Home Blog Page 4

অনবোর্ড চার্জ প্রতি কনটেইনারে বাড়ল ১৭৫ টাকা

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে অনবোর্ড চার্জ প্রতি কনটেইনারে ১৭৫ টাকা বেড়েছে, যা আগামী ছয় মাস পর্যন্ত বহাল থাকবে। এরপর এ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার বিকেলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সিদ্ধান্ত দেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।

‘অনবোর্ড কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ’ বলতে জাহাজে কনটেইনার লোড করা, খালাস করা এবং জাহাজের ডেকে বা হোল্ডে স্থানান্তরের জন্য ধার্য ফি বোঝায়। এই চার্জ শিপিং কোম্পানির পক্ষ থেকে ধার্য করা হয় এবং এটি সাধারণত ফ্রেইট বা ভাড়ার একটি অংশ হিসেবে ধরা হয়। এই চার্জের পরিমাণ কনটেইনারের আকার, ধরন এবং লোডিং ও আনলোডিংয়ের জটিলতার ওপর নির্ভর করে।

চট্টগ্রাম বন্দরের জিসিবি (জেনারেল কার্গো বার্থ) এলাকায় কনটেইনার জাহাজে অনবোর্ড হ্যান্ডলিং রেট যৌক্তিক হারে বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর না করায় শিপিং এজেন্টদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ ওঠে।

শিপিং এজেন্টদের সঙ্গে বার্থ অপারেটরদের এ দ্বন্দ্বের জেরে জিসিবির ছয়টি জেটিতে জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজে ধীরগতি হচ্ছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছিল আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে এর আগেও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চিঠিতে বলা হয়, গত ৯ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্যের (হারবার ও মেরিন) সভাপতিত্বে বার্থ অপারেটর ও শিপিং এজেন্টদের অংশগ্রহণে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উভয় পক্ষের প্রস্তাবিত রেটের মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকায় বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে বিদ্যমান রেটের সঙ্গে প্রতি কনটেইনারে ২০৫ টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বার্থ অপারেটররা তাৎক্ষণিকভাবে ওই সিদ্ধান্তে সম্মতি দিলেও শিপিং এজেন্টরা সিদ্ধান্ত দেয়নি। ফলে বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর, বার্থ, শিপ হ্যান্ডলিং ও টার্মিনাল অপারেটর, শিপিং এজেন্টদের সঙ্গে মন্ত্রণালয় বৈঠকের সময় নির্ধারণ করে ৬ মে।

বৈঠকে প্রতি কনটেইনারে ২০৫ টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করেন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।

বার্থ, শিপ হ্যান্ডলিং ও টার্মিনাল অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে একরাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, উপদেষ্টা ১৭৫ টাকা বাড়তি নিতে বলেছেন।

বাংলাদেশকে ৪০ কোটি ইউরো ঋণ ও অনুদান দিচ্ছে ইআইবি ও ইইউ

ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি) বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩৫০ মিলিয়ন বা ৩৫ কোটি ইউরোর কাঠামোগত ঋণ অনুমোদন করেছে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অতিরিক্ত ৪৫ মিলিয়ন বা ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউরো অনুদান দেবে। পরিবেশ রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি হ্রাস ও অভিযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নে সহায়তা করাই এসব প্রকল্পের লক্ষ্য।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫৮তম বার্ষিক সভা চালাকালে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক আর্থিক অংশীদারদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে বাংলাদেশের। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের গতি আরও ত্বরান্বিত করা।

রবিবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের (ইআইবি) সভাপতি নাদিয়া কালভিনোর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে ইআইবির চলমান সহায়তার পরিধি বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেই বৈঠকে এই ঋণ ও অনুদানের অনুমোদন হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রধান ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ইআইবি ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে কাঠামোগত চুক্তির আওতায় কাজ করে আসছে। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য, পানি সরবরাহ, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের ছয়টি চলমান প্রকল্পে প্রায় ৬৩৫ মিলিয়ন বা ৬৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরো বিনিয়োগ করেছে। ইআইবি মূলত ইইউ সদস্যদেশগুলোতে কার্যক্রম পরিচালনা করে। তা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ১৬০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে ইইউর উন্নয়ন সহযোগিতা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বৈঠকে মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অবকাঠামো খাতে আরও বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তায় বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ এবং মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়ানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই বিনিয়োগ অপরিহার্য। তিনি ইইউ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশের কৌশলগত খাতগুলোতে আরও বেশি অনুদানভিত্তিক অথবা স্বল্প সুদের ঋণসহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।

এ ছাড়া অর্থ উপদেষ্টা জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের (জেবিআইসি) প্রতিনিধিদের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। জেবিআইসি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্প অর্থায়ন, কৌশলগত অংশীদারি ও বিনিয়োগ সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। জেবিআইসির উল্লেখযোগ্য অর্থায়নের মধ্যে রয়েছে ডিএপি-২ সার কারখানা (যার সম্পূর্ণ পরিশোধিত অর্থের পরিমাণ ৭১৫.৬ মিলিয়ন বা ৭১ কোটি ৫৬ লাখ ডলার), ঘোড়াশাল সার কারখানার যন্ত্রপাতি (মিতসুবিশির সরবরাহ করা) ও মেঘনাঘাট বিদ্যুৎ প্রকল্প (যেখানে ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার এডিবির সঙ্গে যৌথভাবে অর্থায়ন করা হয়েছে)।

অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট (দক্ষিণ, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া) ইয়িংমিং ইয়াং, ওপেক ফান্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও দ্য অ্যাগ্রিকালচার ইনোভেশন মেকানিজম ফর স্কেলের (এআইএম ফর স্কেল) ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল ক্রেমারের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছে। এই সভাগুলোতে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব উচ্চপর্যায়ের বৈঠক বাংলাদেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে বৈশ্বিক আর্থিক অংশীদারদের সঙ্গে বাংলাদেশের কৌশলগত সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরে রপ্তানিমুখী কনটেইনার স্ক্যানারের কার্যক্রম পুনরায় চালু

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে স্থাপিত রপ্তানিমুখী কনটেইনার স্ক্যানারের অপারেশনাল কার্যক্রম পুনরায় চালু করেছে। আইএসপিএস কোড বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বন্দরের এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই কনটেইনার স্ক্যানার স্থাপন করা হয়। ফাইভ আর এসোসিয়টস লিমিটেডের সরবরাহকৃত এই উন্নত মানের ফিক্সড স্ক্যানারটি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছিলো। স্ক্যানারের রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিষ্ঠানটির সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় অপারেশনাল কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল।

রপ্তানিমুখী কনটেইনার স্ক্যানিং সিস্টেম চালু রাখার জন্য একটি কার্যকর সমাধান দ্রুত প্রয়োজন ছিল। এই লক্ষ্যেই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ রক্ষণাবেক্ষণ কাজে পূর্বের ঠিকাদারকে সাময়িকভাবে পুননিয়োজিত করেছে।

রবিবার (৪ মে) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, ওএসপি, এনডিসি, এনসিসি, পিএসসি স্ক্যানারের অপারেশনাল কার্যক্রম পুনরায় চালুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্হিত ছিলেন কাস্টম হাউস চট্টগ্রামের কমিশনার, চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন), পরিচালক (নিরাপত্তা), বন্দর সচিবসহ বন্দর ও কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে রপ্তানি কার্যক্রমের গতি বাড়াতে নতুন উদ্যোগ

কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট বন্ড সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে রপ্তানি কার্যক্রমকে দ্রুততর করতে পদক্ষেপ নিয়েছে। অংশ হিসেবে দেশে অধিক হারে রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপন ও এ-সংক্রান্ত তথ্য দ্রুত অনলাইনে পেতে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট-চট্টগ্রামের নামে অনলাইনভিত্তিক একটি ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট-চট্টগ্রামের আওতাধীন রপ্তানিমুখী শিল্পের বন্ড সুবিধা ব্যবহারকারিরা যাতে এই অনলাইন ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের ফাইলের অবস্থানসহ হালনাগাদ যাবতীয় তথ্য পেতে পারেন, এজন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বন্ড কমিশনারেটে অনলাইন ভিত্তিক ওয়েবসাইট চালুর ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের রপ্তানিমুখী শিল্প উদ্যোক্তারা এখন এ সংক্রান্ত সব তথ্য নিজেদের অফিস ও বাসায় বসেই জানতে পারবেন।

কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামের কমিশনার মোহাম্মদ শফিউদ্দিন বলেন, রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে যাতে রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশ, রফতানি আয় বৃদ্ধি এবং এই খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, সেই লক্ষ্যে বন্ড কমিশনারেটের সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারি নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে কোন কাজে সমস্যা হলে প্রয়োজনে সরেজমিন পরিদর্শন অথবা সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছে ১ হাজার ২০৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এ সময়ে বেশী রাজস্ব আয় হয় ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এআইটি ও এটি ব্যতিত আদায় হয় ৮৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা আর ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের মার্চ মাসে এআইটি ও এটি ব্যতিত রাজস্ব আয় হয় ২৪ কোটি ৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া শুল্ক ফাঁকির কয়েকটি ঘটনা উদাঘাটনের মাধ্যমে জরিমানাসহ আদায় করা হয় বিপুল অংকের রাজস্ব।

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে প্রথম সরাসরি আমদানি জাহাজ ভিড়ল

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের জেটি

মায়ের্স্ক লাইনের সিঙ্গাপুর পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি মায়ের্স্ক চট্টগ্রাম’ শুক্রবার (২ মে) দুপুরে পতেঙ্গা কনটেইনারে টার্মিনাল ভিড়েছে। জাহাজটি মালয়েশিয়ার পোর্ট ক্লাং থেকে ১ হাজার ৭১২টি কনটেইনারে আমদানি পণ্য নিয়ে এসেছে। সরাসরি পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে আমদানি পণ্যের জাহাজ ভিড়ার এটাই প্রথম।

মূলত বিভিন্ন অনুমোদন, কাস্টমস স্থাপন ও প্রযুক্তিগত সংযোগ সম্পন্ন না হওয়ায় পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে সরাসরি আমদানি জাহাজ ভিড়তে দেরি হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

৩২ একর জায়গায় নির্মিত এই টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে। এতে তিনটি কনটেইনার জেটি ও একটি তেলবাহী জাহাজের জন্য ‘ডলফিন’ জেটি রয়েছে। ফলে একসঙ্গে তিনটি কনটেইনার জাহাজ ও একটি অয়েল ট্যাংকার ভিড়তে পারে।

প্রতিবছর ৪ লাখ ৫০ হাজার কনটেইনার (টিইইউ) সামাল দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে টার্মিনালটির। এতে বন্দরের অন্যান্য টার্মিনালের চাপ অনেকটা কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই মাইলফলকের আগে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে দুটি পরীক্ষামূলক জাহাজের পণ্য খালাস হয়েছিল। ১৬ ফেব্রুয়ারি ‘এমভি মায়ের্স্ক ভ্লাদিভস্টক’ থেকে ১৬টি কনটেইনার এবং ৯ মার্চ ‘এমভি মায়ের্স্ক জিয়ানমেন’ থেকে ২০৮টি কনটেইনার খালাস করা হয়। তবে দুটি জাহাজই শুরুতে অন্য টার্মিনালে নোঙর করেছিল এবং পরে আংশিক পণ্য খালাসের জন্য পিসিটিতে আনা হয়। এর বিপরীতে, ‘এমভি মায়ের্স্ক চট্টগ্রাম’ সরাসরি পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে নোঙর করেছে।

বিনিয়োগ সহযোগিতা নিয়ে বিডার সাথে চীনা রাষ্ট্রদূতের আলোচনা

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গতকাল বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিনিয়োগ সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর সাথে বিনিয়োগ সহযোগিতা নিয়ে রাজধানীতে রাষ্ট্রদূতের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

চীনা দূতাবাস জানিয়েছে, বৈঠকে উভয় পক্ষ দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে বিস্তারিত মতবিনিময় করেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এই নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘বন্দর ব্যবস্থাপনায় এমন অপারেটরদের সম্পৃক্ত করতে হবে যাতে আমাদের পোর্টগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। আমরা যে ইনভেস্টমেন্ট হাবের কথা বলছি তা বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের বন্দরগুলোকে বিশ্বমানের করতেই হবে।’

বৈঠকে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান বাংলাদেশের নৌবন্দরগুলোর বর্তমান হ্যান্ডেলিং ক্যাপাসিটি বছরে ১.৩৭ মিলিয়ন ইউনিট, যা সঠিক পরিকল্পনা ও কর্মপন্থার মাধ্যমে আগামী পাঁচ ৭.৮৬ মিলিয়ন ইউনিটে উন্নীত করা সম্ভব।

তিনি জানান বর্তমানে চালু থাকা চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বছরে ১.২৭ মিলিয়ন ইউনিট ও মোংলা বন্দর ০.১ মিলিয়ন ইউনিট হ্যান্ডেলিং করতে সক্ষম। এগুলোর সক্ষমতা যথাক্রমে ১.৫ মিলিয়ন ও ০.৬৩ মিলিয়নে উন্নীত করা সম্ভব।

তিনি জানান, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, লালদীয়া কনটেইনার টার্মিনাল, বে টার্মিনাল এবং মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হয়ে গেলে পাঁচ মিলিয়নের বেশি ইউনিট হ্যান্ডেলিং ক্যাপাসিটি তৈরি হবে বাংলাদেশের।

বিদেশি বিনিয়োগে লালদীয়া বন্দরের কাজ দ্রুত শেষ কারার ক্ষেত্রে সার্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।

প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ অগাস্টের মধ্যে শেষ করার তাগিদ দেন।

বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মোঃ মাহমুদুল হোসাইন খান, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষ (পিপিপিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস. এম. মনিরুজ্জামান।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে আল হিদায়াহ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের লিজ চুক্তি

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রায় ৫ হাজারের অধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের উন্নত ভবিষ্যৎ গড়া ও সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে স্বনামধন্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুল আল হিদায়াহ স্কুলের সাথে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি লিজ চুক্তি করেছে। বন্দরের একটি আধুনিক ভবন আগামী দশ বছরের জন্য মাসিক ভাড়ার ভিত্তিতে স্কুলটিকে দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে স্কুলটি তাদের সেশন শুরু করবে। স্কুলটি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানরাসহ আশেপাশের এলাকা বিশেষ করে আগ্রাবাদ, হালিশহর, ইপিজেড ও পতেঙ্গার মানুষ উপকৃত হবেন।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ডরুমে অনুষ্ঠিত চুক্তিতে বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান এবং আল হিদায়াহ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পরিচালক ক্যাপ্টেন মাহফুজুল ইসলাম স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান, সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর কাউছার রশিদ, সচিব মো. ওমর ফারুক, বিভাগীয় প্রধানগণ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের মধ্যে চালু হচ্ছে কনটেইনারবাহী জাহাজ চলাচল

রপ্তানি খরচ কমাতে দেশে প্রথমবারের মতো অভ্যন্তরীণ রুটে চালু হচ্ছে কনটেইনারবাহী জাহাজ চলাচল। স্বল্প সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের মধ্যে এই রুটটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। বৃহত্তম খুলনাঞ্চলের পণ্য আমদানি-রপ্তানি সুবিধা বাড়াতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মোংলা বন্দর বার্থ অ্যান্ড শিপ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, মোংলা বন্দরে কনটেইনার পণ্য আমদানি কম হয়। যেকারণ এখানে খালি কনটেইনার পাওয়া যায় না। আবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালি কনটেইনার আনতে গেলে অতিরিক্ত ভাড়া মাশুল দিতে হয়। ফলে এখানে কনটেইনারের ভাড়া বেশি পড়ে। একারণে চট্টগ্রাম-মোংলা রুটে কনটেইনারবাহী জাহাজ চালু হলে সময় ও রপ্তানি ব্যয় কমে আসবে। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ব্যাপক কর্মতৎপরতায় মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন হয়েছে। বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন বাড়ায় শ্রমিকদেরও কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। একই সঙ্গে আয়ও বেড়েছে মোংলা বন্দরের।

তবে নাব্য সংকট ও ব্যবসায়ী সুবিধাকে কাজে লাগাতে পারছে না বন্দরটি। এছাড়া বাড়তি ব্যয়সহ নানা কারণে এই বন্দরে কনটেইনার জাহাজ যাতায়াত করে মাসে একটির কম। অথচ এই অঞ্চলের মাছ, হিমায়িত পণ্য ও পাটসহ নানা ধরনের পণ্য রপ্তানির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।

এই সম্ভাবনাকে ভিন্ন আঙ্গিকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে সি গ্লোরি। প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম-মোংলা রুটে ছোট জাহাজে কনটেইনার পরিবহন করতে চায়। চট্টগ্রাম থেকে খালি কনটেইনার নিয়ে মোংলা বন্দর থেকে পণ্য ভর্তি করে আবার চট্টগ্রাম হয়ে বিদেশি পাঠানোই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে এই উদ্যোগে। সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে একবার জাহাজ পরিচালনা করে সুফলও মিলেছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়ীরা।

সি গ্লোরির ব্যবস্থাপক মাইনুল হোসাইন বলেন, পানগাঁওয়ের মতো চট্টগ্রাম থেকে মোংলা বন্দরে যদি খালি কনটেইনার নিয়ে যাওয়া হয়, তখন প্রসেসগুলো সহজ হবে এবং এতে ব্যবসায় উন্নতি করা সম্ভব। সম্প্রতি পরীক্ষামূলক জাহাজ চলাচলে সুফলও মিলেছে।

তিনি জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১০০টি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দরে পরীক্ষামূলক অভ্যন্তরীণ রুট পরিবহন চালানো হয়েছে। এটি সফল হওয়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়মিত আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দর রুটে কনটেইনার পরিবহন শুরু হবে। এসব কনটেইনারে মাছ, হিমায়িত পণ্যসহ পাট ভর্তি করে চট্টগ্রাম হয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হবে।

মোংলা থেকে নিয়মিত সরাসরি ট্রানশিপমেন্ট কনটেইনার যাতায়াতে ব্যয় কম। তবে তা না হওয়ায় ব্যয় এবং সময় দুটোই বাড়ে। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম হয়ে জাহাজে কনটেইনার আনা-নেওয়ায় যে ব্যয় এবং সময় লাগবে তা অনেকটা কম।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, ‘এই মুহূর্তে মোংলা বন্দর অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক গতিশীল এবং সম্ভাবনাময়। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে বন্দরের পরিধি। চলমান বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বন্দর ঘিরে এ অঞ্চলের অর্থনীতির আরও উন্নয়ন হবে।

চট্টগ্রাম-মোংলা রুটে কনটেইনার পরিবহন কার্যকর হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও জানান তিনি।