Home Blog Page 5

ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা দিতে চট্টগ্রাম বন্দর ও ইস্টার্ন ব্যাংকের চুক্তি

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে একটি কৌশলগত এমওইউ স্বাক্ষর করেছে ইস্টার্ণ ব্যাংক। এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে আধুনিক ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা দিবে ইস্টার্ণ ব্যাংক। সম্প্রতি এই এমওইউ স্বাক্ষর হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান এবং ইস্টার্ণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আলী রেজা ইফতেখার সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। এর ফলে সুরক্ষিত, আধুনিক এবং ঝামেলাহীন ডিজিটাল পেমেন্ট এবং কালেকশন ব্যবস্থার মাধ্যমে বন্দরের আর্থিক লেনদেন দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। ইবিএল এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে একটি সামগ্রিক ডিজিটাল ইকোসিস্টেম প্রবর্তন করবে যার ফলে আর্থিক লেনদেন আরও সহজতর হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, একটি অধিকতর স্মার্ট এবং দক্ষ বন্দর তৈরির লক্ষ্যে আমাদের ভিশন অর্জনে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রবর্তন একটি গুরুত্বেপূর্ণ পদক্ষেপ। ইস্টার্ন ব্যাংকের সঙ্গে সহযোগিতা আমাদেরকে বন্দরের পরিচালন দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক হবে এবং বিশ্বব্যাপী আধুনিক বন্দরের একটি বেঞ্চমার্কও প্রতিষ্ঠিত হবে।

ইবিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আলী রেজা ইফতেখার বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পার্টনারশীপের মাধ্যমে আমরা বন্দরের আর্থিক ইকোসিস্টেমে একটি বিপ্লব ঘটাতে চাই। আমরা চট্রগ্রাম বন্দরে সুরক্ষিত ও দক্ষ ডিজিটাল ব্যাংকিং সমাধান চালু করব।

একই বিএলের সব কনটেইনার চার দিনের মধ্যে ডিপোতে স্থানান্তরের নির্দেশনা

বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে গতি আনার পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সংকট নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। একই বিল অব লেডিংয়ের (বিএল) অন্তর্ভুক্ত সব কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানোর ফ্রি টাইম চার দিনের মধ্যে ডিপোতে স্থানান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা কার্যকর করতে গত ২১ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের সহায়ক প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) কাছে এক জরুরি পত্র পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা ৯২ শতাংশ কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবহন করা হয়। এসব কনটেইনারের মধ্যে ৫০ ক্যাটাগরির আমদানি পণ্য বন্দর থেকে নিয়ে যাওয়া হয় বেসরকারি ১৯টি ডিপোতে। জাহাজ থেকে খালাস হওয়ার চার দিন পর্যন্ত কনটেইনারগুলো বিনামাশুলে বন্দরের ইয়ার্ডে রাখার সুযোগ থাকে। এর পর থেকে প্রতিদিনের জন্য নির্দিষ্ট হারে ভাড়া গুনতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে একই বিএলের অন্তর্ভুক্ত কনটেইনার একসঙ্গে খালাস না হওয়ায় নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছিলেন আমদানিকারকরা। এ নিয়ে অনেকবার বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু কার্যকর কিছুই হয়নি।

এবার চট্টগ্রাম বন্দর চার দিনের ফ্রি টাইমের মধ্যে কনটেইনার স্থানান্তর নিয়ে কঠোর হয়েছে। বিকডাকে পাঠানো পত্রে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ স্মারক নম্বর-টিএম/অফডক/বিবিধ/২৩/১০৪৮৩ মূলে নতুন নিদের্শনা জারি করা হয়েছে। ওই নির্দেশনায় বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমের জটিলতা পরিহার করার স্বার্থে জাহাজ থেকে ডিপোগামী কনটেইনারগুলো নামার চার দিন ফ্রি টাইমের মধ্যে একই বিএলের অন্তর্ভুক্ত সব কনটেইনার একসঙ্গে ডিপোতে স্থানান্তর করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিকডার মহাসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমীন সিকদার গণমাধ্যমকে বলেন, বন্দর নির্দেশনা দিয়েছে ফ্রি টাইম চার দিনের মধ্যে একই বিলের কনটেইনার স্থানান্তর করার। আমাদেরও চেষ্টা থাকবে সময়মতো কনটেইনার খালাস নিয়ে ডিপোতে আনার। বিষয়টি কার্যকর হলে বন্দরের অপারেটররাও সচেতন হবেন। এটা সবার জন্য ভালো হবে।

১৩৮তম বন্দর দিবস উদযাপন

১৩৮তম বন্দর দিবস উপলক্ষে বন্দরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে নিয়ে কেক কাটেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, ওএসপি, এনডিসি, এনসিসি, পিএসসি

প্রতিযোগী বিশ্বে টিকতে হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই

প্রতিযোগী বিশ্বে টিকতে হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
১৩৮তম বন্দর দিবস উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের কারণে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিজনেস সামিটে নতুন বিনিয়োগ আসছে। এর জন্য বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাঁচ বছর পর ৫ মিলিয়ন টিইইউ কনটেইনারে হ্যান্ডলিং করতে হবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে টার্মিনাল ও বে টার্মিনাল নির্মাণে চুক্তি হয়েছে। এ মাস দেশ ও বন্দরের জন্য সৌভাগ্যের। ২০২৯ সালে মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দর অপারেশনে চলে যাবে।

বন্দর চেয়ারম্যান জানান, ই টিকিটিং চালু করায় সব সিস্টেমে চলে আসছে। মেরিটাইম সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করছি। এতে বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। পেমেন্ট ডিজিটাল হয়ে যাবে। ডিজিটালাইজেশন ও ডি কার্বোনাইজেশনের বিকল্প নেই। জুনের মধ্যে বন্দরের পুরো কার্যক্রম অটোমেশন হয়ে যাবে। গ্রিন মেরিটাইম করিডোর হবে চট্টগ্রাম বন্দর। মাতারবাড়ি, বে টার্মিনাল, লালদিয়া হবে গ্রিন পোর্ট। এ টার্মিনালগুলো চালু হলে নতুন শিপিং রুট খুলে যাবে।

কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্ম বড় সম্ভাবনা। তাদের কর্মসংস্থান করতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার হবে সিঙ্গাপুর। বিনিয়োগকারী প্রস্তুত। নিরাপত্তা, আস্থা, সুন্দর পরিবেশ চায় তারা। মেরিটাইম ও পোর্ট সিকিউরিটি নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চায়।

ফ্রি ট্রেড জোন নেই উল্লেখ করে বলেন, এটা করতে পারলে দারুণ সম্ভাবনা তৈরি হবে। বছরে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার আয় হবে। আমরা এক নম্বর তুলা ব্যবহারকারী দেশ। ফ্রি ট্রেড জোন হলে তুলা খাতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, শিল্পাঞ্চল থাকায় এ জোন চট্টগ্রামে হওয়া যৌক্তিক।

বন্দরে রেফার কনটেইনার ইয়ার্ড ও কোল্ড স্টোরেজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান বন্দর চেয়ারম্যান।

সংবাদ সম্মেলনে বন্দরের পর্ষদ সদস্যবৃন্দ, বিভাগীয় প্রধানগণ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান কমিটির মেয়াদ ছয় মাস বাড়লো

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএএ) বর্তমান কমিটির মেয়াদ বাড়লো আরও ছয় মাস। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন-২ এর উপসচিব তাহসিনা বেগম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বর্ধিত এই মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিন আগে পরবর্তী পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন সম্পন্ন ও দায়িত্ব হস্তান্তর করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে।

বাণিজ্য সংগঠন আইন মোতাবেক এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে নির্বাচনের ৯০ দিন আগে ৩ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন বোর্ড এবং ৩ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচনী আপিল বোর্ড গঠনের জন্য পরিচালনা পর্ষদকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন বোর্ড ৮০ দিন আগে তফসিল প্রকাশ করবে।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস্‌ অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান তারেক কামাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠনের মহাপরিচালক বরাবরে দেওয়া একটি চিঠিতে শিপিং এজেন্টস্‌ অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ ২৯ এপ্রিল থেকে ৬ মাস বৃদ্ধির অনুমোদন প্রদানের অনুরোধ জানান।

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে জাপানি দুই প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে জাপানের দুই প্রতিষ্ঠান পেন্টাওশান কনস্টাকশন ও টিওএ কর্পোরেশন (জেভি) এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান এবং জাপানের পেন্টা ওশান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার টোমোকাযু হেসগাওয়া চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। জাইকা ও চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

প্রধান অতিথি বলেন, এটি কেবল একটি অবকাঠামো প্রকল্প নয়, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি কৌশলগত বিনিয়োগ। মাতারবাড়ি বন্দর চালু হলে বড় জাহাজের ধারণক্ষমতা বাড়বে, বিদ্যমান বন্দরগুলোতে যানজট কমবে, সরবরাহ শৃঙ্খলা আরও গতিশীল হবে এবং কক্সবাজার-মহেশখালীর নতুন শিল্পাঞ্চলে সরাসরি প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে। এতে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ও ট্রান্সশিপমেন্ট হাবে পরিণত হবে।

প্রকল্পের প্যাকেজ-১ আওতায় তিনশ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ, ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার জেটি নির্মাণ, টার্মিনাল, ভবন, পেভমেন্ট, রিটেইনিং ওয়াল, সি ওয়াল, সীমানা প্রাচীর, ভূমি উন্নয়ন, ড্রেজিং, ল্যান্ড রিক্লেমেশন, জরুরি জেনারেটর, সৌর বিদ্যুৎ, টার্মিনাল ইউটিলিটি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক পূর্ত ও বৈদ্যুতিক কাজ নির্মাণ-সংগ্রহ-স্থাপন, টার্মিনাল এরিয়াতে কনটেইনার রাখার জন্য মোট পাঁচ হাজার ১শ’টি গ্রাউন্ড স্লট স্থাপন করা হবে।

অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ, জাপান দূতাবাসের প্রতিনিধি, জাইকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ স্টেকহোল্ডার ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চুক্তি কাল

দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মূল কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। বন্দর নির্মাণের প্যাকেজ-১-এর অবকাঠামো নির্মাণ করবে জাপানি প্রতিষ্ঠান। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের চুক্তি হবে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে এই গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে পণ্য পরিবহনে সময় এবং ব্যয় সাশ্রয় হবে।

গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকার প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০২৯ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জাপানের দুই খ্যাতনামা নির্মাণ ও প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান পেন্টা-ওশান লিমিটেড এবং টিওএ করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। এ চুক্তির মাধ্যমে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পৃক্ত হবে জাপান।

চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই নির্মাণকাজ শুরু হবে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই এবং জমি অধিগ্রহণ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। আবার জাপানের দুটি প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে টাগবোট ও পাইলট বোটের মতো প্রয়োজনীয় নৌযান সংগ্রহ করা হবে।

একনেকে বে টার্মিনাল প্রকল্প অনুমোদন

বে টার্মিনাল প্রকল্প এলাকা

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ‘বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি)’ অনুমোদন দিয়েছে।

রোববার পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। একনেকের চেয়ারপারসন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় মোট ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ১৬ হাজার ৭১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪ হাজার ৪২৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে।

অনুমোদিত ১৬টি প্রকল্পের মধ্যে ১৩টি নতুন এবং ৩টি সংশোধিত প্রকল্প।

সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলার পর অবশেষে বে টার্মিনাল প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হলো এবং শিগগিরই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

তিনি বলেন, আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরের বর্ধিত বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড এবং ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো অপরিহার্য।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা জানান, পিপিপি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পৃথক সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে বে টার্মিনালের টার্মিনাল-১ নির্মাণ করবে সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিষ্ঠান এবং টার্মিনাল-২ নির্মাণ করবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড।

তিনি বলেন, বে টার্মিনালের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ঋণ সহায়তা দেবে ৯ হাজার ৩৩৩ কোটি এবং সরকারি তহবিল থেকে খরচ হবে ৪ হাজার ১৯২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

প্রকল্পের আওতায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ জলবায়ু সহনশীল ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ করা হবে, যা বন্দরের জলোচ্ছ্বাস, স্রোত ও প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে সুরক্ষা দেবে। পাশাপাশি বন্দর অববাহিকা, প্রবেশপথ ও অ্যাক্সেস চ্যানেলের খননকাজও করা হবে।

আধুনিক এই বে টার্মিনাল আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অপারেটর দ্বারা পরিচালিত হবে এবং প্যানাম্যাক্স আকারের বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পশ্চিমে অবস্থিত বে টার্মিনালটি ঢাকার সঙ্গে সড়ক ও রেল সংযোগে নিকটবর্তী এবং এটি দেশের মোট কনটেইনার পরিবহনের ৩৬ শতাংশ পরিচালনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভিয়েতনাম থেকে ১২ হাজার ৫০০ টন চালবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে

চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সম্পাদিত জি টু জি চুক্তির আওতায় ভিয়েতনাম থেকে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আতপ চালবাহী একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার এ কথা জানানো হয়।

এতে আরও জানানো হয়েছে, জি টু জি চুক্তির আওতায় ভিয়েতনাম থেকে মোট ১ লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। ইতোমধ্যে চুক্তি মোতাবেক ৭২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন চাল দেশে পৌঁছেছে।

জাহাজে রক্ষিত চালের নমুনা পরীক্ষা শেষ হয়েছে এবং চাল খালাসের কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

গত বছর বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে গড় শুল্কহার ছিল ১৫ দশমিক ১ শতাংশ

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি করে যে শুল্ক আদায় করে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যে তার চেয়ে ৭ গুণ বেশি শুল্ক আদায় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই হিসাব গত বছরের। শুধু তা–ই নয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানিতে গড় শুল্ক ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে গড় শুল্কহার ১৫ দশমিক ১ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজনে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে বাংলাদেশে প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে ১৭ এপ্রিল আয়োজিত সংলাপে মূল প্রবন্ধে এ তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে আয়োজিত এই সংলাপ সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ ২৯১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। তার মধ্যে ৭৫ কোটি ডলারের পণ্য শুল্কমুক্ত–সুবিধায় এসেছে। বাকি ২১৬ কোটি ডলারের বিপরীতে ১৮ কোটি ডলার শুল্ক আদায় হয়েছে। তার বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যে ১২৭ কোটি ডলারের শুল্ক আদায় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর দেশটিতে ৮৪৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে ৪০ কোটি ডলারের পণ্য শুল্কমুক্ত–সুবিধা পেয়েছে। বাকি ৮০৫ কোটি ডলারের পণ্যে শুল্ক দিতে হয়েছে।

২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। তাতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক দাঁড়ায় ৩৭ শতাংশ। তবে ৯ এপ্রিল তিন মাসের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত করেন। যদিও ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক সব দেশের পণ্যের ওপর কার্যকর করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

পাল্টা শুল্ক আরোপের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠি দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে এক চিঠি পাঠিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বাংলাদেশের শুল্ক তালিকায় বর্তমানে ১৯০টি পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক নেই। এর বাইরে আরও ১০০টি পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আমদানি হওয়া তিন শ্রেণির পণ্য (স্ক্র্যাপ, এলপিজির উপাদান বিউটেনস ও প্রোপেন) থেকে গত বছর ৬ কোটি ১৬ লাখ ডলার শুল্ক আদায় হয়েছে। এখন এসব পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্কমুক্ত–সুবিধা দিতে হলে অন্য দেশের জন্যও সেটি করতে হবে। তাতে বাংলাদেশের মোট ১৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ক্ষতি হবে, যা দেশীয় মুদ্রায় ২ হাজার ৫০ কোটি টাকার সমান।

এ ধরনের রাজস্ব ক্ষতি এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ করার পরামর্শ দিয়েছে মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোস্টারিকা, ডমিনিকান রিপাবলিক, বাহরাইন, জর্ডানসহ বিভিন্ন দেশের এফটিএ করেছে। এই দেশগুলো যে উন্নত দেশ, তা–ও নয়। ফলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফটিএ করতে এগোতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফটিএ করলে বাংলাদেশ লাভবান হবে, যেটি ভারত ও চীনের সঙ্গে করলে হবে না।

পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে চীন থেকে তৈরি পোশাকের ব্যবসা বাংলাদেশে আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। গত এক দশকে এই বাজারে বাংলাদেশের কটন (তুলা) পোশাকের রপ্তানি ৭৫ থেকে কমে ৬৩ শতাংশে নেমেছে। তার বিপরীতে চীনের তুলার পোশাকের রপ্তানি ৪৭ থেকে কমে ১৯ শতাংশে এবং ভিয়েতনামের ৫৮ থেকে কমে ৩৬ শতাংশে নামিয়ে এসেছে। তার বিপরীতে দেশ দুটি থেকে কৃত্রিম তন্তুর পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কৃত্রিম তন্তুর পোশাক রপ্তানিতে বেশ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।