Home Blog Page 223

কার্বন নিঃসরণ কমাতে উচ্চাভিলাষী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে অবিলম্বে এক উচ্চাভিলাষী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘বৈশ্বিকউষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে অবিলম্বে একটি উচ্চাভিলাষী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডাকা ভার্চুয়াল জলবায়ু সম্মেলনে ২২ এপ্রিল দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানিয়েছেন। ‘লিডারস সামিট অন ক্লাইমেট’ শীর্ষক দুই দিনের সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন ৪০ জন বিশ্বনেতা।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতাদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিলের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে হবে, যা অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ৫০:৫০ ভারসাম্য বজায় রাখবে। এই তহবিলের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলোর ক্ষয়ক্ষতি পূরণে বিশেষ দৃষ্টি দেবে। প্রধান অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উদ্ভাবনের পাশাপাশি জলবায়ু অর্থায়নের জন্য বিশেষভাবে ছাড় দিতে হবে এবং সবুজ অর্থনীতি ও কার্বন প্রশমন প্রযুক্তিগুলোর ওপর দৃষ্টি দিতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা আমাদের জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ বা প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় টেকসই জলবায়ু সহনশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যয় করি।’

বাংলাদেশের তিন সমুদ্রবন্দর যুক্ত হবে মালের সঙ্গে

বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের জন্য আকাশ ও সমুদ্রপথে সরাসরি সংযোগ স্থাপনে রাজি হয়েছে। দুই দেশ মনে করে, নানা মাধ্যমে যোগাযোগ বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। পর্যটন আর শিক্ষার মতো ক্ষেত্রগুলোতে দুই দেশের জনগণের মধ্যে আদান-প্রদান বাড়লে সম্পর্কটা আরও বিকশিত হবে।

১৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ তাঁদের আনুষ্ঠানিক আলোচনায় সমুদ্র আর আকাশপথে যোগাযোগ বাড়ানো যে জরুরি, তার ওপরই জোর দিয়েছেন। দুই শীর্ষ নেতা মালের সঙ্গে বাংলাদেশের তিনটি সমুদ্রবন্দরের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দ্রুত জাহাজ চলাচল চুক্তির জন্য কর্মকর্তাদের উদ্যোগ নিতে বলেছেন।

বাংলাদেশ সফরে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। এর আগে দুই নেতা একান্তে কথা বলেন। আলোচনার পর দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। সই হওয়া এমওইউগুলো হচ্ছে সমন্বিত সহযোগিতা বাড়াতে যৌথ কমিশন গঠন, দ্বিপক্ষীয় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক চালু, মৎস্য ও সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম।

দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ঢাকা ও মালের মধ্যে বাংলাদেশ বিমান খুব শিগগির ফ্লাইট চালু করবে বলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা আরেকটি সুখবরের আশায় রয়েছি। তা হলো আমরা চট্টগ্রামের সঙ্গে মালের মধ্যে খুব শিগগির সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু করতে যাচ্ছি।’

দুই শীর্ষ নেতা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সম্ভাবনার সদ্ব্যবহারের ওপর জোর দেন। এ জন্য দুই দেশের আনুষ্ঠানিক কোনো বাণিজ্যিক চুক্তি না থাকার প্রসঙ্গও টেনেছেন তাঁদের আলোচনায়। এই পরিস্থিতিতে বিশ^ বাণিজ্য সংস্থার আলোকে (ডব্লিউটিও) অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সইয়ের জন্য মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সলিহর কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে মালদ্বীপের প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক মনোভাব দেখান। দুই দেশ পিটিএসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নিয়মিতভাবে বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক করতে সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত শুল্ক খাতে সহযোগিতা এবং দ্বৈত কর প্রত্যাহারের চুক্তির খসড়া দ্রুত চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছে।

মহীসোপানের দাবি বাংলাদেশের, আপত্তি ভারতের

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের মহীসোপানের দাবির বিষয়ে জাতিসংঘে আপত্তি তুলেছে ভারত। সমুদ্রপৃষ্ঠের যে বেসলাইনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহীসোপান নির্ধারণ করেছে, তা ভারতের মহীসোপানের একটি অংশ। তাই ভারত জাতিসংঘের মহীসোপান নির্ধারণবিষয়ক কমিশনে বাংলাদেশের দাবি বিবেচনায় না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। ১৭ এপ্রিল জাতিসংঘের মহীসোপান নির্ধারণ-সংক্রান্ত কমিশনে (সিএলসিএস) ভারত এই আপত্তি জানায়।

ভারতের আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের দাবির বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে মিয়ানমার। কিন্তু ভারতের মতো বাংলাদেশের দাবির প্রতি আপত্তি জানায়নি দেশটি। বাংলাদেশ আইনগতভাবে মহীসোপানের যতটা প্রাপ্য, তা থেকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করছে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র। দুই নিকট প্রতিবেশীর বিরোধিতার কারণে বাংলাদেশের মহীসোপানের বিষয়টির এখনো সুরাহা হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে জাতিসংঘের কাছে মহীসোপানের দাবির বিষয়ে বাংলাদেশ আবেদন জানায়। গত বছরের অক্টোবরে ওই দাবির বিষয়ে সংশোধনী জমা দেয় বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের সিএলসিএস ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভারতের আপত্তিপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ভূখ-ের যে বেসলাইনের ওপর ভিত্তি করে মহীসোপান নির্ধারণ করেছে, সেটির মাধ্যমে ভারতের মহীসোপানের একটি অংশ দাবি করছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে যে ‘গ্রে এরিয়া’ রয়েছে, সেটির বিষয়ে বাংলাদেশ কোনো তথ্য দেয়নি। ‘গ্রে এরিয়া’ হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে একটি ছোট্ট অংশ, যেখানে পানির মধ্যে যে সম্পদ রয়েছে, যেমন মাছ, সেটির মালিক ভারত; কিন্তু মাটির নিচে যে খনিজ সম্পদ আছে, সেটির মালিক বাংলাদেশ। এই অংশের পরিমাণ প্রায় ৯০০ বর্গকিলোমিটার।

বাংলাদেশের মহীসোপানের বিষয়ে ভারতের আপত্তির বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার এডমিরাল মো. খুরশিদ আলম বলেন, ‘ভারতের যুক্তিগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিশনে নিজেদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারত যে বেসলাইনের ভিত্তিতে মহীসোপানের দাবি করেছে, সেটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ২০০৯ সালে আপত্তি জানিয়েছিল। বাংলাদেশের ওই দাবি এখনো বলবৎ আছে।’

নতুন বন্দর আইনে বেসরকারি জেটি নির্মাণের সুযোগ

দেশের প্রধান দুই বন্দরের নতুন আইনে জলসীমায় বেসরকারি খাতে জেটি নির্মাণের সুযোগ রাখা হয়েছে। সরকারের অনুমোদনে বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত শর্তে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এই অনুমোদন দিতে পারবে বলে মোংলা বন্দর আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর আইনের অনুমোদিত চূড়ান্ত খসড়ায়ও এ সুযোগ রাখা হয়েছে। সংসদে অনুমোদনের পর এটি কার্যকর হবে।

৩ এপ্রিল মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের আইন, ২০২১-এর গেজেট প্রকাশিত হয়। আর ৫ এপ্রিল মন্ত্রিসভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২১-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

এত দিন ধরে দেশের দুই বন্দর পরিচালিত হয়ে আসছিল ১৯৭৬ সালের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর অধ্যাদেশ অনুযায়ী। অধ্যাদেশের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, বন্দর কর্তৃপক্ষ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বেসরকারি জেটি নির্মাণ করতে পারবেন না। অবশ্য অধ্যাদেশের ১৮ ধারায় বলা হয়, কর্তৃপক্ষ চাইলে শর্ত সাপেক্ষে লিখিত আদেশে কোনো ব্যক্তিকে জেটি নির্মাণের অনুমতি দিতে পারে।

পুরোনো অধ্যাদেশ রহিত করে এখন নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। নতুন আইনে সরকারের অনুমোদনক্রমে বন্দর কর্তৃপক্ষকে জেটি নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

দেশে বেসরকারি খাতে টার্মিনাল নির্মাণের প্রথম প্রস্তাবনা দিয়েছিল স্টিভিডোরিং সার্ভিসেস অব আমেরিকা বা এসএসএ। ১৯৯৮ সালে সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের অনুমতিও দিয়েছিল। কিন্তু পরে উচ্চ আদালত ওই অনুমতি বাতিল করে দেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় কর্ণফুলী নদীতে বহু আগে থেকেই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার বিশেষায়িত জেটি রয়েছে। পুরোনো অধ্যাদেশ অনুযায়ী এসব জেটি নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিল বন্দর।

সীমিত পরিসরে ১৩৪তম বন্দর দিবস উদ্যাপন

করোনা মহামারির কারণে এবার সীমিত পরিসরে ১৩৪তম চট্টগ্রাম বন্দর দিবস উদ্যাপিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে ২৫ এপ্রিল সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান এবং বন্দর পতাকা উত্তোলন করেন বন্দরের সদস্য মো. জাফর আলম। পতাকা উত্তোলনকালে চট্টগ্রাম বন্দরের সকল সদস্য, সকল বিভাগীয় প্রধান ও সিবিএর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান উপস্থিত সকলকে বন্দর দিবসের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ‘সরকার ঘোষিত লকডাউনকালীন চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকগণ দেশের সাপ্লাই চেইন নির্বিঘন্নে রাখার স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ২৪/৭ কাজ করে যাচ্ছেন।’ এজন্য তিনি বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার স্বার্থে বন্দরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনোবল চাঙ্গা রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরলস কাজ করার আহ্বান জানান।

দক্ষিণ-পশ্চিম আটলান্টিকে মৎস্য শিকার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ

সামুদ্রিক প্রাণিজ সম্পদের প্রাচুর্যের কারণে দক্ষিণ-পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগর মাছ ধরা জাহাজগুলোর কাছে সবসময়ই আকর্ষণীয় একটি গন্তব্য। প্রায় ক্ষেত্রেই এসব জাহাজকে জাতীয় জলসীমার বাইরে গিয়ে মৎস্য আহরণ করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে উদ্বেগজাগানিয়া দুটি বিষয় রয়েছে। প্রথমত, অতিরিক্ত আহরণের কারণে এখানকার সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আর দ্বিতীয়ত, অন্যান্য অঞ্চলের মতো সেখানে মৎস্য আহরণ ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো সংস্থা বা নজরদারির ব্যবস্থা নেই।

সাম্প্রতিক সময়ে উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের (ইইজেড) বহিঃসীমার কাছাকাছি এলাকায় চীন, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও স্পেনের মাছ ধরা জাহাজের আনাগোনা অনেকটা বেড়েছে। গত দুই দশকে দক্ষিণ আমেরিকার উভয় পাশে জাহাজের সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, প্রায়ই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে। গত বছর চীনা মাছ ধরা জাহাজের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনে একুয়েডর। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা তাদের জলসীমায় অবৈধভাবে মাছ ধরার দায়ে তিনটি জাহাজকে আটক করে।

এসব কারণে দক্ষিণ-পশ্চিম আটলান্টিকে মৎস্য শিকার নিয়ন্ত্রণে আঞ্চলিক উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। উরুগুয়ে এরই মধ্যে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে অগ্রসর হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে দেশটি এ বিষয়ে ব্রাজিলের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছে।

তবে আর্জেন্টিনা বলেছে, তারা প্রথাগত আঞ্চলিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা সংস্থা (আরএফএমও) চায় না। অবশ্য এর বিকল্প কোনো উদ্যোগ নেয়া হলে পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে দেশটি। অন্যদিকে উরুগুয়ে বলেছে, আরএফএমও বিষয়ে আর্জেন্টিনার সঙ্গে নতুন করে আর কোনো আলোচনায় বসবে না তারা। তবে দেশটি যদি বিকল্প কোনো সমাধান উপস্থাপন করতে পারে, তবে সেটিকে বিবেচনা করে দেখা হবে।

সাগরে কনটেইনার হারানোর ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক বাণিজ্যের কলেবর বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে পণ্য পরিবহনে সমুদ্রপথের চাহিদা। এ কারণে শিপিং কোম্পানিগুলো এখন দৈত্যাকার জাহাজ তৈরির দিকে নজর দিয়েছে, যেগুলো একের পর এক কনটেইনার সাজিয়ে বিশাল সমুদ্র পাড়ি দেয়। উত্তাল সাগর পাড়ি দেয়ার সময় মাঝেমধ্যেই এই পাহাড় থেকে কিছু কনটেইনার পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। উদ্বেগের বিষয় হলো, সাগরে কনটেইনার হারানোর হার সাম্প্রতিক সময়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। আর কোটি কোটি ডলারের পণ্যবাহী এসব কনটেইনার সাগরে জলাঞ্জলি হওয়ার কারণে কেবল যে গ্রাহকরাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তা নয়। সমুদ্র নিরাপত্তার বিষয়টিও হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে রেকর্ড সংখ্যক কনটেইনার সাগরে হারিয়ে গেছে। গত বছর এ সংখ্যাটি ছিল ৩ হাজার। আর এ বছর এখন পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি কনটেইনার জাহাজ থেকে পড়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে পণ্য পরিবহনের ক্রমবর্ধমান চাপকেই দায়ী করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শিপিং খাতে এখন পণ্যের সুরক্ষার চেয়ে দ্রুততর সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ কারণে জাহাজগুলোয় পাহাড়সম কনটেইনার বোঝাই করা হয়। এসব জাহাজ উত্তাল সাগরে পড়লে কনটেইনার পড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

পণ্যবোঝাই কনটেইনার সাগরে হারিয়ে যাওয়ার কারণে অ্যামাজন, টেসলার মতো মার্কিন রিটেইলার ও ম্যানুফ্যাকচারারদের সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হচ্ছে। গত নভেম্বরে ওয়ান অ্যাপাস জাহাজ উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়লে ১ হাজার ৮০০-এর বেশি কনটেইনার সাগরে পড়ে যায়। জানুয়ারিতে মায়েরস্ক এসেন চীনের শিয়ামেন থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস যাওয়ার পথে প্রায় ৭৫০টি কনটেইনার হারিয়েছে। মাসখানেক পর গভীর সাগরে ২৬০টি কনটেইনার হারিয়েছে একই শিপিং লাইনের আরেকটি জাহাজ।

বাংকার ফুয়েল হিসেবে এলএনজির চাহিদা ফুরাবে: বিশ্বব্যাংক

বৈশ্বিক শিপিং খাতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তার কারণে বাংকার ফুয়েল হিসেবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) চাহিদা এক সময় একেবারে কমে যাবে। এর পরিবর্তে অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেননির্ভর জ্বালানির ব্যবহার বাড়বে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। তবে এ প্রতিবেদনের সমালোচনা ও বিরোধিতা করেছে অলাভজনক জোট সি এলএনজি।

‘দ্য রোল অব এলএনজি ইন দ্য ট্রানজিশন টুওয়ার্ড লো অ্যান্ড জিরো-কার্বন শিপিং’ শীর্ষক বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলএনজির কার্বনপ্রবলতা বেশি হওয়ায় ২০৫০ সাল নাগাদ বাংকার ফুয়েল হিসেবে এলএনজির ব্যবহার অনেক কমে যাবে। প্রতিবেদনে যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী চলতি দশকে জ্বালানির বাজারে এলএনজির অংশীদারিত্ব কিছুটা বাড়বে। ২০৩০ সাল নাগাদ বাংকার ফুয়েলের মোট বাজারের ১০ শতাংশ জুড়ে থাকবে এলএনজি। আর যদি চলতি দশকে নতুন নির্মিত সব জাহাজেই জ্বালানির হিসেবে এলএনজি ব্যবহার করা হয়, তবে এ হার সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

কিন্তু ২০৩০ সালের পর থেকে বাংকার ফুয়েল হিসেবে এলএনজির চাহিদা কমে যাবে। তবে এই কমে যাওয়ার হার এখন সুনিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এটি নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ জলবায়ুনীতি ও কার্বনমুক্ত জ্বালানির বাজার কতটা গড়ে উঠতে পারে, তার ওপর। বিশ্বব্যাংক বলছে, চল্লিশের দশকের শুরুর দিকেই বাংকার ফুয়েল হিসেবে এলএনজির চাহিদা শেষ হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে কিছুটা বিলম্ব হলেও তা কোনোভাবেই পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিক অতিক্রম করবে না।

বিশ্বব্যাংকের কের এই প্রতিবেদনের বিরোধিতা করে সি এলএনজি বলেছে, শিপিং খাত এমন কোনো বিকল্প জ্বালানির জন্য বসে থাকবে না, কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে যার কার্যকারিতা এখনো প্রমাণ হয়নি। বরং এলএনজি সেই তুলনায় অনেকটাই নিরাপদ, প্রমাণিত ও বর্তমানে সহজলভ্য।

ব্যয়বহুল কনটেইনার পরিবহন, খরচ সহসাই কমছে না

কয়েক মাস ধরেই চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলীয় ও ইউরোপীয় বন্দরগুলোয় কনটেইনার পরিবহনে খরচ রেকর্ড সর্বোচ্চের কাছাকাছি। এ ঊর্ধ্বগতি আগামী বছরখানেক অব্যাহত থাকতে পারে। আর এ বাড়তি খরচের বোঝা গ্রাহকদেরই বহন করতে হবে।

সাধারণত বছরের এই সময়টায় স্পট নিলামে কনটেইনার পরিবহনের খরচ কিছুটা কম থাকে। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকটা জাহাজের মালিকদের জন্য সুসময় হয়েই এসেছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে তাদের জন্য আরও সুদিন অপেক্ষা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন শীর্ষ আমদানিকারকরা নতুন যেসব চুক্তি করেছেন, সে অনুযায়ী বলেই দেয়া যায়, কনটেইনার পরিবহনে বাড়তি খরচের গতিতে এখনই ছেদ পড়ছে না।

বিশে^র বেশির ভাগ শীর্ষ রিটেইলার ও ম্যানুফ্যাকচারারই সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে শিপিং কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বার্ষিক চুক্তি করে যেন সারা বছরই খরচ একই থাকে। আর সেই চুক্তি সাধারণত বছরের এই সময়টাতেই হয়। কারণ এ সময়ে কনটেইনার পরিবহনের খরচ দর-কষাকষি করে কিছুটা কমানো যায়।

কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার বাণিজ্যপথে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় ৪০ ফুট কনটেইনার পরিবহনের চুক্তির হার আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার ডলারের মধ্যে রয়েছে। এক বছর আগের তুলনায় তা ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি। শিপিং খাতে ডে রেট আর্নিংসের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক বিবেচিত হয় ক্লার্কসনস রিসার্চের ক্লার্কসি ইনডেক্স। সর্বশেষ প্রান্তিকে এর দৈনিক গড় ছিল ১৭ হাজার ডলারের বেশি। ২০০৮-০৯  সালের আর্থিক মন্দার পর প্রথম প্রান্তিকে এটিই সর্বোচ্চ গড়। দ্বিতীয় প্রান্তিকে সূচকটি আরও ঊর্ধ্বমুখী। এরই মধ্যে দৈনিক গড় ২১ হাজার ডলার স্পর্শ করেছে।

কৃষ্ণ-মর্মর সংযোগকারী নতুন খাল খনন করছে তুরস্ক

বসফরাস প্রণালির সমান্তরালে একটি বিশালাকার খাল খননের পথে এগোচ্ছে তুরস্ক। ক্যানাল ইস্তাম্বুল নামের এই খালের ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান এরই মধ্যে অনুমোদন করেছে সরকার। দেশটির পরিবেশমন্ত্রী মুরাদ কুরুম সম্প্রতি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ক্যানাল ইস্তাম্বুল কৃষ্ণ সাগরের সঙ্গে মর্মর সাগরের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন সক্ষমতা আরও বাড়াবে। খাল খননের এই প্রকল্পে প্রায় ৯০০ কোটি ডলার ব্যয় হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ক্যানাল ইস্তাম্বুল তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের চিন্তাপ্রসূত একটি প্রকল্প। ২০১১ সালে তিনি এই প্রকল্পের ঘোষণা দেন। কিন্তু বিভিন্ন পেশাজীবী সংস্থা ও এনজিওর পক্ষ থেকে তীব্র বাধা আসায় এর কার্যক্রম পিছিয়ে গেছে। তাদের দাবি, এই খাল খনন করা হলে ইস্তাম্বুল শহরে বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানার ঝুঁকি বেড়ে যাবে।