Home Blog Page 222

এপ্রিলে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৫০৩ শতাংশ

পণ্য রপ্তানিতে নতুন মাইলফলক দেখল বাংলাদেশ। এপ্রিল মাসে ৩১৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ৫০২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। করোনার প্রথম ঢেউয়ে গত বছরের এপ্রিলে পণ্য রপ্তানি বড় ধরনের হোঁচট খায়। রপ্তানি নেমে যায় ৫২ কোটি ডলারে। সেই বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পণ্য রপ্তানি। মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও সেটি অব্যাহত আছে।

করোনার কারণে গত বছরের এপ্রিলে সাধারণ ছুটির কারণে অধিকাংশ শিল্পকারখানা তিন সপ্তাহের মতো বন্ধ ছিল। সে কারণে রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমে যায়। চলতি বছর করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার গত মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানার উৎপাদন চালানোর সুযোগ দেয়। তাই রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। যেহেতু গত বছরের এপ্রিলে রপ্তানি তলানিতে নেমেছিল, তাই এবার প্রবৃদ্ধি আকাশছোঁয়া। যদিও ২০১৯ সালের এপ্রিলে ৩০৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। সে তুলনায় গত মাসে রপ্তানি বেড়েছে ১ দশমিক ৬২ শতাংশ।

৯ মাসে আড়াই লাখ কোটি টাকার রপ্তানি আয়

মহামারি করোনার মধ্যেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ২ হাজার ৮৯৩ কোটি ৮৩ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় দেশীয় মুদ্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকার সমান।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ৬ এপ্রিল রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, গত মার্চে ৩০৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের মার্চের চেয়ে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। গত বছরের মার্চে ২৭৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। অবশ্য গত মাসে ভালো হলেও অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি দশমিক ১২ শতাংশ কমে গেছে।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ। এই সময়ে ২ হাজার ৩৪৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হলেও গত বছরের প্রথম ৯ মাসের চেয়ে আড়াই শতাংশ কম। ওভেন পোশাকের রপ্তানি প্রায় ১১ শতাংশের মতো কমেছে। নিট পোশাকের বেড়েছে ৬ শতাংশের কাছাকাছি।

তৈরি পোশাকের রপ্তানি কিছুটা কমলেও পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়াবিহীন জুতা, প্রকৌশল পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হস্তশিল্প, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, রাসায়নিক পণ্য ও সিরামিক পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং হিমায়িত খাদ্য কমেছে।

ইপিবি জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৯৫ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি। পাটপণ্যের মধ্যে পাটের সুতা ও বস্তার রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ২৫ ও ২৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ৬৮ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৫৩ শতাংশ কম।

মাঝে করোনার কারণে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমলেও আবার গতি ফিরেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৭৪ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া হিমায়িত খাদ্যের রপ্তানি ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ কমে গেছে। রপ্তানি হয়েছে ৩৬ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের হিমায়িত খাদ্য।

রপ্তানি তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বগুড়ার নতুন নতুন পণ্য

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বগুড়া থেকে ৯৭ লাখ ৪১ হাজার মার্কিন ডলারের পণ্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে। এই আয় দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৮৩ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। সর্বশেষ মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৪৩ লাখ ৬৩ হাজার ডলারের পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়েছে।

বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী, উত্তরাঞ্চলীয় এই জেলা থেকে বর্তমানে প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কা থেকে শুরু করে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীন, জাপান, সৌদি আরব, কাতার, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ; অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জার্মানি, সুইডেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, ইতালি, নরওয়েসহ ইউরোপের অন্তত ১৮টি দেশের বাজারে রপ্তানি হচ্ছে।

প্রচলিত রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে পাটের সুতা, বস্তাসহ পাটজাত পণ্যসামগ্রী, রাইস ব্র্যান অয়েল, সৌদি রাজকীয় পোশাক, তৈরি পোশাক, জালি টুপি, হস্তশিল্প পণ্য, ডিজিটাল স্কেল, ট্রান্সফরমার, সেচপাম্প, ধানমাড়াই যন্ত্র, টিউবওয়েল, নকশিকাঁথা, আলু, মরিচ, ভুট্টা, দেশি পাবদা ও শিং মাছ ইত্যাদি।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতিতেও রপ্তানি তালিকায় নতুন নতুন পণ্য যুক্ত হচ্ছে। যেমন গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রপ্তানি হচ্ছে নারীর ব্যবহার্য কৃত্রিম চুল। রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৬১ হাজার ডলার। এ ছাড়া নতুন পণ্য হিসেবে পুঁইশাক, করলা, পালংশাক, টমেটো ও শসার বীজ রপ্তানি করে আয় হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার ডলার। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়ায় সবজিবীজ রপ্তানি শুরু হয়েছে। এখন ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে।

বগুড়া চেম্বারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে এখান থেকে মোট ৫ কোটি ২৬ লাখ ডলার বা ৪৪৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করা হয়। এর আগের বছর ২০১৯ সালে বগুড়া থেকে পণ্য রপ্তানি আয় ছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ ডলার ৬১৪ কোটি টাকার।

অনুমোদন ছাড়াই বিদেশে পাঠানো যাবে মাশুল

কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞান, প্রযুক্তি সহায়তা, রয়্যালটি ও ফ্র্যাঞ্চাইজি মাশুল বিদেশে পাঠাতে এখন অনুমোদন লাগবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) অনুমোদন ছাড়াই প্রকল্পের ৬ শতাংশ অর্থ এসব খাতে ব্যয়ের জন্য বিদেশে পাঠানো যাবে। বিডা এ বিষয়ে নীতিমালা দিয়েছে, যা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ও ঠিকাদারের অনুকূলে ফি পাঠানোর বিষয়ে আগের নির্দেশনা বহাল থাকবে। পাশাপাশি অগ্রিম ফি পরিশোধের ব্যবস্থা আগের মতোই থাকছে। অগ্রিম ফি পরিশোধের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ব্যবস্থায় অন্য নির্দেশনাও মেনে চলতে হবে। বিডার নীতিমালা অনুযায়ী মাশুল পাঠানোর ক্ষেত্রে খরচ প্রেরণকারীকে একটি মাত্র অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক নির্ধারণ করতে হবে। অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য উৎসে কর, ভ্যাট ও অন্যান্য সরকারি পাওনা আদায় ও পরিশোধ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব খরচ পাঠাতে গ্রাহকদের অনেক সময় ব্যয় হতো। নতুন নির্দেশনার ফলে নির্দিষ্ট ব্যাংক থেকে সহজেই খরচ পাঠানো যাবে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় কমে আসবে।

ভারত থেকে ৮২ হাজার টন চাল আমদানি

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্থলবন্দর দিয়ে রেলপথে ভারত থেকে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ৮২ হাজার ১০০ মেট্রিক টন চাল এসেছে। দেশে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত এসব চাল আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে এপ্রিল মাসেই আমদানি হয় প্রায় ২৪ হাজার মেট্রিক টন চাল।

দর্শনা স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিল মাসে ট্রেনযোগে মোট ১০ র‌্যাক (৪২ ওয়াগনে এক র‌্যাক) চাল আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে (জি-টু-জি) চার র‌্যাক ও বেসরকারি উদ্যোগে ৬ র‌্যাক এসেছে। বেসরকারি উদ্যোগে জানুয়ারি মাসে ৪ র‌্যাক, ফেব্রুয়ারিতে ৬ র‌্যাক ও মার্চে ১৬ র‌্যাক চাল আমদানি হয়েছে।

দর্শনা স্থলবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি উদ্যোগে আমদানি হয়েছে ৯ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। অন্যদিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী বেসরকারি উদ্যোগে চাল এসেছে ৭২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।

দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে এফটিএর তাগিদ

বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক ৪৮ বছরের হলেও দুই দেশের মধ্যে এখনো কাক্সিক্ষত বাণিজ্য হচ্ছে না। অথচ দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে দুই দেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে হবে। জোর দিতে হবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে।

বহুজাতিক দ্য হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) ও বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনায় ৩১ মার্চ বক্তারা এসব কথা বলেন। এইচএসবিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ করতে যাচ্ছে। তখন বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা হাতছাড়া হবে। সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে এফটিএ বা পিটিএ করা গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এরই মধ্যে এফটিএ করতে শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপালসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি, তাদের বড় বড় শিল্পকারখানা নির্মাণের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য বিশাল সুযোগ।’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল নজরুল ইসলাম, দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম ও ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জাং কিউন প্রমুখ।

দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.৫ থেকে ৬ শতাংশ হতে পারে

চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ২৮ এপ্রিল প্রকাশিত এডিবির ‘এডিবি ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০২১’-এ এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে প্রাথমিক প্রাক্কলন থেকে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কিছুটা কমিয়ে এনেছে এই দাতা সংস্থা।

উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করেছিল, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। এই পূর্বাভাস হিসাব করার সময় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বিবেচনা করা হয়নি।

এডিবি মনে করে, চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি কত হবে, তা নির্ভর করবে কীভাবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি টিকাদান কার্যক্রম কেমন চলছে, এটিও অর্থনীতির সামনের দিকে যাওয়ার সূচক হিসেবে কাজ করবে। এডিবি আরও বলছে, আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে। প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সম্পর্কে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮-৯ মাসের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রাক্কলন করেছিল। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এপ্রিলের শুরুতে লকডাউন দেওয়া হয়। চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে এখন। এগুলো অবশ্যই প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে। এ কারণে আমাদের প্রবৃদ্ধি প্রাথমিক প্রাক্কলনের চেয়ে ১ শতাংশ কমে আসতে পারে। তবে এই সংকটকালে ৫ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধিও বেশ ভালো।

সীমান্ত সেতু অকেজো, আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বটুলি শুল্ক স্টেশন ও অভিবাসন তদন্ত কেন্দ্র (ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট) এলাকায় একটি বেইলি সেতু রয়েছে। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। এতে পণ্য আমদানি-রপ্তানির কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

২০০১ সালে বটুলি শুল্ক স্টেশন ও অভিবাসন তদন্ত কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৮ সালে উভয় দেশের সম্মতিতে ভারত ছোট পরিসরে সেতুটি নির্মাণ করে। রাঘনাছড়া নামের পাহাড়ি ছড়ার ওপর নির্মিত সেতুটি শূন্য লাইনের ১৫০ মিটারের ভেতরে ভারতীয় অংশে পড়েছে। কিন্তু সেতু দিয়ে দুই দেশে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের কোনো অনুমোদন মেলেনি। একটা সময় উভয় দেশের পণ্যবাহী গাড়ি সেতুর মাঝামাঝি স্থানে গিয়ে থামত। এরপর এক গাড়ি থেকে অন্য গাড়িতে পণ্য ওঠানো-নামানো হতো। কিন্তু অতিবৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সেতুর দুই পাশের মাটি সরে যায়। এতে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে ওই কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে পড়ে। প্রায় দুই বছর আগে ভারতীয়রা ওই স্থানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) আপত্তি জানালে সেতুর কাজ স্থগিত হয়ে যায়। তবে বিজিবি পুরোনো সেতুটি সংস্কারে আপত্তি নেই বলে জানায়। সেটাও আর হয়নি।

বটুলি শুল্ক স্টেশন দিয়ে বর্তমানে প্লাস্টিক সামগ্রী, পিভিসি দরজা ও তুলা ভারতে রপ্তানি হয়। এ ছাড়া ভারত থেকে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল বাংলাদেশে আমদানি হয়। বটুলি শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সম্প্রতি সেখানে ৩৮ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে ২০০৩ সালে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ হঠাৎ বটুলি অভিবাসন তদন্ত কেন্দ্র দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা প্রদান বন্ধ করে দেয়। ফলে তাঁদের ওই পথে ভারতে যাতায়াত বন্ধ হয়ে পড়ে। তবে ভারতীয় নাগরিকেরা নানা কাজে বাংলাদেশে যাতায়াত করতে পারেন।

পরিকল্পিত পদক্ষেপে লকডাউনের প্রভাবমুক্ত চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামা, বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহ এবং রপ্তানিপণ্য বন্দরে পৌঁছে জাহাজীকরণ পুরোদমে স্বাভাবিক রয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে প্রথম দফায় লকডাউন এবং ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন শুরুর পরও বন্দর পরিচালন কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বন্দর সচল থাকায় বন্দর ব্যবহারকারীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

এক বছর আগে ২০২০ সালের লকডাউনে চট্টগ্রাম বন্দর পুরোপুরি সচল থাকলেও ব্যবহারকারী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা না থাকায় বন্দরের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল। পণ্য ডেলিভারি না নেওয়ায় বন্দরের ভেতর কনটেইনারজট সামাল দিতে একপর্যায়ে জাহাজ ভেড়ানো পর্যন্ত সীমিত করা হয়েছিল। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, তখনকার পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। তবে এবার বন্দর ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি ব্যতিক্রম। লকডাউন, রমজান এবং বাজেটের বিষয় মাথায় রেখে আগেভাগেই বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ; এতে এবার কঠোর লকডাউনে সুফল মিলেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, ‘রমজানের চাপ সামাল দিতে আমরা আগেভাগেই পণ্য সরবরাহ নিতে নির্দেশনা দিয়েছিলাম; এতে বেশ সুফল মিলেছে। বিশেষ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারভর্তি পণ্য বন্দর থেকে দ্রুত ছাড় নিতে আমরা কঠোর ছিলাম। ফলে সেখানেও সুফল মিলেছে। গত বছর এই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনার নিয়েও আমরা বড় ধরনের বিপাকে পড়েছিলাম।’

এনামুল করিম আরও বলেন, ‘গত বছরের লকডাউন অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা বন্দর ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখার আহ্বান জানিয়েছিলাম। তাতেও সাড়া মিলেছে। লকডাউন শুরুর প্রথম দিন ১৪ এপ্রিল নববর্ষের সরকারি ছুটি থাকার পরও ৩ হাজার ১২২ একক কনটেইনার ছাড় হয়েছে। যে ক’দিন লকডাউন থাকবে, সে সময়ে আমরা দিনে তিন হাজার একক ডেলিভারি করতে পারলেই সন্তুষ্ট।’

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর সচল থাকা মানে দেশের ৯২ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি সচল থাকা। বন্দর সচল থাকার পেছনে প্রথম যে পদক্ষেপের সুফল মিলেছে, সেটি হচ্ছে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা সচল রাখা। এর ফলে পণ্য জাহাজ থেকে নামার পর বন্দরে আটকে থাকার সুযোগ ছিল না; আর কারখানার উৎপাদিত পণ্য নির্বিঘেœ রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়েছে।

গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নবনির্বাচিত সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘লকডাউনে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত সরকারকে বোঝাতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সরকার আমাদের যুক্তি বুঝে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে কারখানা সচল রেখেছে। এর ফলে লকডাউনে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজট নেই, কনটেইনারজটও নেই; এই বন্দর ব্যবস্থাপনায় আমরা খুব খুশি।’

বন্দর থেকেই পণ্য খালাস চান পোশাকশিল্পের মালিকেরা

চট্টগ্রামের অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনালের (আইসিডি) পরিবর্তে বন্দর থেকেই আমদানি করা কাঁচামাল খালাস অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা। তাঁরা বলছেন, আইসিডি থেকে পণ্য খালাসে সময় ও খরচ-দুটোই বেশি লাগে। বর্তমান সংকটময় মুহূর্তে অতিরিক্ত খরচ দিতে হলে পোশাকশিল্পের সক্ষমতা হারাবে।

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ ২৬ এপ্রিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে চিঠি দিয়ে আমদানি হওয়া কাঁচামালবাহী কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস অব্যাহত রাখার দাবি জানায়।

বিকেএমইএ দাবি করেছে, বেসরকারি আইসিডিতে পর্যাপ্ত জায়গা, যন্ত্রপাতি ও শ্রমিকস্বল্পতায় পণ্য খালাসে সময়ক্ষেপণ হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দুই দিনের মধ্যে আমদানি পণ্য খালাস করা গেলেও বেসরকারি আইসিডিতে লাগে ছয় থেকে সাত দিন।

বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক খাতের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের বড় অংশই চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে হয়। রপ্তানি কার্যক্রম বেসরকারি আইসিডির মাধ্যমে সম্পন্ন হলেও আমদানি পণ্য খালাস চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়। ফলে লকডাউনের মধ্যেও কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই আমদানি হওয়া কাঁচামাল পূর্বের নিয়মে খালাস করা হচ্ছে।

বিকেএমইএ দাবি করেছে, বেসরকারি আইসিডির চার্জও চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে অনেক বেশি। কিছু ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। এই অতিরিক্ত খরচ ও সময়ক্ষেপণের ফলে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সক্ষমতা হারাবে, যা আমাদের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। তাই এই সংকটময় মুহূর্তে অতিরিক্ত চার্জ দিয়ে বেসরকারি আইসিডি থেকে আমদানি করা কাঁচামাল খালাস করা সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, পৃথিবীতে এখন একমাত্র চট্টগ্রাম বন্দরেই বন্দর এলাকার ভিতরে এফসিএল পণ্য খুলে ডেলিভারি করা হয়। মোট আমদানিকৃত পণ্যের হিসাবে তা প্রায় ৭০ শতাংশ। এই কাজে প্রতিদিন প্রায় ৫-৬ হাজার ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করে যানজট তৈরি করে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে ব্যাঘাত ঘটায়। বসরকারি আইসিডিটিতে পণ্য খালাস হলে বন্দরের কনটেইনারজট এবং জাহাজের টার্ন-অ্যারাউন্ড টাইম কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তাতে করে বন্দরের প্রবৃদ্ধি ৩-৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।