Home Blog Page 210

চট্টগ্রাম বন্দরে যোগ হলো আরও একটি বেসরকারি জেটি

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পারে বেসরকারিভাবে নির্মিত দ্বিতীয় জেটিতে ভিড়েছে একটি পণ্যবাহী জাহাজ। ‘গিউলিয়া-১’ নামের জাহাজটি স্ক্র্যাপপণ্য নিয়ে সেই জেটিতে ভিড়েছে ২৮ জুলাই। জাহাজে ২৩ হাজার টন স্ক্র্যাপ আনা হয়েছে বিএসআরএমের জন্য। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি মূলত জাহাজ মেরামতের জন্যই এই জেটি নির্মাণ করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিতে জাহাজজট কমাতে সেখানে গিয়ে জাহাজ ভিড়িয়ে দ্রুত পণ্য খালাসের উদ্যোগ নিয়েছে।

কর্ণফুলী নদীর উত্তর পারে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান; আর দক্ষিণ পারে সরকারি উদ্যোগে একাধিক জেটি থাকলেও বেসরকারি উদ্যোগে জেটি নির্মাণের উদ্যোগ এই প্রথম। গত ৩০ মার্চ বেসরকারি জাহাজ মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপবিল্ডার্স লিমিটেডের একটি জেটিতে প্রথম পণ্যবাহী জাহাজ ভেড়ানো হয়েছিল। সম্প্রতি এর পাশে দ্বিতীয় একটি জেটি তৈরি হওয়ায় সেখানে জাহাজ ভেড়ানো শুরু হয়েছে।

২৮ জুলাই চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পারে বেসরকারিভাবে নির্মিত দ্বিতীয় জেটিতে স্ক্র্যাপপণ্য নিয়ে ভিড়েছে জাহাজ ‘গিউলিয়া-১’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘বেসরকারি উদ্যোগে কর্ণফুলী শিপবিল্ডার্সের জেটি তৈরির অনুমোদনের আগেই বন্দরের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। সেই অনুযায়ী জেটি খালি থাকলে বন্দরের ব্যবহারের জন্য দেওয়ার শর্ত আছে। সে জন্য আমরা তাদের দুটি জেটিই এখন ব্যবহার করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুটি জেটি বাড়তি পাওয়ার ফলে আমরা বন্দরে বাড়তি জাহাজ ভেড়াতে পারছি। বিশেষ করে স্ক্র্যাপ পণ্যবাহী জাহাজ ভেড়াচ্ছি। এতে সেই জাহাজগুলো দ্রুত জেটিতে ভিড়ছে; একই সঙ্গে বন্দরের মূল জেটির ওপর চাপ কমছে। বন্দর বাড়তি রাজস্ব আয় করছে।’

জাহাজটির শিপিং এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আসিফ ইফতেখার হোসেন, ‘৩৩ হাজার টন স্ক্র্যাপ নিয়ে জাহাজটি বহির্নোঙরে পৌঁছে। সেখানে ৯ হাজার টন স্ক্র্যাপ ছোট জাহাজে নামানো হয়েছে। বাকি পণ্য নিয়ে জাহাজটি ড্রাইডক জেটিতে ভিড়েছে। মূলত দ্রুত স্ক্র্যাপ পণ্যবাহী জাহাজ জেটিতে ভিড়িয়ে পণ্য খালাস করতেই এই ড্রাইডক জেটিতে জাহাজ ভেড়ানো হয়েছে।’

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপ-আমেরিকায় মাদার ভেসেল চালুর প্রস্তাব

সমুদ্রপথে পণ্য রপ্তানিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপ এবং আমেরিকার বিভিন্ন বন্দরের সঙ্গে মাদার ভেসেল সার্ভিস (সরাসরি জাহাজ চলাচল) চান সংশ্লিষ্টরা। ৪ জুলাই চট্টগ্রামে বিজিএমইএ ও বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফা) নেতৃবৃন্দ যৌথ বৈঠকে এ বিষয়ে একমত হন। তারা সরাসরি মাদার ভেসেল সার্ভিস চালু করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ভবনে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে বিজিএমইএ ও বাফা নেতৃবৃন্দ তিনটি সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে রয়েছে বায়ার্স ফোরামের সঙ্গে বৈঠক করে বিদেশি ক্রেতাদের মাধ্যমে শিপিং কোম্পানিগুলোকে বড় জাহাজ ও কনটেইনারের সংখ্যা বৃদ্ধির অনুরোধ করা, বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করে এমন দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে সমস্যাটি নিয়ে বৈঠক করা এবং বাংলাদেশ সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপ এবং আমেরিকার বন্দরে সরাসরি জাহাজ চলাচলের উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনকে শক্তিশালী করে নিজস্ব উদ্যোগে মাদার ফিডার জাহাজ পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা।

বেসরকারি আইসিডি থেকে সব ধরনের পণ্য খালাসের অনুমতি রাজস্ব বোর্ডের

চলমান কঠোর লকডাউন ও ঈদের ছুটিতে সৃষ্ট কনটেইনারের চাপ সামলাতে চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা সব ধরনের পণ্যের কনটেইনার বেসরকারি আইসিডিতে সাময়িক সংরক্ষণ, আনস্টাফিং ও খালাসের অনুমতি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের প্রেক্ষিতে ২৫ জুলাই এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস নীতি) মোহাম্মদ মেহরাজ-উল-আলম সম্রাট স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই আদেশ আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বলবৎ রাখার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউ কনটেইনার ধারণক্ষমতার চট্টগ্রাম বন্দরে ২৫ জুলাই পর্যন্ত কনটেইনার ছিল ৪৩ হাজার ৫৭৪ টিইইউ। অন্যদিকে বেসরকারি ১৯টি অফডকের মধ্যে অপারেশনে থাকা ১৭টি অফডকের ৭৮ হাজার ৭০০ টিইইউ কনটেইনার ধারণক্ষমতার বিপরীতে রোববার পর্যন্ত কনটেইনার ছিল ৫৩ হাজার ৮৬৪ টিইইউ। অর্থাৎ এনবিআরের নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে অফডকে খালি থাকা ২৪ হাজার ৮৩৬ টিইইউ কনটেইনারের জায়গায় চট্টগ্রাম বন্দরে জমে থাকা কনটেইনারগুলো স্থানান্তর করতে পারবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ পূর্বে অফডক থেকে শুধু ৩৮ ধরনের পণ্য খালাস করা গেলেও এখন সব ধরনের পণ্যের কনটেইনার খালাস করা যাবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমেও পূর্বের ন্যায় গতি আসবে।

তবে অফডকেও যাতে অচলাবস্থা সৃষ্টি না হয় সেজন্য বেসরকারি অফডকগুলোতে জমে থাকা রপ্তানি কনটেইনারগুলো দ্রুত জাহাজীকরণের মাধ্যমে অফডকগুলোকে রপ্তানি কনটেইনার ফ্রি করার কথা জানিয়েছেন আইসিডি মালিকদের সংগঠন বিকডা।

বিকডা সচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, বর্তমানে ১৯টি অফডকে জমে থাকা প্রায় ১৩ হাজার টিইইউস রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনারের কারণে অফডকগুলোতে যে কনটেইনারজট রয়েছে তা অতি দ্রুত জাহাজীকরণ করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ অফডকের রপ্তানি কনটেইনার জাহাজীকরণ করা হলে চট্টগ্রাম বন্দর হতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার অফডকের ইয়ার্ডে স্থানান্তর করতে পারবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরের কনটেইনারজট নিরসনে একটি ইতিবাচক সুফল পাওয়া যাবে।

চটগ্রাম বন্দর ও অফডকসমূহের কনটেইনার ধারণক্ষমতা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ফলে অফডকে আনা কনটেইনার যদি সময়মতো খালাস না নেওয়া হয় তাহলে অফডকগুলোতেও বন্দরের ন্যায় কনটেইনারজট বাঁধে।

চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে ৫ নতুন কনটেইনার জাহাজ

জাহাজসংকটে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। রপ্তানি পণ্য পরিবহনে জটিলতা নিরসনে চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে যুক্ত হচ্ছে নতুন পাঁচটি কনটেইনার জাহাজ। ১২ জুলাই স্টেকহোল্ডারদের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব জাহাজ পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

অনুমতিপ্রাপ্ত জাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানি লিমিটেডের (এমএসসি) জাহাজ ‘ওইএল ইন্ডিয়া’ ও ‘হারম্যান স্কেপার’, এভার বেস্ট শিপিং লাইনের ‘কন্টশিপ লেক্স’ ও ‘মিনিয়ন’ এবং সি কনসোর্টিয়ামের ‘এক্সপ্রেস যমুনা’।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, ‘রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ সংকট নিরসনে বন্দর ও স্টেকহোল্ডারদের জরুরি বৈঠকে চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে নতুন কনটেইনার জাহাজ পরিচালনার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে মোতাবেক সংশ্লিষ্টদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমতিপ্রাপ্ত জাহাজগুলো তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।’

সিঙ্গাপুর, কলম্বো, পোর্ট কেলাংসহ বিভিন্ন ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে জটের প্রভাবে জাহাজ সংকটে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যথাসময়ে রপ্তানি পণ্য শিপমেন্ট নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বেসরকারি ডিপোগুলোতে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারজট সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন কারখানা থেকে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানযোগে পাঠানো রপ্তানি পণ্যগুলো অফডকে আন স্টাফিংয়ের জন্য গাড়িগুলোকে ৮-১০ দিন ডিপো গেটে লাইন ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, সংকট নিরসনে চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে পণ্য পরিবহনে নতুন ফিডার ভেসেলের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এছাড়া বিভিন্ন অফডকে বিভিন্ন কোম্পানির প্রচুর পরিমাণ খালি কনটেইনার জমা হয়ে থাকায় সেখানে রপ্তানি পণ্য আন স্টাফিং কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই ওই বৈঠকে ২০ ফুটের খালি কনটেইনারগুলো ফোর্স শিপমেন্টেরও সিদ্ধান্ত হয়।

মানসা দ্বিতীয় আবু বকর

মানসা অর্থ রাজা, সম্রাট। ১৪০০ শতকের দিকে আফ্রিকার মালি সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন মানসা আবু বকর ২। সে সময় আফ্রিকার এ রাজ্য উন্নতির চরম শিখরে ছিল, যার কিছুটা প্রমাণ পাওয়া যায় আবু বকরের পরবর্তী শাসক, তাঁরই ভাই মানসা মুসার বিখ্যাত হজযাত্রার সময়। আরব ইতিহাসবিদদের বর্ণনা অনুযায়ী, হজে গমনের সময় পথে মুসা এত স্বর্ণমুদ্রা খরচ করেছিলেন যে, মুদ্রার মান কমে গিয়ে মূল্যস্ফীতি হয়ে মিশরের অর্থনীতি ধসে যায় পরের অন্তত ১০ বছরের জন্য।

দ্বিতীয় আবু বকরের জীবন সম্পর্কে খুব কম জানা যায়। একমাত্র আল-উমারির বইতেই তাঁকে নিয়ে কিছু তথ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে। শাসক হলে কী হবে, মানসা আবু বকরের ছিল অভিযানের অদম্য নেশা। আটলান্টিক মহাসাগর ও তার ওপাশে কী আছে তা জানার দুর্নিবার কৌতূহল ছিল তাঁর মনে। তাই ১৩১২ সালে রাজ্য শাসনে ইস্তফা দিয়ে, সিংহাসন ত্যাগ করে বেরিয়ে পড়েন অভিযানে।

আল-উমারি লিখেছেন, আটলান্টিকের ওপারে কী আছে তা জানতে ২০০ জাহাজ তৈরি করান আবু বকর। এর মধ্যে ১০০ জাহাজ তাঁর ও সৈনিকদের জন্য এবং বাকি ১০০ জাহাজে সোনা, পানি আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় রসদ বোঝাই করা হয়েছিল, যা অন্তত কয়েক বছর টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিল। ভাই মুসাকে রেখে যান তাঁর হয়ে রাজ্য শাসন করার জন্য। জাহাজগুলো টিম্বাকটু বন্দর ছেড়ে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু আর কখনো ফিরে আসেনি। আটলান্টিক সাগরে জাহাজ ভাসিয়ে চিরদিনের জন্য অদৃশ্য হয়ে গেলেন মানসা আবু বকর ২। অনেক ইতিহাসবিদই মনে করেন, দক্ষিণ আমেরিকায় পৌঁছেছিলেন আবু বকর ও তাঁর দল। কিন্তু তাঁদের সেই বিশ্বাসের সপক্ষে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

আম্বারলি বন্দর

কসমোপলিটান ইস্তাম্বুল নগরী থেকে মাত্র ২৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে মর্মর সাগরের উত্তর অংশের তীরে রয়েছে তুরস্কের বৃহত্তম বন্দর আম্বারলি। দুই অঞ্চলে বিভক্ত বন্দরটির পশ্চিম অংশে রয়েছে আম্বারলি নিউ পোর্ট, যেখানে গড়ে উঠেছে অয়েল টার্মিনাল, বেসরকারি জেনারেল, বাল্ক এবং কনটেইনার টার্মিনাল। পুবদিকে আছে অয়েল প্ল্যাটফর্ম, জেটি, মুরিং বয়া। অবাক ব্যাপার হলো, লয়েড’স লিস্টে বিশ্বের ৫৫তম ব্যস্ত বন্দরটির সাথে দেশটির হিন্টারল্যান্ডের কোনো রেল সংযোগ নেই। সকল আমদানি-রপ্তানি পণ্য মূলত সড়কপথে পরিবহন করা হয়।

দ্রুত নগরায়ণের নগরী হওয়ায় ইস্তাম্বুল ও হায়দারপাশা বন্দরের ওপর চাপ কমাতে ১৯৮৯ প্রথমবার এখানে একটি বন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়। পরিচালনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে ১৯৯২ সালে আম্বারলি পোর্ট ফ্যাসিলিটিজ ট্রেড কোম্পানি গঠন করে তুরস্কের পরিবহন মন্ত্রণালয়। ১৯৯৮ সালে অর্থনীতি উদারীকরণের পর দেশটিতে বাণিজ্যের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে কার্গো ভলিউম। ৪ হাজার ৫০০ বর্গমিটার ওয়্যারহাউস এবং ৩ লাখ ৭৫ হাজার বর্গমিটার ইয়ার্ড এলাকায় ২০২০ সালের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বার্ষিক মোট থ্রুপুট ছিল ৩১ লাখ ৪ হাজার ৮৮২ টিইইউ।

আম্বারলির প্রধান কনটেইনার টার্মিনাল ১৭ হেক্টর এলাকার ওপর প্রতিষ্ঠিত মারপোর্টের বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি ৯ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ টিইইউ, যেকোনো সময় এখানকার ইয়ার্ডে মোট সাড়ে ১২ হাজার একক কনটেইনার রাখা সম্ভব, ৩৩২টি রিফার আউটলেটও আছে এখানে। এখানকার ফ্রেইট স্টেশনের আয়তন ১০ হাজার বর্গমিটারের কিছু বেশি। মারপোর্ট টার্মিনালের ৮০০ মিটার দীর্ঘ বার্থে রোল-অন/রোল-অফ রাম্প আছে। ছয় শিপ-টু-শোর গ্যান্ট্রি ক্রেন, একটি মোবাইল হারবার ক্রেন, ১৭ রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি (আরটিজি) ক্রেনে সজ্জিত এ টার্মিনালের নিজস্ব টপ-লিফটার, স্প্রেডার এবং বেশকিছু টার্মিনাল ট্রাকসমৃদ্ধ মারপোর্ট টার্মিনালে সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজকে সেবা দেওয়া হচ্ছে।

১৭ হেক্টর আয়তনের আরেক টার্মিনাল মারপোর্ট ওয়েস্টের বার্ষিক ধারণক্ষমতাও সাড়ে ৯ লাখ টিইইউ। এখানকার বার্থের দৈর্ঘ্য ৭৬০ মিটার হলেও ড্রাফট মারপোর্টের চেয়ে বেশি, ১৬ দশমিক ৫ মিটার। ৭ হাজার ৪২৫ বর্গমিটারের কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন, ১৬০ রিফার পয়েন্টসংবলিত টার্মিনালে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আছে ৩টি এস-টু-এস গ্যান্ট্রি ক্রেন, ৭টি মোবাইল হারবার ক্রেন, ১৮টি আরটিজি।

মারদাস মারমারা মেরিটাইম ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির মালিকানাধীন এবং পরিচালিত মারদাস টার্মিনালের শুরুর দিকে কেবল ব্রেকবাল্ক কার্গো হ্যান্ডল করা হলেও ২০০২ থেকে এখানে কনটেইনারও হ্যান্ডল করা হচ্ছে। মোট ৯১০ মিটার দীর্ঘ দুটি বার্থে আছে ১২ মোবাইল হারবার ক্রেন, ৮টি ১৭-রো আউটরিচ ক্রেন, ৩টি ১৬-রো আউটরিচ ক্রেন, ৮টি আরটিজি, ৪৫০টি রিফার আউটলেট। এ টার্মিনালের বার্ষিক ধারণক্ষমতা ৬ লাখ ৫০ হাজার টিইইউ।   

আম্বারলির কুমপোর্ট টার্মিনালের ২ হাজার ৮০ মিটার দীর্ঘ বার্থে গত বছর ৮ লাখ ৪৪ হাজার টিইইউ এবং ২ লাখ ৩৭ হাজার টন সাধারণ কার্গো নিয়ে অন্তত ১ হাজার ৯১৯টি ভেসেল ডকিং করেছে। ৪০ হেক্টরের এ টার্মিনালে বছরে ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন পর্যন্ত কনটেইনার হ্যান্ডল করা যায়। সাথে আছে ২ দশমিক ৫ একর কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন এবং ১ দশমিক ৭ একর ওয়্যারহাউস। কুমপোর্ট টার্মিনালের ৭, ৮ এবং ১০ নম্বর বার্থে কনটেইনার ও কার্গো-দুই ধরনের পণ্যই হ্যান্ডল করা হয়।

মারপোর্ট ইস্ট টার্মিনাল হিসেবে পরিচিত বন্দরের ১, ২ এবং ৩ নম্বর পিয়ারে মূলত কনটেইনার হ্যান্ডল করা হয়। কনটেইনার এবং কার্গো দুটিই সামলানো যায় ৯ থেকে ১৫ মিটার ড্রাফটবিশিষ্ট ৪ ও ৫ নম্বর পিয়ারে।

বার্ষিক দুই মিলিয়ন টন বাল্ক কার্গো এবং দেড় মিলিয়ন টন মিশ্র পণ্য হ্যান্ডলিং ক্ষমতাসম্পন্ন ৪ একর আয়তনের আকচানসা টার্মিনালে রোল-অন/রোল-অব কার্গো উপযোগী রাম্প আছে। দুটি অল-পারপাস বার্থ, একটি সিমেন্ট ক্লিংকার বার্থও আছে এখানে। বার্থ অপারেটর হিসেবে আম্বারলি টোটাল অয়েল টার্কি টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ করে সেট সিমেন্টো গ্রুপ। এ টার্মিনালের লিকুইড বাল্ক ক্যাপাসিটি বার্ষিক ৩ লাখ ঘনমিটার।

রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণে অনিশ্চয়তা কাটাতে ৭ সিদ্ধান্ত

সিঙ্গাপুর, কলম্বোসহ বিভিন্ন ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে জট ও বড় জাহাজের সংকটে ঈদুল আজহার আগে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তৈরি পোশাকসহ অন্য রপ্তানি পণ্যের চালান জাহাজীকরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। রপ্তানি পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনারে পূর্ণ হয়ে উঠছে বেসরকারি ডিপোগুলোও। সংকট উত্তরণে বন্দর ও স্টেক হোল্ডারদের জরুরি বৈঠকে নেওয়া হয়েছে ৭ সিদ্ধান্ত। ১২ জুলাই এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদুল আজহার আগে বিভিন্ন পোশাক প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ রপ্তানি চালান জাহাজীকরণের শিডিউল রয়েছে। বেসরকারি ডিপোগুলোতে জটের কারণে রপ্তানি পণ্যবাহী বিপুলসংখ্যক ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান পণ্যের চালান আনস্টাফিং করার জন্য ৮-১০ দিন বিভিন্ন আইসিডির বাইরে অপেক্ষা করছে। এ অবস্থায় রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন পোশাক রপ্তানিকারকরা।

বৈঠকে সংকট উত্তরণে সর্বসম্মতিক্রমে সাতটি সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে বন্দর জেটিতে থাকা ২০ ফুটের খালি কনটেইনার ফোর্স শিপমেন্ট ও বেসরকারি ডিপোর জায়গা ফাঁকা করতে সেখান থেকে খালি কনটেইনার বন্দর জেটিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। বেসরকারি ডিপোতে রপ্তানির জন্য অপেক্ষমাণ কনটেইনারগুলো দ্রুত জাহাজীকরণে চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে ফিডার ভেসেল বৃদ্ধি এবং অন্যান্য শিপিং লাইনের ফিডার ভেসেলের মাধ্যমে রপ্তানি কনটেইনার পরিবহনে মায়েরস্ক লাইনকে নির্দেশনা প্রদান, চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে বিভিন্ন শিপিং কোম্পানি কর্তৃক নতুন ফিডার ভেসেল পরিচালনার ক্ষেত্রে বন্দরের দ্রুত অনুমতি এবং রপ্তানি পণ্য পরিবহনের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বার্থিংয়ের সুবিধা প্রদান, চট্টগ্রাম বন্দরে আগত কনটেইনার জাহাজসমূহকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বার্থিং ও জেটির সংখ্যা বৃদ্ধি করা, মেইন লাইন অপারেটর (এমএলও) ও ফিডার ক্যারিয়ারদের মধ্যে কমন ক্যারিয়ার এগ্রিমেন্ট দ্রুত বাস্তবায়ন করা, রপ্তানি পণ্য চালান হ্যান্ডলিংয়ের জন্য কয়েকটি বেসরকারি আইসিডির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অন্যান্য আইসিডিতেও কার্যক্রম সম্পাদনে শিপিং লাইনকে নির্দেশনা প্রদানের জন্য বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিনিধি বায়ার্স ফোরামের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা এবং চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ও কনটেইনারজট না থাকা সত্ত্বেও ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে সৃষ্ট জটের প্রভাব এবং বাংলাদেশে বিদেশি ক্রেতাদের পণ্য পরিবহনে শিপিং কোম্পানি মার্কস লাইনের ওপর অতিরিক্ত বুকিংয়ের কারণে সৃষ্ট জটিলতার বিষয়টি বিজিএমইএ কর্তৃক বিদেশি ক্রেতাদের কাছে উপস্থাপন করা।

কর্মক্ষমতা পরিমাপের তিনটি সূচকেই প্রবৃদ্ধি চট্টগ্রাম বন্দরের

করোনার সংকটকালের সর্বশেষ অর্থবছরে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান গেটওয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মক্ষমতা পরিমাপের সব সূচকেই প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। গত অর্থবছরের তুলনায় বন্দরে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কার্গো ও ৩ দশমিক ১ শতাংশ বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১১ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৩ মেট্রিক টন। এর আগের অর্থবছরে হয়েছিল ১০ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৭২ মেট্রিক টন। সে হিসাবে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে বন্দরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৬ টিইইউ (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে)। এর আগের অর্থবছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩০ লাখ ৪ হাজার ১৪২ টিইইউ। সে হিসাবে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে বন্দরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ।

সিঙ্গাপুর, কলম্বোসহ বিভিন্ন ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে জট ও বড় জাহাজের সংকটে ঈদুল আজহার আগে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তৈরি পোশাকসহ অন্য রপ্তানি পণ্যের চালান জাহাজীকরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সংকট উত্তরণে বন্দর ও স্টেকহোল্ডারদের জরুরি বৈঠকে নেওয়া হয়েছে সাত সিদ্ধান্ত

এছাড়াও একই অর্থবছরে বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙর মিলে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪ হাজার ৬২টি। এর আগের অর্থবছরে হয়েছিল ৩ হাজার ৭৬৪টি। সে হিসাবে জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে বন্দরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।

২০২০-২১ অর্থবছরের মাসভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। মাসটিতে আমদানি করা কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ ৫২ হাজার ৭৬৩ মেট্রিক টন এবং রপ্তানি করা কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৬ লাখ ১ হাজার ৩১৫টি। সব মিলিয়ে ওই মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছিল ১ কোটি ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮ মেট্রিক টন।

চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানির ৯২ শতাংশেরও অধিক পণ্য এবং ৯৮ শতাংশ কনটেইনারজাত পণ্য হ্যান্ডলিং করে থাকে। বন্দরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাত হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়। আর রাজস্ব আদায় হয় দৈনিক হাজার কোটি টাকার।

তবে করোনার দ্বিতীয় দফার কঠোর বিধিনিষেধেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচলে অবদান রাখা এই বন্দর চালু রাখতে বেশ আগেভাগেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের লকডাউনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিতভাবে সচল রাখা হয়েছে বন্দরের কার্যক্রম। অফিসের কাজে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা হলেও অপারেশনাল কাজে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।

মেরিন ক্রনোমিটার

সেলেস্টিয়াল নেভিগেশন বা জ্যোতির্বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নিখুঁতভাবে সময় প্রদর্শনকারী যন্ত্রকে বলা হয় মেরিন ক্রনোমিটার।

১৭৫০ সাল পর্যন্ত ঠিক দুপুরে সূর্যের বা রাতে শুকতারার কৌণিক অবস্থান দেখে ল্যাটিচিউড মাপতেন নাবিকেরা। কিন্তু লংগিচিউড মাপতে কখনো চাঁদ, কখনো কক্ষপথে বৃহস্পতির চলনের সাথে তুলনা করে সময় বের করা হতো, যা চলন্ত জাহাজে বা মেঘলা আকাশ থাকলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক হতো না।

১৫৩০ সালে প্রথমবার গোলক ত্রিকোণমিতির সাহায্যে ডাচ বিজ্ঞানী জেমা ফ্রিসিয়াস লংগিচিউড মাপার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। গ্রিনউইচ মিন টাইমকে (জিএমটি) শূন্য ডিগ্রি ধরে তাঁর নির্মিত ক্রনোমিটারে প্রদর্শিত সময়ের সাথে জাহাজের বর্তমান সময়ের পার্থক্য বের করা যেত। কিন্তু পৃথিবীর ঘূর্ণনের ফলে সেটিও প্রতিবার সঠিক সময় দেখাতে ব্যর্থ হয়। ১৭১৪ সালে ব্রিটেনে পাস হয় লংগিচিউড আইন, জাহাজে সঠিক সময় প্রদর্শন ও এর মাধ্যমে কার্যকরভাবে লংগিচিউড নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কারককে সরকারিভাবে ২০ হাজার পাউন্ড পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেয় ব্রিটিশ সরকার। প্রতিযোগিতায় সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন ইংরেজ কাঠমিস্ত্রি এবং শখের ঘড়িনির্মাতা জন হ্যারিসন, কিন্তু দুই দশক পর বোঝা যায় তাঁর নির্মিত প্রথম তিনটি ক্রনোমিটার মডেলেও কিছুটা ত্রুটি থেকে গেছে। ১৭৬১ সালে পরিচালিত ট্রান্স-আটলান্টিক নৌযাত্রায় ব্যবহার হয় জন হ্যারিসনের চতুর্থ ক্রনোমিটার মডেল। এইচফোর নামের আকারে তুলনামূলক ছোট এই ক্রনোমিটারের ফলাফল ছিল বিস্ময়কর রকমের নির্ভুল। জ্যামাইকায় পৌঁছানোর পর দেখা গেল স্থানীয় সময়ের সাথে জাহাজের ক্রনোমিটারে প্রদর্শিত সময়ের পার্থক্য কেবল পাঁচ সেকেন্ড! পরবর্তীতে ক্রনোমিটারের পঞ্চম সংস্করণ এইচফাইভের জন্য রাজা তৃতীয় জর্জের কাছ থেকে প্রাপ্য পুরস্কার বুঝে নেন হ্যারিসন। আধুনিক জিপিএস এসে মেরিন ক্রনোমিটারের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দিলেও নেভাল সার্ভিস সার্টিফিকেট পেতে হলে নাবিকদের এখনো ক্রনোমিটারের ব্যবহার শিখতে হয়। বর্তমানের বহু মূল্য সুইস ঘড়িনির্মাতারা নিরবচ্ছিন্নভাবে একেবারে সঠিক সময় পেতে ক্রনোমিটারের প্রযুক্তি অনুসরণ করে ঘড়ি নির্মাণ করছেন।

মেরিটাইম অ্যান্ড রিভারাইন ইনসাইট বাংলাদেশ

কমডোর (অব.) সৈয়দ আরিফুল ইসলাম, (ট্যাজ), এনডিসি, পিএসসি, বিএন

জাতীয় ও বৈশ্বিক অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিচ্ছে সুনীল অর্থনীতি। সীমিত স্থলভাগে দ্রুত বর্ধনশীল জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানো অসম্ভব, এ সত্য সামনে রেখে নদীমাতৃক এবং বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বর্তমান পরিস্থিতি এবং নানামুখী চ্যালেঞ্জের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে মেরিটাইম অ্যান্ড রিভারাইন ইনসাইট বাংলাদেশ বইটিতে।

বৈশি^ক ও অভ্যন্তরীণ শিপিংয়ের প্রচলিত কাঠামো, নীতিমালা, নাবিক-অফিসারের কর্মসংস্থানের সুযোগসহ নৌপরিবহন শিল্পের সাথে যুক্ত বিষয়গুলোকে মোট ১৫টি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে এখানে। প্রথম অধ্যায়ে এক নজরে বাংলাদেশের মেরিটাইম সম্পদ, অবকাঠামো, প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নাতিদীর্ঘ আলোচনা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বইয়ের একেকটি অধ্যায়ে অপর দেশের সাথে অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে ট্রানজিট প্রটোকল, বঙ্গোপসাগর দিয়ে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য, আইএমও, জাহাজনির্মাণ, শিপ রিসাইক্লিং, নাবিকদের এসটিসিডব্লি¬উ কনভেনশন নিয়ে আছে বিস্তারিত আলোচনা। প্রতিটি অধ্যায়ের সাথে তথ্যসূত্র সংযুক্ত থাকায় বইটি হয়ে উঠেছে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও সমৃদ্ধ।

বইটির লেখক বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কমডোর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আইএমও, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ব বিদ্যালয়, মিলিটারি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিসহ বহু দেশি-বিদেশি সংস্থায়, সেমিনারে তিনি অতিথি বক্তা ও প্রশিক্ষক হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বেই এ দেশে মেশিন-রিডেবল সিডিসি, নাবিকদের অনলাইন ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট প্রোগ্রাম চালু হয়। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি একটি ফ্রিগেটসহ মোট পাঁচ নেভাল ভেসেল, নৌঘাঁটি, নেভি এভিয়েশন ইউনিটে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে তার বহু গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে।

কমডোর সৈয়দ আরিফুল ইসলামের মতো প্রথম সারির নৌ-প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ও নৌ-প্রশাসকের অসামান্য অভিজ্ঞতায় তথ্যবহুল হলেও সেটি তথ্যে ভারাক্রান্ত না হয়ে ভাষার গুণে বরং প্রাঞ্জল, সুখপাঠ্য হয়ে উঠেছে। হার্ডকভারে, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ঝকঝকে ছাপায় ১৯৮ পৃষ্ঠার মেরিটাইম অ্যান্ড রিভারাইন ইনসাইট বাংলাদেশ গ্রন্থটি নিঃসন্দেহে দেশের মেরিটাইম খাত গবেষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স বুক হতে যাচ্ছে।

ইংরেজি ভাষায় লিখিত বইটি ২০২০ সালে দ্য নটিক্যাল ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ২ হাজার টাকা (২৫ মার্কিন ডলার)।

আইএসবিএন: ৯৭৮-৯৮৪-৩৪-৮২৪৯-৫