Home Blog Page 2

চট্টগ্রাম বন্দরে জেটরো প্রতিনিধি দল

চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেছেন জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেটরো) প্রতিনিধি দল। তাঁরা বাংলাদেশের বন্দর খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় জেটরো প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর আহমেদ আমিন আব্দুল্লাহর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

জেটরোর প্রতিনিধি দলে ছিলেন কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ Kazuiki Kataoka, রিপ্রেজেন্টেটিভ Tomotaka Minoura। এ সময় বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক, সহকারী হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মো. আতাউল হাকিম সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

সদস্য (হারবার ও মেরিন) চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান পরিচালনাগত ক্ষমতা ও দক্ষতা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বিভিন্ন দেশের সাথে সরাসরি জাহাজ চলাচল ও জাহাজের ওয়েটিং টাইম ও গড় অবস্থান সময় কমানোসহ বিভিন্ন বিষয় প্রতিনিধিদলকে জানান।

প্রতিনিধিদল বন্দরের সাম্প্রতিক সাফল্য, সরাসরি জাহাজ চলাচল চালু, ওয়েটিং টাইম ও টার্ন এরাউন্ড টাইম উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনায় সন্তোষ জানান। এছাড়াও বন্দরের ভবিষ্যৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ডিজিটালাইজেশন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বন্দরের প্রশংসা করেন।

আলোচনাকালে জাপানের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা সরেজমিন দেখার আগ্রহ জানান। সদস্য (হারবার ও মেরিন) এ ব্যাপারে সম্ভাব্য সব সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ট্রানজিটের পণ্য যাচ্ছে ভুটান

চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর প্রায় দুই মাস পর ভুটানের ট্রানজিটের চালানটি খালাস হয়েছে। বুধবার রাতে চালানটি খালাস করেন ভুটানের পণ্য খালাসের জন্য নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধি। চালানটি সড়কপথে বুড়িমারী স্থলবন্দরের পথে রয়েছে। সেখান থেকে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে চালানটি ভুটানে নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সই হওয়া ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য মুভমেন্ট অব ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট’ চুক্তি ও প্রটোকলের আওতায় পরীক্ষামূলক চালানটি নেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২২ মার্চ এই চুক্তি ও প্রটোকল সই হয়েছিল। ভুটান স্থলবেস্টিত হওয়ায় দেশটিতে কোনো সমুদ্রবন্দর নেই। ফলে বাংলাদেশের মাধ্যমে পণ্য নেওয়ার এই উদ্যোগ।

ভুটানের চালানটি আনা হয়েছে থাইল্যান্ড থেকে। ৬ হাজার ৫৩০ কেজির এই চালানে রয়েছে শ্যাম্পু, শুকনা পাম ফল, আইস টি, চকলেট ও জুস। চালানটির রপ্তানিকারক থাইল্যান্ডের অ্যাবিট ট্রেডিং কোম্পানি। চালানটি আমদানি করেছে ভুটানের অ্যাবিট ট্রেডিং। দুই মাস আগে চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছালেও সরকারি সংস্থাগুলোর এ–সংক্রান্ত অনুমোদন না পাওয়ায় এত দিন খালাস করা যায়নি। বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদনের পর বুধবার চালানটি খালাস করা হয়।

জানতে চাইলে ভুটানের পণ্য খালাসের জন্য নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধি এন এম ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদুল আলম খান বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় কনটেইনার পরিবহনকারী একটি প্রাইম মুভার ট্রেলারে করে এক কনটেইনারের চালানটি সড়কপথে বুড়িমারী স্থলবন্দরের পথে রওনা হয়েছে। বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভুটানে নেওয়া হবে কনটেইনারটি।

বাংলাদেশের মাধ্যমে শুরু হওয়া পরীক্ষামূলক চালান পরিবহনে দেশটি সন্তুষ্ট হলে নিয়মিত পণ্য পরিবহন শুরু হতে পারে। তবে সেটি নির্ভর করছে ভুটানের আগ্রহের ওপর।

সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন ও নিরাপত্তাসহ অংশীদারিত্বের আনুষ্ঠানিক রূপরেখার প্রস্তাব পাকিস্তানের

সমুদ্র পরিবহনে সহযোগিতার লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) সাথে পাকিস্তান ন্যাশনাল শিপিং করপোরেশনের (পিএনএসসি) মধ্যে অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক রূপরেখার প্রস্তাব দিয়েছে ইসলামাবাদ।

সোমবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেনের সাথে এক বৈঠকে পাকিস্তানের সমুদ্রবিষয়ক মন্ত্রী মুহাম্মদ জুনাইদ আনোয়ার চৌধুরী এই প্রস্তাব দেন বলে পাকিস্তানের দৈনিক দ্য ডন জানিয়েছে।

জাতিসংঘ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) ৩৪তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে সাখাওয়াত হোসেন এখন লন্ডনে রয়েছেন। সেখানেই পাকিস্তানের মন্ত্রীর সাথে তাঁর বৈঠক হয়।

ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশকে দেওয়া পাকিস্তানের প্রস্তাবে সমন্বিত অংশীদারত্বের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই অংশীদারত্বে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে যৌথভাবে কনটেইনার এবং বাল্ক শিপিং সেবা, কারিগরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং নাবিকদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ, পারস্পরিক বন্দর-কল সুবিধা প্রদান এবং উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সম্পৃক্ততা জোরদারের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

পাকিস্তানের মন্ত্রী মুহাম্মদ জুনাইদ আনোয়ার আইএমও এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)–এর মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সমুদ্র পরিবহন-সম্পর্কিত বিষয়গুলোর পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক আঞ্চলিক সামুদ্রিক গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক কাঠামো তৈরির পাকিস্তানের বৃহত্তর লক্ষ্যের ওপর জোর দেন।

জুনাইদ আনোয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্য প্রবাহকে জোরদারের লক্ষ্যে পাকিস্তানের প্রস্তুতির প্রমাণ হিসেবে কেপিটির (করাচি বন্দর কতৃর্পক্ষ) ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা, চলমান আধুনিকীকরণ উদ্যোগ এবং উন্নত টার্নঅ্যারাউন্ড সময় তুলে ধরেন। মন্ত্রী বলেন, বন্দর থেকে বন্দরের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা সরবরাহসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ কমাতে, আঞ্চলিক বাধা দূর করতে এবং দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে বাণিজ্যিক একত্রীকরণের নতুন দুয়ার খুলে দিতে পারে।

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে জাহাজের ওয়েটিং টাইম শূন্যে নেমে এসেছে

সম্প্রতি মায়ের্স্ক শিপিং লাইনের একটি প্রতিনিধি দল সিঙ্গাপুর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর আসেন। বন্দর ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পদক্ষেপের কথা বিশেষত জাহাজের অপেক্ষার সময় কমানো এবং এনসিটিসহ বিভিন্ন টার্মিনালের অপারেশনাল পারফরম্যান্সের উন্নতি ও সেবার মানের ধারাবাহিক অগ্রগতিতে সন্তোষ জানান।

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে জাহাজের ওয়েটিং টাইম আগের শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। ২০২৫ সালে সেপ্টেম্বরে ৯ দিন, অক্টোবরে ১৮ দিন এবং নভেম্বরে ১৯ দিন জাহাজের ওয়েটিং টাইম শূন্য ছিল। বর্তমানে বন্দরে আগত জাহাজ অন অ্যারাইভাল বার্থ পাচ্ছে। এতে আমদানি রপ্তানিকারকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে আমদানি করা পণ্য ডেলিভারি নিতে পারছেন এবং রপ্তানি পণ্য যথাসময়ে জাহাজীকরণ করতে পারছেন।

মূলত মডার্ন কার্গো কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট সংযোজন, ইয়ার্ড ক্যাপাসিটির সম্প্রসারণ, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সর্বোপরি চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিকদের নিরলস পরিশ্রম ও বিভিন্ন পর্যায়ের বন্দর ব্যবহারকারীদের অব্যাহত সহযোগিতার কারণে বন্দরের হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

সম্প্রতি মায়ের্স্ক শিপিং লাইনের একটি প্রতিনিধি দল সিঙ্গাপুর থেকে চট্টগ্রাম আসেন। বন্দর ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পদক্ষেপের কথা বিশেষত জাহাজের অপেক্ষার সময় কমানো এবং এনসিটিসহ বিভিন্ন টার্মিনালের অপারেশনাল পারফরম্যান্সের উন্নতি ও সেবার মানের ধারাবাহিক অগ্রগতিতে সন্তোষ জানান।

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) ২৮ লাখ ৪৯ হাজার ৫৪২ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ মেট্রিক টন এবং ৩ হাজার ৫৫২টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে।

গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৩২৮ টিইইউএস কনটেইনার, ১ কোটি ২৯ লাখ ৮ হাজার ১৭৪ মেট্রিক টন কার্গো এবং ৩৫১টি জাহাজ বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ, কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ১২ লাখ ১৩ হাজার ৮০৫ টিইইউএস কনটেইনার, ৪ কোটি ৫২ লাখ ৮২ হাজার ৯০৭ মেট্রিক টন কার্গো এবং ১ হাজার ৪২২টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে। বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ লাখ ১১ হাজার ৮৮৮ টিইইউএস কনটেইনার, ৬১ লাখ ৬৬ হাজার ৪০৫ মেট্রিক টন কার্গো এবং ১৪১টি জাহাজ বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ, কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেড পরিচালিত নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮৭১ টিইইউএস কনটেইনার এবং ২৫৩টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ১৫ দশমিক ৫০ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ১৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬২ হাজার ৯১৯ টিইইউএস কনটেইনার এবং ৪১টি জাহাজ বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর ডিজিটালাইজেশনে নতুন মাইলফলক

চট্টগ্রাম বন্দর ডিজিটালাইজেশনে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম (টিওএস) অ্যাপের সফল ব্যবহার বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমকে আরও গতিশীল, স্বচ্ছ ও দক্ষ করেছে। এর ফলে সার্বিক পোর্ট অপারেশনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে।

১৮ নভেম্বর একদিনে চট্টগ্রাম বন্দরে গেট পাস ইস্যু হয়েছে মোট ৬ হাজার ৩০১টি। এই সংখ্যা একদিনে ইস্যু হওয়া গেট পাসের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এবং নতুন রেকর্ড। বন্দর কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের কারণে দ্রুত কনটেইনার হ্যান্ডলিং, গেট অপারেশন, ডকুমেন্ট প্রসেসিং এবং রিয়েল-টাইম মনিটরিং সম্ভব হওয়ায় সেবার মান যেমন বেড়েছে, তেমনি ব্যবসায়ীদের সময় ও খরচ দুই-ই কমেছে।

পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় মেডলগের সাথে চুক্তি

আগামী ২২ বছর ঢাকার অদূরে পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল (পিআইসিটি) পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা করবে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘মেডলগ’।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং মেডলগের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান এবং মেডলগ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম আনিসুল মিল্লাত এ চুক্তিতে সই করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম শাখাওয়াত হোসেন, ঢাকায় নিয়োজিত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেটো র‌্যাগলিসহ বন্দর ও মেডলগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে এপিএম টার্মিনালসের চুক্তি

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এপিএম টার্মিনালস বিইভির সাথে লালদিয়া কনটেইনার নির্মাণ ও পরিচালনায় ৩০ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এপিএম টার্মিনালস বিইভি ডেনমার্কের এপি মোলার নিয়ন্ত্রিত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ইন্টিগ্রেটেড লজিস্টিকস কোম্পানি মায়ের্স্কের একটি পূর্ণ মালিকানাধীন সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এই চুক্তির মাধ্যমে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কাঠামোর আওতায় লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল (এলসিটি) ডিজাইন, অর্থায়ন, নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে সোমবার অনুষ্ঠিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি লিনা গান্ডলোস হ্যানসেন ও ঢাকায় ডেনমার্ক দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। পিপিপি অথোরিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। নৌপরিবহন সচিব ড. নুরুন্নাহার চৌধুরী ও চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

নৌউপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, এ বিনিয়োগ দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যুব সমাজের জন্য উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বয়ে আনবে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে, দেশের অনেক তরুণ, বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকরা চাকরির সুযোগ পাবে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই গুরুত্বপূর্ণ আন্তঃসরকারি সহযোগিতা প্রকল্পটির জাতীয় স্বার্থ নিয়ে যে কোনো সংশয় দূর করবে।

রাষ্ট্রদূত ব্রিক্স মোলার বলেন, বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও শক্তিশালী হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ও টেকসই সহযোগিতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করছে।

তিনি বাংলাদেশ ও এই ঐতিহাসিক চুক্তিতে যুক্ত সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে অভিনন্দন জানান।

তিনি আরো বলেন, ডেনমার্কের বৈশ্বিক দক্ষতা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে এ বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

রাষ্ট্রদূত জোর দিয়ে বলেন, এই নির্দিষ্ট প্রকল্পটি প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ ও ডেনমার্ক এখন টেকসই প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী অংশীদার।

ঐতিহাসিকভাবে, ডেনমার্ক বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল, যা বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

লিনা গান্ডলোস হ্যানসেন বলেন, এ প্রকল্পের সফলতা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের অটল নিষ্ঠা ও প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।

তিনি এমন এক ভবিষ্যতের চিত্র তুলে ধরেন, যেখানে বন্দর কেবল অবকাঠামো নয়, বরং মানুষ ও উদ্দেশ্যের একটি পূর্ণাঙ্গ ইকোসিস্টেম— যেখানে জাহাজ সহজে নোঙর করে, পণ্য দ্রুত স্থানান্তরিত হয় এবং কর্মীরা আরও নিরাপদ ও স্মার্ট পরিবেশে কাজ করবে।

লিনা জানান, ডেনমার্ক থেকে জাপান এবং কোপেনহেগেন থেকে চট্টগ্রাম— এই অংশীদারত্ব বাণিজ্য একই দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সংযুক্ত হয়েছে।

স্টেট সেক্রেটারি গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশের অসাধারণ উন্নয়নকে তুলে ধরে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ৩০ অর্থনীতির মধ্যে উঠে আসবে। এছাড়া দেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি ইতোমধ্যেই বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং অন্যান্য খাতেও দেশটির বিপুল সম্ভাবনা দৃশ্যমান।

এপিএম টার্মিনালস বিইভি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ টার্মিনাল অপারেটর (৩৩টি দেশে ৬০টিরও বেশি টার্মিনাল) এবং বিশ্বব্যাংক ২০২৪ অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ২০টি সেরা কনটেইনার বন্দরের মধ্যে ১০টি তারা পরিচালনা করে।

বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ায় (যেমন- চীন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া) তাদের বিস্তৃত অভিজ্ঞতার আলোকে লালদিয়া প্রকল্প বাংলাদেশে বিশ্বমানের প্রযুক্তি ও অপারেশনাল দক্ষতা নিয়ে আসবে— যা দেশের লজিস্টিকস খাতকে এলডিসি-পরবর্তী যুগে ভবিষ্যত-প্রস্তুত করবে।

এই নতুন বন্দর বিদ্যমান ক্ষমতার দ্বিগুণ বড় কনটেইনার জাহাজ গ্রহণ করতে পারবে, প্রতি ইউনিট মালবাহী খরচ কমাবে এবং বিশ্বব্যাপী সরাসরি শিপিং সংযোগ সক্ষম করবে। রাজস্ব-ভাগাভাগি রেয়াত মডেলে নির্মিত এই প্রকল্পে বাংলাদেশ স্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করবে, পাশাপাশি সরকারি মূলধনী ব্যয়ও কমবে।

রেয়াত চুক্তির আওতায়, এপিএম টার্মিনালস বিইভি লালদিয়া, চট্টগ্রামে একটি গ্রিনফিল্ড বন্দর টার্মিনাল নির্মাণের মাধ্যমে প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) নিয়ে আসবে। এটি হবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এককভাবে সবচেয়ে বড় ইউরোপীয় ইকুইটি বিনিয়োগ।

এপিএম টার্মিনালসের মতো বৈশ্বিক মানের বিনিয়োগকারী বন্দর খাতে প্রবেশ করায় অন্যান্য আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আস্থা আরও বাড়বে, ফলে লজিস্টিকস, উৎপাদন এবং সংশ্লিষ্ট খাতে অতিরিক্ত বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট হবে।

মানবজমিনে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

গত ১৩ই নভেম্বর দৈনিক মানবজমিনে ‘বিদেশিদের হাতে যাচ্ছে পানগাঁও কন্টেইনার টার্মিনাল’ শীর্ষক সংবাদের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়, যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে, একটি Consulting Firm এর মাধ্যমে EOI পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রাথমিকভাবে Pre-Qualification, পরবর্তীতে PPR অনুযায়ী কমিটি গঠন করে Technical Evaluation এবং Financial Evaluation সম্পন্নকরণপূর্বক যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। PPR অনুযায়ী মূল্যায়ন কমিটিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ছাড়াও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া Consulting প্রতিষ্ঠানের (IIFC) দুইজন পরামর্শক সার্বক্ষণিকভাবে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন।

প্রকৃত সত্য হচ্ছে, পুরো প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে, উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে EOI পদ্ধতির মাধ্যমে এবং PPR অনুসরণ করে একটি মূল্যায়ন কমিটির মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন সম্পন্ন করে টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। উক্ত টার্মিনালে EOI পদ্ধতিতে টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগের লক্ষ্যে পরামর্শক সেবা প্রদানের জন্য গত ২৫/০৩/২০২৪ইং তারিখে IIFC এর সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়। Invitation for EOI এর বিপরীতে Pre-qualification ডকুমেন্ট ক্রয়কারী ০৬ (ছয়)টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রি-কোয়ালিফিকেশন দাখিলের নির্ধারিত তারিখে অর্থাৎ ০৫/০৯/২০২৪ ইং তারিখে ৩ (তিন)টি প্রতিষ্ঠান প্রি-কোয়ালিফিকেশন প্রস্তাব দাখিল করে। IIFC এর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে দাখিলকৃত প্রি-কোয়ালিফিকেশন প্রস্তাব মূল্যায়ন করে মূল্যায়ন কমিটি ৩টি প্রতিষ্ঠানেরই প্রি-কোয়ালিফিকেশন প্রস্তাব Substantially Responsive মর্মে গণ্য করে।

পরবর্তীতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান IIFC দ্বিতীয় পর্যায়ে RFP ডকুমেন্ট দাখিল করে। প্রি-কোয়ালিফাইড বিবেচিত ৩টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে RFP ডকুমেন্ট প্রেরণ করা হয়, তৎমধ্যে ২টি প্রতিষ্ঠান RFP দাখিল করে। মূল্যায়ন কমিটি ও IIFC এর প্রতিনিধিগণ বিস্তারিত যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে দাখিলকৃত RFP এর মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে রেসপনসিভ বিডার নির্বাচিত করেন। ব্যাখ্যায় বলা হয়, সর্বশেষ গত ০৯/১১/২০২৫ তারিখে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান IIFC এর তত্ত্বাবধানে পিপিআর বিধিমালা অনুসরণক্রমে মূল্যায়ন কমিটি দরপত্রের কার্যক্রম সম্পন্ন করে এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ডের অনুমোদনক্রমে টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে প্রায় ১ (এক) বছর ৮ (আট) মাস সময় লেগে যায়- তাই বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে তাড়াহুড়া করে কাজ দেয়ার বিষয়টি প্রতিবেদকের মনগড়া ও কল্পনাপ্রসূত।

প্রতিবেদনে উল্লেখিত অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে দুইটি কোম্পানিকে বাদ দেয়ার বিষয়টি একেবারেই মিথ্যা। Pre-qualification এ তিনটি প্রতিষ্ঠান কৃতকার্য হয় এবং ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানকেই Request for Proposal (RFP) ডকুমেন্ট প্রেরণ করা হয়। তার মধ্যে দুইটি প্রতিষ্ঠান Request for Proposal (RFP) দাখিল করে। ১ (এক)টি প্রতিষ্ঠান নিজেরাই RFP দাখিল করা থেকে বিরত থাকে। দাখিল করা দুইটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য দুইটি দলিল দাখিল করেনি। ফলে মূল্যায়ন কমিটি এবং Consulting Firm উক্ত প্রতিষ্ঠানটিকে সর্বসম্মতিক্রমে Non-Responsive হিসাবে বিবেচনা করে। এতেই প্রমাণিত হয় যে, দুইটি কোম্পানিকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিয়ে একটি কোম্পানিকে কাজ দেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।

লালদিয়া হবে দেশের প্রথম বিশ্বমানের গ্রিন পোর্ট: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ডেনমার্কভিত্তিক মায়ার্স্ক গ্রুপের মালিকানাধীন এপিএম টার্মিনালের সাথে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পে ৩০ বছরের কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। এই লালদিয়া হবে দেশের প্রথম বিশ্বমানের গ্রিন পোর্ট বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব গ্রহণ করে অর্থনীতিকে গভীর গহ্বর থেকে উদ্ধার করা ছিল আমাদের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। গত ১৫ মাসে আমরা সেই চ্যালেঞ্জ উৎরাতে সক্ষম হয়েছি। রপ্তানি, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও রিজার্ভসহ অর্থনীতির সবগুলো সূচকে দেশ ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। লুট হয়ে যাওয়া ব্যাংকিং খাত ইতোমধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে। ব্যাংকিং খাতকে আরও শক্তিশালী করতে নানামুখী পদক্ষেপ চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক বিনিয়োগ হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রথম বছরে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ অর্থাৎ এফডিআই ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি বৈশ্বিক প্রবণতার বিপরীতে এক অনন্য অর্থনৈতিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

আগামী সপ্তাহে ডেনমার্কভিত্তিক মায়ার্স্ক গ্রুপের মালিকানাধীন এপিএম টার্মিনালস বি.ভি.-এর সঙ্গে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পে ৩০ বছরের কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। এই চুক্তির আওতায় ইউরোপীয় এই কোম্পানি ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। এটি এযাবৎকালে বাংলাদেশে ইউরোপের সর্বোচ্চ একক বিনিয়োগ।

লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস

চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং এটি পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে ডেনমার্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস। এ প্রতিষ্ঠানটি এপি মোলার মার্সক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় এ টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ৫৫ কোটি ডলার বা প্রায় ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে কোম্পানিটি।

এ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও এপিএম টার্মিনালসের মধ্যে আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হবে। চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশকে ২৫০ কোটি টাকা ‘সাইনিং মানি’ হিসেবে দিবে। ঢাকায় এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন এপিএম টার্মিনালসের গ্লোবাল চেয়ারম্যান ও ডেনমার্কের একজন মন্ত্রী।

বুধবার অর্থনৈতিক বিষয়–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটিতে এ চুক্তির বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান ও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী)।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস. এম. মনিরুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য কমডোর আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ।

আশিক চৌধুরী জানান, আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হতে পারে। তিন বছরের মধ্যে নির্মাণ শেষ করে ২০২৯ সালে টার্মিনালটি চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এরপর ৩০ বছর টার্মিনালটি পরিচালনা করবে এপিএম টার্মিনালস। পরে উভয় পক্ষ চাইলে আরও ১৫ বছর চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পারে।

একই সভায় ঢাকার পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালটি চালু করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে এ–সংক্রান্ত আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে।

আশিক চৌধুরী বলেন, লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পটি হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে ইউরোপ থেকে আসা সবচেয়ে বড় প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বা এফডিআই। এতে বাংলাদেশ সরকারের এক টাকাও বিনিয়োগ করতে হবে না। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা পুরোপুরি বহন করবে এপিএম টার্মিনালস। আগামী তিন বছরে এই অর্থ বাংলাদেশে আসবে। এই পুরো অঙ্কটাই এফডিআই হিসেবে গণ্য হবে।

আশিক চৌধুরী জানান, লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালটি বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ টিইইউ পর্যন্ত কনটেইনার পরিচালনা করতে সক্ষম হবে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক কনটেইনার হ্যান্ডেলিং সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালের অবস্থান হবে পতেঙ্গার চট্টগ্রাম বোট ক্লাব–সংলগ্ন কর্ণফুলী নদী তীরের পাশে। সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় লালদিয়া টার্মিনালে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের তুলনায় দ্বিগুণ আকারের জাহাজ ভিড়তে পারবে। এর ফলে সিঙ্গাপুর বা শ্রীলঙ্কায় ট্রান্সশিপমেন্টের প্রয়োজন হবে না, টার্ন অ্যারাউন্ড সময় কমবে, রপ্তানির গতি বাড়বে এবং সরাসরি ইউরোপে যাতায়াতের সুযোগ তৈরি করবে। টার্মিনালটি ২৪ ঘণ্টা পরিচালিত হবে। এ ছাড়া নতুন টার্মিনালটি চালু হলে সরাসরি ৫০০ থেকে ৭০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে।

ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস বিশ্বে প্রায় ৬০টি টার্মিনাল পরিচালনা করছে। বৈশ্বিক শীর্ষ ২০টি টার্মিনালের মধ্যে ১০টি পরিচালনা করছে এপিএম টার্মিনালস।

আশিক চৌধুরী আরও জানান, ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করলেও লালদিয়া টার্মিনালের মালিকানা থাকবে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে। এপিএম টার্মিনালস আমাদের জমির ওপর একটি নতুন (গ্রিনফিল্ড) প্রকল্প হিসেবে টার্মিনাল নির্মাণ করবে এবং ৩০ বছর মেয়াদে এটি পরিচালনা করবে। এরপর সম্পূর্ণ সম্পত্তি সরকারের কাছে হস্তান্তর করবে।

এপিএম টার্মিনালস টার্মিনালটি পরিচালনা করলেও বন্দর ব্যবহারকারীদের জন্য চার্জ নির্ধারণে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে বলে জানান বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করে দেবে, যাতে অতিরিক্ত মাশুল আরোপ করা না যায়।