জলবায়ু উদ্বাস্তুদের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত জনগণের দায়িত্ব বিশ্বকে ভাগ করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এরই মধ্যে ৬০ লাখ মানুষ জলবায়ু সংকটে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অতিরিক্ত আরো ১১ লাখ রোহিঙ্গার ভার বইতে হচ্ছে। এ সমস্যা মোকাবেলা করা আরো কঠিন করে তুলেছে কভিড-১৯ মহামারি।

মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টায় স্কটিশ পার্লামেন্টে এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

একই দিন সন্ধ্যায় গ্লাসগোয় জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬-এর ‘ফোর্জিং এ সিভিএফ-কপ-২৬ ক্লাইমেট ইমার্জেন্সি প্যাক্ট’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জলবায়ু অর্থায়ন ও কার্বন নিঃসরণ কমাতে উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি পূরণ না করাটা দুঃখজনক ও হতাশাজনক। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল এই পাঁচ বছরে ৫০০ বিলিয়ন ডলার সরবরাহের পরিকল্পনা দিতে প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এদিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কপ-২৬ সম্মেলনের ইউকে মিটিং রুমে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বৈঠকেও দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন তাঁরা।

স্কটিশ পার্লামেন্টে পৌঁছলে স্পিকার অ্যালিসন জনস্টোন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এবং সিভিএফ দূত সায়মা ওয়াজেদ হোসেন। এ সময় স্কটিশ পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশি সদস্য ফয়সাল চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন উপলক্ষে স্কটিশ পার্লামেন্টে আয়োজিত ‘কল ফর ক্লাইমেট প্রসপারিটি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, বন্যা ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনায় বাস্তুচ্যুত হওয়া জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব বিশ্বকে অবশ্যই ভাগ করে নিতে হবে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি অবশ্যই সঠিকভাবে সমাধান করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং ভালনারেবল২০ (ভি২০) সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁর বত্তৃদ্ধতায় বলেন, কার্যকর ও পর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়নই হতে পারে সমৃদ্ধি অর্জনের চাবিকাঠি। এমসিপিপি (মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান) সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য কিছু সুপারিশ তিনি তুলে ধরেন।

ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে জলবায়ু অর্থায়নে পরিকল্পনা জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে আমরা সিভিএফ সদস্যরা এই কপ—এই উন্নত দেশগুলোর কাছে ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত পুরো পাঁচ বছরে ৫০০ বিলিয়ন ডলার সরবরাহের পরিকল্পনা দাবি করছি, যেখানে অভিযোজন ও প্রশমনে সমান সমান অর্থ সরবরাহ করতে হবে।’

জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব মোকাবেলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর যথেষ্ট সক্ষমতা না থাকার কথা তুলে ধরে সিভিএফ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, পর্যাপ্ত, টেকসই ও সহজ জলবায়ু অর্থায়ন ছাড়া কার্যকর কর্মপরিকল্পনা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সিভিএফ সদস্য দেশগুলো। এই সংকটের জন্য আমাদের কোনো ঐতিহাসিক ভূমিকা বা দায় না থাকা সত্ত্বেও এটি হচ্ছে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here