বিশ্ব অর্থনীতির দুর্ভোগ যেন কাটছেই না। প্রথমে করোনা মহামারির ধাক্কা। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো শুরু হতে না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দামামা। সংঘর্ষ দুটি দেশের মধ্যে, কিন্তু বিশ্বায়নের কারণে এর রেশ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে। ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে মন্দা ভাব। অর্থনৈতিক এ ডামাডোলের কারণে আগামী বছর বৈশ্বিক পণ্য জাহাজীকরণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যেতে পারে বলে ধারণা করছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাড।
বিশ্বের শীর্ষ বিনিয়োগ ব্যাংকগুলোর ভাষ্য, পরিস্থিতি একই রকম থাকলে ২০২৩ সালেও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতি দেখা যাবে। আগামী বছরও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও চলমান মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে যাবে। এ ধীরগতির প্রভাব পড়বে পণ্য জাহাজীকরণের ক্ষেত্রে। কারণ বিশ্ববাণিজ্যের ৮০ শতাংশের বেশি পণ্য সমুদ্রপথে পরিবহন করা হয়। ফলে বাণিজ্যের গতি শ্লথ হয়ে পড়লে তার রেশ গিয়ে পড়বে এ খাতেও।
আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর সমুদ্রপথে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রবাহে প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ১ দশমিক ৪ শতাংশ, যা আগামী বছরও প্রায় একই থাকবে।
সার্বিকভাবে ২০২৩ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে সমুদ্র বাণিজ্যে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ১ শতাংশ থাকবে বলে প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আগের ৩ দশমিক ৩ শতাংশ পূর্বাভাস থেকে তা ১ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কম। আঙ্কটাড বলছে, বাণিজ্যের নিম্নমুখী প্রবণতাই পূর্বাভাস কমিয়ে দেওয়ার পেছনে বড় কারণ।
মহামারির শুরুর দিকে স্থবিরতা, এরপর হঠাৎ চাহিদায় উল্লম্ফন-এই দুইয়ের প্রভাবে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছিল গত বছর। এই সংকটের সমাধান এখনো হয়নি। এমনই এক পরিস্থিতির মধ্যেই শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এছাড়া চীন সরকারের নেওয়া কোভিড-১৯ প্রতিরোধী কঠোর নীতিমালা, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপ ও সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের মান কমে যাওয়ার কারণেও সমুদ্র পরিবহন খাতটি বিপাকে পড়েছে।
২০২১ সালে ভোক্তা ব্যয় বেড়ে আকাশচুম্বী হয়েছিল। এতে করে কনটেইনার পরিবহনের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গিয়েছিল। একই সঙ্গে বেড়েছিল ফ্রেইট রেট। তবে চলতি বছর এসে সেই দৃশ্যপট পাল্টে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সমুদ্র বাণিজ্য ও সংশ্লিষ্ট সাপ্লাই চেইনে বিনিয়োগ করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আঙ্কটাড। সংস্থাটি বলছে, বিনিয়োগ বাড়লে বন্দরগুলোর কার্যক্রম ও পণ্য জাহাজীকরণে গতিশীলতা আসবে।
