Home Blog Page 231

লালদিয়ার চরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘লালদিয়ার চর বন্দরের জায়গা। বন্দরের প্রয়োজনেই এখানে উচ্ছেদ করতে হচ্ছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় যারা বাধা দিচ্ছে তাদের তালিকা করা হচ্ছে। গুটিকয়েক মানুষের জন্য বন্দরের সুনাম নষ্ট বরদাশত করা হবে না।’ ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার মতো পৃথিবীর কোনো বন্দরে এত জনবসতি বা যানবাহন চলাচল করে না। আমরা সেই জায়গাগুলো আধুনিকায়ন করতে যাচ্ছি। বিদেশিরা যখন আসেন, যখন দেখেন বন্দরের মধ্যে এত চলাচল, এত বস্তি, এত বাড়িঘর তখন আমাদের বন্দর প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এর আগে অনেক জায়গা পরিষ্কার করেছি। এখন লালদিয়ার চরে পদক্ষেপ চলছে। এর আগে মহামান্য আদালত বন্দর চেয়ারম্যানকে পর্যন্ত কোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।’

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পুনর্বাসন আমরা তাদেরই করব, যারা গৃহহীন। যারা স্বচ্ছল, যারা চলতে পারেন-তাদের পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ নেই। আমরা যাদের পুনর্বাসন করব, তাদের তালিকা করা হয়েছে। যারা এখন আছেন, তাদের অধিকাংশই ভাড়াটিয়া। কারা এ ধরনের সুযোগ নিয়ে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে সেটির তালিকা করেছি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’ এ সময় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান, পর্ষদ সদস্য মোহাম্মদ কামরুল আমিন, সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রবাসী আয়ে শীর্ষ তিন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

২০২০ সালে আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশে প্রবাসী আয় বেড়েছে। করোনার দুঃসংবাদের ভিড়ে এটি ছিল একটি সুখবর। প্রবাসী আয় বেশি আসে এমন শীর্ষ ১০টি উন্নয়নশীল দেশের ৭টিরই আয় গত বছর কমেছে। আর তিনটি দেশের আয় বেড়েছে। ওই তিন দেশের একটি হলো বাংলাদেশ। অন্য দুটি দেশ মেক্সিকো ও পাকিস্তান। দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। তবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের প্রবাসী আয় বৃদ্ধির বিষয়টি সাময়িক বলে মনে করছে দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ১ হাজার ৮৪০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৮৮ কোটি ডলারে। একইভাবে পাকিস্তানে ২০১৯ সালে ২ হাজার ২২০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৪১০ কোটি ডলারে। ২০২০ সালে মেক্সিকোর প্রবাসী আয়ের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ১৫০ কোটি ডলার বেড়ে ৪ হাজার ৫০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে সেখানে বলা হয়েছে, এ দুই দেশের প্রবাসী শ্রমিকদের অনেকে তাঁদের চাকরি হারিয়ে নিজেদের জমানো টাকা দেশে পাঠিয়েছেন। উপসাগরীয় দেশগুলোর শ্রমিকদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি ছিল। কারণ করোনার কারণে তেলের দাম কমে যাওয়া এবং পর্যটন ব্যবসায় ধস নামায় ওই অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনীতি সংকটে পড়েছে। আবার বাংলাদেশে প্রবাসী আয় বেশি আসার আরেকটি কারণ, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ফলে বৈধ উপায়ে দেশে টাকা পাঠানোর পরিমাণ বেড়েছে। আবার বৈধভাবে টাকা পাঠালে প্রণোদনার হারও বাড়ানো হয়েছে, যা প্রবাসী শ্রমিকদের বৈধ উপায়ে দেশে টাকা পাঠানোর উৎসাহ বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহ করবে কাতার পেট্রোলিয়াম

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ গ্যাসের জোগান প্রতিনিয়ত কমে আসায় ভারত-পাকিস্তানের মতো এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এলএনজি আমদানিকারক দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের বৃহত্তম গভীর সমুদ্রে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) টার্মিনাল তৈরির দায়িত্ব পাওয়া ডাচ প্রতিষ্ঠান ভিটলের সঙ্গে সম্প্রতি দীর্ঘমেয়াদি এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে কাতার পেট্রোলিয়াম। এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের ভিটলের গ্রাহকদের জন্য বার্ষিক ১২ লাখ ৫০ হাজার টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ করবে কাতার পেট্রোলিয়াম। ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত প্রতিষ্ঠানটির এক বিবৃতি থেকে জানা যায়, চুক্তি অনুযায়ী এ বছর থেকেই এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে।

কাতারের জ্বালানিমন্ত্রী এবং কাতার পেট্রোলিয়ামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাদ বিন শেরিদা আল কাবি এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভিটলের সঙ্গে এ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি (এসপিএ) স্বাক্ষর করতে পেরে আমরা আনন্দিত। বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে ভবিষ্যতেও এ চুক্তির আওতায় এনএলজি সরবরাহ অব্যাহত রাখব আমরা।’

বর্তমানে বাংলাদেশের দুটি ভাসমান টার্মিনাল ও পুনরায় গ্যাসে রূপান্তরকরণ ইউনিট (এফএসআরইউ) আছে, প্রতিদিন ২ কোটি ৮০ লাখ কিউবিক মিটার গ্যাস ও বছরে প্রায় ৭৫ লাখ টন গ্যাস উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের।

সাত মাসে ২ লাখ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ২ হাজার ২৬৭ কোটি ডলার বা ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কম। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, গত জানুয়ারিতে ৩৪৩ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে রপ্তানি হয়েছিল ৩৬১ কোটি ডলারের পণ্য। সেই হিসাবে গত জানুয়ারিতে রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য, প্রকৌশল পণ্য, হস্তশিল্প, রাসায়নিক পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। অন্যদিকে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য ও প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি কমেছে। এই সময়ে ১ হাজার ৮৪০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, দেশীয় মুদ্রায় যা ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার সমান। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম। তৈরি পোশাকের মধ্যে নিটের রপ্তানি ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও ওভেন পোশাকের কমেছে ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ৯৯৮ কোটি ডলারের নিট পোশাক ও ৯৪৪ কোটি ডলারের ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে।

সব মহাসড়কে টোল আদায়ের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রস্তাবিত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার পর সেখান থেকে টোল আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া অন্য সব মহাসড়কেও টোল আদায় করতে বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে। ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন।

একনেক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এসব কথা বলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বিনা পয়সায় সেবা পাওয়ার দিন শেষ। আমরা সেবা পেতে চাই। কিন্তু পয়সা দিতে রাজি না। এটা আমাদের সংস্কৃতি হয়ে গেছে। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। এখন থেকে সরকারি সেবা পেতে হলে দাম দিতে হবে।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃতি করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, টোল আদায়ের মাধ্যমে শুধু রাজস্ব আদায় নয়, একটা আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যেখান থেকে শুধু সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে খরচ হবে। একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী সড়কে নির্দিষ্ট দূরত্বে বিশ্রামাগার নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে যাত্রী, চালক, চালকের সহকারী সেখানে বিশ্রাম নিতে পারেন।

চট্টগ্রাম বন্দরে বাড়ছে কনটেইনার পরিবহন

করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় চলতি বছরের প্রথম থেকেই কনটেইনার পরিবহন বাড়তে শুরু করেছে। জানুয়ারি মাসে বন্দর দিয়ে ২ লাখ ৪৩ হাজার কনটেইনার পরিবহন হয়েছে, যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে কনটেইনার পরিবহনে এখনো স্বাভাবিক সময়ের মতো প্রবৃদ্ধি হয়নি। গত বছরের এপ্রিলে করোনার কারণে কনটেইনার পরিবহনে বিপর্যয় দেখা দেয়। ১৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কমসংখ্যক কনটেইনার পরিবহন হয় ওই মাসে। সাধারণ ছুটিতে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ায় এই বিপর্যয় ঘটেছিল। এরপর কিছুটা বাড়লেও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তা ছিল কম। ফলে বছর শেষে দেখা যায়, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে কনটেইনার পরিবহন সাড়ে ১০ শতাংশ কমেছে। বন্দরের ইতিহাসে কনটেইনার পরিবহন কমে যাওয়ার এটি দ্বিতীয় ঘটনা।

বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, গত জানুয়ারি মাসে বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যবাহী ১ লাখ ২৩ হাজার এবং রপ্তানি পণ্যবাহী ও খালি ১ লাখ ২০ হাজার কনটেইনার পরিবহন হয়েছে। গত ১৩ মাসে এর চেয়ে বেশি কনটেইনার পরিবহন হয়েছে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। ওই মাসে ২ লাখ ৬৬ হাজার একক কনটেইনার পরিবহন করা হয়।

চট্টগ্রামের সাথে করাচি বন্দরের যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্ব

বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সাথে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এ সময় হাইকমিশনার বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্ভাবনাময় হলেও আশানুরূপ নয়। এক্ষেত্রে উন্নতির সুযোগ রয়েছে। উভয় দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে আরও বেশি সম্পর্কোন্নয়নের জন্য একটি কমন প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।’

তিনি পাকিস্তানে বাংলাদেশি পণ্যের এবং বাংলাদেশে পাকিস্তানি পণ্যের একক প্রদর্শনীর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন এবং প্রচলিত পণ্যের বাইরে নতুন পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানান। তাঁর মতে ফার্মাসিউটিক্যালস, টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতে পাকিস্তানি কাঁচামাল ব্যবহার করে ফিনিশড প্রডাক্ট তৈরির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। এছাড়া চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি) ব্যবহার করে সমুদ্রপথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য পরিচালনা করা হলে তা সময় ও ব্যয়সাশ্রয়ী হবে। তিনি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সফর বিনিময়, পর্যটন প্রসারে ট্যুর প্রোগ্রাম আয়োজন এবং সংশ্লিষ্ট ভিসা সহজীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘পাকিস্তানে গড় ট্যারিফ বাংলাদেশ থেকে কম হলেও উচ্চ শুল্কের কারণে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে কোটা ও সংখ্যার সীমাবদ্ধতা, স্বাস্থ্য ও মানগত বাধ্যবাধকতা এবং পাকিস্তান সরকারি এজেন্সি কর্তৃক একচ্ছত্রভাবে আমদানি অন্যতম বাধা।’

পোর্ট অব কলে সংযুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারতের আরও চার বন্দর

দ্বিপক্ষীয় উপকূলীয় বাণিজ্য জোরদারের উদ্দেশ্যে ভারত ও বাংলাদেশ নৌপথে আরো চারটি বন্দর যুক্ত করার জন্য আলোচনা চলছে। প্রস্তাবিত বন্দরগুলো হলো বাংলাদেশের মাতারবাড়ী ও মুক্তারপুর বন্দর (মুন্সিগঞ্জ), ভারতের ওড়িশা ও কামারাজার বন্দর (চেন্নাই)। বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় কোস্টাল শিপিং চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, মোংলা, খুলনা, পায়রা, নারায়ণগঞ্জ, পানগাঁও ও আশুগঞ্জ বন্দরের সাথে নৌপথে সরাসরি সংযুক্ত রয়েছে ভারতের চেন্নাই, কৃষ্ণপট্টম, কাকিনাড়া, বিশাখাপত্তনম, পারাদীপ, হলদিয়া এবং কলকাতা বন্দর। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারত এখন শিপিং চুক্তির স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রটোকল (এসওপি) সংশোধন নিয়ে কাজ করছে। এসওপিতে সংশোধনীর পরে নতুন চারটি বন্দরকে পোর্ট অব কলে যুক্ত করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।

নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, উভয় দেশের দুটি করে বন্দর অন্তর্ভুক্ত করার এই প্রস্তাবটি ভারতের পক্ষ থেকে এসেছে। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের মতো মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দরেও কোস্টাল শিপিংয়ের অংশ হিসেবে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি উপকূলীয় নৌযান পরিচালনা করার ব্যবস্থা থাকবে। এ কারণে আমরা উপকূলীয় পোর্ট অব কল হিসেবে মাতারবাড়ীকে যুক্ত করছি।’ ওদিকে মুক্তারপুরে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালেরও আমদানি-রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং ও পরিচালনা করার সক্ষমতা রয়েছে।

জিডিপিতে সড়ক ও নৌপরিবহনের অবদান ৮ শতাংশ

দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপিতে) সড়ক ও নৌপরিবহন খাতের অবদান ৮ শতাংশ বা এক লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পৃথকভাবে দেখলে সড়ক পরিবহন খাতের অবদান ১ লাখ ৭৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, আর নৌপরিবহনের অবদান ১৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মিলনায়তনে বেসরকারি বাণিজ্যিক যান্ত্রিক এবং অযান্ত্রিক সড়ক ও নৌযান জরিপ ২০১৯ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা জানানো হয়। মডার্নাইজেশন অব ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস স্ট্যাটিস্টিকস প্রকল্পের আওতায় জরিপটি পরিচালনা করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। অনুষ্ঠানে জরিপ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক তোফায়েল আহমেদ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহনের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক তাজুল ইসলাম।

জরিপে বলা হয়, যানবাহনের মোট সংখ্যা ২৬ লাখ ৫৯ হাজার ২৫৭টি। এর মধ্যে যাত্রীবাহী পরিবহনের সংখ্যা ২৪ লাখ ২২ হাজার ১২৯টি। এর মধ্যে যান্ত্রিক যানবাহনের সংখ্যা ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৮৯৪টি।

মালবাহী পরিবহনের সংখ্যা ২ লাখ ৩৭ হাজার ১২৯টি। এর মধ্যে আবার যান্ত্রিক পরিবহনের সংখ্যা এক লাখ ৯৪ হাজার ৩১৮টি। অযান্ত্রিক পরিবহনের সংখ্যা ৬ লাখ ৪৩ হাজার ২৩৪টি। ওইসব যানবাহনে কর্মরত জনবলের সংখ্যা ৩১ লাখ ৭৮ হাজার। এর মধ্যে চালকের সংখ্যা ২৭ লাখ ৬ হাজার, হেলপার ক্লিনারের সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার, সুপারভাইজার-কন্ডাক্টর ৫৭ হাজার এবং দৈনিক বেতন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মী ৩২ হাজার। নৌপরিবহনের সংখ্যা ২ লাখ ৬২ হাজার ২০৪টি। এর মধ্যে যাত্রীবাহী পরিবহনের সংখ্যা ১ লাখ ৭৪ হাজার ২৭৬, যান্ত্রিক পরিবহন ৬৬ হাজার ৭৮৪, অযান্ত্রিক পরিবহন ১ লাখ ৭ হাজার ৪৯২, মালবাহী পরিবহন ৮৭ হাজার ৯২৮, যান্ত্রিক পরিবহন ৮৩ হাজার ৫৬২ এবং অযান্ত্রিক পরিবহনের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৬৬টি।

‘বঙ্গবন্ধু সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়ে গেছেন’-ড. গওহর রিজভী

প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমুদ্র সীমা বিজয় এবং সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়ে গেছেন। তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাত্র চার বছরের প্রচেষ্টায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সীমানা বিরোধ মিটিয়ে বঙ্গোপসাগরে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দেশের একচ্ছত্র মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেছেন।’

৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও সুনীল অর্থনীতি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

গওহর রিজভী বলেন, ‘টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মডেল হিসেবে সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা বাস্তবায়নে জাতির সবটুকু সামর্থ্য নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সে জন্য তিনি অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের সূচনা ঘটিয়েছেন। এই উদ্যোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগালে আমরা দারিদ্র্য দূর করতে পারব।’

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশকে যা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, সেটুকুও ধরে রাখা হয়নি। উল্টো পথে চলেছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর সময়ে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ১৯টি জাহাজ নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেখান থেকে ২০১০ সালে সংস্থাটিতে জাহাজের সংখ্যা দুটিতে পৌঁছে। অথচ জাহাজ হওয়ার কথা ছিল কয়েক শ। উল্টো পথে চলেছে বলেই শিপিং করপোরেশন মৃত-প্রায় হয়ে গিয়েছিল। এভাবে দেশের মানুষকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল।’’

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) মো. খুরশিদ আলম।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহানের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. জাফর আলম, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ওশেনোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কাউসার আহম্মেদ এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর আবু জাফর মো. জালাল উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত সংকলন ‘সোনার বাংলায় সুনীল স্বপ্ন’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।