Home Blog Page 240

এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণে ৩ জাপানি কোম্পানির বিনিয়োগ প্রস্তাব

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে ডেডিকেটেড এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণে তিনটি জাপানি কোম্পানি বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবগুলো মূল্যায়নে নির্ধারিত কোনো মাপকাঠি না থাকায় এ সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বিপিসি কিংবা জ্বালানি বিভাগ। বিনিয়োগে আগ্রহী জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মিৎসুই অ্যান্ড কোং লিমিটেডের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম, মারুবেনি কর্পোরেশন এবং সুমিতোমো কর্পোরেশন।

জ্বালানি বিভাগের তথ্যমতে, ইতিমধ্যে তিনটি প্রস্তাবই গৃহীত হয়েছে। মতামত বা সুপারিশ না করে সিদ্ধান্তের জন্য প্রস্তাবগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ফাইল ফেরত পাঠিয়ে তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ করে সুস্পষ্ট রিপোর্ট প্রদান করতে বলেছে।

দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর মাতারবাড়ীর বহুমুখী ব্যবহারের সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এখানে গড়ে তোলা হবে তিনটি পৃথক টার্মিনাল। এগুলো হলো কয়লা আমদানির জন্য কয়লা টার্মিনাল, এলএনজি আমদানির জন্য এলএনজি টার্মিনাল এবং এলপিজি আমদানির জন্য এলপিজি টার্মিনাল।

জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং এর টার্মিনালগুলো নির্মিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর জাপান গেলে দেশটির সরকার এসব প্রকল্পে অতিরিক্ত ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়। পাশাপাশি এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি আদায় করে যে, প্রকল্পগুলো জাপানি কোম্পানির বিনিয়োগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশ সরকার পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয় জ্বালানি বিভাগের অধীন রাষ্ট্রীয় তেল আমদানিকারক সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছুদিন আগে জাপানি কোম্পানি মিৎসুইয়ের নেতৃত্বে একটি কনসোর্টিয়াম বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি বিনিয়োগ প্রস্তাব দেয়।

মিৎসুই অ্যান্ড কোং লিমিটেডের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম বিল্ড ওউন অপারেট (বিওইউ) ভিত্তিতে এলপিজি টার্মিনাল গড়ে তুলবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করে। এই কনসোর্টিয়ামে যুক্ত করা হয় এসকে গ্যাস নামে একটি কোরিয়ান কোম্পানিকে। সেই সাথে স্থানীয় অংশীদার হিসেবে যুক্ত করা হয় ইস্ট কোস্ট গ্রুপকে। এছাড়াও সম্প্রতি জাপানের আরেকটি সংস্থা মারুবেনি কর্পোরেশন যুক্ত হয় এই প্রকল্পে। তারা ভিটল নামে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক একটি কোম্পানিকে সাথে নিয়ে বিনিয়োগ প্রস্তাব পেশ করে। আরেক জাপানি কোম্পানি সুমিতোমো কর্পোরেশনও এ প্রকল্প বাস্তবায়নের আগ্রহ প্রকাশ করে সরকারের কাছে বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা দেয়।

চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণে সহযোগিতায় আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর সম্প্রসারণে সহযোগিতা করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জো অ্যান ওয়াগনার ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সফর করেন। এ সফরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ আগ্রহের কথা জানান।

ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে জোরালো অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রতি সমর্থন জানাতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত চট্টগ্রাম সফর করেন। ওয়াগনার চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণের সুযোগ ও লিঙ্গবৈষম্য নিরসন বিষয়ে সফল ব্যবসা পরিচালনাকারী নারী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ওয়াগনার চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের রপ্তানি অর্থনীতিতে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্র চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন পরিকল্পনায় আগ্রহী।’’

তিনি বলেন, ‘‘সম্ভাব্যতা যাচাই জরিপ, কারিগরি সহায়তা ও পরীক্ষামূলক প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো উচ্চ প্রবৃদ্ধিশালী বিকাশমান বাজারে অবকাঠামো প্রকল্পে সহায়তা দিতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি।’’

ভাইরাসের কারণে পিছিয়েছে বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড সংস্কার উদ্যোগ

বাংলাদেশে পুরনো জাহাজ ভাঙার ইয়ার্ডগুলো শ্রমিকদের জন্য আরো নিরাপদ করে তোলার উদ্যোগ করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আরো পিছিয়ে গেছে। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এ ইয়ার্ডগুলো বর্তমানে সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। ফলে ২০২৩ সালের মধ্যে এগুলো সংস্কারের যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা পূরণ না-ও হতে পারে।

বিশে^র পুরনো অধিকাংশ জাহাজের শেষ ঠিকানা বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড। শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সক্রিয় ৭০টি ইয়ার্ডের সবগুলোই ‘শিপ রিসাইক্লিং ফ্যাসিলিটি প্ল্যানস’ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডগুলো কীভাবে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে পরিচালিত হবে, সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য এ পরিকল্পনায় উল্লেখ রয়েছে। সংস্কার উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য-এ শিল্পকে নিরাপদ করতে বৈশ্বিক সন্ধিতে যুক্ত হতে বাংলাদেশ যে প্রস্তুত তা তুলে ধরা।

তবে পিএইচপি শিপব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ হচ্ছে একমাত্র ইয়ার্ড, যারা এ সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সংস্কার পরিচালনা বাস্তবায়নে যে নিরাপত্তা মানদ- অনুসরণ করতে হয় তা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। আমরা অবকাঠামো ও প্রশিক্ষণে এরই মধ্যে ৭০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছি। সংস্কার পদক্ষেপের কারণে আমাদের ইয়ার্ডে ঝুঁকি এখন শূন্যে নেমে এসেছে।’

তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কয়েক মাস ধরে ইয়ার্ডগুলো বন্ধ রয়েছে। ফলে লোকসানের মুখোমুখি হয়েছে তারা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইয়ার্ডগুলোয় যতটা অগ্রগতি হয়েছিল, ভাইরাসের কারণে পুনরায় পিছিয়ে যাওয়ায় তা প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী যে ৬৭০টি জাহাজ ভাঙা হয়েছিল, তার এক-তৃতীয়াংশ ভাঙা হয় বাংলাদেশে।

ভুটানের সঙ্গে পিটিএ সই

স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় অর্জনের ১০ দিন আগে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ভুটান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এই বিশেষ দিনটিতেই ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সই করল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রেও প্রথম দেশ হলো আমাদের ঐতিহাসিক মিত্র এই দেশটি। সংগত কারণেই পিটিএ চুক্তি স্বাক্ষর এবং দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্যাপন অনুষ্ঠানটিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো একটি ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোতে শেরিং অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এই বাণিজ্য চুক্তি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আগামী ৫০ বছর আমাদের অঞ্চলের বাসিন্দাদের টেকসই উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির সাক্ষী হবে।’’ তিনি এ সময় ঘোষণা দেন, বাংলাদেশের তিনটি বন্দর চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা ভুটানের জন্য উন্মুক্ত এবং তারা এগুলো ব্যবহার করতে পারবে। তিনি বলেন, ‘‘এটি (পিটিএ) বাস্তবায়নের জন্য দুই দেশের মধ্যে ট্রানজিট চুক্তির কথা চলছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে ট্রানজিট চুক্তি সম্পাদিত হবে।’’

পিটিএ স্বাক্ষরের চারদিন পর ১০ ডিসেম্বর ভুটানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ কে এম শহীদুল করিম বলেন, ‘‘ট্রানজিট চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং এখন এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রটোকল নিয়ে আলোচনা চলছে।’’

এই চুক্তির অধীনে বাংলাদেশের স্থলবন্দর যেমন বুড়িমারি থেকে ভুটানের ফুলসিলিং পর্যন্ত, বা অন্য যেকোনো বন্দর থেকে বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের ট্রাকে পণ্য পরিবহন হবে বলে তিনি জানান।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ট্রাক ভুটান সীমান্ত পর্যন্ত যেতে পারবে এবং ভুটানের ট্রাক বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত আসতে পারবে। সীমান্তে পৌঁছানোর পর ট্রান্সশিপমেন্ট হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ-ভারত-নেপালের মধ্যে বিআইএন মোটরভহিকল চুক্তি আছে। এই চুক্তির অধীনে বাংলাদেশের ট্রাক ভারতে চলাচল করতে পারবে। আবার ভুটান ও ভারতের মধ্যে মোটরযান চলাচল চুক্তি রয়েছে, যার অধীনে ভুটানের ট্রাক ভারতে চলাচল করতে পারবে।’’

আরো ২৬টি জাহাজ কিনবে বিএসসি

কয়লা, তেল, গ্যাস ও কনটেইনার পরিবহনের জন্য নতুন ২৬টি জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)। এসব জাহাজ ক্রয়ে ইতিমধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএসসির ব্যবস্থাপনা (এমডি) পরিচালক কমডোর সুমন মাহমুদ সাব্বির।

সুমন মাহমুদ সাব্বির জানিয়েছেন, বর্তমানে বিএসসির বহরের আটটি জাহাজ রয়েছে। আমরা আরো ২৬টি জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জাহাজ ক্রয়ের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় কয়লা পরিবহনের জন্য দুটি মাদার বাল্ক, ১০টি বাল্ক ক্যারিয়ার, ক্রুড অয়েল পরিবহনের জন্য দুটি মাদার ট্যাংকার, ডিজেল ও জেট ফুয়েল পরিবহনের জন্য দুটি মাদার প্রডাক্ট অয়েল ট্যাংকার, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পরিবহনের জন্য ছয়টি জাহাজ, কনটেইনার পরিবহনের জন্য চারটি জাহাজ ক্রয় করা হবে।

১৫ ডিসেম্বর দুপুরে বিএসসি ভবনে অনুষ্ঠিত ৪৩তম বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি এসব তথ্য জানান। সভায় তিনি আরো জানান, বিএসসি গত অর্থবছরে ৪১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা নিট লাভ করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিএসসির পরিচালন আয় ছিল ২৭৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অন্যান্য খাত থেকে আয় ৪২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। সর্বমোট ব্যয় হয়েছে ২৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

সভায় রেকর্ড ডেট ও নিরীক্ষিত আরপিও প্রতিবেদন অনুমোদন, শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুনাফা বোনাস প্রদান প্রভৃতি বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। এছাড়া শেয়ারহোল্ডারদের ২০১৯-২০ অর্থবছরে জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় বিএসসির পরিচালক (অর্থ) শফিউল আলম, পরিচালক (বাণিজ্য) পীযুষ দত্ত, পরিচালক (টেকনিক্যাল) ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ইউসুফ, সচিব খালেদ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবে চট্টগ্রাম

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশ বৃহত্তর অর্থনীতির দেশ হিসেবে উদিত হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। চট্টগ্রাম হবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসহ আঞ্চলিক প্রবেশদ্বার।’’ ২১ শে ডিসেম্বর নগরের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালকম-লী, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘‘চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসহ এমনকি ভুটান, নেপালও উপকৃত হতে পারে। লজিস্টিকস, বন্দর, অবকাঠামো, যোগাযোগ ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ী ও নির্বাহীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি খাতে মূল্য সংযোজনের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া কনস্ট্রাকশন ইকুইপমেন্ট, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট, ফার্মাসিউটিক্যালস ও এপিআই পার্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগ কার্যকর হবে। চট্টগ্রামে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা, বে-টার্মিনালে অর্থায়নসহ অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতের আগ্রহ রয়েছে।’’

এ সময় তিনি সীমান্তে আইসিডি, ওয়্যারহাউস নির্মাণ, রেললাইন উন্নয়ন ও স্থলবন্দরের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে উভয় দেশের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ১০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, হাইকমিশনার ও ব্যবসায়ী নেতাদের সমন্বয়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দেন।

একই দিন তিনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) ২ ও ৩ নম্বর জেটি পরিদর্শন করেন।

চট্টগ্রাম বন্দরকে বিশ্বের সেরা ৩০ বন্দরে আনার স্বপ্ন

কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে বর্তমানে বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের স্থান ৫৮তম। সেটি ৩০তম স্থানে আনার স্বপ্নের কথা বলেছেন নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘‘আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরকে আপনারা অন্যরকম দেখবেন।’’

২০ ডিসেম্বর বন্দরের শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে বন্দর উপদেষ্টা কমিটির ১৪তম সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে তিনি একথা বলেন। নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিংয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) রিভাইস করা হচ্ছে। কর্ণফুলী ড্রেজিংয়ের ক্ষেত্রে যে ধরনের ইকুইপমেন্ট দরকার, সেগুলো আমরা সংগ্রহ করছি। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর চালু রাখতে গেলে আমাদের এই ড্রেজিংটা চালু রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ‘‘চট্টগ্রাম বন্দর এখন পূর্ণ সক্ষমতায় চালু আছে এবং দিন দিন এটি এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা ২০১৯ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ৬৪তম স্থানে ছিলাম। এই ২০২০ সালে ৫৮তম স্থানে এসেছি। আপনারা নিশ্চয় জানেন, চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন। বর্তমানে বন্দরের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী এবং মিরসরাই পর্যন্ত চলে গেছে। বে টার্মিনালের ব্যাপারেও আলোচনা চলছে। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) আমরা ২০২১ সালে চালু করতে যাচ্ছি।’’

এছাড়া সভায় বন্দরের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো বা অফডক সরানো, অফডকের বিভিন্ন সেবার বিল কমানো, বন্দরের নিলাম ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ধ্বংস কার্যক্রম জোরদার করা, যানজট, বন্দরের বিশেষায়িত হাসপাতাল, টোল রোড, বন্দরের স্টেকহোল্ডার ও বাণিজ্য সংগঠনের প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

একই দিন দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের ৪ নম্বর গেটের সামনে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার ভবনের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

খতিয়ান- জানুয়ারী, ২০২১

ছবিতে সংবাদ – জানুয়ারী

চট্টগ্রাম বন্দরের ৪নং গেটের পাশে ২০ ডিসেম্বর ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী। এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জো অ্যান ওয়াগনার ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তিনি বন্দর চেয়ারম্যানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং পরে বন্দরের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ বোর্ড সদস্যবৃন্দ।

১৮ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী ও বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করেন। 

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী ২১ ডিসেম্বর বন্দর চেয়ারম্যানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং পরে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম ঘুরে দেখেন।

মা হুয়ান

বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক জেং হি’র ভারত মহাসাগর অভিযাত্রায় সফরসঙ্গী চার প্রধান কর্মকর্তার মধ্যে একজন মা হুয়ান। ১৪০৫ থেকে ১৪৩৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জেং হি ভারত মহাসাগরে মোট সাতবার অভিযাত্রায় বের হন। ধারণা করা হয় মা হুয়ান ১৩৮০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বিখ্যাত ভ্রমণগ্রন্থ ইয়াংয়াই সেংলান প্রকাশিত হওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়।

জেং হির ১৪১৩-১৪১৫ খ্রিস্টাব্দের চতুর্থ অভিযাত্রায় মা হুয়ান তাঁর সফরসঙ্গী হন এবং প্রথমবারের মতো হরমুজ প্রণালি পৌঁছান। এরপর তিনি ১৪২১-২৩ সালের দিকে পরবর্তী সফরে যান। ১৪৩১-৩৩ সালে শেষ সফরে মক্কার উদ্দেশে বের হন। তিনটি অভিযানেই তিনি বাংলায় আসেন এবং এই দেশ সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ পান। ১৪১৬ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে তিনি ‘ইয়াংয়াই সেংলান’ বা ‘দ্য ওভারঅল সার্ভে অব স্যা ওশেনস শোর’ গ্রন্থের প্রথম খসড়া রচনা করেন। মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাস, লোকাচার, জীবনপ্রণালি জানতে হলে অত্যন্ত বিস্তারিত বর্ণনাশৈলীতে লিখিত মা হুয়ানের এই বই পড়া অতি আবশ্যক। বাংলার (বাং-গে-লা) ভূমিরূপ, ভ্রমণপথ এবং বিভিন্ন স্থানের দূরত্ব সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ যেমন তাঁর লেখায় উঠে এসেছে, তেমনি এখানকার বিভিন্ন বস্ত্রশিল্প, নানা রকমের মাদকদ্রব্য, শস্য, বিবাহ ও শেষকৃত্যানুষ্ঠান, ভাষা, পোশাক ও অলঙ্কার, মুদ্রা ব্যবস্থা, বাণিজ্য, রেশম শিল্প, নর্তকী ও বাঘশিকারিসহ বৈচিত্র্যময় বিষয়ও স্থান পেয়েছে।

মা হুয়ান ছিলেন নরম মনের মানুষ। তাই জাভার বিচার ব্যবস্থায় মৃত্যুদন্দের প্রকোপ দেখে তিনি হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। সে যুগে বাংলায় আগত পর্যটকদের মধ্যে তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে বহুকাল ধরে মা হুয়ানের বইকেই সর্বশ্রেষ্ঠ ধরা হয়।