জিওয়া তরো বন্দর

কনটেইনার থ্রুপুটের দিক থেকে ভূমধ্যসাগরে ষষ্ঠ, ইউরোপে নবম এবং ইতালির বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর জিওয়া তরো দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় পর্যটন তীর্থ রেজিও কালাব্রিয়ার উত্তরে জিওয়া উপসাগরের তীরে অবস্থিত। জিব্রালটার প্রণালি হয়ে সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী ট্রেড রুটের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে এ বন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। মূলত কনটেইনার বন্দর হলেও এখানে ড্রাই বাল্ক এবং রো-রো কার্গোও হ্যান্ডল করা হয়। প্রাকৃতিকভাবেই পানির গড় গভীরতা ১৮ মিটারের বেশি হওয়ায় ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী দীর্ঘতম লিনিয়ার কি জেটি রয়েছে ৪৪ লাখ বর্গমিটার আয়তনের এই বন্দরে। সেই সাথে জাহাজ থেকে ২৩ সারি কনটেইনার লোড-আনলোডে সক্ষম ২২টি অত্যাধুনিক শিপ-টু-শোর ক্রেন থাকায় এক সাথে চারটি পর্যন্ত আলট্রা লার্জ কনটেইনার ভেসেলকে মুরিং সুবিধা দিতে পারে জিওয়া তরো।

অথচ সমৃদ্ধশালী বন্দরটির জন্ম হয়েছিল রাজনৈতিক, সামাজিক আন্দোলনের ডামাডোলের মধ্য দিয়ে। ১৯৭০ সালে রেজিও কালাব্রিয়া বিদ্রোহ প্রশমনের উদ্দেশে রেলরোড স্টাম্প এবং জিওয়া বন্দরসহ দেশের পঞ্চম স্টিলওয়ার্ক সেন্টার গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী এমিলিও কোলোম্বো। ৩ বিলিয়ন লিরা বিনিয়োগের এ মেগা প্রকল্পে ১০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়। সময়মতো সেটি না হওয়ায় কয়লাভিত্তিক একটি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে নানাবিধ সমস্যার কারণে দুটি বৃহৎ প্রকল্পের একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ ততদিনে বন্দরের মূল হারবার, ডক, জেটি, পিয়ার সবকিছু তৈরি। পরে বন্দরের মূল নকশায় কিছু অদলবদল করে কনটেইনার আমদানি-রপ্তানিকারী বাণিজ্যিক বন্দরের চেহারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে কনটেইনারবাহী জাহাজের আকৃতি দিন দিন বাড়তে থাকায় ১৯৯৫ সালে জিওয়া তরোকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থাপিত হয় হারবার মাস্টারের কার্যালয়, শুল্ক অফিস, ইতালীয় ফিন্যান্স পুলিশের দপ্তর, ফায়ার এবং পুলিশ স্টেশন।

নিরাপত্তায় আইএসপিএস কমপ্লায়েন্ট এবং কনটেইনার স্ক্যানিং সুবিধায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভের অংশ বন্দরটিতে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা খুবই উন্নত। ১৯৯৮ সালে এটি তখনকার বৃহত্তম কনটেইনার জাহাজ ৩১৮ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ হাজার ৪০০ টিইইউ ধারণক্ষমতার এমভি রেজাইনা মায়ের্স্ককে সেবা দেয়। সে সময় বিশ্বজুড়ে হাতে গোনা কয়েকটি বন্দরে এত বড় জাহাজ মুরিং এবং আনলোড সুবিধা ছিল। এভাবে ২০০৮ সালের বৃহত্তম জাহাজ এমএসসি ড্যানিয়েলাকে ডকিং করে জিওয়া তরো। প্রথমবারের মতো ১৪ হাজার টিইইউ বহনের মাইলফলক অতিক্রমকারী ড্যানিয়েলা মেগা-শিপের ইতিহাসে নতুন যুগ সূচনা করে। ইতালির প্রথম বন্দর হিসেবে এত বড় জাহাজ থেকে কনটেইনার হ্যান্ডলের পর নিজের তৈরি রেকর্ড আরো কয়েকবার ভেঙেছে এ বন্দর। ইতালিতে এখন পর্যন্ত বার্থিং করা বৃহত্তম জাহাজ ১৬ হাজার ৬৫০ টিইইউ বহনকারী এমএসসি লন্ডনকেও মুরিং করানো হয়েছিল এখানেই।

এমন সম্ভাবনাময় একটি বন্দরের যতটা প্রবৃদ্ধি হওয়া স্বাভাবিক ছিল, সেটি এখনো অর্জিত হয়নি কালাব্রিয়ার কুখ্যাত সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র ‘এনদ্রানঘেতা’র কারণে। ধারণা করা হয়, ইতালিয়ান মাফিয়ার মতো অর্গানাইজড ড্রাগ ক্রাইম সিন্ডিকেটটির গুপ্তচর লুকিয়ে আছে এখানে অপারেশন পরিচালনাকারী টার্মিনাল অপারেটর কোম্পানিতে, এমনকি খোদ বন্দর কর্তৃপক্ষের ভেতরেও। ২০০৬ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী গোটা ইউরোপে কলম্বিয়া থেকে যত কোকেন আসে, তার ৮০ শতাংশই আসে জিওয়া তরো বন্দর দিয়ে। অত্যন্ত প্রভাবশালী এ সংগঠনের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা ও নজরদারি বৃদ্ধির সুফল মিলতে শুরু করেছে। মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে কনটেইনার নিরাপত্তা ও স্ক্যানিং প্রক্রিয়া সরাসরি যুক্ত করা হয়েছে মার্কিন কর্মকর্তাদের। মাদকের বেশ কয়েকটি বড় চালান ধরা পড়ার পর কমতে শুরু করেছে অবৈধ কার্গোর সংখ্যা।

জিওয়া তরো বন্দর

কনটেইনার থ্রুপুটের দিক থেকে ভূমধ্যসাগরে ষষ্ঠ, ইউরোপে নবম এবং ইতালির বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর জিওয়া তরো দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় পর্যটন তীর্থ রেজিও কালাব্রিয়ার উত্তরে জিওয়া উপসাগরের তীরে অবস্থিত। জিব্রালটার প্রণালি হয়ে সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী ট্রেড রুটের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে এ বন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। মূলত কনটেইনার বন্দর হলেও এখানে ড্রাই বাল্ক এবং রো-রো কার্গোও হ্যান্ডল করা হয়। প্রাকৃতিকভাবেই পানির গড় গভীরতা ১৮ মিটারের বেশি হওয়ায় ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী দীর্ঘতম লিনিয়ার কি জেটি রয়েছে ৪৪ লাখ বর্গমিটার আয়তনের এই বন্দরে। সেই সাথে জাহাজ থেকে ২৩ সারি কনটেইনার লোড-আনলোডে সক্ষম ২২টি অত্যাধুনিক শিপ-টু-শোর ক্রেন থাকায় এক সাথে চারটি পর্যন্ত আলট্রা লার্জ কনটেইনার ভেসেলকে মুরিং সুবিধা দিতে পারে জিওয়া তরো।

অথচ সমৃদ্ধশালী বন্দরটির জন্ম হয়েছিল রাজনৈতিক, সামাজিক আন্দোলনের ডামাডোলের মধ্য দিয়ে। ১৯৭০ সালে রেজিও কালাব্রিয়া বিদ্রোহ প্রশমনের উদ্দেশে রেলরোড স্টাম্প এবং জিওয়া বন্দরসহ দেশের পঞ্চম স্টিলওয়ার্ক সেন্টার গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী এমিলিও কোলোম্বো। ৩ বিলিয়ন লিরা বিনিয়োগের এ মেগা প্রকল্পে ১০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়। সময়মতো সেটি না হওয়ায় কয়লাভিত্তিক একটি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে নানাবিধ সমস্যার কারণে দুটি বৃহৎ প্রকল্পের একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ ততদিনে বন্দরের মূল হারবার, ডক, জেটি, পিয়ার সবকিছু তৈরি। পরে বন্দরের মূল নকশায় কিছু অদলবদল করে কনটেইনার আমদানি-রপ্তানিকারী বাণিজ্যিক বন্দরের চেহারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে কনটেইনারবাহী জাহাজের আকৃতি দিন দিন বাড়তে থাকায় ১৯৯৫ সালে জিওয়া তরোকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থাপিত হয় হারবার মাস্টারের কার্যালয়, শুল্ক অফিস, ইতালীয় ফিন্যান্স পুলিশের দপ্তর, ফায়ার এবং পুলিশ স্টেশন।

নিরাপত্তায় আইএসপিএস কমপ্লায়েন্ট এবং কনটেইনার স্ক্যানিং সুবিধায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভের অংশ বন্দরটিতে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা খুবই উন্নত। ১৯৯৮ সালে এটি তখনকার বৃহত্তম কনটেইনার জাহাজ ৩১৮ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ হাজার ৪০০ টিইইউ ধারণক্ষমতার এমভি রেজাইনা মায়ের্¯‹কে সেবা দেয়। সে সময় বিশ্বজুড়ে হাতে গোনা কয়েকটি বন্দরে এত বড় জাহাজ মুরিং এবং আনলোড সুবিধা ছিল। এভাবে ২০০৮ সালের বৃহত্তম জাহাজ এমএসসি ড্যানিয়েলাকে ডকিং করে জিওয়া তরো। প্রথমবারের মতো ১৪ হাজার টিইইউ বহনের মাইলফলক অতিক্রমকারী ড্যানিয়েলা মেগা-শিপের ইতিহাসে নতুন যুগ সূচনা করে। ইতালির প্রথম বন্দর হিসেবে এত বড় জাহাজ থেকে কনটেইনার হ্যান্ডলের পর নিজের তৈরি রেকর্ড আরো কয়েকবার ভেঙেছে এ বন্দর। ইতালিতে এখন পর্যন্ত বার্থিং করা বৃহত্তম জাহাজ ১৬ হাজার ৬৫০ টিইইউ বহনকারী এমএসসি লন্ডনকেও মুরিং করানো হয়েছিল এখানেই।

এমন সম্ভাবনাময় একটি বন্দরের যতটা প্রবৃদ্ধি হওয়া স্বাভাবিক ছিল, সেটি এখনো অর্জিত হয়নি কালাব্রিয়ার কুখ্যাত সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র ‘এনদ্রানঘেতা’র কারণে। ধারণা করা হয়, ইতালিয়ান মাফিয়ার মতো অর্গানাইজড ড্রাগ ক্রাইম সিন্ডিকেটটির গুপ্তচর লুকিয়ে আছে এখানে অপারেশন পরিচালনাকারী টার্মিনাল অপারেটর কোম্পানিতে, এমনকি খোদ বন্দর কর্তৃপক্ষের ভেতরেও। ২০০৬ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী গোটা ইউরোপে কলম্বিয়া থেকে যত কোকেন আসে, তার ৮০ শতাংশই আসে জিওয়া তরো বন্দর দিয়ে। অত্যন্ত প্রভাবশালী এ সংগঠনের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা ও নজরদারি বৃদ্ধির সুফল মিলতে শুরু করেছে। মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে কনটেইনার নিরাপত্তা ও স্ক্যানিং প্রক্রিয়া সরাসরি যুক্ত করা হয়েছে মার্কিন কর্মকর্তাদের। মাদকের বেশ কয়েকটি বড় চালান ধরা পড়ার পর কমতে শুরু করেছে অবৈধ কার্গোর সংখ্যা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here