Home Blog Page 209

সেপ্টেম্বর, ২০২১

ইনফোগ্রাফিক্স- আগস্ট, ২০২১

চট্টগ্রাম বন্দরের বিগত চার বছরের পণ্য ও জাহাজ হ্যান্ডলিং প্রবৃদ্ধির চিত্র।

চট্টগ্রাম বন্দরের আরও একটি লাইটার জেটি চালু

কর্ণফুলী নদীর সদরঘাটে চট্টগ্রাম বন্দরের ৪ নম্বর লাইটার জেটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম স্টিল প্লান্ট লিমিটেড। ৮ জুলাই আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কেএসআরএমের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সারওয়ার জাহান রোকন বলেন, এ জেটি দিয়ে আমাদের নিজস্ব পণ্য লোড-আনলোড করা হবে। প্রয়োজনে ভাড়ার মাধ্যমে অন্য প্রতিষ্ঠানের পণ্যও লোড-আনলোড করা হবে। তবে তা নির্ভর করবে আমাদের পণ্য বন্দরে থাকা না-থাকার ওপর। মনে হয় না এর প্রয়োজন হবে। কারণ পুরো বছরই আমাদের নিজস্ব পণ্য আনা-নেওয়ার কার্যক্রম চলমান থাকে।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম বলেন, লাইটার জেটি চালুর মাধ্যমে কেএসআরএম ব্যবসায়িকভাবে আরও একধাপ এগিয়ে গেল। পাশাপাশি বেড়েছে স্বনির্ভরতা ও সক্ষমতা। সদরঘাট ৪ নম্বর জেটি পুরোপুরি পরিচালিত হবে কেএসআরএমের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়। বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ বড় জাহাজ (মাদার ভেসেল) থেকে নিজস্ব লাইটারে জেটিতে এনে খালাস করা হবে পণ্য। আমরা আশা করছি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জেটি-সংক্রান্ত বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যোগ নেবে। এতে আমরা আমাদের সক্ষমতা অনেক গুণ বাড়াতে পারব।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আরিফুর রহমান বলেন, লাইটার জেটি চালুর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের গতিশীলতা যেমন বাড়বে, তেমনি সম্প্রসারণ হবে ব্যবসা-বাণিজ্যের। বিশেষ করে এসব জেটি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের জন্য অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমাদের বিশ^াস, এতে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে আরও বেশি আগ্রহী হবেন। এছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষ ইজারাদারদের জেটি পরিচালনায় বিদ্যমান সমস্যা নিরসনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অচিরেই সব সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সিনিয়র হাইড্রোগ্রাফার নাসির উদ্দিন, ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার (অপারেশন) মো. সাইফুল আলম, নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল হাসান চৌধুরী, কেএসআরএমের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক করিম উদ্দিন, পরিচালক (প্লান্ট) কমোডর (অব.) শামসুল কবির এনডিসি-পিএসসি, মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন গোলাম মোস্তফা, ক্যাপ্টেন আনোয়ারুল হক, প্রধান প্রকৌশলী গোলাম মর্তুজা ও এজিএম মো. মুমিনুল হক চৌধুরী।

বাংলার নদ-নদীর সঙ্গে মিশে আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

শোকের মাস আগস্ট। এই মাসেই ঘটেছিল ইতিহাসের নৃশংস ও মর্মস্পর্শী রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে। বাঙালির ইতিহাসের সে এক কালিমালিপ্ত অধ্যায়। পৌরাণিক বর্ণনায় পাওয়া বঙ্গের অংশবিশেষ আজ যে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বিশ্বমানচিত্রে ঠাঁই করে নিয়েছে, তার মূল কারিগর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষার ভিত্তিতে আত্মপ্রকাশ করা যে দেশটি আজ উন্নতির সোপানে এগিয়ে চলেছে, তার স্বপ্নদ্রষ্টা এই মহান নেতা। ধনে-ধান্যে সমৃদ্ধ একটি সোনার দেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর। তাঁকে হত্যার মাধ্যমে প্রকারান্তরে বাংলাদেশেরই উন্নয়নযাত্রার গলা টিপে ধরা হয়। তবে এই বাধা বেশি দিন  টেকেনি। লাখো মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে দেশের জন্ম, তাকে এত সহজে দমিয়ে রাখা যায় না। আগস্টের শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে তাঁর কন্যার নেতৃত্বে দেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সুতোয় গাঁথা। বর্তমানে যেটি বাংলাদেশ, সেই অঞ্চলের ভূমিরূপ গঠনে বড় অবদান রেখেছে দুটি জগদ্বিখ্যাত নদী। তার একটি গঙ্গা বা পদ্মা, অন্যটি ব্রহ্মপুত্র। এ দুই যশস্বী স্রোতধারা বাহিত পলিমাটিতেই গড়ে উঠেছে বদ্বীপটি। সঙ্গে আরও কিছু নদীর আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে এখানকার জমি হয়েছে উর্বর। আর জালের মতো বিছিয়ে থাকা নদীগুলো গড়ে তুলেছে পণ্য পরিবহন ও যোগাযোগ-সাশ্রয়ী এবং সহজ নেটওয়ার্ক। আর এই নদ-নদীর সঙ্গে মিশে আছেন কালের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছিলেন, ‘যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’ প্রাচীন বঙ্গ থেকে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে কী করে এল বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, সেই কথকতা নিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের মূল আয়োজন।

চট্টগ্রাম বন্দরের কালপঞ্জি আর বাংলার ইতিহাস প্রায় একসূত্রেই গাঁথা। আজকের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক হৃৎপি- হিসেবে সক্রিয় রয়েছে, স্বাধীনতার পূর্বকালে, এমনকি দুই-আড়াই হাজার বছর ধরেই এটি এই জাতির প্রাণের আধান হিসেবে কাজ করে আসছে। বঙ্গবন্ধুর জীবনের সাথেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে চট্টগ্রামের নাম। শুরুটা হয়েছিল তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু দেশব্যাপী যে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেন, সেখান থেকেই। সে সময় তিনি ঢাকার পরই গুরুত্ব দিয়েছিলেন চট্টগ্রামকে। এরপর নানা প্রয়োজনে তিনি অনেকবারই চট্টগ্রামের আতিথ্যগ্রহণ করেছেন। বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফার প্রথম আনুষ্ঠানিক জনসভা চট্টগ্রামেই হয়েছিল। আগরতলা মামলা পরিচালনার জন্য শেখ মুজিব ফান্ড গঠন, গণআন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারসহ সেসময়কার গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনায় বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিল চট্টগ্রাম। স্বাধীনতার পরপরই অনন্য কূটনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় ধ্বংসপ্রাপ্ত জাহাজ ও মাইন অপসারণ করে পরিত্যক্ত চট্টগ্রাম বন্দরকে দ্রুততম সময়ে পুরোপুরি সচল করেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৩ সালের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি বন্দরে কাস্টমস ইয়ার্ড ও জেটি ঘুরে দেখেন এবং বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি বন্দরের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন এবং এর নিরাপত্তা স্থল ও নৌবাহিনীর হাতে ন্যস্ত করার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধু ও চট্টগ্রাম নিয়ে রয়েছে আমাদের বিশেষ আয়োজন।

প্রিয় পাঠক, আমরা চাই এ দেশের মেরিটাইম চর্চাকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড় করাতে। বৈচিত্র্যময় আঙ্গিকে, সমৃদ্ধ কলেবরে বন্দরবার্তার পথচলা বাংলাদেশের মেরিটাইম খাতের বিকাশে আরও সহায়ক হবে-সেই প্রত্যাশা। সবাইকে শুভেচ্ছা।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে পুরোদমে ই-পেমেন্ট চালু

নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে দেশের বৃহৎ শুল্কস্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ই-পেমেন্ট সিস্টেম পুরোদমে চালু হয়েছে। ১ জুলাই থেকে এই সেবা চালু করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এখন থেকে আমদানিকারকরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে এই সিস্টেমে ইউজার আইডি দিয়ে আরটিজিএস (রিয়েল-টাইম গ্রস সেটলমেন্ট) গেটওয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই শুল্ক পরিশোধ করতে পারবেন। এতে ব্যবসায়ীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাংকের লাইনে দাঁড়ানোর ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলবে। একই সাথে বন্ধ হবে নানা হয়রানি। এর আগে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কাস্টম হাউসে এই সেবা আংশিকভাবে চালু হয়েছিল।

এই সিস্টেম চালু হওয়ায় জালিয়াতি, শুল্ক ফাঁকি, মিথ্যা তথ্য দিয়ে শুল্ককর বাবদ অতিরিক্ত অর্থ আদায়, আমদানি নথি প্রতি কাস্টম এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের টাকা আদায়সহ সকল অনৈতিক কাজ বন্ধ হবে। এছাড়া নতুন এই নিয়মে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির পর আমদানিকারকের পক্ষে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট শুল্কস্টেশনে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করবে। শুল্কায়ন সেকশন থেকে সংশ্লিষ্ট চালানটিতে কত টাকা শুল্ককর পরিশোধ করতে হবে তা নিশ্চিত করা হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস একটি বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে দুই লাখ টাকার বেশি শুল্ককর আরোপ হলে বাধ্যতামূলক ই-পেমেন্ট করতে হবে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সব আমদানিকারকের জন্য ই-পেমেন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এসাইকুডা সফটওয়্যারের মাধ্যমে (শুল্ক-সংক্রান্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সফটওয়্যার) আমদানিকারকের ইউজার আইডি ব্যবহার করে এই প্রক্রিয়ায় শুল্ক পরিশোধ করতে সময় লাগবে মাত্র কয়েক মিনিট। ই-পেমেন্ট করতে ছয় ধরনের তথ্য প্রয়োজন হয়। বিল অব এন্ট্রি নম্বর, অর্থবছর, কাস্টম হাউসের অফিস কোড, পরিশোধকৃত শুল্কের পরিমাণ, এআইএন নম্বর এবং ফোন নম্বর। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শুল্ক পরিশোধ করা হলে আমদানিকারকের ফোন নম্বরে শুল্ক পরিশোধ-সংক্রান্ত কনফার্মেশন এসএমএস পেঁৗঁছে যাবে। আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসাইকুডা সফটওয়্যার নেটওয়ার্কে শুল্ক পরিশোধ-সংক্রান্ত তথ্য আপডেট হবে।

মাতারবাড়ী জেটিতে ছয় মাসে ভিড়েছে ১৭ বাণিজ্যিক জাহাজ

কক্সবাজারের মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটি এত দিন ছিল কেবল একটি জেটি। সেখানে বিদ্যুকেন্দ্রের নির্মাণসামগ্রী নিয়ে ভিড়তে পারত একটি জাহাজ। এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে আরও একটি নতুন জেটি। এখন থেকে মাতারবাড়ীর দুই জেটিতে একসঙ্গে দুটি বাণিজ্যিক জাহাজ ভিড়তে পারবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পথে এটি একটি বড় মাইলফলক।

২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাহাজ প্রবেশের জন্য নির্মিত চ্যানেল দিয়ে প্রথমবার প্রবেশ করে বাণিজ্যিক জাহাজ। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করেছিল মাতারবাড়ী চ্যানেল। মূলত মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মিত হেভি লিফট বা ভারী কার্গো নামানোর জন্য এই জেটি ব্যবহৃত হচ্ছিল। এরপর থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ১৭টি বাণিজ্যিক জাহাজ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণসামগ্রী নিয়ে জেটিতে ভেড়ে।

কক্সবাজারের মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রে এত দিন ছিল কেবল একটি জেটি। এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে আরও একটি নতুন জেটি। এখন থেকে মাতারবাড়ীর দুই জেটিতে একসঙ্গে দুটি বাণিজ্যিক জাহাজ ভিড়তে পারবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সহকারী হারবার মাস্টার আতাউল হাকিম সিদ্দিকী বলেন, ‘গত ছয় মাসে ১৭টি বাণিজ্যিক জাহাজ কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে ভিড়েছে। নতুন একটি জেটির ১৫০ মিটার পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে। সেখানেই আমরা জাহাজ ভেড়াতে সক্ষম। ১৪ ও ১৫ জুলাই দুটি জেটিতে দুটি জাহাজ ভেড়ে। দুটি জাহাজই বিদ্যুকেন্দ্রের নির্মাণসামগ্রী নিয়ে আসে।’

কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আগে প্রস্তুত হয়েছে আড়াই শ মিটার প্রস্থ, ১৮ মিটার গভীরতা এবং ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল। এই চ্যানেল বা প্রবেশপথ দিয়েই বঙ্গোপসাগর থেকে জাহাজ বন্দর জেটিতে প্রবেশ করছে। গভীর সাগর থেকে জাহাজগুলো চ্যানেল দিয়ে জেটিতে প্রবেশের জন্য বসানো হয়েছে পথনির্দেশক বয়। প্রবেশ চ্যানেলের সক্ষমতা আরও বেশি থাকলেও এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৯ মিটার গভীরতা বা ড্রাফট এবং ১৩৫ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যরে জাহাজ জেটিতে প্রবেশ করেছে।

ছবিতে সংবাদ – অগাস্ট

৬ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের সদ্যবিদায়ী উপপরিচালক মেজর মো. রেজাউল হককে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন।

২১ জুলাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র ঈদুল আজহা পালন করা হয়। বন্দর মসজিদে অনুষ্ঠিত ঈদ জামাতে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পর্ষদ সদস্য, বিভাগীয় প্রধানসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। পরে বন্দর চেয়ারম্যান সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ভাসানচর এলাকায় নৌ-দুর্ঘটনা বাড়ছে

চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশে নৌপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ভাসানচরের সামনে সাগর উপকূল অতিক্রম করতে হয় জাহাজগুলোকে। প্রায় ১১৪ কিলোমিটার লম্বা চট্টগ্রাম-চরগজারিয়া নৌপথের সাগর উপকূলের ১৫ মাইল বর্ষা মৌসুমে দিন দিন ‘ভয়ংকর’ হয়ে উঠছে। জুলাই মাসের প্রথম ১০ দিনে ১৫ মাইল নৌপথে ঘটেছে পাঁচটি দুর্ঘটনা। এর মধ্যে ১৬ কোটি টাকার পণ্য নিয়ে ডুবেছে তিনটি জাহাজ।

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এই নৌপথে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পণ্য পরিবহন নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে এ পথ ব্যবহারকারী বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ ও আমদানিকারকের। কারণ, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বছরে আমদানি হওয়া প্রায় পাঁচ কোটি টন পণ্য ছোট জাহাজে করে এই নৌপথ ব্যবহার করে নেওয়া হয় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, যশোরসহ সারা দেশে। অর্থাৎ এই সরবরাহ ব্যবস্থা কোনো কারণে ব্যাহত হলে পুরো দেশের পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্য অনুযায়ী, নৌপথটি ধরে চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন ১০০-১২০টি লাইটার জাহাজ সারা দেশের নানা ঘাটে পণ্য নিয়ে যায়। একই পথ ধরে ফেরত আসে ১০০-১২০টি লাইটার জাহাজ। সবচেয়ে বেশি পরিবহন হয় সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার, চুনাপাথর, জিপসাম ইত্যাদি। এছাড়া সব মেগা প্রকল্পের সরঞ্জাম, পাথর, কয়লা, সার, জ্বালানি তেল, ডাল, গম, চিনিসহ ভোগ্যপণ্যের বড় অংশও এ পথে পরিবহন হয়।

ব্যবহারকারীরা বলছেন, চট্টগ্রাম থেকে ভাসানচরের সামনে দিয়ে হাতিয়া চ্যানেল হয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্য পরিবহন হয়। ভাসানচরের দক্ষিণে নিচের দিকে নৌপথটির সাগর উপকূলের প্রায় ১৫ মাইল এলাকায় পানির গভীরতা চার মিটারের কম। কিন্তু লাইটার জাহাজগুলোর ড্রাফট থাকে চার থেকে সাড়ে চার মিটার। তাতে ভাটার সময় এ পথে জাহাজ চলাচল করতে পারে না। জোয়ারের সময় পানি বাড়লে নৌপথটি অতিক্রম করতে হয়। এই অংশে জাহাজ চলাচল করে পূর্ব-পশ্চিমমুখী হয়ে। আর জোয়ারের সময় ¯্রােত ও ঢেউ থাকে উত্তর-দক্ষিণমুখী। অর্থাৎ জাহাজ চলাচলের সময় বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে জাহাজের পেটে। তাই জাহাজের কাঠামো দুর্বল হলে বা মাস্টার অনভিজ্ঞ হলে তখন এই অংশে জাহাজ নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তাতেই ঘটে দুর্ঘটনা।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ৫১ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়

সর্বশেষ অর্থবছরে ৫১ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। একই সাথে এবারই প্রথম ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি আয়ের মাইলফলক অর্জন করল প্রতিষ্ঠানটি। গত অর্থবছরের চেয়ে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আর প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে ২৩ শতাংশের বেশি। এই প্রবৃদ্ধি গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ।

চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, ‘করোনা মহামারির কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং এই সময়ে আমরা কাস্টমসের কার্যক্রম অব্যাহত রেখে আমদানি-রপ্তানি সচল রাখতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়েছি। একই সঙ্গে পণ্য আমদানিতে অনিয়ম বন্ধ, চোরাচালান রোধ, শুল্ক ফাঁকিতে জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করায় এই সুফল পেয়েছি।’

রাজস্ব আয়ে এককভাবে শীর্ষে থাকা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয় হয়েছিল ৪১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। সদ্যবিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ৫১ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের চেয়ে ৯ হাজার ৭১১ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আয় করেছে কাস্টম হাউস।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চট্টগ্রাম কাস্টমসকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল। করোনা মহামারির এই সময়ে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন রীতিমতো স্বপ্নবিলাস। কারণ করোনার অস্বাভাবিক এই সময়ে সরকারি সব প্রতিষ্ঠানই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে। রাজস্ব বোর্ড সেটি জানেও। তার পরও লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়, যাতে রাজস্ব আয়ে বাড়তি চাপ থাকে।

বিকল্প সমুদ্রপথে পণ্য রপ্তানি সমুদ্রপথে পণ্য রপ্তানি

দেশের বেসরকারি কনটেইনার ডিপোয় রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে নিয়মিত পথের পাশাপাশি বিকল্প পথে বেড়েছে পণ্য রপ্তানি। ১৪ জুলাই চট্টগ্রামের ১৯টি ডিপোয় রপ্তানি পণ্যবোঝাই কনটেইনারের সংখ্যা ১৫ হাজার ৮০১ এককে উন্নীত হয়। এ পরিস্থিতিতে প্রচলিত পথের পাশাপাশি ছোট ছোট বিকল্প পথে পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন শিপিং এজেন্টরা। বিকল্প হিসেবে তারা চট্টগ্রাম থেকে ভারতের কৃষ্ণপত্তনাম বন্দর দিয়ে ইউরোপে পণ্য রপ্তানির পথ বেছে নিয়েছেন। এই নৌপথে চট্টগ্রাম থেকে হলদিয়া, কৃষ্ণপত্তনাম ও চেন্নাই হয়ে পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে কৃষ্ণপত্তনাম নৌপথে শ্রেয়াস শিপিংয়ের কনটেইনার পণ্য আনা-নেওয়ার জাহাজ পরিষেবা চালু রয়েছে।

রপ্তানি পণ্য প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে ফিডার জাহাজে এসব বন্দর হয়ে কৃষ্ণপত্তনাম বন্দরে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ইউরোপগামী বড় জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। একইভাবে কৃষ্ণপত্তনাম বন্দর হয়ে আমদানি পণ্য চট্টগ্রামেও আনা হয়। ইউরোপ ছাড়াও ভারতগামী রপ্তানি পণ্যও পরিবহন হয় এই নৌপথে, যেগুলো আগে কলম্বো হয়ে যেত।

বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি হয় মূলত সিঙ্গাপুর ও শ্রীলংকার দুটি এবং মালয়েশিয়ার দুটি বন্দর দিয়ে। প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে এই চার বন্দরে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে বড় জাহাজে সেসব কনটেইনার যায় ইউরোপ-আমেরিকায়। সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরে কনটেইনার জটের পর থেকে বিকল্প পথ দিয়ে পণ্য আমদানির পাশাপাশি রপ্তানিও বাড়ছে। ৯ জুলাই এ নৌপথে ‘এসএসএল কচি’ নামের জাহাজটি ৫১৫ একক রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছেড়ে গেছে। এর আগে জুন মাসে তিনটি জাহাজে এ নৌপথে ১ হাজার ১৭৯ একক কনটেইনার রপ্তানি হয়েছে। এর আগে মে মাসে ৩১৮ একক, এপ্রিলে ৪৫৩ একক, মার্চে ৪৮৫ একক কনটেইনারবাহী পণ্য রপ্তানি হয়। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ১ হাজার ৮০০ একক কনটেইনারবাহী পণ্য রপ্তানির তুলনায় এ সংখ্যা খুবই কম। তবু সংকটের সময় এ ধরনের বিকল্প পথে কিছু কনটেইনার রপ্তানি হলে চাপ কমবে বলে মনে করছেন শিপিং এজেন্টরা। আর এই নৌপথে জাহাজের সংখ্যা বাড়ানো গেলে সংকট মোকাবিলায় তা সহায়তা করবে।