বিচিত্র মৎস সম্পদের অফুরান ভাণ্ডার বঙ্গোপসাগর। সাগরের তলদেশে জমিনের নিচে খুঁড়লেও দেখা যাবে পাতালপুরিতে লুকিয়ে আছে অপরিমেয় খনিজ সম্পদের অশেষ পাহাড়। ভারত আর মায়ানমারের সঙ্গে সাম্প্রতিক সমুদ্রসংক্রান্ত বিবাদ নিষ্পত্তির সুবাদে, বলতে গেলে, অসীম সম্ভাবনার এক দরোজা খুলে গেছে আমাদের সামনে।
এই সমুদ্র আমার
আন্তর্জাতিক আদালতে নায্যতার ভিত্তিতে ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক এলাকা এবং তদূর্ধ্ব মহীসোপান এলাকায় মালিকানা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা যুক্ত হয়েছে আমাদের সমুদ্রসীমার সঙ্গে। অতএব এসব এলাকায় মৎস শিকার অথবা খনিজ সম্পদ আহরণ, কিংবা নতুন স্থাপনা অথবা গবেষণা পরিচালনা কোনো কিছুতেই এখন আর বাধা নেই কোনো।
গ্যাস ও তেলের মজুত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক গবেষণা সংস্থা ইউএসজিএস-এর মতে, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় অবস্থিত গ্যাসব্লক থেকে ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক আদালতে বিরোধ নিষ্পত্তির আগে আমাদের সমুদ্রসীমায় থাকা সত্ত্বেও প্রতিবেশির বাধার মুখে এসব ব্লকে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয়নি। পরে ভারতের দাবিকৃত ১০ টির মধ্যে ৮ টি এবং মায়ানমারের দাবিকৃত ১৮ টির মধ্যে ১৩ টি গ্যাসব্লক ফিরে পেয়েছি আমরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উৎপাদনশীলতা বাড়ছে দেশে, ফলে চাহিদাও বাড়ছে জ্বালানির। এই হারে চাহিদা বাড়ার কারণে শিগগিরই দেশে গ্যাসের সংকট দেখা দেবে। সমুদ্রে অর্জিত নতুন গ্যাস ব্লক এ সংকট মোচনে তখন ভূমিকা রাখতে পারবে।
পাতালপুরির রাজ্যবাসী
সমুদ্রের সম্পদ থাকে দুই ধরনের। প্রাণিজ এবং অপ্রাণিজ। প্রাণিজ সম্পদের মধ্যে পড়ে সকল প্রকার সমুদ্রচারী প্রাণী এবং উদ্ভিদ, যথা, মৎস, শামুক, ঝিনুক, কচ্ছপ, কাঁকড়া, কুমির, হাঙ্গর, ডলফিন, তিমি, প্রবালকীট এবং কেল্প বা সামুদ্রিক ঘাস ইত্যাদি। অপ্রাণিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে খনিজ, যা খনন করে উত্তোলন করা হয়, যেমন, চুনাপাথর, তেল, গ্যাস ইত্যাদি।
এ কী রত্নভাণ্ডার
বঙ্গোপসাগরে আমরা পেয়েছি ১৭ ধরনের খনিজ বালু। এর মধ্যে রয়েছে ইলমেনাইট, জিরকন, রুটাইল, ম্যাগনেটাইট, গ্যানেট, মোনাজাইট, কায়ানাইট ইত্যাদি। অত্যন্ত মূল্যবান এসব খনিজ বালু বিশ্ববাজারে প্রচুর দামে বিক্রি হয়ে থাকে। আমাদের সমুদ্রসীমা থেকে প্রায় ১০ লাখ টন জাতীয় খনিজ বালু আহরণ করা সম্ভব। সাগরের তলায় ডিপোজিট থেকে আহরণ করা সম্ভব খনিজ আকরিক। সেগুলো নিষ্কাশন করলে পাওয়া সম্ভব লেড, জিংক, কপার, কোবাল্ট এবং মলিবডেনামের মতো দুষ্প্রাপ্য ধাতু। মহামূল্যবান এসব ধাতু উড়োজাহাজ নির্মাণ এবং নানাবিধ উচ্চতর রাসায়নিক গবেষণাগারে ব্যবহৃত হয়।
অফুরান শক্তির আধার
তেল-গ্যাস একদিন ফুরিয়ে যাবে, কারণ এরা অনবায়নযোগ্য। কিন্তু অনিঃশেষ রয়ে যাবে গ্রিন এনার্জি বা, নবায়নযোগ্য শক্তি, যেমন, বায়ুশক্তি, সমুদ্রতরঙ্গ, সমুদ্রস্রোত ইত্যাদি। সাগরের বাতাস কাজে লাগিয়ে উইন্ড এনার্জি এবং তরঙ্গ কাজে লাগিয়ে ওয়েভ এনার্জি, জোয়ার-ভাটা কাজে লাগিয়ে টাইডাল এনার্জি তৈরি করা সম্ভব হবে। এই এনার্জি কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ অন্যান্য নানাবিধ উৎপাদনমুখী কাজে লাগানো যাবে। প্রতিবেশি ভারত তাদেও উইন্ড এনার্জি কাজে লাগিয়ে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে যা তাদেও মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ!
চট্টগ্রাম বন্দরের ক্রমবর্ধমান গতিশীলতা ধরে রাখতে চাইলে সর্বাগ্রে নিশ্চিত করতে হবে বন্দর ব্যবস্থাপনা এবং বন্দর ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সহযোগী এবং অংশীদার পক্ষের এই লক্ষ্যের সঙ্গে একাত্মতা এবং লক্ষ্য অর্জনের পথে সর্বাত্মক সহযোগিতা। বন্দরের নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর একসাথে পথ চলার এই প্রশংসনীয় মনোভাব নিয়ে কর্মতৎপর হয়েছেন রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল। আগামী দিনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় বন্দরের সম্প্রসারণ এক অনিবার্য বাস্তবতা। কেননা, জাতীয় প্রবৃদ্ধির সমান্তরালে গতিশীল বন্দরের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ে এর সম্প্রসারণ, ক্ষমতায়ন আর বেড়ে ওঠার বিকল্প নেই কোনো।
এসব প্রসঙ্গ ছাড়াও সরকারের রূপকল্প-২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ অর্জনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের ত্রিশ বছরের কৌশলগত মহাপরিকল্পনার আলোকে বন্দরের আধুনিকায়নে নানাবিধ কর্মকা- ও পরিকল্পনার কথা সবিস্তারে উঠে এসেছে বন্দরবার্তা’র সঙ্গে তার এই একান্ত সাক্ষাতকারে-
বন্দরবার্তা: বড় ধরনের পরিবর্তনের কাল পার হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। সর্বস্তরে ডিজিটাইজেশন এবং কনটেইনার ওঠানামার সাম্প্রতিক সাফল্যে প্রতিফলিত রয়েছে তার গতিশীলতা। আগামীতে একে কোথায় নিয়ে যেতে চান? আরও নির্দিষ্ট করে, বিশেষতঃ আগামী পাঁচ বছরের জন্য বন্দর ঘিরে কী ধরনের নতুন সংযোজন এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে আপনার?
চেয়ারম্যান: একটি প্রতিযোগিতার মধ্যে কিন্তু সারাক্ষণই অবস্থান করছে চট্টগ্রাম বন্দর। একদিকে প্রতিদিনের আমদানি-রফতানির চাপ সামাল দিচ্ছে দেশের ভিতর। প্রবৃদ্ধি অর্জনে অবদান রাখছে। অন্যদিকে টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে উন্নয়নশীল অন্যান্য বন্দরের সঙ্গে। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের মুখ্য বন্দর। এর প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সমুদ্রবাহিত আমদানি-রফতানি পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে আবশ্যক অবকাঠামো সুবিধা ও দক্ষ সেবা প্রদান করা। গত শতকের আশির দশকে উদারীকরণ নীতির কারণে বৈশ্বিক বিনিময় এবং সেবাপ্রদানের পরিধি বেড়ে গেছে দারুণভাবে। উন্নয়নশীল দেশগুলো নিজেদের ম্যানুফ্যাকচারিং অবকাঠামো আরও বড় করতে চাচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গ্লোবাল লিংকেজ বাড়ানোর মাধ্যমে চাইছে অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করে তুলতে। প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ছে সর্বক্ষেত্রে। স্বভাবতই চট্টগ্রাম বন্দরও চাইছে দ্রুততম সময়ে প্রতিযোগিতার প্রথম কাতারে অবস্থান করে নিতে।
এ ধরনের একটি বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে, এ মুহূর্তে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য মূলত চার থেকে পাঁচটি ফাস্ট-ট্র্যাক প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এগুলো হচ্ছে-
১. জেটির সংখ্যা বাড়ানো। নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি), কর্ণফুলি কনটেইনার টার্মিনাল (কেসিটি), লালদিয়া মাল্টিপারপাজ টার্মিনাল এবং বে টার্মিনালে নতুন সার্ভিস জেটি নির্মাণ। পাশাপাশি বিদ্যমান জেটিগুলোরও সংস্কার করা হচ্ছে।
২. ইয়ার্ড এলাকা সম্প্রসারণ। পিসিটি’তে একটি ওভারফ্লো ইয়ার্ড এবং কর্ণফুলি এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (ইপিজেড) একটি ইয়ার্ড নির্মাণ করছি আমরা। এছাড়া, আরও একটি অফডক ইয়ার্ড নির্মাণ করা হচ্ছে বে টার্মিনালে।
৩. বন্দরে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজন। যেমন, শিপ-টু-শোর (এসটিএস) গ্যান্ট্রি ক্রেন, রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি), স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার (এসসি), ফর্কলিফট ইত্যাদি। এছাড়া সার্ভিস ভেসেল, যেমন, হাইপাওয়ার টাগবোট, পাইলট বোট ইত্যাদি যুক্ত হচ্ছে বন্দরে।
৪. বন্দরে জলবায়ু ঝুঁকি নিরূপণে একটি গবেষণা পরিচালনা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।
৫. একটি গ্রিন পোর্ট হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে করণীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ।
বন্দরবার্তা: প্রতিবছরই চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর পরিবহন চাপ বাড়ছে। এটি সামাল দিতে বন্দর সম্প্রসারণে উদ্যোগী হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এই প্রথম ত্রিশ বছর মেয়াদী কৌশলগত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ণ করা হয়েছে চবক-এর নিজেদের উদ্যোগে। কৌশলগত মহাপরিকল্পনা অনুসারে বন্দর কার্যক্রমের দক্ষতা ত্বরিৎ বৃদ্ধির জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
চেয়ারম্যান: এতে কোনো সন্দেহ নেই দেশের বাণিজ্যলক্ষ্য অর্জন করতে হলে আমাদের মেরিটাইম গেটওয়ের দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে। আমদানিকারক, রফতানিকারক আর ক্যারিয়ারগুলোর চাহিদা মেটাতে আরও তৎপর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। ক্রমশঃ বেড়ে চলা জাতীয় প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ২০১৩ সালে ত্রিশ বছরের জন্য একটি কৌশলগত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ণ করে চট্টগ্রাম বন্দর। সারাবছর, দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা, বন্দর সচল রাখার লক্ষ্যে বিরাজমান সমস্যাগুলো চিহ্ণিত করা হয়েছে। এর মধ্যে যেগুলো অবিলম্বে নিরসন করতে হবে, সেগুলো হচ্ছে-
১. ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুসারে বন্দরের আধুনিকায়ন
২. দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং প্রণোদিত একটি কর্মীবাহিনী গড়ে তোলা ৩. জেটি এবং বার্থিং সুবিধার সম্প্রসারণ এবং জাহাজের টার্ন-অ্যারাউন্ড-টাইম কমিয়ে আনা
৪. নিরাপদ নৌচলাচলের জন্য চ্যানেলের সুগমতা বজায় রাখা
৫. কার্যকর ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কর্ণফুলির ড্রেনেজ সিস্টেম-এর উন্নয়ন। একই সাথে ৯.৫ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ যাতে সহজেই চ্যানেলে ঢুকতে পারে এবং জেটিতে সরাসরি ভিড়তে পারে তার জন্য বিদ্যমান সুবিধার প্রয়োজনীয় আধুনিকায়ন
৬. দেশের অভ্যন্তরীণ এলাকার সঙ্গে লিংকেজ বাড়ানো। রেল এবং সড়ক সংযোগের পাশাপাশি নৌযোগাযোগের সূচনা ঘটানো
৭. তথ্যপ্রযুক্তি প্রবর্তনের মাধ্যমে সকল স্তরে বন্দরের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা
৮. পরিবেশবান্ধব বন্দর পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ
বন্দরবার্তা: চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং চাহিদা তার সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ বিন্দুতে উপনীত হয়েছে। এ মুহূর্তে কীভাবে সামাল দিচ্ছেন? বিরাজমান সামর্থ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও কী ভাবছেন?
চেয়ারম্যান: পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং চাহিদা। যাকে সামাল দিতে হলে নতুন একটি টার্মিনাল দরকার এবং সেটিও অপারেশনাল স্তরে আসতে হবে ২০২৩ সালের আগেই। কর্তৃপক্ষের হিসাবে চাহিদা এবং জোগানের ঘাটতি সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছাবে ২০৩৩ থেকে ২০৩৭ সালের মধ্যে যখন চাহিদা পৌঁছাবে বার্ষিক ২.৮ মিলিয়ন টিইইউসে। নতুন টার্মিনাল এই গ্যাপটি পূরণের জন্যই অপরিহার্য।
এসব কারণেই পতেঙ্গার সমুদ্র উপকূলে ৯০০ একর জায়গা নিয়ে বে-কনটেইনার টার্মিনাল (বিসিটি)-এর মতো বিশালায়তন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এখন যেসব জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারছে না, লেংথ ও ড্রাফট লিমিটের কারণে, সেগুলো অনায়াসে ভিড়তে পারবে সর্বাধুনিক সুযোগসুবিধা সমৃদ্ধ এই টার্মিনালে। এটি চালু হলে পরিবহন ব্যয় কমে আসবে আশাতীত পরিমাণে। তার ওপর, ন্যাচারাল ব্রেকওয়াটার সিস্টেম, গুড চ্যানেল, উন্নত সড়ক এবং রেল সংযোগের সুবিধা থাকবে বে টার্মিনালে।
বন্দরবার্তা: ভারতের সঙ্গে উপকূলীয় যোগাযোগ শুরু হয়েছে। চীন, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কাসহ আঞ্চলিক প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে উপকূলীয় যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার আয়োজন চলছে। উপকূলীয় পরিবহন যোগাযোগ ঠিক কী ধরনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি করছে বাংলাদেশের জন্য?
চেয়ারম্যান: আগামী দিনগুলোয় সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিলে বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় যে, আগামীতে সত্যিই কী পরিমাণ উপকৃত হতে যাচ্ছে দেশ- সাম্প্রতিক চালু হওয়া এই উপকূলীয় যোগাযোগ থেকে। প্রতিবেশি দেশগুলোর বন্দরের সঙ্গে আমাদের গড় দূরত্ব সাড়ে তিন শ’ থেকে পাঁচ শ’ মাইলের মতো। অথচ সরাসরি যোগাযোগ না থাকার কারণে এতোকাল সিঙ্গাপুর হয়ে যাতায়ত করতো জাহাজ। পাড়ি দিতে হতো দুই হাজার মাইলের ওপর সাগরপথ। এতে সময় লাগতো ১৫ থেকে ২০ দিন। অথচ এখন এতে সময় লাগবে গড়ে পাঁচ দিনের মতো। স্বাভাবিকভাবেই খরচও বেঁচে যাবে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ। এদিকে নৌপথে নারায়ণগঞ্জের পানগাঁওয়ে টার্মিনাল নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য সড়ক ও রেলপথের ওপর থেকে চাপ কমিয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ সাশ্রয়ী ব্যয়ে চট্টগ্রাম ও মংলা থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহনের সুবিধা প্রদান করা। চট্ট্রগাম বন্দরের ওপর থেকেও চাপ কমবে এর কারণে। তখন আরও বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সুযোগ পাবে এই বন্দর। অন্যদিকে, নৌপথে পণ্য পরিবহন সূচনার কারণে মহাসড়কে যানবাহনের যাতায়ত হ্রাস পাবে। ফলে কমে আসবে পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর কার্বন দূষণের মাত্রা।
বন্দরবার্তা: বন্দর হিসাবে বিগত সময়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে চট্টগ্রাম। ২৫ এপ্রিল বন্দরের ১২৯ তম বন্দর দিবস। ঐতিহাসিক এই সাফল্যে আপনার কী অনুভূতি?
চেয়ারম্যান: ২৫ এপ্রিল বন্দর দিবস, চট্টগ্রাম বন্দরের ১২৯ তম জন্মদিন, বিষয়টি আমাদের জন্য একপ্রকার গর্বমিশ্রিত আনন্দের। দীর্ঘ একটা পথ পেরিয়ে এসেছে বন্দর। আর ঠিক এই মুহূর্তে চলছে এই বন্দরের সম্প্রসারণ, উন্নয়ন আর অগ্রগতির স্বর্ণযুগ। এখানে আমি বন্দরের ইতিহাসটা একটু বলে নিতে চাই। ব্রিটিশ-ভারতে, তৎকালীন উপমহাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের প্রধান গেটওয়ে হিসাবে অনিবার্য হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিষ্ঠা। ১৮৮৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের পোর্ট কমিশনারস অ্যাক্ট ঘোষণার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনায় প্রথমে একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়। অধ্যাদেশটি বাস্তবে কার্যকর হয় ১৮৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল। সেই থেকে, প্রতিবছর ২৫ এপ্রিল দিনটিকে, পোর্ট ডে বা, বন্দর দিবস হিসাবে উদযাপন করে এসেছি আমরা। ওই সময় বন্দরের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ছিলেন একজন মোটে কর্মকর্তা। পোর্ট অফিসার এবং কাস্টমস কালেক্টর, একহাতে দুটি কাজই করতে হতো তাকে। কোনো জেটি ছিল না সেদিনের বন্দরে। নদীর মাঝেই জাহাজ নোঙ্গর করা হতো। নৌকা কিংবা বোটে তাতে কার্গো বোঝাই, কিংবা খালাস করা হতো। এগুলোর মধ্য দিয়েই ক্রমান্বয়ে সামান্য পোতাশ্রয় থেকে সম্ভাবনাময় একটি বন্দর হিসাবে বিকশিত হতে আরম্ভ করে চট্টগ্রাম।
অতীতে নানাবিধ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। এই সময়ে সারা দুনিয়াতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরন যেমন বদলেছে, পাশাপাশি পরিবহনের চাহিদাও বেড়েছে বন্দরের। এবং বরাবর, সকল বিপত্তি কাটিয়ে পরিবর্তনের ধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতিনিয়ত নিজেকে যোগ্য আর সমর্থ প্রমাণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। অত্যন্ত গর্বের বিষয়, ২০১৫ সালে, নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই, দুই মিলিয়ন কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছি আমরা। পরিসংখ্যান বলছে, ডিসেম্বর ২০১৫ অবধি চট্টগ্রাম বন্দর হ্যান্ডল করেছে ২০,২৪,০০০ টিইইউস কনটেইনার। ২০০৭ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ। সময়ের হাত ধরে ক্রমশঃ এভাবেই বড় হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দর দিবস উদযাপনের এই তাৎপর্যপূর্ণ লগ্নে আমি নিশ্চিত বন্দরের অগ্রগতির এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে আগামীতেও।
বন্দরবার্তা: আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে দেশের সরকার, অর্থনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞসহ সকল মহলে জোরেশোরে ব্লু ইকোনমি, বা সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। সম্প্রতি বিশাল সমুদ্র এলাকার ওপর সার্বভৌম মালিকানা অর্জনকারী, বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ব্লু ইকোনমি, বা, সমুদ্র অর্থনীতির সমস্যা ও সম্ভাবনার মূল্যায়ন করুন।
চেয়ারম্যান: সহজ ভাষায়, ব্লু ইকোনমি কথাটার অর্থ হলো সমুদ্র অর্থনীতি। বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় একটি দেশের অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে বিষয়টি। দেশের অসীম সমুদ্র সম্পদ, যেমন, ফিশারিজ, আকুয়াকালচার, নবায়নযোগ্য ব্লু এনার্জি, তেল, গ্যাস, সমুদ্রতলদেশে খননকাজ এবং সমুদ্রবাহিত বাণিজ্যের যথাযথ সদ্ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বিপুল অগ্রগতির সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের সামনে। স্বাভাবিকভাবেই চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামো সুবিধার আরও উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে সমুদ্র অর্থনীতির এই সম্ভাবনার সম্প্রসারণ ঘটানো সম্ভব। এছাড়া,রিজিওনাল হাব হয়ে ওঠার পথে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বন্দরের দক্ষতাবৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। জাহাজের পাশাপাশি কার্গো আর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ধারাবাহিক সাফল্য অর্জনের মধ্য দিয়ে অনন্য প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে চট্টগ্রাম বন্দর। এখন সারা দুনিয়াতেই ব্রেকবাল্কের পরিবর্তে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কনটেইনারাইজেশনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে অনবদ্য মাইলফলক অতিক্রম করলাম কিছুদিন আগেই। অব্যাহত রয়েছে এই ধারা। এক কথায়, সমুদ্র অর্থনীতির সর্বোচ্চ সুবিধা আদায়ে অনিবার্য পরিপূরক শক্তি হিসাবে নিজেদের প্রস্তুতির মধ্যে দিয়েই যাচ্ছি আমরা, প্রতিমুহূর্তেই।
বন্দরবার্তা: আপনার মূল্যবান সময় আমাদের দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
চেয়ারম্যান: চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে থাকার জন্য বন্দরবার্তা’র সকল পাঠকের প্রতিও আমার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ভালো থাকবেন সবাই।
জীবনীসংক্ষেপ:
রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল, বিএসপি, এনডিসি, পিএসসি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান হিসাবে যোগ দেন ২৯ মার্চ, ২০১৬ তারিখে। ১৯৮১ সালের জানুয়ারি মাসে নৌবাহিনীতে যোগ দিয়ে ১৯৮৩ সালের ১ জুন কমিশন লাভ করেন। বন্দরে যোগদানের আগে তিনি নৌবাহিনীর কমান্ডার বিএন ফ্লিট হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮১-১৯৮৫ ইতালিয়ান নেভাল একাডেমি থেকে চার বছর মেয়াদী ক্যাডেট, মিডশিপম্যান ও সাব-লেফটেন্যান্ট কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৯৬ সালে ঢাকা ডিফেন্স কলেজ এবং ১৯৯৭ সালে ভারতের স্টাফ কলেজ থেকে ডিফেন্স সার্ভিসেস কোর্স কৃতিত্বের সাথে শেষ করেন। ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেরিটাইম ল’ এনফোর্সমেন্ট কোর্স সম্পন্ন করেন। ২০১৩ সালে ভারত থেকে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ কোর্স (এনডিসি) শেষ করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফেন্স স্টাডিজ-এ মাস্টার্স এবং মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিস-এ মাস্টার্স এবং পরে একই বিষয়ে এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন।
রিয়ার এডমিরাল খালেদ ইকবাল দীর্ঘ চাকুরিজীবনে গুরুত্বপূর্ণ কমান্ড, স্টাফ ও প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ, ঢাকায় প্রায় তিন বছর প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির কমান্ড্যান্ট পদে অধিষ্ঠিত হন। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সব ধরনের যুদ্ধজাহাজে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কমান্ড করেছেন তিনি। নৌ-পারদর্শিতা, সাহসিকতা এবং পেশাদারি দক্ষতার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ‘বিশিষ্ট সেবা পদক (বিএসপি)’ অর্জন করেন তিনি। নৌ-সদরে বিভিন্ন সময়ে ডাইরেক্টর নেভাল ট্রেনিং অ্যান্ড ডাইরেক্টর পারসোনেল সার্ভিসেস এর মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও ২০০৬ সালে আইভরি কোস্টে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেন তিনি। মিলিটারি অবজারভার দলের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন আবিদজানে।
ব্লু-ইকোনমি, বাংলায় যাকে আমরা বলছি সমুদ্র অর্থনীতি, ধারণাটির প্রথম প্রবর্তক গুন্টার পলি, ২০১০ সালে। মহাসমুদ্রের সুনীল জলরাশির অন্তরালে নিহিত বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এর প্রধান বিষয়। তবে তার সাথে অন্তর্ভুক্তি থাকতে হবে বৃহত্তর সমাজের। সংরক্ষণ করতে হবে পরিবেশের বিশুদ্ধতা। সূচনা ঘটাতে হবে উদ্ভাবনী এবং গতিশীল ব্যবসায়িক ধারণার।
সমুদ্র অর্থনীতি এবং টেকসই উন্নয়ন
২০১২ সালের রিও ডি জেনিরোতে টেকসই উন্নয়ন শীর্ষক জাতিসংঘ সম্মেলনে প্রথম উত্থাপিত ‘ব্লু-ইকোনমি’ শীর্ষক ধারণা দিয়ে বোঝানো হয়, আগামীদিনের জন্য একটি মহাসমুদ্র ভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলার কথা, যার উদ্দেশ্য হবে ‘মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পরিবেশগত ক্ষতির ঝুঁকি কমিয়ে আনা।’
সমুদ্র অর্থনীতির কথা বলতে গিয়ে কেবল সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়ন বললে ব্যাপারটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। একইসঙ্গে বলতে হবে সমুদ্র অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের প্রসঙ্গটিও। সমুদ্র অর্থনীতি আর টেকসই উন্নয়ন একীভূত একটি ধারণা। এ দুয়ের এক থেকে অপরের বিচ্ছিন্নতা অসম্ভব। তো এবার দেখা যাক, টেকসই উন্নয়ন বলতে কী বুঝি আমরা?
এর সর্বজনস্বীকৃত একটি আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা অনুসারে, টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে মূলত সেই ধরনের উন্নয়ন যা বিরাজমান সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে বর্তমানের চাহিদা মেটাবে, অথচ তা করার কারণে কোনো প্রকার ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে না আগামী প্রজন্মকে।১
সমুদ্র অর্থনীতির প্রবক্তাদের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে বস্তুত উন্নয়নশীল উপকূলীয় দেশ এবং দ্বীপরাষ্ট্রগুলো। বস্তুত তারাই প্রথম উপলব্ধি করে মানবজাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কী বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম আমাদের মহাসমুদ্রগুলো। অতএব টেকসই উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের প্রেক্ষিতে সমুদ্র অর্থনীতিকে আমাদের দেখতে হবে সম্ভবপর টেকসই উন্নয়ন অর্জনের পথে এক শক্তিশালি হাতিয়ার হিসাবে।২
বাংলাদেশে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বড় অংশটাই সমুদ্রবাহিত। ১৩০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপি নিয়ে বিশ্বে আমাদের অর্থনীতির অবস্থান ৪৪ তম। অনুমান, দেশের তিন কোটি লোকের জীবিকা সরাসরি সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতি, যেমন, মাছ ধরা কিংবা বাণিজ্যিক পরিবহনের সাথে সম্পর্কিত। সমুদ্র অর্থনীতি বিষয়ক কথাবার্তা বাংলাদেশে জোরেশোরে আরম্ভ হয় মূলত ২০১২ সালে মায়ানমার এবং ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির পর থেকেই। ওই ঘটনায় এতদাঞ্চলের সমুদ্রসম্পদ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুবিশাল সম্ভাবনা উম্মোচিত হয়ে যায় বাংলাদেশের সামনে।
সমুদ্র অর্থনীতি : বাংলাদেশের সম্ভাবনা
বাংলাদেশের প্রচলিত এবং বিকাশমান উভয় প্রকার খাতের সামনে টেকসই, নির্ঝঞ্ঝাট এবং সমতাভিত্তিক সামুদ্রিক প্রবৃদ্ধির অনেকগুলো সম্ভাবনা এনে হাজির করেছে সমুদ্র অর্থনীতি। যদিও এসব সম্ভাবনা কাজে লাগানোর বিষয়টি নির্ভর করছে অনেকগুলো স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের মাধ্যমে ১. নৌপরিবহন ও বন্দর অবকাঠামো ২. সমুদ্রপথের বাণিজ্য ৩. মৎসজীবিকা ৪. উপকূলীয় পরিবহন ৫. আকুয়াকালচার (সামুদ্রিক উদ্ভিদ চাষাবাদ কিংবা প্রাণীর খামার) ৬. নবায়নযোগ্য ব্লু-এনার্জি (নদীর পানি ও সাগরের পানির মিশ্রণপ্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন) ৭. বায়োটেকনোলজি, বা, প্রাণপ্রযুক্তি ৮. সমুদ্র তলদেশে খননকাজ ইত্যাদি খাতে সম্পদের টেকসই এবং বিবেচক ব্যবহার, নবায়নযোগ্য শক্তির অফুরান সম্ভাবনা নিয়ে অপেক্ষমান আমাদের মহাসমুদ্রগুলো থেকে- বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ, স্রোতশক্তি- অণুজীব ও তাপমাত্রার তারতম্য কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন, লবণাক্ততার মাত্রাভেদ কাজে লাগিয়ে শক্তি উৎপাদন ইত্যাদি বিষয়ের ওপর। গবেষক এবং পর্যালোচকরা সমুদ্রসংক্রান্ত সম্ভাবনাময় খাতের মধ্যে অনুরূপ অনেকগুলো খাতের কথা নির্দেশ করেছেন যেগুলো পর্যাপ্ত অবদান রাখতে সক্ষম জাতীয় অর্থনীতিতে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এখাতে সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতে চাইলে সবার আগে যা প্রয়োজন তা হচ্ছে নিজের সামর্থ্যরে উন্নয়ন এবং সমুদ্র অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত এসব খাতের সম্ভাবনা আবিষ্কারের ধারাবাহিক অভিজ্ঞতা।
টেকসই মৎস আহরণ ও প্রতিবেশ
বর্তমান দুনিয়ার ৩৫ কোটি লোক সরাসরি সমুদ্রে মৎস আহরণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে। এদের মধ্যে আবার ৯০ শতাংশেরই বাস উন্নয়নশীল দেশগুলোয়। বাংলাদেশে মোট মৎস উৎপাদনের ২০ শতাংশ আসে সমুদ্র থেকে। দেশের অন্তত পাঁচ লাখ লোক প্রত্যক্ষ এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। ২০০৯-২০১৫ মেয়াদে বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক লার্জ মেরিটাইম ইকোসিস্টেম প্রজেক্ট (বিওবিএলএমই) অনুসারে, প্রতিবছর বঙ্গোপসাগর থেকে গড়পড়তা ৬০ লাখ টন মৎস আহরণ করা হচ্ছে। এটি দুনিয়াজোড়া মৎস উৎপাদনের ১৬ শতাংশ।
অনুরূপ অনেক প্রকার উদ্ভিজ ও প্রাণিজ বসতির সুরক্ষা প্রদান করে থাকে
বঙ্গোপসাগরের লার্জ মেরিটাইম ইকোসিস্টেম প্রকল্প। যেমন, ম্যানগ্রোভ অঞ্চল (বিশ্বের মোট ম্যানগ্রোভের ১২ শতাংশ), প্রবাল প্রাচীর (বিশ্বের মোট প্রবাল প্রাচীরের ৮ শতাংশ) এবং ঘাসসমৃদ্ধ সমুদ্র তলদেশ। উঁচুমাত্রার প্রাণীবৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ অঞ্চল এটি। তার মধ্যে বেশ কয়েটি প্রজাতি অবস্থান করছে বিলুপ্তির হুমকিতে। সমুদ্রের প্রাণিজ সম্পদ উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারী চরম দরিদ্র জনজীবনের কাছে সীমাহীন গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত পরিবারের আহার্যের মুখ্য জোগানদার হিসাবে।
ইতোমধ্যে মানুষের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে বিপুল পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে সমুদ্রের উৎপাদনশীলতা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও তৈরি হয়েছে নানাবিধ ঘাটতি, যেমন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধি এবং খোলা সমুদ্রে পুষ্টিমিশ্রণের পরিমাণ হ্রাস পাওয়া।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর এবং টেকসই উন্নয়ন
নৌপরিবহন এবং বন্দর অবকাঠামো সুবিধা অর্থ বিবেচনায় ৭০ শতাংশ এবং আয়তন বিবেচনায় ৮০ শতাংশ বৈশ্বিক বাণিজ্য সমাধা হয়ে থাকে সমুদ্রপথে এবং বিভিন্ন বন্দরের মাধ্যমে। ২০১৩ সালের আঙ্কটাডের মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট রিভিউ অনুসারে, দুনিয়াজোড়া অর্থনৈতিক বিপর্যয় সত্ত্বেও সমুদ্রবাণিজ্য ৪.৩ শতাংশ বেড়ে ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো উন্নীত হয়েছে নয় বিলিয়ন টনে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, উপকূলীয় দেশগুলোর মধ্যে বৈশ্বিক সমুদ্রবাণিজ্যের মাধ্যমে সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাতে হলে, সোনাদিয়াতে গভীর সমুদ্র বন্দরের কথা বিবেচনার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর, মংলা বন্দর এবং পায়রা বন্দরকে শক্তিশালি ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।
ক্রমবর্ধমান এই বাণিজ্য থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে চাইলে উপকূলীয় দেশগুলোকে প্রথমেই নিজেদের অবকাঠামো সুবিধা এবং সামর্থ্য অনুসারে কৌশলগত অবস্থান নির্ধারণ করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে মালামাল পরিবহনের জন্য নৌপরিবহন খাতই সর্বাপেক্ষা সুরক্ষিত, সবচেয়ে নিরাপদ, সর্বোচ্চ দক্ষ এবং সর্বাধিক পরিবেশবান্ধব। কেননা এই খাতে আশাতীত কমে এসেছে দুর্ঘটনার সংখ্যা, শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা, অভাবনীয় উন্নতি ঘটেছে টার্নঅ্যারাউন্ড টাইমের ক্ষেত্রে,
দারুণভাবে হ্রাস পেয়েছে সাগরে কিংবা বাতাসে বর্জ্য নিষ্কাশনের মাত্রা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিরাজমান সুবিধা আধুনিকায়ন/সংস্কারের মাধ্যমে বিশ্বমানের সমুদ্রবন্দর পর্যায়ে উন্নীত করা গেলে প্রভাবশালী একটি আঞ্চলিক প্রাণকেন্দ্র হিসাবে আবির্ভাব ঘটবে চট্টগ্রাম বন্দরের। আমাদের যা করতে হবে তা হচ্ছে, জাহাজের টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম কমানো ছাড়াও কনটেইনার/কার্গো ওঠানামার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানো, কর্মীশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং অস্থিরতা প্রশমন, ইত্যাদি।
অনেক সম্ভাবনা ইতোমধ্যে টোকা দিতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম বন্দরের সম্ভাবনার দরোজায়। অবস্থানিক বিবেচনায় কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা এ বন্দর স্থলবেষ্টিত নেপাল ও ভূটানের পাশাপাশি বার্মা, চীন ও ভারতের নিকট-প্রতিবেশি এবং অর্থনৈতিক মহাশক্তি হিসেবে উদীয়মান ভারতও চাইছে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি অঙ্গরাষ্ট্রে পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করতে। এর ফলে তাদের সময় এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় ঘটবে। এভাবে প্রতিবেশি দেশগুলোকে বন্দর-সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে বাংলাদেশ।
তেল ও গ্যাসক্ষেত্রের সম্ভাবনা:
২০০৯ সালে গভীর সমুদ্রে স্থাপিত তেল বা গ্যাস উত্তোলন ক্ষেত্রসমূহ থেকে বিশে^র মোট অপরিশোধিত তেলের ৩২ শতাংশ আহরণ করা হয়েছে। ২০২৫ সালে এটি উন্নীত হবে ৩৪ শতাংশে। এবং ক্রমশ বাড়তেই থাকবে এটি। আমাদের গ্রহের উত্তোলনযোগ্য তেলের অর্ধেকের বেশি মজুত রয়েছে গভীর সমুদ্রে স্থাপিত এসব ক্ষেত্রে, এবং এরও সিকিভাগ রয়েছে গহিন জলের নিচে। এসব তথ্য বিবেচনায় নিলে অনুধাবন করা সম্ভব যে, সত্যিকার অর্থেই একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটতে যাচ্ছে আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। ট্রাইবুনালের রায়ের পর বঙ্গোপসাগরে ভারতের হাতে থাকা ১০টি গ্যাস ব্লকের মধ্যে ৮টি এবং মায়ানমারের হাতে থাকা ১৮টি গ্যাস ব্লকের মধ্যে ১৩টির মালিকানা ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ। ইউএসজিএস৫ এর প্রতিবেদন অনুসারে উপরোল্লিখিত এসব গ্যাস ব্লক থেকে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস পাওয়া সম্ভব।৩
উন্নয়নের পথে চ্যালেঞ্জ এবং ঝুঁকিসমূহ
দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন, পরিবেশ ভারসাম্য বজায় রাখা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলার পাশাপাশি বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বিপুল অবদান রাখতে সক্ষম আমাদের সমুদ্রসম্পদ। তবে এর সাথে মনে রাখতে হবে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জের কথাও।
যেসব ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে সেগুলো হচ্ছে: ১. সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলে সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা ২. অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইইজেড) নিরাপত্তা বজায় রাখা ৩. সমুদ্র পর্যটনের লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব সামুদ্রিক অবকাঠামো নির্মাণ ৪. আন্তর্জাতিক চোরাকারবারী, মাদক, মানব এবং অস্ত্র পাচারকারী, মৎসদস্যুতা এবং মাদকসন্ত্রাসীর উৎপাত থেকে গভীর সমুদ্র এবং ইইজেড এলাকার সুরক্ষা প্রদান ৫. অর্জিত এলাকায় বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখা ৬. প্রাণীবৈচিত্র্যের টেকসই ব্যবস্থাপনা ৭. সমুদ্রের এবং উপকূলীয় পরিবেশ ভারসাম্য বজায় রাখা ৮. ম্যানগ্রোভ এবং সামুদ্রিক ঘাসের সুরক্ষা ৯. জলবায়ু পরিবর্তন এবং কার্বন নিঃসরণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ১০. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বজায় রাখা এবং প্রবাল জ্বলেপুড়ে যাবার কারণে পরিবেশে তাপমাত্রার তারতম্য ব্যবস্থাপনা ১১. সমুদ্রের অম্লায়ন এবং সমুদ্র কার্বন ইস্যু ১২. সমুদ্রকে দূষণ এবং বর্জ্যমুক্ত রাখা এবং ১৩. জনসংখ্যার ক্রমবৃদ্ধি এবং কৃষির ঘনায়ন।
সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি সমন্বিত সমুদ্রনীতি
বাংলাদেশের জন্য এ মুহূর্তে সবার আগে যা প্রয়োজন তা হচ্ছে সমন্বিত একটি মেরিটাইম পলিসি, বা, সমুদ্র নীতি প্রণয়ণ করা। এতে মূলত নজর দিতে হবে সমুদ্র নিরাপত্তা, সমুদ্রদূষণ, সমুদ্রের প্রাণিজ-অপ্রাণিজ সম্পদের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ, সমুদ্রবিজ্ঞান ও গবেষণা, প্রযুক্তির সংযোজন, সমুদ্র পরিবেশ সুরক্ষা, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি প্রশ্নের মোকাবেলায় নিজেদের সামর্থ্য বাড়ানো এবং প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তোলার প্রসঙ্গসমূহ।
একুশ শতকের পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল-মডেল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে সরকারের ব্যস্ততম নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। জাতীয় অগ্রযাত্রায় বহুমাত্রিক কার্যক্রম সম্পাদন হয়ে থাকে এই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। নৌ-পথে যোগাযোগ, নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, নৌ-চ্যানেলের নাব্যতা বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর উন্নয়ন ও তাদের আধুনিকায়ন, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের উন্নয়ন, স্থল বন্দরসমূহের উন্নয়ন, সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দক্ষ নাবিক গড়ে তোলা তার মধ্যে অন্যতম। অধীনস্থ ১২টি দপ্তর ও সংস্থার মাধ্যমে এসব কাজ সম্পাদন করে এ মন্ত্রণালয়।
চলমান এ উন্নয়ন অভিযাত্রার সুযোগ্য নেতৃত্বে রয়েছেন মাননীয় নৌপরিবহন মন্ত্রী জনাব শাজাহান খান, এমপি। নদীপ্রবন মানুষটি নদীর মতোই সহজ আর সাবলীল। জনগণের মধ্যে থেকে উঠে আসা সাহসী, বিচক্ষণ আর দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব। ‘নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে’ কিংবা ‘নদী নিয়ে ছিনিমিনি খেলার দিন শেষ’-প্রবাদপ্রতিম এমত সাহসী উচ্চারণ আমরা শুনেছি তাঁরই প্রেরণাদায়ী কন্ঠে।
নৌপরিবহন মন্ত্রীর গতিশীল নির্দেশনায় ছয় বছরের অধিক সময়কালে দেশের প্রধান দু’টি সমুদ্র বন্দরের ধারণক্ষমতা বেড়েছে আশাতীত পরিমাণ। চট্টগ্রাম বন্দরের সর্বস্তরের তথ্য প্রযুক্তির পাশাপাশি অটোমেশনের সূচনা ঘটেছে। ভিটিএমআইএস এর মাধ্যমে কর্ণফুলী চ্যানেলে জাহাজ চলাচল ও জাহাজের সার্বক্ষণিক তদারকি নিশ্চিত করা হয়েছে। সুন্দরবনের বৈচিত্র্য রক্ষায় মংলা-ঘষিয়াখালি নৌ পথ চালু হয়েছে। তৃতীয় সমুদ্র বন্দর হিসাবে উদীয়মান পায়রা বন্দর স্থাপনায় পন্টুন, ক্রেন ও সোলার লাইটপোস্ট বসানো হয়েছে। বেনাপোলসহ অন্যান্য স্থল বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। তিনটি ড্রেজার সংগ্রহের মাধ্যমে ৬২৮ কিলোমিটার নৌ পথের নাব্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এমভি বাঙ্গালী এবং এমভি মধুমতি নামে দু’টি যাত্রীবাহি জাহাজ নির্মাণ হয়েছে। সংগ্রহ করা হয়েছে দু’টি উদ্ধারকারী জলযান। দেশপ্রেমিক এই স্বপ্নদ্রষ্টার আশু পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ৫৩টি নৌ পথের ক্যাপিটাল ড্রেজিং, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা ও তুরাগ নদীর বর্জ্য অপসারণ, মংলা-ঘষিয়াখালি নৌ পথের নাব্যতা পুনরুদ্ধারে নৌপ্রটোকল রুটে ড্রেজিং, নৌপ্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট স্থাপনসহ বহুবিধ।
বন্দরবার্তা’র সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলোচনায় উল্লেখিত এসব বিষয়ের পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতি বিষয়ে তথ্যবহুল ও মূল্যবান কথা বলেছেন মাননীয় নৌপরিবহন মন্ত্রী।
বন্দরবার্তা
নদীনির্ভর দেশ বাংলাদেশ। চিরকাল নদীর আদরে লালিত। অথচ দেশের অনেকগুলো নদী আজ হতশ্রী। অনেকেই মৃতপ্রায়। নদীরক্ষার পথে একটি দূরতিক্রম্য বাধা ভূমিদস্যু প্রভাবশালী মহলের যথেচ্ছ নদীদখল এবং অপরিকল্পিত শিল্প-কারখানার অবিরাম নদীদূষণ। এ অবস্থার অবসানে নদী রক্ষা কমিশনের চলমান লড়াইয়ের অগ্রভাগে রয়েছেন আপনি। জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে সাহসী নেতৃত্ব দিচ্ছেন ষড়যন্ত্রকারী অপশক্তির বিরুদ্ধে। এতে কতটুকু উত্তরণ ঘটেছে পরিস্থিতির? এবং সামনের দিনগুলোয় কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন?
নৌপরিবহন মন্ত্রী
বাংলাদেশকে সামনের দিকে নিতে হলে দেশের প্রত্যেকটি নদীকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে। দীর্ঘসময় ধরে অপরাজনীতির দাপট দেখিয়ে অনেক নদীকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। নদীর সীমানা পিলার নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। গণমুখী বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বদলাতে আরম্ভ করেছে সবকিছু। নদীরক্ষা কমিশনের কাজের পরিধি ও ক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। নদী নিয়ে ইঁদুর-বিড়াল খেলার দিন শেষ হয়েছে। একটি শিল্প-কারখানার উদ্দেশ্য কী? জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতির লক্ষ্যে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু এ কাজ করতে গিয়ে, লোভের বশবর্তী হয়ে বিবেকহীনভাবে, সেই জনগণেরই সর্বনাশ করছে তারা। প্রতিনিয়ত কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে উগরে দিয়ে নদীকে হত্যা করছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী। নদীর মাধ্যমে বিষাক্ত বর্জ্য গিয়ে মিশছে দুই তীরের জমিতে। ফসল উৎপাদনের সামর্থ্য হারিয়ে ফেলছে জমি। আমাদের বুঝতে হবে, দূষণ আক্রান্ত এসব নদীর মাছ, এসব জমির উৎপাদিত শাক-সব্জিও জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কোনমতেই এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা আর তুরাগ নদী দূষণমুক্ত করে তাদের জীবন ফিরিয়ে আনতে বর্জ্য অপসারণ অভিযান শুরু হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশের মানুষ ও বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থেই এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছি আমরা। বারংবার তাগাদার পরও যারা কারখানায় ইটিপি ব্যবহার করবেন না তাদের কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে।
আমরা জানি, একদিনে সাফল্য আসবে না। লন্ডনের টেমস নদী দূষণমুক্ত করতে ৮০ বছর লেগেছে। কোরিয়ার হাংহাই নদীর লেগেছে ৩০ বছর। সবে শুরু করলেও আশা করছি ১০ বছরের মাথায় সুফল দেখতে পারবো আমরাও।
বন্দরবার্তা
বাংলাদেশে বর্তমানে নৌ চলাচল উপযোগী নদীর প্রকৃত সংখ্যা কত? আমরা জানি দেশের বৃহত্তর জনসাধারণের প্রতিদিনকার যাতায়াতের প্রধানতম অবলম্বন নৌ পথ। সে বিবেচনায় বর্তমান নৌ পথ বাড়াতে আপনারা নতুন কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
নৌপরিবহন মন্ত্রী
আপনার এ জিজ্ঞাসার উত্তরে একটু পেছনের দিকে ফিরে তাকানো যাক। ১৯৫৫ সালের জরিপ অনুসারে আমাদের নদীর সংখ্যা সাতশ’র মতো। মাঠপর্যায়ে যদিও এ অর্ধেকই খুইয়ে বসে আছি আমরা বিগত অর্ধশতকে। আমাদের পরিসংখ্যানে, বর্র্তমানে ৩১০টি নদী রয়েছে যেগুলো শতভাগ নৌ চলাচলের উপযোগী। পৃথিবীর একটি মাত্র দেশে এত বেশি নদী খুব অল্পই আছে। সেদিক থেকে আমরা বড়ই সৌভাগ্যবান। ইতিমধ্যেই নদী রক্ষায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি বৃহৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ টাকায় ৫৩টি নৌ পথ খনন করা হবে। অভ্যন্তরীণ নৌ পথে ৯০ লক্ষ ঘনমিটার ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হবে। নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই অকালবন্যা তৈরি হচ্ছে। নদীকে নিজের মতো চলতে দিতে হবে। তাহলেই সম্ভব হবে বিপর্যয় রোধ করা। প্রতিদিন নদীপথের ওপর নির্ভরশীল ব্যবসায়ী ছাড়াও লাখ লাখ যাত্রী। আমরা তাদের কথা ভাবছি। নদী বিষয়ক টাস্ক ফোর্স নিয়মিত কাজ করছে এসব নিয়ে। নদী ড্রেজিংয়ের কাজে এখন মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং বলে একটি পদ্ধতি অবলম্বন করছি আমরা। এতে ৬-৭ বছরের জন্য একটি চ্যানেলের ড্রেজিং করা, তার নিয়োমিত তদারকি এবং সারাবছর নাব্যতা বজায় রাখাটাও পড়বে একই দায়িত্বের মধ্যে। ফলে কিছুদিন পরপর নতুন টেন্ডার ডাকতে হবে না। এতে আগের তুলনা অনেক বেশি কাজ হবে বলে আমরা আশাবাদী।
এছাড়া মেঘনা-গোমতী সেতুর ড্রেজিং চলছে পুরোদমে। নদীরক্ষায় ২০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ হয়েছে। আরও ৫০ কিলোমিটারের কাজ শুরু হচ্ছে শিগগিরই। পাবনায় বড়াল নদীর ক্রসবার অপসারণ করে নদীর প্রবাহ চালু করা হচ্ছে। নতুন চারটি এক্সক্যাভেটর কেনা হচ্ছে। ১৮টি ড্রেজার রয়েছে আমাদের। এবছর কেনা হবে আরও তিনটি। পর্যায়ক্রমে ২০১৯ সালের মধ্যে আমাদের ড্রেজার সংখ্যা হবে ৪১।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও দিকনির্দেশনায় ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হতে যাচ্ছি আমরা। এ লক্ষ্যে নদী খনন, নদীরক্ষা কমিশন, নতুন বন্দর নির্মাণ, যাত্রীদের সুবিধার্থে স্টিমার ও উদ্ধারকারী জাহাজ সংগ্রহের কাজ বর্তমান সরকারই করছে। এ আমলেই নতুন ১৭টি ফেরি নির্মাণ হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চাঁদপুরে অত্যাধুনিক নদীবন্দরসহ নতুন লঞ্চ ও স্টিমারঘাট নির্মাণ করা হচ্ছে।
বন্দরবার্তা
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমুদ্র-বাণিজ্যের পরিধি ও ক্ষেত্র দুটোরই সম্প্রসারণ ঘটছে প্রতিনিয়ত। স্বভাবতঃ এসব খাতে দক্ষ কর্মশক্তির চাহিদাও বাড়ছে সেই অনুপাতে। ঘটনাটি আমাদের মতো মেধা ও শ্রমনির্ভর একটি দেশের জন্য দারুণ সম্ভাবনাময় ও আশাব্যঞ্জক। বাংলাদেশের মেরিটাইম খাতে মেধাবী জনশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
নৌপরিবহন মন্ত্রী
বর্তমান দুনিয়া প্রতিযোগিতার দুনিয়া। এখানে টিকতে চাইলে দক্ষতা আর মেধার জোরেই টিকে থাকতে হয়। সে বিচারে আমাদের তরুণরা বিশ্বের যেকোনো দেশের সঙ্গে পাল্লায় সমকক্ষ। নাবিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ন্যাশনাল মেরিটাইম ইন্সটিটিউট আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ‘আইএসও ৯০০১:২০০৮’ স্বীকৃতি পেয়েছে ২০১৪ সালে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে এ বছর ৫০তম ব্যাচের স্নাতক হলো আড়াই শ’ শিক্ষার্থীর।
এখন পর্যন্ত এখান থেকে স্নাতক হয়ে বেড়িয়েছে চার হাজারের উপর শিক্ষার্থী। সাফল্য আর সুনামের সাথে তারা কাজ করছে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে। এ খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার কথা মাথায় রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন চারটি মেরিন একাডেমি গড়ে তোলা হচ্ছে শিগগিরই।
বন্দরবার্তা
ভারত, নেপাল, ভূটান, মিয়ানমারের মতো প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও ত্রিপাক্ষিক আমদানি-রপ্তানি বানিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে আপনার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। বেনাপোল এবং ভোমরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দও পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে কী ধরনের কার্যক্রম রয়েছে?
নৌপরিবহন মন্ত্রী
স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগী হচ্ছে বর্তমান সরকার। বেনাপোল বন্দর আধুনিকায়নের লক্ষ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনা রোধে শিল্পপুলিশ নিয়োগ হতে যাচ্ছে সেখানে। কার্যক্ষম উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি আশাবাদী বেনাপোলে চলমান রপ্তানি টার্মিনাল, যাত্রী টার্মিনাল, আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনাল এবং ভারতের সাথে সরাসরি সংযুক্ত লিংক রোড নির্মাণ শেষ হলে বন্দরের পণ্য হ্যান্ডলিং ও যাত্রীসেবার মান বাড়বে, পাশাপাশি আয় বাড়বে বহুগুণে।
বন্দরবার্তা
বিভিন্ন কারণে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল দেশের দ্বিতীয় প্রধান সমুদ্রবন্দর মংলা। যদিও সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে মুমূর্ষু পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটিয়ে আবারও লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে তারা। মংলা বন্দরের সামর্থ্য বাড়াতে কী ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে আপনাদের?
নৌপরিবহন মন্ত্রী
মংলা বন্দরের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে দায়িত্ব গ্রহণের পরই আন্তরিক যত্নবান হয়েছে সরকার। ফলে গত বছর ৬০ কোটি টাকার ওপরে লাভ করেছে এ বন্দর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মংলা বন্দরের উন্নতির জন্য যে কর্মধারা আরম্ভ করেছিলেন পরবর্তী অনেকেই সে ধারাবাহিকতা রক্ষা করেনি। ফলে একসময় দারুণ দুরবস্থার মধ্যে পরে গিয়েছিল এ বন্দর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সক্রিয় নির্দেশনায় নতুন গতি ফিরে এসেছে বন্দরের সর্বস্তরের কাজেকর্মে। পাশাপাশি, মংলা বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। মংলার সাথে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রথমবারের মতো দুটি ড্রেজার আনা হয়েছে চ্যানেলের নব্যতা বজায় রাখার জন্যে। ঢাকার সাথে যোগাযোগের জন্যে নতুন দুটি স্টিমার নির্মাণ করা হচ্ছে, চলাচল শুরু করবে আগামী বছর থেকেই।
বন্দরবার্তা
তথ্যসমৃদ্ধ অনেক কিছুই জানা হলো আপনার সঙ্গে আলোচনায়। আমাদের সময় দেয়ার জন্যে বন্দরবার্তা’র পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন।
নৌপরিবহন মন্ত্রী
আপনাদেরও ধন্যবাদ।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক।
জীবনী-সংক্ষেপ
নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি’র জন্ম ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারী মাদারীপুরে সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তার পিতা অ্যাডভোকেট মৌলভী আসমত আলী খান এলাকার সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষানুরাগী এবং সংসদ সদস্য ছিলেন।
১৯৬৬ সালে এসএসসি, ১৯৬৮ সালে এইচএসসি’র পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন জনাব শাজাহান খান। ছাত্র রাজনীতি শুরু ১৯৬৪ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে মাদারীপুর নাজিম উদ্দিন কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস এবং ভিপি নির্বাচিত হন। বর্তমানে জাতীয় শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নির্বাহী সভাপতি, গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদেও আহ্বায়ক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের সভাপতি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান ভারতের দরাদুনে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ভারত, নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জাপান, কেনিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, কোরিয়া, চীন, হংকং, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানী, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড এবং সৌদি আরব ভ্রমণ করেছেন। বিবাহিত এবং এক কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক। জনাব শাজাহান খানের স্ত্রী সৈয়দা রোকেয়া বেগম একজন কলেজ শিক্ষিকা এবং সমাজসেবী।
জনাব শাজাহান খান ২৯ ডিসেম্বর, ২০০৮ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ৩১ জুলাই, ২০০৯-এ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তিনি ২১ নভেম্বও, ২০১৩ নির্বাচনকালীন অন্তবর্তী মন্ত্রিসভায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্তি পান।
চার বছরের অধিক হলো চেয়ারম্যান হিসেবে হাল ধরেছেন চট্টগ্রাম বন্দরের। আমূল বদলে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানতম এ বন্দরের ভিতর-বাহিরের চেহারা। তাঁর দূরদর্শী এবং সাহসী পদক্ষেপের সুবাদে প্রথমবারের মতো নিজেদের উদ্যোগে ত্রিশ বছরের মহা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। পানগাঁও টার্মিনাল চালুর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন যোগাযোগ বেড়েছে তারই সময়োচিত সিদ্ধান্তের কারণে। আট বছর পর কার্যকর হয়েছে নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল। বন্দরের দক্ষতা আর কর্মসামর্থ্য বাড়ানোর অন্যতম শর্ত বন্দরের অবকাঠামো যেমন, যন্ত্রপাতিগত সুবিধা বাড়ানো। এ খাতে প্রায় ৭০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটিয়েছেন তিনি। বর্তমানের পাশাপাশি, ভবিষ্যৎ জনসম্পদ উন্নয়নেও প্রখর বিবেচনার স্বাক্ষর রেখেছেন। তার উদ্যোগে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জন্যে দুটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। মানবসম্পদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে আধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স। আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং সুবিধার জন্য অত্যাধুনিক ট্রেনিং কমপ্লেক্স। বন্দরের নিজস্ব হাসপাতাল ভবন সম্প্রসারণ এবং আধুনিকায়নের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে শ্রমিকদের জন্য ক্লিনিক ও ট্রমা সেন্টার। বন্দরের সর্বস্তরে অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশন এগিয়ে চলেছে।
দুই লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে আরও একটি মাইলফলক স্থাপন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। সুচারু পরিকল্পনা অনুযায়ী ধাপে ধাপে বাড়ছে বন্দরের সামর্থ্য –লালদিয়া মাল্টিপারপাজ কনটেইনার টার্মিনাল, কর্ণফুলী কনটেইনার টার্মিনাল এবং পতেঙ্গার তীরবর্তী নির্মিতব্য বে কনটেইনার টার্মিনাল। এগুলো বাস্তবায়ন হলে কী ধরনের উপকৃত হতে পারে চট্টগ্রাম বন্দর, তথা বাংলাদেশ, তা জানতে বন্দরবার্তা’র পক্ষ থেকে আমরা কথা বলেছিলাম এই নবজাগরণের নেপথ্য দ্রষ্টা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ (ট্যাজ), ওএসপি, এনডিসি, পিএসসি, বিএন এর সঙ্গে –
বন্দরবার্তা:
আগামীর পৃথিবীর উপযোগী বন্দর গড়ে তোলার কথা বলেছেন আপনি? জানতে চাচ্ছিলাম, তার রূপ কেমন হবে?
চেয়ারম্যান:
কনটেইনার পোর্ট হিসেবে চীনের শেনজেন, কোরিয়ার বুসান কিংবা পাশের দেশ সিঙ্গাপুরের বন্দরের দিকে তাকালেও কিন্তু আমরা মোটামুটি একটা ধারণা পেতে পারি, কোথায় যেতে চাইছি আমরা। চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের প্রধান বানিজ্যিক গেটওয়ে, আমাদের গৌরব। গত বছরও প্রায় তিন হাজার শিপ এসেছে বন্দরে। সংখ্যাটি দশ বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ। আর দেশের আমদানি-রপ্তানির পুরোটাই (৯৩ শতাংশের ওপর) নির্ভরশীল বন্দরের ওপর। ২৩ বছর ধরে প্রবৃদ্ধি ছিলো ১০ এর ঘরে। আশাতীতভাবে সেটা এখন উঠে এসেছে ১৫ শতাংশে।
হাজার প্রকার কাজ থাকে একটি বন্দরের। কিন্তু আমি মনে করি, সিপিএ’র প্রধানতম দায়িত্ব, ঘড়ির কাঁটা মেনে চব্বিশ ঘন্টা বন্দর সচল রাখা। এই বন্দর আমাদের হার্টবিটের মতো। একে চালু থাকতেই হবে। বিরতির অবকাশ নেই কোনো। তারপর আছে অবকাঠামোর আধুনিকায়ন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বন্দরের অবকাঠামো বাড়াতে নতুন করে আরও তিনটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছি আমরা। এগুলো হবে অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ, যেমন –নিজস্ব সোলার পাওয়ার জেনারেটর এবং আইসিটি সুবিধা থাকবে এতে। জাহাজের লেংথ কিংবা ড্রাফট যা-ই হোক, সমস্যা নাই কোনো। যত দ্রুত সম্ভব, বছরে তিন মিলিয়ন কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের টার্গেট ছুঁতে হবে আমাদের।
বন্দরবার্তা:
লয়েড’স রেজিস্টারে বিশ্বের শীর্ষ বন্দর তালিকায় ৯৮ থেকে ৮৬ তম অবস্থানে উঠে এসেছে চট্টগ্রাম। কীভাবে সম্ভব হয়েছে এ সাফল্য?
চেয়ারম্যান:
ধন্যবাদ আপনাকে। বাণিজ্যের দুনিয়ায় কিন্তু আমরা নিরবচ্ছিন্ন প্রতিযোগিতার মধ্যে রয়েছি সারাক্ষণ। যোগ্যতায় কিংবা দক্ষতায় প্রতিমুহূর্তে আমাদের ছাড়িয়ে যেতে চাইছে অনেকেই। ধরা যাক, পৃথিবীর শীর্ষ ধনী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা। নিউইয়র্ক আর ক্যালিফোর্নিয়ায় তাদের বৃহত্তম দুটি বন্দরে বছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় ১৪ মিলিয়ন টিইইউ। অথচ এক চীনের গুয়াংজু বন্দরেই এর চাইতে বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয় এক বছরে। লক্ষ্য করলে দেখবেন, শীর্ষ কুড়ি বন্দরের তালিকায় তিনটি বন্দর মাত্র ইউরোপীয়, একটি যুক্তরাষ্ট্রের আর বাকি সবগুলোই এশিয়ার ইমার্জিং অর্থনীতির দেশগুলোয়। সিপিএ-ও দায়িত্ব হাতে নেয়ার পর থেকে বর্তমান সরকারের সক্রিয় সহযোগিতা পেয়েছি প্রতিটি ক্ষেত্রে। আমাদের দক্ষতা বেড়েছে। বন্দরে কাগজ পত্রের আনুষ্ঠানিকতা সারতে এখন সময় লাগছে মাত্র পাঁচ মিনিট। জাহাজে আসা মালামাল বন্দরের বাইরে বুঝে নিতে পারছেন মাত্র ৩০ মিনিটে। জাহাজের টার্ন-অ্যারাউন্ড টাইম আগের ১১ দিন থেকে নেমে এসেছে মাত্র তিন দিনে। আমি আশাবাদী, প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারলে ২০১৯ সাল নাগাদ ৭০ তম অবস্থানে চলে আসবো আমরা।
বন্দরবার্তা:
আইএসপিএস কোড লেভেল-ওয়ানে উন্নীত হয়েছে চট্টগ্রাম। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই সিকিউরিটি কোড এর তাৎপর্য কী? এবং এটি কী ধরনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়?
চেয়ারম্যান:
সারা দুনিয়ার জাহাজ এবং বন্দরের নিরাপত্তা দিতে গড়ে তোলা সংস্থা আইএসপিএস কোড এর লেভেল-ওয়ান অর্থ, বন্দর কার্যক্রম পরিস্থিতি একশত ভাগ স্বাভাবিক। ঝড়, ঝঞ্ঝা, ডাকাতি, যুদ্ধবিগ্রহ, বিদ্রোহী হামলা কিংবা অন্য কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। আইএসপিএস এর আরও দুটি লেভেল আছে, দুই এবং তিন। নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়লেই বেড়ে যায় কোড লেভেল। অতএব চট্টগ্রাম বন্দর এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিরাপদ বন্দর। তাছাড়া বন্দর মানেই তো কোটি কোটি টাকার লেনদেন প্রতি মুহূর্তে। বন্দরে জাহাজ ভেড়ার আগে থেকেই নিরাপত্তামূলক সতর্কতা নিতে হয় সবার। গত বছরগুলোয় আইএসপিএস কোড অনুসরণ করে বন্দরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছি আমরা। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় মনিটর করা হচ্ছে গোটা বন্দর এবং আশেপাশের এলাকা। বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মূলত একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ সরকারের নৌবাহিনী, আর্মি, পুলিশ, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, পোর্ট, ডিপার্টেমেন্ট অব শিপিং, ডিজিএফআই, এনএসআই ইত্যাদি বিভাগ থেকে প্রতিনিধির সমন্বয়ে তৈরি ফুলপ্রুফ নেটওয়ার্ক। মেরিটাইম ব্যুরোর রিপোর্টে চট্টগ্রাম বন্দরে হামলার ঘটনা এখন শূন্যের কোঠায়।
বন্দরবার্তা:
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সিএসআর কার্যক্রম নিয়ে কী ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে?
চেয়ারম্যান:
আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষের তত্বাবধানে দুটি কলেজ পরিচালনা করছি। গুণগত যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি সেখানে। কলেজে আছে প্রয়োজনীয় ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব, ক্যানটিন, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। বোর্ডে পরিক্ষায় কলেজের ছেলে মেয়েদের ফলাফল খুবই আশাব্যঞ্জক। গত বছরও ১২৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শতভাগ পাশ করেছে আমাদের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি অটিস্টিক শিশুদের জন্যে প্রতিষ্ঠা হচ্ছে স্পেশাল নিড স্কুল। শ্রমিক কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালের আধুনিকায়ন হচ্ছে। প্রতি বছর সব শ্রমিকের জন্য ১০ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধির ঘোষনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বন্দরবার্তা:
আপনি বলেন বন্দরের কর্মীরাই বন্দরের প্রাণ। এই জনশক্তি উন্নয়নে কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
চেয়ারম্যান:
শুধু বন্দর কেনো, সবখানেই তো কর্মীরাই যেকোনো প্রতিষ্ঠানের প্রাণশক্তি। আপনার মনে আছে নিশ্চয়ই, এই চট্টগ্রাম বন্দরে একসময় ৩২টি ট্রেড ইউনিয়ন সক্রিয় ছিল। বেশিরভাগই বন্দরের বাইরের। ফলে বন্দরের সুষ্ঠু পরিচালনা ছিল, এক কথায় অসম্ভব। ২০০৮ সালে শ্রম আইন সংশোধন করে সবগুলো ট্রেড ইউনিয়ন একীভূত করা হলো। একটি মাত্র ইউনিয়নের আওতায় আনা হলো সবাইকে। বেশ কিছু নিয়ম বদলানো হলো। আগে বন্দরে কাজ হতো ১২ ঘন্টার দুই শিফটে। এখন তিন শিফটে। ফলে কাজের গুণগত মান বেড়েছে। পরিবারের সাথে আরও বেশি সময় কাটাতে পারছে একজন শ্রমিক। আমাদের জনবল সাত হাজারের মতো। তবে কাজের পরিধি বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে এই সংখ্যা। বন্দরের শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার জন্য আছে বয়েজ অ্যান্ড গার্লস স্কুল এবং কলেজ। চিকিৎসার জন্যে আধুনিক হাসপাতাল। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী চার বছরে বন্দরের ৩,৬০০ কর্মচারির জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তাই আগামীতে চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীর আবাসন সমস্যা থাকবে না এবং এটি হবে বন্দরে কাজ করার এক বিশেষ প্রণোদনা।
বন্দরবার্তা:
আগামী দিনের চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে কী ধরনের স্বপ্ন-পরিকল্পনা রয়েছে আপনার? বে টার্মিনাল ও লালদিয়া বাল্ক টার্মিনাল এখানে কতোটা জরুরি? তাছাড়া, পায়রা সমুদ্র বন্দরের কতোটুকু ভূমিকা রয়েছে এক্ষেত্রে?
চেয়ারম্যান:
আমাদের মহাপরিকল্পনা অনুসারে ২০১৮ সাল নাগাদ চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে ২৪ লাখ কনটেইনার ওঠানামা করবে এরকম প্রক্ষেপণ থাকলেও ২০১৫ এর ডিসেম্বরেই আমরা স্পর্শ করলাম ২ মিলিয়ন টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাইল ফলক। ২০১৯ সালে, সেটি হবে প্রায় ২৭ লাখ। ওই সময়ে বন্দরের সামর্থ্য থাকবে ২৪ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের। চট্টগ্রাম বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণ শুরু হবে ২০১৮ সাল নাগাদ। এ কারণে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে ২০১৮ সালে আর তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে পায়রা বন্দরের কাজের উদ্বোধনও করেছেন। কেননা, চট্টগ্রাম বন্দরের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য নিতে হবে পায়রা সমুদ্র বন্দরেই। পতেঙ্গায় বে টার্মিনাল আয়তনে বর্তমান বন্দর অপারেশন এরিয়ার ছয়গুন বড় হবে। বন্দর ইয়ার্ডে ৩০ হাজার কনটেইনার রাখা যেত আগে, এখন ৪৫ হাজার কনটেইনার ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে। ২০২১ সালে আমাদের নির্ধারিত রপ্তানি লক্ষমাত্রা ৫০ বিলিয়ন ডলার। এসব চাপ সামলাতে হলে আমাদের অবকাঠামো গড়ে তোলা জরুরি। একটি মাত্র প্রধান সড়ক ঘিরেই চট্টগ্রাম শহর। পণ্য পরিবহন সুগম রাখতে বাইপাস হিসেবে মেরিন ড্রাইভ, রিভার ওয়েজ এবং এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ অতি জরুরি।
বন্দরবার্তা:
ভিশন-২০২১ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বন্দরের অবদান কীরূপ?
চেয়ারম্যান:
আমি বিশ্বাস করি, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক স্বপ্নদ্রষ্টা কবি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি। কে কতদূর উন্নতি করবে সেটা তার নিজের আগ্রহ আর সামর্থের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেটা করেছেন, উন্নয়নের এই যে স্বপ্নটা, সেটা তিনি সঞ্চার করে দিয়েছেন মানুষের মনে। শুধু তাই নয় এক কোটি মানুষকে তিনি ইতিমধ্যে একধাপ এগিয়ে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের কাতারে নিয়ে গেছেন। তিনি অত্যন্ত সাহসের সাথে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করেছেন। ফলে উন্নয়নের একটি জোয়ার আমরা দেখতে পাচ্ছি চারিদিকে। শিগগিরই মধ্যম আয়ের দেশ হতে যাচ্ছি আমরা। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ভিশন-২০২১ অনুসরণেই বন্দরের উন্নয়ন পরিকল্পনা সাজিয়েছি আমরা। বিগত এক দশকের যা কিছু অগ্রগতি, তা মূলত আমরা সবাই মিলে এই স্বপ্নটা দেখেছিলাম বলেই। আমি মনে করি আগামী দিনেও স্বপ্ন দেখার সাহসই আমাদের সামনে এগিয়ে নেবে।