Home Blog Page 207

বছরের প্রথমার্ধে চীনের বন্দরগুলোয় কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি

চলতি বছরের প্রথমার্ধে শিপিং কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী ঘটনা কম দেখা যায়নি। তারপরও সেই বাধা কাটিয়ে সমুদ্র পরিবহনে বেশ ভালো সাফল্য দেখিয়েছে চীনের বন্দরগুলো। দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বছরের প্রথম ছয় মাসে এসব বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। মূলত উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোয় চীনা পণ্যের রফতানি বেড়ে যাওয়ার ফলেই এই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্পন্ন হয়েছে।

গত মার্চে সুয়েজ খালে দানবাকার কনটেইনার জাহাজ এভারগিভেন আটকে গেলে টানা ছয়দিন জাহাজ চলাচল ব্যাহত হয়। এছাড়া কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে প্রায় এক মাস চীনের ব্যস্ততম ইয়ানতিয়ান ও দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্যান্য বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও প্রথমার্ধে চীনের বন্দরগুলো ৭৬৪ কোটি টন কার্গো হ্যান্ডলিং করেছে, যা গত বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি।

সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক রাখতে সরকারের পদক্ষেপ চায় বিপিএ

কোভিড ও ব্রেক্সিটের কারণে যুক্তরাজ্যে বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহন খাতে সক্ষমতার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আর এই ঘাটতি দূরীকরণে খাতসংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) বলছে, সাপ্লাই চেইনের ওপর থেকে চাপ কমানোর জন্য সরকারকে অবশ্যই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিপিএর প্রধান নির্বাহী রিচার্ড ব্যালান্টাইন বলেছেন, ‘বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনে সক্ষমতার ঘাটতির কারণে সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়েছে। বন্দরগুলোয় অপেক্ষমাণ থাকার সময় বেড়েছে। এই ঘাটতির কারণে পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়েছে, যা সরবরাহকারীদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে। খাত-সংশ্লিষ্টরা এ সংকট নিরসনে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। তারা ইউরোপীয় হেভি গুডস ভেহিকল (এইচজিভি) ড্রাইভারদের জন্য ব্রেক্সিট-পরবর্তী ইমিগ্রেশননীতি পর্যালোচনার দাবি জানিয়েছে। আমরাও মনে করি, এ বিষয়ে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’

কার্যকর বায়োফাউলিং ব্যবস্থাপনা নিয়ে জরিপ চালাবে বিমকো

সমুদ্রগামী জাহাজগুলোর বায়োফাউলিং ব্যবস্থাপনার জন্য জাহাজমালিকরা যে অ্যান্টি-ফাউলিং সিস্টেম (এএফএস) ব্যবহার করে, তার কার্যকারিতা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি জরিপ পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে বাল্টিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কাউন্সিল (বিমকো)। মূলত ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) কাছে বায়োফাউলিং ব্যবস্থাপনার বাস্তব চিত্র তুলে ধরার লক্ষ্যেই এই জরিপ চালাবে বিমকো।

বায়োফাউলিং ব্যবস্থাপনা বর্তমানে আইএমও ও বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে আইএমওর একটি দিকনির্দেশনাও রয়েছে, যেটি বর্তমানে নতুন করে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিমকোও এই দিকনির্দেশনা পর্যালোচনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। তারা চাইছে সংশোধিত দিকনির্দেশনা যেন জাহাজমালিকদের জন্য বাস্তবসম্মত সমাধান নিয়ে আসে। এ কারণে নিজেদের সদস্য ও সদস্য নয়-এমন সব জাহাজমালিককেই জরিপে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিমকো।

তেল চুরির অভিযোগে ইন্দোনেশিয়ায় তেলবাহী ট্যাংকার আটক

কম্বোডিয়ার একটি গভীর সমুদ্র তেলক্ষেত্র থেকে জ্বালানি তেল চুরি ও অনুমতি ছাড়া নিজেদের জলসীমায় নোঙর করার অভিযোগে একটি অয়েল ট্যাংকারকে আটক করেছে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী। বাহামার পতাকাবাহী ট্যাংকার এমটি স্ট্রোভোলোসকে গত ২৭ জুলাই ইন্দোনেশিয়ার আনাম্বাস দ্বীপের নিকটবর্তী জলসীমায় আটক করা হয়। এদিকে অয়েল ট্যাংকার ও এর ক্রুদের নিজেদের দেশে নিয়ে যাওয়ার কূটনৈতিক চেষ্টা চালাচ্ছে কম্বোডিয়া সরকার।

কম্বোডিয়ার প্রথম অফশোর অয়েল ফিল্ড থেকে অবৈধভাবে তেল সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে ট্যাংকারটি আটকের জন্য ইন্দোনেশিয়ার প্রতি অনুরোধ জানায় দেশটির দূতাবাস। এর পরই জাহাজটি আটক করে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী। কম্বোডিয়া এখন নিজেদের সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনতে চাইছে। তবে এ বিষয়ে ইন্দোনেশিয়া এখনো সাড়া দেয়নি। সর্বশেষ জানা গেছে, দেশটির নৌবাহিনী ট্যাংকারটির ক্যাপ্টেনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

পিরি রেইস

ষোলো শতকের একজন সুপরিচিত অটোমান-তুর্কি অ্যাডমিরাল পিরি রেইস। ভূগোলবিদ ও মানচিত্রকর হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে তাঁর। ১৫১৩ সালে পিরি রেইস একটি বিশ্বমানচিত্র প্রণয়ন করেন, যেটি ১৯২৯ সালে ইস্তাম্বুলের তপকাপি প্যালেসে আবিষ্কৃত হয়। একে সবচেয়ে পুরনো তুর্কি মানচিত্র বিবেচনা করা হয়, যেখানে নতুন বিশ্ব ও আমেরিকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ধারণা করা হয় ১৪৬৫ থেকে ১৪৭০ সালের মধ্যে কোনো একসময়ে তুরস্কের এজিয়ান উপকূলের গাল্লিপোলিতে তাঁর জন্ম। সমুদ্রজীবনের শুরুটা পনেরো শতকের শেষের দিকে; চাচার হাত ধরে। তাঁর চাচা কামাল রেইস ছিলেন সে সময়ের নামকরা নাবিক। চাচার সঙ্গে বেশকিছু লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন তিনি। বিখ্যাত অটোমান অ্যাডমিরাল হায়রেদ্দীন বারবারোসার অধীনেও কাজ করেছেন। লোহিত সাগর ও ভারত মহাসাগরে পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অটোমান বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন।

১৫৪৭ সালে রেইস (অ্যাডমিরাল) হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। তার পরের বছর পর্তুগিজদের কাছ থেকে এডেনের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেন তিনি। ১৫৫২ সালে দখল নেন মাস্কটের, যেটি ১৫০৭ সাল থেকে পর্তুগিজদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৫২১ সালে কিতাব-ই-বাহরিয়ে (বুক অব নেভিগেশন) বই লেখার কাজ শেষ করেন। এতে বেশ কিছু মানচিত্র ও নকশার সন্নিবেশ ঘটান, যার কারণে তিনি পরবর্তী প্রজন্মের সমুদ্রচারীদের কাছে গুরুত্ববহ হয়ে ওঠেন। চাচার সঙ্গে ভূমধ্যসাগর ভ্রমণকালে তিনি এই নকশাগুলো আঁকেন।

১৫১১ থেকে ১৫২১ সালের মধ্যে তিনি কিতাব-ই-বাহরিয়ে লেখেন। পরবর্তী ১৫২৪ ও ১৫২৫ সালে বইটিতে কিছু সংশোধন ও পরিমার্জন এনে বিখ্যাত অটোমান সুলতান সুলেমানকে উপহার দেওয়া হয়। ১৫৫৪ অথবা ১৫৫৫ সালে এই দিকপাল নাবিক ও অ্যাডমিরাল মৃত্যুবরণ করেন।

নোঙরের সময় মনিটরিংয়ের অভাবে দেড় কোটি ডলারের ক্ষতি: এনটিএসবি

যেকোনো সমুদ্রগামী জাহাজের জন্যই নোঙর করার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। বিষয়টি সংবেদনশীলও বটে। এ কাজের সময় যেকোনো ভুল-ত্রুটি বড় ধরনের লোকসানের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমনটি হয়েছিল গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিনসের কাছে লোয়ার মিসিসিপি রিভারে একটি কার্গো শিপ নোঙর করার সময়। দেশটির ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের (এনটিএসবি) একটি তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নোঙর করার সময় জাহাজটির ব্রিজ টিম মনিটরিংয়ের কাজ ঠিকমতো করতে পারেনি। তাদের এই ব্যর্থতার কারণেই নোমাডিক মিল্ড নামের কার্গো শিপটি প্রথমে একটি বাল্ক ক্যারিয়ার ও পরে একটি কেমিক্যাল ডকে ধাক্কা দেয়।

ওই দুর্ঘটনায় কোনো প্রাণহানি না ঘটলেও প্রায় ১ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এনটিএসবি বলছে, তারা তদন্ত করে দেখেছে নোঙর করার সময় নোমাডিক মিল্ডের ওয়াচ অফিসার নিয়মিত বিরতিতে জাহাজটির অবস্থান মনিটরিং করেননি।

সম্প্রতি বিশ্বের সেরা বন্দরগুলো যেখানে কনটেইনারবাহী জাহাজ বার্থিংয়ে ১০ দিন পর্যন্ত সময় নিচ্ছে; সেখানে চট্টগ্রাম বন্দরে তা একদিনেই সম্ভব হচ্ছে

চলমান করোনা মহামারি বিশ্ববাণিজ্য তথা সমুদ্রবন্দরগুলোকে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এসব প্রতিকূলতার মধ্যে অন্যতম কনটেইনার সংকট এবং কনটেইনারজট। যখন কোনো বন্দরে কনটেইনারের সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন তা জটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর এই কনটেইনারজট বন্দরের কাজের গতিশীলতা কমায়। অন্যদিকে যখন কোনো বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানির সময় পর্যাপ্ত সংখ্যক কনটেইনার পাওয়া যায় না, তখন সেই ঘাটতি রপ্তানি বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করে। কনটেইনারজট ও কনটেইনারস্বল্পতা-এ দুটোই এখন বৈশ্বিক সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বিশ্বের ব্যস্ত বন্দরগুলোয় জাহাজের অপেক্ষমাণ সময় বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। আর সেই প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর।

করোনার প্রথম ঢেউ সামাল দেওয়ার পর ভোক্তা চাহিদায় হঠাৎ উত্থানের কারণে দেশে দেশে আমদানি বেড়ে যাওয়া, শীর্ষ শিল্পোৎপাদক দেশগুলো পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়িয়ে দেওয়া, ই-কমার্সের জোয়ার, জাহাজের ব্ল্যাংক সেইলিং, নতুন কনটেইনার উৎপাদন কমে যাওয়াসহ আরও কিছু কারণে এই কনটেইনার সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট বৈশ্বিক হওয়ার কারণে বাংলাদেশের একার পক্ষে তা দূর করা সম্ভব নয়। তবে এর প্রভাব যেন দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর কম পড়ে, তা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সংকট মোকাবিলায় সাতটি সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়। এগুলোর মধ্যে শ্রীলংকা ও সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনারদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা, মেইন লাইন অপারেটর ও ফিডার ভেসেল অপারেটরদের মধ্যে কমন ক্যারিয়ার এগ্রিমেন্ট (সিসিএ) ও ডিরেক্ট ইন্টারচেঞ্জ (ডিআই) প্রথা চালু করা, বায়ার কর্তৃক নির্দিষ্ট শিপিং লাইন নির্ধারণ না করার অনুরোধ ও সরাসরি আমদানিকারকের দেশে জাহাজ পরিচালনার অনুরোধ করা ছিল অন্যতম। এছাড়া গত জুলাইয়ে এক জরুরি সভায় আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে কলম্বোগামী ফিডার ভেসেলকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বার্থিং দেওয়া, মায়েরস্ক শিপিং লাইনকে চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে ন্যূনতম তিনটি ফিডার ভেসেল চালুর জন্য প্রিন্সিপালের সঙ্গে সমন্বয় করা ও আগ্রহী নতুন ফিডার ভেসেল অপারেটরদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়া অন্যতম। এছাড়া নির্দিষ্ট শিপিং লাইন ও আইসিডি নির্ধারণ করে না দেওয়ার জন্য পুনরায় বায়ারদের সঙ্গে আলোচনার জন্য বিজিএমইএকে অনুরোধ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বন্দরের কনটেইনার ও জাহাজজট পরিস্থিতিতে অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। বিশ্বের সেরা বন্দরগুলো যেখানে জাহাজজটের কারণে বার্থিংয়ে ১০ দিন পর্যন্ত সময় নিচ্ছে; সেখানে আগস্টের প্রথম ১৫ দিনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, একদিনেই চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারবাহী জাহাজ বার্থিংয়ের সুযোগ পেয়েছে। মহামারিকালে বৈশ্বিক কনটেইনার সংকট এবং এবং দেশের বাণিজ্য সুরক্ষায় চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্যোগের বিস্তারিত রয়েছে প্রধান রচনায়।

বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত এখন বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আর বিশ্বের জাতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীনও আমাদের কাছের দেশ। এ দুটি দেশ থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় পণ্যের বেশির ভাগ আমদানি হয়। চীন থেকে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি ডলার ও ভারত থেকে ৬০০ কোটি ডলারের পণ্য আসে বাংলাদেশে। বিপরীতে জনবহুল এ দেশ দুটিতে আমাদের জন্যও রয়েছে সম্ভাবনাময় বিশাল বাজার। বাংলাদেশ সেখানে প্রচুর পণ্য রপ্তানি করতে পারে। যদিও এখন পর্যন্ত দেশ দুটি থেকে আমদানির তুলনায় রপ্তানি অনেক কম। এক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবে শুল্ক বাধার চাইতে অশুল্ক বাধাই অনেক বড়। সেটা দূর করা বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ উতরাতে হলে আঞ্চলিক সংযোগ উন্নত করতে হবে। বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম) অর্থনৈতিক করিডোর সেই সুযোগটাই করে দেবে। বিসিআইএম হলো একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক করিডোর, যার উদ্যোক্তা চীন। বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার নিয়ে এই করিডোর গঠনের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। এটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিসিআইএম নিয়ে রয়েছে বিশেষ প্রতিবেদন।

প্রিয় পাঠক, আমরা চাই এ দেশের মেরিটাইম চর্চাকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড় করাতে। বৈচিত্র্যময় আঙ্গিকে, সমৃদ্ধ কলেবরে বন্দরবার্তার পথচলা বাংলাদেশের মেরিটাইম খাতের বিকাশে আরও সহায়ক হবে-সেই প্রত্যাশা। সবাইকে শুভেচ্ছা।

ক্রামক ব্যাধি-সংক্রান্ত ধারা পর্যালোচনা করছে বিমকো

কোভিড-১৯ মহামারি বৈশ্বিক শিপিং খাতের অনেক কিছুতেই পরিবর্তন এনেছে। এই বৈশ্বিক দুর্যোগ খাত-সংশ্লিষ্টদের বিপুল লোকসানের কারণ হয়ে দাঁড়ালেও একে অনেকে এক ধরনের সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট কার্যকরভাবে এড়ানোর উপায়ও সন্ধান করছে অনেকে। করোনার এই ক্রান্তিকালে বাল্টিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কাউন্সিলও (বিমকো) নড়েচড়ে বসেছে। সংগঠনটি এখন তাদের নির্দেশনামালায় বর্ণিত সংক্রামক ব্যাধি-সংক্রান্ত ধারাগুলো পর্যালোচনা করে দেখছে। এসব ধারা কোভিড-১৯ মহামারির ক্ষেত্রে কার্যকর কিনা, তা খতিয়ে দেখছে তারা।

২০১৫ সালে ইবোলা সংক্রমণ শুরু হলে এই ধারাগুলো প্রণয়ন করে বিমকো। কিন্তু ইবোলা বৈশ্বিক মহামারি ছিল না। নির্দিষ্ট কিছু ভৌগোলিক অঞ্চলে এর প্রকোপ ছিল। এ কারণে সেই ধারা এখনকার বৈশ্বিক মহামারির জন্য উপযুক্ত কিনা, তা পর্যালোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিমকো।

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুতার উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ব্যাপ্তি কমেছে

সোমালি জলদস্যুদের উৎপাত ক্রমশ কমে যাওয়ায় ভারত মহাসাগরে জলসদ্যুতার ‘উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এলাকা (এইচআরএ)’-এর ভৌগোলিক সীমানা সংকুচিত করেছে সমুদ্র পরিবহন খাতের বিভিন্ন শীর্ষ সংস্থা। বৈশ্বিক শিপিং ও জ্বালানি তেল খাতের প্রতিনিধি হিসেবে এই পরিবর্তনে সম্মতি জানিয়েছে বাল্টিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কাউন্সিল (বিমকো), ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব শিপিং (আইসিএস), ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ড্রাই কার্গো শিপওনার্স (ইন্টারকার্গো), ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইনডিপেনডেন্ট ট্যাংকার ওনার্স (ইন্টারট্যাংকো) ও অয়েল কোম্পানিজ ইন্টারন্যাশনাল মেরিন ফোরাম (ওসিআইএমএফ)। ভৌগোলিক সীমানায় এই পরিবর্তনের ফলে এখন থেকে ভারত মহাসাগরের ইয়েমেনি ও সোমালি টেরিটোরিয়াল সি এবং এর পূর্ব ও দক্ষিণ পাশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে (ইইজেড) জলদস্যুতার ক্ষেত্রে এইচআরএ হিসেবে দেখা হবে। আইসিএসের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই পরিবর্তন কার্যকর বিবেচিত হবে।

দুঃসময় কাটিয়ে উঠছে জাহাজ ভাঙা শিল্প

চলতি বছরের এখন পর্যন্ত উপমহাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্পের জন্য সময়টা বেশ ভালোই যাচ্ছে। বর্তমানে শিপ রিসাইক্লিং প্রাইস বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি অবস্থান করছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে এ শিল্প বেশ ভালোভাবেই প্রত্যাবর্তন করেছে। জিএমএসের পরিসংখ্যান সে কথাই বলছে।

গত এক বছরে শিপ রিসাইক্লিং প্রাইস দ্বিগুণের বেশিতে উন্নীত হয়েছে। করোনার কারণে গত বছর বৈশ্বিক বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছিল। সে সময় রিসাইক্লিংয়ের জন্য জাহাজের প্রাপ্যতা সহজ হওয়ায় রিসাইক্লিং প্রাইস এলডিটিপ্রতি (লাইট ডিসপ্লেসমেন্ট টনেজ) ২০০ ডলারের আশপাশে ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। রিসাইক্লিংযোগ্য জাহাজের সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় দামও বেড়েছে। বর্তমানে তা এলডিটিপ্রতি ৬০০ ডলারের মতো। চলতি বছরের ৩৫তম সপ্তাহে জিএমএসের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে এ দর ৫৯০  থেকে ৬১০ ডলারের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।