Home Blog Page 29

শ্রমিক অসন্তোষে থমকে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলবর্তী বন্দরগুলোর কার্যক্রম

নিয়োগ চুক্তিসংক্রান্ত ইস্যুতে ডক শ্রমিকদের টানা ধর্মঘটের কারণে চলতি মাসের শুরু থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলবর্তী বন্দরগুলোর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। যার ফলে বন্দরগুলোয় অপেক্ষমান কনটেইনারের সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। মেরিটাইম বিশ্লেষক মেরিনট্রাফিকের তথ্যমতে, ওকল্যান্ড, লস অ্যাঞ্জেলস ও লং বিচ বন্দরে মোট ৮৬ হাজার ৩৮১টি কনটেইনার আটকা পড়েছে, যেগুলোর সম্মিলিত মূল্যমান প্রায় ৫২০ কোটি ডলার।

৫ জুন থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহে ওকল্যান্ড বন্দরে অপেক্ষারত কনটেইনারের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সপ্তাহের শুরুতে বন্দরটিতে ২৫ হাজার ২৬৬টি কনটেইনার অপেক্ষারত অবস্থায় থাকলেও সপ্তাহান্তে সেই সংখ্যা ৩৫ হাজার ১৫৩টিতে দাঁড়িয়েছে। মেরিনট্রাফিকের একজন মুখপাত্র জানান, একই সময়ে লস অ্যাঞ্জেলস ও লং বিচ বন্দরের অপক্ষোরত কনটেইনারের গড় সংখ্যা ২১ হাজার ২৯৭ টিইইউ থেকে বেড়ে ৫১ হাজার ২২৮ টিইইউতে পৌঁছেছে ।

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের ২৯টি বন্দরে কর্মরত ২ হাজার ২০০ ডক শ্রমিকের নিয়োগ চুক্তির মেয়াদ ২০২২ সালের ১ জুলাই শেষ হয়। গত বছর ১০ মে অর্থাৎ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দুই মাস আগে থেকে পরবর্তী চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসে শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল লংশোর অ্যান্ড ওয়ারহাউজ ইউনিয়ন (আইএলডব্লিউইউ) এবং বন্দরগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা প্যাসিফিক মেরিটাইম অ্যাসোসিয়েশন (পিএমএ)। প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাস্থসেবা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সংক্রান্ত আলোচনা বেশ ইতিবাচকভাবে আগালেও ২০২২ সালের শেষ দিকে আলোচনার গতি অনেকটাই শ্লথ হয়ে যায়।

কোভিড পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্টের পশ্চিম উপকূলবর্তী বন্দরগুলোর কার্যক্রম অনেক বৃদ্ধি পায়। কাজের গতি বেড়ে যাওয়ায় সে সময় বেশ বড় অঙ্কের লাভের মুখ দেখে বন্দরগুলো। বিশাল সেই আয় থেকে শ্রমিকদের জন্য লভ্যাংশ দাবি করে আইএলডব্লিউইউ। এছাড়াও প্রায় এক বছর চুক্তি-বহির্ভূকভাবে কাজ করায় শ্রমিকদের ভেতর অসন্তোষ দেখা দেয়। চলতি বছর মার্চ মাস থেকে লস অ্যাঞ্জেলস ও লং বিচ বন্দরে কাজের গতি কমিয়ে দেয় ডক শ্রমিকেরা।

চুক্তির আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় ৬ ও ৭ এপ্রিল আইএলডব্লিউইউ লোকাল ১৩ শ্রমিকদের কাজ করা থেকে বিরত রাখে। যার ফলে লস অ্যাঞ্জেলস এবং লং বিচ বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে লস অ্যাঞ্জেলস, লং বিচ, ওকল্যান্ড, টাকোমা ও সিয়াটল বন্দরে শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে থাকায় ২ জুন পশ্চিম উপকূলের বেশ কয়েকটি বন্দরের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।

আলোচনার অগ্রগতি

শ্রমিক অসন্তোষ জটিল আকার ধারণ করায় ক্ষতির মুখে পড়েছে মার্কিন সাপ্লাই চেইন। এমতাবস্থায় সরকারের সহায়তা কামনা করেছে মার্কিন চেম্বার অব কমার্স। সম্প্রতি প্রশাসনের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে তারা জানায়, বন্দর কার্যক্রম বন্ধ থাকলে মার্কিন অর্থনীতিকে দৈনিক প্রায় ১০০ কোটি ডলার খরচের ধাক্কা সামলাতে হয়। পিএমএ ও আইএলডব্লিউইউর মধ্যে আলোচনা ত্বরান্বিত করে একটি সমাধানে পৌঁছানোর লক্ষ্যে প্রেসিডেন্টের কাছে একজন ‘স্বতন্ত্র মধ্যস্থতাকারী’ নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে চেম্বার।

ভারপ্রাপ্ত শ্রমমন্ত্রী জুলি সুকে দুই পক্ষের চুক্তিসংক্রান্ত আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। জুলি সুয়ের মধ্যস্থতায় ছয় বছর মেয়াদি নতুন একটি অস্থায়ী চুক্তিতে সম্মত হয়েছে পিএমএ ও আইএলডব্লিউইউ। এক যৌথ বিবৃতিতে পিএমএ প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাকেনা ও আইএলডব্লিউইউ প্রেসিডেন্ট উইলি অ্যাডামস জানান, বন্দর সচল রাখার জন্য আইএলডব্লিউইউ কর্মীবাহিনীর প্রচেষ্টা ও ব্যক্তিগত আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি প্রদান করে-এমন একটি চুক্তিতে উপনীত হতে পেরে আমরা আনন্দিত। তারা আরও জানান, বন্দর কার্যক্রম সচল রাখাই বর্তমানে তাদের মূল লক্ষ্য।

উভয় পক্ষের কেউই অস্থায়ী চুক্তিবিষয়ক কোনো তথ্য এখনই প্রকাশ করবেন না বলে জানিয়েছেন। তবে আইএলডব্লিউইউ জানিয়েছে, ইউনিয়নের সবার ভোট প্রদান শেষে চুক্তি চূড়ান্ত হতে অন্তত মাস খানেক সময় লেগে যাবে।

শুদ্ধাচার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান

রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের চলতি অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) শুদ্ধাচার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল। ১৫ জুন (বৃহস্পতিবার) এক অফিস আদেশের মাধ্যমে এ পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

অফিস আদেশে বলা হয়েছে, শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান নীতিমালা ২০২১ এর ৩.২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং এর দপ্তর ও সংস্থাসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে শুদ্ধাচার চর্চায় উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের শুদ্ধাচার পুরস্কারের জন্য বন্দর চেয়ারম্যানকে মনোনীত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান সংস্থা প্রধান ক্যাটাগরীতে এ পুরস্কার পেয়েছেন।

সরকার ২০১২ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করেছে। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল হলো অনিয়ম ঠেকাতে নাগরিক সেবার প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বছতা, জবাবদিহি এবং সততা নিশ্চিতকরণে সরকার প্রণীত একটি সুশাসন কৌশল। প্রতিষ্ঠানে এ কৌশলের যথাযথ বাস্তবায়ন ও চর্চার জন্য শুদ্ধাচার পুরস্কার দেওয়া হয়।

স্বয়ংচালিত জাহাজের সুরক্ষায় সোলাসে নতুন কোড যুক্ত করবে আইএমও

প্রযুক্তির আশীর্বাদে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসছে আন্তর্জাতিক সমুদ্র পরিবহন খাতে। আর তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে বিভিন্ন আইন ও বিধিবিধানে। এবার এমনই একটি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে জাতিসংঘের সমুদ্রবিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)।

সাগরে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর সুরক্ষার জন্য চালু রয়েছে সেফটি অব লাইফ অ্যাট সি (সোলাস) কনভেনশন। তবে এখন পর্যন্ত কেবল মানুষ কর্তৃক পরিচালিত জাহাজগুলোর ক্ষেত্রেই এই কনভেনশনের ধারাগুলো প্রযোজ্য। হাল আমলের স্বয়ংচালিত জাহাজের নিরাপত্তায় কোন চর্চা অনুসরণ করতে হবে, তার উল্লেখ নেই সোলাসে। এই ঘাটতি দূর করার লক্ষ্যে আইএমওর মেরিন সেফটি কমিটি (এমএসসি) সোলাসে নতুন একটি কোড অব অপারেশন যুক্ত করতে যাচ্ছে, যা স্বয়ংচালিত জাহাজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

মানুষ কর্তৃক পরিচালিত জাহাজ ও স্বয়ংচালিত জাহাজের নিরাপত্তা প্রয়োজনীয়তা এক নয়। বিদ্যমান সোলাস মানুষ কর্তৃক পরিচালত জাহাজগুলোর বিশেষভাবে প্রবর্তিত। এতে স্ট্যান্ডার্ডস অব ট্রেনিং, সার্টিফিকেশন অ্যান্ড ওয়াচকিপিং ফর সিফেয়ারার্সের (এসটিসিডব্লিউ) মতো বিশেষায়িত বিষয় অন্তর্ভুক্ত। সময়ের চাহিদা মাথায় রেখে এবার এতে স্বয়ংচালিত জাহাজগুলোর জন্য ‘মেরিটাইম অটোনমাস সারফেস শিপ (এমএএসএস)’ শীর্ষক নতুন একটি কোড যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে এমএসসি। ২০২৫ সালের শুরুর দিকেই কোডটি কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে আইএমওর।

অবশ্য এই কোড বাধ্যতামূলক কোনো পদক্ষেপ হচ্ছে না। ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি ডিএনভি জানিয়েছে, নতুন এই কোডের রূপরেখা প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইনগত বাধ্যবাধকতাকে খুব বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না। বরং জাহাজ পরিচালনায় স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির ব্যবহারে কী কী ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, সেই বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

আইএমওর বিভিন্ন কমিটি এরই মধ্যে একটি নীতিগত বিষয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে যে, স্বয়ংচালিত প্রতিটি সারফেস ভেসেলে অবশ্যই একজন মাস্টার থাকতে হবে, যিনি জাহাজ পরিচালনাসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন। জাহাজে যতই আধুনিক স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হোক না কেন, এই নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। মেরিটাইম সেফটি কমিটি যে নতুন কোডের পরিকল্পনা করছে, সেখানেও এই বিষয়টিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না।

বাণিজ্যিক জাহাজের সুরক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তি বিবেচনা করা হয় সোলাসকে। অবশ্য বর্তমানে যে কনভেনশন অনুসরণ করা হয়, তা এসেছে কয়েক দফায় সংস্কার, সংশোধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে। সোলাসের আদিতম সংস্করণ গৃহীত হয়েছিল ১৯১৪ সালে; টাইটানিক দুর্ঘটনার পর। এরপর ১৯২৯, ১৯৪৮, ১৯৬০ ও ১৯৭৪ সালে সোলাসের আরও চারটি সংস্করণ গৃহীত হয়।

১৯৭৪ সালের সংস্করণটি পরবর্তীতে আরও সংশোধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে আজকের রূপ পেয়েছে। এ কারণে বর্তমানে জাহাজের সুরক্ষাবিষয়ক যে আন্তর্জাতিক কনভেনশন কার্যকর রয়েছে, সেটিকে সোলাস, ১৯৭৪ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

প্রথম প্রান্তিকে বেড়েছে নাবিক নির্যাতন, হয়রানি, বৈষম্য ও বুলিং : আইসওয়ান

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কর্মক্ষেত্রে নাবিকদের নির্যাতন, হয়রানি, বৈষম্য ও বুলিংয়ের অভিযোগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্য ইন্টারন্যাশনাল সিফেয়ারাস’ ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্স নেটওয়ার্ক (আইসওয়ানের) এ তথ্য জানিয়েছে।

হেল্পলাইনে আসা ১ হাজার ২১৭টি অভিযোগমূলক ফোনকলের ওপর ভিত্তি করে সম্প্রতি একটি ইনফোগ্রাফিক প্রকাশ করেছে আইসওয়ান। সে অনুযায়ী, প্রথম প্রান্তিকে নাবিকরা ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি অভিযোগ করেছেন। অভিযোগকারী অধিকাংশ নাবিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বারা নির্যাতন এবং বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে যৌন নির্যাতন ও যৌন হেনস্তার অভিযোগ ছিল ১৯ শতাংশ।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক এনজিও আইসওয়ান নাবিক ও নাবিক পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে কাজ করে। ‘সিফেয়ারার হেল্প’ ও ‘ইয়ট ক্রু হেল্প’ নামে দুইটি পরিসেবা প্রদান করে সংস্থাটি। পরিসেবা দুটির আওতায় বছরে সব দিন ২৪ ঘণ্টা বিশ্বের সব দেশের সব প্রান্তের নাবিকদের জন্য আইসওয়ানের হেল্পলাইন সার্ভিস সচল থাকে। হেল্পলাইনে নাবিকরা বিনামূল্যে সেবা গ্রহণ করে থাকে। আইসওয়ান গোপনীয়তা বজায় রাখায় এবং হেল্পলাইনে বিভিন্ন ভাষা ব্যবহারের সুযোগ থাকায় নাবিকরা সহজেই নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আইসওয়ানের ইয়ট ক্রু হেল্প লাইনে অভিযোগ এসেছে আগের প্রান্তিকের চেয়ে ১২৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে সিফেয়ারার হেল্পলাইনে ৩৮ শতাংশ বেশি অভিযোগ এসেছে। আইসওয়ানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইমন গ্রেইঞ্জ জানান, বেশিরভাগ সময় নাবিকরা যেকোনো সমস্যায় সবার আগে আইসওয়ানের দ্বারস্থ হয়। প্রতি মাসে শত শত নাবিক হেল্পলাইনে কল করে তাদের সমস্যার কথা জানায় এবং সহায়তা কামনা করে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নাবিক ও তাদের পরিবারকে মানসিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আইসওয়ান।

নাবিকরা মূলত কোন কোন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখে সংস্থাটি। কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে মেরিটাইম খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের কাছে নাবিকদের সমস্যার ধরণ তুলে ধরে আইসওয়ান। মেরিটাইম খাতে বুলিং, যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধ, মানসিক নিরাপত্তা প্রদান এবং নাবিকদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে সেন্টার ফর ওশান পলিসি অ্যান্ড ইকোনমিকস (কোপ) ওয়ার্কিং গ্রুপসহ শিপিং শিল্পের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করে আইসওয়ান।

উল্লেখ্য, www.seafarerhelp.orgwww.yachtcrewhelp.org ওয়েবসাইট দুটি থেকে নাবিকেরা আইসওয়ানের সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।

চুক্তির মেয়াদ আরেক দফা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ জাতিসংঘ মহাসচিবের

জাতিসংঘের আহ্বানে গত ১৭ মে ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভের মেয়াদ দুই মাসের জন্য বাড়িয়েছিল রাশিয়া। তবে এই মেয়াদ শেষে রাশিয়া চুক্তিটি থেকে সরে আসতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের উদ্দেশে গুতেরেস বলেন, ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ বলবৎ রাখতে জাতিসংঘ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে জাতিসংঘ রাশিয়ার রপ্তানি সুবিধা বৃদ্ধিতে কাজ করতে সক্ষম বলেও মনে করেন তিনি।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দরগুলো অবরোধ করে রাখে রুশ সেনারা। যার ফলে সমুদ্রপথে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় গত বছরেরই ২২ জুলাই তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ চুক্তি স্বাক্ষর হয় । চুক্তির আওতায় কৃষ্ণ সাগরের উপকূলবর্তী তিনটি ইউক্রেনীয় বন্দর দিয়ে যুদ্ধকালীন সময়ে নিরাপদে খাদ্যশস্য ও সার রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়।

মূল চুক্তির মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ১৮ মে পর্যন্ত। তবে মেয়াদ শেষের একদিন আগেই খাদ্যশস্য পরিবহনের মানবিক করিডোর আরও দুই মাস অব্যাহত রাখতে সম্মত হয় রাশিয়া।

ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভে রাশিয়ার সম্মতি পেতে সেই সময় দেশটির সঙ্গে তিন বছর মেয়াদি একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে জাতিসংঘ। সমঝোতা স্মারকে রাশিয়ার খাদ্য ও সার রপ্তানিতে সহায়তা করার আশ্বাস দেয় জাতিসংঘ। অন্যদিকে ইউক্রেনের পিভদেনি বন্দর দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে অ্যামোনিয়া রপ্তানি এবং সুইফটের (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশনস) ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট সিস্টেমের সঙ্গে রাশিয়ান এগ্রিকালচারাল ব্যাংকের (রোসেলখোজ ব্যাংক) পুনরায় সংযোগ স্থাপনের দাবি জানায় রাশিয়া।

রাশিয়ার খাদ্য ও সার রপ্তানির ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও অর্থ লেনদেন, লজিস্টিক এবং বিমা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে পণ্য রপ্তানি প্রক্রিয়া বেশ জটিল হয়ে পড়েছে। ক্রেমলিনের দাবি, জাতিসংঘ যেসব সুবিধা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছিল, সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

রাশিয়ার খাদ্যশস্য ও সারের চালান যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে সেগুলো অপসারণ না করলে ১৭ জুলাই ব্ল্যাক সি গেইন ইনিশিয়েটিভ প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে মস্কো। ৯ জুন রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ভারসিনিন বলেন, সমঝোতা স্মারকটি যেভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা নিয়ে রাশিয়া সন্তুষ্ট হতে পারছে না। জাতিসংঘের বাণিজ্যবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা রেবেকা গ্রিনস্প্যানের সাথে আলোচনা শেষে রুশ সংবাদ সংস্থা টাসকে এ কথা জানান তিনি।

একই দিনে জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র বলেন, ফ্রেইট রেট ও বিমার হার কমিয়ে এবং বন্দরগুলোয় জাহাজ চলাচল নিয়মিত করার মাধ্যমে রাশিয়ার খাদ্য ও সারের রপ্তানি বৃদ্ধি সহায়তা করছে জাতিসংঘ।

পানামা খালের খরায় প্রভাবিত হবে মার্কিন মুদ্রাস্ফীতিঃ বিশেষজ্ঞ

সাম্প্রতিক সময়ে চলমান খরার কারণে পানামা খালে জাহাজ চলাচল সীমিতকরণ এবং সারচার্জ ও ড্রাফট লিমিট সংক্রান্ত নতুন নতুন বিধি নিষেধ আরোপ করতে বাধ্য হচ্ছে পানামা ক্যানেল অথরিটি (পিসিএ)। নতুন আরোপিত নিয়ম কানুন ও অতিরিক্ত সারচার্জ মার্কিন মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে হুমকির মুখে ফেলবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী পানামা খাল ১৯১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। যাত্রা শুরুর শত বছর পেরিয়ে গেলেও এই রুটে পানামা খালের কোনো বিকল্প তৈরি হয়নি। যার ফলে উচ্চ শুল্ক পরিশোধ করে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০টি বাণিজ্যিক জাহাজ এই পথ অতিক্রম করে। ২০২২ অর্থবছরে প্রায় ১৪ হাজার ২০০টি জাহাজ পানামা খাল পাড়ি দিয়েছে। তবে মানবসৃষ্ট এই পথে যাতায়াত করা ততটা সহজ নয়। প্রশান্ত মহাসাগরের পানির স্তর আটলান্টিক মহাসাগরের চেয়ে উঁচু। যার ফলে যান্ত্রিক উপায়ে পানামা খালের পানির স্তর ২৬ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি করে এ পথ দিয়ে নৌযান পারাপার করা হয়। পার্শ্ববর্তী গাতুন ও আলাহুয়েলা হ্রদের পানি ব্যবহার করে পানামা খালের পানির স্তর বৃদ্ধি করা হয়।

চলতি বছর অনাবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট নজিরবিহীন খরায় হ্রদ দুটির পানির স্তর অনেক কমে গেছে। পিসিএর পরিচালক রিকার্তে ভাসকেজ জানান, ১৯৫০ সালের পর এই প্রথম পানামা খাল এত শুষ্ক মে মাসের দেখা পেয়েছে। সামনের দিনগুলোয় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। পিএসএর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী জুলাই মাসে পানামা খালের পানির স্তর ৭৮ দশমিক ২ ফুটে নেমে আসবে, যা ২০১৬ সালের সর্বনিম্ন স্তরের (৭৮ দশমিক ৩ ফুট) রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যাবে। পানির স্তর লাগাতার কমতে থাকায় চলতি বছর খরা মৌসুম (জানুয়ারি-মে) শুরু হওয়ার পর থেকেই জাহাজ চলাচলের ওপর নানাবিধ বিধিনিষেধ আরোপ করে পিসিএ। এই ধারা অব্যাহত থাকলে কর্তৃপক্ষ দৈনিক জাহাজ চলাচলের সংখ্যা ৩৬ থেকে কমিয়ে ২৮ থেকে ৩২টির মধ্যে সীমিত রাখতে বাধ্য হবে বলে জানান ভাসকেজ।

এদিকে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে তৈরি হওয়া এল নিনো বছরের শেষ দিকে পুরোদমে তার দাপট দেখাতে শুরু করবে। এল নিনোর প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি আরও বিগড়ে যাবে। পানামা খালের পানি বিভাগের প্রধান এরিক করদোবা বলেন, এল নিনোর প্রভাবে পানামা খালের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং ২০২৪ সালে খরা আরও তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রেখে খরার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পিসিএ। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পানামা খালে চলাচলকারী জাহাজগুলোর ড্রাফট লিমিট সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক দফা কমানো হয়েছে। বর্তমানে ড্রাফট লিমিট আর্দশমান ৫০ ফুট থেকে কমিয়ে ৪৪ দশমিক ৫ ফুট করা হয়েছে। চলতি মাসেই সেটা আরেক দফা কমিয়ে ৪৪ ফুট করা হবে।

ড্রাফট লিমিটের ওপর জাহাজে কতটুকু কার্গো বহন করা হবে সেই বিষয়টি নির্ভর করে। জাহাজে কার্গো বেশি থাকলে এর ওজন বেশি থাকে এবং বাড়তি ওজন নিয়ে ড্রাফট লিমিট মেনে চলা সম্ভব হয় না। কোনো জাহাজের ড্রাফট লিমিট যদি ৬ ফুট কমানো হয় তবে তার কার্গোর পরিমাণ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। যার ফলে পানামা খাল পাড়ি দিতে হলে বড় বড় জাহাজগুলোকে হয় কার্গোর পরিমাণ কমিয়ে দিতে হয়, না হয় পণ্যগুলোকে অন্য জাহাজে বহন করতে হয়। এতে করে পণ্য পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যায়। ফ্লেক্সপোর্ট ইন্টারন্যাশনালের ওশান ফ্রেইটের প্রধান নাথান স্ট্যাং বলেন, ড্রাফট লিমিট কমলে এর প্রভাবে শিল্প ও ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি কার্গো পরিবহনের পরিমাণ ৪০ শতাংশ কমে যেতে পারে।

নতুন ড্রাফট লিমিটের কারণে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ১ জুন থেকে কনটেইনার প্রতি ফি আরোপ করা শুরু করেছে ক্যারিয়ার কোম্পানিগুলো। জার্মান শিপিং কোম্পানি হ্যাপাগ-লয়েড জানায়, চলতি মাস থেকে এশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলগামী জাহাজে কনটেইনার প্রতি ৫০০ ডলার পিসিসি (পানামা ক্যানেল চার্জ) আরোপ করা হবে। লজিস্টিকস বিশেষজ্ঞদের মতে, এত সব সীমাবদ্ধতার কারণে পানামা খাল দিয়ে জাহাজ চলাচলের খরচ একটা সময় অনেক বেড়ে যাবে। খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অচিরেই এশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র রুটে বিকল্প পথের খোঁজ করবে।

মুদ্রাস্ফীতি হার ২ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের। জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা জনাথন অস্ট্রির মতে, সাম্প্রতিক খরার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ফেডের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতির হার ক্রমান্বয়ে কমতে কমতে বর্তমানে ৪ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে, তবুও বর্তমান পরিস্থিতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য খুব একটা সুবিধাজনক নয় বলে মনে করছেন তিনি।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিসিএ খরার প্রভাব প্রশমনের জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও এর ফলে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেবে। বাণিজ্যের জন্য যেসব দেশ পানামা খালের ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য এই প্রভাব এড়ানো অসম্ভব। এসব দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে।

পেরুতে দুটি ট্যাংকারে আদিবাসী বিক্ষোভকারীদের হামলা

পেরুতে সম্প্রতি তেলবাহী দুইটি ট্যাংকারের ওপর গ্যাস বোমা হামলা চালিয়েছেন একদল আদিবাসী বিক্ষোভকারী। পেরু সরকার সোশ্যাল অয়েল ফান্ডের নিয়মে বেশ কিছু পরিবর্তন আনায় ক্ষুব্ধ হয়ে তারা এই হামলা চালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উত্তরপশ্চিম পেরুর লরেতো অঞ্চলে হামলার ঘটনাটি ঘটে। এক বিবৃতিতে আদিবাসী সংস্থা আইডিকোবাপের সদস্যদের হামলার জন্য দায়ী করেছে ট্যাংকার দুটির অপারেটর কানাডাভিত্তিক জ্বালানি কোম্পানি পেট্রোট্যাল। তারা জানায়, আমাজনের একটি উপনদী দিয়ে যাওয়ার সময় তেলবাহী জাহাজ দুটির পথ আটকে দেওয়া হয়। এরপর কয়েকটি ছোট ডিঙ্গি নৌকা থেকে ট্যাংকার দুটিকে লক্ষ্য করে গ্যাস বোমা হামলা চালান বিক্ষোভকারীরা।

ট্যাংকার দুটির একটি ব্রাজিলের পতাকাবাহী। হামলার সময় সেগুলোর একটি ফাঁকা থাকলেও অপরটিতে ৪০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল বহন করা হচ্ছিল। পেরুর সবচেয়ে উৎপাদনশীল খনি থেকে এই অপরিশোধিত তেল উত্তোলন করা হয়েছিল।

পেরুর উত্তর-পশ্চিমের লরেতো অঞ্চলে অবস্থিত পেট্রোট্যালের সেই খনি থেকে আমাজন নদী দিয়ে জাহাজ দুটি ব্রাজিলের দিকে যাচ্ছিল। পেট্রোট্যালের সোশ্যাল ম্যানেজমেন্ট ম্যানেজার কার্লোস মালদোনাদো জানান, বিক্ষোভকারীরা তেলভর্তি ট্যাংকারটিতে আরোহন করে এবং সেটিকে সেভেন দে জুলিও হিসেবে পরিচিত একটি শহরে নিয়ে যায়। বর্তমানে ট্যাংকারটিকে সেখানেই আটকে রাখা হয়েছে। এছাড়া ট্যাংকার দুটির ১২ জন ক্রুকেও ধরে নিয়ে গেছেন তারা।

সোশ্যাল অয়েল ফান্ডের নিয়ম অনুযায়ী পেরুতে জ্বালানি কোম্পানিগুলো খনি থেকে তেল উত্তোলন করলে সেই তেলের বাণিজ্য থেকে যা মুনাফা হয়, তার একটি অংশ স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে দিতে হয়। পেট্রোট্যালও তাদের মুনাফার ২ দশমিক ৫ শতাংশ সংশ্লিষ্ট উত্তোলন অঞ্চলের স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে প্রদান করে থাকে। তবে লরেতো অঞ্চলের আদিবাসী গোষ্ঠীরা এই হারে মুনাফার অংশ পেয়ে খুশি নয়। বরং তারা এর পরিমাণ আরও বাড়ানোর দাবি এবং তেল ছড়িয়ে পড়ে তাদের এলাকা দূষিত হওয়ার অভিযোগ জানিয়ে আসছে অনেক দিন ধরে। এর আগেও কয়েকবার পেট্রোট্যালের সম্পদের ওপর হামলা চালিয়েছে তারা।

উল্লেখ্য, লাতিন আমেরিকায় সবচেয়ে কম তেল উত্তোলনকারী দেশগুলোর অন্যতম পেরু। দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে ৪৩ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উত্তোলন করা হয়।

শিপিং খাতে নিঃসরণ কমাতে দুটি বিল প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রে

মার্কিন বন্দরে চলাচলকারী ও অবস্থানরত জাহাজ থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে দুটি পৃথক আইন প্রণয়ণের উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির আইনসভা কংগ্রেসের দুই কক্ষে এ বিষয়ে দুটি পৃথক বিল প্রস্তাব করেছেন আইনপ্রণেতারা।

মার্কিন উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের প্রস্তাবিত বিল দুটি অনেকটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণমূলক উদ্যোগ ‘ফুয়েলইইউ’-এর আদলের। এখানেও কার্বনভিত্তিক জ্বালানির ওপর কর আরোপ ও কার্বনের ব্যবহার সীমিতকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

মার্কিন আইনপ্রণেতারা বিল দুটি উপস্থাপনের বিশেষ এক উপলক্ষ্যও পেয়ে গেছেন। ৮ জুন জাতিসংঘের উদ্যোগে উদযাপিত হলো ওয়ার্ল্ড ওশান ডে। এই দিবসকে সামনে রেখেই ‘ক্লিন শিপিং অ্যাক্ট অব ২০২৩’ ও ‘ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম পলিউশন অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি অ্যাক্ট’ শীর্ষক বিল দুটি কংগ্রেসে উত্থাপন করেছেন তারা।

প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে মোট যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসৃত হয়, তার প্রায় তিন শতাংশের জন্য দায়ী সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজগুলো। দেশ ও শিল্পখাতকে একই কাতারে রাখলে আন্তর্জাতিক শিপিং খাত সর্বোচ্চ নিঃসরণকারীর তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে থাকত।

বিল দুটির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক রোডস আইল্যান্ডের সিনেটর শেলডন হোয়াইটহাউজ বলেন, আমাদের সবাইকে সম্মিলিত উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকারক প্রভাব ঠেকাতে হবে। তাই নৌপরিবহনে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে, সমুদ্র দূষণের জন্য দায়ী অপরিচ্ছন্ন জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে এবং বন্দরের আশপাশের এলাকার মানুষদের বায়ুদূষণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে নতুন আইন দুটি প্রবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিনেটর অ্যালেক্স প্যাডিয়ার সাথে মিলিতভাবে বিল দুটি উত্থাপন করেন হোয়াইটহাউজ ।

জ্বালানির ক্ষেত্রে কার্বন ইনটেনসিটি স্ট্যান্ডার্ডস নির্ধারণ করে শিপিং খাতে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমানোর লক্ষ্যে ক্লিন শিপিং অ্যাক্ট অব ২০২৩ উত্থাপন করেছেন সিনেটর প্যাডিয়া। ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান রবার্ট গ্রেসিয়াসহ আরও অনেকেই বিলটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। বিলটি আইনে পরিণত হলে এটি ২০৪০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ইইউর মতো করে এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সিকে (ইপিএ) নির্দেশনা প্রদান করবে। সেই সঙ্গে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে কার্বন ইনটেনসিটি স্ট্যান্ডার্ডস আরও কঠোর করবে।

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, ২০২৭ সালের জানুয়ায়ি থেকে কার্বন নিঃসরণ ২০ শতাংশ, ২০৩০ সালের জানুয়ারি থেকে ৪৫ শতাংশ, ২০৩৫ সালে ৮০ শতাংশ ও ২০৪০ সালে শতভাগ কমবে। ২০৩০ সাল নাগাদ বন্দরের অভ্যন্তরের জাহাজ থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রয়োজনীয়তা কতখানি, আইনটি সেটা নির্ধারণ করে দেবে।

অন্যদিকে, সিনেটর হোয়াইটহাউজের প্রস্তাবিত ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম পলিউশন অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি অ্যাক্টে দশ হাজার গ্রস টনের বেশি ওজনের জাহাজ মার্কিন বন্দরগুলোয় কার্গো অফলোডিংয়ের কাজ করলে সেটার ওপর দূষণ বা পলিউশন ফি আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ইনবাউন্ড ট্রিপে জ্বালানি পোড়ানোর ফলে নির্গত প্রতি টন কার্বনের জন্য ১৫০ ডলার, প্রতি পাউন্ড নাইট্রোজেন অক্সাইডের জন্য ৬ দশমিক ৩০ ডলার, প্রতি পাউন্ড সালফার ডাই অক্সাইডের জন্য ১৮ ডলার এবং প্রতি পাউন্ড পার্টিকেল পলিউশনের (পিএম ২.৫) জন্য ৩৮ দশমিক ৯০ ডলার দূষণ ফি আরোপের কথা বলা হয়েছে।

আইনপ্রণেতাদের মতে, আগামী দশ বছরে আনুমানিক ২৫ হাজার কোটি ডলারের দূষণ ফি আদায় করা যাবে। বিপুল এই তহবিল ব্যবহার করে সমুদ্র শিল্পকে কার্বন নিঃসরণমুক্ত করার প্রক্রিয়াকে আরো বেগবান করা সম্ভব মনে করেন তারা।

২০২৫ নাগাদ গ্রিন শিপিং করিডোর গড়ে তোলার প্রত্যয় অস্ট্রেলিয়া-সিঙ্গাপুরের

২০২৫ সাল নাগাদ নিজেদের মধ্যে একটি পরিবেশবান্ধব ও ডিজিটাল শিপিং করিডোর প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুর। গত বছরের অক্টোবরে ‘গ্রিন শিপিং কো-অপারেশন’ চুক্তি স্বাক্ষরের ধারাবাহিকতায় এই প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছে তারা। কার্বন নিঃসরণ কমানোর বৈশ্বিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নিয়েছে দেশ দুটি।

চুক্তি অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়া সরকারের অবকাঠামো, পরিবহন, আঞ্চলিক উন্নয়ন, যোগাযোগ ও কলা বিভাগ (ডিআইটিআরডিসিএ) এবং সিঙ্গাপুরের মেরিটাইম অ্যান্ড পোর্ট অথরিটি (এমপিএ) শিপিং খাতকে কার্বনমুক্ত করা ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানোর কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে গতি আনতে চাইছে। আর এ লক্ষ্যে তারা বন্দর পরিচালনাকারী সংস্থা, সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও জ্বালানি খাতের ভ্যালু-চেইন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে বলে জানিয়েছে।

প্রাথমিকভাবে ডিআইটিআরডিসিএ ও এমপিএ সমুদ্র শিল্পে কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে অভিন্ন যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে, সেসব বিষয়গুলো শনাক্ত ও সেগুলো বাস্তবায়ন করবে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে স্বল্প নিঃসরণকারী ও নিঃসরণমুক্ত জ্বালানির সাপ্লাই চেইন গড়ে তোলা, বন্দরের সেবা কার্যক্রমগুলোকে পরিবেশবান্ধব করা এবং পরিচ্ছন্ন মেরিন ফুয়েলের উৎস উন্নয়নে বন্দরের কার্যক্রমে গতি আনা। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে যেসব পণ্য পরিবহন হবে, সেগুলোর হ্যান্ডলিং কার্যক্রমকে পেপারলেস করতে ডিজিটাল শিপিং সলিউশন কী হতে পারে, তা অনুসন্ধানেও কাজ করবে তারা।

সম্প্রতি ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়া-ইস্ট এশিয়া গ্রিন করিডোর কনসোর্টিয়ামের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া ও পূর্ব এশিয়ার বন্দরগুলোর মধ্যে আকরিক লোহা বাণিজ্যের যে রুট রয়েছে, সেটিতে ২০২৮ সাল নাগাদ অ্যামোনিয়া-চালিত জাহাজ চালু করা হতে পারে।

উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় খনিজ পণ্য রপ্তানিকারক দেশ। এর মধ্যে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া থেকে মোট যে পরিমাণ আকরিক লোহা রপ্তানি হয়, তার বেশিরভাগেরই গন্তব্য হলো এশিয়া।

বৈশ্বিক নিঃসরণ কমানোর প্রচেষ্টায় নিজেদের অবস্থান থেকে অবদান রাখার প্রচেষ্টা রয়েছে সমুদ্র পরিবহন খাতের। জাতিসংঘের সমুদ্রবিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনেরও (আইএমও) এ বিষয়ে কিছু উদ্যোগ রয়েছে। তবে এসবের বাইরে বন্দর কর্তৃপক্ষগুলো পরিবেশবান্ধব শিপিং রুট প্রতিষ্ঠায় স্বেচ্ছায় উদ্যোগ নিচ্ছে, যার অন্যতম হলো গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠা।

গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠার ধারণা প্রথম উত্থাপিত হয় ২০২১ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলন কপ২৬-তে। সম্মেলনে ক্লাইডব্যাংক ডিক্লারেশনে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ ২২টি দেশ। এই ঘোষণার মূল লক্ষ্য হলো সমুদ্র পরিবহন খাতে কয়েকটি গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠা। ২০২৫ সাল নাগাদ অন্তত ছয়টি গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে ক্লাইডব্যাংক ডিক্লারেশনে। ২০৩০ সাল নাগাদ আরও কয়েকটি নিঃসরণমুক্ত রুট কার্যকর হবে বলে কপ২৬ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করা হয়।

গ্রিন করিডোর কোনো আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা নয়। এটি পুরোপুরি ঐচ্ছিক সিদ্ধান্ত। তবে একটি-দুটি করে যখন বিশ্বের সব ট্রেডিং রুটই যখন গ্রিন করিডোর হয়ে যাবে, তখন সেটি নিঃসরণ কমানোর বৈশ্বিক উদ্যোগের অংশ হয়ে যাবে। এগুলো হলো এমন শিপিং রুট, যেখানে কোনো নিঃসরণ থাকবে না। এসব রুটে চলাচলকারী জাহাজগুলো ব্যবহার করবে সবুজ জ্বালানি। দুই বা ততোধিক বন্দরের মধ্যে পারস্পারিক সমঝোতার ভিত্তিতে এসব করিডোর গড়ে উঠবে।

গত বছর গ্রিন করিডোর প্রতিষ্ঠার বিষয়ে নেদারল্যান্ডসের রটারডাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি চুক্তি করে সিঙ্গাপুর বন্দর, যেখানে বিকল্প জ্বালানিনির্ভর শিপিং রুট প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, কার্যক্ষমতা ও পণ্য পরিবহনে স্বচ্ছতা বাড়ানোর কাজে পারস্পারিক সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া সিঙ্গাপুর বন্দরের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস ও লং বিচ বন্দর, সুইডেনের গোথেনবার্গ বন্দরের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের রটারডাম ও বেলজিয়ামের নর্থ সি পোর্ট এবং লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরের সঙ্গে জাপানের টোকিও ও ইয়োকোহামা বন্দরকে গ্রিন করিডোরের মাধ্যমে যুক্ত করতে এরই মধ্যে চুক্তি হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ওশানস ডে ২০২৩ আজ

পৃথিবীর ৭০ শতাংশেরও বেশি অংশ জুড়ে রয়েছে সুনীল সাগর। বিস্তীর্ন এই জলরাশি পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ এবং জীববৈচিত্র্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিধায় মানবজীবনে সাগরের প্রভাব অপরিসীম। তবে মানবসৃষ্ট দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সাগর ও সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান বর্তমানে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। সাগরের গুরুত্ব অনুধাবন, সাগরের দূষণ ও সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রতি বছর ৮ই জুন ওয়ার্ল্ড ওশানস ডে বা বিশ্ব মহাসাগর দিবস পালন করে থাকে।

ইতিহাস

১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে ইউনাইটেড নেশসনস কনফারেন্স অন এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইউএনসিইডি) বা আর্থ সামিটের আয়োজন করা হয়। কানাডার ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ওশান ডেভেলপমেন্ট (আইসিওডি) এবং ওশান ইন্সটিটিউট অফ কানাডা (ওআইসি) আর্থ সামিটে প্রথমবারের মতো ওয়ার্ল্ড ওশান ডে পালনের প্রস্তাবনা পেশ করে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রস্তাবনাটি পাশ করে ৮ জুনকে ওয়ার্ল্ড ওশানস ডে ঘোষণা করা। জাতিসংঘের মহাসাগর বিষয়ক বিভাগ ও সমুদ্র আইন ওয়ার্ল্ড ওশান ডে সংক্রান্ত কর্মসূচির আয়োজন করে। অন্যদিকে ওয়ার্ল্ড ওশান নেটওয়ার্কের স্পনসরের দায়িত্বে রয়েছে ইউনেস্কোর ইন্টারগর্ভনমেন্টাল ওশানোগ্রাফিক কমিশন (আইওসি)।

তাৎপর্য

ওয়ার্ল্ড ওশান ডে বর্তমান সময়ে সমুদ্র, সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য কোন কোন ঝুঁকির সম্মুখিন হচ্ছে এবং সেসব ঝুঁকি মানব জাতিকে কিভাবে প্রভাবিত করছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভের সুযোগ করে দিচ্ছে। পৃথিবীর চারভাগের তিনভাগ সাগর দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়ায় এর বুক জুড়ে রয়েছে অসংখ্য প্রাণ প্রাচুর্য্য। সাগর মানুষের খাদ্য, জ্বালানি এবং  বিনোদনের অন্যতম প্রধান উৎস। পরিবেশ দূষণ, অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণ, জলবায়ুর পরিবর্তন, মাত্রাতিরিক্ত প্লাস্টিকের ব্যবহারের মতো মানুষের নানাবিধ আচরণের কারণে সাগর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সাগর সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সাগরের জীববৈচিত্র্যের ক্রমবিকাশ অব্যাহত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ার্ল্ড ওশান ডে মানুষকে এই বিষয়ে সচেতন করে তুলতে সাহায্য করে।

বর্তমান যুগে দোলনা থেকে শুরু করে জীবনের অন্তিম পর্যায় পর্যন্ত মানুষ প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করে। সেসব প্লাস্টিক আর্বজনার শেষ আশ্রয়স্থল হয় সাগরের তলদেশ। অপচনশীল এসব পণ্য সমুদ্রের বাস্তুসংস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সেসঙ্গে বৈশ্বিক মৎস্য মজুদের এক তৃতীয়াংশের বেশি অনিয়ন্ত্রিত উপায়ে আহরণ করা হয় বলে অনেক ধরনের মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী বর্তমানে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে।

চলতি বছরের ওয়ার্ল্ড ওশান ডে উপলক্ষ্যে দেওয়া বার্তায় সমুদ্র সুরক্ষায় আরও বেশি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, সমুদ্রকে ভিত্তি করেই প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। সমুদ্র আমাদের শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য বায়ু এবং আমরা যা খাই সেই খাদ্যের যোগান দেয়। আমাদের জলবায়ু ও আবহাওয়াও সমুদ্র নিয়ন্ত্রণ করে। পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের সর্বশ্রেষ্ঠ  আধার হলো সমুদ্র। তিনি বলেন, মানুষের উচিত সমুদ্রের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হওয়া। তবে বর্তমানে মানুষই সমুদ্রের সবচেয়ে বড় শত্রু। বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, আবহাওয়া ও সমুদ্র স্রোতের ধরন পরিবর্তন থেকে শুরু করে সমুদ্রের অম্লীকরণ ও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনের জন্য মানুষ দায়ী। মানবসৃষ্ট জৈব ও প্লাস্টিক বর্জ্য, রাসায়নিকের ব্যবহার ও অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণ ও সমুদ্রের অতি-শোষণের কারণে সমুদ্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

২০২৩ সালের প্রতিপাদ্য

‘প্ল্যানেট ওশান: টাইডস আর চেঞ্জিং’ প্রতিপাদ্য নিয়ে চলতি বছরের ওয়ার্ল্ড ওশান ডে পালিত হচ্ছে। এই প্রতিপাদ্যের লক্ষ্য হলো সমুদ্রের গুরুত্ব ও সমুদ্র সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ২০২৩ সালের প্রতিপাদ্য একক-ব্যবহারযোগ্য (সিংগেল-ইউজ) প্লাস্টিকের ব্যবহার হ্রাস, টেকসই উপায়ে সিফুড আহরণ, সমুদ্র সুরক্ষা নীতির পৃষ্ঠপোষকতায় সকলকে মিলিতভাবে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করছে।

উদযাপন

মানুষের কারণে সমুদ্র দূষিত হলেও এর প্রতিকারের ক্ষমতাও একমাত্র মানুষের হাতেই রয়েছে। সমুদ্র সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে চলতি বছরের ওয়ার্ল্ড ওশান ডে ফলপ্রসূভাবে উদযাপন করা সম্ভব। তেমন কিছু পদক্ষেপ হলো:

  • দৈনন্দিন জীবনে ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো এবং এর পরিবর্তে পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ, বোতল, থালা, চামচ, স্ট্র ব্যবহার করা।
  • টেকসই উপায়ে আহরণ করা সিফুড খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা।
  • ওয়ার্ল্ড ওশান ডে সংক্রান্ত অনুষ্ঠাণের আয়োজন করা এবং এই ধরণের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা।
  • সমুদ্র সৈকত পরিচ্ছন্ন সংক্রান্ত কার্যক্রমে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশগ্রহণ ও সমুদ্র সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচতেনতা সৃষ্টি করা।
  • ব্যবহার্য পণ্য যতটা সম্ভব রিসাইকেল করা।