সৌদি আরবের কিং আব্দুল্লাহ পোর্টের অবস্থান বিশ্বের অন্যতম প্রধান একটি সি ট্রেড রুটে। তিনটি মহাদেশকে সংযোগকারী এ বাণিজ্যপথের গুরুত্বপূর্ণ একটি হিস্যা হলো লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত কিং আব্দুল্লাহ বন্দর। ২০৩০ সাল নাগাদ জ্বালানি নির্ভরতা কাটিয়ে অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করার যে পরিকল্পনা রয়েছে সৌদি সরকারের, তা পূরণে এ বন্দর বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বৈশ্বিকভাবে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়েও এ বন্দরের উপযোগিতা কম নয়। সৌদি আরবের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর জেদ্দা থেকে ৯০ কিলোমিটার উত্তরে কিং আব্দুল্লাহ ইকোনমিক সিটিতে ১৭ দশমিক ৪ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে অবস্থিত এই বন্দর। এ ইকোনমিক সিটি হলো জেদ্দার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। ফলে আঞ্চলিক অর্থনীতির উন্নয়নে বন্দরটির অবদান সহজেই অনুমেয়।
সৌদি আরবের সমন্বিত ট্রান্সপোর্টেশন নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ হিস্যা কিং আব্দুল্লাহ পোর্ট। বেশ কয়েকটি মহাসড়কের মাধ্যমে এটি দেশটির প্রধান প্রধান শহর ও শিল্পনগরীর সঙ্গে যুক্ত।
বন্দরটির যাত্রা খুব বেশিদিন আগে নয়। ২০১০ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সে হিসেবে সৌদি আরবের নবীনতম পোর্ট ফ্যাসিলিটি এটি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর মাধ্যমে কিং আব্দুল্লাহ পোর্ট সৌদি আরবের ক্রমবর্ধমান রপ্তানি খাতে সহায়ক ভূমিকা রেখে চলেছে।
কিং আব্দুল্লাহ একটি মাঝারি আকারের বন্দর। এটি যেসব জাহাজকে নিয়মিত সেবা দিয়ে থাকে, সেগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশই কনটেইনার জাহাজ। এছাড়া বাল্ক ক্যারিয়ার (৮ শতাংশ) ও জেনারেল কার্গো ক্যারিয়ারও (৬ শতাংশ) এ বন্দরে নিয়মিত পোর্ট কল দিয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত বন্দরটিতে সবচেয়ে বড় যে জাহাজ ভিড়েছে, সেটির দৈর্ঘ্য ছিল ৪০০ মিটার। সর্বোচ্চ ড্রাফটের রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ মিটার। আর সর্বোচ্চ ডেডওয়েট ছিল ২ লাখ ২৮ হাজার ৪০৬ টন।
কিং আব্দুল্লাহ বন্দরে প্রায় সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি পণ্যই হ্যান্ডলিং হয়। খাদ্য ও ওষুধপণ্য থেকে শুরু করে নির্মাণসামগ্রী-সব ধরনের পণ্য লোড-আনলোড করার সক্ষমতা রয়েছে এ বন্দরের। আর এ সক্ষমতা অর্জন সম্ভব হয়েছে বন্দরটির অত্যাধুনিক অবকাঠামো ও ডিজিটাল কার্যক্রমের সুবাদে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার উত্তর ও পূর্ব অঞ্চলের প্রায় ৪০ কোটি মানুষের বাজারে ভোগ্যপণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি হাবে পরিণত হয়েছে কিং আব্দুল্লাহ পোর্ট।
কিং আব্দুল্লাহর মালিক ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হলো পোর্টস ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (পিডিসি)। সৌদি আরব তো বটেই, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম বেসরকারি মালিকানাধীন ও বেসরকারি অর্থায়নে নির্মিত বন্দর এটি।
বর্তমানে কিং আব্দুল্লাহ বন্দরে কনটেইনার বার্থ রয়েছে চারটি। বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বার্থগুলোর সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ১১ হাজার ৭০ মিটারে উন্নীত করা হচ্ছে। পানির গভীরতা ১৮ মিটার পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। আর কনটেইনার স্টোরেজ সক্ষমতা আড়াই কোটি টিইইউতে উন্নীত করা হচ্ছে। এসব উন্নয়নের মাধ্যমে ২৩ হাজার ৫০০ টিইইউর বেশি ধারণক্ষমতার মেগাশিপগুলোকে সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বন্দরটি।
করোনা মহামারির মধ্যেও ২০২০ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল কিং আব্দুল্লাহ পোর্ট। সে বছর বন্দরটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ৫৩ হাজার ৯৬৫ টিইইউ, ২০১৯ সালে যা ছিল ২০ লাখ ২০ হাজার ৬৮৩ টিইইউ। ২০২১ প্রবৃদ্ধির হার ছিল আরও বেশি। গত বছর ২৮ লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে বন্দরটি, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেশি। কনটেইনার শিপিং কার্যক্রমের এ অগ্রযাত্রা চলতি বছরেও ধরে রেখেছে কিং আব্দুল্লাহ। প্রথমার্ধে বন্দরটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ। জানুয়ারি-জুন মেয়াদে মোট ১৫ লাখ ২ হাজার ৭২০ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে বন্দরটি।