বিখ্যাত সমুদ্র অভিযাত্রী, আমেরিকার আবিষ্কারক হিসেবে পরিচিত ইতালীয় নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাসের নামে পানামায় রয়েছে দুটি বন্দর। একটি ক্রিস্টোবাল, অন্যটি কোলন। একটু খটকা লাগছে? তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার করা যাক। ‘ক্রিস্টোবাল’ হলো ক্রিস্টোফারের স্প্যানিশ রূপ; আর ‘কোলন’ কলম্বাসের। বন্দর দুটির মধ্যকার দূরত্ব খুব কম। মাত্র ১ নটিক্যাল মাইলের কিছু বেশি।

আটলান্টিক উপকূলে বে অব লিমনের তীরঘেঁষে কোলন শহরের অবস্থান। পানামার কোলন প্রদেশের রাজধানী শহর এটি। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে শহরটির গোড়াপত্তন হলেও সেখানে উন্নতির ছোঁয়া লাগে পানামা খাল খনন প্রকল্প শুরুর পর। এই শহরেই কোলন বন্দরের অবস্থান।

পানামা খালের আটলান্টিক অংশের একেবারে প্রবেশমুখে বন্দরটি অবস্থিত। উত্তাল সাগরের ঢেউ থেকে বন্দরের ‘কি’কে সুরক্ষিত রাখার জন্য এখানে নির্মাণ করা হয়েছে ব্রেকওয়াটার। এটি পানামা খালের আটলান্টিক অংশের প্রবেশপথেরও সুরক্ষা দেয়।

কোলন বন্দরে চারটি ডকে রয়েছে মোট ৯টি বার্থ। বন্দরটিতে প্রতি বছর প্রায় ১২০টি জাহাজ, ৩ লাখ ৮০ হাজার টন কার্গো ও ২০ লাখ ৫ হাজার টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়। এছাড়া বছরে প্রায় ১ লাখ ৬৬ হাজার যাত্রীকে সেবা দেয় এই বন্দর।

ব্রেক বাল্ক, ড্রাই বাল্ক ও কনটেইনার-সব ধরনের কার্গো ওঠানামা করার জন্য টার্মিনাল রয়েছে কোলন বন্দরে। এছাড়া প্রমোদতরীগুলোর জন্য রয়েছে পৃথক টার্মিনাল। আগেই বলা হয়েছে, কোলন বন্দরের অবস্থান পানামা খালের আটলান্টিক অংশের প্রবেশমুখে। এ কারণে আঞ্চলিক বাণিজ্যের ডিস্ট্রিবিউশন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে এর চাহিদা অনেক। এই চাহিদা মেটাতেই কোলন বন্দরের মানজানিলো ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনালকে একটি ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে আমদানি ও রপ্তানি করা কনটেইনার, রো-রো ও ব্রেক বাল্ক কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়।

কোলন বন্দরের পাশেই কোকো সলো নর্থে রয়েছে বেসরকারি পরিচালনাধীন কোলন কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি)। এভারগ্রিন গ্রুপ পরিচালিত টার্মিনালটিতে সর্বোচ্চ ১৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। পানামার ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা কাজে লাগাতে ১৯৯৪ সালে দেশটির সরকারকে এই টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দেয় এভারগ্রিন গ্রুপ। ১৯৯৭ সালে টার্মিনালটির কার্যক্রম শুরু হয়।

কোলন কনটেইনার টার্মিনালটি যে জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে আগে মার্কিন নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটি ছিল। প্রথমে এই জায়গায় দুটি বার্থ নির্মাণ করা হয়। পরে সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নির্মিত হয় আরও দুটি বার্থ। সম্প্রসারণের পর টার্মিনালটির আয়তন দাঁড়ায় ৭৪ দশমিক ৩ হেক্টর।

পানামার আঞ্চলিক সরবরাহ ও ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে এই টার্মিনালটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। পানামা খালের প্রবেশমুখে হওয়ায় দূরপ্রাচ্য থেকে ক্যারিবীয় অঞ্চল এবং উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে বড় একটি ট্রান্সপোর্ট হাব হিসেবে অবস্থান করে নিয়েছে কোলন কনটেইনার টার্মিনাল।

কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের উপযোগী আধুনিক সব সরঞ্জাম রয়েছে কোলন কনটেইনার টার্মিনালে। সেখানকার চারটি বার্থে ১১টি ‘কি’ গ্যান্ট্রি ক্রেন রয়েছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে কোলন কনটেইনার টার্মিনালে আরেক দফা অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে ৩০ হেক্টর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে লজিস্টিকস পার্ক।

কোলনে রয়েছে একটি ক্রুজ পোর্ট। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শুল্কমুক্ত বন্দর এটি। নতুন সহস্বেরাব্দের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এই পোর্টে নির্মাণ করা হয় ‘কোলন ২০০০ ক্রুজ টার্মিনাল’। দেড় কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত বেসরকারি পরিচালনাধীন এই ক্রুজ টার্মিনালের যাত্রা হয় ২০০০ সালে। মধ্য আমেরিকার অন্যতম ব্যস্ত একটি ক্রুজ টার্মিনাল এটি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে কোলন ক্রুজ পোর্টে দ্বিতীয় আরেকটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here