চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্য নিয়ে প্রথম জাহাজ সরাসরি ইউরোপের দেশ ইতালিতে যাওয়ার আগে জাহাজীকরণ কার্যক্রম দেখে গেলেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইতালির রাষ্ট্রদূত। এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি এটিকে ইইউ দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনের সময় বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান ও বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানসহ ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি প্রথমবারের মতো ইউরোপের কোন দেশে পণ্য পরিবহনের জন্য লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি সোঙ্গা চিতা’ শনিবার জেটিতে ভেড়ে। সোমবার পণ্য ভর্তি কনটেইনার নিয়ে সরাসরি ইতালির উদ্দেশ্যে জাহাজটি রওনা দেবে। আর এর মধ্য দিয়ে ইউরোপের কোনো বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে প্রথমবারের মত।
বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম বৃহৎ গন্তব্য ইউরোপের দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি হয় অন্য দেশের বন্দর ঘুরে। সেখানে অপেক্ষায় থাকতে হয় বড় জাহাজের বুকিং পেতে। তাতে ইতালি পৌঁছাতে ৩০ দিনের কাছাকাছি সময় প্রয়োজন হয়। এতে ক্রেতাদের হাতে পণ্য পৌঁছাতে দেরি হয়, খরচও বাড়ে। প্রতিযোগীদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ার বড় কারণ এটাও। সরাসরি ইউরোপযাত্রা শুরু হলে সেই বাধা কমে এসে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা এবং বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে নোঙ্গর করা ‘এমভি সোঙ্গা চিতা’ পরিদর্শন করেন।
পণ্য পরিবহন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, প্রথমবারের মত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যবাহী জাহাজ সরাসরি ইউরোপের কোনো দেশে যাবে। আগে যেখানে ৩৫ থেকে ৪৫ দিনের মত সময় লাগতো সেখানে সময় কম লাগবে। এটি দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন মাইলফলক।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। এখন বিদেশি জাহাজের ওয়েটিং টাইম দুই দিনের বেশি লাগে না। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের বন্দরের চেয়েও এখন চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অনেক ভালো। এখান থেকে শুধু ইতালি নয়, ইউরোপের অন্যান্য দেশের গন্তব্যেও সরাসরি জাহাজ শুরুর চেষ্টা চলছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, তৈরি পোশাক বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত, যা বাংলাদেশ এবং ইইউর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। ইতালির সাথে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে। আমাদের আরও ২৭টি দেশ আছে। ক্রমান্বয়ে অন্য দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। এ কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে আমরা উচ্ছ্বসিত।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। করোনাকালেও ধারণক্ষমতা বেড়েছে, জাহাজের গড় অবস্থানকাল কমিয়েছি। পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালসহ অন্যান্য উদ্যোগ যুক্ত হলে বন্দরের সক্ষমতা আরও অনেক বাড়বে।
এর আগে সকালে বন্দর ভবনের সম্মেলন কক্ষে দুই রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএ সভাপতি। চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন উদ্যোগ ও অগ্রগতির তথ্য রাষ্ট্রদূতদের সামনে তুলে ধরা হয়।
ইতালিসহ ইউরোপের কয়েকজন ক্রেতার আগ্রহেই ইতালির ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠান আরআইএফ লাইন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্যালিপসো কোম্পানিয়া ডি নেভিগেশন চট্টগ্রাম-ইতালি সরসারি জাহাজ চলাচলের এই সেবা চালু করছে। জাহাজটির বাংলাদেশি এজেন্ট রিলায়েন্স শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিক্স।