Home Blog Page 3

আগামী অর্থবছরের ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনএসি) আজ পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রেখে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে। রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন এনইসি চেয়ারপার্সন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন।

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার এডিপির মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা এবং প্রকল্প ঋণ ও অনুদান হিসেবে আসবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।

তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে ৮ হাজার ৫৯৯ দশমিক ৭১ কোটি টাকা যুক্ত করলে, আগামী অর্থবছরের জন্য মোট এডিপির আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৯৯ দশমিক ৭১ কোটি টাকা।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অনুমোদিত এডিপি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নতুন বাজেটের অংশ, যা ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ঘোষণা করবেন।

ড. মাহমুদ বলেন, জাপানের অর্থায়নে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প ছাড়া নতুন কোনো মেগা প্রকল্প বা দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প নতুন এডিপিতে নেওয়া হয়নি।

পায়রা বন্দর, কর্ণফুলী টানেল এবং বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) এর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে প্রকৃত ফলাফল বিবেচনা না করেই পূর্ববর্তী সরকারের আমলে এই প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়েছিল।

আগামী অর্থবছরের জন্য নতুন এডিপির আকার চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে সংশোধিত হয়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।

তৈরি পোশাকসহ ৭ পণ্য স্থলবন্দরে আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা

বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাবার, কাঠের ফার্নিচার ও ফলসহ কমপক্ষে সাত ধরনের পণ্য স্থলবন্দরে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। এসব পণ্য শুধুমাত্র কলকাতা ও মুম্বাই সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে। ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান ইনডিয়ান ডিরক্টোরেট জেনারেল অব ফরেইন ট্রেড (ডিজিএফটি) শনিবার এ ঘোষণা দেয়।

তাদের ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ এসব পণ্য এখন থেকে শুধুমাত্র নাভা শেভা ও কলকাতা সমুদ্র বন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে। কোনো স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে না। গত মার্চ মাসে ভারত সরকার স্থলবন্দরে সুতা রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে নতুন এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানে রপ্তানি হওয়া পণ্যে কার্যকর হবে না।

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ‌র সাবেক পরিচালক ও ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, দুটি সমুদ্র বন্দর কলকাতা ও মুম্বাই ব্যতিত বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি সীমিত করেছে ভারত; সকল স্থলবন্দর থেকে আমদানি বন্ধ। বিশ্ব বাণিজ্য যখন বিভিন্ন সমস্যাই জর্জরিত ঠিক তখন এ ধরনের পাল্টাপাল্টি বাণিজ্যিক দূরাত্মীকরণ সিদ্ধান্ত ক্ষতির মাত্রা উভয়েরই আরো বাড়াবে।

যেহেতু ভারত বাংলাদেশের একটি বড় ক্রেতা এবং তৈরি পোশাক এক্সপোর্ট বাড়তির দিকে ছিল, সেহেতু এটা একটু হলেও আমাদের চিন্তার কারণ নতুন করে হলো। যদি ও ভুটান বা নেপালের ট্রানশিপমেন্ট এটাতে এফেক্টেড হবে না বলে জানা গেছে তবু ও সামগ্রিকভাবে ব্যবসায়িক সম্পর্কে এফেক্টে ফেলবে। চার প্রকার পণ্য মৎস, এডিবল অয়েল, এলপিজি ও ক্রাশড স্টোন এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।

প্রথম নিলামেই সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে পণ্য বিক্রির বিশেষ আদেশ এনবিআরের

নিলামে এখন থেকে প্রথমবার সর্বোচ্চ দরদাতা হলেই তার কাছে পণ্য বিক্রি করার বাধ্যবাধকতা দিয়ে বিশেষ আদেশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বুধবার এনবিআর এ আদেশ জারি করে।

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট নিরসনে এই বিশেষ আদেশ জারি করা হয়েছে। বিশেষ আদেশ অনুযায়ী, চট্টগ্রাম কাস্টমসের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমদানি হওয়া নিষ্পত্তিযোগ্য পণ্যের নিলামে এই সুযোগ রয়েছে। অবশ্য এই বিশেষ আদেশের মধ্যে সব ধরনের যানবাহন বাদ দেওয়া হয়েছে।

আগের নিয়মে বারবার নিলামে তুলেও পণ্য বিক্রির হার ছিল কম। কারণ, আগের নিয়মে কাস্টমস কোনো পণ্যের প্রথম নিলামে সংরক্ষিত মূল্যের ৬০ শতাংশের বেশি দর পেলে পণ্য বিক্রি করতে পারত। অর্থাৎ সর্বোচ্চ দরদাতা হলেও ৬০ শতাংশের বেশি দর না দিলে পণ্য বিক্রির সুযোগ ছিল না। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সংরক্ষিত মূল্যের ৬০ শতাংশ বাজারদরের চেয়ে বেশি হতো। এর ফলে প্রথমবার নিলামে পণ্য বিক্রির নজির ছিল কম। দ্বিতীয়বার অবশ্য প্রথমবারের চেয়ে বেশি এবং সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে পণ্য বিক্রির সুযোগ ছিল। এর ফলে কোনো পণ্য বিক্রি করতে হলে বারবার নিলামে তুলতে হতো। নতুন আদেশে এই জটিলতা কাটল।

নতুন আদেশে নিলাম ছাড়াও বিকল্প উপায়ে পণ্য হস্তান্তরের সুযোগ রাখা হয়েছে। যেমন চিনি, ডাল, তেলসহ পচনশীল পণ্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছে প্রস্তাবিত মূল্যে বিক্রি করতে হবে। সব ধরনের সুতা তাঁত বোর্ডের অফার মূল্যে তাঁত বোর্ডকে প্রদান করতে হবে। মদ ও মদজাতীয় পানীয় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্ডেন্ড প্রতিষ্ঠানের কাছে অফার মূল্যে বিক্রি করতে হবে। সার বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার সমিতির সদস্যদের কাছে অফার মূল্যে বিক্রি করতে হবে। এ ছাড়া বিস্ফোরক, ওষুধের কাঁচামালও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি করার কথা বলা হয়েছে আদেশে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি বদলানোর একমাত্র ভরসা চট্টগ্রাম বন্দর : প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বদলাতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরই একমাত্র ভরসা। চট্টগ্রাম বন্দরকে সত্যিকার বন্দরে পরিণত করার কাজ চলছে। বুধবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) ইয়ার্ড-৫ পরিদর্শনে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার চিন্তার কারণ একটাই, বাংলাদেশের অর্থনীতি যদি পাল্টাতে হয়, তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরই হলো ভরসা। এটাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি, নতুন কোনো পাতা, নতুন কোনো অধ্যায়ে প্রবেশ করার কোনো সুযোগ নেই। এই পথ খুলে দিলে বাংলাদেশের অর্থনীতির পথ খোলে। এই পথ না খুললে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য যতই লাফালাফি করো, ঝাঁপাঝাঁপি করো, কিছুই হবে না।’

চট্টগ্রাম বন্দরকে বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কেন আমি এটি নিয়ে ভাবি। একজনকে বলছিলাম, চট্টগ্রাম বন্দর হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ড দুর্বল হলে ডাক্তার, বৈদ্য, সবকিছু আনো; মেরামত হবে, কিন্তু চলবে না। ছোট্ট একটি হৃৎপিণ্ড, তার মধ্যে হলো রোগাক্রান্ত, এই হৃৎপিণ্ডে যতই ঠেলাঠেলি করো, রক্ত সঞ্চালন হবে না। এটিই যদি একমত হই বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড হলো চট্টগ্রাম বন্দর, তাহলে যে সাইজের হৃৎপিণ্ড আছে, ওই সাইজে চলে না। এই হৃৎপিণ্ড বিশ্ব সাইজের হৃৎপিণ্ড হতে হবে।’

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘কাজেই আমরা বললাম যে পৃথিবীর সেরা বন্দর ব্যবস্থাপক যারা আছে, তাদের ডাকো। দেখলাম যে আগেই ডাকা হয়েছে, কিন্তু কাজটা হচ্ছে না। বারবার সবার কাছে আবেদন করছি, এটা তাড়াতাড়ি করে দাও। যতই দিন যাবে, এই হৃৎপিণ্ডকে আর ওইভাবে স্থাপন করতে পারব না। এটা পরিবর্তন না করে বাংলাদেশে অর্থনীতি পরিবর্তন সম্ভব নয়।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নৌপরিবহন উপদেষ্টাকে বলেছি, যারা বন্দরের ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ, পৃথিবীর সেরা যারা, তাদের দিয়ে এই কাজ করাতে হবে, যেভাবেই হোক। মানুষ যদি রাজি না হয়, জোরাজুরি নয়, রাজি করিয়েই করতে হবে। কারণ, এটা এমন এক বিষয়, পুরো জিনিস শুনলে রাজি না হওয়ার কোনো কারণ নেই।

এ সময় নৌপরিবহন উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, বিডা চেয়ারম্যান, প্রেস সচিব, চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান, পর্ষদ সদস্যবৃন্দ, পরিচালকবৃন্দ ও সচিব উপস্থিত ছিলেন।

বুধবার চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পরিদর্শনে আসছেন প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম আসছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার তিনি দিনব্যাপী বেশ কিছু কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।

সকালে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বন্দরের কার্যক্রম পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে তিনি নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম ঘুরে দেখবেন। বন্দর কর্মকর্তারা তাঁকে চলমান কার্যক্রম ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়ে ব্রিফিং করবেন।

প্রধান উপদেষ্টা সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সোয়া ১০টা পর্যন্ত বন্দরে অবস্থান করবেন। তিনি বন্দর ও জাহাজ চলাচল খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনের প্রতিনিধি ও বাণিজ্য সংস্থার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।

বন্দর-সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল, এনসিটিতে বিদেশি বিনিয়োগে আসার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এমন সময়ে প্রধান উপদেষ্টার চট্টগ্রাম বন্দর সফর খুবই গুরুত্ব বহন করবে।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান বাণিজ্য উপদেষ্টার

শেখ বশিরউদ্দীন

উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতে বিশ্বের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। জাপানের ওসাকার কানসাইয়ে ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২৫’-এ ‘বাংলাদেশ দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে গতকাল এক অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে। ঐতিহ্যের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সমাজের সেতুবন্ধের প্রতীক হিসেবে প্যাভিলিয়নটি কাঠের কাঠামো দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যা শূন্য কার্বন ও টেকসই অনুশীলনের উদাহরণ।’

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বিশ্বে বাংলাদেশ এখন প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের এক অনন্য উদাহরণ। আর্থ-সামাজিক ব্যাপক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছি আমরা।’ ক্রমবর্ধমান তরুণ জনসংখ্যা এবং স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি দেশের মানুষকে সমৃদ্ধির স্তরে উন্নীত করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাণিজ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর কৌশলগত কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এ কারণে এ অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বাণিজ্য অংশীদার হওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুযোগ গ্রহণ করে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তৈরি পোশাক, চামড়া, ওষুধ, হালকা প্রকৌশল, আইটি, পাট ও পাটজাত পণ্য, সিরামিক শিল্পে বিনিয়োগের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওগুশি মাসাকি বলেন, ‘১৯৭২ সাল থেকে জাপান বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কে আবদ্ধ আছে। প্রতিনিয়ত এ সম্পর্ক গতিশীল হচ্ছে।’ ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়ায়ও জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ওগুশি মাসাকি বৈঠক করেছেন। ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২৫-এর ভেন্যুর জাপান প্যাভিলিয়নে গতকাল এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী, জাপানের ট্রেড পলিসি ব্যুরোর দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়াবিষয়ক পরিচালক শিমানো তোশিয়ুকি, ট্রেড পলিসি ব্যুরোর ইকোনমিক পার্টনারশিপ ডিভিশনের পরিচালক উচিনো হিরুতো এবং জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর মোরারজী দেশাই বর্মণ উপস্থিত ছিলেন।

রেমিট্যান্স আহরণে সৌদি আরব শীর্ষে

চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে রেকর্ড ২ হাজার ৪৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে, আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় যা ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। এই আয়ে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রয়েছে সৌদি আরব প্রবাসীদের। যদিও ২০২২ সালের জুলাই থেকে গত মার্চ পর্যন্ত রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ দেশ হিসেবে কখনও সংযুক্ত আরব আমিরাত, কখনো যুক্তরাষ্ট্র, কখনো যুক্তরাজ্য ছিল। গত এপ্রিল মাসে আবার শীর্ষ দেশ হিসেবে সৌদি আরবের নাম উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে মোট ২৭৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্সের মধ্যে সৌদি আরব থেকে এসেছে ৪৯ কোটি ১৪ লাখ ডলার; যা মোট রেমিট্যান্সের ১৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে ৩৭ কোটি ২১ লাখ ডলার। মোট রেমিট্যান্সের ১২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বা ৩৩ কোটি ডলার নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। চতুর্থ অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্য থেকে ২৯ কোটি ৪১ লাখ ডলার এবং পঞ্চম অবস্থানে থাকা মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ২১ কোটি ৯ লাখ ডলার। পর্যায়ক্রমে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় রয়েছে কুয়েত, ইতালি, ওমান, সিঙ্গাপুর ও কাতার।

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে নজর দিচ্ছে নেপাল : রাষ্ট্রদূত

বাণিজ্য, পর্যটন, জ্বালানি ও সংযোগ খাতে সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্বের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি।

শুক্রবার খুলনায় আয়োজিত ‘নেপাল-বাংলাদেশ সহযোগিতা : বাণিজ্য, পর্যটন এবং সংযোগে গতিশীলতা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। ঢাকায় নেপালের দূতাবাস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

নেপালের রাষ্ট্রদূত বলেন, জ্বালানি বাণিজ্যে সাম্প্রতিক অগ্রগতি ও ক্রমবর্ধমান পর্যটন বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা গতিশীল হচ্ছে।

তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের নেপালি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করার আহ্বান জানান, যাতে অর্থনীতির ক্ষেত্রে দুই দেশের অব্যবহৃত সুযোগগুলো উন্মোচিত হয়।

ঢাকাস্থ নেপাল দূতাবাস আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নেপাল দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি ইয়োজনা বামজান বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার মূল ক্ষেত্রগুলো উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে খুলনার পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবপ্রসাদ পাল ও খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র প্রশাসক নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বক্তব্য দেন।

এর আগে রাষ্ট্রদূত ভান্ডারি খুলনা দিবস-২০২৫ উপলক্ষে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং ‘সুন্দরবনের কথকতা’ শীর্ষক একটি নাট্য প্রদর্শনীতে যোগ দেন।

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রে ২২২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা দেশীয় মুদ্রায় ২৭ হাজার ৮৪ কোটি টাকার সমান। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। এই বাজারে শীর্ষ দশ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি।

এদিকে অনেক দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনকে টপকে শীর্ষস্থান দখলে করেছে ভিয়েতনাম। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে চীনের চেয়ে ১৮ কোটি ডলারের বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এমনটাই উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে ২ হাজার ৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি এই পরিসংখ্যান মার্চ পর্যন্ত। এপ্রিলের শুরুতেই পরিস্থিতি বদলে যায়। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশের ওপর ২ এপ্রিল ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৫৭ দেশের ওপর বিভিন্ন হারে বাড়তি পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক কার্যকরের দিন অনেকটা ‘ইউটার্ন’ করে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করা হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক থাকলেও চীনা পণ্যে মার্কিন শুল্কের হার ১৪৫ শতাংশ। বেইজিং দফায় দফায় পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ শতাংশে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। অবশ্য তার আগেই তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনকে পেছনে ফেলেছে ভিয়েতনাম।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ভিয়েতনাম ৩৮৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে চীন রপ্তানি করেছে ৩৬০ কোটির ডলারের তৈরি পোশাক। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।

এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, গত অর্থবছর বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ১৭ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই বাজারে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক।

অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৃতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক হচ্ছে বাংলাদেশ। গত বছর এই বাজারে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা। তার মানে গত বছর প্রতি মাসে গড়ে ৬১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। চলতি বছর সেই গড় বেড়ে হয়েছে ৭৪ কোটি ডলার।

বে টার্মিনালে ২ বিলিয়ন ও লালদিয়ায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, বে টার্মিনাল প্রকল্পের দুটি টার্মিনালে বিদেশি দুটি কোম্পানি মোট ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ (এফডিআই) করবে। ২০৩০ সালে এটি চালুর আশা করছি আমরা। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তাবিত বে টার্মিনাল এলাকা পরিদর্শন করে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মো. শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সাথে ছিলেন।

আশিক চৌধুরী বলেন, এখানে আপনারা দেখেছেন যে- আমরা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ফান্ডিংয়ে কিছু কাজ করছি। সরকার থেকে কিছু ফাইন্যান্সিং হচ্ছে। যেটা ব্রেক ওয়াটার হবে, সেটা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ফান্ডিং এ হবে। আর সেই সাথে এডিবি আমাদের সাথে কাজ করছে। অ্যাডভাইজার হিসাবে তাদের সাথে আমরা কাজ করছি।

তিনি বলেন, এখানে যেই দুইটি পোর্ট অপারেটরের কথা বলা হচ্ছে, পিএসএ সিঙ্গাপুর, পিএসএ’র খুবই ভালো এক্সপেরিয়েন্স। তারা ওই এক্সপেরিয়েন্সটা নিয়ে আসবে, আমাদের সাথে বেস্ট প্র্যাকটিসগুলা নিয়ে আসবে এবং আমরা এস্টিমেট করছি যে, এই পিএসএ এবং ডিপি ওয়ার্ল্ড রাফলি এক বিলিয়ন ডলার করে এই প্রজেক্টে ইনভেস্ট করবে। এক বিলিয়ন, এক বিলিয়ন করলে প্রথম দুইটা টার্মিনালেই আমরা প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার এর মতো একটা ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্টের চেহারা দেখতে পাব। অভিয়াসলি এটা কিন্তু ওভার টাইম হবে। তাই আমরা যদি মনে করি যে, ২০২৬ সালে হঠাৎ করে ১০ বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট, এভাবে হয় না জিনিসটা। একটু গ্রাজুয়ালি আসবে।

বিডা চেয়ারম্যান , ওনাদের কনস্ট্রাকশন পিরিয়ডের মধ্যে ওনারা গ্রাজুয়ালি ইনভেস্ট করতে থাকবে এবং আমরা আশা করছি যে, ২০৩০ এর মধ্যে, আমরা এই পোর্টগুলাকে চালু করতে পারব। লং টার্মে বিগ প্রাইজ হচ্ছে যে, আমাদেরকে একটা গ্লোবাল ফ্যাক্টরি হতে হবে। সেটা হওয়ার জন্য এই সবগুলা পোর্টকে একসাথে আসলে একটিভেট করা দরকার হবে। তা না হলে, উই উইল নট বি অ্যাবেল টু মিট দা ডিমান্ডস।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালের সাথে এখনকার এক্সপোর্ট ভলিউম দেখেন, ভলিউম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে গেছে। তো নিজেদের ক্যাপটিভ ডিমান্ড দিয়ে আমরা এখন কাভার করতে পারছি না। সেটা ২০৩৫ নাগাদ যে কোথায় গিয়ে ঠেকবে, সেটাও আমরা জানি না। সেই হিসাবে আমাদের ডেফিনেটলি মনে হয় যে, এই প্রজেক্টটা ইজ আ মাস্টার প্রজেক্ট। এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় মানে চট্টগ্রাম এলাকার টার্মিনাল যে কটা প্রজেক্ট হচ্ছে তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড়, সেটা আমাদের ফ্ল্যাগশিপ প্রজেক্ট। এবং এটা যখন হয়ে যাবে, তখন এই এলাকার চেহারা আমরা আশা করছি কমপ্লিটলি চেঞ্জ হয়ে যাবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের এক্সিসটিং যে পোর্টটা আছে, এটা আসলে রিভার পোর্ট। এখানে আমাদের জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করতে হয় এবং বড় জাহাজ আসতে পারে না। ১৩ মিটারের জাহাজ আসলে পরে এখন যেই জাহাজগুলো আসে, তার প্রায় তিন-চার গুণ একটা জাহাজই নিতে পারে। এতে আমাদের পরিবহন খরচ কমে যাবে এবং একই সাথে আমাদের এফিসিয়েন্সি বেড়ে যাবে। আমরা দ্রুত এখান থেকে ডাইরেক্ট ফিডার পোর্ট হিসাবে অপারেট করতে পারব এবং ডিজার্ভড যে কানেকটিভিটি, সেইটাও আমরা এখানে করতে পারব।

বে টার্মিনাল হলে ডিরেক্ট শিপিং করা সম্ভব হবে জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, এমনকি ইউরোপ-আমেরিকাতেও। এইটা আমাদের জন্য যুগান্তরকারী একটা উন্নতি হবে। আর মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট কথা হলো, যে আমাদের এখন কর্মসংস্থান দরকার।

বে টার্মিনালে চারটি টার্মিনাল করার পরিকল্পনা আছে জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের তিনটা অ্যাপ্রুভ হয়েছে। টার্মিনাল ওয়ান- যেটা পিএসএ সিঙ্গাপুর করবে। টার্মিনাল টু- যেটা ডিপি ওয়ার্ল্ড করবে এবং টার্মিনাল থ্রি আমরা ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে করব, যারা কম্পিট করে আসতে পারে। আরেকটা টার্মিনাল- এনার্জি টার্মিনাল, ওটা প্ল্যানে রেখেছি। এটা ভবিষ্যতে আমরা স্টাডি করে তারপরে এটা আমরা হয়তো বাস্তবায়ন করব। তো সামগ্রিকভাবে এখান থেকে আমাদের যে ক্যাপাসিটি, প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন টিইইউ ইজিলি করতে পারব। এতে এটা হয়তো ৪.৫ এর উপরেও চলে যাবে, যদি আমরা এখানে আরো অফ ডক অন্যান্য ফ্যাসিলিটিসগুলা করতে পারি এবং এটার যে মডেল কানেকটিভিটি, এগুলা যদি করতে পারি।

চলতি বছরের শেষ দিকে বে টার্মিনালের কাজ শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করেন বন্দর চেয়ারম্যান।

প্রস্তাবিত বে টার্মিনাল এলাকা পরিদর্শন শেষে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিদর্শনে যান বিডা চেয়ারম্যান।

সেখানে আশিক চৌধুরী বলেন, এই বাংলাদেশের ফুল অ্যাম্বিশনটার মধ্যমণি হচ্ছে চট্টগ্রাম। আমরা বাংলাদেশকে যেখানে নিয়ে যাওয়ার কথা, ইকনোমিক্যালি চিন্তা করছি। সেটার সবচেয়ে সেন্টার পিস হচ্ছে গিয়ে চট্টগ্রাম। এবং চট্টগ্রামের এই সেন্টার পিসটার একটা অংশ আমরা এখানে দেখতে পাচ্ছি। এই পোর্টটা আরো এফিসিয়েন্ট হবে, সাথে আরো অনেকগুলা পোর্ট দাঁড়িয়ে যাবে। অ্যান্ড চিটাগাং উইল বিকাম বেসিক্যালি দি, দি ট্রু কমার্শিয়াল হাব। যেটা আমরা সবসময় বলে আসছি যে, ঢাকা হচ্ছে গিয়ে পলিটিক্যাল ক্যাপিটাল, ঢাকা হচ্ছে গিয়ে আমাদের ফাইনান্সিয়াল ক্যাপিটাল। বাট আমাদের কমার্শিয়াল ক্যাপিটাল যেটা, সেটা হবে চট্টগ্রাম এবং এই ট্রেডের কারণেই হবে।

বিডা চেয়ারম্যান বলেন, এই ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের জন্য বন্দরের টার্মিনালগুলাকে যত বেটার, যত এফিসিয়েন্ট, যত ওয়ার্ল্ড ক্লাস করতে পারব, তত আমাদের ওভার অল ব্যবসা পরিস্থিতির জন্য অনেক বড় একটা কন্ট্রিবশন তারা করতে পারবে।

পরিদর্শনের শুরুতে তিনি প্রস্তাবিত লালদিয়া টার্মিনালের প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে যান। সেখানে তিনি বলেন, লালদিয়ার চরে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখানে কোনো বিনিয়োগ করা হবে না। আমাদের ইতিহাস তৈরির সুযোগ আছে। বাংলাদেশকে ম্যানুফেকচারিং হাব করা সরকারের লক্ষ্য। লালদিয়া গ্রিন পোর্ট হবে। বিষয়টি আমরা খুবই সিরিয়াসলি ট্র্যাক করার চেষ্টা করছি। আমাদের দেশে বার্ষিক এফডিআই ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি নয়। একটি প্রকল্প থেকেই যদি ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আসে, তবে তা আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। বিডার পক্ষ থেকে আমরা এই প্রকল্পের অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।

বন্দরের প্রকল্প এলাকা ও এনসিটি পরিদর্শনের পর তিনি নগরীর পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লুতে ব্যবসায়ীদের সাথে বন্দর বিষয়ে মতবিনিময় করেন। এ সময় ব্যবসায়ীরা বন্দর বিষয়ে তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও পরামর্শ তুলে ধরেন। ব্যবসায়ীদের সমস্যা ও পরামর্শগুলো শোনার পর তিনি এর উত্তর দেন এবং সরকারের তরফ থেকে এগুলো সমাধান ও কার্যকর করার বিষয়ে কাজ করবেন বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেন।