প্রবাসীদের পাঠানো দুই মাসের রেমিট্যান্সের অর্থে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পুরো বছরের বৈদেশিক দেনা পরিশোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সন্ধ্যায় সংবাদপত্রের সম্পাদক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে অনলাইনে অনুষ্ঠিত এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে এ কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের ব্যয় হবে ২.৪ বিলিয়ন ডলার, যা পরের বছর বেড়ে ২.৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক দেনা মেটাতে ৩.৩ বিলিয়ন ডলার এবং তার পরের বছর ৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে।
‘আমাদের প্রবাসীরা এই মাসেও ২ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠাচ্ছেন। প্রবাসীদের পাঠানো দুই মাসের রেমিট্যান্সের অর্থ দিয়েই বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পুরো বছরের দায় মেটানো সম্ভব হবে,’ বলেন তিনি।
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে দেশেও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এই ধরনের সংকট মোকাবেলা করে আমরা অভ্যস্ত, আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে কি না, অথচ আমরা শ্রীলঙ্কাকে ফাইন্যান্স করেছি। দীর্ঘদিন ধরে তাদের মূল্যস্ফীতির হার ৩১ শতাংশ। ভারত, পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতিও অনেক, কিন্তু বাংলাদেশে ৬ শতাংশের বেশি হয়নি। আমাদের ঋণ-জিডিপি অনুপাতও সর্বনিম্ন পর্যায়ে, জিডিপির ৩৪-৩৫ শতাংশ।’
‘আমরা ঋণ নিয়েছি প্রোডাক্টিভ প্রজেক্টে। ওই প্রকল্প থেকে রাজস্ব কতটা বাড়বে, কী পরিমাণ কর্মসংস্থান হবে এবং খরচ কমাবে কি না—এসব বিষয় বিবেচনা করে প্রকল্প অনুমোদন করি। আমাদের ঋণের ৭৭ শতাংশ সফট লোন, যা বিশ্বব্যাংক, এডিবি, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা থেকে নেওয়া। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা ঋণ নিয়েছে কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে,’ যোগ করেন মন্ত্রী।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) মে মাসে বলেছে, বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য ৩০ শতাংশ বেড়েছে। আর বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গম, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, সয়াবিন তেল, চিনি, ইউরিয়া, টিএসপি ও জ্বালানি তেলের দাম অনেক বেড়েছে।
‘আমরা মার্কেট বেজড ইকোনমি। বিশ্বের কোথাও কোনো কিছু হলে তা আমাদেরও স্পর্শ করে। সারা বিশ্বের সঙ্গে মিলেই আমাদের দেশ চালাতে হবে,’ বলেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবাইকে খুশি রেখেই দেশ চালাতে চাই। সবার জন্য উইন-উইন পরিস্থিতি থাকবে।
‘আমরা মানুষের জন্য বাজেট দিই। সবাইকে সাথে নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই, কাউকে পিছিয়ে রেখে নয়। আমরা কৃষিকে প্রাধান্য দিয়ে আসছি। এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশনকে প্রাধান্য দিই। এখন “মেইড ইন বাংলাদেশ”কে প্রাধান্য দিচ্ছি। বাজেট হবে রেসপনসিবল এবং ট্রান্সপারেন্ট।’
মুস্তফা কামাল বলেন, জ্বালানি তেলের দাম যতটুকু বেড়েছে, তা ভোক্তা ও সরকার ভাগাভাগি করে বহন করবে। এককভাবে সরকার বা ভোক্তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না।
সভায় গণমাধ্যমের শীর্ষ নির্বাহীরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্বারোপ করেন।