Home Blog Page 217

সংবাদ সংকেত – জুলাই

দুই বছর পর অবশেষে বাড়ি ফিরছেন পরিত্যক্ত বাল্কার উলার ১৯ ক্রু। ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (আইটিএফ) এ তথ্য জানিয়েছে। ২০১৯ সালে বেশ কিছু বিষয় অমীমাংসিত রেখেই জাহাজটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে মালিকপক্ষ।

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে নতুন একটি গার্ডিয়ান ক্লাস প্যাট্রল বোট (জিসিপিবি) সরবরাহ করেছে অস্টাল অস্ট্রেলিয়া। এটি প্রতিষ্ঠানটির তৈরি একাদশ জিসিপিবি। অস্ট্রেলিয়া সরকার প্যাট্রল বোটটি কিরিবাতিকে উপহার দিচ্ছে।

জাহাজ নির্মাণ চুক্তির ক্ষেত্রে নতুন একটি ক্লিয়ারলি ওয়ার্ডেড স্ট্যান্ডঅ্যালোন রিফান্ড গ্যারান্টি প্রকাশ করেছে বাল্টিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কাউন্সিলের (বিমকো) ডকুমেন্টারি কমিটি।

যুক্তরাষ্ট্রে অভিষেক সম্পন্ন করেছে কার্নিভাল ক্রুজ লাইনের নতুন ও ইনোভেটিভ শিপ মার্ডি গ্রাস। সম্প্রতি জাহাজটি পোর্ট কার্নিভালের তিন নম্বর ক্রুজ টার্মিনালে প্রথমবারের মতো ডকিং সম্পন্ন করে। জাহাজটি পরিবেশবান্ধব এলএনজি চালিত।

শিপ রিসাইক্লিং ট্রান্সপারেন্স ইনিশিয়েটিভের (এসআরটিআই) সঙ্গে যুক্ত হলো ক্রাউলি মেরিটাইম করপোরেশন। যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন প্রথম ও সব মিলিয়ে ১৩তম শিপ ওনার-অপারেটর হিসেবে এই উদ্যোগে শামিল হলো তারা।

বারবেরায় নিজেদের কনটেইনার টার্মিনালের সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ শেষ করে সেটি উদ্বোধন করেছে দুবাই-ভিত্তিক পোর্ট অপারেটর ডিপি ওয়ার্ল্ড। বারবেরা হলো সোমালিল্যান্ডের প্রধান সমুদ্রবন্দর।

ইতালির ফিনক্যান্তিয়েরি ও ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সম্প্রতি একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর অধীনে ইন্দোনেশিয়ার কাছে ছয়টি এফআরইএমএম ক্লাস ফ্রিগেট ও দুটি মায়েস্ট্রেল ক্লাস ফ্রিগেট সরবরাহ করবে ফিনক্যান্তিয়েরি।

শ্রীলংকার পশ্চিম উপকূলে অগ্নি দুর্ঘটনার শিকার রাসায়নিক ভর্তি জাহাজটি ডুবে গেছে। দেশটির ইতিহাসে অন্যতম বাজে এই সামুদ্রিক দুর্ঘটনায় সমৃদ্ধ ফিশিং ওয়াটারের সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে।

তিন হাজার টিইইউ গড় ধারণক্ষমতার নতুন ১২টি কনটেইনার জাহাজ কেনার ঘোষণা দিয়েছে গ্লোবাল শিপ লিজ। বোরিয়ালিস ফাইন্যান্সের কাছ থেকে মোট ২৩ কোটি ৩৯  লাখ ডলারে জাহাজগুলো কিনবে তারা।

ছয় মাস আগে ছয়টি আল্ট্রা-লার্জ কনটেইনার শিপের কার্যাদেশ দিয়েছিল হ্যাপাগ-লয়েড। এবার সেই সংখ্যাটি বাড়িয়ে আরও ছয়টি জাহাজের কার্যাদেশ দিয়েছে তারা। এই ১২টি জাহাজের প্রতিটির সক্ষমতা হবে ২৩ হাজার ৫০০ টিইউ।

নতুন সদস্য হিসেবে পোর্ট অথরিটি অব ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগোকে স্বাগত জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব পোর্টস অ্যান্ড হারবারস। সম্প্রতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তারা এটি জানিয়েছে।

অফশোর উইন্ড প্রকল্পে শতাধিক নতুন জাহাজ প্রয়োজন হবে

উষ্ণায়ন প্রতিরোধের বৈশ্বিক উদ্যোগকে সফল করতে দেশে দেশে এখন নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। আর এই শক্তির বড় একটি উৎস হলো বায়ুবিদ্যুৎ। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সারা বিশ্ব প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের সংখ্যা ক্রমে বেড়েছে। সক্ষমতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে এসব প্রকল্পে বড় আকারের টার্বাইন ও ফাউন্ডেশন ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

সমস্যা হলো, এগুলো প্রকল্পের নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া ও স্থাপনের কাজটি সহজ নয়। বর্তমানে এ কাজে যেসব জাহাজ ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলো বৃহদাকার টার্বাইন ও ফাউন্ডেশন স্থাপনে সক্ষম নয়। ফলে ২০২৫ সাল নাগাদ এসব জাহাজের বেশির ভাগই অকার্যকর হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য আগামী এক দশকে ১০০টির বেশি নতুন অফশোর উইন্ড ভেসেলের প্রয়োজন পড়বে। ওয়ার্ল্ড এনার্জি রিপোর্টসের সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে।

এক সাক্ষাৎকারে ওয়ার্ল্ড এনার্জি রিপোর্টসের ডিরেক্টর অব রিসার্চ ফিলিপ লুইস বলেছেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, বর্তমানের বহর দিয়ে বড় প্রকল্পের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। এজন্য নতুন ইনস্টলেশন ভেসেল বানাতে হবে অথবা বিদ্যমান জাহাজগুলোকে সংস্কার করে আপডেট করতে হবে। আর এতে প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান, জাহাজ নির্মাতা, কনভার্শন ইয়ার্ড, যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও অর্থায়নকারীদের জন্য ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি মূল্যের বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার তৈরি হবে।’

লুইস জানান, ২০২০ সাল শেষে অফশোর উইন্ড প্রকল্পে ইনস্টলড ক্যাপাসিটি ছিল ৩২ গিগাওয়াট। ২০৩০ সাল নাগাদ তা ২৩৫ গিগাওয়াটে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে বটম-ফিক্সড ইনস্টলড ক্যাপাসিটি দাঁড়াতে পারে ২২৬ গিগাওয়াট।

বর্ধিষ্ণু নৌপরিবহন ব্যয় সরবরাহকারীদের বিকল্প নিয়ে ভাবাচ্ছে

বিশ্বজুড়ে ভোগ্যপণ্যের বড় একটি অংশ গ্রাহকের হাতে পৌঁছায় সমুদ্রপথে বাণিজ্যের মাধ্যমে। ভোক্তাপর্যায়ে এসব পণ্যের মূল্য নির্ধারণে পরিবহন ব্যয় বড় ভূমিকা রাখে। অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় জাহাজে কনটেইনারবদ্ধ করে পণ্য পরিবহনে খরচ তুলনামূলক কম। এ কারণে আমদানি-রপ্তানিকারকেরা কনটেইনারে পণ্য পরিবহনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। বিশ্ববাণিজ্যে এর অবদানও তাই অনেক বেশি।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতি পাল্টেছে। ফ্রেইট রেট বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, ভোগ্যপণ্যের মূল্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আসবাব থেকে শুরু করে কফি- বিভিন্ন পণ্যের ভোক্তারা এরই মধ্যে এর আঁচ পেতে শুরু করেছেন। সি ইন্টেলিজেন্সের সিইও অ্যালান মার্ফি জানিয়েছেন, ট্রান্সপ্যাসিফিক রুটে পরিবহনকৃত সংযোজিত আসবাবের মোট খুচরা মূল্যের ৬২ শতাংশ নির্ধারণ করে দিচ্ছে এর পরিবহন খরচ। বড় আকারের অন্যান্য অ্যাপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রেও এ হার যথেষ্টই বেশি। এ ধরনের পণ্যের খুচরা মূল্যের প্রায় ৪১ শতাংশজুড়ে রয়েছে পরিবহন খরচ। কনটেইনারে পরিবহন খরচ আরও বাড়তে থাকলে এসব পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হবে। কারণ এগুলো বিক্রি করে রিটেইলারদের যে মার্জিন থাকে, তা দিয়ে এই বাড়তি পরিবহন ব্যয় সামাল দেওয়া সম্ভব না। এ কারণে বাড়তি ফ্রেইট রেটের বোঝা গিয়ে পড়বে ভোক্তাদের ঘাড়ে।

এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহনে তাদের পরিকল্পনা নতুন করে সাজানোর চিন্তা করছেন। বিকল্প আর কী উপায়ে পরিবহন করলে খরচ সহনীয় পর্যায়ে থাকবে, তা খতিয়ে দেখছেন তারা। এরই মধ্যে কিছু বিকল্প সামনে উঠে এসেছে। যেমন বলা যায় পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সরাসরি পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট সার্ভিস, যেখানে তুলনামূলক ছোট জাহাজ কিংবা চাপ কম রয়েছে এমন কোনো সেকেন্ডারি বন্দর ব্যবহার করা যেতে পারে।

বৈশ্বিক বহরে জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধির গতি কমবে

সাম্প্রতিক সময়ে জাহাজনির্মাণ খাতে ইয়ার্ডগুলোয় কনটেইনার শিপ ও গ্যাস ক্যারিয়ার সেগমেন্টে কার্যাদেশ বেশ চাঙ্গা রয়েছে। তা সত্ত্বেও আগামী পাঁচ বছরে বৈশ্বিক শিপিং খাতে জাহাজের সংখ্যায় প্রবৃদ্ধি কিছুটা শ্লথ হবে। আন্তর্জাতিক শিপিং অ্যাসোসিয়েশন বাল্টিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কাউন্সিলের (বিমকো) সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে এমনটাই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

কনটেইনার শিপ নির্মাণে বর্তমানে ইয়ার্ডগুলো বেশ ভালো সময় পার করছে। বর্তমানে এ ধরনের জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ ১৪ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। তবে বিমকোর যুক্তি হলো, কনটেইনার ও গ্যাস ক্যারিয়ার সেগমেন্টে চাহিদা যতই ভালো থাকুক না কেন, বিশ্বের শিপইয়ার্ডগুলো বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। সামগ্রিকভাবে জাহাজনির্মাণ খাতের বর্তমানে যে গতি, তাতে চলতি বছরে ইয়ার্ডগুলো গত এক যুগে তৃতীয় সর্বনিম্ন কার্যাদেশ পেতে যাচ্ছে বলে বিমকো ধারণা করছে।

বর্তমানে ১১টি প্রধান সেগমেন্টে সারা বিশ্ব বাণিজ্যিক জাহাজের বহরে রয়েছে ৭৪ হাজার ৫০৫টি জাহাজ। বিমকোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৭৯ হাজার ২৮২। অর্থাৎ পাঁচ বছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। আগের পাঁচ বছরে এ হার ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। সে হিসাবে বিমকোর পূর্বাভাস সত্যি হলে বৈশ্বিক ফ্লিটের প্রবৃদ্ধি কমবে ১ শতাংশীয় পয়েন্ট।

বিমকো বলছে, ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ জাহাজনির্মাণ খাতে নতুন কার্যাদেশ বাড়তে পারে বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে। আগের পাঁচ বছরে এ হার ছিল ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। বিমকো এ পূর্বাভাস দিয়েছে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে। পরিস্থিতি ভালো বা খারাপ হলে এ হিসাবে পরিবর্তন আসতে পারে।

মেয়াদোত্তীর্ণ চুক্তিতে কাজ করা ক্রুর সংখ্যা বেড়েছে

বৈশ্বিক শিপিং খাতে ক্রু পরিবর্তন নিয়ে সৃষ্ট সংকট কিছুদিন আগেও খবরের শিরোনামে ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় নতুন একটি তথ্য এখন শিপিং খাতে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। আর তা হলো চুক্তির বাইরে কাজ করা ক্রুদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মে মাসে এ ধরনের ক্রুর সংখ্যা প্রায় এক-চতুর্থাংশ শতাংশ বেড়েছে। আর এর প্রধান দুটি কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ক্রু সরবরাহকারী শীর্ষ দেশগুলোয় করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া এবং শীর্ষ বন্দরগুলোয় ক্রু পরিবর্তন প্রোটোকল কঠোর করা।

নেপচুন ডিক্লারেশন ক্রু চেঞ্জ ইন্ডিকেটরের জুন মাসের তথ্য বলছে, চুক্তির মেয়াদ পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনো জাহাজে কর্মরত- মে মাসে এমন ক্রুর সংখ্যা আগের মাসের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আলোচ্য মাসে বিশ্ব মোট ক্রুর ৭ দশমিক ৪ শতাংশই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া অবস্থায় কাজ করছে। এপ্রিলে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

এমন সংকটকালে সরকারগুলোকে করোনার টিকাদান কর্মসূচিতে ক্রুদের অগ্রাধিকার দেওয়া, ক্রু পরিবর্তনের প্রোটোকল শিথিল করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব শিপিং (আইসিএস) এবং এর সদস্য ও অংশীদারেরা। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিএস পর্ষদের চেয়ারম্যান এসবেন পলসন বলেছেন, ‘গত পাঁচ দশকে ক্রু পরিবর্তনে এমন সংকট আর কখনো দেখা যায়নি। এই অভূতপূর্ব প্রতিবন্ধকতা বিশ^জুড়ে হাজারো ক্রুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। করোনা মহামারির এই ক্রান্তিকালেও ক্রুরা তাদের সেবা অব্যাহত রাখায় সব দেশই উপকৃত হয়েছে। এখন দেশগুলোর দায়িত্ব হলো টিকাদানে ক্রুদের অগ্রাধিকার ও ক্রু পরিবর্তনের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে তাদের সেই ভূমিকার প্রতিদান দেওয়া।’

জুন, ২০২১

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারে আগুন

চট্টগ্রাম বন্দরের অক্সিজেন সাপ্লিমেন্টভর্তি একটি কনটেইনারে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। ২২ মে সকালে বন্দরের চার নম্বর গেটের আট নম্বর ইয়ার্ডের এ ঘটনায় বড় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

অতিরিক্ত গরমে অক্সিজেন সাপ্লিমেন্টভর্তি কনটেইনারটির ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হতে থাকে। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। কনটেইনারটিতে অ্যাকুয়ারিয়ামে দেয়ার জন্য আমদানি করা অক্সিজেন সাপ্লিমেন্ট সোডিয়াম পার কার্বনেট ট্যাবলেট ছিল। কনটেইনারে আগুনের ঘটনায় বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে কোনো সমস্যা হয়নি।

চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে বন্দর ইয়ার্ডের অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় জোয়ারের পানি উঠেছিল। জোয়ারের পানিতে কয়েকটি চত্বরে কনটেইনারের নিচের একাংশ পানিতে ডুবে গেছে। তবে ভাটার সময় পানি নেমে যায়। এতে কোনো পণ্য নষ্ট হয়নি।

২৬ মে আজ দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের সময় কর্ণফুলী নদীর বন্দর অংশে জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৫ দশমিক ৭০ মিটার। পূর্ণিমার জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পানির উচ্চতা বেড়ে মহেশখালের পাশের চত্বরে, নিউমুরিং টার্মিনাল চত্বরের একাংশে পানি ওঠে।

চট্টগ্রাম বন্দরের পর্ষদ সদস্য জাফর আলম বলেন, ‘পূর্ণিমার জোয়ারে পানির উচ্চতা বাড়লেও বন্দরে পানি ওঠে না। তবে এবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবের পাশাপাশি একই সময়ে পূর্ণিমার জোয়ার থাকায় বন্দর চত্বরের মহেশখাল এলাকার অংশে পানি ঢুকেছে। কনটেইনারে বাতাসরোধী ব্যবস্থা থাকায় পানি ঢুকে পণ্য নষ্ট হওয়ার শঙ্কা নেই।’

এর আগে বন্দরে অন্তত তিন-চারবার জোয়ারের পানি ওঠার রেকর্ড রয়েছে। জোয়ারের সময় ভারী বর্ষণ বা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্দরে কনটেইনার রাখার চত্বরে পানি ওঠে। গত বছরের আগস্টে ভারী বর্ষণ ও পূর্ণিমার জোয়ারে বন্দর চত্বরে পানি উঠেছিল। ভাটার সময় কর্ণফুলী নদীর পানির যে উচ্চতা থাকে, সেখান থেকে সাড়ে সাত মিটার উঁচু বন্দরের জেটি।

ঈদের ছুটিতে বন্দর চালু থাকলেও পণ্য ডেলিভারি নেয়নি আমদানিকারকরা

আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা নির্বিঘন্নে রাখতে ঈদ-উল-ফিতরের ছুটিকালীন সময়ে বন্দরের কার্যক্রম শতভাগ সচল ছিল। এই লক্ষ্যে বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বৈঠকের পাশাপাশি বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৩ দফা নির্দেশনাও জারি করেছিল। কিন্তু এতসব উদ্যোগও কাজে আসেনি কনটেইনারবাহী পণ্য ডেলিভারির ক্ষেত্রে। ঈদের আগে এবং পরে অস্বাভাবিক কমেছে ডেলিভারির সংখ্যা। ঈদের আগের দিন ১৩ মে ডেলিভারি কমে যায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় ৯০ ভাগ। ঈদের দিন ১৪ মে ডেলিভারি নেমে আসে শূন্যের কোটায়।

ঈদের ছুটিতে বন্দরের কার্যক্রম চালু রাখার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষের। কিন্তু বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সচল না থাকা ও আমদানিকারকরা পণ্য ডেলিভারি না নেওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে ১৮ মে থেকে ডেলিভারি কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের ছুটিতে কারখানা, গুদাম বন্ধ থাকে। এই সময়ে তারা পণ্য ডেলিভারি নিয়ে কোথায় রাখবেন। তাই তারা ঈদের ছুটিকালীন সময়ে পণ্যের ডেলিভারি নেন না। বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘‘ঈদের ছুটিকালীন সময়ে আমদানিকারকরা পণ্য ডেলিভারি নেননি। তাই ডেলিভারির সংখ্যা এই সময়ে স্বাভাবিকের তুলনায় কমেছে।’’

এদিকে বন্দরের পাশাপাশি ঈদের ছুটিতে বেসরকারি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোগুলোতেও (আইসিডি) আমদানি পণ্যের কনটেইনার ডেলিভারি হয়নি। বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, ‘‘বন্দরের নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদের ছুটিতে ১৯টি বেসরকারি আইসিডির কার্যক্রম শতভাগ চালু ছিল। ঈদের আগের দিন থেকে বন্ধ হয়ে যায় ডেলিভারি।’’

পণ্য চালান দ্রুত খালাসে বন্দর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চায় বিজিএমইএ

তৈরি পোশাক শিল্পের মন্দাবস্থা উত্তরণে পণ্য চালান দ্রুত খালাস ও রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজতর করতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান ও কাস্টম হাউসের কমিশনার এম ফখরুল আলমের সহযোগিতা চেয়েছে বিজিএমইএ।

৫ মে বিজিএমইএ’র নবনির্বাচিত প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতারা বন্দর চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ সহযোগিতা চান।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। জাতীয় অর্থনীতিতে এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারসহ সকলের সহযোগিতায় পোশাক শিল্প খাত ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’ চলমান মন্দাবস্থা উত্তরণে পোশাক শিল্পের পণ্য চালান দ্রুত খালাস ও ক্রেতার নির্ধারিত সময়ে রপ্তানি নিশ্চিতকরণে কাস্টমস ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন।

বন্দর চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল এম. শাহজাহান বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পাদন করছে।’

তিনি বন্দর থেকে পণ্য চালান দ্রুত ডেলিভারি নেওয়া, আমদানি খরচ কমানোর লক্ষ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, বে-টার্মিনালসহ বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এজন্য বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতা কামনা করেন।

কাস্টম হাউস চট্টগ্রামের কমিশনার এম. ফখরুল আলম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী সমাজকে সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার লক্ষ্যে কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম সার্বক্ষণিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’ পোশাক শিল্পের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজীকরণসহ দ্রুততার সাথে সম্পাদনে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি আশ^স্ত করেন।

সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহসভাপতি এরশাদ উল্যাহ, নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, সাবেক পরিচালক হেলাল উদ্দিন চৌধুরী ও অঞ্জন শেখর দাশ, বিজিএমইএ’র বর্তমান কমিটির সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী, পরিচালক এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, এ এম শফিউল করিম খোকন, মো. হাসান জেকি, এম এহসানুল হক, মিরাজ-ই-মোস্তফা কায়সার, মেসার্স শার্ট মেকার্স লিমিটেডের এমডি শাহাদাত মোশাররফ খান।

বন্দর চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য জাফর আলম, সদস্য কমডোর মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম, পরিচালক (নিরাপত্তা) লে. কর্নেল মোস্তফা আরিফ উর রহমান খান ও বন্দর সচিব ওমর ফারুক।