিণ চীন সাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমা ও অন্য উপকূলীয় দেশের ইইজেডকে নিজেদের বলে দাবি করা কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। ফিলিপাইন এরই মধ্যে ম্যানিলায় অবস্থিত চীনা দূতাবাসের কাছে এই একতরফা মানচিত্র প্রত্যাখ্যান করে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছে।

মালয়েশিয়া সরকারও চীনের এই হালনাগাদ মানচিত্রের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। নাইন-ড্যাশ লাইন বর্নেও দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে মালয়েশিয়ার ইইজেডের ওপর দিয়ে গেছে। এই লাইন মালয়েশিয়ার সারাওয়াক রাজ্যের এত কাছ দিয়ে গেছে যে, অন্য কোনো দেশের মূল ভূখণ্ড এই লাইনের এতটা নিকটবর্তী নয়। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘নতুন স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপে চীন মালয়েশিয়ার সামুদ্রিক জলসীমার অংশবিশেষকে নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করেছে। মালয়েশিয়া বেইজিংয়ের এই দাবিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না।’

ভিয়েতনামও চীনের নতুন মানচিত্রের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে। এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘নাইন-ড্যাশ লাইনের মাধ্যমে চীন ইস্ট সির কোনো অংশ দাবি করলে ভিয়েতনাম তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।’

এবারের ম্যাপে নাইন-ড্যাশ লাইনকে উত্তরদিকে সম্প্রসারণ করে তাইওয়ানের পূর্ব পাশে আরেকটি ড্যাশ আঁকা হয়েছে। দশম এই ড্যাশের মাধ্যমে তাইওয়ানকে নিজেদের মানচিত্রভুক্ত করেছে চীন। তাইওয়ান সরকার অবশ্য দ্ব্যর্থহীনভাবে এর বিরোধিতা করেছে। তারা বলেছে, ‘তাইওয়ানের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে চীন যে চালই চালুক না কেন, অস্তিত্ব রক্ষার সংকল্প থেকে আমরা কখনই বিচ্যুত হবো না।’

নতুন স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপ অসন্তুষ্ট করেছে ভারতকেও। এই মানচিত্রে ভারতের অরুণাচল প্রদেশের অংশবিশেষকে চীনের মালিকানাধীন করা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘চীনের এই দাবি পুরোপুরি ভিত্তিহীন। এ কারণে আমরা এটি প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা আজ কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি।’

এইচএমএম অধিগ্রহণ অনিশ্চিত হ্যাপাগ-লয়েডের জন্য

দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম শিপিং অপারেটর এইচএমএম অধিগ্রহণে আগ্রহী হয়েছিল তাদের জার্মান প্রতিদ্বন্দ্বী হ্যাপাগ-লয়েড। তবে তাতে বাধ সেধেছে এইচএমএমের সিংহভাগ শেয়ারের মালিক দুই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। দেশীয় স্বার্থকে সুরক্ষা দিতে গিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের নিলাম থেকে জার্মান ক্যারিয়ারটিকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

২০২১ সালে হুন্দাই মার্চেন্ট মেরিন থেকে এইচএমএম নাম ধারণ করা সমুদ্র পরিবহন সংস্থাটির ৭৫ শতাংশ শেয়ারহোল্ডার বিনিয়োগ ব্যাংক কোরিয়া ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (কেডিবি) ও সমুদ্র অর্থায়ন কোম্পানি কোরিয়া ওশান বিজনেস করপোরেশন। তারা চাইছে এইচএমএমের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে যেন দেশীয় অর্থনীতি ও করদাতাদের স্বার্থ সুরক্ষা হয়। এর জন্য আপাতত তিনটি কোরীয় কোম্পানিকেই নিলাম প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে তারা। আর এতেই কপাল পুড়েছে হ্যাপাগ-লয়েডের।

চলতি বছরের শেষ নাগাদ এইচএমএম বিক্রির চুক্তি চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে কোরিয়া সরকারের। আপাতত ৪০ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে দেবে কেডিবি ও কোরিয়া ওশান বিজনেস করপোরেশন। অবশ্য নিকট ভবিষ্যতে শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ৫৮ শতাংশতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।  

২০১৬ সালে দক্ষিণ কোরীয় অপারেটর হানজিন শিপিংয়ের পতনের পর এইচএমএমের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় উদ্যোগী হয় দেশটির সরকার। এরই অংশ হিসেবে পরিচালিত হয় সরকারি বেইলআউট কর্মসূচি, যার অধীনে ইস্যু করা হয় কনভার্টিবল বন্ড। এই বন্ডের বিপরীতেই এইচএমএমের ৭৫ শতাংশ শেয়ার সমানভাবে ভাগাভাগি করে নেয় কেডিবি ও কোরিয়া ওশান বিজনেস করপোরেশন। এর মধ্যে ৫৮ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিলে তাদের হাতে থাকবে ১৭ শতাংশ শেয়ার। এই শেয়ারও পরবর্তীতে কোনো এক সময়ে তারা ছেড়ে দেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

২০১৬ সালে হানজিন শিপিংয়ের পতন কোরীয় সরকারকে বাধ্য করেছিল এইচএমএমের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তা করতে

৪০ শতাংশ শেয়ার বিক্রির বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল যে, কেডিবি ও কোরিয়া ওশান বিজনেস কোম্পানি তাদের স্বদেশী কোনো কনগ্লোমারেটের কাছেই এইচএমএমের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেবে। নিলাম দরপত্র আহ্বানের আগে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান দুটির বরাত দিয়ে কোরীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছিল, সরকার চাইছে এইচএমএম এখন যে অবস্থায় আছে, তাদের সেই অবস্থান ও ব্যবসা যেন অক্ষুণ্ন থাকে।

এইচএমএমের ৪০ শতাংশ শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে ন্যূনতম ৩৭০ কোটি ডলার সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। আর পরবর্তীতে ৫৮ শতাংশ শেয়ার বিক্রি হলে সব মিলিয়ে আসবে ৪৫০ কোটি ডলার।

শেয়ার বিক্রেতা দুই প্রতিষ্ঠানেরই প্রত্যাশা ছিল কোরিয়ার বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠীগুলোর একটি এইচএমএমে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। কিন্তু তা না হওয়ায় তারা বেশ হতাশ হয়েছে। এসএম গ্রুপ অবশ্য ৩০০ কোটি ডলার পর্যন্ত দরপ্রস্তাব করেছিল। কিন্তু অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো এর চেয়ে বেশি দর দিতে রাজি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তারাও পিছু হটেছে।

এইচএমএমের নিয়ন্ত্রণ কোরীয়দের হাতে রাখার যে অভিলাষ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান দুটির রয়েছে, তা দেখে হ্যাপাগ-লয়েড বুঝে গেছে যে, এই নিলাম তাদের জন্য নয়। অবশ্য কিছু গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে যে, নিলাম দৌড়ে থাকা একটি কোরীয় কোম্পানি হ্যাপাগ-লয়েডকে তাদের দলে টেনে যৌথ অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে পারে। এইচএমএমের ক্ষুদ্র শেয়ারহোল্ডাররাও জার্মান কোম্পানিটির পক্ষে রয়েছে। তাদের অভিযোগ, হ্যাপাগ-লয়েডকে নিলাম প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার মাধ্যমে সরকার তাদের বিনিয়োগ স্বার্থ (শেয়ারহোল্ডার ভ্যালু) ক্ষুণ্ন করছে। তারা এটাও বলছে যে, হ্যাপাগ-লয়েডের মতো একটি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোম্পানিকে এইচএমএমের শীর্ষ বিনিয়োগকারী হিসেবে পেলে সেটি অবশ্যই মঙ্গলজনক হতো।

অন্যদিকে কোরিয়ার সমুদ্র পরিবহন খাতের দুটি সংগঠন ফেডারেশন অব কোরিয়ান মেরিটাইম ইন্ডাস্ট্রিজ ও বুসান পোর্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন এইচএমএমের শেয়ার হ্যাপাগ-লয়েড অথবা অন্য কোনো বিদেশী ক্রেতার কাছে ছেড়ে দেওয়ার বিরোধিতা করেছে। তারা বলছে, এইচএমএম কোরিয়ার জাতীয় সম্পদ। বিদেশী কারও কাছে ক্যারিয়ারটির নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিলে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিশ্বের অষ্টম শীর্ষ সমুদ্র পরিবহনকারী সংস্থা এইচএমএম

অবশ্য নিলামে কেবল দেশীয় তিন কোম্পানিকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও উদ্বিঘ্ন হওয়ার মতো একটি বিষয় রয়েছে কোরিয়া সরকারের জন্য। নিলাম দৌড়ে টিকে থাকা হারিম, ডংওং বা এলএক্স হোল্ডিংস-প্রত্যেকেরই আর্থিক সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয় মূলধন থাকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যদিও গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, তিনটি কোম্পানিই নিলামের ন্যূনতম দর ৩৭০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে প্রস্তুত রয়েছে। প্রত্যেকেই অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে তহবিল গড়ে তুলতে চাইছে। হারিম এরই মধ্যে একটি বেসরকারি মূলধনী কোম্পানির সাথে অংশীদারিত্ব তৈরি করেছে।

উল্লেখ্য, এইচএমএম বিশ্বের অষ্টম শীর্ষ সমুদ্র পরিবহনকারী সংস্থা। আর হ্যাপাগ-লয়েড পঞ্চম। দক্ষিণ কোরিয়ার একমাত্র বৈশ্বিক কনটেইনার ক্যারিয়ার হিসেবে বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে রয়েছে এইচএমএম।