Home Blog Page 28

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার অভিযানে পাঁচ আরোহীসহ যোগাযোগবিচ্ছন্ন ডুবোযান

উত্তর আটলান্টিকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাঁচ আরোহী নিয়ে ডুব দিয়ে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে টাইটান নামের একটি দূরনিয়ন্ত্রিত ডুবোযান (আরওভি)। মার্কিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওশানগেট ইনকরপোরেশন পরিচালিত এই ডুবোযানটিতে জরুরি পরিস্থিতিতে ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে।

সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, কানাডার একটি পি-থ্রি মেরিটাইম প্যাট্রল এয়ারক্রাফট আজ (২০ জুন) অনুসন্ধান এলাকায় পানির নিচ থেকে আসা এক ধরনের শব্দ শনাক্ত করেছে। তবে এই শব্দ টাইটান থেকে আসছে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এই প্রথম টাইটানের অনুসন্ধান অভিযানে পানির নিচ থেকে কোনো শব্দ শনাক্ত করা গেল। প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর কোনো কিছুতে আঘাত করার মতো শব্দ পাচ্ছে অনুসন্ধানকারী দল। এই শব্দের উৎস কী, সেটি জানতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

অভিযানে একযোগে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার কোস্টগার্ড। এ কাজে সহায়তা করছে মার্কিন নৌবাহিনী ও বিভিন্ন বেসরকারি উদ্ধারকারী দল। মার্কিন কোস্টগার্ড এই অভিযানকে অত্যন্ত জটিল হিসেবে অভিহিত করেছে। বিশেষ করে ডুবোযানটিতে আর মাত্র ৪০ ঘণ্টা সাপোর্ট দেওয়ার উপযোগী অক্সিজেন অবশিষ্ট থাকার বিষয়টিকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কেপ কোড থেকে প্রায় ৯০০ মাইল পূর্ব ও কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জোনস থেকে ৪০০ মাইল দক্ষিণে প্রায় সাড়ে সাত হাজার বর্গমাইল এলাকাজুড়ে ২১ ফুট দীর্ঘ ডুবোযানটির অনুসন্ধানে অভিযান চালানো হচ্ছে। বিশাল আটলান্টিকে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলা টাইটানের অবস্থান শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। ডুবোযানটির পাঁচ আরোহী এখনো সুস্থ আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বাইরে থেকে সাহায্য না পেলে তারা অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হতে পারবেন না। এ কারণে আরোহীদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের জন্য ডুবোযানটির সন্ধান পাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

ওশানগেট এক্সপেডিশনের অংশ হিসেবে আটলান্টিকে টাইটানিকের ধ্বাংসাবশেষ দেখতে যাওয়ার এই অভিযানের ব্যবস্থা করা হয়। আটদিনের এই অভিযানে জনপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয় আড়াই লাখ ডলার। অভিযান পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন জানিয়েছেন, ডুবোযানে আটকা পড়া পাঁচ অভিযাত্রী হলেন ব্রিটিশ ধনকুবের হামিশ হারডিং, ফরাসি ডুবুরি পল-হেনরি নারজিওলেট, পাকিস্তানি বিলিওনেয়ার শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলাইমান দাউদ এবং ওশানগেটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টকটন রাশ।

পোলার প্রিন্স

নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জোনস থেকে অভিযানটি শুরু হয়। আরওভি টাইটানকে নির্দিষ্ট গন্তবে বয়ে নিয়ে যায় পোলার প্রিন্স নামের একটি সাপোর্ট শিপ। ১৮ জুন সকালে নির্দিষ্ট অবস্থানে পৌঁছে সাগরের তলদেশে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ লক্ষ্য করে ডুব দেয় টাইটান। প্রায় দুই ঘণ্টা সময় ধরে নিচের দিকে যাওয়ার পর টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে পৌঁছানোর কথা ছিল সেটির। কিন্তু ডুব দেওয়ার ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পরই পোলার প্রিন্সের সাথে যোগাযোগ হারায় টাইটান। কী কারণে ডুবোযানটি যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল, কিংবা নিখোঁজের সময় এটি টাইটানিকের কতটা কাছাকাছি পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিল, সেই বিষয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাজ্যে পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ পেল বাংলাদেশসহ ৬৫ উন্নয়নশীল দেশ

বাংলাদেশসহ ৬৫টি উন্নয়নশীল দেশের জন্য নতুন উদার বাণিজ্য ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য। সোমবার (১৯ জুন) থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন এই ব্যবস্থা। এর অধীনে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর তৈরি পোশাকসহ ৯৮ শতাংশ পণ্য যুক্তরাজ্যের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে।

যুক্তরাজ্য দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নতুন স্কিমে বাণিজ্যিক নীতি সহজীকরণ ও শুল্ক হার হ্রাস করা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো অন্য দেশ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য আমদানি করে মূল্য সংযোজন করলে সেটির ওপরেও শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে যুক্তরাজ্য। ৯৫টি দেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে তৈরি পণ্য রপ্তানি করলে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে যুক্তরাজ্য।

দাবি করা হচ্ছে, স্বাধীন ও নায্য বাণিজ্য, মানবাধিকার, ও সুশাসনকে উৎসাহিত করবে নতুন এই বাণিজ্যিক ব্যবস্থা।

যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত সারাহ কুক বলেন, নতুন স্কিম বাংলাদেশের উৎপাদন সক্ষমতায় সহায়তা করবে, দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে এবং গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে প্রবেশাধিকার সহজ করবে। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের ভোক্তারাও উপকৃত হবে প্রতিযোগিতামূলক দাম ও বিভিন্ন পণ্যের সহজলভ্যতার জন্য।

এলএনজি আমদানিতে ওমানের সাথে দ্বিতীয় দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষর

ওমান থেকে এলএনজি আমদানির জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষর করলো পেট্রোবাংলা ও ওমানের প্রতিষ্ঠান ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী, ওমান থেকে ২০২৬ সালের পর থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ বছরে দেড় মিলিয়ন মেট্রিক টন এলএনজি আনা যাবে।

সোমবার (১৯ জুন) ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে ওমান থেকে সরকারি পর্যায়ে ১০ বছর মেয়াদী এই এলএনজি আমদানি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তিতে পেট্রোবাংলার পক্ষে পেট্রোবাংলার সচিব রুচিরা ইসলাম এবং ওমানের পক্ষে ওকিউটির নির্বাহী পরিচালক সাইদ আল মাওয়ালী স্বাক্ষর করেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে পেট্রোবাংলা ও ওকিউটির সাথে ২০১৮ সালের ৬ মে এলএনজির সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এসপিএ) প্রথম চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল।

চুক্তি অনুযায়ী, ওকিউটি দশ বছর মেয়াদে (২০২৬ সালে ৪ কার্গো এলএনজি, ২০২৭ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ১৬ কার্গো এলএনজি এবং ২০২৯ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ২৪ কার্গো এলএনজি) এলএনজি সরবরাহ করবে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই এলএনজি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বাংলাদেশ গ্যাস অনুসন্ধান কাজ জোরদার করেছে। গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানের জন্য পিএসসিকে হালনাগাদ করা হচ্ছে। এ সময় তিনি ওমানসহ সংশ্লিষ্টদের আগত পিএসসিতে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ওমানের রাষ্ট্রদূত আব্দুল গাফ্ফার আলবুলুসি, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার, ওকিউটি’র নির্বাহী পরিচালক সাইদ আল মাওয়ালী বক্তব্য রাখেন।

অবৈধ মৎস্য আহরণ নিয়ন্ত্রণে চীন-দক্ষিণ কোরিয়া চুক্তি

পূর্ব চীন সাগরে অবৈধ, অজ্ঞাতসার ও অনিয়ন্ত্রিত (আইইউইউ) মৎস্য আহরণ নিয়ে আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব চলে আসছে অনেকদিন ধরে। এই অবৈধ আহরণ বন্ধ করতে পারস্পারিক সহযোগিতার বিষয়ে সম্মত হয়েছে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া। অতিসম্প্রতি দেশ দুটির মধ্যে এ বিষয়ক একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। গত সপ্তাহে দুই দেশের মৎস্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।

চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো উত্তর কোরিয়ার জলসীমায় অবৈধভাবে কার্যক্রম চালানো চীনা মাছ ধরার ট্রলারগুলোর বিষয়ে রিপোর্টিংয়ে কোরিয়া ও চীনের পারস্পারিক সহযোগিতা। এছাড়া চুক্তি অনুযায়ী, এই ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের নজরদারি ও তদন্তের ফলাফল এবং সেই অনুযায়ী গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে সিউলকে অবহিত করার কথাও বলা রয়েছে চুক্তিতে।

বছরের পর বছর ধরে পূর্ব চীন সাগরে উত্তর কোরিয়ার জলসীমায় চীনের মাত্রাতিরিক্ত মৎস্য আহরণ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এর ফলে সাগরটিতে মৎস্যসম্পদের পরিমাণ কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব দক্ষিণ কোরিয়ার মৎস্য আহরণ খাতের ওপরও পড়ছে। কোরিয়ান মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার স্কুইড আহরণের পরিমাণ ১ লাখ ৬৩ হাজার টন থেকে কমে ৪৬ হাজার টনে নেমে এসেছে। এই সময়ে পূর্ব চীন সাগরে অবৈধ মৎস্য আহরণ অনেকে বেড়ে গিয়েছিল।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে গৃহীত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজোলিউশন নং ২৩৯৭ অনুসারে, উত্তর কোরিয়া বিদেশী কোনো ট্রলারের কাছে তাদের জলসীমায় মাছ ধরার অধিকার বিক্রি অথবা হস্তান্তর করতে পারবে না। চীনও সে অনুযায়ী তাদের মাছ ধরার ট্রলারগুলোর ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার জলসীমায় মৎস্য আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

নতুন সহযোগিতামূলক চূক্তিতে দক্ষিণ কোরিয়া চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন চীনা মাছ ধরার ট্রলারগুলোয় অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এআইএস) স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়।

বর্তমানে কেবল প্রভিশনাল মেজারস জোনে (পিএমজেড) অবৈধ মৎস্য আহরণের বিরুদ্ধে নজরদারি চালায় চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া। পিএমজেড হলো সাগরের যে এলাকায় প্রতিবেশী দুই দেশের ট্রলারই মাছ ধরতে পারে। নতুন চুক্তিতে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার এই যৌথ প্যাট্রলিংয়ের পরিসর বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে, যা আগামী বছর থেকে কার্যকর হবে।

এর আগে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ২০০১ সালে একটি মৎস্য আহরণ চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তিতে পূর্ব চীন সাগর ও ইয়েলো সিতে দুই দেশের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় (ইইজেড) সামুদ্রিক সম্পদের সুরক্ষা ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতে পারস্পারিক সহযোগিতার কথা বলা হয়েছিল।

মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি কমছে ডলার সংকটে

ডলার সংকটের কারণে আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। আমদানি শুল্ক বাড়ানো, শতভাগ পর্যন্ত এলসি মার্জিন নির্ধারণ এবং নিয়মিতভাবে এলসির তথ্য তদারক করা হচ্ছে। মূলত বিলাসী পণ্য আমদানি কমাতে এমন উদ্যোগ। তবে ডলারের সংকটের প্রভাবে দেখা যাচ্ছে মূলধনি যন্ত্রপাতি এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমছে বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ৬ হাজার ২৪০ কোটি ডলার সমপরিমাণ এলসি খোলা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। এ সময়ে এলসি সবচেয়ে কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতির। গত ১১ মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ২৬৯ কোটি ডলারের এলসি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৬০০ কোটি ডলার। এর মানে কমেছে ৫৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।

কমে যাওয়ার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শিল্পের কাঁচামাল। এর এলসি ৩০ দশমিক ১৫ শতাংশ কমে ২ হাজার ৪২১ কোটি ডলারে নেমেছে। পর্যায়ক্রমে মধ্যবর্তী পণ্যে ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ কমে ৫২৬ কোটি ডলারে নেমেছে। ভোক্তাপণ্যে ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ কমে নেমেছে ৭১৪ কোটি ডলারে। আর পেট্রোলিয়ামের এলসি ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ কমে নেমেছে ৮৪৪ কোটি ডলারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, টাকা থাকলেও ডলার সংকটের কারণে অনেকে এলসি খুলতে পারছেন না। এ ছাড়া বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থানের কারণেও এলসি কমে থাকতে পারে। বাজার ঠিক রাখতে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছর বিক্রি করা হয় ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।

ডলার সাশ্রয়ে টাকা ও রুপিতে লেনদেনে ডেবিট কার্ড চালু করছে বাংলাদেশ ব্যাংক

ডলার সাশ্রয়ে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে টাকা ও রুপিতে লেনদেনে ডেবিট কার্ড চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কার্ড দিয়ে দেশের ভেতরে টাকা দিয়ে কেনাকাটাসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ করা যাবে এবং পাশাপাশি ভারত ভ্রমণের সময় রুপিতে খরচ করার সুযোগ পাবেন ব্যবহারকারীরা।

রোববার (১৮ জুন) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

গভর্নর বলেন, আমরা টাকার একটি পে-কার্ড চালু করছি। এটাকে ভারতের রুপির সঙ্গে সংযুক্ত করে দেব। এ কার্ড থাকলে গ্রাহকরা বাংলাদেশে ডেবিট কার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। যেকোনো কেনাকাটা করতে পারবেন। আবার যখন ভারতে যাবেন তখনও এ কার্ড দিয়েই ভ্রমণ কোটায় ১২ হাজার ডলার খরচ করতে পারবেন।

ফলে দুইবার মানি চেঞ্জে যে লস হচ্ছে, তা আর হবে না। অর্থাৎ ভ্রমণে যেতে হলে প্রথমে টাকা থেকে ডলারে কনভার্ট করতে হয়, পরে ভারতে গিয়ে ডলার রুপিতে কনভার্ট করতে হয়। টাকার পে-কার্ড নিলে দুইবার মানি চেঞ্জ করতে হবে না।

এতে করে কমপক্ষে ৬ শতাংশের মতো খরচ কমবে বলে জানান গভর্নর।

তিনি বলেন, ভারতে প্রতি বছর অনেক বাংলাদেশি পর্যটক ঘুরতে যান। তাদের জন্য এ কার্ড অনেক সুবিধাজনক হবে।

যেসব দেশ থেকে বেশি সংখ্যায় পর্যটক ভারতে গেছে, তার শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে ২১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৫৭ জন বাংলাদেশি পর্যটক ভিসায় ভারতে গিয়েছিল।

গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আরও বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত তাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য লেনদেনের একটি অংশ নিজ নিজ মুদ্রায় নিষ্পত্তি করতে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। এ চুক্তির লক্ষ্য ডলারের রিজার্ভের ওপর চাপ কমানো।

তিনি বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় আসে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার; এই পরিমাণ বাণিজ্য লেনদেন রুপিতে নিষ্পত্তি করা হবে।

কার্বন শুল্ক তহবিল শিপিং খাতের বৃহত্তর কল্যাণে সহায়ক হবে: বিশ্বব্যাংক

আন্তর্জাতিক সমুদ্র পরিবহন খাতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কার্বন শুল্ক আরোপের পক্ষে জনমত জোরালো হচ্ছে ক্রমশ। এর সঙ্গে আরও একটি বিষয় আলোচনার খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে-এই কর আদায়ের মাধ্যমে যে তহবিল গড়ে উঠবে, সেটি কীভাবে কাজে লাগালে সমুদ্র পরিবহন খাত সর্বোচ্চ মাত্রায় উপকৃত হবে।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ১ লাখ কোটি থেকে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার জমা হতে পারে। বিভিন্ন পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে প্রতি বছর ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার থেকে ১০ হাজার ৫০০ কোটি ডলার পর্যন্ত কার্বন শুল্ক আদায়ের প্রাক্কলন করছে বিশ্বব্যাংক। এই অর্থ সমুদ্র পরিবহন খাতকে নিঃসরণমুক্ত করা, এই খাতের অবকাঠামো ও সক্ষমতার উন্নয়ন, বৃহত্তর জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, জাহাজের বহর আধুনিকীকরণ ও নবায়ন, কার্বনমুক্ত ইঞ্জিন ও প্রপালশন সিস্টেম স্থাপন, জাহাজের জ্বালানি কার্যদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উপযোগী প্রযুক্তির প্রয়োগ ইত্যাদি কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রায়োগিক খাত দেখিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কার্বন তহবিল থেকে যেন সবাই ন্যায্য ভাগ পায়, সেই বিষয়টির ওপরও জোর দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশেষ করে ভূমিবেষ্টিত, ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো (যারা নগণ্য পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অন্যদের সমান বা কখনো কখনো বেশি ভুগতে হচ্ছে) যেন এই তহবিল থেকে ন্যায়সঙ্গত হিস্যা পায়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

শিপিং খাতে কার্বন শুল্ক আরোপ নিয়ে দীর্ঘ ১০ বছর আলোচনার পর গত বছর ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) ইন্টারসেশনাল ওয়ার্কিং গ্রুপের (আইএসডবিøউজি) বৈঠকে সমুদ্র পরিবহন খাতে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের বিপরীতে শুল্ক আরোপের বিষয়ে একমত হয় দেশগুলো। অবশ্য এখন পর্যন্ত এর নির্দিষ্ট কোনো হার নির্ধারিত হয়নি। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বিভিন্ন হারে কার্বন শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছে।

আইএমওর কাছে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অংকের শুল্ক আরোপের প্রস্তাব এসেছে জাপানের পক্ষ থেকে। দেশটি ২০২৫ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে শিপিং খাতে প্রতি টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের বিপরীতে ৫৬ ডলার, ২০৩০ সাল থেকে টনপ্রতি ১৩৫ ডলার, ২০৩৫ সাল থেকে ৩২৪ ডলার ও ২০৪০ সাল থেকে ৬৭৩ ডলার হারে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছে। যেহেতু প্রতি টন বাংকার ফুয়েল প্রায় তিন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ করে, সেহেতু প্রতি টন বাংকার ফুয়েলের ক্ষেত্রে শুল্কের পরিমাণ উল্লিখিত অংকের তিনগুণ হবে।

এছাড়া প্রতি টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের বিপরীতে ২০০ ডলার করে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছে গেটিং টু জিরো কোয়ালিশন। প্রতি টন বাংকার ফুয়েলের ওপর ৪৫০ ডলার অথবা প্রতিটন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণে ১৫০ ডলার শুল্কের প্রস্তাব করেছে কনটেইনার শিপিং জায়ান্ট মায়েরস্ক। মার্শাল আইল্যান্ডস ও সলোমন আইল্যান্ডসের প্রস্তাব টনপ্রতি ১০০ ডলার শুল্কের। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলেছে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে গেলে ২০৩০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক গড় কার্বন শুল্কের পরিমাণ টনপ্রতি অন্তত ৭৮ ডলারে উন্নীত করতে হবে। বর্তমানে এই হার মাত্র ২ শতাংশ।

কার্বন শুল্কের সমর্থনে যে যুক্তি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, সেটি হলো-এই শুল্ক আদায়বাবদ যে তহবিল তৈরি হবে, তা থেকে পরিচ্ছন্ন বা সবুজ জ্বালানিতে ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে। এই শল্ক আরোপের ফলে একদিকে জীবাষ্ম জ্বালানির দাম বেড়ে যাবে, অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির খরচ কমে যাবে। এতে জাহাজগুলো সবুজ জ্বালানি ব্যবহারে আরও বেশি উৎসাহিত হবে।

এছাড়া নিঃসরণমুক্ত প্রপালশন প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানির প্রচলন ঘটানোর জন্য ব্যাপক পরিসরে গবেষণা ও উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে। এসব প্রযুক্তি ও জ্বালানি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহারের আগে পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাটাও জরুরি। এসব প্রক্রিয়া বেশ ব্যয়বহুল। কার্বন শুল্ক তহবিল থেকে এই ব্যয় নির্বাহ করা হলে দেশগুলো গবেষণা, উদ্ভাবন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আরও বেশি আগ্রহী হবে।

বৈশ্বিকভাবে মোট যে পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করা হয়, তার প্রায় তিন শতাংশ আসে সমুদ্র পরিবহন খাত থেকে। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ব্যবহারে এখনই উদ্যোগ না নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ২০০৮ সালের তুলনায় ৯০-১৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে।

নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানিতে উল্লম্ফন

দেশের তৈরি পোশাক খাতের বড় রপ্তানি বাজারগুলোতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হলেও নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়ছে। সম্প্রতি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মে মাসের দেশভিত্তিক রপ্তানির এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে মোট পোশাক রপ্তানি পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৬৭% প্রবৃদ্ধিসহ চার হাজার ২৬৩ কোটি মার্কিন ডলার হয়েছে। অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ৩২.৭৪ শতাংশ।

এতে দেখা যায়, একক বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে এ সময় রপ্তানি আয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে নতুন বাজার জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়ায় রপ্তানি আয় বেড়েছে। এ ছাড়া কানাডার বাজারেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এ সময় ইউরোপের বাজারে রপ্তানি হয়েছে দুই হাজার ১২২ কোটি ডলার, যা মোট রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশ।

জার্মানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.২২ শতাংশ। এই বাজার থেকে আয় এসেছে ৬০৩ কোটি ডলার। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আয় কমেছে ৫ শতাংশ। এ সময় আয় হয়েছে ৭৭৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে ছিল ৮১৪ কোটি ৬৬ লাখ ডলার।

এদিকে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে মোট রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ৩২.৭৪ শতাংশ। এ সময় বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব ও ব্রাজিলে। এ সময় জাপানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৫.৮০ শতাংশ। আয় হয়েছে ১৪৫ কোটি ৭৯ লাখ ডলার।

অস্ট্রেলিয়ায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪১.৮২ শতাংশ, আয় হয়েছে ১০৬ কোটি ডলার। ভারতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৬.৪৪ শতাংশ, আয় হয়েছে ৯৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। মালয়েশিয়ায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫১.৭১ শতাংশ, আয় হয়েছে ২৭ কোটি ৯১ লাখ ডলার। তুরস্কে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৩.১৪ শতাংশ, আয় হয়েছে ২৫ কোটি ডলার। ব্রাজিলে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭৪.৬৪ শতাংশ, আয় হয়েছে ১৫ কোটি ১১ লাখ ডলার এবং সৌদি আরবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩২ শতাংশ, আয় হয়েছে ১৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার।

অস্ট্রেলিয়ায় বাল্কারের মাস্টার, চিফ ইঞ্জিনিয়ার গ্রেপ্তার

বিপুল পরিমাণ কোকেন পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকা এবং বিষয়টি লুকানোর চেষ্টা করার অভিযোগে একটি বাল্ক ক্যারিয়ারের মাস্টার ও চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার ফ্রিম্যান্টলে সপ্তাহ দুয়েক আগে বাল্কার সেন্ট পিনট থেকে প্রায় সাড়ে আটশ কেজি কোকেন জব্দ করা হয়।

অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ, অস্ট্রেলিয়ান বর্ডার ফোর্স, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া পুলিশ ফোর্স, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিমিনাল ইন্টেলিজেন্স কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ বিষয়ে তদন্ত করেছে। তদন্তে এই কোকেন পাচার প্রচেষ্টায় ক্যাপ্টেন ও চিফ ইঞ্জিনিয়ারের দুজনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে পার্থ ম্যাজিস্ট্রেটস কোর্টে অভিযোগপত্রও গঠন করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত দুজনেই মন্টিনিগ্রোর নাগরিক। তাদের মধ্যে ক্যাপ্টেনের বয়স ৪৩ বছর। আর চিফ ইঞ্জিনিয়ারের বয়স ৩৯ বছর। আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের দুজনেরই সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীন কারাদণ্ড হতে পারে। এদিকে পুলিশ আগেই অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের এই কোকেনের চালান গ্রহণ করার কথা ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাদেরও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।

মার্শাল আইল্যান্ডসের পতাকাবাহী ৫৮ হাজার ডিডব্লিউটির বাল্কারটি গত এপ্রিলের শেষের দিকে আর্জেন্টিনা ত্যাগ করে। ২৫ মে সেটি ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার ফ্রিম্যান্টলে পৌঁছায়।

অধিকতর তল্লাশি চালানোর পর সেন্ট পিনটকে ছেড়ে দিয়েছে অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ। নতুন মাস্টার ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার যোগদানের পর গতকাল (১৬ জুন) জাহাজটি ফ্রিম্যান্টল ত্যাগ করেছে।

শ্রমিক অসন্তোষে থমকে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলবর্তী বন্দরগুলোর কার্যক্রম

নিয়োগ চুক্তিসংক্রান্ত ইস্যুতে ডক শ্রমিকদের টানা ধর্মঘটের কারণে চলতি মাসের শুরু থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলবর্তী বন্দরগুলোর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। যার ফলে বন্দরগুলোয় অপেক্ষমান কনটেইনারের সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। মেরিটাইম বিশ্লেষক মেরিনট্রাফিকের তথ্যমতে, ওকল্যান্ড, লস অ্যাঞ্জেলস ও লং বিচ বন্দরে মোট ৮৬ হাজার ৩৮১টি কনটেইনার আটকা পড়েছে, যেগুলোর সম্মিলিত মূল্যমান প্রায় ৫২০ কোটি ডলার।

৫ জুন থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহে ওকল্যান্ড বন্দরে অপেক্ষারত কনটেইনারের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সপ্তাহের শুরুতে বন্দরটিতে ২৫ হাজার ২৬৬টি কনটেইনার অপেক্ষারত অবস্থায় থাকলেও সপ্তাহান্তে সেই সংখ্যা ৩৫ হাজার ১৫৩টিতে দাঁড়িয়েছে। মেরিনট্রাফিকের একজন মুখপাত্র জানান, একই সময়ে লস অ্যাঞ্জেলস ও লং বিচ বন্দরের অপক্ষোরত কনটেইনারের গড় সংখ্যা ২১ হাজার ২৯৭ টিইইউ থেকে বেড়ে ৫১ হাজার ২২৮ টিইইউতে পৌঁছেছে ।

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের ২৯টি বন্দরে কর্মরত ২ হাজার ২০০ ডক শ্রমিকের নিয়োগ চুক্তির মেয়াদ ২০২২ সালের ১ জুলাই শেষ হয়। গত বছর ১০ মে অর্থাৎ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দুই মাস আগে থেকে পরবর্তী চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসে শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল লংশোর অ্যান্ড ওয়ারহাউজ ইউনিয়ন (আইএলডব্লিউইউ) এবং বন্দরগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা প্যাসিফিক মেরিটাইম অ্যাসোসিয়েশন (পিএমএ)। প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাস্থসেবা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সংক্রান্ত আলোচনা বেশ ইতিবাচকভাবে আগালেও ২০২২ সালের শেষ দিকে আলোচনার গতি অনেকটাই শ্লথ হয়ে যায়।

কোভিড পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্টের পশ্চিম উপকূলবর্তী বন্দরগুলোর কার্যক্রম অনেক বৃদ্ধি পায়। কাজের গতি বেড়ে যাওয়ায় সে সময় বেশ বড় অঙ্কের লাভের মুখ দেখে বন্দরগুলো। বিশাল সেই আয় থেকে শ্রমিকদের জন্য লভ্যাংশ দাবি করে আইএলডব্লিউইউ। এছাড়াও প্রায় এক বছর চুক্তি-বহির্ভূকভাবে কাজ করায় শ্রমিকদের ভেতর অসন্তোষ দেখা দেয়। চলতি বছর মার্চ মাস থেকে লস অ্যাঞ্জেলস ও লং বিচ বন্দরে কাজের গতি কমিয়ে দেয় ডক শ্রমিকেরা।

চুক্তির আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় ৬ ও ৭ এপ্রিল আইএলডব্লিউইউ লোকাল ১৩ শ্রমিকদের কাজ করা থেকে বিরত রাখে। যার ফলে লস অ্যাঞ্জেলস এবং লং বিচ বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে লস অ্যাঞ্জেলস, লং বিচ, ওকল্যান্ড, টাকোমা ও সিয়াটল বন্দরে শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে থাকায় ২ জুন পশ্চিম উপকূলের বেশ কয়েকটি বন্দরের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।

আলোচনার অগ্রগতি

শ্রমিক অসন্তোষ জটিল আকার ধারণ করায় ক্ষতির মুখে পড়েছে মার্কিন সাপ্লাই চেইন। এমতাবস্থায় সরকারের সহায়তা কামনা করেছে মার্কিন চেম্বার অব কমার্স। সম্প্রতি প্রশাসনের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে তারা জানায়, বন্দর কার্যক্রম বন্ধ থাকলে মার্কিন অর্থনীতিকে দৈনিক প্রায় ১০০ কোটি ডলার খরচের ধাক্কা সামলাতে হয়। পিএমএ ও আইএলডব্লিউইউর মধ্যে আলোচনা ত্বরান্বিত করে একটি সমাধানে পৌঁছানোর লক্ষ্যে প্রেসিডেন্টের কাছে একজন ‘স্বতন্ত্র মধ্যস্থতাকারী’ নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে চেম্বার।

ভারপ্রাপ্ত শ্রমমন্ত্রী জুলি সুকে দুই পক্ষের চুক্তিসংক্রান্ত আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। জুলি সুয়ের মধ্যস্থতায় ছয় বছর মেয়াদি নতুন একটি অস্থায়ী চুক্তিতে সম্মত হয়েছে পিএমএ ও আইএলডব্লিউইউ। এক যৌথ বিবৃতিতে পিএমএ প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাকেনা ও আইএলডব্লিউইউ প্রেসিডেন্ট উইলি অ্যাডামস জানান, বন্দর সচল রাখার জন্য আইএলডব্লিউইউ কর্মীবাহিনীর প্রচেষ্টা ও ব্যক্তিগত আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি প্রদান করে-এমন একটি চুক্তিতে উপনীত হতে পেরে আমরা আনন্দিত। তারা আরও জানান, বন্দর কার্যক্রম সচল রাখাই বর্তমানে তাদের মূল লক্ষ্য।

উভয় পক্ষের কেউই অস্থায়ী চুক্তিবিষয়ক কোনো তথ্য এখনই প্রকাশ করবেন না বলে জানিয়েছেন। তবে আইএলডব্লিউইউ জানিয়েছে, ইউনিয়নের সবার ভোট প্রদান শেষে চুক্তি চূড়ান্ত হতে অন্তত মাস খানেক সময় লেগে যাবে।