Home Blog Page 9

দীর্ঘদিন পড়ে থাকা কনটেইনার ডিসেম্বরের মধ্যে নিলামের নির্দেশ

দীর্ঘদিন ধরে যেসব কনটেইনার বন্দরে পড়ে আছে সেগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে দ্রুত নিলামে বিক্রি করার নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কাস্টমস হাউসগুলোতে নিলাম কার্যক্রম জোরদার করে কনটেইনারজট কমাতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। ২৮ আগস্ট এনবিআরের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসের রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এ নির্দেশনা দেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বন্ড সুবিধার আওতায় আনা মালামাল বাজারে বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকের বন্ড লাইসেন্স বাতিল করা হবে। বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের সঙ্গে রাজস্ব বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

তিনি বলেন, আমাদের মূল ফোকাস হতে হবে ব্যবসাবাণিজ্যের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করা। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে আমদানি বা রপ্তানিকারকের বিন লক না করে অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে রক্ষিত অতীত রেকর্ডের ভিত্তিতে রাজস্ব ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করা। অহেতুক বিন লক করে সৎ ও কমপ্লায়েন্ট আমদানি-রপ্তানিকারকদের কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।

এনসিটিতে একদিনে সর্বোচ্চ কনটেইনার হ্যান্ডলিং

এনসিটি

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) এক দিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের নতুন ইতিহাস গড়েছে চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড (সিডিডিএল)।

বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার (২৯ আগস্ট) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মোট হ্যান্ডলিং পাঁচ হাজার টিইইউ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে আমদানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ হাজার ১০১ টিইইউ ও রপ্তানি ২ হাজার ৯১৮ টিইইউ। সর্বমোট এক দিনে ৫ হাজার ১৯ টিইইউ হ্যান্ডলিং করেছে চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড (সিডিডিএল)। যা একদিনে এনসিটিতে সর্বোচ্চ কনটেইনার হ্যান্ডলিং।

শুক্রবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হয়। গত ৭ জুলাই থেকে সিডিডিএল চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-২, ৩, ৪ ও ৫ নং বার্থের অপারেটরের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটিতে কনটেই্নার হ্যান্ডলিং উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সিডিডিএলের কর্মকর্তা ও সদস্যগণ জাহাজ পয়েন্ট, ডেলিভারি পয়েন্ট, এপ্রাইজমেন্ট পয়েন্ট, সিএন্ডএফ শেডসহ গেটসমূহে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করায় পূর্বের তুলনায় কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ত্বরান্বিত হয়েছে।

তিন স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ, একটির স্থগিত

দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর থাকা তিনটি স্থলবন্দর বন্ধ ও একটি স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।

সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম বলেন, নীলফামারীর চিলাহাটি স্থলবন্দর, চুয়াডাঙ্গার দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর ও রাঙামাটির তেগামুখ স্থলবন্দর সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দরের পরিচালন কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। তিনি জানান, এ বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটি পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘দেশে অনেকগুলো স্থলবন্দর অনুমোদন থাকলেও সেগুলোর বেশির ভাগই কার্যত অকার্যকর। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকা বা বাণিজ্যিক কার্যক্রম না থাকায় এগুলো চালু রাখতে গিয়ে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়। এসব স্থানে কর্মকর্তাদের পোস্টিং দিতে হয় ও করদাতাদের অর্থ ব্যয় হয়।’

শফিকুল আলম আরও বলেন, অতীতে রাজনৈতিক বিবেচনায় সীমান্ত এলাকায় কয়েকটি স্থলবন্দর অনুমোদন দেওয়া হলেও বাস্তবে সেখানে প্রত্যাশিত বাণিজ্যিক কার্যক্রম গড়ে ওঠেনি। ফলে এগুলো সরকারের জন্য অপ্রয়োজনীয় আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি জানান, বর্তমানে কার্যক্রমহীন আরও চারটি স্থলবন্দরে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, যেগুলোর বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গত মার্চে চিলাহাটি, দৌলতগঞ্জ, তেগামুখ ও বাল্লা—এই চারটি স্থলবন্দর পুরোপুরি বন্ধ রাখার সুপারিশ করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে চিলাহাটি, দৌলতগঞ্জ ও তেগামুখে কোনো অবকাঠামো নেই বলে তা বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। আর হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ হলেও ভারতীয় অংশে অবকাঠামো ও সড়ক না থাকায় এই স্থলবন্দরের পরিচালনা কার্যক্রম স্থগিতের কথা বলা হয়েছে।

জানা যায়, গত নভেম্বরে দেশের আটটি স্থলবন্দরের উপযোগিতা দেখতে একটি কমিটি গঠন করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি নিয়ে ছয় সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়।

এই কমিটি চারটি স্থলবন্দরকে শর্ত সাপেক্ষে চালু রাখার সুপারিশ করে। যেমন ময়মনসিংহ জেলার গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দরের দুটি স্থানের পরিবর্তে একটি স্থানে স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু রাখার সুপারিশ করা হয়। শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দরের আয়-ব্যয় বিবেচনা করে এর কার্যক্রম গতিশীল করার কথা বলা হয়েছে।

কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, জামালপুরের ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এ বিনিয়োগ বিবেচনায় ন্যূনতম জনবল দিয়ে বন্দরের কার্যক্রম চালু রাখা যেতে পারে। দিনাজপুরের বিরল স্থলবন্দরে বিদ্যমান ব্যবস্থায় রেলপথে আমদানি-রপ্তানি চালু রাখা যেতে পারে।

চট্টগ্রাম বন্দরে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে আটক তিন

চট্টগ্রাম বন্দরে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে আটক তিন

চট্টগ্রাম বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন বিদেশগামী বাণিজ্যিক জাহাজে ঢুকে পাড়ি জমানোর পরিকল্পনা করেছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। বুধবার (২৭ আগস্ট) বিভিন্ন সময় তারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে বলে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সকাল সাড়ে আটটার দিকে বন্দরের ভেতরে অবৈধভাবে ঢুকে ১১ নম্বর জেটি এলাকায় ঘোরাফেরার সময় বন্দর নিরাপত্তা সদস্যরা মো. মাহফুজ শেখকে আটক করেন। তিনি গোপালগঞ্জের মাকসুদপুরের বোয়ালিয়ার শেখবাড়ির টুকু শেখের ছেলে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মাহফুজ শেখ বিদেশগামী জাহাজে অবৈধভাবে ঢুকে বিদেশে পাড়ির উদ্দেশ্যে বন্দরে ঢুকেছিল। তার কাছ থেকে একটি পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, চিঁড়া, খাবার পানিসহ একটি ব্যাগ পাওয়া গেছে।

ভোররাতে বন্দরের ১ নম্বর গেটে একটি গাড়ির নিচ দিয়ে মালামাল চুরির উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে গেটে নিয়োজিত নিরাপত্তা সদস্যরা তল্লাশির সময় মো. আবুল খায়েরকে আটক করেন। তিনি নোয়াখালীর সেনবাগের গোপালপুরের মো. হানিফের ছেলে।

এদিকে দুপুর সোয়া দুইটার দিকে জিসিবি-২ নম্বর গেট দিয়ে অন্য আরেকজনের প্রবেশ পাস দিয়ে কাভার্ডভ্যানের গেট পাস সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে দায়িত্বরত নিরাপত্তা বিভাগের সদস্যরা মেহেদি হাসান লাবলুকে আটক করেন। তিনি খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির মহামুনি পাড়ার মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, লাবলুর ব্যবহৃত পাসটি তার মামা শফিকুল ইসলামের, যিনি কিছুদিন আগে মারা গেছেন।

আটককৃতদের বন্দর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি কনটেইনারের চার গুণ স্টোর রেন্ট স্থগিত

আমদানি হওয়া পণ্যভর্তি কনটেইনার (এফসিএল) রাখার চার গুণ স্টোর রেন্ট আদায় স্থগিত করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার বন্দর এক আদেশে এ কথা জানানো হয়। ১০ মার্চ থেকে স্বাভাবিক স্টোর রেন্টের ওপর চার গুণ জরিমানা আদায় শুরু হয়েছিল কনটেইনার জট কমাতে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিবহন) স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে আমদানি করা পণ্যভর্তি কনটেইনারের (এফসিএল) সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এতে বন্দরের কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দর ও ঢাকার কমলাপুরের আইসিডিতে থাকা কনটেইনারের ওপর চার গুণ ভাড়া আরোপ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিজিএমইএসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে। ২৩ আগস্ট থেকে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরোপিত বাড়তি গুদাম ভাড়া আদায় স্থগিত থাকবে। আগামী ১ মাস কনটেইনারের জট-পরিস্থিতির উন্নতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল ২ দিনে নেমে এসেছে

চট্টগ্রাম বন্দরে বহির্নোঙরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল কমে ০–২ দিনে নেমে এসেছে। একসময় যেখানে জাহাজগুলোর গড় অবস্থানকাল ছিল ৭–৮ দিন। এর ফলে আমদানি–রপ্তানিসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

২০২৪–২৫ অর্থবছরে সর্বাধিক কন্টেনার হ্যান্ডলিং ও রেকর্ড সৃষ্টি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন, নিত্যনতুন ইয়ার্ড নির্মাণ,
গাড়ি সংযোজন, শেড সংস্কার এবং টার্মিনাল সম্প্রসারণের ফলে এ অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দরের ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস থেকে বৃদ্ধি করে প্রায় ৫৯ হাজার টিইইউএসে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকটি ইয়ার্ডের সংস্কার এবং সম্প্রসারণ শেষে বন্দরের কন্টেনার ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা ৬২ হাজার টিইইউএস উন্নীত হবে।

২০২০ সালের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে বহির্নোঙরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল ছিল ৮.৬৯ দিন। সে সময় গড়ে প্রতিদিন ২৩ টি জাহাজ বহির্নোঙরে অপেক্ষায় থাকত এবং সর্বাধিক অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩৪টি। কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টে জাহাজের গড় অবস্থানকাল ৪.৮৪ দিনে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এ সময় গড় অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যা ছিল ১৪ এবং সর্বাধিক জাহাজের সংখ্যা ছিল ১৯টি।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমদানি–রপ্তানিকারকরা আরও দ্রুত কনটেইনার খালাস ও ডেলিভারি নিতে পারবেন। এর ফলে বাণিজ্য কার্যক্রম আরও সহজ হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও তারা মনে করেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ধারণক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার টিইইউ

চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ধারণক্ষমতা ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার টিইইউতে (প্রতি একক ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কনটেইনার)। আগে বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার রাখার মোট সক্ষমতা ছিল ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউ।

২১ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরে কনটেইনার জট কমানো এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম আরও সহজতর করতে কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে কনটেইনার ইয়ার্ড বৃদ্ধির কাজ করছে। ধারণক্ষমতা বাড়ানোর এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি নতুন ইয়ার্ড নির্মাণ ও পুরোনো স্থাপনাগুলো সংস্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পুরোনো নিলাম ইয়ার্ড, গাড়ি রাখার স্থান, ব্যাগেজ শেড ও এক্স-ওয়াই শেডের উন্নয়ন। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এই ধারণক্ষমতা আরও বাড়িয়ে প্রায় ৬২ হাজার টিইইউতে উন্নীত করার পরিকল্পনাও রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরে কোনো সমস্যা ছাড়াই ৪৭-৪৮ হাজার টিইইউ কনটেইনার সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে। যদিও যন্ত্রপাতি, ট্রাক ও লরি চলাচলের জন্য কমপক্ষে ১৫ শতাংশ ইয়ার্ড খালি রাখতে হয়। এছাড়া দৈনিক কনটেইনার জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের সংখ্যা গড়ে ১০টি থেকে বেড়ে ১২-১৩টিতে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে আমদানি-রপ্তানি উভয় ক্ষেত্রেই পণ্য ডেলিভারির সময় কমে এসেছে, যা রপ্তানির লিড টাইম কমিয়ে এনেছে। ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা বাড়ায় রপ্তানিমুখী প্রায় ৬ হাজার টিইইউ কনটেইনারের জন্য প্রি-স্ট্যাকিংয়ের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। তবে কিছু চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে। লোকোমোটিভের স্বল্পতার কারণে রেল পরিবহনে বিলম্ব হচ্ছে, যা ঢাকা আইসিডিতে পণ্য পরিবহনে চাপ বাড়িয়েছে। এছাড়া নিলামযোগ্য প্রায় ১০ হাজার কনটেইনার এবং ঢাকা আইসিডিগামী আরও ২ হাজার কনটেইনার এখন ক্লিয়ারেন্সের অপেক্ষায় রয়েছে।

বন্দরের কার্যক্রম স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে জাহাজগুলোর টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম (বন্দরে পৌঁছানো থেকে ছেড়ে যাওয়া পর্যন্ত গড় সময়) কমে ২.৫৮ দিনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে বহির্নোঙরে অপেক্ষার সময় সর্বোচ্চ দুই দিন পর্যন্তে নেমে এসেছে।

সরাসরি জাহাজ চলাচলসহ বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আগ্রহী পাকিস্তান

পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান ২২ আগস্ট (শুক্রবার) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক অবস্থা বিশেষ করে বন্দরে পরিচালনা পর্ষদ, কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং, শ্রম ব্যবস্থাপনা, বিদেশী বিনিয়োগ, অটোমেশনসহ বন্দরের বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক উন্নতি ও অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বিদেশী বিনিয়োগের বিষয়ে উল্লেখ করেন, করাচি পোর্ট ট্রাস্টে হাচিসন পোর্ট গ্রুপ একটি কনটেইনার টার্মিনাল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি পোর্ট (এডি পোর্ট) একটি বাল্ক টার্মিনাল পরিচালনা করছে । এছাড়ও পোর্ট কাশিমে ডিপি ওয়ার্ল্ড দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তির ভিত্তিতে একটি টার্মিনাল পরিচালনা করছে।

অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বন্দরের সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরেন। বিশেষ করে বিগত বছরে চট্টগ্রাম বন্দরের রেকর্ড পরিমান কনটেইনার হ্যান্ডলিং, জাহাজের ওয়েটিং টাইম ০ থেকে ২ দিনে নামিয়ে আনা, জাহাজের গড় অবস্থান কাল (টার্ন এরাউন্ড টাইম) হ্রাসসহ বন্দরের সাম্প্রতিক অটোমেশান ও ডিজিটালাইজেশনের ব্যাপারে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেন। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান দু’দেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানি বৃদ্ধি, সরাসরি জাহাজ চলাচলসহ অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আশ্বাস প্রদান করেন। পাকিস্তানের প্রতিনিধিদল বন্দরে অপারেশনাল কার্যক্রম সরেজমিনে পরির্দশন করেন ।

পরির্দশনকালে পাকিস্তান দূতাবাসের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ দূত জেইন আজিজ, বাণিজ্যিক সহযোগী ওয়াকাস ইয়াসিন এবং বাংলাদেশের পক্ষে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনিন কাউসার চৌধুরী, বে টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক কমডোর মো. মাহফুজুর রহমানসহ বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।

চট্টগ্রাম বন্দরে নেতৃত্বের এক বছর: অগ্রযাত্রা, দায়বদ্ধতা ও রূপান্তরের অনন্য অধ্যায়

রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বন্দর দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। বঙ্গোপসাগরের তীরে কৌশলগতভাবে অবস্থিত এই বন্দরটি দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯০ শতাংশ এবং কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ৯৮ শতাংশ পরিচালনা করে। আধুনিক কনটেইনার টার্মিনাল ও দক্ষ কার্গো হ্যান্ডলিং সিস্টেমসহ উন্নত অবকাঠামো সমৃদ্ধ বন্দরটি আঞ্চলিক বাণিজ্যে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এর অবদান অনস্বীকার্য। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের সংযুক্তি এই বন্দর ঘিরেই বিকশিত। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) ১৩৮ বছরের গৌরবময় যাত্রা অতিক্রম করেছে। প্রতিশ্রুতি, সমৃদ্ধি ও দায়িত্বশীলতার ধারক এই প্রতিষ্ঠান আজ আধুনিকতা, টেকসই উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি।


২০২৪ সালের জুলাইয়ে জাতীয় অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে যখন চট্টগ্রাম বন্দর পুলিশ ও আনসার বাহিনীর অনুপস্থিতিতে ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়, তখন রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বন্দরের দৃঢ় নেতৃত্ব নিশ্চিতে বন্দর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার কৌশলগত ও গতিশীল পদক্ষেপের ফলে বন্দর পরিচালনায় অবিলম্বে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে এবং দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম চলমান থাকে। এই দুঃসময়ে তার নেতৃত্ব প্রমাণ করে, সঙ্কট মুহূর্তেই প্রকাশিত হয় প্রকৃত নেতৃত্বের সার্থকতা।
বন্দর চেয়ারম্যানের দূরদর্শী নেতৃত্বে চবক আজ বিশ্বমানের, স্বচ্ছ, দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য বন্দর ব্যবস্থার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। গত এক বছরে নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বন্দর কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জিত হয়েছে। নিচে এ সময়ে চবক-এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির কথা তুলে ধরা হলো:


কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে নতুন রেকর্ড
২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক অতিক্রম করেছে। ৪৮ বছরের পথচলায় এই প্রথম বছরে ৩২,৯৬,০৬৭ টিইইউ (২০ ফুট সমতুল্য ইউনিট) হ্যান্ডলিং করে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৪% প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৩১,৬৮,৬৯০ টিইইউ, অর্থাৎ অতিরিক্ত ১,২৭,৩৭৭ টিইইউ হ্যান্ডলিং হয়েছে এ বছরে।


২০২৪ সালেও বন্দরের কার্যক্রম ছিল চমকপ্রদ। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ৭.৪২% এবং মোট কার্গো থ্রুপুটে ৩.১১% প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়ে এ সময়ে- দুটোই বন্দরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। উল্লেখ্য, জুলাইয়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা, বন্যা, পরিবহন ধর্মঘট ও কাস্টমস কার্যক্রমে নানা বিঘœ সত্ত্বেও জাহাজের গড় অপেক্ষার কাল কমে এসেছে মাত্র একদিনে, যা বন্দর ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।


রাজস্ব ও মুনাফায় প্রবৃদ্ধি
২০২৪-২৫ অর্থবছরে চবক বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় আর্থিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমধর্মী অগ্রগতি অর্জন করেছে। মোট রাজস্ব আয় ৮.২২% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫,২২৭.৫৫ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের ৪,৮৩০.৩৭ কোটি টাকা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। যদিও ব্যয় ৯.৪৫% বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২,৩১৪.৮৬ কোটি টাকা, তারপরও বন্দর রাজস্ব উদ্বৃত্তে ৭.২৭% প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে; ২,৭১৫.৩৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে উঠেছে ২,৯১২.৬৯ কোটি টাকায়। এ অর্জন প্রতিষ্ঠানটির শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং রাজস্ব উৎপাদনের সক্ষমতাকে প্রতিফলিত করে।


জাতীয় কোষাগারে উল্লেখযোগ্য অবদান
গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সরকারের রাজস্ব খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। এই সময়ে জাতীয় কোষাগারে মোট ৭,২০৩.০৬ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে, যা ক্রমবর্ধমান হারে প্রতিবছর বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১,৭৬৫.২৬ কোটি টাকা প্রদান করে চবক নিজেকে সরকারের অন্যতম বৃহৎ রাজস্ব প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।

মানবসম্পদ উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ
মানবসম্পদ উন্নয়নে দীর্ঘদিন পর, ২০২৫ সালের এপ্রিল-মে মাসে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি বড় ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করে। এ সময় বন্দরের ৩৬৫টি শূন্য পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, এবং একসাথে ৬৬৩ জন বিদ্যমান কর্মচারীর পদোন্নতি- দুটি উদ্যোগই বন্দরের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এছাড়া, কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পোর্ট টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় একটি বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গঠনের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে, যেখানে অপারেটর ও কারিগরি কর্মীদের আন্তর্জাতিক মানে দক্ষ করে তোলা হবে, যাতে তারা বাংলাদেশের বন্দর খাতের কার্যকর নেতৃত্ব হাতে নিতে সক্ষম হয়।


টেকসই কল্যাণ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি সমাজসচেতন ও মানবকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবেও কাজ করে যাচ্ছে। বন্দরের কর্মী ও আশেপাশের জনগোষ্ঠীর জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি কলেজ এবং একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছে।
নারী কল্যাণে ‘সিপিএ মহিলা সংঘ’ পরিচালিত ‘ঘাসফুল প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এবং ‘নতুন কুঁড়ি কিন্ডারগার্টেন’ নারী সম্পৃক্ততা ও শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত বন্দর হাসপাতাল বন্দরের কর্মী ও স্থানীয় জনগণের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করছে। ‘পোর্ট রিপাবলিক ক্লাব’ বছরের নানা সময়ে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে কম্যুনিটির মধ্যে সম্প্রীতি এবং অংশগ্রহণমূলক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাচ্ছে। ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য চবক মসজিদ, মন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয় নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। এছাড়া, কর্মীদের অনুপ্রাণিত রাখতে বার্ষিক প্রণোদনা বোনাস প্রদান করা হচ্ছে, যা বন্দর কর্তৃপক্ষের অন্তর্ভুক্তিমূলক, মানবিক এবং দায়িত্বশীলতার বহিঃপ্রকাশ।


অবকাঠামো উন্নয়নে রূপান্তর ও গতিশীলতা
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) দেশের সামুদ্রিক সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিস্তৃত অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। একটি আঞ্চলিক বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বন্দরের অবস্থান সুদৃঢ় করতে আধুনিক কার্গো হ্যান্ডলিং, উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং স্মার্ট টার্মিনাল স্থাপনের মতো বহুমাত্রিক প্রকল্প দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। নিচে এসব প্রধান প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো:


ক. বে টার্মিনাল
বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন বে টার্মিনাল প্রকল্পকে বাংলাদেশের অগ্রগতির পথে একটি ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এটি বন্দরে সুবৃহৎ জাহাজ ভেড়ানোর সক্ষমতা তৈরি করবে, জাহাজের টার্নঅ্যারাউন্ড সময় হ্রাস করবে এবং আমদানি-রপ্তানির খরচ কমিয়ে আনবে। ২০৩১ সালে চালু হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নির্মিত এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের নৌবাণিজ্যে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে আবির্ভূত হবে।


খ. মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর
২০২৫ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দরের অংশ হিসেবে মাতারবাড়িতে দুটি জেটি নির্মাণে পেন্টা-ওশান ও টিওএ কর্পোরেশনের সঙ্গে ৬,২০০ কোটি টাকার জাইকা-অর্থায়িত চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০২৯ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার পরিকল্পনাধীন এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৮,০০০ টিইইউ ধারণক্ষমতার জাহাজও পরিচালনা করা সম্ভব হবে, যা বাংলাদেশের বৈশ্বিক সংযোগকে এক নতুন মাত্রায় উন্নীত করবে।


গ. লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল (এলসিটি)
দীর্ঘদিন অনুন্নত থাকা লালদিয়া টার্মিনালকে আধুনিকায়নের জন্য একটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় এর উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। বিশ্বখ্যাত এপিএম টার্মিনালসহ আন্তর্জাতিক অপারেটররা এতে যুক্ত হয়েছে। বছরে ০.৯ মিলিয়ন টিইইউ হ্যান্ডলিং সক্ষমতা যুক্ত করে এটি বন্দরের কনটেইনার ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য গতি নিশ্চিত করবে।

ঘ. নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)
সাইফ পাওয়ারটেকের সঙ্গে ১৭ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষে, গত ৭ জুলাই ২০২৫-এ চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড (সিডিডিএল)-এর কাছে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সিডিডিএল কার্যক্রমের প্রথম মাসেই ধারাবাহিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং প্রবৃদ্ধি প্রদর্শন করেছে।


ঙ. গ্রিন চ্যানেল
স্মার্ট, স্বয়ংক্রিয় ও ডিজিটালাইজড অপারেশনের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরে চালু করা ‘গ্রিন চ্যানেল’ ব্যবস্থাটি বিশ্বস্ত অনুমোদিত ব্যবসায়িক সত্তাগুলির জন্য দ্রুত হ্যান্ডলিং নিশ্চিত করছে। এটি যানজট, অপচয় ও খরচ কমিয়ে বন্দরের সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধি করছে এবং বাণিজ্য পরিবেশকে আরও স্বচ্ছ ও গ্রাহকবান্ধব করে তুলছে।


চ. মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল
প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় একটি আধুনিক ‘মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই অঞ্চলে বন্ডেড গুদামজাতকরণ, মূল্য সংযোজন কার্যক্রম ও উৎপাদন ব্যবস্থা চালু হবে, যার মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং দেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতা আরও জোরদার হবে।


দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিকীকরণ
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় বহুমুখী দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বন্দর কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় রেকর্ডসংখ্যক কনটেইনার হ্যান্ডলিং, দ্রুত জাহাজ বার্থিং এবং কর্মপ্রক্রিয়ার সরলীকরণ এরই প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
গৃহীত মূল উদ্যোগগুলো হলো:
ই-গেট পাস ও অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম চালু, যা বন্দরের অটোমেশন প্রক্রিয়াকে গতিশীল করেছে।
নতুন ক্রেন সংগ্রহ এবং ড্রাফট গভীরতা বৃদ্ধি, যার ফলে এখন ৬০-৬৫% জাহাজ বন্দরে আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই বার্থিং করতে পারছে।
জাহাজের গড় অপেক্ষাকাল মাত্র একদিনে নামিয়ে আনা, যা বন্দরের অনন্য দক্ষতার নিদর্শন।
‘অনলাইন এজেন্ট ডেস্ক’ চালু করা, যা ঝামেলামুক্ত ডকুমেন্টেশন এবং গ্রাহকসেবাকে আরো সহজ ও সময়-সাশ্রয়ী করেছে।
এসব আধুনিকীকরণ পদক্ষেপ চট্টগ্রাম বন্দরকে শুধুই একটি কর্মক্ষম বন্দর নয়, বরং একটি উদ্ভাবনী, দক্ষ ও ব্যবসাবান্ধব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছে।


ডিজিটাল রূপান্তর ও অটোমেশন
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) ধারাবাহিকভাবে অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশনের পথে অগ্রসর হচ্ছে। আধুনিকায়িত টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম (টিওএস), যা পূর্বে সিটিএমএস নামে পরিচিত ছিল, বর্তমানে অনলাইন গেট পাস ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। এই নতুন ব্যবস্থায় ড্রাইভাররা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবেশ ফি পরিশোধ করে কিউআর কোড স্ক্যানের মাধ্যমে নিরাপদ ও দ্রুত ই-গেট প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন। ম্যানুয়াল কিউর পরিবর্তে এ প্রযুক্তি ট্রাফিক প্রবাহ সচল রাখছে এবং কার্গোর রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং সুবিধা নিশ্চিত করছে। একইসাথে চালু হয়েছে যানবাহন ট্র্যাকিং ও স্বয়ংক্রিয় বার্থ বরাদ্দ পদ্ধতি, যা অপারেশনাল দক্ষতা ও কার্গো ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনছে। এসব প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ‘মেরিটাইম সিঙ্গেল উইন্ডো’ চালু হয়েছে, যা বাণিজ্য ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করছে। পাশাপাশি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইওআরআইএস প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযুক্তির মাধ্যমে এফএএল কনভেনশনের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রোটোকলের সাথে বন্দর কার্যক্রমের সামঞ্জস্য দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্কার ও অংশীজন সমন্বয়
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্কার খাতে গুরুত্ব দিচ্ছে। সরলীকৃত শুল্ক প্রক্রিয়া এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর বন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ডিজি কার্গো ও নিলামযোগ্য কনটেইনার দ্রুত অপসারণ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে, যা যানজট নিরসনে অতীব সহায়ক। বিপজ্জনক কার্গোর ধ্বংসে তারা কাস্টমসকে কার্যকর সহযোগিতা করেছে এবং পুলিশসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য জমিও বরাদ্দ দিয়েছে।


কৌশলগত পুনর্গঠন ও মাস্টার প্ল্যান
জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চবক একটি দীর্ঘমেয়াদী মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করছে, যার লক্ষ্য বন্দর অবকাঠামো ও ডিজিটাল কার্যক্রম আধুনিকীকরণ। এই পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বে টার্মিনাল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর ও লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল-এর মতো মেগা প্রকল্প, যেগুলো বন্দরের বড় জাহাজ হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। একইসাথে টিওএস এবং ভিটিএমআইএস সিস্টেম-এর মাধ্যমে কার্গো ট্র্যাকিং, বার্থ বরাদ্দ ও নেভিগেশন নিরাপত্তা উন্নত করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশ সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের দূরদর্শী চেয়ারম্যানকে ‘ফোকাল পয়েন্ট’ হিসেবে রেখে ‘মেরিটাইম সিঙ্গেল উইন্ডো’ প্ল্যাটফর্ম ধারণার ভিত্তিতে চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলিকে একীভূত করে একটি সমন্বিত জাতীয় সমুদ্র বন্দর কৌশল (এনপিএমএস) প্রণয়নের কাজ করছে।


গ্রিন মেরিটাইম ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন
পরিবেশ সচেতনতা ও টেকসই উন্নয়নের অংশ হিসেবে নিজেকে গ্রিন মেরিটাইম সেক্টর বা ‘সবুজ সমুদ্রবন্দর’ হিসেবে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। বে টার্মিনাল ও মাতারবাড়ী উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে জলবায়ু-সহনশীল ব্রেকওয়াটার এবং ড্রেজিংকৃত অ্যাক্সেস চ্যানেল ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দর কার্যক্রম আগামী দিনে আরো টেকসই হবে এবং জাহাজ চলাচলের দক্ষতা ও নিরাপত্তা আরো বৃদ্ধি পাবে।


আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বৈশ্বিক সংযুক্তি
আন্তর্জাতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এপিএম টার্মিনাল, ডিপি ওয়ার্ল্ড, পিএসএ সিঙ্গাপুর, এবং জাইকার মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছে চট্টগ্রাম বন্দর। পাশাপাশি, থাইল্যান্ডের রানং বন্দর এবং ক্রোয়েশিয়ার রেজিকা গেটওয়ে বন্দরের সঙ্গে সহযোগিতা স্থাপনের মধ্য দিয়ে নতুন শিপিং রুট ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা উন্মোচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই আন্তর্জাতিক সহযোগিতাগুলো বন্দরের সক্ষমতা সম্প্রসারণে সহায়তা করবে এবং চট্টগ্রামকে বৈশ্বিক বাণিজ্য নেটওয়ার্কে আরও কার্যকরভাবে সংযুক্ত করবে।


আইএসপিএস কোডের কঠোর প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক জাহাজ ও বন্দর সুরক্ষা কোড (আইএসপিএস কোড)-এর সাথে নিখুঁত সামঞ্জস্য ও সঙ্গতি বজায় রেখেছে। এর প্রমাণ ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন কোস্ট গার্ড বাহিনী পরিচালিত নিরীক্ষা, যেখানে এই প্রথমবারের মতো “কোনো ত্রুটি নেই” কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য এক অনন্য সাফল্য।


এই নিরীক্ষায় প্রতিনিধিদল আইএসপিএস মনিটরিং সেল, সিসিটিভি কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম, রপ্তানি কনটেইনার স্ক্যানার এবং ইস্পাহানি-সামিট অ্যালায়েন্স ও পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সরেজমিন পরিদর্শন ও মূল্যায়ন করে। তারা বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তাকর্মীদের পেশাদারিত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে সন্তোষ প্রকাশ করেন।


ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি: বিশ্বমানের সমুদ্র বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য এই বন্দরকে একটি বিশ্বমানের মেরিটাইম লজিস্টিক হাব, বা সামুদ্রিক সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আঞ্চলিক সংযোগকে ত্বরান্বিত করবে। এ লক্ষ্যে কৌশলগত অবকাঠামো উন্নয়ন, নীতিগত সংস্কার এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আগামী দিনের চাহিদা মেটাতে বন্দর কর্তৃপক্ষ যেসব রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তা নিচে উপস্থাপন করা হলো:

ক. রপ্তানিমুখী ডকইয়ার্ড: মাতারবাড়ী কেন্দ্র করে
চট্টগ্রাম বন্দরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কেন্দ্রে রয়েছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের আওতায় একটি রপ্তানিমুখী ডকইয়ার্ড নির্মাণ করা। বৃহৎ জাহাজ পরিচালনার উপযোগী এই ডকইয়ার্ড বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বিশেষ করে জাহাজ নির্মাণ ও রপ্তানি খাতে এটি দেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ারে রূপান্তরিত করবে।


খ. বন্দরের জমির সর্বোত্তম ব্যবহার
টেকসই এবং কার্যকর সম্পদ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর তার বিদ্যমান ভূমি সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়েছে। এর আওতায় গুদামজাতকরণ, সরবরাহ চেইন, বন্দর পরিচালনা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য কৌশলগত জোনিং করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং বৃহত্তর অর্থনৈতিক পরিবেশে ইতিবাচক অবদান রাখা হচ্ছে।


গ. পোর্ট-টু-পোর্ট, বা বন্দর-থেকে-বন্দর সহযোগিতা
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বন্দরগুলোর সঙ্গে সরাসরি শিপিং লাইন স্থাপন এবং যৌথ উদ্যোগে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ চট্টগ্রাম বন্দর। এর মাধ্যমে কাস্টমস ও ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়া সহজতর হবে, যৌথ লজিস্টিক করিডোর তৈরি হবে এবং নতুন গন্তব্যে পণ্য চলাচল আরো বৃদ্ধি পাবে। আঞ্চলিক বাণিজ্যে আরো গতিশীলতা নিশ্চিত করবে।


ঘ. কাঠামোগত সংস্কার ও আধুনিকীকরণ
চট্টগ্রাম বন্দর তার প্রবৃদ্ধিকে টেকসই ও কার্যকর রাখতে কাঠামোগত সংস্কারে মনোনিবেশ করেছে। এই সংস্কারের মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল রূপান্তর, স্বয়ংক্রিয় বন্দর পরিচালনা, উন্নত প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং জনবল উন্নয়ন। এসব উদ্যোগ বন্দর ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।


ঙ. স্যাটেলাইট বন্দর শহর উন্নয়ন
চট্টগ্রাম বন্দরের অন্যতম দূরদর্শী উদ্যোগ হলো একটি স্যাটেলাইট পোর্ট সিটি, বা বন্দর শহর গড়ে তোলা, যা মূল বন্দর এলাকার ওপর তৈরি হওয়া চাপ হ্রাস করবে এবং বন্দর কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে। এই পরিকল্পিত শহরে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্পাঞ্চল থাকবে, যা এলাকাটিকে একটি আধুনিক অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক হাবে পরিণত করবে। এটি চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের প্রগতিশীল নেতৃত্বের প্রতিফলন, যা শুধু প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতাই বৃদ্ধিই করবে না, বরং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনোবলকেও উজ্জীবিত করবে।


উপসংহার
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) জন্য গত বছরটি ছিল শুধু অগ্রগতিরই নয়, বরং এক রূপান্তরের বছর। এ সময়ে বন্দরের স্থিতিস্থাপকতা, আধুনিকায়ন এবং জাতীয় অর্থনীতিতে এর তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব আরো সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। রেকর্ড ভাঙা কার্গো হ্যান্ডলিং, বে টার্মিনাল ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পসহ দূরদর্শী অবকাঠামোর বিকাশ, এই বন্দরকে শুধু একটি বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বার নয়, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রার কৌশলগত চালিকাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক ভারসাম্য এবং পরিচালনগত উৎকর্ষতা ধরে রেখেছে। ডিজিটাল রূপান্তর, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও আধুনিক সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি নিজের ভেতরেই এক নতুন দক্ষতা ও গতিশীলতার অধ্যায় সূচনা করেছে, যা আন্তর্জাতিক মানদ-ের সাথে বাংলাদেশের সামুদ্রিক খাতকে সংযুক্ত করেছে আরো নিবিড় ও কার্যকরভাবে।
নেতৃত্বের দূরদর্শী পরিকল্পনা ও অগ্রণী মনোভাবের প্রতিফলন ঘটিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর আজ বাংলাদেশের নতুন অর্থনৈতিক যুগের পথপ্রদর্শক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে বৈশ্বিক বাণিজ্যে একটি নেতৃস্থানীয় অবস্থানে উঠে আসার; আর তার সেই স্বপ্নেরই এক বিশুদ্ধ প্রতিফলন চট্টগ্রাম বন্দরের মাস্টারপ্ল্যান। এই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে বন্দর চেয়ারম্যানের সুদক্ষ নেতৃত্বে চলমান অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে চট্টগ্রাম বন্দর- আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিক দক্ষ, অধিক স্বচ্ছ, আরো জবাবদিহিমূলক এবং আরো বেশি উচ্চাভিলাষী।
আগামী দিনের প্রত্যাশা-কেবল প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করাই নয়, বরং একটি টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং উদ্ভাবননির্ভর সামুদ্রিক অর্থনীতি নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি বিশ্বমানের বাণিজ্যিক শক্তিতে পরিণত করা।

জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ে ২৪.৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণ চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৪.৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুলাই মাসে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২৭ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আহরণ হয়েছিল ২১ হাজার ৯১৬ দশমিক ০৮ কোটি টাকা।

তবে গত মাসে এনবিআরের সামগ্রিক রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ১১০ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা। সেই তুলনায় রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ২ হাজার ৮৬১ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা কম হয়েছে।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুলাই মাসে কাস্টমস উইং থেকে আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৬০২ কোটি টাকা, ভ্যাট উইং থেকে আদায় হয়েছে ১১ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা এবং ইনকাম ট্যাক্স উইং থেকে আদায় হয়েছে ৬ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।