Home Blog Page 237

মহামারির মধ্যেও স্বাভাবিক সুয়েজ খালে পণ্য পরিবহন

সদ্যবিদায়ী বছরে সুয়েজ খাল দিয়ে পণ্য পরিবহনের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে সুয়েজ ক্যানেল অথরিটি। করোনাভাইরাসসৃষ্ট মহামারির বৈশ্বিক প্রকোপ সত্ত্বেও এ খাল দিয়ে পণ্য পরিবহন অব্যাহত রাখতে পারার কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ তাদের সংকট মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা ও জোরালো বিপণন কার্যক্রমকে সামনে এনেছে।

সুয়েজ ক্যানেল অথরিটি ২০২০ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বার্ষিক টনেজ অর্জনে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি খালটির ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রাজস্বও আহরণ করেছে। গত বছরের মাঝামাঝি মহামারির কারণে বিশ্বের শিপিং শিল্প সুয়েজ খাল এড়িয়ে যেতে শুরু করে। এছাড়া ক্রুজ শিল্পের বেহালের কারণে বড় অংকের রাজস্বও হারায় সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি বছরটিতে কার ক্যারিয়ারের ট্রানজিট কমে ৬০ শতাংশ। এতসব সংকটের পরও ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয় তারা। ২০২০ সালে এ খাল অতিক্রম করে ১৮ হাজার ৮২৯টি জাহাজ আর পণ্য পরিবহন হয় ১১৭ কোটি টন।

বিপজ্জনক পদার্থের রিমোট সার্ভের অনুমোদন মার্শাল আইল্যান্ডসের

রিপাবলিক অব মার্শাল আইল্যান্ডস (আরএমআই) তাদের পতাকাবাহী জাহাজে পরিবাহিত বিপজ্জনক পদার্থের মজুদ (আইএইচএম) পর্যবেক্ষণে রিমোট সার্ভে অর্থাৎ জাহাজে অবস্থানরত নাবিকদের মাধ্যমেই জরিপের অনুমোদন দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিমালা অনুসরণ করে এ জরিপ পরিচালনার অনুমোদন দিতে দেশটির মেরিটাইম কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এক সার্কুলার জারি করেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিধিনিষেধ থাকায় আইএইচএম বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা সম্ভব না হওয়ার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, আইএইচএম বিশেষায়িত কোম্পানির দূরবর্তী নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে জাহাজে অবস্থানরত নাবিকদের মাধ্যমেই বিপজ্জনক পদার্থের স্যাম্পলিংয়ের কাজটি সম্পাদন করতে হবে। তবে নাবিকদের যেন এ বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ থাকে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নাবিকদের নিরাপত্তার দিকটিতেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে।

চলতি বছরও বাড়বে খুচরা আমদানির আকার

বিদায়ী বছরের দ্বিতীয়ার্ধে কনটেইনার ট্রাফিক ও বন্দর কার্যক্রম বৃদ্ধিতে অন্যতম ভূমিকা রেখেছিল খুচরা আমদানি। ন্যাশনাল রিটেল ফেডারেশন অ্যান্ড হ্যাকেট অ্যাসোসিয়েটসের নতুন তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধেও এটা অব্যাহত থাকবে। সংগঠনটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ২০২০ সালে খুচরা আমদানি নতুন এক রেকর্ড গড়বে।

মাসিক গ্লোবাল পোর্ট ট্রাকার প্রতিবেদনে সংগঠনটি জানিয়েছে, সদ্যবিদায়ী বছরের দ্বিতীয়ার্ধে আমদানিতে নতুন রেকর্ড হয়েছে। জুলাই-ডিসেম্বরের ‘পিক সিজনে’ আমদানি সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছে দাঁড়িয়েছে ৮৩ লাখ টিইইউ। ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরো বছরের হিসাব চূড়ান্ত হলে তা ২ কোটি ১৯ লাখ টিইইউয়ে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি হবে দেড় শতাংশ, যা ২০১৮ সালের রেকর্ড ২ কোটি ১৮ লাখ টিইইউর বেশি। সংগঠনটির পর্যবেক্ষণ বলছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাস পর্যন্ত আমদানিতে এ ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকবে। 

বিকল্প জ্বালানির কার্যকারিতা পরীক্ষায় এমএসসি

সম্পূর্ণ নতুন, কার্যকর ও পরিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর জ্বালানি অন্বেষণে কাজ করছে এমএসসি শিপ ম্যানেজমেন্ট। তাদের চলমান উদ্যোগে যুক্ত রয়েছে কোয়াডরাইজ। প্রতিষ্ঠানটি উন্নয়ন করেছে ইমালসিফায়েড সিনথেটিক ভারী জ্বালানি তেল। প্রতিষ্ঠান দুটি এক যৌথ উন্নয়ন অংশীদারিত্বের অধীনে চলতি বছর কনটেইনার জহাজে নতুন উদ্ভাবিত এ জ্বালানির পরীক্ষা শুরু করতে যাচ্ছে।

বিদ্যমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোয়াডরাইজ মাল্টিফেজ সুপারফাইন অ্যাটোমাইজড রেসিড্যু (এমএসএআর) উন্নয়ন করেছে, যা মেরিন বাংকারের জন্য ইমালসিফায়েড সিনথেটিক ভারী জ্বালানি তেল হিসেবে কাজ করবে। কোয়াডরাইজের দাবি, তাদের উদ্ভাবিত বাংকার জ¦ালানি প্রথাগত ভারী জ্বালানি তেলের তুলনায় ২০ শতাংশ কম কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন করবে।

২০৪০ নাগাদ এলএনজির উৎপাদন ৭৯% বাড়তে পারে

অনুসন্ধান ও উৎপাদন কার্যক্রম কমে যাওয়ার কারণে ২০২০ সালে বৈশ্বিক প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। দাম কম থাকার কারণে লকডাউনের সময়েও গ্যাসের চাহিদা তেলের মতো ততটা কমেনি। উপরন্তু বৈশ্বিক ভাবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি বেড়েছে ৩ শতাংশ। চীনে উচ্চ চাহিদার কারণে এশিয়ায় বছরভিত্তিতে এলএনজির চাহিদায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশ।

রিস্টাডের প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০৪০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ২৪ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদা ওই সময় পর্যন্ত বাড়বে ২৬ শতাংশ। আর বৈশ্বিক এলএনজির উৎপাদন ২০৪০ নাগাদ বাড়বে ৭৯ শতাংশ।

সমুদ্রতলে তেলের পরিবর্তে মেটালে চোখ নরওয়ের

সঞ্চিত তেল ও গ্যাসের কারণে নরওয়ে বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী দেশ। তবে দেশটির নজর এখন গভীর সমুদ্রের তলদেশে সঞ্চিত তামা, জিংক ও অন্যান্য ধাতুতে। সবুজ প্রযুক্তিতে খুবই চাহিদাসম্পন্ন এসব ধাতু আহরণে দেশটি এখন নেতৃস্থানীয় ভূমিকা নিতে আগ্রহী।

২০২৩ সালের মধ্যেই নরওয়ে গভীর সমুদ্রে মাইনিংয়ে আগ্রহী কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স প্রদান করতে পারে। এজন্য পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষার কাজটি খুব শিগগিরই শুরু করতে যাচ্ছে দেশটি। সমুদ্রের তলদেশে থাকা এ ধাতুগুলো ইলেকট্রিক যানের ব্যাটারি, বায়ুবিদ্যুতের টারবাইন ও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে লাগে।

নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকদের ধারণা অনুযায়ী, দেশটির মহীসোপানে ২ কোটি ১৭ লাখ টন তামা এবং ২ কোটি ২৭ লাখ টন জিংক সঞ্চিত থাকতে পারে।

সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ পরিচ্ছন্নে মায়েস্কের অংশীদারিত্ব

বিশ্বের বিস্তীর্ণ সমুদ্রগুলোকে প্লাস্টিকের দূষণ থেকে রক্ষা করতে মায়েস্কে এবং ডাচ অলাভজনক সংস্থা দ্য ওশান ক্লিনআপ জোটবদ্ধ হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ওশান ক্লিনআপের লক্ষ্য হচ্ছে, সমুদ্র থেকে প্লাস্টিকের দূষণ পরিচ্ছন্নে উন্নত প্রযুক্তির উন্নয়ন ও নদীবাহিত প্লাস্টিকের প্রবাহ রোধ করা।

কয়েক বছর ধরে ওশান ক্লিনআপ সমুদ্রে ভেসে থাকা প্লাস্টিকের স্তূপ সরিয়ে ফেলতে বড় আকারে প্রযুক্তি নিয়োজনের পদ্ধতি উন্নয়নে কাজ করছে। ২০১৮ সালে এ উদ্যোগে সহায়তা করতে যুক্ত হয় মায়েস্কের সাপ্লাই সার্ভিস। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া উপকূল থেকে ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে সমুদ্রে ভেসে থাকা সবচেয়ে বড় প্লাস্টিকের স্তূপ সরিয়ে ফেলতে জাহাজ মোতায়েন করে ওশান ক্লিনআপ, যা গ্রেট প্যাসিফিক গার্বেজ প্যাচ নামে পরিচিত।

বাল্টিক ড্রাই ইনডেক্স বেড়েছে ১০%

চীনে কয়লার চাহিদায় ঊর্ধ্বগতির কারণে বাল্টিক এক্সচেঞ্জের প্রধান সি ফ্রেইট ইনডেক্স প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে তিন মাসের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে।

ক্যাপসাইজ, প্যানাম্যাক্স এবং সুপ্রাম্যাক্স ভেসেলগুলোর ভাড়ার হার অনুসরণ করে বাল্টিক ড্রাই ইনডেক্স। জানুয়ারিতে এ সূচক ১৫৫ পয়েন্ট বা ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৬১ পয়েন্টে, যা গত বছরের মধ্য-অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ক্যাপসাইজ ইনডেক্সে যুক্ত হয়েছে ৪০৭ পয়েন্ট। এছাড়া প্যানাম্যাক্স ও সুপ্রাম্যাক্স ইনডেক্সে যুক্ত হয়েছে যথাক্রমে ৬১ ও ১০ পয়েন্ট।

রেকর্ড শীতল আবহাওয়ার কারণে চীনে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে যথেষ্ট। এছাড়া ব্রাজিল থেকে লৌহ আহরিক আমদানিও বাড়িয়েছে দেশটি। উভয় পরিস্থিতি বাল্টিক ড্রাই ইনডেক্স বাড়াতে অবদান রেখেছে।

ইতালিতে আবারো শুরু হচ্ছে ক্রুজ সেবা

ছুটির মৌসুমে ক্রুজ সেবা বন্ধ রাখার সরকারি অনুরোধে সাড়া দেয়ার পর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ইতালিতে এ সেবা পুনরায় শুরুর ঘোষণা দিয়েছে এমএসসি ও কোস্টা ক্রুজেস। গ্রান্দিয়োসা জাহাজ দিয়েই ক্রুজ সেবা চালু করছে এমএসসি। মার্চের শেষ দিক পর্যন্ত জেনোয়া থেকে সাপ্তাহিক এ সেবা চালু থাকবে। যাত্রাবিরতি থাকবে সিভিটাভেক্কিয়া, নেপলস, পালেরমো এবং মাল্টায়। ইতালির যেকোনো বন্দর থেকে যাত্রীরা করোনাভাইরাস পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ নিয়ে জাহাজে উঠতে পারবেন। এমএসসির মতো কোস্টা ক্রুজেসও জানুয়ারি থেকে বেশ কয়েকটি ক্রুজ সেবা চালু করছে।

এদিকে উত্তর আমেরিকা পরিভ্রমণকারী ক্রুজ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কবে নাগাদ সেবাগুলো চালু করবে তা এখনো নির্দিষ্ট করে জানায়নি।

মেরিটাইম ডিজিটালাইজেশনে গুরুত্ব আইএপিএইচ ও বিশ্বব্যাংকের

বৈশ্বিক মেরিটাইম শিল্পে ডিজিটালাইজেশন আরো ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব পোর্টস অ্যান্ড হার্বারস (আইএপিএইচ)। ডিজিটালাইজেশনের ওপর নতুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে সংস্থা দুটি জানিয়েছে, মেরিটাইম খাতে ডিজিটালাইজেশন বহুমুখী অর্থনৈতিক সুফল নিয়ে আসবে এবং আরো শক্তিশালী ও টেকসই পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে। পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে দেশগুলোর অংশগ্রহণ পুরোপুরি নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে।

ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াকে আরো ত্বরান্বিত করতে বন্দর ও মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট কমিউনিটিকে সহায়তা করতে সংস্থা দুটি তাদের নতুন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সুফল তুলে ধরার পাশাপাশি ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া যে মানব সংশ্লিষ্টতা কমাতে ভূমিকা রাখবে সেটাও উপস্থাপন করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসসৃষ্ট মহামারির মধ্যে ডিজিটালাইজেশনের এ ভূমিকা বর্তমানে আরো অর্থবহ হয়ে উঠেছে।