দক্ষিণ ফুজিয়ান প্রদেশের জিউলংজিয়াং নদীমোহনায় ডংডু হারবারে রয়েছে চীনের মূল ভূখ-ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গভীর সমুদ্রবন্দর শিয়ামেন। অতিদ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ চীনের অষ্টম বৃহত্তম এই বন্দর চীন, হংকং, তাইওয়ান এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ট্রাংক লাইন পোর্ট হিসেবে কাজ করে। চীনের চতুর্থ বন্দর হিসেবে এটি ষষ্ঠ প্রজন্মের কনটেইনার জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষম। ২০১৯ সালে মোট ১১ দশমিক ১২ মিলিয়ন টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডল করেছে এ বন্দর। বিশ্বের শীর্ষ ২০ শিপিং কোম্পানির সব কয়টি তাঁদের কার্যক্রম এবং অফিস রেখেছে এখানে। ৬৮টি শিপিং রুটের মাধ্যমে ৫০টির বেশি দেশের সাথে সরাসরি সংযুক্ত শিয়ামেনে মাসিক গড়ে ৪৭০টি জাহাজ ডকিং হয়।
শিয়ামেন মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্টের অধীনে পরিচালিত হয় শিয়ামেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরসংলগ্ন হারবার এলাকার দৈর্ঘ্য ৩০ কিলোমিটার, জেটি এলাকায় পানির গভীরতা গড়ে ১৭ মিটার। বিশাল উপকূলজুড়ে রয়েছে ১২২টি বার্থ, যার ৩৭টিই ডিপ-ওয়াটার। একটি রাখা হয়েছে কেবল লাখ টনের বেশি ধারণক্ষমতার জাহাজের জন্য, ১০ হাজার টনের উপরের জাহাজের জন্য ২৩টি এবং ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টনবিশিষ্ট জাহাজের জন্য আছে আলাদা বার্থ। কনটেইনার টার্মিনাল আছে নয়টি। খোলা সাগর এবং জেটি এলাকার মধ্যে লম্বাটে আকৃতির কিনম্যান আইল্যান্ডের মতো প্রাকৃতিক আড়াল থাকায় জলোচ্ছ্বাস, তীব্র বাতাস থেকে অনেকটাই সুরক্ষিত থাকে বন্দর। অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের দৈর্ঘ্য ৪২ কিলোমিটার, গভীরতা ১৪ মিটার।
জিন সাম্রাজ্যের শাসনামলে আনুমানিক ২৮২ খ্রিস্টাব্দের দিকে যাত্রা শুরু করে এখনো কার্যকর থাকায় পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন বন্দর শিয়ামেন। আশির দশক থেকে বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য বিপুল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া শুরু করে এ বন্দর। রপ্তানিমুখী বন্দর হিসেবে প্রচুর কর্মসংস্থান ও শিল্প-কারখানার মূল ঘাঁটি শিয়ামেন বন্দরকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয় ২০০৬ সালে। হাইচান, সংইউ, লিউ এবং ঝ্যাংঝু এলাকায় ছড়িয়ে থাকা বেশকিছু স্থাপনাকে একত্র করে গঠিত হয় নতুন শিয়ামেন বন্দর। এর মধ্যে ডংডু পোর্ট ডিস্ট্রিক্টে রয়েছে বন্দরের মূল স্থাপনা। কনটেইনার, জেনারেল কার্গো মূলত এখানেই হ্যান্ডল করা হয়। কনটেইনার ও কার্গোর লার্জ-স্কেল ট্রান্সশিপমেন্ট হয় দায়ু ডিস্ট্রিক্টে, পোর্ট লজিস্টিকস সাপ্লাই এবং ভারী শিল্পের জন্য নির্ধারিত অঞ্চল হলো লিউদিয়ান। কনটেইনার এবং বাল্ক কার্গো হ্যান্ডলিং, ট্রানজিট এবং ওয়্যারহাউস সুবিধা দিচ্ছে হাইচাং ডিস্ট্রিক্ট। হেপিং ডিস্ট্রিক্ট মূলত প্যাসেঞ্জার ট্রাফিক জোন। ক্রুজ শিপের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিস্ট ফেরি টার্মিনাল, জিনমেন আইল্যান্ড অভিমুখী ফেরি টার্মিনাল এবং উটং সি অ্যান্ড এয়ার ট্রান্সপোর্ট টার্মিনাল রয়েছে এখানে। ঝাওইন ডিস্ট্রিক্টে কনটেইনার, ড্রাই বাল্কের পাশাপাশি সকল রোল-অন/রোল-অব কার্গো লোড-আনলোড করা হয়। রেল-ওয়াটার ট্রান্সপোর্টের জন্য গাওগি ডিস্ট্রিক্ট, শিল্প-কারখানার জন্য জিংলিন, রাসায়নিকের জন্য হাউশি, অফশোরের জন্য হাইচাং, পেট্রোলিয়ামের জন্য সংইউ, নির্মাণসামগ্রীর জন্য পাইতৌ ডিস্ট্রিক্ট নির্ধারিত রয়েছে। এভাবে বিশেষায়িত অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন সেবা দেওয়ার ফলে লয়েডস লিস্ট প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী বিশে^র ১৪তম ব্যস্ত এ বন্দরে জাহাজজট একেবারে শূন্য।
বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় আকারের জাহাজগুলোকে দ্রুততম সময়ে সেবা দেওয়ার জন্য এখানে রয়েছে ৬০ এবং ৯০ টন বার্জ ক্রেন, ৫০ টন কার ক্রেন, ৪০ টন কনটেইনার ব্রিজ ক্রেন, ৪০ টন কনটেইনার ফর্ক ট্রাক, ৩৫ টন কনটেইনার স্ট্রাডেল ক্যারিয়ার, ৩০.৫ টন ক্রেন শিপ। বাল্ক শস্য এবং সার ওঠানামা করানোর সুবিধার্থে আছে স্বয়ংক্রিয় ব্যাগিং ইকুইপমেন্ট। কয়লার চালানের জন্য আছে অ্যাডভান্সড স্টিভেডোরিং সিস্টেম। ১০৬ একরের ওপেন ইয়ার্ড এবং ১০ একরের বেশি ওয়্যারহাউস সুবিধাসংবলিত শিয়ামেন বাল্ক অ্যান্ড ব্রেকবাল্ক টার্মিনালে মূল আমদানি পণ্য হলো গম, সিমেন্ট, সার, কয়লা, রোলড স্টিল, চিনি, আকরিক লোহা ও গ্রানাইট। রপ্তানি পণ্য হিসেবে বাইরে যায় মূলত চা, লবণ ও গ্রাফাইট পাউডার।