Home Blog Page 218

পচনশীল পণ্য ৪৮ ঘণ্টায় খালাস

পচনশীল পণ্য আমদানি করলে তা চটজলদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। প্রয়োজনে নির্ধারিত অফিস সময়ের বাইরেও পণ্যের চালান পরীক্ষণ ও শুল্কায়নের কাজ চলবে। বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পর সব মিলিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পণ্য খালাস করতে পারবেন আমদানিকারকেরা।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক বিভাগ পচনশীল পণ্য দ্রুত খালাস ও নিষ্পত্তিকরণ বিধিমালা ২০২১ জারি করেছে। এই বিধিমালায় পণ্য খালাসের জন্য সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিধিমালায় কীভাবে পচনশীল পণ্য খালাস করতে হবে, খালাস না করলে কী হবে, পচনশীল পণ্যের সংজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি দেশের স্থলবন্দর দিয়ে পচনশীল পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হয়।

শুল্ক বিভাগের নতুন বিধিমালায় পচনশীল পণ্যের তালিকাও দেওয়া হয়েছে। সেখানে ৬৩ ধরনের পণ্যকে পচনশীল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় যেসব পণ্য আছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জীবন্ত পশু, পাখি ও প্রাণী; জীবন্ত হাঁস-মুরগি, টার্কি ও এগুলোর বাচ্চা; জীবন্ত ও হিমায়িত মাছ, মাছের পোনা; জীবন্ত গাছপালা, মাশরুম; তাজা ফুল, তাজা ফল, খেজুর, ডাল, ছোলা, চিনি, লবণ, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, হাঁস-মুরগির ডিম, চকলেট, বিস্কুট, সেমাই, নুডলস, চিপস, চানাচুর, আচার; শুঁটকি মাছ, চা-পাতা, কফি, সুপারি, বাদাম, সার, কাঁচা চামড়া, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, আদা, কাঁচা হলুদ, তেঁতুল, তাল মিসরি, কিশমিশ, অনধিক ছয় মাস মেয়াদযুক্ত সব খাদ্যদ্রব্য, প্রসাধনসামগ্রী, ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, পচনশীল পণ্যের বিপরীতে বিল অব এন্ট্রি বা বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল হলে যদি কায়িক পরীক্ষার জন্য বিবেচনা না করা হয় কিংবা শুল্ক গোয়েন্দা বা অন্য কোনো দপ্তরের কোনো আপত্তি না থাকে, তাহলে অনতিবিলম্বে তা শুল্কায়নের ব্যবস্থা করা হবে।

নতুন এই বিধিমালা নিয়ে গত এপ্রিল মাসে শুল্ক বিভাগ আমদানিকারক, বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন এনবিআরের সদস্য খন্দকার আমিনুর রহমান। ওই বৈঠকে দিনে দিনে পণ্য পরীক্ষণ ও শুল্কায়ন কার্যক্রম শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়।

এ ছাড়া পচনশীল পণ্যের চালান খালাস করতে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক দিনরাত ২৪ ঘণ্টা বিল অব এন্ট্রি বা বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করতে পারবেন। আমদানিকারক বা রপ্তানিকারক চাইলে নির্ধারিত দাপ্তরিক সময়ের বাইরে চালানের পরীক্ষণ, শুল্কায়ন করে পণ্য খালাস করতে পারবেন।

এদিকে পচনশীল পণ্যের জন্য একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করবেন সংশ্লিষ্ট কমিশনার। নির্ধারিত সময়ে পণ্য খালাস না করলে কিংবা অন্য কোনো কারণে খালাস করা না হলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওই কমিটি নিলামসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

চট্টগ্রাম বন্দরে বসবে ৪টি নতুন স্ক্যানার

চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বাড়ানো ও মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য খালাস রোধে ৪টি অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার বসাতে কার্যক্রম শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৬৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১৩টি ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার ক্রয় ও প্রতিস্থাপন প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে ৬টি স্ক্যানার মেশিন বসানো হবে। যার ৪টি স্ক্যানারই বসবে চট্টগ্রাম বন্দরে। বেনাপোল এবং ভোমরা স্থলবন্দরে একটি করে স্ক্যানার স্থাপন করা হবে।

আধুনিক প্রযুক্তির স্ক্যানারগুলো এক্স-রে বা গামা-রশ্মি ইমেজিং প্রক্রিয়ায় কনটেইনার খোলা ছাড়াই এর ভেতরের রঙিন ছবি তুলতে পারবে। এসব মেশিনে স্ক্যানার ছাড়াও কনটেইনারের ওজন পরিমাপ, রেডিও পোর্টাল মনিটর এবং ইমেজিং সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। নতুন স্ক্যানারগুলো ‘বোথ ওয়ে’ স্ক্যান ডিরেকশনে স্ক্যানিং করতে সক্ষম। অর্থাৎ আমদানি ও রপ্তানি উভয় কনটেইনার স্ক্যানিং করা যাবে এই মেশিনগুলো দিয়ে। ইতিমধ্যে নতুন এই ৬টি স্ক্যানার সংগ্রহ, প্রতিস্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দরপত্র আহ্বান করেছে। এ কাজে অভিজ্ঞ সংস্থাগুলোকে সাইট ভিজিট করে পর্যাপ্ত ধারণা নিয়ে ও আধুনিক মেশিনগুলোর সক্ষমতা সঠিকভাবে যাচাইয়ের পর দরপত্র জমাদানে উৎসাহী করছে এনবিআর। ডিসেম্বরের মধ্যে যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাছাই করে তাদের কার্যাদেশ দেওয়া ও আগামী বছরের মাঝামাঝি স্ক্যানার মেশিনগুলো স্থাপন করে চালু করা যাবে বলে জানিয়েছে এনবিআর সূত্র।

প্রথম ধাপে এই ৬টি কনটেইনার স্ক্যানার সফলভাবে প্রতিস্থাপন ও চালুর পর দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৭টি কনটেইনার স্ক্যানার ক্রয়ের কথা জানিয়েছে এনবিআর। সেই ৭টি থেকেও বেশ কয়েকটি চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য বরাদ্দ রাখা হবে।

সরকার ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ‘অর্থ আইন-২০১৯’ এ বোঝাই পণ্য কনটেইনার বাধ্যতামূলক বৈদ্যুতিক স্ক্যানিংয়ের আওতায় আনার বিধান চালু করে। বিধান অনুযায়ী সরকারি আদেশে অব্যাহতি ব্যতিরেকে কোনো চালানকে বৈদ্যুতিক স্ক্যান ছাড়া কোনো শুল্ক বন্দর বা শুল্ক স্টেশন থেকে ছাড়ানো যাবে না। বৈদ্যুতিক স্ক্যানিং সিস্টেমের অভাবে কায়িক পরীক্ষা করে চালান খালাসের বিধানও রাখা হয়েছে। অপ্রতুল স্ক্যানার মেশিনের কারণে এখনো সারা দেশের কাস্টম হাউসগুলো আমদানি করা চালানের ১০-১৫ শতাংশ কায়িকভাবে পরীক্ষা করে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের ১২টি গেটে স্ক্যানার আছে ৭টি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) ১ নম্বর গেট এবং নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ৩ নম্বর গেটে আছে ‘এফএস ৬০০০’ সিরিজের অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ২, ৪ ও ৫ নম্বর গেটে আছে একটি করে ‘এফএস ৩০০০’ মডেলের ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। এছাড়া সিসিটি ২ ও জিসিবি ২ নম্বর গেটে রয়েছে একটি করে মোবাইল স্ক্যানার। তবে পুরোনো কয়েকটি স্ক্যানার মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে গিয়ে স্ক্যানিংয়ের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়।

মাথাপিছু আয় এখন ২,২২৭ ডলার

দেশে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা বছরে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭৩ টাকা।

১৭ মে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনানুষ্ঠানিক এক বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ তথ্য জানিয়েছেন। বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গণভবন থেকে বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বাংলাদেশের শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রত্যেক মানুষ প্রতি মাসে আয় করে ১৫ হাজার ৭৩৯ টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গত বছরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এত দিন মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৬৩ ডলার, আগেরবার থেকে যা ৯ শতাংশ বেশি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ ৮৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, আগে যা ছিল ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা।’ এই অর্জনে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে মন্ত্রিসভা।

গত বছরের আগস্টে বিবিএস প্রাথমিক হিসাব দিয়ে জানিয়েছিল, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। সাময়িক হিসাব এখনো সাময়িকই আছে। অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরও শেষ হতে চলেছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রাক্কলন করেছিল, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে। সংস্থাটির হিসাবে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেও এর প্রভাব থাকবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের ৮ হাজার কর্মী পেলেন প্রণোদনা

চট্টগ্রাম বন্দরের ৮ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীকে আর্থিক প্রণোদনা ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ১১ মে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) জেটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বন্দরের কর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আর্থিক প্রণোদনা ও খাদ্যসামগ্রী প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বন্দরে কর্মরত ৮ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীকে ১ হাজার ৫০০ টাকা হারে আর্থিক প্রণোদনা ও খাদ্যসামগ্রী (চাল, ডাল, চিনি ও সয়াবিন তেল) পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হয়।

বন্দর চেয়ারম্যান মহামারিকালীন সপ্তাহের প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা বন্দরকে সচল রাখার জন্য শ্রমিকদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাওয়ার পেছনে এই শ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য।’ প্রধানমন্ত্রীকে শ্রমিকবান্ধব উল্লেখ করে এ ধরনের প্রণোদনার সিদ্ধান্তের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি। বন্দর চেয়ারম্যান শ্রমিকদের করোনা মহামারিতে সব ধরনের সতকর্তা অবলম্বন; বিশেষ করে সার্বক্ষণিক মাস্ক পরার অনুরোধ জানান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বন্দরের পর্ষদ সদস্য জাফর আলম, সদস্য কমডোর এম নিয়ামুল হাসান, সদস্য কমডোর মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের সিওও ক্যাপ্টেন তানভীর হোসাইন প্রমুখ।

প্রতিবেশী দেশগুলোর রপ্তানি আদেশ আসছে বাংলাদেশে

মিয়ানমারের গভীর রাজনৈতিক সংকট ও ভারতে করোনা মহামারির লাগামহীন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর ক্রয়াদেশ বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে। বাংলাদেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে তুলনামূলক কম প্রভাব পড়ায় তারা এদেশমুখী হচ্ছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর রেকর্ড বাড়ায়, দেশজুড়ে আংশিক পরিবহন লকডাউনের কারণে বাংলাদেশ এখন ভারতসহ এই অঞ্চলের অনেক দেশের তুলনায় তুলনামূলক ভালো পরিস্থিতিতে আছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে বিপর্যস্ত ভারত। দেশটিতে অক্সিজেন ও ওষুধের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ প্রক্রিয়াকে প্রভাবমুক্ত রাখতে কম দামে পণ্য উৎপাদনের জন্য আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছে বাংলাদেশ একটি নিরাপদ জায়গা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ক্রয়াদেশ স্থানান্তরিত হওয়ায় চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

মার্চে অনেক পণ্য রপ্তানির আদেশ ফিরে আসায় দেশের বার্ষিক রপ্তানি ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেড়ে ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে মূলত পশ্চিমের দেশগুলোতে লকডাউন শিথিল করার কারণে। যা আগের কয়েক মাসের তুলনায় পোশাকের চালান ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের দিকে ধাবিত করছে।

এপ্রিলে রপ্তানি পুনরুদ্ধার অব্যাহত থাকার ফলে পণ্য চালানের আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় অর্থনীতি আবার চালু হওয়ায় তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় বছরে ছয় গুণ বেড়ে এপ্রিলে ৩ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে গার্মেন্টস খাতে রপ্তানির পরিমাণ ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ বেড়ে ২৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

পোশাক খাত থেকে প্রাপ্ত আয়ের মধ্যে নিটওয়্যার আইটেমের রপ্তানি আয় থেকে ১৩ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার এসেছে। এখানে বছরভিত্তিক প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছে। তবে ওভেন পণ্যের আয় ২ দশমিক ৭১ শতাংশ কমে ১২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এক ইউরোপীয় ক্রেতা বলেন, ‘এটা সত্য যে মিয়ানমার থেকে ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হচ্ছে।’ তাঁর কোম্পানি সামরিক শাসনে থাকা কোনো দেশের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে নিতে চায় না। তাই রাজনৈতিক উত্তেজনা ও মানবিক কারণে প্রতিষ্ঠানটি অন্যান্য দেশে ক্রয়াদেশ সরিয়ে নিচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদে তা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। ভারতের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে সাময়িকভাবে বাংলাদেশের কাছে ক্রয়াদেশ স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কারণ ভারত তাঁর কোম্পানির জন্য একটি বড় সোর্সিং হাব ছিল।’

পায়রা বন্দরের চ্যানেল ড্রেজিংয়ে খরচ হবে ৫ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা

পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেল খননের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চ্যানেল ড্রেজিংয়ে ৫ হাজার ৬২৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ক্যাপিটাল ও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

১৯ মে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার এসব তথ্য জানিয়েছেন। ড. শাহিদা আক্তার বলেন, ‘নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ‘‘পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং’’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বেলজিয়ামভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি জ্যান ডি নুল (জেডিএন)। এতে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৬২৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা।’

জাহাজ আগমনে রেকর্ড গড়ল মোংলা বন্দর

বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনে ৭০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে মোংলা বন্দর। ২০২০-২১ অর্থবছরের এক মাস বাকি থাকতেই অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৯১৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ এ বন্দরে নোঙর করেছে।

গত অর্থবছরে বন্দরে জাহাজ ভিড়েছিল ৯১২টি। বন্দর কর্তৃপক্ষের আশা ছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে মোংলা বন্দরে ১ হাজার জাহাজ আগমন করবে। এখনো অর্থবছর শেষ হতে এক মাস বাকি। জুনে ৮৭টি জাহাজ বন্দরে ভিড়লেই ১ হাজারের মাইলফলক স্পর্শ করবে মোংলা বন্দর।

জনসংযোগ বিভাগের উপসচিব মো. মাকরুজ্জামান বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোংলা বন্দরে জাহাজ এসেছে ৫১৯টি। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে বন্দরে জাহাজ আগমনের সংখ্যা ছিল ৯৮টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ৮৫, মার্চ মাসে ৭০, এপ্রিল মাসে ৮৬ এবং মে মাসে এসেছে ৫৫টি। সবমিলিয়ে চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে জাহাজ আগমনের সংখ্যা ৯১৩টি।’

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে এলেও মোংলা বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। এখানে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেয়া হচ্ছে। কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হয়ে বন্দর ব্যবহারকারীরা এ বন্দর ব্যবহারে আকৃষ্ট হচ্ছেন।’

খতিয়ান – জুন, ২০২১

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন

দেশে নতুন চারটি মেরিন একাডেমির পাশাপাশি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার অবকাঠামো ও শতাধিক জলযানের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৬ মে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সবই জনগণের স্বার্থে। কাজেই এগুলোর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।’

সমুদ্রগামী জাহাজে দেশের নাবিকদের চাকরির বিশাল সুযোগকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নৌবাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে পাবনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেটে নতুন এই চার মেরিন একাডেমি গড়ে তোলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৫২১ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা। বছরে ৪০০ ক্যাডেটের পাশাপাশি সমুদ্রগামী মেরিনাররা বিভিন্ন ধাপে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন এসব একাডেমিতে।

প্রধানমন্ত্রী একই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের বিআইডব্লিউটিএ’র ২০টি কাটার সাকশন ড্রেজার, ৮৩টি ড্রেজার সহায়ক জলযান এবং নারায়ণগঞ্জের ড্রেজার বেইজেরও উদ্বোধন করেন। নতুন ২০টি ড্রেজার নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র বহরে ড্রেজারের সংখ্যা হলো ৪৫টি। এছাড়া আরও ৩৫টি ড্রেজার সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।

এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণ জাহাজ ‘টিএস ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী’, বিশেষ পরিদর্শন জাহাজ ‘পরিদর্শী’ এবং বিআইডব্লিউটিসি’র উপকূলীয় যাত্রীবাহী জাহাজ ‘এমভি তাজউদ্দীন আহমদ’ ও ‘এমভি আইভি রহমান’-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিআইডব্লিউটিসি’র বহরকে দক্ষ ও যুগোপযোগী করতে উপকূলীয় যাত্রীবাহী অত্যাধুনিক জাহাজ দুটি তৈরি করা হয়েছে। জাহাজ দুটি সন্দ্বীপ চ্যানেলের কুমিরা-গুপ্তছড়া এবং চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ-হাতিয়া-বরিশাল রুটে চলাচল করবে। আরো ৩৫টি বাণিজ্যিক ও ৮টি সহায়ক জলযান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বিআইডব্লিউটিসি’র।

নৌপথে দুর্র্ঘটনা এড়াতে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা ও যথাযথ ক্ষতিপূরণের স্বার্থে সব ধরনের নৌযানকে নিবন্ধনের আওতায় আনার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেই সব নৌযান চলাচল করে, আমি মনে করি প্রত্যেকটারই রেজিস্ট্রেশনের সিস্টেম থাকা উচিত। এই রেজিস্ট্রেশন না থাকার কারণে অনেক সময় ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা যায় না। নৌযানে যাতায়াতকারী এবং পরিচালনাকারী সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি। যখনই যারা (নৌপথে) চলাচল করবেন, একটু সাবধানে চলাচল করবেন।’

প্রধানমন্ত্রী এদিন পায়রায় দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে অধিগ্রহণ করা জমির মালিকদের পুনর্বাসনে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০০টি বাড়ি হস্তান্তর কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন। পর্যায়ক্রমে ৩ হাজার ৪২৩টি পরিবারকে সেখানে পুনর্বাসন করা হবে।

সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

লিডলাইন

নেভিগেশন ইতিহাসের প্রাথমিক যুগে আবিষ্কৃত কিন্তু এখনো ব্যবহার্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি যন্ত্র হলো লিডলাইন। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতক থেকে পানির গভীরতা পরিমাপ এবং সমুদ্রতলের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করতে এটি ব্যবহার করে আসছেন নাবিকেরা। যন্ত্রটির গঠন খুবই সরল, অথচ ফলাফল সে তুলনায় অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য হওয়ায় গত দুই হাজার বছরেও এর নকশায় খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য পরপর দাগ কাটা বা গিঁট দেওয়া শক্তপোক্ত একটি দড়ির শেষপ্রান্তে বাঁধা থাকে লেড বা সিসার তৈরি ভারী বল। গোলকের নিচের অংশ সমতল বা ভেতরের দিকে অবতল থাকে। এ অংশটিকে প্রাণিজ চর্বি বা গ্রিজের মতো আঠালো কোনো পদার্থ দিয়ে পূর্ণ করা হয়। যাতে পানির তলদেশে বলটি স্থির হয়ে বসে তলদেশের মাটির নমুনা তুলে আনতে পারে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ‘আর্মিং দ্য লিড’। তলায় পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় দড়ির দৈর্ঘ্য মাপা হয়, যাকে বলে সাউন্ডিং। আগের দিনে বিজ্ঞানী-গবেষকরা নটিক্যাল চার্ট বানাতে যে সাউন্ডিং ডেটা সংগ্রহ করতেন, তা এ রকম হাজার হাজার লিডলাইনের সাহায্যেই পেতেন। 

ঐতিহ্যগতভাবে দড়িতে ২,৩,৫,৭,১০,১৫,২০ এবং ২৫ ফ্যাদমে সাদা বা লালা চামড়ার টুকরো বা ফালি গিঁট দিয়ে প্রস্তুত করা হতো লিডলাইনের লাইন অংশটিকে। ওপর থেকে যে মার্কিং পানির পৃষ্ঠতলের খুব কাছাকাছি থাকে, ধরা যাক ৫, তখন তাকে ‘বাই দ্য মার্ক ৫’ বলা হয়। কিন্তু সেটা যদি হয় ৫ ও ৭ ফ্যাদমের মাঝামাঝি কোনো অংশ, তখন তাকে বলা হয় ‘বাই দ্য ডিপ ৬’। আজকের দিনেও লিডলাইন সমান গুরুত্বপূর্ণ-ব্যাটারি লাগে না, রিক্যালিব্রেট করতে হয় না, ডেটা লিক হওয়ার ভয় নেই এবং অত্যন্ত বিশ্বস্ত।