Home Blog Page 16

বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠান

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ইউএস বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমেরিকার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নতুন কিছু কোম্পানি এদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। তবে কর কাঠামো নিয়ে কথা বলেছেন তারা। তাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহবান জানিয়ে তিনি বলেছেন, সেখানে বিনিয়োগ করলে ১৫ বছরের কর অবকাশ সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে তাদের সব সমস্যার সমাধানে সরকার সহযোগিতা করবে।

এর আগে অনুষ্ঠানে রাখা বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, কোভিড মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের পটভূমিতে বৈশ্বিক যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা সরকার এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে, তা মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে মার্কিন অংশীদারিত্ব বিশেষ করে মার্কিন উদ্যোক্তাদের পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করায় বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের সিংহভাগ বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

টিপু মুনশি বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হবে। এর ফলে কিছু উন্নত অর্থনীতির দেশের শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার ব্যাহত হবে। কিন্তু জাতি হিসেবে এলডিসি থেকে উত্তরণ দেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের। বাংলাদেশ এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সরকাররের নীতি সহায়তায় বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী উৎপাদন, উচ্চ উৎপাদনশীল কৃষি এবং একটি ক্রমবর্ধমান পরিষেবা খাত দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পৃথিবীর অনেক দেশের জন্য উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে এবং স্বীকৃতি পেয়েছে। কয়েক বছর ধরে প্রায় ৭ শতাংশ গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।

তৃতীয় প্রান্তিকে বিশ্ববাণিজ্যে মাঝারি প্রবৃদ্ধি থাকবে: ডব্লিউটিও

চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বৈশ্বিক বাণিজ্য মাঝারি গতিতে বাড়তে পারে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এ কথা জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমোডিটির উচ্চমূল্য, দুর্বল আর্থিক অবস্থা ও আমদানি চাহিদার মন্দার মতো বিষয়গুলোর কারণে বিশ্ববাণিজ্য প্রত্যাশিত গতিতে বাড়তে পারছে না।

বাণিজ্যের গতিধারা বিশ্লেষণের জন্য পিরিওডিক গুডস ব্যারোমিটার পদ্ধতি ব্যবহার করে ডব্লিউটিও। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তৃতীয় প্রান্তিকের জন্য এই ব্যারোমিটারের মান ৯৯ দশমিক ১ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। সংস্থাটি দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) জন্য ব্যারোমিটার হিসাব করেছিল গত মে মাসে, যেখানে এর মান ছিল ৯৫ দশমিক ৬ পয়েন্ট। সাধারণত পিরিওডিক গুডস ব্যারোমিটারের মান ১০০ পয়েন্ট স্পর্শ করলে ধরে নেওয়া হয় যে, মধ্যমেয়াদি ধারা বজায় রেখে পরবর্তী প্রান্তিকে বৈশ্বিক বাণিজ্যের আকার বাড়বে।

সার্বিকভাবে ২০২৩ সালে বৈশ্বিক বাণিজ্যে ১ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে ডব্লিউটিওর। জেনেভাভিত্তিক সংস্থাটি বলছে, কিছু চাপ থাকলেও এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা এখনো রয়েছে। তবে তার জন্য বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাণিজ্য প্রত্যাশিত মাত্রায় গতিশীল থাকতে হবে।

ডব্লিউটিওর পূর্বাভাস আশাব্যঞ্জক হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অর্থনৈতিক নির্দেশকে মন্দার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অর্থনীতি বিশ্লেষকদের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বন্দর লস অ্যাঞ্জেলেস দিয়ে পণ্য পরিবহন কমেছে বছরওয়ারি ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এদিকে মায়েরস্ক, সিএমএ সিজিএমের মতো শিপিং জায়ান্টরা এরই মধ্যে সতর্ক করে দিয়েছে যে, চলতি বছরের বাকি সময়টায় বৈশ্বিক বাণিজ্য খানিকটা চাপের মধ্যে থাকতে পারে।

ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তেহরানের, সুইস দূতকে তলব

নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ইরানি তেল পরিবহনের অভিযোগ তুলে গত এপ্রিলে সিঙ্গাপুর উপকূলে সুয়েজ রাজন নামক একটি ট্যাংকার আটক করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আটকের পর ট্যাংকারটি থেকে অপরিশোধিত তেল অপসারণ ও বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি সেই তেল অপসারণ শুরু করায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরান।

সিঙ্গাপুরে আটকের পর সুয়েজ রাজনকে ১৩ হাজার নটিক্যাল মাইল দূরে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে আকারে বড় হওয়ার কারণে জাহাজটিকে হিউস্টন বন্দরে ভেড়ানো সম্ভব হয়নি। ৮ লাখ ব্যারেল তেলসহ জাহাজটিকে বন্দরের বহির্নোঙরে রাখা হয়। সেখান থেকে লাইটার জাহাজে করে ট্যাংকারের তেল হিউস্টনের একটি শোধনাগারে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে পরিশোধিত তেল বিক্রি করা এবং তা থেকে অর্জিত মুনাফা সন্ত্রাসবাদে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তায় কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।

তবে ইরানের বিরাগভাজন হওয়ার শঙ্কায় পারস্য উপসাগরে চলাচলকারী কোনো লাইটার জাহাজই গত কয়েক মাস সুয়েজ রাজন থেকে তেল অপসারণে আগ্রহী হয়নি। পরবর্তীতে সুয়েজ রাজনের পরিচালনাকারী কোম্পানি সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে এবং গত ২০ আগস্ট ট্যাংকার থেকে প্রথম দফায় তেল অপসারণ করা হয়। তেল অপসারণের পর বন্দরের আউটারেজে নোঙ্গর করে রাখা ট্যাংকারটির ড্রাফট লেভেল আগের চেয়ে কমেছে। এ থেকেও তেল অপসারণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

সুয়েজ রাজনে থাকা তেল যে ইরানে উত্তোলিত, সেই বিষয়টি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি নিশ্চিত করেছেন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাংকার আটক, তেল অপসারণ, তেল বিক্রি ও অর্জিত মুনাফা সন্ত্রাসবাদে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টনের সিদ্ধান্তে তেহরানের অসন্তোষের বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।

কানানি জানান, ইরানি সরকারের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য সম্প্রতি তেহরানস্থ সুইস দূতাবাসের প্রতিনিধিকে তলব করা হয়। গত চার দশক ধরে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই যুক্তরাষ্ট্রের। এমতাবস্থায় ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পরোক্ষ সংযোগ স্থাপনে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে সুইস দূতাবাস। নিজেদের অসন্তোষের বার্তা মার্কিন প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই মূলত সুইস দূতাবাসের প্রতিনিধিকে তলব করেছে তেহরান।

দ্বিতীয় জাহাজ হিসেবে ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর ছেড়েছে আফ্রিকাগামী প্রাইমাস

গত মাসে রাশিয়া ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ প্রত্যাহার করায় কৃষ্ণ সাগরে আবারও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যুদ্ধের ডামাডোলে রাশিয়ার গোলা বর্ষনের ঝুঁকির মধ্যে দ্বিতীয় জাহাজ হিসেবে ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর ছেড়েছে লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ প্রাইমাস। রোববার (২৭ আগষ্ট) এক টুইটার বার্তায় এই তথ্য জানিয়েছেন ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার কুব্রাকভ।

আফ্রিকায় ইস্পাত পণ্য বহনকারী জাহাজ প্রাইমাস ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ রুশ হামলার ঠিক আগে থেকে ওডেসা বন্দরে অবস্থান করছিলো। কুব্রাকভ জানান, যুদ্ধের কারণে জাহাজটি দীর্ঘ সময় ওডেসা বন্দরে আটকে ছিলো। অবশেষে কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের অস্থায়ী ‘মানবিক করিডোর’ ব্যবহার করে আফ্রিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে প্রাইমাস।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দরগুলো অবরোধ করে রাখে রুশ সেনারা। এতে সমুদ্রপথে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলশ্রুতিতে বৈশ্বিকভাবে খাদ্য সংকট ও মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। এ সংকট দূর করতে গত বছরের ২২ জুলাই জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ চুক্তি স্বাক্ষর করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। চুক্তির ফলে যুদ্ধকালীন দামামার মধ্যে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে খাদ্যশস্য পরিবহনের নিরাপদ করিডোর তৈরি হয়েছিল।

ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ বলবৎ থাকাকালীন সময়ে ওডেসার তিনটি সমুদ্রবন্দর দিয়ে লাখ লাখ টন খাদ্য শস্য রপ্তানি করেছে ইউক্রেন। কিন্তু গত মাসে চুক্তি প্রত্যাহারের পর এই রুটে চলাচলকারী সকল জাহাজকে সম্ভাব্য সামরিক লক্ষ্যবস্তু হিসেবে গণ্য করার হুমকি দেয় রাশিয়া। এর ফলে আবারও অনিরাপদ হয়ে ওঠে ইউক্রেনের বন্দরগুলো।

বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ শিপিং কোম্পানি মায়ের্স্কের টার্মিনাল নির্মাণ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি

প্রধানমন্ত্রীর সাথে এপি-মুলার মায়ের্স্ক গ্রুপের গ্রুপ চেয়ারম্যান রবার্ট মায়ের্স্ক উগলার ও অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল

বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ শিপিং কোম্পানি ডেনমার্কের এপি-মোলার মায়ের্স্ক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালসের কর্ণফুলী নদীর তীরে পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার প্রস্তাবে মৌখিকভাবে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

সোমবার সকালে এপি-মোলার মায়ের্স্ক গ্রুপের গ্রুপ চেয়ারম্যান রবার্ট মার্সক উগলার প্রধানমন্ত্রীর সাথে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে টার্মিনাল নির্মাণে সরকারের সম্মতির কথা জানান। এপিএম টার্মিনালের এ বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের লজিস্টিক্স সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থা অত্যাধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনার পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পর প্রতিষ্ঠানটি দ্রুততম সময়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করবে বলে জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়ার চরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনায় বিনিয়োগের জন্য গত এপ্রিলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল কোম্পানিটি।

চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বিদেশি বিনিয়োগের বিষয় তুলে ধরে বলেন, লালদিয়ায় টার্মিনাল নির্মাণে বিনিয়োগ করবে ডেনমার্ক। সব মিলিয়ে আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরে বন্দরকেন্দ্রিক ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হতে পারে। বন্দরকেন্দ্রিক বিনিয়োগ দিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত শক্তিশালী করা যাবে। এতে একদিকে যেমন দেশের লজিস্টিক্স সাপ্লাই চেইন শক্তিশালী হবে, তেমনি মায়ের্স্কের পথ অনুসরণ করে বিশ্বের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানিও এখানে বিনিয়োগ করবে। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে এ খাতে প্রযুক্তিনির্ভর বিনিয়োগ মাইফলক হিসেবে কাজ করবে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকরাও এপিএম টার্মিনালের প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, টার্মিনাল পরিচালনায় দক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগের মাধ্যমে এগিয়ে আসলে দেশের সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাও একি সাথে উন্নত হবে। এ ধরণের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা।

বর্তমানে বাংলাদেশে তারা ২১টি কনটেইনার জাহাজ পরিচালনা করছে। এ ছাড়া কনটেইনার পরিবহন, গুদাম ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিংসহ লজিস্টিকস খাতে ব্যবসা করছে। বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানির কম-বেশি ৩০ শতাংশ কনটেইনার একাই আনা-নেওয়া করছে কোম্পানিটি।

বাংলাদেশে শিপিং ও লজিস্টিকস খাতে ব্যবসা থাকলেও টার্মিনাল পরিচালনার ব্যবসা নেই তাদের। এপিএম টার্মিনালের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৩৭টি দেশে ৬৫টি টার্মিনাল ও বন্দর পরিচালনা করছে তারা। বাংলাদেশে লালদিয়া টার্মিনালের প্রস্তাব চূড়ান্ত হলে ৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হতে পারে তাদের। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ও স্বয়ংক্রিয় টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায় গ্রুপটি।

বাংলাদেশ কানাডায় পোশাক রপ্তানিতে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে

২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। তখনো কানাডায় শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা পাবে বাংলাদেশ। ২০৩৪ সাল পর্যন্ত অন্যতম এই বড় বাজারে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা থাকবে।

কানাডা সরকার উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জেনারেল প্রেফারেনশিয়াল ট্যারিফ (জিপিটি) স্কিমের আওতায় শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই স্কিমের আওতায় তৈরি পোশাক উৎপাদনের নিয়ম শিথিল করাসহ অন্যান্য পণ্যও দেশটিতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে। নতুন এই স্কিমে শিল্পের শ্রম ও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্সের ওপর ভিত্তি করে এই বাজার প্রবেশাধিকার সুবিধাগুলোকে সম্প্রসারিত করার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান রোববার জানান, কানাডার পার্লামেন্ট গত ৮ জুন একটি ফাইন্যান্স বিল পাস করেছে; সেখানে জিপিটি স্কিমের মেয়াদ ২০৩৪ সালের শেষ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ ২০০৩ সাল থেকে লিস্ট-ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রি ট্যারিফ (এলডিসিটি) স্কিমের আওতায় কানাডায় সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা ভোগ করছে। এলডিসিটি স্কিম জিপিটির আওতায় পড়ে। জিপিটি স্কিম প্রতি ১০ বছর পরপর নবায়ন করা হচ্ছে। স্কিমটির বর্তমান সংস্করণের মেয়াদ ২০২৪ সালের শেষের দিকে শেষ হবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ১১তম শীর্ষ গন্তব্য ছিল কানাডা। এই বাজারে রপ্তানি হয়েছে ১৭২ কোটি ডলারের পণ্য, যা মোট পণ্য রপ্তানির ৩ দশমিক ১০ শতাংশ। আগে বছর দেশটিতে রপ্তানি হয় ১৫২ কোটি ডলারের পণ্য। তার মানে গত অর্থবছর রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশের মতো।

কানাডা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকেরও অন্যতম বড় বাজার। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কানাডায় বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১৫৪ কোটি ডলার। এই রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় সাড়ে ১৬ শতাংশ বেশি। বাজারটিতে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।

রাশিয়ার তেল বহনকারী ট্যাংকারের জন্য প্রিমিয়াম বাড়ালো বিমা কোম্পানিগুলো

রাশিয়ার কৃষ্ণসাগরীয় বন্দরগুলো থেকে তেল পরিবহনকারী ট্যাংকারগুলোর জন্য ‘যুদ্ধকালীন ঝুঁকি প্রিমিয়াম’ বাড়িয়েছে বিমা কোম্পানিগুলো।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানো শুরু করার পর একদফা নিয়মিত প্রিমিয়ামের পাশাপাশি যুদ্ধকালীন ঝুঁকি প্রিমিয়াম আরোপ করেছিল কোম্পানিগুলো। মাঝে ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ চালুর ফলে কৃষ্ণসাগর দিয়ে জাহাজ চলাচলে ঝুঁকি কিছুটা কমেছিল। তবে গত মাসে রাশিয়া চুক্তি থেকে সরে আসার পর এই ঝুঁকি আবার বেড়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় দেশের কৃষ্ণসাগরীয় বন্দরগুলোয় সামরিক কর্মতৎপরতা বেড়েছে। অবশ্য ইউক্রেনের বন্দরগুলোয় কয়েক দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত রুশ বন্দর থেকে তেল বোঝাই করা কোনো ট্যাংকার হামলার শিকার হয়নি। তবে যত সময় গড়াচ্ছে, এই ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মূলত এ কারণেই যুদ্ধকালীন ঝুঁকি প্রিমিয়াম বাড়িয়েছে বিমা কোম্পানিগুলো।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এতদিন যুদ্ধকালীন ঝুঁকি প্রিমিয়াম ছিল কার্গোমূল্যের প্রায় ১ শতাংশ। এখন তা বাড়িয়ে ১ দশমিক ২ থেকে ১ দশমিক ২৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই প্রিমিয়াম বৃদ্ধির ফলে একটি সুয়েজম্যাক্স ট্যাংকারকে (যেগুলো ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ২ লাখ টন তেল পরিবহন করতে সক্ষম) প্রতিবার রাশিয়া থেকে ভারতে তেল পরিবহনের জন্য প্রায় ২ লাখ ডলার বাড়তি প্রিমিয়াম দিতে হবে। কোম্পানিগুলোর নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ট্যাংকার পরিচালনাকারীদের প্রিমিয়ামবাবদ মোট গুণতে হবে প্রায় ১০ লাখ ডলার।

অবশ্য এই বাড়তি প্রিমিয়াম রাশিয়া থেকে তেল রপ্তানির ব্যয় খুব বেশি বাড়াবে না। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিচালনার জেরে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা আরোপ সত্ত্বেও দেশটির তেল রপ্তানি অনেক বেড়েছে। এমনকি ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের অয়েল প্রাইস ক্যাপও রাশিয়ার জ্বালানি রাজস্ব কমাতে পারেনি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাড়তি প্রিমিয়াম কেবল রাশিয়ার তেল পরিবহনকারী ট্যাংকারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। কাজাখস্তানে উৎপাদিত তেল পরিবহন করলে যুদ্ধকালীন ঝুঁকি প্রিমিয়াম আগের মতোই প্রায় ১ শতাংশ থাকবে।

জাপানে দুই জাহাজের মধ্যে সংঘর্ষ, দুই ক্রু নিখোঁজ

দক্ষিণ-পূর্ব জাপানে একটি কনটেইনার জাহাজ ও একটি ছোট আকারের কার্গো জাহাজের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন ক্রু নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া জাপানিজ কোস্ট গার্ড তিনজন ক্রুকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করেছে। তারা তিনজনই আশঙ্কামুক্ত বলে কোস্ট গার্ড জানিয়েছে।

দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনার জাহাজটির নাম কন্টশিপ উনো। এটি লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী এবং গ্রিক কোম্পানি কন্টশিপ কর্তৃক পরিচালিত ১৩ হাজার ৮৩৪ ডিডব্লিউটির একটি জাহাজ। আর ধাতব বর্জ্যবাহী কার্গো জাহাজটির নাম ইজুমি মারু। ১ হাজার ৬৫১ ডিডব্লিউটির জাহাজটি অভ্যন্তরীণ রুটে পণ্য পরিবহন করত।

কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব জাপানের কি চ্যানেলে জাহাজ দুটির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ২৪৮ ফুট দীর্ঘ ইজুমি মারু উল্টে যায়। তবে জাহাজটি পুরোপুরি ডুবে যায়নি। এর তলার অংশটি এখনো পানিতে ভাসমান অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। কোস্ট গার্ড আরও জানিয়েছে, জরুরি সাহায্যবার্তা পেয়ে তাদের ছয়টি প্যাট্রল বোট ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালায়। কার্গো জাহাজটির তিনজন ক্রুকে উদ্ধার করা গেলেও এর ক্যাপ্টেন ও ফার্স্ট অফিসার এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে বাহিনীটি।

দুর্ঘটনার ফলে কন্টশিপ উনোর খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কেবল এর সামনের দিকটা হালকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কী কারণে জাহাজ দুটির মধ্যে সংঘর্ষ ঘটেছে, তাৎক্ষণিকভাবে সেই কারণ জানা যায়নি। দুর্ঘটনার সময় আবহাওয়া বেশ ভালো ছিল এবং দৃষ্টিসীমাও স্বাভাবিক ছিল।

পানামা খালে জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ দীর্ঘায়িত হচ্ছে

পানামা খালে দৈনিক জাহাজ চলাচলের সংখ্যা সীমিতকরণের নিয়ম সহসাই প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পানামা ক্যানেল অথরিটির (এসিপি) কর্তাব্যক্তিরা জানিয়েছেন, খরা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় তারা যে নিয়ম চালু করেছেন, সেটি অন্তত আরও ১০ মাস চালু থাকতে পারে।

চলমান খরায় বাধ্য হয়ে জুলাইয়ে পানামা খাল দিয়ে জাহাজ চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে কর্তৃপক্ষ। তারা নিও-প্যানাম্যাক্স কনটেইনার জাহাজের সর্বোচ্চ গভীরতার সীমা কমিয়ে ৪৪ ফুট বা ১৩ দশমিক ৪১ মিটার নির্ধারণ করে। এছাড়া বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত এই প্যাসেজ দিয়ে দৈনিক জাহাজ চলাচলের সংখ্যা ৩২ টিতে নামিয়ে আনে। যেখানে সাধারণত বর্ষাকালে গড়ে প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৩৬টি জাহাজ পানামা খাল অতিক্রম করে।

কর্তৃপক্ষের এই নিয়ন্ত্রণের ফলে জাহাজমালিকরা তাদের কার্গো লোড কমিয়ে ফেলতে অথবা বিলম্ব এড়াতে বিকল্প পথের খোঁজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এসিপির ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ইলিয়া এসপিনো বলেছেন, খালে প্রবেশের জন্য অপেক্ষমান থাকা এড়াতে জাহাজমালিকরা অগ্রীম রিজার্ভেশন করতে পারেন। এই মুহূর্তে প্রায় ১১৫টি জাহাজ পানামা খালে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে বলে জানান তিনি।

প্রতিটি জাহাজ পানামা খালের লকগুলো অতিক্রমের সময় প্রায় ৫ কোটি ১০ লাখ গ্যালন পানি ব্যবহৃত হয়। আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযোগকারী ৮০ কিলোমিটারের এই জলপথ দিয়ে বিশ্বের মোট সমুদ্র বাণিজ্যের প্রায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়।

ফুকুশিমার তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়ায় জাপানি সিফুড আমদানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা

ব্যাপক সমালোচনা সত্তে¡ও ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানি প্রশান্ত মহাসাগরে ছাড়তে শুরু করেছে জাপান। এ অবস্থায় সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে জাপানের দশটি অঞ্চল থেকে সিফুড আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞারা জারি করেছে চীন, হংকং ও ম্যাকাউ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

২০১১ সালের মার্চে ভয়াবহ সুনামির কবলে পড়ে জাপানে। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার তীব্র ভূমিকম্পে ধ্বংস হয় ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সুনামিতে ফুকুশিমার তিনটি চুল্লি প্লাবিত হয়। পরবর্তীতে সেই অঞ্চলে পারমাণবিক বিপর্যয় ঠেকাতে পাম্পের মাধ্যমে চুল্লিগুলোয় ঠান্ডা পানি প্রবাহিত করা হয়।

দুই বছর আগে তেজস্ক্রিয় পানি অপসারণ করে ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় জাপান। গত মাসে এই উদ্যোগে অনুমোদন প্রদান করে জাতিসংঘের আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) থেকে সাগরে তেজস্ক্রিয় পানি ফেলতে শুরু করেছে জাপান।

ফুকুশিমা দাইচির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানির (টেপকো) তথ্যমতে, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে প্রায় ১৩ লাখ টন তেজস্ক্রিয় পানি রয়েছে। প্রথম দফায় ১৭ দিনে ৭ হাজার ৮০০ ঘনমিটার পানি সাগরে ছাড়া হবে। টেপকো জানায়, এ সময় কোনো ধরনের অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে সাগরে পানি ফেলা বন্ধ করা হবে।

শুরু থেকেই জাপানের এই উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করছে চীন। এক বিবৃতিতে চীনের কাস্টমস ব্যুরো জানায়, এই পানি সাগরে মিশলে সেটা জাপানের মৎস্য ও কৃষিপণ্যকে তেজস্ক্রিয় দূষণের ঝুঁকিতে ফেলবে। অন্যদিকে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠী তথা সমগ্র মানবজাতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলায় জাপানের এমন আচরণকে স্বার্থপরতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

২০২২ সালে চীনে প্রায় ৬০ কোটি ডলারের সিফুড রপ্তানি করেছে জাপান

হংকং, ম্যাকাউয়ের মতো প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোও চীনের সুরে সুর মিলিয়ে জাপানি উদ্যোগের সমালোচনা করছে। শুধু তাই নয়, আজ থেকে জাপানি সিফুড আমদানির ওপর পৃথক পৃথক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশগুলো। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু জানান, জনসাধারণের উদ্বেগ দূর না হওয়া পর্যন্ত ফুকুশিমার মৎস্য ও খাদ্যের ওপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রাখা হবে । 

প্রসঙ্গত, জাপানি সিফুডের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন। ২০২২ সালে চীনে প্রায় ৬০ কোটি ডলারের সিফুড রপ্তানি করেছে জাপান। জাপানি সিফুড আমদানিতে চীনের পরেই রয়েছে হংকং। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে জাপানের মোট রপ্তানিকৃত সিফুডের ৪২ শতাংশের ক্রেতা ছিলো চীন ও হংকং। এই দুটি দেশের নিষেধাজ্ঞা তাই জাপানি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

জাপান সরকার শুরু থেকেই প্রতিবেশী দেশগুলোর অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে আসছে। টোকিও জানায়, চীনা অভিযোগের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। জাতিসংঘের ছাড়পত্র পাওয়ার পরই তারা তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়তে শুরু করেছে এবং পরিবেশের কথা মাথায় রেখে খুবই ধীর গতিতে (আনুমানিক ৩০ বছরে) গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

এছাড়া ফুকুশিমার প্রাকৃতিক পরিবেশ, জনগোষ্ঠী ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত আশপাশের এলাকায় তেজস্ক্রিয় পানির প্রভাব পর্যালোচনা করবে জাপান। সপ্তাহে প্রতি রোববার প্রতিবেদনের মাধ্যমে পর্যালোচনার ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

উল্লেখ্য, পানি ছাড়ার আগেও এর তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরীক্ষা করে দেখেছে টেপকো। আজ প্রকাশিত পরীক্ষার ফলাফল প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফুকুশিমার প্রতি লিটার পানিতে সর্বোচ্চ ৬৩ বেকেরেল (আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপের একক) ট্রিটিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুযায়ী, প্রতি লিটার সুপেয় পানির স্বাভাবিক তেজস্ক্রিয়তা সীমা ১০ হাজার বেকেরেল।

এমতাবস্থায় সিফুডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে চীনকে আমদানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন জাপানের শিল্পমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরা।