Home Blog Page 19

এফএসও সেফার থেকে ১১ লাখ ব্যারেল তেল স্থানান্তর সম্পন্ন

লোহিত সাগরে ইয়েমেন উপকূলে নোঙর করে রাখা পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ ফ্লোটিং স্টোরেজ অফশোর (এফএসও) ইউনিট সেফার থেকে শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার পদ্ধতিতে যতটুকু সম্ভব তেল স্থানান্তর সম্পন্ন হয়েছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) তত্ত্বাবধানে গত ২৫ এই স্থানান্তর কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। আর তেল স্থানান্তরের কাজটি করছে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কোম্পানি রয়েল বোসকালিস ওয়েস্টমিনস্টারের সাবসিডিয়ারি স্মিট স্যালভেজ।

শুক্রবার (১১ আগস্ট) খবরটি নিশ্চিত করে একে অনেক বড় একটি সফলতা হিসেবে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। তারা বলেছে, এই কাজের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে কয়েক বছর সময় লাগলেও সম্ভাব্য পরিবেশগত বিপর্যয় এড়াতে সক্ষম হওয়াটা অনেক বড় একটি অর্জন। সেফারের তেল ছড়িয়ে পড়লে লোহিত সাগরের অনেকখানি জায়গাজুড়ে বাস্তুতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে যেত। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এই সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট টিম, দাতা সংস্থা ও অংশীজনদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

ইউএনডিপি ও স্মিট স্যালভেজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে সেফার থেকে প্রায় ১১ লাখ ব্যারেল লাইট ক্রুড (অপরিশোধিত তেলের একটি গ্রেড) এমওএসটি ইয়েমেন নামের একটি ট্যাংকারে স্থানান্তর করা সম্পন্ন হয়েছে। অবশ্য দুই শতাংশেরও কম তেল এখনো সেফারে রয়ে গেছে। তবে সেগুলো সাধারণ প্রক্রিয়ায় অপসারণ করা সম্ভব নয়। কারণ এই তেল সেফারের ট্যাংকের নিচের খাদের সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় রয়েছে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে এই খাদমিশ্রিত তেলের যতটা সম্ভব অপসারণ করা হবে। এই তেলও এমওএসটি ইয়েমেনে সংরক্ষণ করা হবে। স্মিট স্যালভেজ জানিয়েছে, এ কাজে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এদিকে ইউএনডিপির কর্মকর্তারা বলছেন, যতটুকু কাজ বাকি রয়েছে, তা সম্পন্ন করার জন্য দুই-তিন সপ্তাহ বরাদ্দ রেখেছেন তারা।

শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার পদ্ধতিতে ঝুঁকিপূর্ণ এফএসও সেফার থেকে তেল ইউএনডিপির কেনা ট্যাংকার এমওএসটি ইয়েমেনে নেওয়া হচ্ছে

এমওএসটি ইয়েমেন হলো ৩ লাখ ৭ হাজার ডিডব্লিউটির একটি ডাবল হালের ট্যাংকার, যেটি ইউরোন্যাভের কাছ থেকে কিনে ইয়েমেনকে দিয়েছে ইউএনডিপি। ২০০৮ সালে নির্মিত ট্যাংকারটির আগের নাম ছিল নটিকা।

বোসকালিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পিটার বের্দোওস্কি জানান, স্মিট স্যালভেজের টিম গত মে মাসের শেষের দিক থেকেই ঘটনাস্থলে রয়েছে। নিরাপদে তেল অপসারণের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে দুই বছরের বেশি সময় ধরে ইউএনডিপির সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া সেফারের কাঠামো, ট্যাংক ও কার্গোর অবস্থা পৃঙ্খানুপুঙ্খরূপে পর্যালোচনার পরই তেল স্থানান্তরের চূড়ান্ত কর্মতৎপরতা চালানো হয়েছে। এক্ষেত্রে সব ধরনের নিরাপত্তা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

অনেকদিন ধরেই সেফারকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে সতর্ক করে আসছিল জাতিসংঘ। লোহিত সাগরে ইয়েমেন উপকূল থেকে ৪ দশমিক ৮ নটিক্যাল মাইল গভীরে রাস ইসা অঞ্চলে ১৯৮৮ সাল থেকে নোঙর করে রাখা আছে এটি। সেফার আসলে একটি রূপান্তরিত সুপার ট্যাংকার। ইয়েমেনের মারিব তেলক্ষেত্র থেকে আসা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল গ্রহণ, সংরক্ষণ ও রপ্তানির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল এটি। তবে ২০১৫ সালে ইয়েমেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই এর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এমনকি এই দীর্ঘ সময়ে এফএসওটিতে কোনো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিদর্শন কার্যক্রমও সম্পন্ন হয়নি।

সেফারের কাঠামোগত অবস্থা ক্রমেই খারাপ হওয়ায় এটি আর ঠিক করাও যাবে না বলে মনে করে জাতিসংঘের সমুদ্রবিষয়ক সংস্থা আইএমও। ইউনিটটি ভেঙে পড়লে বা সেখানে কোনো বিষ্ফোরণ ঘটলে যে পরিমাণ তেল ছড়িয়ে পড়বে, তা আটকানোর সক্ষমতা ইয়েমেনের নেই। এ কারণে সম্ভাব্য সেই বিপর্যয় ঠেকানোর পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে সহায়তা চেয়েছিল সংস্থাটি।

স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণে বার্জ থেকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাজ্য

গত সপ্তাহের শুরুতে অ্যাকোমোডেশনাল বার্জ বাইবি স্টকহোমে ৩৯ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর থাকার ব্যবস্থা করে যুক্তরাজ্য সরকার। তবে সপ্তাহ না পেরুতেই স্বম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণে ‘আপাত সতর্ককতামূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে বার্জ থেকে সকল অভিবাসনপ্রত্যাশীকে সরিয়ে নিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শুক্রবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমস্যার গভীরতা ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে বর্তমানে বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে।

প্রতি বছর হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে সমুদ্র পথে পাড়ি জমায়। আটক ব্যক্তিদের অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে হোটেল ভাড়া করতে গিয়ে মোটা অংকের অর্থ গুণতে হয় যুক্তরাজ্য সরকারকে। অন্যদিকে এসব হোটেলে থাকার সুব্যবস্থার কারণে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমাতে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

এমন পরিস্থিতিতে মূলত হোটেল ভাড়াবাবদ খরচ কমানো এবং অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে অ্যাকোমোডেশন ভেসেল বাইবি স্টকহোম ভাড়া করে ব্রিটিশ সরকার।

ইংল্যান্ডের ডরসেটের পোর্টল্যান্ড বন্দরে নোঙর করা বাইবি স্টকহোমে গত সপ্তাহের শুরুতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আবাসনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। তবে প্রক্রিয়া শুরুর প্রাক্কালেই সেখানকার পানিতে লিজিওনেলা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লিজিওনেলা ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করার বিষয়টি তখনই সরকারকে অবহিত করা হয়। লিজিওনেলা সংক্রামিত পানি বাতাসে মিশে নিঃশ্বাসের সাথে মানবদেহে প্রবেশ করলে তা ফুসফুসের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাইবি স্টকহোমে থাকা বেশকিছু অভিবাসনপ্রত্যাশী গলা ব্যথা ও কাশির সমস্যায় ভুগছেন। যদিও যুক্তরাজ্য সরকারের দাবি, ৩৯ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর প্রত্যেকেই বর্তমানে সুস্থ আছেন। সতর্কতামূলকভাবেই আগেভাগে তাদেরকে বার্জ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জাহাজে থাকা মেডিক্যাল টিম পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরই তাদেরকে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে।

উল্লেখ্য, এপ্রিলের শুরুতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অস্থায়ীভিত্তিতে থাকার জন্য অ্যাকোমোডেশন ভেসেলটি ভাড়া করে যুক্তরাজ্য সরকার। ভেসেলটি অন্তত ১৮ মাসের জন্য ভাড়া করা হয়েছে। ১৯৭৬ সালে নির্মিত অ্যাকোমোডেশন ভেসেলটি সংস্কার করে এতে বর্তমানে ৫০০টি বেড যুক্ত করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্য সরকার জানায়, পরিবার পরিজন ছাড়া যেসব পুরুষ অভিবাসনের আশায় একাকী যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমায়, মূলত তেমন ২০০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীতে এখানে থাকতে দেওয়া হবে।

বিরোধী দল ও সমালোচকরা শুরু থেকেই সরকারের এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আসছেন। তাদের মতে, একটি বার্জে এত ব্যক্তির আবাসনের ব্যবস্থা করায় তাদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিরোধী দলের কড়া সমালোচনা স্বত্ত্বেও সরকার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করে।

বিরোধী দলীয় মন্ত্রী লিজিওনেলা ব্যাকরেটিয়ার উপস্থিতি এবং বার্জ থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে বিপর্যয়ের সঙ্গে তুলনা করেন। তবে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দ্রæত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সরকার।

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে ৪১ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যুর আশঙ্কা

মধ্য ভূমধ্যসাগরে সম্প্রতি নৌকাডুবির ঘটনায় ৪১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বরাত দিয়ে ইতালীয় কর্তৃপক্ষ এ কথা জানিয়েছে।

বরাত অনুযায়ী, তিউনিসিয়ার এসফ্যাক্স শহর থেকে ৭ মিটার দীর্ঘ নৌকায় করে ইউরোপের পথে পাড়ি জমান ৪৫ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী। তাদের মধ্যে তিনজন ছিল শিশু। যাত্রার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিশাল ঢেউয়ের ধাক্কায় নৌকাটি উল্টে যায় এবং এক পর্যায়ে ডুবে যায়। তাদের মধ্যে কেবল চারজনকে একটি কার্গো জাহাজ জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে তাদের ইতালীয় কোস্ট গার্ডের একটি জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। সেই জাহাজে করে চারজনকে ইতালীয় দ্বীপ লাম্পেদুসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

বেঁচে যাওয়া চারজন জানান, নৌকাটিতে সবাই লাইফ জ্যাকেট পরিধান করা অবস্থায় ছিলেন না। তারাসহ কয়েকজন মাত্র লাইফ জ্যাকেট পরেছিলেন। নৌকাটি উল্টে যাওয়ার পর কার্গো জাহাজটি উদ্ধার করার আগ পর্যন্ত তারা পানিতে ভাসছিলেন।

এদিকে গত রোববার (৬ আগস্ট) ইতালীয় কোস্ট গার্ড দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় ৫৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে জীবিত ও দুজনের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানায়। গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, এই দুটি নৌকার মধ্যে অন্তত একটি তিউনিশিয়ার এসফ্যাক্স থেকে রওনা করেছিল। তবে ওয়াকিবহাল একটি সূত্র জানিয়েছে, উল্লিখিত চারজন যে নৌকায় যাত্রা করেছিলেন, সেটি কোস্ট গার্ডের দেওয়া তথ্যের সেই নৌকা দুটির একটি নয়।

এছাড়া পৃথক একটি খবরে তিউনিসিয়া কর্তৃপক্ষ সোমবার (৭ আগস্ট) জানায়, তারা রোববার এসফ্যাক্সের নিকটবর্তী স্থানে একটি নৌকাডুবির ঘটনায় ১১ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। ওই ঘটনায় ৪৪ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর নিখোঁজ থাকার কথা জানায় কর্তৃপক্ষ।

জাহাজের হাল যখন ভাগ্যান্বেষণের অবলম্বন

রোমান ইবিমেনে ফ্রাইডে ও থ্যাংকগড ওপেমিপো ম্যাথু ইয়েইয়ে

দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভেদ করে নতুন করে ভাগ্য লিখতে একটি কার্গো জাহাজের হালে চেপে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন চার নাইজেরিয়ান যুবক। উত্তাল সাগরের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা শেষে যখন তারা স্থলভাগের দেখা পেলেন, ততদিনে একে একে কেটে গেছে ১৪দিন।

ভাগ্য তাদের বাড়ি থেকে সাড়ে তিন হাজার মাইল দূরের এমন এক দেশে নিয়ে গেছে, যে দেশের ফুটবল দল ছাড়া আর কোনো কিছু সম্পর্কেই তাদের জানা নেই। ব্রাজিল বন্দরে সেই দেশের পুলিশ বাহিনীর কাছে জায়গার নাম শুনে রীতিমতো আকাশ থেকে পড়েন রোমান ইবিমেনে ফ্রাইডে ও তার তিন সাথী। তাদের দুজন এতটাই আশাহত হন যে, ব্রাজিল সরকারের কাছে নাইজেরিয়ায় ফেরত যাওয়ার আর্জি জানান তারা।

তবে দুই বছর চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘোরা ফ্রাইডে আবার সেই অনিশ্চিত জীবনে ফিরতে রাজি হননি। বিধবা মা এবং ছোট তিন ভাইবোনের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই জাহাজের হালের ছয় ফুট বাই ছয় ফুট ছোট্ট জায়গাটায় চড়ে বসেছিলেন তিনি। যাত্রা শুরুর নয়দিনের মাথায় সাথে আনা সামান্য খাবার ও পানিও ফুরিয়ে গেছিলো। নিজেদের চাঙ্গা রাখতে এরপর সাগরের নোনাজল ও টুথপেস্টের দ্বারস্থ হন তারা।

বিপজ্জনক যাত্রা শেষে উদ্ধারকর্মীদের কাছে অমৃতসম পানি নিচ্ছেন ইবিমেনে ফ্রাইডে ও সঙ্গীরা

ফ্রাইডের মতোই ব্রাজিলে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী থ্যাংকগড ওপেমিপো ম্যাথু ইয়েইয়ে। নাইজেরিয়ার লাগোস প্রদেশে বাদাম ও পাম অয়েলের ছোট্ট একটা খামার ছিল তার। তবে চলতি বছরের শুরুতে বন্যায় সব ভেসে যাওয়ায় স্ত্রী আর ছোট ছোট দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে পথে বসেন ইয়েইয়ে।

বেকারত্ব ও দারিদ্র্যে জর্জরিত নাইজেরিয়ায় আর কোনো আশার আলোই দেখতে পাচ্ছিলেন না ইয়েইয়ে ও তার সফরসঙ্গীরা। জীবনকে নতুন ভাবে ঢেলে সাজাতেই তাই এই দুঃসাহসী অভিযানে নেমে পড়েন তারা।

বিপদসংকূল দীর্ঘ এই যাত্রা তাদের জন্য মোটেও সহজ ছিলো না। ঠান্ডা ইস্পাতের ছোট্ট কাঠামোয় ঠায় বসে থাকা ছাড়া করার কিছু ছিলো না। পায়ের নীচে ঘূর্ণিপাক খাচ্ছিলো আটলান্টিকের গভীর জলরাশি। পথে বেশ কবার হাঙ্গরের দেখাও পেয়েছেন তারা। কায়মনোবাক্যে পুরো যাত্রাপথ ঈশ্বরকে স্মরণ করেছেন ফ্রাইডে।

ছয় ফুট বাই ছয় ফুটের এই হাল যেন তাদের কাছে ভাগ্য পরিবর্তনের সারথি

ফ্রাইডের ঈশ্বর তাকে নিরাশ করেনি। ফাইডেকে তিনি এমন এক দেশে নিয়ে এসেছেন, অভিবাসীবান্ধব হিসেবে যে দেশের সুনাম রয়েছে। সরকারি পরিষেবা, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমে অভিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করেছে ব্রাজিলের সংবিধান। কোনো অভিবাসনপ্রত্যাশী যদি প্রয়োজনীয় নথিপত্র ছাড়া ব্রাজিলে প্রবেশ করে, তাকেও অভিবাসী হওয়ার সুযোগ দেয় দেশটি।

উদ্ধারের পর ফ্রাইডে ও ইয়েইয়েকে সাও পাওলোর কাসা দো মাইগ্রান্তে নামক অভিবাসী আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা ইমিগ্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরির পাশপাশি পর্তুগিজ ভাষার ক্লাস করছেন এবং ব্রাজিলের কৃষ্টি-সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন।

সম্প্রতি ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে কাজের সন্ধান করছেন ফ্রাইডে আর ইয়েইয়ে। প্রসঙ্গত, ব্রাজিলে একজন আফ্রিকান অভিবাসীর গড় মাসিক আয় প্রায় ৫০০ ডলার। অন্যদিকে ইউরোপীয় অভিবাসীরা মাসে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ ডলার পর্যন্ত আয় করে থাকে। অনেক অভিবাসী তাই নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে লাতিন আমেরিকার প্রকৃতিবেষ্টিত দেশটিতে বসতি গড়ে তোলেন। ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ অভিবাসীকে আশ্রয় দিয়েছে ব্রাজিল।

ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে চীনকে টপকে শীর্ষে বাংলাদেশ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনকে টপকে প্রথমবারের মতো শীর্ষে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। যদিও চীনের চেয়ে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের রপ্তানি মূল্য কেজিপ্রতি ৫ ডলার ৮২ সেন্ট কম। তাতে এই বাজারে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাংলাদেশের তুলনায় ৭২৬ কোটি ডলার বেশি।

ইইউর বাজারে গত বছর অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ১৩৩ কোটি কেজির সমপরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। অন্যদিকে চীন রপ্তানি করেছে ১৩১ কোটি কেজির সমপরিমাণ তৈরি পোশাক। ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর পরিমাণের দিক থেকে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২১ দশমিক ২০ শতাংশ বাড়লেও চীনের বেড়েছে মাত্র ১১ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

ইউরোস্ট্যাটের তথ্য দিয়ে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানায়, ইইউ গত বছর বিভিন্ন দেশ থেকে
১০ হাজার ৩১০ কোটি ডলারে তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর ইইউর বাজারে পোশাক আমদানি ২০ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়েছে।

রপ্তানি হওয়া পোশাকের পরিমাণে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও অর্থের হিসাবে চীনের নিচে রয়েছে। ইইউতে গত বছর চীন ৩ হাজার ১৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। দেশটির রপ্তানি বেড়েছে ১৭ শতাংশ। আর বাংলাদেশ গত বছর রপ্তানি করেছে ২ হাজার ২৮৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এই রপ্তানি ২০২১ সালের তুলনায় ৩৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি।

ইইউর বাজারে গত বছর বাংলাদেশ ও চীনের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৯৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে তুরস্ক। এ ছাড়া ভারত ৪৮৪, ভিয়েতনাম ৪৫৭, পাকিস্তান ৩৯৪, কম্বোডিয়া ৩৮১, মরক্কো ৩১২, শ্রীলঙ্কা ১৬২ ও ইন্দোনেশিয়া ১৩৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে।

ইইউর বাজারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কম দামে পোশাক রপ্তানি করে। গত বছর বাংলাদেশের রপ্তানি হওয়া প্রতি কেজি পোশাকের গড় মূল্য ছিল ১৭ দশমিক ২৭ ডলার, যা এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২১ সালে ছিল ১৫ দশমিক ৪২ ডলার।

তার মানে গত বছর বাংলাদেশের রপ্তানি হওয়া পোশাকের গড় মূল্য প্রায় ১২ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর বাংলাদেশের চেয়ে কম মূল্যে পোশাক রপ্তানি করেছে পাকিস্তান। তাদের রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের প্রতি কেজির গড় মূল্য সাড়ে ১৪ ডলার।

অথচ ইইউ গত বছর বিভিন্ন দেশ থেকে গড়ে প্রতি কেজি পোশাক ২২ ডলার ৪৮ সেন্টে আমদানি করে। ভিয়েতনাম সবচেয়ে বেশি প্রতি কেজি পোশাক পৌনে ৩১ ডলারে রপ্তানি করে। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়া ও মরক্কো, তারা যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৮৮ ও ২৯ দশমিক ৬৯ ডলারে প্রতি কেজি পোশাক রপ্তানি করছে।

এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা ২৮ দশমিক ৫৪ ডলার, তুরস্ক ২৫ দশমিক ৩৯, ভারত ২৩ দশমিক ২৭, চীন ২৩ দশমিক ০৩ ও কম্বোডিয়া গড়ে ২২ দশমিক ১৮ ডলারে প্রতি কেজি তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী আজ (মঙ্গলবার)। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আলোচনা সভা, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ছিল কর্মসূচির মধ্যে। এসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।

বঙ্গমাতা ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিল রেণু। বাবার নাম শেখ জহুরুল হক ও মায়ের নাম হোসনে আরা বেগম। ১ ভাই-২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তিনি জাতির পিতার হত্যাকারীদের হাতে নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণ করেন।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবউদ্দিন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

দানিউবে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক করতে হিমশিম খাচ্ছেন রপ্তানিকারকরা

সম্প্রতি ইউক্রেনের ইজমাইল ও রেনি বন্দরে ড্রোন হামলা চালায় রাশিয়া। দানিউব নদীর তীরবর্তী বন্দর দুটিতে রুশ হামলার কয়েকদিন পর ইউক্রেনে ঢোকার একমাত্র প্রবেশমুখে আটকা পড়ে আছে প্রায় ডজনখানেক জাহাজ।

মঙ্গলবার অ্যানালিটিক্যাল কোম্পানি মেরিনা ট্রাফিক জানায়, কৃষ্ণ সাগরের মুসুুরা উপসাগরের আশপাশে প্রায় ৩০টি জাহাজ নোঙ্গর করে আছে। মুসুরা উপসাগরের একটি প্রণালী ইজমাইল বন্দরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। এছাড়া ইজমাইল বন্দর অভিমুখে নোঙ্গর করেছিলো আরও অন্তত ২০ টি জাহাজ।

অন্যদিকে রোমানিয়ার কনস্ট্যান্টা বন্দরের আশপাশে প্রায় ২০টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। যাদের অনেকের গন্তব্যস্থলই রোমানিয়ার বন্দরগুলো। তবে অপেক্ষমান সকল জাহাজের গন্তব্যস্থল রোমানিয়া নয়। দানিয়ুবে জাহাজ নোঙ্গর করার জায়গা থাকায় কিছু জাহাজ কেবল মাত্র সেখানকার নিরাপদ জলসীমায় অবস্থান করছে। আবার অনেক জাহাজ পারাপারের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার সময়টুকুই কেবল সেখানে অপেক্ষা করে কাটাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার পর রোমানিয়া হয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানিতে ইউক্রেনের প্রধান গেটওয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে দানিউব নদীর তীরে অবস্থিত ইজমাইল বন্দর। ইজমাইল বন্দর ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় জাহাজ চলাচল ব্যহত হবার পাশাপাশি বাম্পার শস্য রপ্তানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে ইউক্রেন।

ইউক্রেনের কৃষিমন্ত্রী টারাস ভিসোটস্কি বলেন, এত বিপুল পরিমাণ পণ্য নদী বা রেলপথে পরিবহন করা অসম্ভব। তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের সকল খাদ্যশস্য রপ্তানী করতে হলে অবশ্যই কৃষ্ণ সাগরের বন্দরগুলোকে পুনরায় সচল করতে হবে।

ইউক্রেনের দুইটি বন্দর লাগাতার রুশ হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্দরগুলো সংস্কার করে পুনরায় কার্যক্ষম করে যোগাযোগ স্থাপন করতে বেশ অনেকটা সময় লাগবে মনে করেন রোমানিয়ার দানিউব প্রশাসন সংস্থার নেভিগেশন ডিরেক্টর ফ্লোরিন উজুমতোমা।

অন্যদিকে, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ায় দানিউব নদী দিয়ে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বীমার শর্ত কঠোর করছে বীমাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। শুধুমাত্র বীমাকারী প্রতিষ্ঠান নয় এই অঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনা করা জাহাজ এবং ক্রুদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন জাহাজ মালিকেরা।

উল্লেখ্য যে, রাশিয়া ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ চুক্তি থেকে সরে আসার আগে দানিউবের তীরবর্তী বন্দরগুলো দিয়ে এক-চতুর্থাংশ খাদ্যশস্য রপ্তানি করত ইউক্রেন।

বিশ্বের ১৬তম শক্তিশালী নৌবাহিনী বাংলাদেশের

বিভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিশ্বের ৩৬টি নৌবাহিনীর নৌ-শক্তিমত্তার একটি র‍্যাংকিং তৈরি করেছে ওয়ার্ল্ড ডিরেক্টরি অব মডার্ন মিলিটারি ওয়ারশিপস (ডব্লিউডিএমএমডব্লিউ)। এই তালিকায় কানাডা, স্পেন, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের নৌবাহিনীকে পেছনে ফেলে ১৬তম অবস্থান দখল করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে মার্কিন নৌবাহিনী। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনের পিপল’স লিবারেশন আর্মি নেভির অবস্থান তার পরই। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানো রাশিয়ার নৌবাহিনী রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। আর দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। তালিকায় তাদের অবস্থান সপ্তম।

র‍্যাংকিং তৈরির ক্ষেত্রে ডব্লিউডিএমএমডব্লিউ যেসব বিষয়কে বিবেচনায় নিয়েছে সেগুলো হলো- যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনের সংখ্যা, সেগুলোর মূল কাঠামোর বয়স, লজিস্টিকস সাপোর্ট, আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, বাহিনীগুলোর কী পরিমাণ ও কত ধরনের সম্পদ রয়েছে এবং সেগুলো কীভাবে বন্টন করা হয়েছে (ফোর্স ব্যালান্স) ইত্যাদি। ডব্লিউডিএমএমডব্লিউ জাহাজের সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ছোট আকারের নৌযান, জরিপ জাহাজ অথবা ঐতিহাসিক সেরিমোনিয়াল ভেসেলকে বিবেচনায় নেয়নি। তালিকায় যুদ্ধজাহাজের বিভিন্ন ক্লাস (যেমন করভেট, ফ্রিগেট, ডেস্ট্রয়ার, ক্রুজার) অনুযায়ী সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে।

ডব্লিউডিএমএমডব্লিউইয়ের ট্রু ভ্যালু রেটিংয়ে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৫৮ দশমিক ৬। তাদের মতে, বাংলাদেশ নৌবাহিনী অনেক আধুনিক একটি বাহিনী, যাদের জাহাজগুলোর মূল কাঠামোর গড় বয়স মাত্র ১৪ দশমিক ৩ বছর। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে জাহাজের সংখ্যা হিসাব করেছে ডব্লিউডিএমএমডব্লিউ। সে অনুযায়ী, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মোট ৬৬টি জাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে দুটি সাবমেরিন, সাতটি ফ্রিগেট, ছয়টি করভেট, পাঁচটি মাইন/কাউন্টারমাইন ওয়ারফেয়ার শিপ, ৩০টি অফশোর প্যাট্রল ভেসেল (ওপিভি) ও ১৬টি অ্যাম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট ভেসেল। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বহরে কোনো বিমানবাহী রণতরী, ক্রুজার ও ডেস্ট্রয়ার নেই।

ডব্লিউডিএমএমডব্লিউ জানিয়েছে, বাংলাদেশ নৌবাহিনী আরও সম্প্রসারিত ও আধুনিক একটি বাহিনীতে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে। বাহিনীটির জন্য নতুন ২১টি জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে। ডব্লিউডিএমএমডব্লিউ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ফোর্স ব্যালান্সকে ‘মাঝারি’ ক্যাটাগরিতে রেখেছে।

দরিদ্র দেশগুলোর জন্য সমুদ্র নজরদারি সহজ করেছে প্রযুক্তিগত অগ্রগামিতা

ভূপৃষ্ঠে সাগর-মহাসাগরের হিস্যা ৭০ শতাংশের বেশি। সুনীল জলরাশির ভৌগলিক বিশালত্বের পাশাপাশি সমুদ্র শিল্পের ব্যপ্তিও অনেক বেশি। এ কারণে সামুদ্রিক জগতের কোথায় কি হচ্ছে না হচ্ছে, সে সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে ওয়াকিবহাল হওয়া যেকোনো দেশের পক্ষেই অনেক কঠিন একটি বিষয়। তবে সম্পূর্ণ না হলেও সমুদ্র ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে উপকূলীয় দেশগুলোকে সামুদ্রিক যেকোনো ঘটনাবলীর বিষয়ে বেশ কিছু মৌলিক তথ্য জানতে হয়। একে বলা হয় মেরিটাইম ডোমেইন অ্যাওয়ারনেস (এমডিএ)।

ধনী দেশগুলো অনেকটা সামরিক ধাঁচে সামুদ্রিক নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। তবে দরীদ্র দেশগুলোর পক্ষে, বিশেষ করে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অনেক দেশের পক্ষেই এমনটা করা সম্ভব হয় না। আশার কথা হলো, ধীরে ধীরে এসব দেশের জন্যও এমডিএ নাগালের মধ্যে চলে আসছে। আর এক্ষেত্রে আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়াচ্ছে নতুন নতুন সব প্রযুক্তি। এগুলো তথ্যের উন্মুক্ত প্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, যেসব তথ্য কাজে লাগিয়ে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো তাদের সমুদ্র নজরদারি সক্ষমতা বাড়াতে পারছে।

সুনীল অর্থনীতির জোয়ারে সাম্প্রতিক কয়েক দশকে অনেক দেশ সাগরের বিস্তীর্ণ এলাকা পর্যন্ত তাদের সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণ এবং জলজ ও সমুদ্রতলের সম্পদের ওপর একচ্ছত্র অধিকার আদায় করে নিয়েছে অথবা দাবি জানিয়েছে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অনেক দ্বীপ রাষ্ট্রেরই এখন তাদের মূল ভূখণ্ডের চেয়ে সামুদ্রিক সীমার আয়তন কয়েকগুণ বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় মালদ্বীপের কথা। দক্ষিণ এশীয় এই দ্বীপরাষ্ট্রটির মোট ভৌগলিক আয়তনের ৯৯ শতাংশই সমুদ্র। কিছু দেশ এরই মধ্যে নিজেদের ‘ব্লু কন্টিনেন্ট’ হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেছে।

তবে মানচিত্রে সমুদ্রের নির্দিষ্ট অংশ পর্যন্ত নিজেদের সার্বভৌমত্বের সীমারেখা আঁকানো যতটা সহজ, বাস্তবে পুরোটা অঞ্চলে আইনের শাসন নিশ্চিত করা ততটাই কঠিন। কারণ যেকোনো ক্ষেত্রেই সুশাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হলো সেটি সম্পর্কে ভালোভাবে জানা। সমুদ্র খাতের জন্যও এ কথা সমানভাবে প্রযোজ্য। তবে ভূমি থেকে শত শত মাইল দূরে কী ঘটছে, অনেক দেশের পক্ষেই তা জানা সম্ভব হয় না। এসব দেশের জন্য সামুদ্রিক রাজত্ব প্রতিষ্ঠা কেবল কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে সার্বভৌমত্বের মনচিত্রে থাকা সাগরের বেশিরভাগ অংশই তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে যায়।

সুলভ স্যাটেলাইটভিত্তিক তথ্য প্রবাহ সমুদ্র নজরদারিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে

অস্ট্রেলিয়ার মতো ধনী দেশগুলো অনেকদিন ধরেই জাহাজ অথবা এয়ারক্রাফটের মাধ্যমে, বিশালাকার সামরিক স্যাটেলাইট থেকে অথবা জাহাজের অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেমের (এআইএস) মতো স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আসছে। এসব ব্যবস্থার অনেকগুলো থেকেই বঞ্চিত দরিদ্র দেশগুলো।

তবে প্রযুক্তির বহুমুখী বিপ্লবের ফলে এমডিএ এসব দেশের নাগালে চলে আসছে। এসব প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে অসামরিক স্যাটেলাইটভিত্তিক তথ্যের মুক্তপ্রবাহ, স্বল্পব্যয়ের বাণিজ্যিক ড্রোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি। পৃথিবীর নিম্নতর কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান স্বল্পব্যয়ের বাণিজ্যিক ও অন্যান্য অসামরিক স্যাটেলাইটের কল্যাণে সাগরের সিংহভাগ অংশ নিয়মিত পর্যবেক্ষণের অধীনে এসেছে। এসব স্যাটেলাইট সাগরে চলাচলকারী জাহাজ শনাক্ত করার জন্য অপটিক্যাল অবজারভেশন, রেডিও অথবা রাডারের মাধ্যমে জাহাজের বেতার তরঙ্গ শনাক্তকরণ, প্রতিফলিত লাইট শনাক্তকারী স্ক্যানিং রাডার ভিআইআইআরএস ইত্যাদি প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

বর্তমানে ওয়েবভিত্তিক অনেক প্লাটফর্ম রয়েছে, যেখান থেকে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো বিনামূল্যে অথবা খুব কম খরচে স্যাটেলাইটভিত্তিক ও এআইএস ডেটা সংগ্রহ করতে পারছে। এর ফলে কোনো জাহাজ তাদের এআইএস সিস্টেম বন্ধ করে রাখলে অথবা সেগুলোয় কোনো কারসাজি করলে তা সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অনেক ডেটা সোর্স এখন সমুদ্র নজরদারির কাজটি সহজ করে দিয়েছে। এমনই একটি সোর্স হলো স্কাইলাইট সিস্টেম। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এর উদ্যোক্তা। এটি জাহাজের চালচলন পর্যবেক্ষণ করে সেটির কার্যক্রম ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আগাম ধারণা দিতে পারে। যেমন সাগরে থাকা একটি ভেসেলের উদ্দেশ্য কি-মাছ ধরা না জলদস্যুতা, সেটি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিতে পারে এআই প্লাটফর্মটি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই তথ্য কাজে লাগিয়ে বিশদ তদন্ত পরিচালনা করতে পারে।

স্যাটেলাইটনির্ভর ফোনের ব্যবহার ক্রাউড-সোর্স এমডিএতে বড় অবদান রাখতে পারে

তথ্য সংগ্রহের আরেকটি কার্যকর ব্যবস্থা হলো ক্রাউড-সোর্স এমডিএ, যেখানে সামুদ্রিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য চোখ ও কান হিসেবে কাজ করেন সমুদ্র ব্যবহারকারী অংশীজনরা। কিছু ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির কার্যপ্রক্রিয়া খুবই সরল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় মালদ্বীপের কথা। সমুদ্র নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য দেশটির সরকার সমুদ্রগামী মাছ ধরা ট্রলারগুলোকে বিনামূল্যে স্যাটেলাইটনির্ভর ফোন সরবরাহ করেছিল। এর ফলে দুটি সুবিধা হলো। প্রথমত, ট্রলারগুলো নিজেরা কোনো বিপদে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে সেটি উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারছে। আর দ্বিতীয়ত, বিদেশী কোনো ট্রলার অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করলে সেটিও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে জানানো সম্ভব হচ্ছে। এতে করে দেশটির সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের সুরক্ষাও নিশ্চিত হচ্ছে।

ক্রাউড-সোর্স এমডিএর একটি মজার উদাহরণ হলো ফিলিপাইনের ‘সিওয়াচ’ অ্যাপ। এটি অনেকটা মূল ভূখণ্ডের ক্রাউড সোর্সিং অ্যাপ ‘সিটিজেন’-এর আদলে তৈরি করা। এই অ্যাপের মাধ্যমে ফিলিপাইনের নাগরিকরা তাদের চোখের সামনে যেকোনো ট্রাফিক দুর্ঘটনা ও অপরাধ দেখতে পেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তা জানাতে পারেন। সিওয়াচ অ্যাপের কার্যপ্রণালীও অনেকটা একই ধরনের। অবৈধ মৎস্য আহরণ অথবা অন্য কোনো অনৈতিক কার্যক্রম দেখতে পেলে জেলেরা মোবাইল ফোনে তোলা ছবি ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য এই অ্যাপে প্রদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে পারেন।

নদীর তীরে আটকে যাওয়ার পর মুক্ত কলকাতা বন্দর অভিমুখী কনটেইনার জাহাজ

ভারতের কলকাতার শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি পোর্ট অভিমুখী একটি কনটেইনার জাহাজ সম্প্রতি হাওড়ার নিকটবর্তী স্থানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হুগলি নদীর তীরে আঘাত হানে ও নদীর তলদেশের মাটিতে আটকে যায়। অবশ্য ওইদিনই জোয়ার এলে জাহাজটি নিজ শক্তিতেই মুক্ত হয়ে পানিতে ভাসতে সমর্থ হয়। পরে জাহাজটিকে নিকটবর্তী একটি ডকইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়।

মালয়েশিয়ার এমটিটি শিপিং পরিচালিত জাহাজটির নাম এমটিটি সিঙ্গাপুর। ১০ হাজার ৩০০ ডেডওয়েট টনের জাহাজটি মোট ৬৫৩ টিইইউ কনটেইনার পরিবহনে সক্ষম। অবশ্য দুর্ঘটনার সময় ২৭ বছরের পুরনো জাহাজটিতে ৩৩৮ টিইইউ কনটেইনার ছিল বলে ভারতের বন্দর, নৌ-পরিবহন ও জলপথ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মালয়েশিয়ায় নিবন্ধিত জাহাজটিতে ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ার নাগরিক ২০ জন ক্রু ছিলেন। তারা কেউ হতাহত হননি বলে মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে।

আটকে যাওয়া জাহাজ দেখতে উৎসুক স্থানীয় জনতা

ঠিক কি কারণে জাহাজটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল, সে বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হুগলি নদীতে অন্য একটি জাহাজকে অতিক্রম করার সময় অথবা সেটির সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে গিয়ে এমটিটি সিঙ্গাপুর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারে। দুর্ঘটনার পর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জাহাজের মাস্টারকে নির্দেশ দেওয়া হয় সব কনটেইনার যেন ভালোভাবে আটকানো থাকে, তা নিশ্চিত করতে। কোনো কনটেইনার যেন পানিতে পড়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতেই এই আদেশ দেওয়া হয়।

দুর্ঘটনার কারণে তেল নিঃসরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া জাহাজটিকে উদ্ধারের জন্য একাধিক টাগবোট ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছে বলেও জানানো হয়। তবে জোয়ারের পানি এলে জাহজটি নিজ শক্তিতেই মুক্ত হয়ে যায়। পরে সেটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কেদারপুরের নেতাজি সুভাষ ডকে নেওয়া হয়।