সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের প্রতিকী ছবি। ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত
সাগরে তেলবাহী বড় ট্যাংকার থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল খালাসে তেলবাহী ট্যাংকার ভেড়ানো এবং টাগবোটসহ সকল সহায়তা দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। রবিবার পরীক্ষামূলকভাবে তেল খালাসের কথা থাকলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে তা আবার তেল খালাসের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে ইস্টার্ণ রিফাইনারী।
বঙ্গোপসাগরে বড় ট্যাংকার থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল খালাসের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকারি তেল শোধনাগার প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি। এই প্রকল্পের আওতায় সাগরে মুরিং বসানো হয়েছে।
পরীক্ষামূলকভাবে জ্বালানি তেল খালাসের কার্যক্রম দেখতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল মুরিংয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল থাকায় মাঝপথ থেকে ফিরে আসেন।
কর্ণফুলী চ্যানেলের সীমাবদ্ধতার কারণে তেল খালাসের বিশেষায়িত জেটিতে বড় ট্যাংকার ভিড়তে পারে না। তাতে জ্বালানি তেল নিয়ে আসা বড় ট্যাংকারগুলো প্রথমে সাগরে নোঙর করে রাখা হয়। পরে ছোট ট্যাংকারের মাধ্যমে তেল স্থানান্তর করে জেটিতে এনে পাইপের মাধ্যমে তেল খালাস করা হয়। এতে এক লাখ টন তেলবাহী একটি ট্যাংকার থেকে তেল খালাসে ১০ থেকে ১১ দিন সময় লাগে। সময় সাশ্রয়ে ২০১৫ সালে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকা।
প্রকল্পের আওতায় ১১০ কিলোমিটার লম্বা দুটি পাইপলাইন বসানো হয়েছে। একটি পাইপলাইন দিয়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল এবং আরেকটি পাইপলাইন দিয়ে পরিশোধিত ডিজেল খালাস হবে।
দেড় সহস্রাধিক যাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ডুবে যাওয়ার পর একশ বছরের বেশি সময় ধরে সাগরতলে সমাধিস্থ অবস্থায় রয়েছে টাইটানিক। প্রথম যাত্রায় সেই সময়কার বৃহত্তম জাহাজ টাইটানিকের ডুবে যাওয়া এখনো পর্যন্ত বিষ্মিত, বেদনার্ত করে বিশ্ববাসীকে। ইতিহাসের সেই বিষ্ময়কে কাছ থেকে দেখার উদ্দেশ্যে গত রোববার পাঁচ অভিযাত্রীকে নিয়ে উত্তর আটলান্টিকে ডুব দিয়েছিল পর্যটন সংস্থা ওশানগেটের দূরনিয়ন্ত্রিত ডুবোযান (আরওভি) টাইটান। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে টাইটানীকের যাত্রীদের মতো একই পরিণাম ঘটেছে টাইটানের পাঁচ আরোহীর।
বৃহস্পতিবার টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে আরেকটি ধ্বংসস্তুপ খুঁজে পাওয়া গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নতুন পাওয়া ধ্বংসস্তুপটি টাইটানের। মার্কিন কোস্টগার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মগার বলেন, ধারণা করা হচ্ছে মারাত্মক বিস্ফোরণেই টাইটান ধ্বংস হয়েছে।
কিঘটেছিল
বিস্ফোরণ মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে, অন্তর্মুখী (ইমপ্লোশন) ও বহির্মুখী (এক্সপ্লোশন)। যখন কোনো আবদ্ধ বস্তুর ভেতর প্রচন্ড পরিমাণে চাপ সৃষ্টি হয়, তখন সেটা বাইরের দিকে বিস্ফোরিত হয়, যা বহির্মুখী বিস্ফোরণ বা এক্সপ্লোশন। এর বিপরীত চিত্র দেখা যায় অন্তর্মুখী বিস্ফোরণে। কোনো বস্তুর ওপর বাইরের চাপ সহ্যসীমা ছাড়িয়ে গেলে অন্তর্মুখী বিস্ফোরণ বা ইমপ্লোশন ঘটে থাকে। টাইটানের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে। ধারণা করা হচ্ছে, গভীর সাগরের মাত্রাতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে না পেরে আরোহী সমেত বিস্ফোরিত হয়েছে ডুবোযানটি।
টাইটানের নির্মাতা স্টকটন রাশের দেওয়া তথ্যমতে, নাসা ও ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের নকশা অনুযায়ী কার্বন ফাইবার ও টাইটানিয়াম দিয়ে ডুবোজাহাজটি তৈর করা হয়েছিল। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জানায়, ২২ ফুট দৈর্ঘ্যরে ডুবোজাহাজটি সমুদ্রের নিচে প্রায় ১৩ হাজার ফুট বা ৪ হাজার মিটার পর্যন্ত যেতে সক্ষম।
তবে ২০১৮ সালে টাইটানের নকশা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্র তলদেশে অভিযান চালাতে হলে সেই গভীরতার চাপ সহ্য করার সক্ষমতা থাকা উচিত। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, টাইটানের কারিগরি দিকগুলো স্বতন্ত্র কোনো বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান কখনো যাচাই-বাছাই করে দেখেনি।
২০১৮ সালে এক প্রতিবেদনে ওশানগেটের সামুদ্রিক অভিযান বিভাগের পরিচালক ডেভিড লকরিচ জানিয়েছিলেন, ডুবোজাহাজটির আরও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। সেই বছর ওশানগেট ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন লকরিচ। তাদের আইনি লড়াই থেকে জানা যায়, সাগর তলদেশে ১ হাজার ৩০০ মিটার পর্যন্ত যাওয়ার প্রত্যয়নপত্র ছিলো টাইটানের ভিউপোর্টের। যা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ যে গভীরতায় রয়েছে, তার এক-তৃতীয়াংশের চেয়েও কম।
অন্যদিকে, ডুবোজাহাজটি একটি ‘প্রোটোটাইপ’ ছিলো বলে জানিয়েছেন ওশানগেটের শেয়ারহোল্ডার ও চারবার টাইটানে ভ্রমণকারী অভিযাত্রী অ্যারন নিউম্যান।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা বলা যায় টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া ডুবোযানের করুণ পরিণতি। সমুদ্র শিল্পের ইতিহাসে উজ্জ্বল একটি অধ্যায়ের অংশ হতে পারত যে ঘটনা, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেটিই মর্মান্তিকতার উদাহরণ হয়ে থাকল। বিয়োগান্তক এই ঘটনার কুশীলব হতে পারতেন জে ব্লুম ও তার ছেল শন ব্লুম। তবে শেষ পর্যন্ত নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে গেছেন দুজনে।
ওশানগেটের টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়ার অভিযানটি ছিল বেশ ব্যয়বহুল। টিকিটমূল্যও ছিল বেশ চড়া-জনপ্রতি আড়াই লাখ ডলার। স্বাভাবিকভাবে বিত্তবানরাই এই অভিযানে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। মার্কিন বিনিয়োগকারী জে ও তার ছেলে শন তাদের অন্যতম।
কিন্তু যে দূরনিয়ন্ত্রিত ডুবোযানে (আরওভি) করে টাইটানিকের কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল ওশানগেট, তার ওপর ভরসা করতে পারছিলেন না শন। সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক ঝুঁকি দেখতে পাচ্ছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল না যে, সাগরের এত গভীরে গিয়ে এটি টিকে থাকতে পারবে। শেষ পর্যন্ত আমি আমার সন্দেহের কথা বাবাকে বললাম। বাবাও শেষ পর্যন্ত আমার সঙ্গে একমত হলেন।’
নিরাপত্তা বিষয়ে যথেষ্ট আস্থা না থাকার কারণেই টাইটানিক অভিযান শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেন জে ও শন। আর তাদের ছেড়ে দেওয়া জায়গায় নাম লেখান পাকিস্তানি ধনকুবের শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ।
সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে থাকার এই বিষয়টিকে রীতিমতো অলৌকিক বলে মনে হচ্ছে জে ব্লুমের। তিনি বলেন, ‘সংবাদ মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা টেলিভিশন-যেখানেই চোখ রাখছি, সেখানেই টাইটানের দুর্ঘটনার খবর দেখতে পাচ্ছি। বলা যায়, দুঃসহ এক অভিজ্ঞতা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে আমাদের।’
ওশানগেটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) স্টকটন রাশ কীভাবে লাস ভেগাসে তাদের বাড়িতে গিয়ে টাইটানিক অভিযানের টিকিট কেনার প্রস্তাব দিতে গিয়েছিলেন, সেই স্মৃতিচারণও করেন জে। তিনি বলেন, ‘আমি দুই আসনবিশিষ্ট একটি পরীক্ষামূলক উড়োজাহাজ বানিয়েছিলাম। রাশ সেই উড়োজাহাজে চড়েই আমাকে টিকিট কেনার প্রস্তাব দিতে এসেছিলেন। তিনি আমার তৈরি পরীক্ষামূলক উড়োজাহাজে চড়েছেন। বিষয়টি আমাকে তার তৈরি পরীক্ষামূলক ডুবোযানে চড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করেছিল।’
জে বলেন, ‘রাশের ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষুধা ছিল অন্য মাত্রার। আমি একজন পাইলট। হেলিকপ্টার পাইলট হিসেবে লাইসেন্স রয়েছে আমার। আমি কখনই একটি পরীক্ষামূলক আকাশযানে উঠতে যাব না। কিন্তু রাশ নিজেই তার তৈরি পরীক্ষামূলক ডুবোযানে চড়ে বসেছিলেন।’
জে ও শন দুজনেই জানান, নিজেদের নিরাপত্তা উদ্বেগের কথা রাশকে জানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু ওশানগেট সিইও সেই উদ্বেগ নাকচ করে দেন।
বাবা শাহজাদার (ডানে) সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল সুলেমান দাউদ
মনটানছিলনাসুলেমানেরও: টাইটানিক দেখতে গিয়ে অকালে প্রাণ হারাতে হলো পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলেমান দাউদকে। তবে এই অভিযানে বেরুতে মন টানছিল না ১৯ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সুলেমান দাউদের। অভিযান শুরুর কয়েকদিন আগে থেকেই বেশ উদাসীন ছিল সুলেমান। তার ফুফু ও শাহজাদা দাউদের বড়বোন আজমেহ দাউদ এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন।
আজমেহ জানান, এক আত্মীয়ের কাছে সুলেমান বলেছিলেন, এই অভিযানে যেতে খুব বেশি উৎসাহী নন তিনি। ট্রিপটি নিয়ে তিনি বেশ আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছেন বলেও জানিয়েছিলেন সুলেমান।
কিন্তু কয়েকটি প্রেক্ষাপট তাকে টাইটানের যাত্রী হতে প্রভাবিত করেছিল। প্রথমত, ট্রিপটির দিনক্ষণ সাজানো হয়েছিল ফাদার্স ডের উইকেন্ডে। দ্বিতীয়ত, তার বাবা শাহজাদা একশ বছরের বেশি সময় আগে ডুবে যাওয়া টাইটানিক সম্পর্কে জানতে অনেক বেশি আগ্রহী ছিলেন। এ কারণে বলা যায় বাবাকে খুশি করতে এবং ফাদার্স ডের উপহার দিতেই এই ট্রিপে রাজি হয়েছিলেন সুলেমান।
আজমেহ বলেন, ‘আমার বারবার কেবল সুলেমানের কথা মাথায় আসছে। উনিশ বছরের টগবগে এক তরুণ শ্বাস নেওয়ার জন্য ছটফট করছে-এটি কোনোমতেই মেনে নিতে পারছি না আমি।’
উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে পানির প্রায় চার কিলোমিটার গভীরে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছেই আরও কিছু ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেগুলো সংযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া দূরনিয়ন্ত্রিত ডুবোযান (আরওভি) টাইটানের বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে ডুবোযানটির পাঁচ অভিযাত্রীর কেউই আর বেঁচে নেই বলে ধারণা করছে অপারেটর প্রতিষ্ঠান ওশানগেট।
বৃহস্পতিবার মার্কিন কোস্ট গার্ডের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা সিএনএন জানায়, কানাডীয় একটি জাহাজ থেকে পরিচালিত একটি দূরনিয়ন্ত্রিত ডিপ-সি রোবট টাইটানিকের কাছে নতুন কিছু ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পেয়েছে। এগুলো ডুবোযান টাইটানের হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিএনএনের এই খবর প্রকাশের কিছু সময়ের মধ্যেই ওশানগেট এক্সপেডিশন এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই মানুষগুলো ছিলেন সত্যিকারের অভিযাত্রী। নতুন কিছুর অনুসন্ধান ও সমুদ্রের সুরক্ষায় তাদের ছিল গভীর আকাঙ্ক্ষা। বিষাদময় এই সময়ে পাঁচ বিদেহী আত্মা ও তাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা রইল ।’
একাধিক দেশের উদ্ধারকারী দল গত কয়েকদিন ধরে ২২ ফুট দীর্ঘ টাইটানের সন্ধানে আটলান্টিকের কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা চষে বেড়িয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করুণ পরিণতিই মেনে নিতে হলো পাঁচ অভিযাত্রীকে।
টাইটানের সাপোর্ট শিপ পোলার প্রিন্স
তদন্তের ঘোষণা কানাডার: ওশানগেটের টাইটানিক দেখতে যাওয়ার অভিযান, আরওভি টাইটানের সংযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, টাইটানিকের প্রায় ১ হাজার ৬০০ ফুট দূরে নতুন কিছু ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া ও পাঁচ আরোহীর মৃত্যু-এই পুরো ঘটনাপ্রবাহ খতিয়ে দেখবে কানাডা। প্রথম কোনো দেশ হিসেবে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দিল। ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড অব কানাডা জানিয়েছে, মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে তারা।
করুণ নিয়তি: টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাঁচ আরোহী নিয়ে ডুব দিয়েছিল আরওভি টাইটান। কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জোনস থেকে অভিযানটি শুরু হয়। টাইটানকে নির্দিষ্ট গন্তবে বয়ে নিয়ে যায় পোলার প্রিন্স নামের একটি সাপোর্ট শিপ। ১৮ জুন সকালে নির্দিষ্ট অবস্থানে পৌঁছে ডুব দেয় টাইটান। সাগরের নিচে দুই ঘণ্টার যাত্রা শুরুর ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের মাথায় সেটি দূরনিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। ডুবোযানটিতে জরুরি পরিস্থিতিতে ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল।
এরপর টাইটানের খোঁজে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কেপ কোড থেকে প্রায় ৯০০ মাইল পূর্ব ও কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জোনস থেকে ৪০০ মাইল দক্ষিণে প্রায় সাড়ে সাত হাজার বর্গমাইল এলাকাজুড়ে ২১ ফুট দীর্ঘ ডুবোযানটির অনুসন্ধানে অভিযান চালানো হয়। এক পর্যায়ে কানাডার একটি পি-থ্রি মেরিটাইম প্যাট্রল এয়ারক্রাফট পানির নিচ থেকে আসা এক ধরনের শব্দ শনাক্ত করে। ৩০ মিনিট অন্তর অন্তর ধাতব আঘাতের মতো সেই শব্দের উৎস জানতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অভিযান জোরদার করা হয়।
ওশানগেট এক্সপেডিশনের আটদিনের এই অভিযানে গিয়ে করুণ পরিণতি বরণ করে নেওয়া পাঁচ অভিযাত্রী হলেন ব্রিটিশ ধনকুবের হামিশ হারডিং, ফরাসি ডুবুরি পল-হেনরি নারজিওলেট, পাকিস্তানি বিলিওনেয়ার শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলাইমান দাউদ এবং ওশানগেটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টকটন রাশ। অভিযানে জনপ্রতি টিকেটমূল্য নির্ধারণ করা হয় আড়াই লাখ ডলার।
টাইটানিক ডুবে যাওয়ার স্থান
প্রাণঘাতী টাইটানিক: ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল উত্তর আটলান্টিকে হিমবাহের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় সে সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজ টাইটানিক। ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের পথে প্রথম যাত্রাতেই এই দুর্ঘটনায় পড়ে জাহাজটি। টাইটানিকের ২ হাজার ২২৪ জন আরোহীর মধ্যে দেড় হাজারের বেশি আরোহীর সলিল সমাধি হয়েছিল সেদিন। শান্তিপূর্ণ সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে মর্মান্তিক সমুদ্র দুর্ঘটনা বিবেচনা করা হয় একে। একশ বছরের বেশি সময় ধরে সাগরের তলদেশে পড়ে থাকা সেই টাইটানিকই পরোক্ষভাবে আরও পাঁচটি জীবন কেড়ে নিল।
চলতি বছর বিশ্বজুড়ে গভীর সমুদ্র তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগ ২০ শতাংশের বেশি বেড়ে যাবে এবং এই প্রবৃদ্ধি আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। তেলক্ষেত্রগুলোয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও সেবাদানকারী বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানি এসএলবি এই পূর্বাভাস করেছে।
গত কয়েক বছরে সারা বিশ্বে গভীর সমুদ্র তেল ও গ্যাস খাতে বিনিয়োগ অনেক বেড়েছে। দেশগুলো তাদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে। বলা যায়, বর্তমানে এই খাতে রেনেসাঁর যুগ চলছে। এসএলবি বলছে, চলতি বছর বিশ্বজুড়ে ৬৫টির মতো ইজারা চুক্তি সম্পন্ন হতে পারে। বেশ কয়েকটি দেশ ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে উন্মুক্ত নীতি গ্রহণ করায় বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে।
২০২২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ধারণা করছে এসএলবি। ২০১৬-২০১৯ মেয়াদের বিনিয়োগের চেয়ে তা ৯০ শতাংশ বেশি। এতেই বোঝা যাচ্ছে অফশোর তেল ও গ্যাস খাত এখন কতটা সম্ভাবনাময় সময় পার করছে।
এই যে প্রবৃদ্ধি, তাতে বেশ কয়েকটি দেশ নেতৃত্ব দেবে। বড় পরিসরে অফশোর প্রকল্প নিয়ে এগুচ্ছে গায়ানা, ব্রাজিল ও মধ্যপ্রাচ্য। উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছে আফ্রিকা। এছাড়া নতুন নতুন প্রকল্পের দিকে ঝুঁকছে নামিবিয়া, তাঞ্জানিয়া, কম্বোডিয়া, ভারত ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলো।
সি ট্রায়াল শুরু করেছে বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরী আইকন অব দ্য সিজ। সোমবার (১৯ জুন) ফিনল্যান্ডের মেয়ার তুর্কু শিপইয়ার্ড থেকে আড়াই লাখ গ্রস টনের বিশালাকার এই প্রমোদতরী প্রথমবারের মতো সমুদ্রযাত্রা শুরু করে। এই সি ট্রায়ালে জাহাজটির প্রপালশন সিস্টেম, নেভিগেশন সিস্টেম, সাগরে স্থিতিশীল থাকার সক্ষমতা ইত্যাদি বিষয় পরীক্ষা করে দেখা হবে। একই সঙ্গে প্রধান ইঞ্জিন, হাল, লাইফবোটসহ জাহাজটির বিভিন্ন অংশের প্রিলিমিনারি টেস্টও সম্পন্ন হবে। সাড়ে চার শতাধিক বিশেষজ্ঞ এই সি ট্রায়াল চলাকালে জাহাজটিতে অবস্থান করবেন।
সব প্রজন্মের মানুষের বিনোদনের খোরাক যোগাতে প্রস্তুত হচ্ছে আইকন অব দ্য সিজ। পুরো পরিবার নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠার সকল সুযোগ-সুবিধা থাকবে এই প্রমোদতরীটিতে।
‘আইকন অব দ্য সিজ’ নামটি শুনেই এর মালিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা তৈরি হওয়ার কথা। হ্যাঁ, চলতি শতকে একের পর এক দানাবাকার প্রমোদতরী নিজেদের বহরে যুক্ত করে তাক লাগিয়ে দেওয়া ফ্লোরিডাভিত্তিক রয়েল ক্যারিবিয়ান গ্রুপই জাহাজটির মালিক। বর্তমানে সার্ভিসে থাকা বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরী ওয়ান্ডার অব দ্য সিজও এই রয়েল ক্যারিবিয়ানেরই মালিকানাধীন। ওয়ান্ডার অব দ্য সিজের চেয়ে প্রায় ছয় শতাংশ বড় করে তৈরি করা হয়েছে আইকন অব দ্য সিজকে।
আইকন অব দ্য সিজের মাধ্যমে রয়েল ক্যারিবিয়ানের নতুন এক ক্রুজ ক্লাসের যাত্রা হচ্ছে। অর্থাৎ আইকন ক্লাসের প্রথম প্রমোদতরী হতে যাচ্ছে এটি। দীর্ঘ ১৫ বছর পর ক্রুজ ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন ক্লাসের প্রমোদতরীর আর্বিভাব ঘটছে। আপাতত আইকন-ক্লাসের মোট তিনটি প্রমোদতরী নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে রয়েল ক্যারিবিয়ানের। মেয়ার তুর্কু শিপইয়ার্ডে এই ক্লাসের দ্বিতীয় প্রমোদতরীর নির্মাণকাজ চলমান। আগামী বছর এটি হস্তান্তরের কথা রয়েছে। এছাড়া রয়েল ক্যারিবিয়ান তৃতীয় জাহাজটির কার্যাদেশ দিয়েছে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে, যেটি ২০২৫ সালে বুঝে পাবে তারা।
আইকন অব দ্য সিজের শুরুর গল্পটা ভীষণ মজার। রয়েল ক্যারিবিয়ানের তৎকালীন চেয়ারম্যান রিচার্ড ফেইন একটি পেপার ন্যাপকিনের ওপর প্রথম আইকন অব দ্য সিজের অ্যাকোয়াডোমের একটি ছবি আঁকেন। এরপর ২০১৬ সালের অক্টোবরে ফিনল্যান্ডের মেয়ার তুর্কু শিপইয়ার্ডে গিয়ে একই নকশার দুটি জাহাজটি বানিয়ে দেওয়ার কার্যাদেশ দেন তিনি। এভাবেই সাদা ন্যাপকিনে আঁকা এক টুকরো ছবি থেকে ভোজবাজির মতো তৈরি হয়ে যায় আইকন অব দ্য সিজ। ২০২১ সালে জাহাজটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।
৩৬৫ মিটার লম্বা (১ হাজার ১৯৮ ফুট) আইকন অব দ্য সিজে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬০০ যাত্রী ও ২ হাজার ৩৫০ ক্রু আরোহন করতে পারবেন। আগামী বছরের জানুয়ারিতে এর বাণিজ্যিক সেবা শুরু করার কথা রয়েছে। মিয়ামি থেকে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের উদ্দেশে চারটি ভিন্ন ভিন্ন রুটে চলাচল করবে প্রমোদতরীটি। প্রতিবার ভ্রমণ সম্পন্ন করতে সময় লাগবে এক সপ্তাহ।
দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রধান গেটওয়ে চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: বন্দর বার্তা
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গঠিত জাতীয় লজিস্টিকস উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সাথে সমন্বিতভাবে বৃহৎ পরিসরে কাজ করবে লজিস্টিকস ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কিং কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) সাবেক চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খানের যৌথ সভাপতিত্বে ওই কমিটির চতুর্থ সভা সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিল্ডের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম কমিটির ২০২৩-২৪ সালের কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। বিল্ডের চেয়ারপারসন ব্যারিস্টার নিহাদ কবির সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।
সভায় উল্লেখ করা হয়, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, যেমন; ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড লজিস্টিকস খাতের উন্নয়নে নীতি সংস্কার ও অবকাঠামোগত সহায়তা দিয়ে আসছে। উন্নয়ন প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতে পারে না। যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতীয় লজিস্টিকস ব্যয় কমাতে হবে। কমিটির কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিল্ড বিষয়টি সমন্বয় করতে পারে।
সম্প্রতি দু’দিনের লজিস্টিকস কর্মশালা থেকে প্রাপ্ত বেসরকারি খাতের সুপারিশমালা বিল্ড জাতীয় লজিস্টিকস উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থাপন করবে। এ ছাড়া লজিস্টিকস ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কিং কমিটি সরকারি-বেসরকারি খাতের সংলাপ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রাইভেট টু প্রাইভেট এবং প্রাইভেট টু গভর্নমেন্ট নেটওয়ার্ক গঠন, লজিস্টিকস সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বেসরকারি খাতের চাহিদা ও অগ্রাধিকার চিহ্নিতকরণ, তথ্য-উপাত্ত, ডাটা টুলকিট ও লজিস্টিকস ইনডেক্স প্রণয়ন, ট্রেড লজিস্টিকস ব্যবস্থাপনার সঙ্গে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের সমন্বয় সাধন, জাতীয় কমিটি ও উপকমিটিকে সহায়তা প্রদানের জন্য গবেষণা এবং কারিগরি ও সাচিবিক কার্যক্রম হাতে নেবে।
উৎপাদন খাতকে স্বাভাবিক রাখতে ১০ ধরণের পণ্যের আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার বিপরীতে নগদ মার্জিনের হার শিথিল করতে সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মঙ্গলবার (২০ জুন) এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্দেশনায় সব ব্যাংককে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এলসি ওপেনিং মার্জিন রেট নির্ধারণ করতে বলেছে।
আগে এসব পণ্য আমদানিতে ৭৫ শতাংশ এলসি মার্জিন দিতে হতো আমদানিকারকদের।
এলসি খোলার মার্জিন শিথিল করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে; শিল্প ও শিল্প-সংশ্লিষ্ট খুচরা যন্ত্রাংশ, টেক্সটাইল কাঁচামাল, রাসায়নিক ও আনুষঙ্গিক পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, ইউপিএস ও আইপিএস যন্ত্রাংশ।
অবশ্য ব্যাংক যদি গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনও এলসি মার্জিন না নিয়েই পণ্য আমদানি করতে চায়, তাহলে আমদানি করতে পারবেন। তবে অন্য যেসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শতভাগ ও ৭৫ শতাংশ এলসি মার্জিন রয়েছে, তা বিদ্যমান থাকবে।
যদিও বর্তমানে আরও কিছু পণ্যে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে আমদানি করা যায়। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে— শিশুখাদ্য, প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও সরঞ্জাম, উৎপাদনমুখী স্থানীয় শিল্প ও রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য সরাসরি আমদানিকৃত মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল, রপ্তানিমুখী শিল্প ও কৃষিপণ্য।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সাথে শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রাপ্তরা
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেছেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরে ৩৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর, চট্টগ্রাম বন্দরের বে টারমিনাল, মোলা বন্দরের আপগ্রেডেশন, পায়রা বন্দরের পুরোপুরি দৃশ্যমান হওয়া, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনে চারটি জাহাজ সংগ্রহ, স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়নসহ মেরিটাইম সেক্টরে অনেক উন্নয়ন হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আগামী তিন বছরের মধ্যে অনন্য উচ্চতায় চলে যাবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সরকারের আগামী দিনের ‘শোকেস’ মন্ত্রণালয়ে পরিণত হতে যাচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিপত্র (এপিএ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান করেন। মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত ১১টি দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সচিব মো. মোস্তফা কামাল এবং দপ্তর ও সংস্থার পক্ষে প্রধানগণ এপিএতে স্বাক্ষর করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রীর ফোন করা প্রমাণ করে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্বের কোন অবস্থানে আছেন তিনি। সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। এ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব । বিভিন্ন দেশ নৌমন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থায় বিনিয়োগ করেছে এবং করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
অধীনস্ত দপ্তর ও সংস্থার উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুধু চুক্তি স্বাক্ষর নয়, সেগুলো বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম খান, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. সেকেন্দার আলী খান এবং অফিস সহায়ক জিসান আহমেদ সানি চলতি অর্থবছরের শুদ্ধাচার পুরস্কার পেয়েছেন।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর কাছ থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর মধ্যে শুদ্ধাচার চর্চায় উৎসাহ প্রদানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় শুদ্ধাচার পুরস্কার দিয়ে আসছে প্রতিবছর। চলতি অর্থবছরের শুদ্ধাচার পুরস্কারের সংস্থা প্রধান ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল । আজ মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বন্দর চেয়ারম্যানের হাতে পুরস্কার তুলে দেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী এম খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এমপি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন সচিব মো. মোস্তফা কামাল, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং অধীনস্থ সকল দপ্তর ও সংস্থা প্রধানগণ।
রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল তাঁর গৌরবময় কর্মজীবনের বিভিন্ন স্তরে কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নির্বাহী শাখায় ১ জানুয়ারি ১৯৮৮ সালে কমিশন লাভ করেন। কমিশন পাওয়ার পর তিনি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। একজন অ্যান্টি সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার স্পেশালিস্ট অফিসার হিসেবে তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে অপরিসীম অবদান রেখেছেন। তিনি কানাডা থেকে ওয়ার গেম সিমুলেশন কোর্স, ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ ঢাকা থেকে নেভাল স্টাফ কোর্সে এবং ভারতের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ থেকে নেভাল স্টাফ কোর্সে অংশগ্রহণ করেছেন।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন পেশাদার কর্মকর্তা হিসেবে তিনি বিভিন্ন স্তরে স্টাফ এবং নির্দেশনামূলক দায়িত্ব পালন করেছেন। নৌসদর দপ্তর এবং এরিয়া সদর দপ্তরের স্টাফ অফিসার, পরিচালক, জুনিয়র স্টাফ কোর্স, ওয়ারফেয়ার ইন্সট্রাক্টর ইন স্কুল অফ মেরিটাইম ওয়ারফেয়ার অ্যান্ড ট্যাকটিকস, ডাইরেক্টিং স্টাফ এবং সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর (নৌ), ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সুদানে জাতিসংঘ মিশনেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সেবায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি নৌবাহিনী থেকে ওএসপি ও এনইউপি পদক লাভ করেন।
রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল এলিট ফোর্স র্যাবে সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর অসামান্য কর্মক্ষমতার জন্য তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদকে (পিপিএম) ভূষিত হন। রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল ডিজিএফআইয়ের কাউন্টার টেরোরিজম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (সিটিআইবি) ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ক ব্যুরো (আইএবি) এবং নৌসদর দপ্তরের পরিচালক সাবমেরিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে যোগ দিয়ে বন্দরের চ্যানেল ড্রেজিংসহ উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। সর্বশেষ রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল গত ২ মে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দিয়ে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।