Home Blog Page 30

পারস্য উপসাগরে এমএসসির কনটেইনার জাহাজে আগুন

পারস্য উপসাগরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) জলসীমায় মেডিটারেনিয়ান শিপিং কোম্পানির (এমএসসি) একটি কনটেইনার জাহাজে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ইউএইর ন্যাশনাল গার্ডের ন্যাশনাল সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ সেন্টার এই খবর জানিয়েছে।

এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জাহাজটির কোনো কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত কিনা, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জাহাজটির কাছ থেকে সাহায্যবার্তা পেয়ে তিনটি টাগ সেখানে ছুটে যায় এবং আগুন নেভানোর কাজে লেগে পড়ে।

তাৎক্ষণিকভাবে আনুষ্ঠানিক কোনো সূত্র থেকে জাহাজটির নাম জানা যায়নি। তবে স্যালভেজ অ্যান্ড রেক ওয়েবসাইট জানিয়েছে, জাহাজটির নাম এমএসসি রিটা। এটি পানামায় নিবন্ধিত। অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এআইএস) ডেটা অনুসারে, এমএসসি রিটা পশ্চিম আফ্রিকা থেকে পারস্য উপসাগরে গিয়েছে। স্যালভেজ অ্যান্ড রেকের দেওয়া তথ্য সঠিক হলে জাহাজটি ৪ জুন থেকে ইউএইর জলসীমায় রয়েছে। খলিফা অ্যাংকরেজে অবস্থানকালে এটিতে আগুন লেগেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এমএসসি রিটা হলো ১৮ বছর বয়সী একটি কনটেইনার জাহাজ। ১ লাখ ৪ হাজার ৮৫০ ডিডব্লিউটির জাহাজটি আট হাজার কনটেইনার পরিবহন করতে পারে।

দ্রুত বাড়ছে মেগা কনটেইনার জাহাজের বহর

এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে নতুন দুটি ২৪ হাজার টিইইউ ধারণক্ষমতার আল্ট্রা-লার্জ কনটেইনার জাহাজ বুঝে পেয়েছে হংকংয়ের কনটেইনার শিপিং ও লজিস্টিকস সার্ভিস কোম্পানি ওরিয়েন্ট ওভারসিজ কনটেইনার লাইনস (ওওসিএল)। এছাড়া জাপানের কনটেইনার ট্রান্সপোর্টেশন কোম্পানি ওশান নেটওয়ার্ক এক্সপ্রেসও (ওয়ান) সম্প্রতি তাদের মেগাম্যাক্স ক্লাসের প্রথম আল্ট্রা-লার্জ কনটেইনার জাহাজ বুঝে পেয়েছে।

ওওসিএল এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার টিইইউ কনটেইনার ধারণক্ষমতার মোট ১২টি জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ দিয়েছে। এই জাহাজগুলোর পরিবহন সক্ষমতা কোম্পানিটির আগের বৃহত্তম জাহাজের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি হবে।

মঙ্গলবার (৬ জুন) নিজেদের তৃতীয় আল্ট্রা-লার্জ কনটেইনার জাহাজ ওওসিএল তুর্কিয়ে বুঝে পেয়েছে ওওসিএল। ফেব্রুয়ারিতে পেয়েছিল প্রথমটি, যার নাম ওওসিএল স্পেন। এ দুটি জাহাজই নির্মাণ করেছে চীনের নানটং কসকো কেএইচআই শিপ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। এছাড়া গত সপ্তাহে ওওসিএল পাইরিউস সরবরাহ করেছে দালিয়ান কসকো কেএইচআই শিপ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। এই দুটি কোম্পানি ছয়টি করে জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ পেয়েছে। ১ হাজার ৩১২ ফুট দীর্ঘ ও ২০১ ফুট প্রশস্ত জাহাজগুলোর প্রতিটি ২৪ হাজার ১৮৮ টিইইউ কনটেইনার পরিবহন করতে সক্ষম। এগুলোকে এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যেন সেগুলোর সুয়েজ খালে চলাচল এবং এশিয়া ও ইউরোপের বন্দরগুলোয় ভিড়তে কোনো সমস্যা না হয়।

ওয়ান ইনোভেশন

এদিকে ওয়ান অতিসম্প্রতি তাদের মেগাম্যাক্স ক্লাসের প্রথম কনটেইনার জাহাজ বুঝে পেয়েছে। ওয়ান ইনোভেশন নামের ৪০০ মিটার দীর্ঘ জাহাজটি নির্মাণ করেছে জাপান মেরিন ইউনাইটেড করপোরেশনের কুরে শিপইয়ার্ড। এর কনটেইনার পরিবহন সক্ষমতা ২৪ হাজার ১৩৬ টিইইউ। মোট ছয়টি মেগাম্যাক্স জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ দিয়ে রেখেছে ওয়ান।

আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়ায় শিপিং কোম্পানিগুলো এখন মেগা কনটেইনার জাহাজ বহরে যোগ করার দিকে ঝুঁকেছে। এসব জাহাজের নকশা ও নির্মাণের ক্ষেত্রে যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয় সেটি হলো, হালের (জাহাজের মূল কাঠামোর যে অংশ পর্যন্ত পানির উপরিতল পর্যন্ত ডুবে থাকতে পারে) আকার অন্যান্য বড় জাহাজের সমান হলেও এগুলোয় যেন তুলনামূলক বেশি সংখ্যক কনটেইনার সাজানো যায়। এজন্যই এগুলোকে আল্ট্রা-লার্জ বা মেগা কনটেইনার জাহাজ বলা হয়।

বিশ্বের বৃহত্তম কনটেইনার শিপিং কোম্পানি মেডিটারেনিয়ান শিপিং কোম্পানিও (এমএসসি) অন্তত এক ডজন মেগা কনটেইনার জাহাজের কার্যাদেশ দিয়ে রেখেছে, যার মধ্যে কয়েকটি এরই মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে। দানবাকার জাহাজ বহরে যোগ করায় পথপ্রদর্শক তাইওয়ানভিত্তিক কোম্পানি এভারগ্রিন মেরিনের বহরে ২৪ হাজার টিইইউ ধারণক্ষমতার কনটেইনার জাহাজ যুক্ত হয়েছে গত বছর। চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের বহরে প্রথম আল্ট্রা-লার্জ কনটেইনার জাহাজ বুঝে পাওয়ার কথা রয়েছে আরেক শীর্ষ কোম্পানি হ্যাপাগ লয়েডের।

আল্ট্রা-লার্জ কনটেইনার জাহাজগুলোর বেশিরভাগই নামানো হচ্ছে এশিয়া-ইউরোপ ট্রেড রুটে। এমএসসির জাহাজগুলোও এই রুটেই সার্ভিস দিচ্ছে।

অ্যাংলো-ইস্টার্নের নাবিক নিয়োগের লাইসেন্স বাতিল করেছে ভারত

ভারতীয় নাবিকদের সবচেয়ে বড় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর একটি হলো অ্যাংলো-ইস্টার্ন। সম্প্রতি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে যে, ভারতের নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অধীনস্থ সিমেন’স এমপ্লয়মেন্ট ডিভিশন পাঁচ বছর আগের একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হংকংভিত্তিক থার্ড পার্টি শিপ ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিটির রিক্রুটমেন্ট ও সার্ভিস লাইসেন্স স্থগিত করেছে।

অ্যাংলো-ইস্টার্নের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমের এই খবর নিশ্চিত করে বলা হয়েছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে তারা খুব দ্রুত কার্যক্রম গুছিয়ে নিতে পারবে এবং তাদের দৈনন্দিন পরিচালনায় এর কোনো প্রভাব পড়বে না। এদিকে ভারতীয় ইউনিয়ন নেতারা বলছেন, সরকারের এই আদেশের ফলে দেশটির নাবিকদের মানসিক অবস্থায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

জুনের প্রথম দিন থেকেই এই স্থগিতাদেশ কার্যকর হয়েছে। যে মামলার তদন্ত শেষে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে, সেটি ২০১৮ সালের একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে দায়ের করা। একজন চিফ ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যু ঘিরে অ্যাংলো-ইস্টার্নের বিরুদ্ধে নিয়োগ সদাচার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া কোম্পানির সার্ভিসভুক্ত যে জাহাজে চাকরিরত অবস্থায় মারা যান ওই চিফ ইঞ্জিনিয়ার, সেই জাহাজের মাস্টারের বিরুদ্ধেও তদন্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

পাঁচ বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিচ্ছে কেনিয়া

কেনিয়া তাদের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বন্দরের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ইজারা ভিত্তিতে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। বন্দরগুলো হলো কিলিন্দিনি হারবার, দোঙ্গো কুন্দু পোর্ট, কিসুমু পোর্ট, শিমোনি ফিশারিজ পোর্ট ও লামু পোর্ট।

মূলত দুটি উদ্দেশ্য থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেনিয়া সরকার। প্রথমত, বন্দরগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। আর দ্বিতীয়ত, আর্থিক সংকটের মধ্যে থাকা সরকার এই ইজারার মাধ্যমে ১ হাজার কোটি ডলার সংগ্রহ করবে, যা তাদের সংকট কাটাতে অনেকটাই সহায়তা করবে।

ঐতিহাসিকভাবে পূর্ব আফ্রিকার গেটওয়ে হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে কেনিয়া। আর এই কাজে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে মোম্বাসা বন্দর। তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেশী তাঞ্জানিয়ার বন্দরগুলো কেনিয়ার প্রতিযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

এর আগে কিলিন্দিনি হারবার, দোঙ্গো কুন্দু পোর্ট, কিসুমু পোর্ট ও শিমোনি ফিশারিজ পোর্টের পরিচালন কার্যক্রম সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) খাতে ছেড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন পেক্ষাপটে সেটি আর বাস্তবায়িত হয়নি। সরকার এখন সেই উদ্যোগ নিয়ে নতুন করে অগ্রসর হচ্ছে।

এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কেনিয়া ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের (কেডিসি) মাধ্যমে লামু বন্দর পরিচালনার দায়িত্বও বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে চাইছে দেশটির সরকার। এই বন্দরটি বর্তমানে সরকারের জন্য একটি শে^তহস্তী হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালের মে মাসে কমিশনিংয়ের পর এখন পর্যন্ত বন্দরটিতে ২৫টিরও কম জাহাজ ভিড়েছে। হ্যান্ডলিং হয়েছে আড়াই হাজার টিইইউর কম কনটেইনার। অথচ সেখানে তিনটি বার্থ নির্মাণের পেছনে সরকারের খরচ হয়েছে ৩৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। উদ্বোধনের সময় সরকারের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছিল, শিগগিরই লামু বন্দরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হয়ে উঠবে।

এই ইজারা প্রক্রিয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে কেডিসি এরই মধ্যে একটি বিস্তারিত প্রসপেক্টাস তৈরি করেছে। আর ইজারা পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছে কেনিয়া পোর্টস অথরিটি ও ল্যাপসেট করিডোর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি।

টানা আট মাস দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানিতে পতন

চলতি বছরের মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২২৪ কোটি, যা বছরওয়ারি ১৫ দশমিক ২ শতাংশ কম। এ নিয়ে টানা আট মাস রপ্তানিতে পতন দেখল দেশটি।

কোরিয়ার বাণিজ্য, শিল্প ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান মন্দাভাব ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশটির সেমিকন্ডাক্টর ও প্রযুক্তি পণ্যের রপ্তানি কমেছে, যা সার্বিক রপ্তানির পতনে নিয়ামক ভূমিকা রেখেছে।

রপ্তানির পাশাপাশি মে মাসে কোরিয়ার আমদানিও কমেছে। গত মাসে দেশটির আমদানি ছিল ৫ হাজার ৪৩৪ কোটি ডলার, যা বছরওয়ারি ১৪ শতাংশ কম। মন্ত্রণালয় বলছে, জ্বালানি আমদানি ২০ দশমিক ৬ শতাংশ কমে যাওয়ায় সার্বিক আমদানি কমেছে।

আলোচ্য সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২১০ কোটি ডলার। ১৯৯৭ সালের পর এই প্রথম টানা ১৫ মাস বাণিজ্য ঘাটতি দেখল দেশটি।

তুর্কী উপকূলে দুই কার্গো জাহাজের মধ্যে সংঘর্ষ, ক্রুরা অক্ষত

এজিয়ান সাগরের পূর্বাঞ্চলে তুর্কী উপকূলের কাছে দুটি কার্গো জাহাজের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে তুর্কী মালিকানাধীন একটি জাহাজের স্টারবোর্ড সাইডে বড় আকারের গর্ত তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।

গ্রিসের নিয়ন্ত্রণাধীন দ্বীপ চিওসের নয় মাইল উত্তর-পশ্চিমে তুর্কী মালিকানাধীন জাহাজ অ্যান্টকে ধাক্কা দেয় পোটেনিয়া নামের সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী আরেকটি কার্গো জাহাজ। এতে অ্যান্টে বড় আকারের গর্ত তৈরি হয়। গ্রিক কর্তৃপক্ষ জাহাজটিকে সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব দিলেও জাহাজটি তা গ্রহণ করেনি এবং তুর্কি কোস্ট গার্ডের সহায়তায় সেটি তুরস্কের দিকে যাত্রা অব্যাহত রাখে।

গ্রিসের হেলেনিক কোস্ট গার্ড দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনার জন্য ছুটে যায়। তবে কোনো ধরনের হতাহত কিংবা কারও নিখোঁজ হওয়ার কথা জানতে পারেনি তারা। বাহিনীটি জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় ভানুয়াতুর পতাকাবাহী তুর্কী জাহাজটিতে ১৩ জন ক্রু ছিলেন, যার মধ্যে ১০ জন তুরস্কের নাগরিক। অন্যদিকে পোটেনিয়াতে ১৯ জন ক্রু ছিলেন বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।

সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও দূষণ প্রতিরোধে আইন আধুনিকায়নে নজর ইইউর

সমুদ্র নিরাপত্তা ও জাহাজের কারণে সাগরের পানির দূষণ প্রতিরোধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিদ্যমান আইনের আধুনিকায়নে নতুন পাঁচটি বিল প্রস্তাব করেছে ইউরোপীয় কমিশন (ইসি)। কমিশনের আইনপ্রণেতাদের দাবি, নতুন এই বিলগুলো আইনে পরিণত হলে সেগুলো সমুদ্র সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে বাড়তি মাত্রা যোগ করবে এবং ইইউর ও আন্তর্জাতিক আইনগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে। একই সঙ্গে বন্দর রাষ্ট্রগুলোর নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণকে আরও বেশি নজরদারির আওতায় আনবে।

তুলনামূলক বিচারে ইইউর জলসীমা এখন অনেকটাই নিরাপদ। সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে খুবই কম। তেল ছড়িয়ে পড়ার বড় ধরনের কোনো ঘটনাও ঘটেনি। তবে ইসির আইনপ্রণেতারা বলছেন, ইইউর জলসীমায় প্রতি বছর দুই হাজারের বেশি সামুদ্রিক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায় এবং এই ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। এই অবস্থায় বিদ্যমান আইনের আধুনিকায়ন ও ইউরোপিয়ান মেরিটাইম সেফটি এজেন্সির (ইএমএসএ) কর্তৃত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন বিলগুলোর প্রস্তাব করেছেন তারা।

প্রস্তাবিত পাঁচটি বিলের মধ্যে তিনটির মূল বিষয় হলো সামুদ্রিক সুরক্ষা বিধানের আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন। এছাড়া বন্দর রাষ্ট্রগুলোর নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতা বৃদ্ধি ও সামুদ্রিক দুর্ঘটনার তদন্ত-সংক্রান্ত দুটি বিল প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলগুলো আইনে পরিণত হলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো মাত্রাতিরিক্ত বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি নজরদারি করতে পারবে।

বিলগুলো কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু কাজ এখনও বাকি রয়েছে। ইইউতে অভিন্ন আইন প্রণয়নের সাধারণ প্রক্রিয়া অনুযায়ী এখন বিলগুলো ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের কাছে উত্থাপন করা হবে। তারা অনুমোদন দিলে তবেই বিলগুলো আইনে পরিণত হবে।

উত্তর কোরিয়ার মিসাইল পরীক্ষায় ঝুঁকিতে শিপিং খাত, আইএমওতে রেজোলিউশন গ্রহণ

পূর্বসতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর ফলে এশিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় ব্যস্ত সামুদ্রিক রুটে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের সমুদ্রবিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনকে (আইএমও) এ কথা জানিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ।

বুধবার (৩১ মে) ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শুরু হয়েছে আইএমওর মেরিটাইম সেফটি কমিটির (এমএসসি) ১০৭তম সেশন। প্রথম দিনেই একটি রেজোলিউশন গৃহীত হয়েছে, সেশনে অংশগ্রহনকারী শতাধিক দেশের মধ্যে সিংহভাগই যার প্রতি সহমত পোষণ করেছে। এই রেজোলিউশনে উত্তর কোরিয়ার মিসাইল পরীক্ষাকে আন্তর্জাতিক সমুদ্র পরিবহন ও নাবিকদের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।

বুধবার উত্তর কোরিয়ার ষষ্ঠ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে এবং এর ধ্বংসাবশেষ (বুস্টার ও প্লেলোড) সাগরে গিয়ে পড়েছে। তবে এর কারণে এখনও জরুরি সতর্কতা জারি রয়েছে এবং দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের জলসীমার কিছু অংশ খালি করার নির্দেশনা বলবৎ রয়েছে।

উত্তর কোরিয়া অবশ্য এই রেজোলিউশনকে নাকচ করে দিয়েছে। তাদের দাবি, একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আত্মরক্ষামূলক যে পদক্ষেপ গ্রহণের অধিকার তাদের রয়েছে, তারা কেবল সেই নিয়মিত ও সুপরিকল্পিত কর্মসূচিই বাস্তবায়ন করছে। আইএমওর কমিটির কাছে দাখিলকৃত নথিতে তারা বলেছে, ‘কৌশলগত কারণেই আমরা আমাদের কোনো সামরিক মহড়া ও আত্মরক্ষামূলক কর্মসূচি সম্পর্কে আগে থেকে কোনো সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি দিতে পারি না।’ তারা আরও বলেছে, ‘আমরা মিসাইল উৎক্ষেপনের সময় নিখুঁত বৈজ্ঞানিক হিসাব-নিকাশ করে থাকি। এছাড়া এই উৎক্ষেপণের প্রভাবের স্থান ও জাহাজ চলাচলের রুটের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখি আমরা।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানসহ কয়েকটি দেশ উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ও জাহাজ চলাচলের ঝুঁকির বিষয়ে আইএমওর কাছে একটি নথি জমা দিয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নরওয়ে, স্পেন, ইউক্রেন, ব্রিটেন ও ভানুয়াতু।

কনটেইনার পরিবহনের শিডিউল রিলায়েবিলিটিতে উন্নতির গতি কমেছে

ভোক্তাচাহিদার ঊর্ধ্বগতিতে ২০২১ সালে কনটেইনার পরিবহনে জট লেগে গিয়েছিল। ২০২২ সালের শুরুর মাসগুলোও এভাবেই কেটেছে। খালি কনটেইনারের সংকট, বন্দরগুলোয় হ্যান্ডলিং সক্ষমতার ঘাটতি, বন্দরে জাহাজের অপেক্ষমান থাকার সময় বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে অপারেটরদের জন্য শিডিউল ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল। সেই বিলম্ব এখন আর নেই। কনটেইনার পরিবহনে শিডিউল রিলায়েবিলিটিও উন্নতির পথেই রয়েছে। তবে বছরের শুরুর মাসগুলোয় এই উন্নতির গতি যতটা বেশি ছিল, ২০২৩ সালের বাকি মাসগুলোয় তাতে ছেদ পড়তে পারে। এমনকি শীর্ষ ক্যারিয়ারদের ক্ষেত্রে এই সূচক উল্টোপথে হাঁটতে পারে।

৩৪টি ভিন্ন ট্রেড লেনে ৬০টির বেশি দেশের শিডিউল পারফরম্যান্স বিচার করে সি-ইন্টেলিজেন্স। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী অ্যালান মারফি বলেছেন, ‘শিডিউল রিলায়েবিলিটির বৈশ্বিক সূচকে মাসওয়ারি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে এই প্রবৃদ্ধির গতি প্রতি মাসেই কমছে ।’

চলতি বছরের এপ্রিলের পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করতে গিয়ে সি-ইন্টেলিজেন্স দেখেছে, এ সময়ে বৈশ্বিক শিডিউল রিলায়েবিলিটি মার্চের তুলনায় ১ দশমিক ৭ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ দশমিক ২ শতাংশ। আগের বছরের এপ্রিলের তুলনায় তা ২৯ দশমিক ৯ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। ২০২২ সালের এপ্রিলে ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ ক্ষেত্রে জাহাজগুলো শিডিউল অনুযায়ী চলতে পেরেছিল।

২০২৩ সালের এপ্রিলে শিডিউল রিলায়েবিলিটির মান আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণে উঠে গেলেও তা করোনা মাহামারির আগের গড় মানের (প্রায় ৭২ শতাংশ) তুলনায় অনেকটাই কম।

বিশ্বের শীর্ষ ১৪টি ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রেও চিত্রটি অনেকটা একই রকম। এসব ক্যারিয়ার এপ্রিল মাসে বছরওয়ারি বেশ ভালো প্রবৃদ্ধিই দেখিয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিলের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিলে তাদের শিডিউল রিলায়েবিলিটি বেড়েছে ৫০ থেকে ২০০ শতাংশ (গড় প্রবৃদ্ধি ১১০ শতাংশ)। তবে মাসওয়ারি পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা। চলতি বছরের মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে এই ১৪টি ক্যারিয়ারের রিলায়েবিলিটি শিডিউল বেড়েছে গড়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হারে। সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন মান তো ঋণাত্মক ১০ শতাংশে নেমে গেছে।

মারফি জানান, শীর্ষ ১৪টি ক্যারিয়ারের মধ্যে অর্ধেকে এপ্রিলে মাসওয়ারি প্রবৃদ্ধি দেখাতে সক্ষম হয়েছে। এভারগ্রিন মেরিন সবচেয়ে বেশি (৭ শতাংশের কিছু বেশি) প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অন্যদিকে জিমের রিলায়েবিলিটি কমেছে ১০ শতাংশের বেশি। সবচেয়ে বেশি শিডিউল রিলায়েবিলিটি ছিল মায়েরস্কের। এরপর সবচেয়ে বেশি সময়মতো পণ্য পৌঁছে দিতে পেরেছে মেডিটারেনিয়ান শিপিং কোম্পানি (এমএসসি)। ১৮টি ক্যারিয়ারের মধ্যে নয়টির বর্তমানে শিডিউল রিলায়েবিলিটি ৬০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এক বছর আগে এই হার ছিল ৩০ শতাংশের আশেপাশে।

১০ মাস পর মুক্ত ভিএলসিসি হিরোইক ইডুন ও এর ক্রুরা

প্রায় ১০ মাস পর বন্দীদশা থেকে মুক্ত হলো নরওয়ের মালিকানাধীন ভেরি লার্জ ক্রুড ক্যারিয়ার (ভিএলসিসি) হিরোইক ইডুন। তেল চুরির অভিযোগে আটকে রাখা হয়েছিল জাহাজটিকে। নাইজেরিয়ার নৌবাহিনী সম্প্রতি ক্যারিয়ারটিকে মুক্ত করে দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে।

গত আগস্টে হিরোইক ইডুন আটকের ঘটনাটি ঘটেছিল ভুল বোঝাবুঝির কারণে। ৮ আগস্ট অয়েল জায়ান্ট বিপি কর্তৃক ভাড়াকৃত ভিএলসিসিটি নাইজেরিয়ার জলসীমায় একটি অফশোর টার্মিনাল থেকে তেল নেওয়ার জন্য পৌঁছায়। চায়না ন্যাশনাল অফশোর অয়েল করপোরেশন পরিচালিত আকপো অফশোর এফপিএসও থেকে তেল নেওয়ার জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় ট্যাংকারটি একটি জাহাজকে তাদের দিকে অগ্রসর হতে দেখে। সেটিকে একটি জলদস্যুদের জাহাজ মনে করে হিরোইক ইডুন ভয়ে অফশোর প্লাটফর্মটি থেকে একুয়াটোরিয়াল গিনির জলসীমার দিকে চলে যায়। সেখানকার জলসীমায় পৌঁছে ট্যাংকারটি ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর (আইএমবি) পাইরেসি রিপোর্টিং সেন্টারের কাছে জলদস্যুদের হামলার প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে একটি বার্তাও পাঠায়।

প্রকৃতপক্ষে তাদের দিকে অগ্রসর হওয়া জাহাজটি ছিল নাইজেরিয়ার নৌবাহিনীর একটি প্যাট্রল ভেসেল। সেই প্যাট্রল ভেসেলটি ধরে নেয়, ট্যাংকারটি অফশোর প্লাটফর্মে হামলা চালিয়ে জোরপূর্বক তেল ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল এবং তাদের দেখে পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় নাইজেরিয়া সরকার একুয়াটোরিয়াল গিনির কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি সেভাবেই অবহিত করে এবং ট্যাংকারটিকে আটকে রাখার অনুরোধ জানায়। গিনি সরকার ট্যাংকারটিকে তিন মাস আটকে রাখে এবং নভেম্বরে নাইজেরিয়ার নৌবাহিনীর কাছে সেটিকে হস্তান্তর করে।

চুক্তির পর হিরোইক ইডুনের নিয়ন্ত্রণ এর মাস্টার তনুজ মেহতার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর ট্যাংকারটি দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের উদ্দেশে যাত্রা করে।

এরপর গত কয়েক মাসে হিরোইক ইডুনের মালিক, ভাড়াকারী, ম্যানেজার ও বিমাকারীরা বারবার চেষ্টা করেছে নাইজেরিয়া কর্তৃপক্ষকে প্রকৃত বিষয়টি স্পষ্ট করতে। এই প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ নাইজেরিয়া সরকার ট্যাংকারটিকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়। তবে পুরো ঘটনায় যে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার জন্য নাইজেরিয়ার নৌবাহিনীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়েছে ট্যাংকারটির মালিক ইডুন মেরিটাইমকে। এছাড়া প্লি ডিল হিসেবে নাইজেরিয়া সরকারকে দেড় কোটি ডলার প্রদানের চুক্তিও করতে হয়েছে তাদের।

নাইজেরিয়ার নৌবাহিনী ট্যাংকারটিকে ছেড়ে দিলেও এখনো দাবি করছে যে, হিরোইক ইডুন ও এর ২৬ ক্রু অনৈতিকভাবে তাদের জলসীমায় প্রবেশ করেছে। অবশ্য শিপিং ইন্ডাস্ট্রি ও ট্যাংকারটির প্রতিনিধিত্বকারীরা এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।