মানবিক করিডোরের চুক্তি থেকে সরে আসার হুমকি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের

শুক্রবার ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর থেকে আফ্রিকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে ইকারিয়া অ্যাঞ্জেল নামের একটি ভাড়াকৃত বাল্কার জাহাজ

ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভের অধীনে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে খাদ্যশস্যবাহী জাহাজ চলাচলের মানবিক করিডোর চালুর পর এখন পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে প্রায় ৩৭ লাখ টন খাদ্যশস্য রপ্তানি হয়েছে। এর সিংহভাগই গিয়েছে ইউরোপের বাজারে। খাদ্যসংকটের মধ্যে থাকা আফ্রিকার বাজার মানবিক করিডোরের সুফল পেয়েছে সামান্যই। এই করিডোরের একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করছে ইউরোপ-এমন অভিযোগ এনে ইউক্রেনের খাদশস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে সরে আসার হুমকি দিয়েছে রুশ সরকার।

গত মাসে মানবিক করিডোর দিয়ে ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগরীয় বন্দরগুলো দিয়ে খাদশস্য রপ্তানি শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত আফ্রিকার দেশগুলো পেয়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ খাদ্যপণ্য। এই করিডোর দিয়ে জাতিসংঘের বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির অধীনে তিনটি চার্টার্ড জাহাজে করে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অভাবগ্রস্ত মানুষের কাছে খাদ্যশস্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গত শুক্রবার ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর থেকে ইকারিয়া অ্যাঞ্জেল নামের আরেকটি ভাড়াকৃত বাল্কার জাহাজ আফ্রিকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে।

বিশ্বযুদ্ধে খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিম্ন আয়ের দেশগুলো ভয়াবহ সংকটের মধ্যে রয়েছে-এমন যুক্তি দেখিয়ে রাশিয়াকে চুক্তি করতে রাজি করানো হয়েছে। অথচ এই করিডোরের সুবিধা নিম্ন আয়ের দেশগুলো তেমন পাচ্ছে না। অর্থাৎ চুক্তির উদ্দেশ্য সম্পর্কে রাশিয়াকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে-এমনই অভিযোগ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

এদিকে ইউক্রেনের অবকাঠামো মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববার ১০টি জাহাজ এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের উদ্দেশে ইউক্রেনের ওডেসা, কর্নোমর্স্ক ও পিভদেনি বন্দর ছেড়ে গেছে। জাহাজগুলোয় মোট প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টন খাদ্যশস্য রয়েছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

চলতি বছরের ২২ জুলাই তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় খাদ্যশস্য পরিবহনের সুযোগ দিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তিটির আওতায় রাশিয়া কৃষ্ণসাগরে তাদের অবরোধ শিথিল করবে, যেন ইউক্রেন থেকে জাহাজে করে খাদ্য রপ্তানি করা সম্ভব হয়। তুরস্ক বলছে, এই চুক্তির ফলে শুধু ইউক্রেন নয়, বরং কৃষ্ণসাগর দিয়ে রাশিয়ার খাদ্য রপ্তানিও সহজ হবে।

চুক্তির অধীনে ১ আগস্ট প্রথমবারের মতো ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর থেকে ২৬ হাজার টন ভুট্টা বোঝাই করে লেবাননের পথে যাত্রা করে রাজোনি নামের সিয়েরা লিওনের পতাকাবাহী একটি জাহাজ।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকেই কৃষ্ণ সাগরের উপকূলীয় বন্দরগুলো অবরোধ করে রেখেছিল রুশ বাহিনী। এরপর ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে দেশটির সাইলোগুলোয় বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্যের মজুদ জমা হয়।

উল্লেখ্য, বৈশ্বিক গম সরবরাহে রাশিয়া ও ইউক্রেন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল এই দুই দেশের খাদ্যশস্য রপ্তানির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here