করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সার্বিকভাবে পণ্য আমদানি বেড়েছে রেকর্ড ৪৭ শতাংশ। আর নতুন এলসি খোলা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৪৯ শতাংশ। এ সময়ে নতুন শিল্প স্থাপনের মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য, জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যসহ সব পণ্যের আমদানিই বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এ কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানির পালে হাওয়া লেগেছে। এ ছাড়া রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানিও।
গত এপ্রিল থেকেই মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি খোলা বাড়তে থাকে। আর জুলাই থেকে এলসি নিষ্পত্তি তথা আমদানি বাড়তে শুরু করে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৯৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি হয়েছে। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮.৮১ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে একই সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতির নতুন এলসি খোলা হয়েছে ১৩৮ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩.২৮ শতাংশ বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি আমদানি বেড়েছে শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্যের। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এই পণ্যটির আমদানি হয়েছে ১৫১ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭১.৭৭ শতাংশ বেশি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি হয়েছে ৬৪৭ কোটি ২৭ লাখ ডলারের। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৯ শতাংশ বেশি। একই সময়ে এই পণ্যটির নতুন এলসি খোলা বেড়েছে প্রায় ৫১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের তিন মাসে এই পণ্যটির নতুন এলসি খোলা হয়েছে ৭২০ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে খাদ্যপণ্যের আমদানি বেড়েছে ৩৭.১৪ শতাংশ আর নতুন এলসি খোলা বেড়েছে ৬৭.২৫ শতাংশ। এ ছাড়া একই সময়ে জ্বালানি তেলের আমদানি বেড়েছে ৫৯.৫৮ শতাংশ আর নতুন এলসি খোলা বেড়েছে রেকর্ড ৭০.৪০ শতাংশ।
দেশে করোনার আঘাত আসার পর গত বছরের মার্চের শেষ থেকে টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটিতে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। ওই সময় কলকারখানা বন্ধ থাকায় আমদানি-রপ্তানিও আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। এর মধ্যে করোনার ক্ষতি মোকাবেলায় বিভিন্ন খাতে সোয়া এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। সেই সঙ্গে ৩০ মে থেকে সব কিছু খুলে দেওয়া হয়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে আমদানি-রপ্তানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসতে শুরু করে। এর মধ্যে হানা দেয় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। তখন ব্যবসা-বাণিজ্য আবারও কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ে। তবে এখন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ফলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সব ধরনের পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। এতে ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা বিদ্যমান বিনিয়োগের পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগেও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এ কারণেই শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য, মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ সব ধরনের পণ্য আমদানি বাড়ছে।
শুধু আমদানিই নয়, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধিও ধীরে ধীরে বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে জুন পর্যন্ত বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.৩৫ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (বার্ষিক) তা বেড়ে হয়েছে ৮.৭৭ শতাংশ।
এদিকে আমদানি চাপে আন্ত ব্যাংকে ডলারের দাম আরেক দফা বেড়েছে। গত চার কার্যদিবস স্থিতিশীল থাকার পর গতকাল রবিবার টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে পাঁচ পয়সা। এদিন আমদানিকারকদের প্রতি ডলারের জন্য গুনতে হয়েছে ৮৫ টাকা ৭৫ পয়সা।