Home Blog Page 52

প্রধানমন্ত্রী জাপান সফরে যাচ্ছেন ২৫ এপ্রিল

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

চারদিনের এক আনুষ্ঠানিক সফরে ২৫ এপ্রিল জাপান যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে এ সফরে যাচ্ছেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো জাপান সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। গত বছরের নভেম্বরে তার এ সফরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে সে সময় দেশটিতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তার এ সফর স্থগিত করা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আনুষ্ঠানিক এ সফর চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাবেন জাপানের সম্রাট নারুহিতো। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে এক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর জাপানি প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত এক নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি।

জাপান সফর চলাকালে প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগবিষয়ক এক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া সেখানে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও যোগ দেবেন তিনি। জাপানে অবস্থানকালে সেখানকার কয়েকজন নাগরিকের হাতে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ সম্মাননা তুলে দেবেন তিনি।

সরকারপ্রধানের জাপান সফরে দেশটির সঙ্গে বেশ কয়েকটি সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে বলেও জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী দেশ জাপান। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পরিবহন, টেলিযোগাযোগ, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, পরিবেশ, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অন্যান্য খাতে বড় অংকের বিনিয়োগ রয়েছে দেশটির। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উন্নয়ন সহযোগিতা (ওডিএ) হিসেবে বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ বিতরণসহ নানাভাবে বাংলাদেশকে উন্নয়ন সহযোগিতা করে আসছে টোকিও।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জাইকার বৈশ্বিক ঋণ প্রতিশ্রুতির গন্তব্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। জাইকার মোট বৈশ্বিক ঋণ প্রতিশ্রুতির ২৬ দশমিক ৮ শতাংশেরই গন্তব্য হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরেও (২০২১-২২) বাংলাদেশকে মোট ১৭৩ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ঋণ ও অনুদান হিসেবে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাপান।

এখন পর্যন্ত দেশে সবচেয়ে বেশি দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এসেছে জাপান থেকে। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হয় ১৯৭২ সালে। ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত জাপানের কাছ থেকে ঋণ, অনুদানসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সহায়তা হিসেবে মোট ২ হাজার ৮৭৮ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে শুধু ঋণ হিসেবে প্রতিশ্রুত অর্থ ২ হাজার ৫১৫ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। এর মধ্যে গত অর্থবছর পর্যন্ত ১ হাজার ৪৯১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ ছাড় হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন জাপান সফর দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো জোরদার করবে বলে প্রত্যাশা করছেন কূটনীতিকরা।

বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ করবে জাপান, হবে বন্দর উন্নয়নও

বাংলাদেশে একটি শিল্পাঞ্চল তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছে জাপান। প্রস্তাবিত এ শিল্পাঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, নেপাল ও ভুটানে বাজারজাত করতে সমুদ্রবন্দর উন্নয়নসহ যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায় দেশটি। কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

গত মাসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার ভারত সফরের পর এ প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এই শিল্পাঞ্চল ৩০ কোটি মানুষের আবাসস্থল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বঙ্গোপসাগর এলাকায় উন্নয়ন জোরদার করবে বলে জাপানের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন।

কিশিদার ভারত সফরের পর জাপান সরকার বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য ১২৭ কোটি ডলার অনুমোদন করেছে। মূলত তিনটি অবকাঠামো প্রকল্পে এ বিনিয়োগ করা হবে, যার মধ্যে আছে মাতারবাড়ী অঞ্চলে নতুন একটি বাণিজ্যিক বন্দর, যার সঙ্গে ত্রিপুরাসহ ভারতের স্থলবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চল সংযুক্ত হবে। তবে এ বন্দরের আওতা শুধু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বৃহত্তর আন্তর্জাতিক বাজার ধরাও হবে তার লক্ষ্য।

ভারতে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোশি সুজুকি ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশ, ভারত ও জাপানের মধ্যকার এক বৈঠকে এ–সংক্রান্ত যে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়, সে সম্পর্কে তিনি মঙ্গলবারে কথা বলেন। তাঁর মতে, এটা ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই লাভজনক হতে পারে।

হিরোশি সুজুকি আরও বলেন, গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম সম্ভবত ২০২৭ সালের মধ্যে শুরু হবে। একটি শিল্পাঞ্চল নির্মাণের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যার মধ্য দিয়ে ঢাকার সঙ্গে ভারতের স্থলবেষ্টিত অঞ্চলের সংযোগ স্থাপিত হবে।

রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলবিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কিশান রেড্ডি ওই বৈঠকে জাপানের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এর মধ্য দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে এবং জাপানসহ অন্যান্য দেশের বিনিয়োগ আসার পথ সুগম হবে।

নির্মীতব্য মাতারবাড়ী বন্দর বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর, যেখানে বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। ত্রিপুরায় দুই দিনের এ বৈঠক আয়োজন করেছিল গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এশিয়ান কনফ্লুয়েন্স। প্রতিষ্ঠানের প্রধান সব্যসাচী দত্ত বলেন, মাতারবাড়ী বন্দর থেকে ত্রিপুরার দূরত্ব মাত্র ১০০ কিলোমিটার। ফলে মাতারবাড়ী বন্দর ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রপ্তানিকারকদের প্রবেশদ্বার হতে পারে।

চীন তার আলোচিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে, জাপান ও ভারত তার বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফ্রিকা অঞ্চলে অবকাঠামো নির্মাণ করছে।

বৈঠকে সুজুকি আরও বলেন, বাংলাদেশে ইতিমধ্যে তিন শতাধিক জাপানি কোম্পানি কাজ করছে। দুই দেশের মধ্যে শিগগিরই অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি হতে পারে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশে শিল্প উৎপাদন বাড়বে এবং আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে।

এক সরকারি বিবৃতির বরাত দিয়ে রয়টার্স আরও জানিয়েছে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত জাপান সফর করবেন।

দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে জাপানের সন্তোষ

বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বিনিয়োগ সম্প্রসারণের আগ্রহ দেখিয়েছে জাপান। অন্যদিকে জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার পঞ্চম বাংলাদেশ-জাপান সরকারি-বেসরকারি যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অনলাইন প্লাটফর্মে এ যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপ বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এবং জাপান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের (এমইটিআই) আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপমন্ত্রী হিরাই হিরোহাইড।

অর্থনৈতিক সংলাপে উভয়েই বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা সম্প্রসারণের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) মডেলের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রমের অগ্রগতিতে জাপান সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। জাপানি পক্ষ এ সময় বাংলাদেশে বিদ্যমান বিভিন্ন খাতে জাপানি বিনিয়োগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। একই সঙ্গে জাপানি বিনিয়োগ সম্প্রসারণে বাংলাদেশের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও জানান তারা।

সংলাপে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া জাপানের বিনিয়োগকারীরা আগে যেসব ক্ষেত্রে কাজ করেছে, সেসব এলাকার অগ্রগতি তুলে ধরা হয়।

বৈঠকে আলোচনা হয়, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। এ সময় দুদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে এ ধরনের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি জাপান-বাংলাদেশ পাবলিক-প্রাইভেট অর্থনৈতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে সংলাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিবরা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থনীতি সম্পর্ক বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক আলোচনায় অংশ নেন। বেসরকারি খাত থেকে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ ও জেবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি, জাপানের পররাষ্ট্র ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা এবং জাইকা বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রধানরা এ সংলাপে অংশ নেন।

বিদেশি মুদ্রায় হিসাব খুলতে পারবে শিপিং ও বিমান পরিবহন সংস্থা

বাংলাদেশি মালিকানাধীন শিপিং কোম্পানি ও বিমান পরিবহন সংস্থার নামে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খোলার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব শিপিং ও বিমান সংস্থাগুলো বিদেশে সেবা সম্প্রসারণ করছে, যার আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রায়। এসব হিসাব থেকে প্রয়োজনীয় খরচ মেটানো যাবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি শিপিং কোম্পানি ও এয়ারলাইনসের বৈদেশিক কার্যক্রম প্রসার লাভ করছে। এ বিবেচনায় আয় বাবদ বিদেশ থেকে যে অর্থ আসবে, তার ৭৫ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে জমা করা যাবে। অবশিষ্ট অর্থ টাকায় নগদায়ন করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবের স্থিতি দিয়ে জাহাজ ও বিমানের পরিচালন ব্যয় নির্বাহ করা যাবে।

এতে আরও বলা হয়, যেসব বাংলাদেশি শিপিং কোম্পানি ও এয়ারলাইনস বিদেশি সংস্থার কাছে জাহাজ, কনটেইনার বা এয়ারক্রাফট ভাড়া দিয়ে থাকে, সেসব কোম্পানিও বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খুলতে পারবে। এ ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার ৫০ শতাংশ ওই হিসাবে জমা রাখা যাবে, যা জাহাজ, কনটেইনার বা এয়ারক্রাফটের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহে ব্যবহার করা যাবে।

শিপইয়ার্ডের সক্ষমতা বাড়াতে বড় বিনিয়োগ বিএইর

ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলে নিজেদের একটি শিপ রিপেয়ারিং ইয়ার্ডের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বড় ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিএই সিস্টেমস। এই উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে ড্রাইডকিংয়ের কাজে ব্যবহারের জন্য পার্লসন শিপলিফট সংযোজন। এটি হবে আমেরিকায় এই ধরনের সবচেয়ে বড় লিফট।

বিএইর এই উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি ডলার। ২০২৫ সাল নাগাদ প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর ইয়ার্ডটির ড্রাইডকিং সক্ষমতা ৩০০ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন পার্লসন শিপলিফটের সক্ষমতা হবে ২৫ হাজার টন এবং এর দৈর্ঘ্য হবে ৪৯২ ফুট, যা সহজেই একটি আর্লে বার্কে ক্লাস ডেস্ট্রয়ার অথবা যেকোনো লিটোরাল কম্ব্যাট শিপ (এলসিএস) লিফট করতে পারবে।

বিএইর জ্যাকসনভিল ইয়ার্ডটির অবস্থান মার্কিন নৌবাহিনীর মেপোর্ট নেভাল স্টেশনের কাছে। এই ঘাঁটিটি ফ্রিডম-ক্লাস এলসিএসগুলোর প্রাইমারি হোম পোর্ট হিসেবে কাজ করে।

জাপানি শিপিং কোম্পানির কাছ থেকে ১১টি জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ পেয়েছে সিএসএসসি

সম্প্রতি ফ্রান্সের সিএমএ সিজিএমের কাছ থেকে রেকর্ড সংখ্যক কনটেইনার জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ পেয়েছে চায়না স্টেট শিপবিল্ডিং করপোরেশন (সিএসএসসি)। এবার সেই রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি বড় কার্যাদেশ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এবার গ্রাহক জাপানের কুমিআই সেনপাকু কোম্পানি লিমিটেড।

মার্চ মাসে বিশ্বে মোট জাহাজনির্মাণ কার্যাদেশের প্রায় ৪০ শতাংশ পেয়েছে চীনের শিপইয়ার্ডগুলো। এর মাধ্যমে গত মাসে আবার জাহাজনির্মাণ কার্যাদেশ প্রাপ্তিতে শীর্ষস্থানে ফিরে এসেছে দেশটি।

গত ৭ এপ্রিল কুমিআই ও সিএসএসসির মধ্যে ১০টি মাল্টি-পরপাস জাহাজ নির্মাণের বিষয়ে চুক্তিটি হয়। এগুলোর ধারণক্ষমতা হবে ৮৪ হাজার ৫০০ ডিডব্লিউটি করে। এছাড়া ১৭ হাজার টন ধারণক্ষমতার একটি অ্যাসফল্ট ক্যারিয়ারেরও অর্ডার দিয়েছে কুমিআই।

সিএসএসসির সঙ্গে সিএমএ সিজিএমের চুক্তিটি ছিল ১২টি কনটেইনার জাহাজ নির্মাণের, যেটি একক চুক্তিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জাহাজনির্মাণ কার্যাদেশের রেকর্ড। সে হিসাবে কুমিআইয়ের সঙ্গে সিএসএসসির চুক্তিটি কোম্পানিটির পাওয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্যাদেশ।

রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের ঋণ সীমা কমল

রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) ঋণ সীমা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রোববার (৯ এ‌প্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে এ সম্পর্কিত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সদস্যরা দুই কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। আগে এ ঋণের সীমা ছিল ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ইয়ার্ন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিওয়াইইএ) সদস্যরা ঋণ নিতে পারবেন সর্বোচ্চ এক কোটি ডলার। আগে তাদের ঋণের সীমা ছিল ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

এদিকে ইডিএফের বিকল্প হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১০ হাজার কোটি টাকার নিজস্ব মুদ্রায় রপ্তানি সহায়ক তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত রিজার্ভের ডলার দিয়ে গঠিত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) ওপর চাপ কমাতে গঠন করা হয় কম সুদের এ রপ্তানি সহায়ক তহবিল। এর ফলে রিজার্ভ থেকে গঠিত তহবিল আবার রিজার্ভে ফিরে যাবে, বাড়বে ব্যবহার যোগ্য রিজার্ভ।

১৯৮৯ সালে ছোট আকারে গঠিত ইডিএফের আকার ধীরে ধীরে বাড়িয়ে সাত বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। তবে বর্তমানে ঋণের সীমা সাড়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়াও এ তহবিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইডিএফ নিয়ে সময় মতো পরিশোধ না করলে জরিমানা করছে। সর্বশেষ ৫০ লাখ ডলার কমিয়ে ছোট্ট করে আনা হলো এ তহবিল।

প্রথম প্রান্তিকে কোরীয় জাহাজনির্মাতাদের ব্যবসা চাঙ্গা

২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকটা বেশ ভালো কাটল দক্ষিণ কোরিয়ার জাহাজনির্মাতাদের জন্য। এ সময়ে নতুন জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ বৈশ্বিকভাবে খানিকটা গতি হারালেও কোরিয়ার অবস্থা ছিল ভিন্ন। আলোচ্য সময়ে দেশটির শীর্ষ তিন জাহাজ নির্মাণকারী কোম্পানি তাদের পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশ কার্যাদেশ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।

মার্চ মাসে জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ প্রাপ্তির দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে কোরিয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। তবে সার্বিকভাবে প্রথম প্রান্তিকের হিসাবে তারা কোরিয়ার চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি মার্জিনের জাহাজ নির্মাণের ওপর জোর দেওয়া সহায়ক হয়েছে কোরিয়ার জন্য।

দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ তিনটি জাহাজনির্মাতা কোম্পানি হলো হুন্দাইয়ের জাহাজনির্মাণ কার্যক্রমের মূল প্রতিষ্ঠান কোরিয়া শিপবিল্ডিং অ্যান্ড অফশোর ইঞ্জিনিয়ারিং (কেএসওই), স্যামসাং হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ ও দাইয়ু শিপবিল্ডিং অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং (ডিএসএমই)। বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানি তিনটি সম্মিলিতভাবে মোট ১ হাজার ৫০ কোটি ডলারের কার্যাদেশ পেয়েছে, যেখানে পুরো বছরের জন্য তাদের লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার।

প্রথম প্রান্তিকে নতুন জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ পাওয়ার দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে কেএসওই। তাদের কার্যাদেশের পরিমাণ ৭৩০ কোটি ডলার, যা তাদের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৪৬ শতাংশের বেশি। স্যামসাংয়ের ঝুলিতে গেছে ২৫০ কোটি ডলারের কার্যাদেশ, যা তাদের বার্ষিক লক্ষমাত্রার ২৫ শতাংশের বেশি। সেই তুলনায় দাইয়ু কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। তাদের কার্যাদেশের পরিমাণ ৮০ কোটি ডলার। কোম্পানিটির পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তা ১১ দশমিক ৫ শতাংশ।

সিএমএ সিজিএমের কাছ থেকে সবচেয়ে বড় কার্যাদেশ পেল চীন

ফরাসি শিপিং জায়ান্ট সিএমএ সিজিএম নতুন ১৬টি কনটেইনার জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ দিয়েছে চীনকে। দেশটির জাহাজনির্মাতা চায়না স্টেট শিপবিল্ডিং করপোরেশন (সিএসএসসি) গ্রুপের বিভিন্ন ইয়ার্ডে জাহাজগুলো নির্মাণ করা হবে। এটি একক চুক্তির অধীনে চীনের পাওয়া এখন পর্যন্ত সর্ববৃহৎ জাহাজনির্মাণ কার্যাদেশ।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ও ইউরোপিয়ান কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন সম্প্রতি চীন সফর করেছেন। এ সময় ফ্রান্স ও চীনের মধ্যে বি-টু-বি বেশ কয়েকটি চুক্তি সম্পন্ন হয়। সিএমএ সিজিএমের নতুন কার্যাদেশ সেই চুক্তিরই অংশ।

ফরাসি শিপিং কোম্পানিটির নতুন এই ১৬টি জাহাজের মধ্যে ১২টির ধারণক্ষমতা হবে ১৫ হাজার টিইইউ। এগুলো মিথানল জ্বালানিতে চালানো যাবে। আর বাকি চারটি জাহাজের ধারণক্ষমতা হবে ২৩ হাজার টিইইউ, যেগুলোর ইঞ্জিন হবে এলএনজি ডুয়েল-ফুয়েল বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। ১৬টি জাহাজ কিনতে সিএমএ সিজিএমের মোট ব্যয় হবে প্রায় ৩১০ কোটি ডলার (২ হাজার ১০০ কোটি ইউয়ান)।

ইউরোপের এলএনজি আমদানির প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র

২০২২ সালে ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানি ১৪০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬০০ কোটি ঘনফুট। ইইউ-ইউএস এনার্জি কাউন্সিল বৈঠককে সামনে রেখে এ তথ্য জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তা সহায়তা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং তা আরও জোরদারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উন্নয়ন বিষয়ে ব্লিংকেন বলেন, জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবিলায় আমরা ইইউর সঙ্গে আমাদের প্রতিশ্রুতি বিনিময় করেছি। এর মধ্য দিয়ে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে রূপান্তর এবং নিরাপদ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির সরবরাহ চেইনের গতিশীলতা নিশ্চিত হবে।

ব্লিংকেনের তথ্যমতে, গত বছর ইউরোপের মোট এলএনজি আমদানির ৪০ শতাংশ গিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে ইউরোপ রাশিয়ার গ্যাসের ওপর ৪০ শতাংশ নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে তা কমে ১৫ শতাংশে নেমেছে। ব্লকটি যেন এই নির্ভরতা আরও কমিয়ে আনতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।