হাই ফং বন্দর, ভিয়েতনাম

ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় থেকে মাত্র ১২১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত হাই ফং বন্দর প্রকৃতপক্ষে একটি পোর্ট গ্রুপ। কুনমিং-লাও চাই-হ্যানয়-হাই ফং ইকোনমিক করিডোরের শেষ প্রান্তে অবস্থিত হওয়ায় চীনের সাথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর নৌ যোগাযোগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র হিসেবে কাজ করে হাই ফং। লয়েড’স থেকে ২০২০ সালে প্রকাশিত ব্যস্ততম কনটেইনার বন্দরের তালিকায় ৩১তম অবস্থানে থাকা উত্তর ভিয়েতনামের বৃহত্তম বন্দর হাই ফং পোর্ট গ্রুপ মূলত পাঁচটি শাখা বা ইউনিটে বিভক্ত। গ্রুপের ইউনিটগুলো হলো চুয়া ভে পোর্ট ব্রাঞ্চ, ট্যান ভু পোর্ট ব্রাঞ্চ, হোয়াং দিউ পোর্ট ওয়ান মেম্বার এলএলসি, হাই ফং পোর্ট মেডিকেল সেন্টার ওয়ান মেম্বার এলএলসি এবং কোম্পানি হাই ফং পোর্ট অপারেশনস টেকনিক্যাল ট্রেনিং ওয়ান মেম্বার এলএলসি। উত্তর ভিয়েতনামের অন্তত ১৭টি প্রদেশ, লাওসের উত্তর ভাগ এবং দক্ষিণ চীনের সাপ্লাই চেইনের অন্যতম শক্তিশালী স্তম্ভ এই বন্দর। 

১৮৭৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হাই ফং বন্দর তার ইতিহাসের গোটা সময়জুড়ে দেশটির উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। বেতন-ভাতা বৃদ্ধি এবং সুপেয় পানির মৌলিক চাহিদা বন্দোবস্তের দাবিতে ঔপনিবেশিক দখলদারদের বিরুদ্ধে ১৯২৯ সালের নভেম্বরে এক ঐতিহাসিক আন্দোলনে নামেন হাই ফং বন্দরের ডক শ্রমিকরা। শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে অন্যতম অর্থবহ ও সংঘবদ্ধ প্রতিবাদের পর নিজেদের দাবি আদায় করে নেন কর্মীরা। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধে মিত্রপক্ষের কৌশলগত ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার হওয়ার পর ১৯৫৫ সালে ফরাসি শাসনমুক্ত হয় হাই ফং বন্দর। প্রেসিডেন্ট হো চি মিনের নেতৃত্বে এর আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালে সরাসরি ভিয়েতনাম মেরিটাইম কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে লিমিটেড লায়াবিলিটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানি হিসেবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বন্দরটি।   

হাই ফংয়ের চুয়া ভে পোর্ট ব্রাঞ্চে মোট ৮৪৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে পাঁচটি ব্রিজ রয়েছে, যেখানে সাধারণত সাধারণ কার্গো এবং কনটেইনার আসা-যাওয়া করে। বার্ষিক পাঁচ লাখ টিইইউ কনটেইনার ধারণক্ষমতার এ টার্মিনালে সর্বোচ্চ ২০ হাজার ডেড ওয়েট টনের জাহাজ ভিড়তে সক্ষম। ৯৮০ দশমিক ৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে ট্যান ভু ব্রাঞ্চে পাঁচটি ব্রিজ থাকলেও আয়তনে এটি চুয়া ভে-এর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ৫৫ হাজার ডিডব্লিউটি সক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারে এখানকার টার্মিনালে, কনটেইনার ধারণক্ষমতা বার্ষিক ১০ লাখ টিইইউ। সাধারণ কার্গো পণ্যের জন্য বিশেষায়িত হোয়াং দিউ পোর্ট ওয়ান মেম্বার এলএলসিতে রয়েছে মোট ১ হাজার ৩৮২ মিটার দৈর্ঘ্যরে নয়টি ব্রিজ, বার্ষিক ধারণক্ষমতা ৬০ লাখ টন। সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ডিডব্লিউটি অফলোডের জাহাজ ভিড়তে পারে এখানে। ক্রুজ শিপ টার্মিনালও রয়েছে হাই ফংয়ে, রাজধানীর একেবারে নিকটে হওয়ায় আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী বন্দর হিসেবেও পরিচিত এটি। 

হাই ফংয়ে আছে তিনটি আলাদা ট্রানশিপমেন্ট এরিয়া। বেন গট-ল্যাক হুয়েন ট্রান্সশিপমেন্ট এরিয়ায় আছে একটি অ্যাংকর পয়েন্ট, যেখানে সর্বোচ্চ ২০ হাজার ডিডব্লিউটি জাহাজ ভিড়তে পারে। হা লং ট্রান্সশিপমেন্ট এরিয়ায় অ্যাংকর পয়েন্ট তিনটি, জাহাজ ভিড়তে পারে ৩০ হাজার ডিডব্লিউটি পর্যন্ত। ল্যান হা ট্রান্সশিপমেন্ট অ্যাংকর পয়েন্ট তিনটি থাকলেও সর্বোচ্চ ৪০ হাজার ডিডব্লিউটি জাহাজকে সেবা দেওয়া হয় এখানে।

বন্দরের সকল টার্মিনালে আগামীতে যেন ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার ডিডব্লিউটি জাহাজ ডকিং করানো যায়, সেজন্য ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ চলছে হাই ফংয়ে। উপকূলবর্তী একটি দ্বীপের সাথে মেইনল্যান্ডকে সংযুক্তকারী সেতু নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। সেখানে নতুন একটি বাল্ক টার্মিনাল এবং তিনটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। নতুন এসব স্থাপনা এবং হাই ফং পোর্ট গ্রুপসহ পুরো বন্দর ব্যবস্থার নাম রাখা হবে ল্যাচ হুয়েন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here