Home Blog Page 18

রাশিয়ার জ্বালানি রাজস্বে লাগাম টানতে পারেনি প্রাইস ক্যাপ

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। মস্কোকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে চাপে রাখতে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। রাশিয়ার আর্থিক, জ্বালানি ও রপ্তানি খাতে বহুমুখী প্রতিবন্ধকতা তৈরি সেই প্রচেষ্টারই অংশ। এরই ধারাবাহিকতায় রাশিয়ার জ্বালানি রাজস্বে লাগাম টানতে ব্যারেলপ্রতি সর্বোচ্চ ৬০ ডলারের ‘অয়েল প্রাইস ক্যাপ’ আরোপ করে জি৭ দেশগুলো।

তবে পশ্চিমাদের এই বাধায় রাশিয়ার কোনো লোকসান হয়নি। বরং খুবই সাধারণ একটি কৌশল খাটিয়ে তারা জি৭-এর বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রপ্তানি করছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে এমনটা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শিপিং ফি বাড়ানোর মাধ্যমে গত তিন মাসে কেবল ভারতে তেল রপ্তানি করেই প্রায় ১২০ কোটি ডলার অতিরিক্ত কামিয়েছে রুশ সরবরাহকারীরা।

রাশিয়া তো চাইলে জি৭-এর অয়েল প্রাইস ক্যাপ নাও মানতে পারে। জোটের বাইরের বাজারে বেশি দামে বিক্রি করলেই তো হয়। কিন্তু বাস্তব পেক্ষাপট তেমন সরল নয়। এই প্রাইস ক্যাপ আরোপ করা হয়েছে মূলত জি৭-ভিত্তিক বীমা প্রতিষ্ঠান, ব্রোকার ও অন্যান্য সেবাদাতাদের লক্ষ্য করে। অর্থাৎ প্রাইস ক্যাপের ব্যত্যয় ঘটলে তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হবে রাশিয়ার অথবা তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত তেলবাহী ট্যাংকার ও শিপিং কোম্পানিগুলো। আর বিশ্বে নৌবীমার সিংহভাগ সেবা দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলো। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে প্রাইস ক্যাপ মানতে বাধ্য হচ্ছে রাশিয়া। আর এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশটির জ্বালানি রপ্তানি নিষিদ্ধ না করেই পরোক্ষভাবে তাদের আয় কমাতে চেয়েছিল পশ্চিমা সরকারগুলো।

কিন্তু ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, রুশ রপ্তানিকারকরা কৌশলে তাদের তেল বিক্রিবাবদ নিট আয় ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের বেশি রাখতে সমর্থ হয়েছে। কেবল বাড়তি শিপিং ও হ্যান্ডলিং চার্জ আরোপ করেই এই সাফল্য দেখিয়েছে তারা। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মে থেকে জুলাই পর্যন্ত তিন মাসে রাশিয়ার বাল্টিক বন্দরগুলো দিয়ে মোট যে পরিমাণ অপরিশোধিত তেল রপ্তানি হয়েছে, তার সিংহভাগ পরিবহন করেছে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ট্যাংকার কোম্পানিগুলো। তারা অতিরিক্ত চার্জ আদায়ের ফলে তিন মাসে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনতে ভারতের মোট যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে, তাতে ব্যারেলপ্রতি নিট মূল্য পড়ে যায় প্রায় ৬৮ ডলার, যা প্রাইস ক্যাপে বেঁধে দেওয়া ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের চেয়ে ঢের বেশি।

জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করতে কাজ করছে সরকার : পরিবেশমন্ত্রী

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পকে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব করতে নিরলসভাবে কাজ করছে সরকার। বুধবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর পরিবেশ অধিদপ্তরে তিনি জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ সম্প্রতি হংকং কনভেনশন র‌্যাটিফিকেশন করেছে উল্লেখ করে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, টেকসই জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প গড়ে তুলতে জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন, ২০১৮, বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ বিধি, ২০১১ প্রণয়ন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৪টি শিপইয়ার্ড গ্রিন শিপইয়ার্ডে পরিণত হয়েছে। আরও এক ডজনের বেশি শিপইয়ার্ড গ্রিন শিপইয়ার্ডে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াধীন আছে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের ব্যাপক অবদান থাকলেও পরিবেশগত সুরক্ষা নিশ্চিতে আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক ও তাদের স্বাস্থ্যগত দিকের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।

তিনি বলেন, পরিবেশগত ঝুঁকির দিকগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করার মাধ্যমে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প যাতে বিকশিত হতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী আবু তাহের।

বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙ্গার পরিবেশ ব্যবস্থাপনার বর্তমান অবস্থার ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (ইসিসি) মাসুদ ইকবাল মো. শামীম, জাহাজ ভাঙার কার্যক্রমের বর্তমান অনুশীলন ও ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী।

ঝুঁকির মধ্যেই ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগরীয় ওডেসা বন্দর ছেড়ে গেল কনটেইনার জাহাজ

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঝুঁকির মধ্যেই ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগরীয় ওডেসা বন্দর ছেড়েছে একটি কনটেইনার জাহাজ। জোসেফ শুলতে নামের হংকংয়ের পতাকাবাহী জাহাজটি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকেই ওডেসা বন্দরে আটকে ছিল।

গত মাসে নিরাপদে খাদ্যশস্য পরিবহনের চুক্তি ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয় রাশিয়া। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী রাশিয়াকে খাদ্য ও সার রপ্তানিতে সুযোগ-সুবিধা ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছে না-এমন অভিযোগ থেকেই চুক্তির মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এর আগে গত ১৮ মে চুক্তির মেয়াদ দুই মাসের জন্য বাড়াতে সম্মত হয় রাশিয়া।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দরগুলো অবরোধ করে রাখে রুশ সেনারা। এতে সমুদ্রপথে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলশ্রæতিতে বৈশ্বিকভাবে খাদ্য সংকট ও মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। এ সংকট দূর করতে গত বছরের ২২ জুলাই জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ চুক্তি স্বাক্ষর হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। চুক্তিটির ফলে যুদ্ধকালীন দামামার মধ্যে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে খাদ্যশস্য পরিবহনের নিরাপদ করিডোর তৈরি হয়েছিল।

কিন্তু রাশিয়া সরে আসার পর থেকেই ইউক্রেনের বন্দরগুলো আবার অনিরাপদ হয়ে ওঠে। ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দরগুলোর পরিবর্তে রোমানিয়া হয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানির লক্ষ্যে দানিউব নদীর তীরে অবস্থিত অভ্যন্তরীণ বন্দরগুলো ব্যবহার করতে শুরু করেছিল ইউক্রেন। কিন্তু রাশিয়া হামলা চালায় সেখানেও। চলতি মাসেই দানিউব তীরবর্তী ইজমাইল বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রুশ সেনারা।

এসব ঝুঁকির মধ্যেই গত সপ্তাহে ইউক্রেন তাদের বন্দরগুলোয় আটকে থাকা জাহাজগুলোকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ‘মানবিক করিডোর’ চালুর ঘোষণা দেয়। দেশটি দাবি করে, এই করিডোর যেন কোনো সামরিক কাজে ব্যবহৃত না হয়, সেই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে তারা। ইউক্রেন ঘোষিত এই করিডোর ব্যবহারকারী প্রথম জাহাজ হলো জোসেফ শুলতে।

যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকাল ৬ টায় বন্দর ভবনসহ বন্দরের সকল দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জলযানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল ৯ টায় বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, ওএসপি, এনইউপি, পিপিএম, পিএসসি ও পর্ষদ সদস্যগণ বন্দর ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সাড়ে ৯ টায় বন্দর ভবন চত্বরে বৃক্ষরোপণ করেন বন্দর চেয়ারম্যান। এ সময় সকল বিভাগীয় প্রধানসহ সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ এবং বন্দর কর্মচারী পরিষদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সকাল দশটায় চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ ও বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, ওএসপি, এনইউপি, পিপিএম, পিএসসি এর নেতৃত্বে এক বিশাল শোক র‌্যালী বন্দর ভবন থেকে কাস্টম মোড় হয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।

র‌্যালী শেষে শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সি অডিটোরিয়ামে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীসহ বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও অবদান বিষয়ে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এম এ লতিফ এবং অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান । এ ছাড়াও বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্যগণ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট নিহত সকল শহীদদের। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্য আমরা এই বাংলাদেশ পেয়েছি, বাঙ্গালি জাতি পেয়েছে স্বাধীনতার স্বাদ।

তিনি বাংলাদেশে নারীদের অগ্রযাত্রায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নারী জাতিকে সমান ভাবে সমান সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা অর্জনে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে, তিনি না হলে এ সমুদ্র সীমা অর্জিত হত না।

বন্দর চেয়ারম্যান তাঁর বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু  হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। এ সময় বন্দর চেয়ারম্যান জীবনের সকল ক্ষেত্রে জাতির পিতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, জাতির পিতার নির্দেশনা মেনে চলার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতার রক্তে গড়া এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নে একাত্ন হয়ে সবাইকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে হবে।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, আজকের দিনটি জাতির জন্য কলঙ্কিত একটি দিন, এ দিনে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলতুননেসা মুজিবসহ ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদদের এবং ১৯৭১ সালে যে সকল শহীদরা দেশের জন্য আত্নাহূতী দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জনকে এগিয়ে নিয়েছেন তাদেরকে ও ১৯৭১ সালের শহীদ সকল বন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারীকে।

জাতির পিতার বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, তোমরা দেশকে ভালোবাস, তোমরা বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাস।

যোহরের নামাজের পর বন্দর চেয়ারম্যান, সদস্যগণ ও বিভাগীয় প্রধানগণ ৮নং সড়কের বন্দর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিলে অংশ নেন।

পরে অতিথিবৃন্দ চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ আয়োজিত শোক সভা, খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিলে যোগ দেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদের সভাপতি মো. আজিম সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং সাধারণ সম্পাদক নায়েবুল ইসলাম ফটিক অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

গ্রস টনে গ্রিসকে পেছনে ফেলে শীর্ষ অবস্থানে চীন

গ্রস টনেজের ভিত্তিতে গ্রিসকে পেছনে ফেলে বিশ্বের শীর্ষ জাহাজমালিক দেশ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে চীন। সম্প্রতি সাংহাইভিত্তিক চায়না শিপওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এই দাবি করেছে।

ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্লার্কসনস রিসার্চের তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চায়না ডেইলি। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে চীনের মালিকানাধীন বহরের সম্মিলিত গ্রস টনেজ দাঁড়িয়েছে ২৪ কোটি ৯২ লাখ। গ্রিসের ২৪ কোটি ৯০ লাখ গ্রস টনেজের চেয়ে তা সামান্য বেশি। অবশ্য গ্রস টনেজের ভিত্তিতে এগিয়ে থাকলেও ডেডওয়েট টনের (ডিডব্লিউটি) ভিত্তিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। এই ক্যাটাগরিতে শীর্ষস্থানে রয়েছে গ্রিস।

বর্তমানে বৈশ্বিক বহরের মোট গ্রস টনেজের প্রায় ১৫ দশমিক ৯ শতাংশের মালিক চীন। এই মুহূর্তে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও শিগগিরই এই ব্যবধান বাড়বে। বর্তমানে গ্রিসের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ গ্রস টনের জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ রয়েছে চীনের অর্ডারবুকে।

গ্রস টনেজের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জাপান (১৮ কোটি ১০ লাখ)। এর পরের দুটি অবস্থানে থাকা দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের উভয়ের বহরের আকার ৬ কোটি ৬০ লাখ গ্রস টন।

জাতীয় শোক দিবস পালনে চট্টগ্রাম বন্দরের দিনব্যাপী কর্মসূচি

জাতীয় শোক দিবস পালনে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় বন্দর ভবন চত্ত্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির শুরু হবে। পুষ্পস্তবক অর্পণের পরেই বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বন্দর ভবন চত্ত্বরে একটি গাছের চারা রোপণ করবেন। এ সময় দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

সকাল ১০ টায় প্রথমবারের মতো বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণ ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণে শোক র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। র‌্যালিটি বন্দর ভবন থেকে শুরু হয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে শেষ হবে।

শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে সকাল সোয়া এগারোটায় বন্দর পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষার্থী ও বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন ও অবদান’ শীর্ষক আলোচনা সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হবে। সোয়া ১২ টায় সিবিএর আয়োজনে শোক সভা, খতমে কোরআন ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে কার পার্কিং শেডে।

দিবসটির অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বন্দরের সকল স্থাপনায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে বন্দর ভবন সজ্জিতকরণ, কালো ব্যাজ ধারণ, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে রচনা, হামদ-নাত প্রতিযোগিতা ও বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক বই থেকে অংশবিশেষ পাঠ, ধর্মীয় উপসনালয়ে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা এবং বন্দর ভবনে এলইডি ডিসপ্লেতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও বাণী প্রচার।

বন্দর আবাসিক এলাকার ৮ নং সড়কের মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতে বন্দর চেয়ারম্যান, পর্ষদ সদস্যবৃন্দ, পরিচালকগণ, বিভাগীয় প্রধানগণ অংশগ্রহণ করবেন।

অবৈধ মৎস্য আহরণে খাদ্য ঘাটতিতে আফ্রিকার দেশ গিনি-বিসাউ

দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ মৎস্য আহরণের শিকার হচ্ছে আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ গিনি-বিসাউ। আইন ও নিয়মনীতির ফাঁক-ফোকর কাজে লাগিয়ে অন্যান্য দেশের মাছ ধরার ট্রলার গিনি-বিসাউর অর্থনৈতিক জলসীমায় অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে। অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত এই আহরণের ফলে আফ্রিকার অন্যতম দরিদ্র দেশটিতে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের তথ্য মতে, দীর্ঘদিন লাগাতার আমিষ ঘাটতির দরুণ দেশটির মোট জনসংখ্যার (প্রায় ১৮ লাখ) এক-চতুর্থাংশ বর্তমানে অপুষ্টিতে ভুগছে।

২০১৭ সালে ফ্রন্টিয়ার্স ইন মেরিন সায়েন্সে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানা যায়, পশ্চিম আফ্রিকার ১ লাখ ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার উপকূলজুড়ে গিনি-বিসাউর একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইইজেড) বিস্তৃত। বিস্তীর্ণ এই অঞ্চলে দেশটির প্রায় আড়াই লাখ মানুষ মৎস্য আহরণ করে। ক্ষুদ্র আকারের মৎস্য শিকারিরা গিনি-বিসাউর মোট আমিষ চাহিদার ৩৫ শতাংশের বেশি পূরণ করে থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ, অনিয়ন্ত্রিত ও অগোচরীভূত মৎস্য আহরণের পরিমাণ অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় দেশটির মৎস্য সম্পদ ও আমিষের যোগান ঝুঁকির মুখে পড়েছে। 

ফ্রন্টিয়ার্স ইন মেরিন সায়েন্সের গবেষণা অনুযায়ী, গিনি-বিসাউয়ের মৎস্য সম্পদের বার্ষিক বাজার মূল্য ৪১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর প্রায় অর্ধেক (২৬ কোটি ৭ লাখ ডলার) অবৈধ ও অগোচরীভূত উপায়ে আহরণ করা হয়। অন্যদিকে বৈধভাবে আহরিত মাছের বাজার মূল্যের মাত্র ৩১ শতাংশ (মাছ ধরার ফি ও চুক্তির মাধ্যমে) স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রবেশ করে।

স্থানীয় জেলে মারিও বরিস ফার্নান্দেজ জানান, দুই দশক আগের তুলনায় বর্তমানে মাছের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। বর্তমানে মাছের গুণগত মান ও পরিমাণ উভয়ই পড়তির দিকে। ২০ বছর আগে মাছ ধরার আয় দিয়েই মৌলিক চাহিদাগুলো স্বাচ্ছন্দে পূরণ করতে পারলেও ফার্নান্দেজের মতো স্থানীয় জেলেরা বর্তমানে সংসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে বৈধ উপায়ে মৎস্য আহরণ কমে যাওয়ায় স্বল্প মুনাফায় মাছ বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। 

স্থানীয় জেলেরা জানান, যেখানে স্বল্প মাত্রায় মছ ধরার কথা, সেখানে অবৈধ মৎস্য শিকারীরা ট্রলার দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছ শিকার করছে। চাহিদা অনুযায়ী মাছ সংরক্ষণ করে বাকি মাছগুলো সমুদ্রে ফেলেও দিচ্ছে তারা। মৃত মাছ ফেলে দেওয়ায় সাগরের পানি দূষিত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেখানকার বাস্তুসংস্থান।

অধিকাংশ অবৈধ মাছ শিকারি বিদেশী পতাকাবাহী জাহাজে করে মাছ শিকার করে। এদের অনেকে আবার গিনি-বিসাউয়ের পতাকাও (রিফ্ল্যাগড) বহন করে। গ্রিনপিসের ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই বছরের মার্চ মাসে প্রায় ১৭৭টি বাণিজ্যিক মাছ ধরা জাহাজ গিনি-বিসাউয়ের জলসীমায় কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। যার ভেতর চীন, ফ্রান্স, স্পেন, পানামা, সেনেগাল, পর্তুগাল, গ্রিস, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আফ্রিকার বেশ কিছু দেশের পতাকাবাহী জাহাজ ছিলো।

গিনি-বিসাউ সরকার অবৈধ মাছ শিকার নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন ও জরিমানা আরোপ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং আইনের প্রয়োগ না থাকায় দেশটির মৎস্য সম্পদ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। আইনের প্রয়োগহীনতা ও দুর্নীতি গিনি-বিসাউতে এতটাই প্রকট যে, অবৈধ মাছ শিকারীরা অনেক সময় ঘুষ দিয়ে জরিমানা থেকে ছাড় পেয়ে যায়।

স্থানীয় মাছ শিকারী ও আইনপ্রণেতাদের মতে, কঠোর আইন প্রণয়ণ ও আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং আঞ্চলিক জোট গঠনের মাধ্যমে অবৈধ মাছ শিকারে লাগাম টানা সম্ভব। অন্যদিকে গিনি বিসাউয়ের পরিবেশ উপমন্ত্রীর দাবী, অবৈধ মাছ শিকারিরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় অধিকাংশ সময় তারা সরকারের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।

দুই রপ্তানি তহবিলের সুদহার বেড়েছে

করোনার সময় ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রি-শিপমেন্ট ঋণের জন্য গঠিত পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের সুদহার বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে এ তহবিলের আওতায় গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সুদ হবে ৫ শতাংশ, যা আগে ছিল সাড়ে তিন শতাংশ। এতদিন এই তহবিল থেকে ব্যাংকগুলো দশমিক ৫ শতাংশ সুদে অর্থ নিতে পারতো, এখন ব্যাংক পর্যায়ে সুদহার বাড়িয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে।

রবিবার (১৩ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে।

এদিকে রপ্তানি সহায়ক প্রাক-অর্থায়ন তহবিল (ইএফপিএফ) ঋণের সুদহারও বাড়ানো হয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সুদ ৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ৪ শতাংশ। এছাড়া এ তহবিল থেকে ব্যাংকগুলো অর্থ নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দিতে হবে ২ শতাংশ সুদ, এতদিন যা ছিল দেড় শতাংশ।

আমদানি ব্যয় কমেছে ১৬ শতাংশ

ডলার সংকটের কারণে কড়াকড়ি আরোপ ও কর বাড়ানোর ফলে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের আমদানি ব্যয় প্রায় ১৬ শতাংশ কমেছে। এর আগের অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছিল প্রায় ৩৬ শতাংশ। ফলে শুরু হয় ডলার-সংকট, যার প্রভাব পড়ে পুরো অর্থনীতিতে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি বেড়ে প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি চলে যায়। সে জন্য তা নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে আমদানি ব্যয় কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৭৫ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৫০৬ কোটি ডলার। তার আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় হয়েছিল ৮৯ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ৯১৬ কোটি ডলার। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ছিল ৬৫ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৫৫৯ কোটি ডলার। এখন প্রতি মাসে যে পরিমাণ আমদানি ব্যয় হচ্ছে, তা রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে মিটে যাচ্ছে। তবে বিদেশি ঋণ পরিশোধ, সেবা, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানা খরচ বাবদ বিদেশে অর্থ পাঠানো হচ্ছে। আবার বিদেশি যেসব দায় রয়েছে, সেগুলোও শোধ করতে হচ্ছে।

১ আগস্ট থেকে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ও রপ্তানি বিল নগদায়নে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা করে দাম দিচ্ছে। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এই দাম নির্ধারণ করে।

ছয় দশক পর থামল অনন্য গবেষণা জাহাজ ফ্লিপ

দীর্ঘ ৬০ বছর সমুদ্র গবেষণায় অনন্য অবদান রাখার পর কর্মযাত্রার ইতি টানছে স্ক্রিপস ইনস্টিটিউট অব ওশানোগ্রাফির ফ্লোটিং ইনস্ট্রুমেন্ট প্লাটফর্ম (ফ্লিপ)। সমুদ্র গবেষণার ক্ষেত্রে এই ধরনের গবেষণা জাহাজ আর দ্বিতীয়টি নেই। জাহাজ বলা হলেও কারিগরিভাবে এটি একটি ভাসমান প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করত।

ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়াগোভিত্তিক স্ক্রিপস ইনস্টিটিউট অব ওশানোগ্রাফি মহাসাগর ও ভূবিজ্ঞান বিষয়ক বিশ্বের প্রাচীন ও বৃহত্তম গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। সংক্ষেপে স্ক্রিপস নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠানটি গভীর সাগরে বিভিন্ন ধরনের শব্দের উৎপত্তি, বিস্তার ও প্রভাব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভের উদ্দেশ্যে ১৯৬২ সালে ফ্লোটিং ইনস্ট্রুমেন্ট প্লাটফর্মটি (ফ্লিপ) নির্মাণ করে।

দীর্ঘ ছয় দশকে ভূ-পদার্থবিদ্যা, আবহাওয়াবিদ্যা, সমুদ্রবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শতাধিক গবেষণা করেছে সম্পন্ন ফ্লিপ। ফ্লিপে বসে স্ক্রিপসের গবেষকরা যেমন সাবমেরিনের ব্যবহারের জন্য শব্দ তরঙ্গের প্রসারণবিষয়ক গবেষণা করেছেন, তেমনি গভীর সাগরে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের (যেমন তিমি) আওয়াজ এবং অনুজীবদের মৃদু আওয়াজের ডপলার ইফেক্ট বিষয়ক গবেষণাও পরিচালনা করেছেন।

৩৫৫ ফুট (১০৮ মিটার) দীর্ঘ গবেষণা প্লাটফর্মটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে এটি গভীর সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের ভেতরও নিজের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পারে। শুরুতে এটি জাহাজের মতোই আনুভূমিকভাবে চলাচল করে। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছনোর পর এটিকে সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে ৯০ ডিগ্রি কোণে পেছনের অংশটি সমুদ্রে নিমজ্জিত করা হয়। এর ফলে ফ্লিপের ৩০০ ফুট লম্বা লেজসদৃশ অংশটি সমুদ্রে ডুবে যায় এবং বাকি ৫৫ ফুট (১৭ মিটার) পানির ওপর উলম্ব অবস্থায় ভাসমান অবস্থায় থাকে। উল্টানো বা ফ্লিপিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে।

ফ্লিপের আনুভূমিক অবস্থান থেকে উলম্বভাবে নিমজ্জিত হওয়ার দৃশ্য

ফ্লিপের ভাসমান ৫৫ ফুট অংশটিতে বসেই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। প্লাটফর্মটিতে ডপলার সোনার, হাইড্রোফোন, সেন্সরের পাশাপাশি তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের জন্য দুইটি গবেষণাগার রয়েছে। গবেষণা শেষে যখন প্লাটফর্মটিকে পুনরায় জাহাজের মতো ভাসানো দরকার হয়, তখন ডুবে থাকা অংশের ব্যালাস্ট ট্যাংকগুলোয় সংকুচিত বাতাস পাম্প করে ক্রুরা একে পুনরায় উল্লম্ব থেকে অনুভূমিক অবস্থায় নিয়ে আসে।

নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোর পর উলম্ব অবস্থায় প্লাটফর্মটিকে হয় স্রোতের ওপর ভাসিয়ে রাখা হতো, না হয় নোঙ্গরের সাহায্যে সাগরের তলদেশের সঙ্গে আটকে রাখা হতো। তবে এটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছিল, যাতে করে স্রোতে ভাসমান অবস্থায়তেও এর স্থিতিস্থাপকতায় কোনো প্রভাব পড়ত না। সাগরে ২০ ফুট উঁচু উত্তাল ঢেউ থাকলেও প্ল্যাটফর্মটি মাত্র শূন্য দশমিক ৫ ইঞ্চি (১ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার) ওঠানামা করে। স্ক্রিপসের সমুদ্রবিজ্ঞানী জন হিল্ডারব্র্যান্ড বলেন, ‘ফ্লিপে মাঝ সাগরে বসে কাজ করার সময়ও মনে হতো আমরা স্থলভাগেই রয়েছি। উত্তাল সাগরে এই ধরনের অনুভূতি আসলেই অসাধারণ।’

উল্লম্ব বা খাড়াভাবে অবস্থানকালে ফ্লিপে একসঙ্গে ১১ জন গবেষক ও ৫ জন ক্রু কাজ করতে পারতো। গবেষণা জাহাজটিতে ১৬ জন মানুষের এক মাসের রসদ মজুদ করা যেত। এর ফলে স্ক্রিপসের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা অন্তত ৩০ দিন গভীর সাগরে নিশ্ছিদ্র মনোযোগে গবেষণা করার সুযোগ পেতেন।

সুদীর্ঘ সময় কার্যক্ষম থাকলেও বর্তমানে ফ্লিপকে স্ক্র্যাপইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্ক্রিপস। তবে অনন্য গবেষণা জাহাজটির স্মৃতি ধরে রাখতে স্ক্র্যাপইয়ার্ডে নেওয়ার আগে এর একটি বুম সংরক্ষণ করা হবে।