প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ের ওপর ভর করে শঙ্কা কাটিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে এর পরিমাণ আবারও ৪ হাজার ২৩৩ কোটি (৪২ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মুহূর্তে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা মজুত আছে; তা দিয়ে অন্তত ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
গত ৯ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) রেকর্ড ২২৪ কোটি (২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। এরপর সপ্তাহ খানেক রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন (৪ হাজার ২০০ কোটি) ডলারের নিচে অবস্থান করে।
রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় গত বুধবার (১৮ মে) আবারও রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। গত কয়েক দিনে তা আরও বেড়ে রবিবার (২২ মে) দিন শেষে ৪২ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। সংবাদ মাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন এসব তথ্য দিয়েছে।
গত বছরের ২৪ আগস্টে এই রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। তখন ওই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেতো। তখন অবশ্য প্রতি মাসে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হতো। আর জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ; এই তিন মাসের প্রতি মাসেই ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে দেশে।
পণ্য আমদানি আগের চেয়ে বাড়েনি। কিন্তু আমদানি ব্যয় ঠিকই বেড়েছে। ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া ছাড়াও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। সব মিলিয়ে আগের চেয়ে কয়েকগুণ আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৩৪৩ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৪১ শতাংশ বেশি।
অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে পরিমাণের দিক দিয়ে পণ্য আমদানি হয়েছে ১১ কোটি ৯০ লাখ টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ কম।
এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি দিতে রপ্তানি বাণিজ্যে বেশ উল্লম্ফন ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এই ১০ মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৩ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে দেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।
এদিকে চলতি মে মাসের প্রথম ১৯ দিনে ১৩১ কোটি ২২ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১১ হাজার ৪৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ২১০ কোটি ডলার ছড়িয়ে যাবে।