Home Blog Page 8

অবৈধ মজুদ ঠেকাতে বর্হিনোঙরে জাহাজে অভিযান

লাইটার জাহাজে আমদানি পণ্যের অবৈধ মজুদ ঠেকাতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। বুধবার বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা করেন।

অভিযানের অংশ হিসেবে যৌথ দল অন্তত ১৫টি লাইটার জাহাজ পরিদর্শন করে। তবে এই সময় একটি লাইটার জাহাজ পণ্যভর্তি পেলেও সেটি (বুধবার) লোড করা হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। তবে অভিযানে নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে দুটি লাইটার জাহাজকে ২০ হাজার করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আমদানিকৃত পণ্য নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে সংরক্ষণ করতে লাইটার জাহাজকে ‘ভাসমান গুদাম’হিসেবে ব্যবহার করছেন। এমন অভিযোগ ওঠার পর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি সার্কুলার জারি করে বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য বোঝাইয়ের পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যাতে বহির্নোঙর ত্যাগ করে। এটি নিশ্চিত করতেই বুধবার বন্দরের বহির্নোঙরে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযানে অংশ নেওয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আফরিন কচি বলেন, বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে ব্যবসায়ীরা লাইটার জাহাজে পণ্য মজুদ করে রেখেছেন কি না সেটি তদারকি করতে যৌথ উদ্যোগে অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে লাইটার জাহাজে পণ্য মজুদ করে রাখার তেমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। একটি জাহাজ আমরা পণ্যভর্তি অবস্থায় পেয়েছি, তারা জানিয়েছে আজ জাহাজটিতে পণ্য বোঝাই করা হয়।

তিনি আরও বলেন, অভিযানে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে দুটি লাইটার জাহাজকে আমরা ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। এর মধ্যে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পণ্য লোড করার কারণে এমটি ইরাবতিকে ২০ হাজার টাকা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপক লাইসেন্স নিয়ে কার্যক্রম চালানোর দায়ে এমটি এভারগ্রিনকেও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসণে চট্টগ্রাম বন্দরের গৃহীত কার্যক্রম

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে গত ১৯ জানুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক), পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্তের আলোকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন কর্ণফুলী নদী সংলগ্ন বিভিন্ন খালের অংশে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি ও বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিশেষ করে রাজাখালী খাল, চাক্তাই খালসহ চট্টগ্রাম শহর থেকে কর্ণফুলী নদীর সাথে যুক্ত হওয়া বিভিন্ন খাল ও নালার মুখে ভেসে আসা প্লাস্টিক ও অপচনশীল বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগ ও অর্থায়নে খালের পানি প্রবাহ ঠিক রাখার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।


চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দীঘদিন নিজস্ব উদ্যোগ এবং অর্থায়নে কর্ণফুলী নদীর মূল চ্যানেলে ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি খালের বর্জ্য অপসারণ করে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এজন্য বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মাধ্যমে একটি প্রকল্প অত্যন্ত সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের আওতায় ৫৫ লক্ষ ঘনমিটার ড্রেজিং কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুনে প্রকল্পটি শেষ হবে। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার পরেও নগরবাসীর জীবনযাত্রা স্বস্তিময় করতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এ ধরণের কার্যক্রম নিয়মিত চালু রাখবে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জলাবদ্ধতার মূল সমস্যা খালের অভ্যন্তরে ফেলা ময়লা আবর্জনার কারণে সৃষ্টি হয়েছে, যা সমাধান করা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার বহির্ভূত। নগরবাসীর ফেলা বিভিন্ন প্রকারের বর্জ্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খালগুলোকে নিয়মিত পরিষ্কার না রাখলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের গৃহীত এ সকল কার্যক্রমের সুফল নগরবাসী পাবেনা।


বন্দর কর্তৃপক্ষ বর্তমানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ২টি কাটার সাকশান ড্রেজারের পাশাপাশি নিজস্ব ফ্লিটের একটি এম্পিবিয়াস ড্রেজার এবং বর্জ্য অপসারণকারী জাহাজ বে ক্লিনার-১ প্রকল্প এলাকায় নিয়োজিত রেখে নগরবাসীর দূর্ভোগ লাঘবের আন্তরিক চেষ্টা করছে। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই খালের মুখে পানি প্রবাহ বৃদ্ধির পাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত উদ্যোগে বর্জ্য নদী-নালা-খাল-ড্রেন ইত্যাদিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থেকে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় চট্টগ্রাম বন্দরে নিরাপদ মেরিটাইম তথ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও IORIS প্রবর্তন

সমুদ্র বিষয়ক শিল্পসমূহ বৈশ্বিক অর্থনীতির অন্যতম প্রভাবক হয়ে ওঠার পাশাপাশি এই খাতে নিরাপত্তা ঝুঁকির মাত্রা ও ধরন ক্রমশঃ বাড়ছে। জলদস্যুতা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ের সাইবার হামলার ঝুঁকি বিবেচনায় মেরিটাইম খাতকে মাথা ঘামাতে হচ্ছে বহুমুখী নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে। সময়ের সাথে সাগর-মহাসাগরে নিরাপত্তা ঝুঁকির ধরন ও বিস্তৃতি বেড়েছে। বিশ্বায়নের যুগে সমুদ্র বাণিজ্যের প্রসারের সুবাদে জাহাজ চলাচলের ব্যস্ততা বেড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আরেকটি বড় নিরাপত্তা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে সাইবার অপরাধ। মেরিটাইম খাতের নিরাপত্তা নিয়ে বহুমাত্রিক যে সংকট, তা আজ কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা সারা বিশ্বের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জের নাম। সাম্প্রতিক বছরগুলোগুলোতে সমুদ্র নিরাপত্তা বাড়াতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনি বিধিবিধান চালু, নজরদারি বৃদ্ধিসহ অবশ্যপালনীয় বিভিন্ন সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা গেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের মাধ্যমে সমুদ্র শিল্পকে পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য প্রয়োজন সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা ও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

বিশ্বায়নের এই যুগে তা হতে হবে সমন্বিতভাবে একে অপরের সাথে তথ্য ভাগাভাগির মাধ্যমে। এরই ধারাবাহিকতায় মেরিটাইম সিঙ্গেল উইন্ডো ধারণাকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও যুগোপযোগী ও বহুমুখী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের উদ্যোগ নিয়েছে। বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে। সর্বশেষ গত ০৩-১৩ মার্চ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ইন্দো-প্যাসিফিক ইনফরমেশন শেয়ারিং টুল ‘IORIS’ ব্যবহার বিষয়ক দুইটি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। দেশের বন্দর খাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার সরকারের প্রয়াসকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, ওএসপি, এনডিসি, এনসিসি, পিএসসি মহোদয়ের নির্দেশনায় এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, IORIS ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি মেরিটাইম ইনফরমেশন শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম। প্রশিক্ষণের ২ ধাপে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মোট ২৮ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নিয়েছে। এই প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ছিল মেরিটাইম ইনফরমেশন টুলের মাধ্যমে মেরিটাইম খাতের স্টেকহোল্ডাররা কিভাবে সহজেই তাদের কর্মকান্ডের তথ্য আদান-প্রদান, তথ্য বিশ্লেষণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করা মেরিটাইম স্টেকহোল্ডাররা এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শুধু তথ্য আদান-প্রদান ছাড়াও রিজিওনাল থ্রেট, হিউম্যান ট্রাফিকিং, নৌপথে অবৈধ চোরাচালান ও নৌপথের বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জানতে ও জানাতে পারবে। দেশের সকল বন্দর ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মিলনে ইইউ প্রশিক্ষকের এই ধরণের প্রশিক্ষণের ফলে আধুনিক ‘IORIS’ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবে সংশ্লিষ্ট বন্দরসমূহ যা FAL কনভেনশনের প্রতিপালন ও বাস্তবায়ন হিসেবে গণ্য হবে।

১৩ মার্চ প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, ওএসপি, এনডিসি, এনসিসি, পিএসসি। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশে মেরিটাইম সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই মূলত এই প্রশিক্ষণের আয়োজন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মেরিটাইম সিঙ্গেল উইন্ডো বিষয়ক ছয়জন প্রশিক্ষক তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। যারা ভবিষ্যতে ঊট তথা আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রেখে ‘IORIS’ প্রশিক্ষণ দিতে  সক্ষম হবেন। 

তিনি আরও বলেন, উক্ত প্রশিক্ষণ আয়োজনে পরিচালক ক্যামিরিও থেকে শুরু করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ নৌবাহিনী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রশিক্ষণ থেকে অর্জিত জ্ঞান বাংলাদেশের মেরিটাইম সেক্টরের সম্ভাবনাকে আরও বেশি সুদৃঢ় করবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশেপ্রথমবারের মতো আয়োজিত এই প্রশিক্ষণটি বন্দর খাতের উন্নয়নে একটি অনন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। 

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দিয়েছেন রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান

রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান

রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, ওএসপি, এনডিসি, এনসিসি, পিএসসি গতকাল ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি বিদায়ী চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলের স্থলাভিষিক্ত হলেন। বন্দর চেয়ারম্যান পদে যোগদানের আগে তিনি বিএন ফ্লিটের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

রিয়ার এডমিরাল এস.এম. মনিরুজ্জামান কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৭ সালে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ থেকে ডিসটিংশনসহ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে একজন অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদানের পর ১৯৯০ সালে নির্বাহী শাখায় কমিশন লাভ করেন। কর্মজীবনে বিভিন্ন অপারেশনাল এসাইনমেন্টে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

দীর্ঘ চাকুরি জীবনে তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিভিন্ন জাহাজ, প্রতিষ্ঠান ও নৌসদর দপ্তরে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। নৌবাহিনীতে তাঁর কর্ম জীবনের অগ্রগতির সাথে সাথে তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ফ্ল্যাগশিপ জাহাজ বিএনএস বঙ্গবন্ধুসহ বিভিন্ন ধরনের ফ্রন্ট লাইন জাহাজের কমান্ড করেন। এছাড়াও তিনি অগ্রগামী কমান্ডার ফ্লোটিলা ওয়েস্ট হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ওয়েস্টার্ন ফ্লোটিলা কমান্ড করেছেন। ডিরেক্টর পারসোনেল সার্ভিস (ডিপিএস), ডিরেক্টর ব্লু ইকোনমি (অ্যাডহক) এবং ডিরেক্টর নেভাল ট্রেনিং (ডিএনটি) হিসেবে তিনি নৌসদর দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিইডব্লিউ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সেনা কল্যাণ সংস্থার ডিজিএমআইএস, কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের চীফ স্টাফ অফিসার হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে তিনি দেশে বিদেশে বেশ কিছু প্রফেশনাল কোর্সে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি জার্মান নেভাল একাডেমি (Crew VI/89) (Marineschule Murik), পিএন কমিউনিকেশন স্কুল (পাকিস্তান), তুর্কী আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কলেজ (Harp Akademileri) এবং ইউএস নেভাল কমান্ড কলেজের একজন গ্র্যাজুয়েট। ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ মিরপুরের প্রাক্তন ছাত্র রিয়ার এডমিরাল মনিরুজ্জামান তুরস্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে যথাক্রমে দুইটি করে মাস্টার্স ও ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেছেন। জাতিসংঘের অধীনে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোতে সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তিনটি প্রধান বিদ্রোহী গোষ্ঠির নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ায় অসামান্য ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে ইন্দোনেশিয়ায় বহুজাতিক শান্তিরক্ষী কমান্ড পোস্ট এক্সারসাইজে (GARUDASHIELD) অংশগ্রহণের পর ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ফ্লিট কমান্ডারদের সম্মেলনে অগ্রগামী কমফ্লোট ওয়েস্ট হিসেবে যোগদান করেন। প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে 8th IONS Conclave of Chiefs 2023 এবং ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত Pacific Amphibious Leaders Symposium এ যোগ দেন তিনি।

কমফ্লোটে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে অসামান্য সেবা পদক (ওএসপি) লাভ করেন রিয়ার এডমিরাল এস.এম মনিরুজ্জামান। তিনি কৃতিত্বের সাথে ১২ বছর সী সার্ভিস সম্পন্ন করেন । তিনি তুর্কি, জার্মান, ফরাসী ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ। একজন পাঠ অনুরাগী হিসেবে ‍লিডারশীপ বা নেতৃত্ব তাঁর আগ্রহের বিষয়।

ব্যক্তি জীবনে তিনি মিসেস আইরিন জামানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ এবং মুহতাসিম ইয়াসার ও সারান ইয়াসার নামের দুই পুত্র সন্তানের গর্বিত জনক।

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ৫.৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

চট্টগ্রাম বন্দর ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৩১ লাখ ৬৯ হাজার টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৩০ লাখ ৭ হাজার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.৩৬ শতাংশ। একই সময়ে কার্গো হ্যান্ডলিংয়েও ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে রেকর্ড সর্বোচ্চ ১২ কোটি ৩২ লাখ টন কার্গো পরিবহন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর, যা আগের বছরে ১১ কোটি ৮৩ লাখ টন ছিল।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব কাটিয়ে সমাপ্ত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রমাণ বলছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

সিমেন্ট ও সিরামিক খাত ব্যতীত সকল শিল্পের বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক পণ্য, মেশিনারিজ, রাসায়নিক পণ্য এবং কাঁচামাল কনটেইনারের মাধ্যমে আমদানি করা হয়। তবে রপ্তানি পণ্য কেবল কনটেইনারের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়।

এর আগে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই বন্দরের বার্ষিক কনটেইনার পরিবহন কমেছিল। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড ৩২ লাখ ৫৫ হাজার কনটেইনার পরিবহন করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর, তখন প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ১১ শতাংশ।

২০২০-২১ অর্থবছরে কনটেইনার পরিবহনে ৩ দশমিক ১ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

২০২০-২১ অর্থবছরে মোট কনটেইনার পরিবহনের পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ ৯৭ হাজার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৩০ লাখ ০৪ হাজার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৯ লাখ ১৯ হাজার।

ডলার সংকটে কমেছে বিদেশি বিনিয়োগ

ডলারের সংকটকালে বিদেশি বিনিয়োগে দুঃখের খবর। কারণ ২০২৩ সালে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৭.৮০ শতাংশ। খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক ঋণে ৯ শতাংশের সুদসহ নানা কারণে ২০২৩ সালে দেশে বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা তৈরি হয়েছে।

এই সময় দেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী দেশের তালিকায় রয়েছে যুক্তরাজ্য।

দেশটি ২০২৩ সালে একাই বিনিয়োগ করেছে মোট বিনিয়োগের ২০.৪০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে দেশে মোট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৩৯৭ কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা।
যদিও আগের বছর ২০২২ সালে এই বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪৮২ কোটি ৭২ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ কমেছে ১৭.৮০ শতাংশ। তবে এই সময় নিট বিনিয়োগ কমেছে ১৩.৭০ শতাংশ। ২০২২ সালে দেশে বিদেশি নিট বিনিয়োগ এসেছিল ৩৪৮ কোটি ডলার। কিন্তু ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি ডলারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ সংকট ও এর কারণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রেটিং কমে যাওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মতো বিষয়গুলো এখানে কাজ করেছে। এ ছাড়া দেশে গত কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন কারণে গ্রিনফিল্ড বা নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। হলেও যৎসামান্য। আবার এফডিআই স্টকের মধ্যে পুনর্বিনিয়োগও আছে অনেক।

এ ক্ষেত্রেও দেখা গেছে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী অর্থ প্রত্যাবাসন করতে না পেরে পুনরায় বিনিয়োগ করছেন। কভিড-পরবর্তী আমাদের অভ্যন্তরীণ সংকট বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট না করার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ২০২৩ সালে দেশে পুঞ্জীভূত বিদেশি বিনিয়োগ কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৫ কোটি ডলার। ২০২২ সালে যার পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৭৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে দেশের পুঞ্জীভূত বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১ শতাংশ। গত বছর দেশে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে পুনর্বিনিয়োগ থেকে, পরিমাণটা প্রায় ২২১ কোটি ডলার। তবে একদম নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ খুবই কম, প্রায় সাড়ে ৭০ কোটি ডলার। মোট বিদেশি বিনিয়োগের ২৩.৫ শতাংশ এসেছে ইকুইটি বা মূলধনী বিনিয়োগ হিসেবে। ২০২২ সালের তুলনায় মূলধনী বিনিয়োগ কমেছে ৩১ শতাংশ। এ ছাড়া আন্তকম্পানি ঋণ হিসেবে সাড়ে আট কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে।

তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে যেসব দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী দেশ যুক্তরাজ্য। দেশটি একাই বিনিয়োগ করেছে ৬১ কোটি ৩৯ লাখ ডলার, যা মোট বিনিয়োগের ২০.৪০ শতাংশ। এর পরের অবস্থান নেদারল্যান্ডসের। দেশটি বিনিয়োগ করেছে ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, যা মোট বিনিয়োগের ১২.২০ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ৩১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার বা ১০.৫০ শতাংশ। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে চীন ও কোরিয়া। দেশ দুটির বিনিয়োগের পরিমাণ ২৬ কোটি ও ১৮ কোটি ডলার।

২০২৩ সালে বিদেশিরা সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে উৎপাদনশীল খাতে। এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ১২৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলার, যা মোট বিনিয়োগের ৪১.৮০ শতাংশ। বিনিয়োগের খাতে এর পরের অবস্থান বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের। এই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৮ কোটি ১২ লাখ ডলার বা ১৯.৩০ শতাংশ। ব্যবসা-বাণিজ্যে বিদেশিদের বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৫ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ১৮.৪০ শতাংশ। এ ছাড়া পরিবহন, গুদামজাত পণ্য ও যোগাযোগ খাতে ৯.৭০ শতাংশ, সেবা খাতে ৬.৯০ শতাংশ, কৃষি ও মৎস্য খাতে ১.৯০ শতাংশ, নির্মাণ ও অন্যান্য খাতে ১.৯০ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে বিদেশিরা।

আলেকজান্ডার সেলকার্ক

আলেকজান্ডার সেলকার্ক ছিলেন একজন স্কটিশ প্রাইভেটিয়ার ও রয়েল নেভি অফিসার। ড্যানিয়েল ডিফোর বিখ্যাত উপন্যাস রবিনসন ক্রুসোর মূল চরিত্র তৈরিতে যিনি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছেন, তিনি হলেন সেলকার্ক।

সেলকার্কের জন্ম ১৬৭৬ সালে। একটি অভিযানে তার ক্যাপ্টেন মনোমালিন্যের কারণে তাকে নির্জন একটি দ্বীপে ফেলে যান। সেখানে চার বছর (১৭০৪-১৭০৯) সেলকার্ক সঙ্গীহীন অবস্থায় অতিবাহিত করেন। বিপদসংকুল পরিবেশে এই দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারলেও শেষ পর্যন্ত ১৭২১ সালে তিনি মারা যান গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অসুখে ভুগে। তার আগে কিছুদিন তিনি পশ্চিম আফ্রিকা উপকূলে রয়েল নেভির টাউন-ক্লাস লাইট ক্রুজার এইচএমএস ওয়েমাউথে লেফটেন্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ওয়ার অব স্প্যানিশ সাকসেশনের (১৭০১-১৭১৪) সময় বয়সে তরুণ ছিলেন সেলকার্ক। সেই সময়েই দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে অভিযানে বেরিয়ে পড়েন তিনি। ১৭০৪ সালে সিনক পোর্ট নামের একটি জাহাজে চেপে সমুদ্রাভিযান শুরু করেন সেলকার্ক। তার জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন থমাস স্ট্র্যাডলিং। আর পুরো বহরের সার্বিক কমান্ডে ছিলেন উইলিয়াম ড্যাম্পিয়ার।

দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিমে মানব বসতিহীন হুয়ান ফার্নান্দেজ আইল্যান্ডসের একটি দ্বীপে সুপেয় পানি ও অন্যান্য খাবার সংগ্রহের জন্য থামে স্ট্র্যাডলিংয়ের জাহাজটি। এ সময় সেলকার্ক খেয়াল করেন, সিনক পোর্ট আর সাগরে চলার উপযোগী নেই। এই কথা তিনি স্ট্র্যাডলিংকে জানানও। কিন্তু ক্যাপ্টেন সেই কথা মানতে নারাজ। তিনি এই জাহাজ নিয়েই বেরিয়ে পড়তে চান। কিন্তু সেলকার্ক সেই যাত্রায় সঙ্গী হতে চাইলেন না। ফলে স্ট্র্যাডলিং সামান্য কিছু সরঞ্জামসহ সেলকার্ককে সেই দ্বীপেই ফেলে যান। শেষ পর্যন্ত সেলকার্কের ধারণাই সত্যি হয়। কলম্বিয়া উপকূল থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে মালপেলো দ্বীপের কাছে ডুবে যায় সিনক পোর্টস।

মে ডে

গভীর সমুদ্র। আশপাশে দৃষ্টিসীমায় আর কোনো জাহাজ বা ভূখণ্ড নেই। এই অবস্থায় প্রচণ্ড ঝড় উঠল। বিশালাকার ঢেউয়ের তোড়ে জাহাজ বা ফিশিং বোট একপাশে কাত হয়ে গেল। যেকোনো সময় ডুবে যাওয়ার দশা। এমন সময় একজন ক্যাপ্টেন নিজের ও ক্রুদের জীবনের নিরাপত্তায় সাহায্য চেয়ে রেডিওবার্তা পাঠাবেন। কেবল দুটি শব্দই এ অবস্থায় পুরো একটি বাক্যের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আর সেটি হলো ‘মে ডে’।

মানুষ শত শত বছর ধরে নিজেদের প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের কোড ওয়ার্ড বা সাংকেতিক শব্দ ও বার্তা ব্যবহার করে এসেছে। মে ডে এমনই একটি কোড ওয়ার্ড। তবে এই সংকেতের অর্থ সর্বজনবিদিত। এর ব্যবহারও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। মে ডে শব্দযুগলটি এসেছে ফরাসি শব্দ ‘মেদে’ থেকে, যার অর্থ সাহায্য করুন। জরুরি সাহায্যবার্তা হিসেবে ফরাসিরা শব্দটি ব্যবহার করত, যা পরবর্তীতে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও জাহাজের ক্যাপ্টেন, বোটচালক ও অন্যরা ব্যবহার করতে শুরু করেন। শব্দটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, সাহায্য প্রার্থনা নির্দেশক খুবই ছোট্ট শব্দ এটি। ফলে জরুরি পরিস্থিতিতে যখন বিশদ বার্তা পাঠানোর সুযোগ থাকে না, তখন এটি খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে।

তবে ফরাসি ভাষা তো আর সব জায়গায় ব্যবহার হয় না। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য শব্দকে সাহায্যবার্তা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সেই তাগিদ থেকেই ১৯২৭ সালে ‘মেদে’-কে সামান্য পরিবর্তন করে ‘মে ডে’ স্ট্যান্ডার্ড সিগন্যাল হিসেবে গ্রহণ করে ইন্টারন্যাশনাল রেডিও টেলিগ্রাফ কনভেনশন। বিপজ্জনক আবহওয়ার কবলে পড়া অথবা ডুবন্ত কোনো জাহাজ অথবা জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন এমন কোনো নৌযান থেকে রেডিওর মাধ্যমে ‘মে ডে’ বার্তা পাঠানোর পর নিকটবর্তী যারাই সেটি শুনবে, দ্রুত তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে যাবে। এটি কেবলই নৈতিক বাধ্যবাধকতা নয়, বরং আন্তর্জাতিকভাবে আইনসিদ্ধ অবশ্য কর্তব্য। নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড বা অন্য যেকোনো বাহিনীও এই বার্তা পেলে সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত বিপদগ্রস্ত নৌযানের সহায়তায় এগিয়ে যায়।

ডেড ইন দ্য ওয়াটার : আ ট্রু স্টোরি অব হাইজ্যাকিং, মার্ডার অ্যান্ড আ গ্লোবাল মেরিটাইম কন্সপিরেসি

২০১১ সালের ৬ জুলাই। এডেন উপসাগর দিয়ে যাচ্ছিল ব্রিলিয়ান্তে ভার্চুওসো নামের লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী একটি অয়েল ট্যাংকার। এই সময় জাহাজটিতে সোমালি জলদস্যুরা হামলা করে বসল। শুধু তা-ই না, জলদস্যুরা সেই ট্যাংকারে বিস্ফোরণ ঘটায় ও সেটিতে আগুন লেগে যায়। আপাতদৃষ্টে ঘটনা এমনই ছিল। কিন্তু প্রকৃত তথ্য যখন সামনে এল, তখন পুরো বৈশ্বিক শিপিং খাতই অবাক হয়ে দেখল কীভাবে অনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ষড়যন্ত্র চরিতার্থ করতে পারে মালিকপক্ষ।

ব্রিলিয়ান্তে ভার্চুওসোর ওই দুর্ঘটনার পর বিষয়টি তদন্ত করতে নামেন ডেভিড মোকেট নামের একজন মেরিটাইম সার্ভেয়র, যিনি কাজ করতেন লয়েড’স অব লন্ডনের হয়ে। অগ্নিকাণ্ডের কারণে ট্যাংকারটির কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছিলেন তিনি। এ সময় তার মনে বেশকিছু প্রশ্ন তৈরি হলো। কীভাবে জলদস্যুরা এত সহজে জাহাজে উঠতে সমর্থ হলো? আর যদি জলদস্যুরা অপহরণ ও মুক্তিপণের জন্যই জাহাজটিতে হামলা চালাবে, তাহলে তারা সেটিতে আগুন লাগিয়ে দেবে কেন? মোকেট এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যেতে পারেননি। কারণ তদন্ত শেষ হতে না হতেই ২০ জুলাই খুন করা হয় ডেভিড মোকেটকে।

পরবর্তীতে ব্রিটিশ উচ্চ আদালতে প্রমাণ হয় যে, ব্রিলিয়ান্তে ভার্চুওসোতে কোনো জলদস্যু হামলা চালায়নি। বরং এটি ছিল সাজানো নাটক। আর এই নাটকের রচয়িতা ছিলেন ট্যাংকারটির সুবিধাভোগী মালিক মারিও ইলিওপৌলোস। এই গ্রিক বিনিয়োগকারী সে সময় বেশ আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। মূলত বিমার টাকা পেতেই ট্যাংকারটিতে আগুন দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করার পরিকল্পনা করেন তিনি। আর ডেভিড মোকেটের তদন্ত তার সেই পরিকল্পনায় বাধ সাধতে পারেÑএমন আশঙ্কা থেকেই চুড়ান্ত প্রতিবেদন জমার আগেই ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা করা হয় তাকে।

ডেড ইন দ্য ওয়াটার বইটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই। লেখকদ্বয় ব্লুমবার্গের সাংবাদিক। তারা প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে শিপিং খাতে অবাক করার মতো এক অপরাধের পূর্বাপর তুলে ধরেছেন। সমালোচকরা বইটিকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বিজয়ের স্মারক হিসেবে অভিহিত করেছেন।

২৮৮ পৃষ্ঠার বইটি ২০২২ সালে প্রকাশিত। হার্ডকভার সংস্করণের বইটির মূল্য ১৫ ডলার।

আইএসবিএন-১০: ০৫৯৩৩২৯২৩৬

আইএসবিএন-১৩: ৯৭৮-০৫৯৩৩২৯২৩৮

তাইপে পোর্ট

তাইওয়ানের উত্তরাঞ্চলীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হলো তাইপে পোর্ট। দেশটির উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় কনটেইনার ফ্যাসিলিটি রয়েছে এখানে। তাইওয়ানের নবীনতম আন্তর্জাতিক বন্দর হলেও খুব দ্রুত এটি দেশটির কার্গো পরিবহনের গেটওয়ে হয়ে উঠছে। এ কারণে বন্দরটিকে আরও কার্যক্ষম করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তান-শুই নামেও পরিচিত তাইপে পোর্টের অবস্থান তাইওয়ানের বালি ডিস্ট্রিক্টে। জায়গাটি তাইওয়ানের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর কিলাং পোর্টের নিকটে। কনটেইনার ফ্যাসিলিটির দিক থেকে তাইপে পোর্ট এই কিলাং পোর্টকেও ছাড়িয়ে গেছে। তাইপে পোর্টের পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে রয়েছে তাইওয়ান ইন্টারন্যাশনালস পোর্টস করপোরেশন।

তাইপে পোর্ট গড়ে উঠেছে একাধিক পর্যায়ে, যেখানে তাইওয়ানের ইঞ্জিনিয়ারিং ও সিভিল কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির মুন্সিয়ানার ভালো প্রমাণ পাওয়া গেছে। বন্দরটি নির্মাণ করতে গিয়ে উপক‚লীয় ভূমিকে নতুন করে গড়ে তুলতে হয়েছে। নির্মাণ করতে হয়েছে একটি কৃত্রিম হারবার। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার ব্যয়ে একটি খনন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এই খননকাজ এমনভাবে পরিচালনা করা হয়েছে, যেন বন্দরের সক্ষমতাও বাড়ে, আবার পরিবেশেরও তেমন কোনো ক্ষতি না হয়। খননের ফলে বন্দরের ফেয়ারওয়ে ও টার্নিং বেসিনের গভীরতা ১৬ থেকে ১৭ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে।

বন্দরের প্রথম পর্যায়ের নির্মাণকাজ ১৯৯৩ সালে শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯৯৮ সালে। এরপর সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয় ১৯৯৬ সালের জুলাইয়ে। শেষ হয় ২০১২ সালে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার পর বন্দরের মোট ওয়াটার এরিয়া ২ হাজার ৮৩৩ হেক্টর ও ল্যান্ড এরিয়া ২৬৯ হেক্টরে উন্নীত হয়। এতে বন্দরের মোট আয়তন দাঁড়ায় ৩ হাজার ১০০ হেক্টর (৭ হাজার ৭০০ একর)।

বর্তমানে প্রতি বছরে গড়ে প্রায় তিন হাজার জাহাজ এই বন্দরের সেবা নেয়। তবে বন্দরের সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার এখনো হচ্ছে না। তাইপে পোর্টের বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা প্রায় ৪০ লাখ টিইইউ। অথচ ২০২২ সালে বন্দরটিতে মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় ১৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৮ টিইইউ, যা আগের বছরের চেয়ে ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ কম। ২০২১ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ২০ লাখ ৯১ হাজার ১৩২ টিইইউ। সে বছর জটের কারণে কাওসিউং বন্দর থেকে আংশিক কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম তাইপে পোর্টে শিফট করা হয়। এর সুবাদে বন্দরে কনটেইনার থ্রুপুট বেড়ে যায় ২৯ দশমিক ২ শতাংশ। লয়েড’স লিস্টের ২০২৩ সালের শীর্ষ ১০০ কনটেইনার পোর্টের তালিকায় তাইপে পোর্টের অবস্থান ৯৮তম। ২০২২ সালের তালিকায় ছিল ৮৮তম।

সর্বাধুনিক বন্দর ব্যবস্থায় যত ধরনের সুবিধাদি থাকা দরকার, তার সবই রয়েছে তাইপে পোর্টে। তারবিহীন সেন্সর কিংবা স্বয়ংক্রিয় লোডিং-আনলোডিং অপারেশনের মাধ্যমে বন্দরের কার্যদক্ষতা প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে। কনটেইনার টার্মিনালের পাশাপাশি জেনারেল কার্গো টার্মিনালেও এই ধরনের সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে তাইপে পোর্টে ১৪টি অপারেশনাল ডক রয়েছে, যেগুলোয় পেট্রোকেমিক্যাল, কনটেইনার ও বাল্ক পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। কেবল কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্যই সাতটি বার্থ রয়েছে বন্দরটিতে। তাইপে পোর্টে কার্গো রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। বাল্ক কার্গো রাখার জন্য রয়েছে ছয়টি গুদাম। কনটেইনার রাখার জন্য রয়েছে পৃথক পাকা জায়গা।

তাইপে পোর্টের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০৪১ সাল নাগাদ বন্দরের ল্যান্ড এরিয়া আরও ১ হাজার ৩৮ হেক্টর বাড়ানো হবে, যেখানে গড়ে উঠবে নতুন টার্মিনাল, ওয়্যারহাউস ও উইন্ড-পাওয়ার ফ্যাসিলিটি। এখন পর্যন্ত এই সম্প্রসারিত অংশের ৪৫ শতাংশ বা ৪৭১ হেক্টর জমির উন্নয়নকাজ শেষ হয়েছে।