তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর গর্বিত জাতিকে স্বপ্নের ঠিকানায় নিয়ে যেতে নদীমাতৃক বাংলাদেশের শিরা-উপশিরার মতো নদ-নদীগুলোকে রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদীবাহিত পলি সমাবেশে নতুন জমি জেগে ওঠার উদাহরণ যেমন রয়েছে, তেমনি আছে ভবিষ্যৎ অমিত সম্ভাবনা।
রোববার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ ড্রেজার বেইজ থেকে ছেড়ে যাওয়া বিআইডব্লিউটিএর পরিদর্শী জাহাজে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু: শাশ্বত বাংলার প্রতিরূপ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এ কথা বলেন। নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবনে নদীর অনেক প্রভাব। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার এবং আমাদের সবার জীবনেই নদীর অনেক প্রভাব। মানুষের শিরা-উপশিরা দূষিত হলে শুকিয়ে গেলে মানুষ যেমন রুগ্ন হয়, তেমনি নদী দূষিত হলে, দখল হলে, শুকিয়ে গেলে বাংলাদেশটাও শুকিয়ে যায়, দূষিত হয়ে যায়। তাই নদী রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবকিছু আক্রান্ত। এরপরও বাংলাদেশের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, দেশে প্রবাহিত ৫৮টি যৌথ নদী বছরে প্রায় দুই বিলিয়ন মেট্রিক টন পলি বহন করে এবং সমুদ্রের তলদেশে সেটি জমা হয়। এতে নতুন জমি সমুদ্র থেকে উদ্ধারের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেই অনেক জমি উদ্ধার হয়েছে। আজকের ভাসানচর সাত বছর আগে ছিল না। নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ছিল না। পরিপূর্ণভাবে একটি নতুন উপজেলা গঠিত হয়েছে। অর্থাৎ সমুদ্র থেকে জমি উত্তোলনের বিরাট একটি সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ২১০০ সালের বদ্বীপ পরিকল্পনায় বিষয়টিতে আলোকপাত করা হয়েছে। এটি নিয়ে আরও কাজ করা প্রয়োজন। কয়েক দশকের পরিকল্পনা নিয়ে আগালে সমুদ্র থেকে বিরাট একটি অংশ আমাদের দেশের সঙ্গে যুক্ত করতে আমরা সক্ষম হবো।
নৌপথ উদ্ধারের বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের বড় নদীগুলোর ক্যাচমেন্ট এরিয়ার ৯৩ শতাংশ বাংলাদেশের বাইরে ভারত, ভুটান, নেপালে আর ৭ শতাংশ বাংলাদেশের ভূমিতে। সুতরাং নৌপথ উদ্ধারের পরিকল্পনা আন্তঃদেশীয় পরিকল্পনার অংশ হতে হবে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বঙ্গোপসাগরে আজকে যদি অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হতো, তাহলে আমরা একটা ‘লকড কান্ট্রিতে’ পরিণত হতাম। আমাদের বের হওয়ার কোনো রাস্তা থাকত না। আজকে দেশরত্ন শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ একটি পথ পেয়েছে। সঠিক পথ দেখানোর বিষয়টা আমরা বঙ্গবন্ধুর রক্তের ধারা থেকেই পেয়েছি।
তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা আইন করেছেন, যার আরও ১০ বছর পরে জাতিসংঘ এ আইনটি করেছে। বঙ্গবন্ধুর করে যাওয়া আইনে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমুদ্র সীমা জয় করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির যে পথ সে পথ তিনি রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন। একই পথে পরবর্তী সামরিক জান্তারাও হেঁটেছে। বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা সেটা তারা নস্যাৎ করেছিল। কারণ দেশের প্রতি তাদের কারো ভালোবাসা, প্রেম ছিল না। আর এজন্যই তারা বাংলাদেশের নেতা হতে পারেননি। দেশকে পিছিয়ে দেওয়া ছাড়া এসব সামরিক জান্তারা কোন ভূমিকা রাখেনি।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নদীগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের শিরা-উপশিরা। নদীগুলো রক্ষা করতে হবে। আজকে প্রধানমন্ত্রী সেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন। এ পথ ধরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় দেশের অর্থনীতিতে আরও সহায়ক শক্তি হতে পারে। সাম্প্রতিক যে ঘটনাগুলোর কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সে বিষয়ে সবাইকে আরও আন্তরিক হতে হবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, দৈনিক অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মোংলা বন্দর কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা, বিশিষ্ট পরিবেশবিদ অ্যাডভোকেট মনজুর মোর্শেদ, বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যান আহমেদ শামীম আল রাজী, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর আবু সালেহ মো. জালাল উদ্দিন, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট ড. সাজিদ হোসেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক প্রমুখ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।